শুক্রবার, ১ জুন, ২০১২

পিতাকে পুত্র


॥ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম ॥

(৮)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কত চেষ্টা করি তোমাকে সব কিছু জানাতে; কিন্তু অশান্ত বাস্তবতা কেন যেন মাঝে মধ্যেই এলোমেলো করে দেয়। চেষ্টা করি নিরাসক্ত থাকতে কিন্তু পারি না। সারা দুনিয়ার পরিবেশটাই কেমন যেন অশান্ত, লাগামহীন। কোথাও কোনো মানবিক মূল্যবোধের স্থান নেই। সবাই নিজের মতা দেখাতেই ব্যস্ত। এখন মানুষের কোথাও গিয়ে বিচার পাওয়ার ভরসা নেই, আশ্রয় নেয়ার জায়গা নেই। চোখ-কান বন্ধ করে নিজের স্বার্থ দেখার এত উলঙ্গ প্রবণতা, এত হৃদয়হীনতা মনে হয় আইয়ামে জাহিলিয়াতের দিনে আরব মরুভূমিতেও ছিল না। ইদানীং সে যে কী ঘটছে তা বলার মতো নয়। হত্যা, গুম, ঘুষ, দুর্নীতি সমাজ ও প্রশাসনের গলার মালা তো হয়েই আছে তার ওপর তোমার সময় যে চিকিৎসা-শিা ছিল সেবা, সেটা এখন হয়েছে সবচেয়ে বড় ব্যবসায়। এই তো ক’বছর আগেও বড় বড় ব্যবসায়ের মধ্যে ছিল যুদ্ধাস্ত্র, নেশা, খেলনা আরো কিছু কিছু ছোট-বড় মোটরযান, বিমান, নৌযান, ভারী যন্ত্রপাতি। কিন্তু বিশেষ করে বর্তমান বাংলাদেশে মনে হয় সব ব্যবসায় বাণিজ্যের চেয়ে শিা ও স্বাস্থ্যের ব্যবসায় বেশি লাভজনক এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। আগে চিকিৎসা ও শিা ছিল দাতব্য। এখন শিা হয়েছে ভীষণ ব্যয়বহুল। স্বাস্থ্যসেবা বা চিকিৎসা আরো বেশি ব্যয়নির্ভর। দেশের প্রতি, দেশের জনগণের প্রতি কারো যেন কোনো দায়দায়িত্ব নেই, কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কেমন যেন একটা ফ্রিস্টাইল। ওষুধে ভেজাল, ডাক্তারিতে ভেজাল, মানুষ কোথায় কার কাছে যাবে? অনেক ডাক্তারের ওষুধ কোম্পানির সাথে কমিশনের চুক্তি আছে। যে ডাক্তার যার কোম্পানির যত ওষুধ লিখবে তত কমিশন পাবে। সরকারি চাকরিতে অনেকের মন বসে না, সব সময় মন পড়ে থাকে কিনিকের দিকে। কারণ সেখানে গেলেই পয়সা। পয়সার নেশায় প্রায় সবাই মাতোয়ারা। একজন মানুষের কত পয়সাই যে লাগে বুঝে উঠতে পারি না। ২০-৫০ বছর আগেও গ্রামবাংলা ছিল শান্তির নীড়; কিন্তু এখন সেখানেও এক নিদারুণ অশান্তি। সবার আরো আরো বেশি করে চাই। কেউ ভাবে না অত অর্থ দিয়ে কী হবে? অর্থের কারণে কেউ কাউকে সময় দিতে পারে না। স্বামীর স্ত্রীর জন্য যেমন সময় নেই, স্ত্রীরও তেমন সময় নেই কারণ তার সমাজ উন্নয়নে কত কাজ। ছেলেমেয়েদের ফার্মের মুরগির মতো কোনো অর্থ উপার্জনের কারখানা নামে তথাকথিত কোনো শিাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচার চেষ্টা। বিত্তশালী অনেকেই বুঝতে চান না পিতা-মাতার প্রত্য সান্নিধ্য ছাড়া কোনো সন্তানই মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে না। এ েেত্র কোথাও তেমন অনাবিল আনন্দ নেই। তার মধ্যে বেশির ভাগ বিত্তশালীর বড় করুণ দশা। কার কথা বলব, গ্রামের মানুষ তারাও ভালো নেই। বিদেশে যারা চাকরি করছেন তারা কী যে অমানুষিক পরিশ্রম করে টাকা রোজগার করেন এটা যাদের জানা নেই, তাদের বোঝানো যাবে না। রক্ত পানি করা উপার্জিত টাকাও অনেকে বৈধ পথে পাঠাতে পারেন না, হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাতে গিয়ে কত যে তিগ্রস্ত হতে হয় তা তোমাকে কী বলব? ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তুমি চলে গেছো, আজো সে কথা মনে হলে বুক চৌচির খানখান হয়ে যায়; কিন্তু আবার যখন ভাবী দেশকে, দেশবাসীকে তুমি যতটা ভালোবাসতে তাতে দেশের আজকের অবস্থা দেখলে হয়তো তুমি সহ্য করতে পারতে না।
তোমার মৃত্যুর পর গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে সুধীন দাশগুপ্তের সুরে একসময়ের প্রখ্যাত সাংবাদিক বর্তমানে একজন বড়সড় শিল্পপতি আবিদুর রহমানের কথায় নির্বাসন জীবনে দু’টি গান আমায় বড় বেশি কাঁদাত।

বঙ্গবন্ধু, ফিরে এলে তোমার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় তুমি আজ,
ঘরে ঘরে এত খুশি তাই;
কী ভালো তোমাকে বাসি আমরা বলো কী করে বোঝাই ॥
এ দেশকে বলো তুমি বলো কেন এত ভালোবাসলে?
সাত কোটি মানুষের হৃদয়ের এত কাছে কেন আসলে?
এমন আপন আজ বাংলার তুমি ছাড়া কেউ আর নাই ॥

সারাটা জীবন তুমি নিজে শুধু জেলে জেলে থাকলে;
আর তব স্বপ্নের সুখী এক বাংলার ছবি শুধু আঁকলে।
তোমার নিজের সুখসম্ভার কিছু আর দেখলে না তাই ॥

মিশে গেল কত নাম কত প্রাণ বাংলার মাটি আর ঘাসে,
মিশে গেল তারা হয়ে তারা সবে সোনার বাংলার এই সুনীল আকাশে ॥

বাংলার আলো আর বাতাসের দান বাংলার নদী আর পাখিদের গান
সব ঋণ শোধ করে গেল তারা শেষ নিঃশ্বাসে ॥

কত ভাই কত যে বোনের জীবনের বিনিময়ে গড়া হলো
স্বাধীন বাংলার এই পতাকা সেই সব নাম একদিন ধীরে ধীরে
পৃথিবীতে হয়তো বা পড়ে যাবে ঢাকা ॥

ঘূর্ণির ঝড়ে কত সাগরের ঢেউ উঠে মিশে যায় তার হিসাব কি কেউ
চিরকাল লিখে রাখে বলো কভু ইতিহাসে? ॥
গান দু’টি নিশ্চয়ই তুমি শোনোনি। হয়তো বা জনাব আবিদুর রহমান কোনো সময় এই অমূল্য গানের রেকর্ডটি তোমাকে দিয়েও থাকতে পারেন। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মাতাল করা গলা এবং সুর আমাকে সব সময় কাঁদাত। এখনো গ্রামোফোন কোম্পানি অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের রেকর্ডটি যখনই শুনি কেমন জানি অন্য জগতে চলে যাই। আমি যেমন স্বস্তি ও শান্তিতে নেই, দেশবাসীও ভীষণ কষ্টে আছে। স্বাস্থ্যসেবার কথা শুনলে তুমি আবার দ্বিতীয়বার মারা যাবে। আমাদের দেশে চিকিৎসায় দুর্নীতি কত রকম এবং কী কী, এ নিয়ে পৃথিবীর যে কেউ থিসিস করতে পারে। সহজেই ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে পণ্ডিত হয়ে যেতে পারে। হাসপাতালে যাবে সিট পাবে না। কিন্তু একে ওকে পয়সা দিলেই বেসুমার সিট। তিন দিন ডাক্তার আসে না। কিছু খরচ করো দেখবে শিয়রে যমদূতের মতো সব সময় ডাক্তার দাঁড়িয়ে, পয়সা হলে কোনো কিছুতে কোনো অভাব নেই। এ নিয়ে পরের পর্বে অবশ্যই লিখব।
অতি সম্প্রতি কত কী যে রঙ দেখছি। আগে দেখতাম প্রসিদ্ধ ধনীদের বাড়িঘরের মূল ফটকে লেখা থাকত ‘কুকুর হইতে সাবধান’। এই সে দিন তোমার কন্যার এক মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আপনারা পুলিশ হতে সাবধান থাকবেন।’ পিতা, এখন অবস্থাটা বোঝো? সভ্য সমাজে পুলিশের কাছে মানুষ আশ্রয় নিতে যাবে, সেই পুলিশ আজ যেন এক হিংস্র প্রাণী। যে কারণে মন্ত্রী বলেন পুলিশ থেকে দূরে থাকতে। আজ দেখো চেতনার স্তর কোথায় নেমে গেছে। সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে কুকুর অথবা হিংস্র প্রাণীর অপবাদে অভিহিত করা হলো অথচ একজন পুলিশও কোনো উহ্ আহ্ করল না। আর কী-ই বা তারা করবে। প্রায় সবাই তো শাড়ি-চুড়ি পরা। আর ইদানীং তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হয়। কী রোগেই যে ধরেছেÑ মারামারি, কাটাকাটি ছাড়া তারা কিছুতেই সুস্থির থাকতে পারে না। পাবলিক মারে, সাংবাদিক মারে, কোর্ট আঙিনায় পুলিশ ক্যান্টিনে নিয়ে দিনদুপুরে মেয়েদের শ্লীলতাহানি করেÑ এসবের বড় বড় ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সব কিছুর এত জ্বলজ্বলে ঝকঝকে ছবি আসে যা দেখার মতো। মনে হয় তুমি কখনো দেখোনি। তোমার জমানায় ছিল সাদা-কালো ছবি। এখন সবই রঙিন। কুকর্মের রঙিন ছবি এত ঝকঝকে তকতকে হয় যা দেখলে বিস্মিত হতে হয়। তার পরও মহিলা মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশের ব্যবহার এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। আবার সংবাদ সম্মেলনে তার ভাঙা দাঁত দেখিয়ে উপমা দেন আগের সরকারের আমলে পুলিশের আঘাতে তার দাঁত ভেঙেছিল। আদৌ তার দাঁত ভেঙেছিল কি না জানি না। শুনেছি মন্ত্রী হওয়ার পর একবার বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাজা ভেঙেছিলেন। হয়তো সে সময় দাঁতও ভাঙতে পারে। কিন্তু ওসব দেখানোর মানে কী? বিএনপির সরকারের আমলে কারো যদি দাঁত ভেঙে থাকে তাহলে আওয়ামী লীগের আমলে কি মাথা ফাটিয়ে শোধ নিতে হবে? তাহলে ছোটবেলায় পড়লাম কেন, ‘কুকুরের কাজ কুকুর করেছে, কামড় দিয়েছে পায়। তাই বলে কি কুকুরের পায়ে কামড় দেয়া মানুষের শোভা পায়।’ কবির এ উপদেশ থেকে আমরা কি কিছুই শিখব না, কিছুই শিা নেয়ার নেই? আমরা বড় অসহায় অবস্থায় আছি। আবার প্রার্থনা করি তুমি দোয়া করো, আশীর্বাদ করো। আমরা যেন এই অধঃগতির হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।
তোমাকে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর গণহত্যা দিবসের জনসভার কথা বলেছিলাম। শাহ আবু জাফর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট মাঠে অসম্ভব গরমের মধ্যে হাসামদিয়া গণহত্যা দিবস উদ্যাপিত হয়। মোটামুটি সাধ্যমতো তারা অনুষ্ঠানটি পালন করার চেষ্টা করে। প্রায় সব দলের লোকেরা ছিলেন। শুধু বর্তমান তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের লোকজনের অভাব ছিল। কেন যেন কোথাও গেলে সাধারণ মানুষ তোমার অতি প্রিয় নিকট মানুষ হিসেবে বড় ভালোবাসা দেখায়। এত বিব্রত হই কখনো সখনো তোমার পরেই আমাকে নিয়ে আলোচনা করায়। তোমার তুলনায় আমি কত ুদ্র। তার পরও অনেকে বড় বেশি বড় করে ভাবে। সে দিনের মিটিংয়েও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অনেক লোক কথা বলেছে, বক্তৃতা করেছে। ৩৩ জন নিরপরাধ গ্রামবাসী স্মরণে আমার মতো একজন নাখান্দানকে দিয়ে একটি ভিত্তিপ্রস্তরের উদ্বোধন করিয়েছে। কিন্তু ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল লিয়াকত হোসেন লিটন যখন সেই স্মরণসভায় বারবার ‘পাক বাহিনী, পাক বাহিনী, পাক হানাদার বাহিনী’ বলে উল্লেখ করছিল তখন আমার নিজেকে নাপাক মুক্তিযোদ্ধা মনে হচ্ছিল। আমরা কি ধীরে ধীরে নির্বোধ হয়ে গেলাম। পাক আর নাপাকের অর্থ বুঝি না। ১৬ মে ১৯৭১ সালে হাসামদিয়ায় যতীন্দ্র মোহন সাহা, যজ্ঞেশ্বর সাহা, শ্যামসুন্দর সাহা, সুরেশ চন্দ্র পোদ্দার, নীল রতন সমাদ্দার, হরিপদ সাহা, মল্লিক চন্দ্র চক্রবর্তী, সূর্যকুমার দাশ, কমলকান্তি পাল, সচিন্দ্রনাথ সাহা, বিনোদ বিহারী সিংহ, সুবলচন্দ্র সাহা, শরৎচন্দ্র পোদ্দার, চিত্তরঞ্জন দাস, প্রফুল্ল রুদ্র, সম্ভুনাথ চন্দ, কালিপদ বালা, সুরেন বাড়ৈ, গণেশ মণ্ডল, পুলিন কর্মকার, যতীন কুণ্ডু, ধীরেন মণ্ডল, বসুদেব রাজবংশী, সুমন্ত রাজবংশী, গোপাল রাজবংশী, নবদ্বীপ রাজবংশী, শান্তিরাম মণ্ডল, সুখচাঁদ মণ্ডল, যতীন্দ্রনাথ সাহা, হরিহর সাহা (পুটে) জিন্নাহ্ আলী ব্যাপারী, জীবনকৃষ্ণ দে, নিরোদা বালা দে’কে গুলি করে এবং পুড়িয়ে নির্মমভাবে যারা হত্যা করেছে এবং অনেক মা-বোনের সম্মানহানি করেছে সেই হানাদার খুনি বাহিনীকে ঘটনার ৪০-৪১ বছর পরও স্মরণ করতে গিয়ে তাদের পাক পবিত্র বলছি। আমরা কি ভাষাজ্ঞান হারিয়ে ফেলছি। বড় অদ্ভুত লেগেছে!
আবু জাফর মিয়া নামে শাহ আবু জাফরের নেতা মঞ্চ কাঁপিয়ে এক বক্তৃতা দিলেন, সাথে তার পাইলদোহারী সাজলেন তথাকথিত এক মুক্তিযোদ্ধা আবির আহাদ। তাদের বক্তব্যের মূল সুর ছিল, ‘বঙ্গবন্ধু আপনাকে কত ভালোবাসতেন। বঙ্গবীর বলে ডাকতেন। আপনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে যাবেন কেন? আপনাকে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রীকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আপনার নেতৃত্ব নিতে হবে। আপনাকে আমাদের হাল ধরতে হবে।’ তাদের ভাবখানা এই, তোমার কন্যা যা কিছু করুক গোলামের মতো তার পায়ে পড়ে থাকলেই খুশি। তারা তো জানে না তোমার এই পুত্রের উচিত কথা বলতে পেটের ভেতর কুরকুর করে। শক্তি দিয়ে কাদের সিদ্দিকীকে বশ করা যায় না। পিতা, তুমি ছাড়া আর কেউ জানে না। আর আমি, তুমি সবাই তো আল্লাহর গোলাম। সেই আল্লাহকে বাদ দিয়ে গোলামের গোলামি করি কী করে? তাই ওই সভাতেই বলেছিলাম, ‘কোনো বাবার পাঁচ সন্তান হলে বড় হওয়ার পর আলাদা বাড়িঘর করলে অন্য ভাই-বোনেরা গিয়ে তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় না। সম্ভব হলে তাকে সাহায্য করে। তোমার হুকুমে মুক্তিযুদ্ধ করে তোমার পদতলে লাধিক অস্ত্র দিয়েছি। জীবনে প্রায় ৪৫ বছর তোমার লালন-পালন করা আওয়ামী লীগের ঝাণ্ডা উঁচুতে থাকুক তার জন্য জীবনপাত করেছি। এখন তোমার কাছে আসার সময় গামছা মার্কা নিয়ে ছোট্ট একটা ঘর বেঁধেছি। সেই ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে কত যে কুচেষ্টা। সে সভায় খুব সাবলীল ভাষায় বক্তৃতা করেছিল তোমারই ফরিদপুরের এক মেয়ে এএইচ গ্র“পের চেয়ারম্যান সুরভী হোসেন চামেলি এবং তার স্বামী একই গ্র“পের এমডি আবুল হোসেন। ফেরার পথে তাদের জুট মিলে নিয়ে গিয়েছিল। কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিকদের এক ছোট সমাবেশও করেছে। বড় ভালো লেগেছে তাদের আন্তরিকতায়। আমার এবং আমার স্ত্রী নাসরীনের জন্য মস্তবড় গাঁদা ফুলের মালা দিয়েছিল। যা ঘরে ফিরেই প্রিয়তমা পতœী নাসরীনের গলায় পরিয়ে দিয়েছিলাম। স্বাধীনতার পর থেকে আমি গলায় মালা পরি না। তাই আমারটা হাতে করে এনেছিলাম। আমার ছোট্ট কুশিমণি গলায় মালা পরে সারা বাড়ি মহানন্দে ছোটাছুটি করেছিল। মালা গলায় সে যখন হাঁটছিল মালাটি ফোরে গড়াগড়ি যাচ্ছিল। বড় স্বর্গীয় দৃশ্য দেখাচ্ছিল সেটা। শুধু ফুলমালা নয়। এএইচ গ্র“পের চেয়ারম্যান ও এমডি তাদের বাসায় নিয়ে নাশতা খাওয়াতে পীড়াপীড়ি করছিল। নানা ফলমূলের সাথে চিতই পিঠা ছিল। সাধারণত চিতই পিঠা গোল করে বানানো হয়। সেই প্রথম দেখলাম আগেকার দিনের কলা বিস্কিটের মতো লম্বা চিতই পিঠা। আমার স্ত্রী নাসরীন চিতই পিঠা খুবই পছন্দ করে। স্ত্রী-ছেলেমেয়ের জন্য কোনো জায়গা থেকে খাবার জিনিস নিয়ে আসতে আমার কোনো লাজ-শরম নেই। ছেলেবেলায় যেমন কোথাও কোনো ভালো কিছু খেলেই ছোট ভাই-বোন ও মায়ের জন্য নিয়ে আসতাম। এখনো সে অভ্যাস ছাড়তে পারিনি। কিছু ভালো লাগলেই তা বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করি। সে দিনও নিয়ে এসেছিলাম। অন্য কিছু না হোক সেই চিতই পিঠা আমার স্ত্রীর খুব ভালো লেগেছিল। এএইচ গ্র“পের চেয়ারম্যান সুরভী হোসেন চামেলি আমাকে বড় ভাই হিসেবে ডেকেছে। আমিও তাকে ছোট বোনের মর্যাদা দিয়েছি। আল্লাহ তাদের দীর্ঘজীবী করুন। আমিন। (চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন