বুধবার, ২৭ জুন, ২০১২

প্রসঙ্গ এম ইলিয়াস আলী


ইব্রাহিম ভূঁইয়া রেনু

গভীর সঙ্কটে চলছে দেশ। জাতির ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভয়ঙ্কর দলীয়করণের শিকার। সরকার সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। রক্ষক হয়েছে ভক্ষক। যে সরিষা দিয়ে ভূত তাড়ানোর কথা সে সরিষায় ভর করেছে ভূত। দেশে আইনের শাসন নেই। বিচারের প্রদীপ নিভে গেছে। সর্বোচ্চ আদালত ন্যায় বিচারে বিব্রত বোধ করে। রাষ্ট্র জনগণকে অন্ধকার গলিতে নিয়ে গেছে। সে অন্ধকার বড় ভয়ংকর। আমরা তলিয়ে যাচ্ছি সেই ভয়ঙ্কর অন্ধকারের অতল গহ্বরে। গ্যাস নেই, বিদ্যুত্ নেই, পানি নেই। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়াটি ছুটছে তো ছুটছেই। হত্যা, সন্ত্রাস, গুমে মানুষ আতঙ্কিত।
এম ইলিয়াস আলীর গুমের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। ইলিয়াস আলী সাধারণ মানুষ নন। তার জন্য সারা দেশ উত্তাল। ইলিয়াস আলী স্বৈরাচার আন্দোলনে রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতা। জাতীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী তরুণ রাজনীতিবিদ। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। সাবেক সংসদ সদস্য। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি। মাটি ও মানুষের নেতা। সরকার জীবিত অবস্থায় তাকে ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর। বর্তমান উত্তাল রাজনীতিতে বিএনপি সবচেয়ে বড় দল। সঙ্গত কারণেই তাদের প্রিয় নেতাকে ফিরে পেতে অবশ্যই কঠোর আন্দোলন অনিবার্য। আন্দোলন যখন চাঙ্গা হয় তখন সরকার ঘটনা ঘটায়। সচিবালয়ে বোমা হামলা এমনি একটি ঘটনা। এটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সাজানো নাটক। বিএনপির শীর্ষ ৪৫ নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দিয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। সামান্য ঝড়-ঝাপটায় হাল ছাড়ার দল এটি নয়। আপষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অতীতে অনেক কঠিন সময় পার করেছে গণতন্ত্রমনা বৃহত্ এই দলটি। বিএনপির রয়েছে বিশাল কর্মীবাহিনী এবং বিপুল জনমর্থন।
জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ফলাফল শূন্য। তিনি হতাশ। ডটার অব পিসের শান্তির বার্তা ইলিয়াসের ঘরে পৌঁছায়নি। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আকুলতায় বৃদ্ধা মায়ের কান্নায় বিশ্বনাথের আকাশ ভারি। মেয়ে সাইয়ারার নির্ঘুম রাত কাটানোর কষ্টে পাষানের মন গলে। বাবাকে দ্রুত ফিরে পেতে করুণ মিনতি করে সাইয়ারা হিলারিকে চিঠি লিখেছে। অশ্রুভেজা এই চিঠি পেয়ে হিলারির মন গলেছে কিনা জানি না, তবে ইলিয়াস পরিবারের গগনবিদারি হাহাকার বিশ্ব মানবতার মন ছুঁয়েছে। সাইয়ারা নাওয়াল লিখছে ‘কতদিন বাবা আমাকে চুমু খায় না। আমি খুব একাকি বোধ করছি এবং কষ্ট পাচ্ছি। বাবা ছাড়া আমার পৃথিবীকে খালি মনে হয়।’
জাতীয়তাবাদ চেতনায় সমৃদ্ধ সহজ-সরল মানুষ ইলিয়াসের জীবনের সেই শান্তিপূর্ণ রাত্রিটি পরিণত হলো ভয়ঙ্কর এক কালো রাত্রিতে। মধ্যরাতের কালো ঘোড়াটি এবং সুরঞ্জিতের কালো বিড়াল কোথায় হারাল জানি না। স্যালুট, সাহসী ড্রাইভার আজমকে। তবে ক্ষমতাসীন দলের সীমাহীন ব্যর্থতা ও বাড়াবাড়ির কারণে দেশে যে আগুন জ্বলছে তার সম্পূর্ণ দায়ভার সরকারের। সব লাশের কফিনই বইতে হবে শেখ হাসিনাকে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান যাকে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির টোপ ফেলে মহাজোটে টেনেছেন, তিনি বলেছেন, ঘরে থাকলে খুন, বাইরে গেলে গুম এমন এক ভয়ঙ্কর নগরী ঢাকা। মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের ভাষায় রাজনীতিতে আগ্নেয়গিরির লাভা প্রবাহিত হচ্ছে, যা জ্বলন্ত আগুনের চেয়েও ভয়াবহ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহম্মেদের মতে রাজনীতিতে এখন সুনামি চলছে। দুর্নীতিবাজ মহাজোট সরকারকে তালাক দিতে চাই। অন্তত তাদের নিয়ে একসঙ্গে ঘর করা যায় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশে উপবিষ্ট রাশেদ খান মেনন বড় আক্ষেপ করে বলেছেন, আমি নিজেও সারাক্ষণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। একই শরিক দলের হাসানুল হক ইনু সরকারের ব্যর্থতার দায়ভার শরিকরা নেবেন না বলে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। বিজ্ঞ রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন ইলিয়াস আলীকে জীবিত ফেরত দেয়ার জোর দাবি জানিয়ে বলেছেন, যেভাবেই তিনি গুম হোন এবং তাতে কেউ সহযোগিতা করুক বা না করুক ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব সরকারের। মুক্তিযুদ্ধের দুঃসাহসিক যোদ্ধা ও সংগঠক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, এমন অসভ্য সরকার আর কখনও আমি দেখিনি।
’৭২-৭৫-এ আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে ২১ বছর তারা ক্ষমতার বাইরে ছিল। রক্ষীবাহিনী, মুজিব বাহিনীর অত্যাচারে মানুষ পাগলের মতো ছোটাছুটি করত। এখনও সরকার ভুল পথে হাঁটছে। শেখ হাসিনার বোধোদয় না হলে আবারও পতন অনিবার্য। প্রধানমন্ত্রী যদি একটু সহিষ্ণু ও মানবিক হতেন- স্বস্তি পেত মানুষ, রক্ষা পেত গণতন্ত্র।
লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন