কা ম রু ল হা সা ন এই হল আজকের দিনের বিদ্যুত্ পরিস্থিতি, ঘণ্টা ধরে ঘটা করে একেক এলাকায় আসে, সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় অন্য এলাকায়। গোটা রাজধানীর অর্ধেক এলাকায় যদি বিদ্যুত্ থাকে, তবে বাকি অর্ধেক থাকে আঁধারের চাদরের নিচে ঢাকা; সহজেই বোঝা যায় চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ মাত্র অর্ধেক। আসলে প্রকৃত সরবরাহ অর্ধেকেরও নিচে, কেননা অনেক এলাকায় লোডশেডিং হয় ঘণ্টা ঘণ্টা ধরে। বিদ্যুিনর্ভর শহরবাসীর জীবনে বিদ্যুত্ এক মায়া হরিণ, চঞ্চল পায়ে কেবলি সে দৌঁড়ে পালায়। ডেসার জঙ্গলে তার রুপালি ডোরা দেখা গেলেও পুরো রূপ মায়াই থেকে যায়। যে এলাকায় আসে, সে এলাকায় হাসিমুখ ফোটে; আর অন্য এলাকার মুখ বেজার হয়। অনেক মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের চলে যাওয়া বলে কিছু নেই, কারণ সে তো ছিলই না, সে কেবল মাঝে মাঝে আসে। এবার গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ছিল অসহনীয়, তাপদাহ যাকে বলে, তার মধ্যে বিদ্যুতের ওই লুকোচুরি অতিষ্ঠ করে তুলেছিল নগরবাসীকে, যাদের বেশিরভাগই হাঁসফাঁস করেন আলো-বাতাসহীন অপরিসর সব প্রকোষ্ঠে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ভুগেছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে নতুন উপসর্গ মধ্যরাতে বিদ্যুত্ চলে যাওয়া। সারা সন্ধ্যারাত জুড়ে বিদ্যুিবভ্রাটে নাকানি-চুবানি খেয়ে শহরবাসী যখন ঘুমাতে গেছেন তখনই লোডশেডিং। তাদের ভাবনায় তখন পরবর্তী কর্মব্যস্ত দিনটি, ঘুমহীনতার ক্লান্তি নিয়ে প্রচণ্ড যানজট ঠেলে পরদিন যখন কর্মক্ষেত্রে পৌঁছান, তখন তারা ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। কাজ করার সকল প্রণোদনা ততক্ষণে অন্তর্হিত, কেননা অফিসেও চলে ঘণ্টা ঘণ্টা বিদ্যুতের ভোজবাজি।
আমি ১৯৮১ সালে প্রথম কলকাতা যাই। বাংলাদেশ থেকে আমরা চারজন শিক্ষার্থী ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে খড়গপুর আইআইটিতে পড়তে যাওয়ার প্রাক্কালে কলকাতায় যাত্রাবিরতি করি। সেই প্রথম লোডশেডিং দেখি কলকাতায়, কেননা তখন ঢাকায় বিদ্যুিবভ্রাট থাকলেও লোডশেডিং ছিল না। কলকাতায় তখন পাতাল রেলের খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তাঘাটে ডাইভারশন আর প্রচণ্ড যানজট। ঢাকা সে সময়টায় অনেকটাই ফাঁকা, যানজট নেই। আমরা চার বন্ধু স্বস্তি পেয়েছিলাম এই ভেবে যে, আমরা কলকাতার চেয়ে ভালো আছি। কেবল তৃপ্তি নয়, আমাদের মাঝে একটা অহঙ্কারের ভাবও এসে গিয়েছিল। এ নিয়ে পরে আইআইটিতে অধ্যয়নরত কলকাতার বন্ধুদের সঙ্গে দুটি রাজধানীর তুলনা করে আত্মপ্রসাদ লাভ করেছি। আজ ত্রিশ বছর পরে চিত্রটা একেবারেই উল্টো। আমাদের লোডশেডিং, আমাদের যানজট এখন ভুবনবিখ্যাত! কলকাতা দুটো সমস্যাই কাটিয়ে উঠেছে। ত্রিশ বছরে কলকাতা এগিয়েছে সমুখপানে, আর ঢাকার চাকা ঘুরেছে পশ্চািদকে।
এটা ঠিক আমাদের শহরটির লোকসংখ্যা ত্রিশ বছরে বহু বহুগুণ বর্ধিত হয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। শিল্পায়নের ফলে, আবাসনের বিস্তৃতির ফলে বিদ্যুতের চাহিদা অতীতের তুলনায় আকাশচুম্বী হয়েছে সত্যি, কিন্তু সে বিস্তৃতি কলকাতাতেও ঘটেছে। পৃথিবী জুড়েই গ্রামাঞ্চল থেকে আসা মানুষের ঢলে বড় বড় শহরগুলো অতিকায় দানবে (সবমধ পরঃু) পরিণত হয়েছে। অগ্রগতির তুলনায় জনস্ফীতির হার আমাদের সবচেয়ে বেশি। কিন্তু প্রতিটি দেশের সরকারই এটা আগেভাগে অনুমান করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকে। ১৯১৭ সালে বলশেভিকরা ক্ষমতা দখলের পর তাদের নেতা লেনিন যে কর্মসূচি নেন তাতে অগ্রাধিকার পেয়েছিল গোটা রাশিয়ায় বিদ্যুত্ ছড়িয়ে দেওয়া। শিল্পায়নের জন্য বিদ্যুতের বিকল্প নেই লেনিন জানতেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত হওয়ার পরে নির্বাচিত সরকারগুলোর মাঝে কী দেখলাম আমরা? একটি সরকার তার পূর্ববর্তী সরকার ‘বিদ্যুত্ খাতে কিছুই করেনি’ বলে দোষারোপ করছে; ক্ষমতারোহণের প্রথম দুটি বছর কেটে যায় এই ইষধসব ধেসব খেলতে। এটা সত্যি পূর্ববর্তী বিএনপি সরকার বিদ্যুতের প্রচুর খুঁটি (খাম্বা) গাঁড়লেও সেসবের ওপর দিয়ে নতুন উত্পাদিত কোনো বিদ্যুত্ নিতে পারেনি। আশ্চর্য হলেও সত্যি, তাদের পাঁচ বছর শাসনামলে এক মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এটা নিয়ে হইচই করে সময়ক্ষেপণ করতে লাগল, যেন বিষোদগারের ভেতরেই আলোকপ্রাপ্তির সম্ভাবনা। বিদ্যুত্ নিয়ে মারাত্মক অবহেলার শাস্তি বিএনপি তো পেয়েছেই, নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনে নিজেদের ভরাডুবি ঠেকাতে আওয়ামী লীগের উচিত জাতীয় অর্থনীতির চালিকা বিদ্যুতের জোগান বাড়িয়ে তোলা এবং জনগণের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। এতে তাদের একটি প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকারও পূর্ণ হতো। কিন্তু অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই খাতে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর মতোই কালক্ষেপণ করে উদ্যোগ নেওয়ায় সমস্যা সমাধানের সুবর্ণ সুযোগটি তারা হারিয়ে ফেলছে।
একটি অতি দীর্ঘায়িত সমস্যার অতি দ্রুত সমাধান করতে গিয়ে সরকার যে কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা এখন হঠকারী বলে প্রমাণিত হচ্ছে। কুইক রেন্টাল নামটির মাঝেই লুকিয়ে আছে এর প্রকৃতি; স্বল্পতম সময়ে সে বিদ্যুত্ উত্পাদনে সক্ষম। কিন্ত বাস্তবতা হল অনুমতি পাওয়া মোট ৫৪টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্রের অনেকগুলো ত্রিশ মাসেও উত্পাদনে যেতে পারেনি। গত বছর ৩ হাজার ২০০ কোটি টাতা ভতুর্কি দিয়ে বিদ্যুত্ পাওয়া গেল এক হাজার মেগাওয়াটের মতো। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরনো বিদ্যুেকন্দ্রগুলো মেরামত করে নিলে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ পাওয়া যেত। এতে সরকারের খরচ হত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অর্থাত্ অর্ধেকের চেয়ে কম খরচে আড়াই গুণ বেশি বিদ্যুত্ পাওয়া যেত। পিডিবির তথ্য অনুসারে কেবল এপ্রিল মাসে পুরনো ও জরাজীর্ণ বিদ্যুেকন্দ্রগুলোর কারণে ১ হাজার ১৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ কম উত্পাদিত হয়েছে। আশ্চর্য যে সরকার সাড়ে তিন বছরে এসব বিদ্যুেকন্দ্র সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তা হলে কার স্বার্থে কুইক রেন্টালের মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়া হল? কুইক রেন্টাল কোম্পানিগুলো মূলত কইয়ের তেলে কই ভাজছে। তারা নিয়ে এসেছে উন্নত দেশগুলোর ফেলে দেওয়া বিকল সব প্ল্যান্ট। যে কারণে এগুলো প্রত্যাশামতো উত্পাদনে যেতে পারছে না। এখন এই বিপুল পরিমাণ ভতুর্কি তুলে নেওয়ার জন্য সরকার দফায় দফায় জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে চলেছে, বাজেটে নতুন করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে জনগণের ওপর। বিদ্যুত্ খাতে এই ব্যর্থতার জন্য এখন এমপিরা নিজ নিজ এলাকায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা পেয়ে বসেছে অনেককে। তারা দেখেছেন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনগণ প্রায়শ রুদ্ররূপ ধারণ করেন।
সরকারি কাগজে-কলমে বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়লেও লোডশেডিং কিন্তু কমেনি, বরং বেড়েছে। জোগানের চেয়ে চাহিদার অনেকগুণ বৃদ্ধির কথা সরকারের লোকজন বলছেন, সেটা আংশিক সত্যি। এটা মেনে নিয়েও বলা যায় যে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের এগুনো উচিত ছিল। প্রশ্নবিদ্ধ কুইক রেন্টাল ব্যর্থতার ভার সরকারকেই নিতে হবে, উপদেষ্টাকে নয়। ‘সকল কাজের কাজী’দের দিয়ে গত চল্লিশ বছরে এ দেশের বৈপ্লবিক দূরে থাক, দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন হয়নি, ভবিষ্যতে যে হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। জনপ্রশাসনের অন্য সকল ক্ষেত্রের মতো বিদ্যুত খাতে দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অপচয় মাত্রাতিরিক্ত; যাকে আদর করে ‘সিস্টেম লস’ বলা হয়। আর এর দায়ভার এসে পড়ে ভোক্তাদের ওপর, যারা না পায় পর্যাপ্ত বিদ্যুত্, না পায় সাশ্রয়ী বিদ্যুত্ বিল। অদক্ষতা, দুর্নীতির জটাজাল থেকে সাধারণ গ্রাহকের যেন মুক্তি নেই। বিদ্যুত্সাশ্রয়ী বলে তাদের যে বিনামূল্যের বাতি দেওয়া হয়েছিল সেখানেও নিম্নমানের বাতি সরবরাহ করে ঘটেছে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি। যে ক্ষুদ্র গ্রাহকের বিল চারশ’ টাকা বাকি, তার সংযোগ ঠিকই কাটা পড়ে, আর যে প্রভাবশালীর বকেয়া চার লাখ টাকা, সে দিব্যি সংযোগ পেয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুত্ বলি আর গ্যাস বলি, প্রতিটি সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা হয়ে উঠেছে লুটপাটের আখড়া। তবে এর উদ্ভব সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেনি, বহুকাল ধরেই তা চলে আসছে, সৃষ্টি করেছে আপন ‘গৌরবময়’ ঐতিহ্য, যত দোষ নন্দ ঘোষ ‘সিস্টেম’। কোন রাজনৈতিক সরকারই এই চক্র থামানো দূরে থাক, কমাতে পারেনি। তাই গ্যাস হোক আর বিদ্যুত্ হোক, মিটার রিডাররা ভাই ভাই। তারা প্রায় প্রত্যেকেই অসম্ভব ধনী, অসত্ উপায়ে অর্জিত তাদের বিপুল সম্পদের হিসাব নেওয়ার কেউ নেই। কেননা এরা প্রত্যেকেই মৌসুমি পাখির মতো ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে যেতে ওস্তাদ, আর ক্ষমতায় অন্ধ নেতারা সুবিধাবাদীদের চিনেও না চেনার ভান করেন। স্মরণযোগ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের অনেকে ছিল স্রেফ মিটার রিডার।
বিদ্যুত্ যে কেবল আমাদের অর্থনীতির, শিল্পায়নের প্রাণসঞ্চালক তাই নয়, পরবর্তী নির্বাচনে জিততে হলে বিদ্যুত্ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে-এ কথা ক্ষমতাসীনরাও ভালোভাবেই জানে। তাই তারাও চায় বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়ুক। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন সারা দেশে বিদ্যুত্ উত্পাদন ছিল তিন হাজার মেগাওয়াটের কিছু কম বা বেশি, তিন বছরে সরকারের দাবি বিদ্যুত্ বেড়েছে দুই হাজার মেগাওয়াট। বেড়েছে যে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্ত কী মূল্যে, কী বিপুল ভর্তুকিতে, সেটাই দেখার বিষয়। আর জনগণের জীবনে এই বৃদ্ধির কোনো প্রতিফলন নেই। এবারের গ্রীষ্মে লোডশেডিং হয়েছে গতবারের চেয়ে বেশি। গ্রীষ্ম জুড়ে বিদ্যুত্মন্ত্রীর সঙ্গে দেশবাসীও বৃষ্টির আশায় আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেছেন। বৃষ্টি হলে আবার সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রীর উদ্বেগ বেড়ে যায়। বিজ্ঞানের যুগে এই হল আমাদের দৈবনির্ভরতার তামাশা। বৃষ্টি আর তাপমাত্রা নামার কারণে ইদানীং যেমন লোডশেডিং কম হচ্ছে। বিদ্যুত্মন্ত্রীর সবচেয়ে প্রিয় ঋতু যে শীতকাল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিদ্যুত্, জ্বালানি এগুলো হল আলাদিনের চেরাগের মতো, ঘষা দিলেই কোটি টাকার দৈত্যটি এসে হাজির হয়। এখানে হাজার কোটি টাকার নিচে কোনো বাজেট বা ভর্তুকি নেই, শত কোটি টাকার নিচে নেই কোনো পুকুরচুরি। বিদ্যুত্ বিলের চুরি ঠেকাতে সরকার যে প্রিপেইড মিটার কার্ড চালু করতে চাচ্ছে সে মহতী উদ্যোগও নেপথ্যের নায়কদের কারসাজিতে ঢিমে-তেতালা গতিতে এগুচ্ছে। অনেকটা ডিশের তারের জটাজাল থেকে ঢাকা শহরকে নান্দনিক করে তুলতে সরকার যে ভূগর্ভস্থ অপটিকাল ফাইবার বসাচ্ছিল, সে প্রকল্পের মতো। অসাধু লোকদের উত্পাতে ভালো উদ্যোগগুলো মুখ থুবড়ে পড়ছে। রাজনৈতিক সরকারগুলোর সীমাবদ্ধতা হল তাদের দলীয় লোকদের খুশি রাখতে হয়। আদর্শ বা দেশপ্রেম নয়, সুবিধা হাতিয়ে নেওয়াই যে বিভিন্ন অঙ্গদলের লোকদের মূল লক্ষ্য-সেটা তারাও বোঝে। আর আত্মকেন্দ্রিক সুবিধাবাদীরা জানে পার্টির পতাকাতলে থাকলে সাত খুন মাফ হয়ে যায়।
বিদ্যুত্ পরিস্থিতি বেশ নাজুক, তা নাজুক অবস্থায় রেখেছে এ দেশের পনের কোটি মানুষ এবং তাদের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে। সরকারের উচিত দ্রুত কুইক রেন্টালের বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসা, পুরনো বিদ্যুেকন্দ্রগুলোর সংস্কার এবং নতুন গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন করা। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে সঞ্চালনযোগ্য লাইন স্থাপন করে কমদামে বিদ্যুত্ কেনা একটি ভালো উপায় হতে পারে। সরকার এমন কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে, যা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। আগামী একশ’ বছরের মধ্যে পৃথিবীর তেল ও গ্যাসক্ষেত্রগুলো নিঃশেষিত হয়ে যাবে। তখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি উত্সগুলোই হবে ভবিষ্যত্ প্রজন্মের আশা-ভরসা। সূর্যের অনিঃশেষ ও অপরিমেয় আলোয় উদ্ভাসিত বাংলাদেশে সৌরশক্তিই দিনে ও রাতে আলো জোগাবে। রাশিয়ার সহযোগিতায় সরকার যে পরমাণু শক্তিনির্ভর বিদ্যুেকন্দ্রটি স্থাপন করতে যাচ্ছে তা সাম্প্রতিক বছরগুলোর ঘাটতি চমত্কার মিটিয়ে দেবে সত্যি, কিন্তু পরমাণু শক্তির ব্যবহার বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বিদ্যুতের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নিহিত রয়েছে মাতা সূর্যেই-যে দেদীপ্যমান নক্ষত্র আমাদের গ্রহটির সকল শক্তি, সকল প্রাণের উত্স; সকল প্রাণের ধারক!
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক
আমি ১৯৮১ সালে প্রথম কলকাতা যাই। বাংলাদেশ থেকে আমরা চারজন শিক্ষার্থী ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে খড়গপুর আইআইটিতে পড়তে যাওয়ার প্রাক্কালে কলকাতায় যাত্রাবিরতি করি। সেই প্রথম লোডশেডিং দেখি কলকাতায়, কেননা তখন ঢাকায় বিদ্যুিবভ্রাট থাকলেও লোডশেডিং ছিল না। কলকাতায় তখন পাতাল রেলের খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তাঘাটে ডাইভারশন আর প্রচণ্ড যানজট। ঢাকা সে সময়টায় অনেকটাই ফাঁকা, যানজট নেই। আমরা চার বন্ধু স্বস্তি পেয়েছিলাম এই ভেবে যে, আমরা কলকাতার চেয়ে ভালো আছি। কেবল তৃপ্তি নয়, আমাদের মাঝে একটা অহঙ্কারের ভাবও এসে গিয়েছিল। এ নিয়ে পরে আইআইটিতে অধ্যয়নরত কলকাতার বন্ধুদের সঙ্গে দুটি রাজধানীর তুলনা করে আত্মপ্রসাদ লাভ করেছি। আজ ত্রিশ বছর পরে চিত্রটা একেবারেই উল্টো। আমাদের লোডশেডিং, আমাদের যানজট এখন ভুবনবিখ্যাত! কলকাতা দুটো সমস্যাই কাটিয়ে উঠেছে। ত্রিশ বছরে কলকাতা এগিয়েছে সমুখপানে, আর ঢাকার চাকা ঘুরেছে পশ্চািদকে।
এটা ঠিক আমাদের শহরটির লোকসংখ্যা ত্রিশ বছরে বহু বহুগুণ বর্ধিত হয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। শিল্পায়নের ফলে, আবাসনের বিস্তৃতির ফলে বিদ্যুতের চাহিদা অতীতের তুলনায় আকাশচুম্বী হয়েছে সত্যি, কিন্তু সে বিস্তৃতি কলকাতাতেও ঘটেছে। পৃথিবী জুড়েই গ্রামাঞ্চল থেকে আসা মানুষের ঢলে বড় বড় শহরগুলো অতিকায় দানবে (সবমধ পরঃু) পরিণত হয়েছে। অগ্রগতির তুলনায় জনস্ফীতির হার আমাদের সবচেয়ে বেশি। কিন্তু প্রতিটি দেশের সরকারই এটা আগেভাগে অনুমান করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকে। ১৯১৭ সালে বলশেভিকরা ক্ষমতা দখলের পর তাদের নেতা লেনিন যে কর্মসূচি নেন তাতে অগ্রাধিকার পেয়েছিল গোটা রাশিয়ায় বিদ্যুত্ ছড়িয়ে দেওয়া। শিল্পায়নের জন্য বিদ্যুতের বিকল্প নেই লেনিন জানতেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত হওয়ার পরে নির্বাচিত সরকারগুলোর মাঝে কী দেখলাম আমরা? একটি সরকার তার পূর্ববর্তী সরকার ‘বিদ্যুত্ খাতে কিছুই করেনি’ বলে দোষারোপ করছে; ক্ষমতারোহণের প্রথম দুটি বছর কেটে যায় এই ইষধসব ধেসব খেলতে। এটা সত্যি পূর্ববর্তী বিএনপি সরকার বিদ্যুতের প্রচুর খুঁটি (খাম্বা) গাঁড়লেও সেসবের ওপর দিয়ে নতুন উত্পাদিত কোনো বিদ্যুত্ নিতে পারেনি। আশ্চর্য হলেও সত্যি, তাদের পাঁচ বছর শাসনামলে এক মেগাওয়াট বিদ্যুত্ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এটা নিয়ে হইচই করে সময়ক্ষেপণ করতে লাগল, যেন বিষোদগারের ভেতরেই আলোকপ্রাপ্তির সম্ভাবনা। বিদ্যুত্ নিয়ে মারাত্মক অবহেলার শাস্তি বিএনপি তো পেয়েছেই, নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনে নিজেদের ভরাডুবি ঠেকাতে আওয়ামী লীগের উচিত জাতীয় অর্থনীতির চালিকা বিদ্যুতের জোগান বাড়িয়ে তোলা এবং জনগণের জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। এতে তাদের একটি প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকারও পূর্ণ হতো। কিন্তু অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই খাতে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর মতোই কালক্ষেপণ করে উদ্যোগ নেওয়ায় সমস্যা সমাধানের সুবর্ণ সুযোগটি তারা হারিয়ে ফেলছে।
একটি অতি দীর্ঘায়িত সমস্যার অতি দ্রুত সমাধান করতে গিয়ে সরকার যে কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা এখন হঠকারী বলে প্রমাণিত হচ্ছে। কুইক রেন্টাল নামটির মাঝেই লুকিয়ে আছে এর প্রকৃতি; স্বল্পতম সময়ে সে বিদ্যুত্ উত্পাদনে সক্ষম। কিন্ত বাস্তবতা হল অনুমতি পাওয়া মোট ৫৪টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্রের অনেকগুলো ত্রিশ মাসেও উত্পাদনে যেতে পারেনি। গত বছর ৩ হাজার ২০০ কোটি টাতা ভতুর্কি দিয়ে বিদ্যুত্ পাওয়া গেল এক হাজার মেগাওয়াটের মতো। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরনো বিদ্যুেকন্দ্রগুলো মেরামত করে নিলে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ পাওয়া যেত। এতে সরকারের খরচ হত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অর্থাত্ অর্ধেকের চেয়ে কম খরচে আড়াই গুণ বেশি বিদ্যুত্ পাওয়া যেত। পিডিবির তথ্য অনুসারে কেবল এপ্রিল মাসে পুরনো ও জরাজীর্ণ বিদ্যুেকন্দ্রগুলোর কারণে ১ হাজার ১৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ কম উত্পাদিত হয়েছে। আশ্চর্য যে সরকার সাড়ে তিন বছরে এসব বিদ্যুেকন্দ্র সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তা হলে কার স্বার্থে কুইক রেন্টালের মত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়া হল? কুইক রেন্টাল কোম্পানিগুলো মূলত কইয়ের তেলে কই ভাজছে। তারা নিয়ে এসেছে উন্নত দেশগুলোর ফেলে দেওয়া বিকল সব প্ল্যান্ট। যে কারণে এগুলো প্রত্যাশামতো উত্পাদনে যেতে পারছে না। এখন এই বিপুল পরিমাণ ভতুর্কি তুলে নেওয়ার জন্য সরকার দফায় দফায় জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে চলেছে, বাজেটে নতুন করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে জনগণের ওপর। বিদ্যুত্ খাতে এই ব্যর্থতার জন্য এখন এমপিরা নিজ নিজ এলাকায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা পেয়ে বসেছে অনেককে। তারা দেখেছেন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনগণ প্রায়শ রুদ্ররূপ ধারণ করেন।
সরকারি কাগজে-কলমে বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়লেও লোডশেডিং কিন্তু কমেনি, বরং বেড়েছে। জোগানের চেয়ে চাহিদার অনেকগুণ বৃদ্ধির কথা সরকারের লোকজন বলছেন, সেটা আংশিক সত্যি। এটা মেনে নিয়েও বলা যায় যে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের এগুনো উচিত ছিল। প্রশ্নবিদ্ধ কুইক রেন্টাল ব্যর্থতার ভার সরকারকেই নিতে হবে, উপদেষ্টাকে নয়। ‘সকল কাজের কাজী’দের দিয়ে গত চল্লিশ বছরে এ দেশের বৈপ্লবিক দূরে থাক, দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন হয়নি, ভবিষ্যতে যে হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। জনপ্রশাসনের অন্য সকল ক্ষেত্রের মতো বিদ্যুত খাতে দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অপচয় মাত্রাতিরিক্ত; যাকে আদর করে ‘সিস্টেম লস’ বলা হয়। আর এর দায়ভার এসে পড়ে ভোক্তাদের ওপর, যারা না পায় পর্যাপ্ত বিদ্যুত্, না পায় সাশ্রয়ী বিদ্যুত্ বিল। অদক্ষতা, দুর্নীতির জটাজাল থেকে সাধারণ গ্রাহকের যেন মুক্তি নেই। বিদ্যুত্সাশ্রয়ী বলে তাদের যে বিনামূল্যের বাতি দেওয়া হয়েছিল সেখানেও নিম্নমানের বাতি সরবরাহ করে ঘটেছে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি। যে ক্ষুদ্র গ্রাহকের বিল চারশ’ টাকা বাকি, তার সংযোগ ঠিকই কাটা পড়ে, আর যে প্রভাবশালীর বকেয়া চার লাখ টাকা, সে দিব্যি সংযোগ পেয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুত্ বলি আর গ্যাস বলি, প্রতিটি সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থা হয়ে উঠেছে লুটপাটের আখড়া। তবে এর উদ্ভব সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেনি, বহুকাল ধরেই তা চলে আসছে, সৃষ্টি করেছে আপন ‘গৌরবময়’ ঐতিহ্য, যত দোষ নন্দ ঘোষ ‘সিস্টেম’। কোন রাজনৈতিক সরকারই এই চক্র থামানো দূরে থাক, কমাতে পারেনি। তাই গ্যাস হোক আর বিদ্যুত্ হোক, মিটার রিডাররা ভাই ভাই। তারা প্রায় প্রত্যেকেই অসম্ভব ধনী, অসত্ উপায়ে অর্জিত তাদের বিপুল সম্পদের হিসাব নেওয়ার কেউ নেই। কেননা এরা প্রত্যেকেই মৌসুমি পাখির মতো ক্ষমতাসীন দলে ভিড়ে যেতে ওস্তাদ, আর ক্ষমতায় অন্ধ নেতারা সুবিধাবাদীদের চিনেও না চেনার ভান করেন। স্মরণযোগ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের অনেকে ছিল স্রেফ মিটার রিডার।
বিদ্যুত্ যে কেবল আমাদের অর্থনীতির, শিল্পায়নের প্রাণসঞ্চালক তাই নয়, পরবর্তী নির্বাচনে জিততে হলে বিদ্যুত্ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে-এ কথা ক্ষমতাসীনরাও ভালোভাবেই জানে। তাই তারাও চায় বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়ুক। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন সারা দেশে বিদ্যুত্ উত্পাদন ছিল তিন হাজার মেগাওয়াটের কিছু কম বা বেশি, তিন বছরে সরকারের দাবি বিদ্যুত্ বেড়েছে দুই হাজার মেগাওয়াট। বেড়েছে যে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্ত কী মূল্যে, কী বিপুল ভর্তুকিতে, সেটাই দেখার বিষয়। আর জনগণের জীবনে এই বৃদ্ধির কোনো প্রতিফলন নেই। এবারের গ্রীষ্মে লোডশেডিং হয়েছে গতবারের চেয়ে বেশি। গ্রীষ্ম জুড়ে বিদ্যুত্মন্ত্রীর সঙ্গে দেশবাসীও বৃষ্টির আশায় আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেছেন। বৃষ্টি হলে আবার সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রীর উদ্বেগ বেড়ে যায়। বিজ্ঞানের যুগে এই হল আমাদের দৈবনির্ভরতার তামাশা। বৃষ্টি আর তাপমাত্রা নামার কারণে ইদানীং যেমন লোডশেডিং কম হচ্ছে। বিদ্যুত্মন্ত্রীর সবচেয়ে প্রিয় ঋতু যে শীতকাল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিদ্যুত্, জ্বালানি এগুলো হল আলাদিনের চেরাগের মতো, ঘষা দিলেই কোটি টাকার দৈত্যটি এসে হাজির হয়। এখানে হাজার কোটি টাকার নিচে কোনো বাজেট বা ভর্তুকি নেই, শত কোটি টাকার নিচে নেই কোনো পুকুরচুরি। বিদ্যুত্ বিলের চুরি ঠেকাতে সরকার যে প্রিপেইড মিটার কার্ড চালু করতে চাচ্ছে সে মহতী উদ্যোগও নেপথ্যের নায়কদের কারসাজিতে ঢিমে-তেতালা গতিতে এগুচ্ছে। অনেকটা ডিশের তারের জটাজাল থেকে ঢাকা শহরকে নান্দনিক করে তুলতে সরকার যে ভূগর্ভস্থ অপটিকাল ফাইবার বসাচ্ছিল, সে প্রকল্পের মতো। অসাধু লোকদের উত্পাতে ভালো উদ্যোগগুলো মুখ থুবড়ে পড়ছে। রাজনৈতিক সরকারগুলোর সীমাবদ্ধতা হল তাদের দলীয় লোকদের খুশি রাখতে হয়। আদর্শ বা দেশপ্রেম নয়, সুবিধা হাতিয়ে নেওয়াই যে বিভিন্ন অঙ্গদলের লোকদের মূল লক্ষ্য-সেটা তারাও বোঝে। আর আত্মকেন্দ্রিক সুবিধাবাদীরা জানে পার্টির পতাকাতলে থাকলে সাত খুন মাফ হয়ে যায়।
বিদ্যুত্ পরিস্থিতি বেশ নাজুক, তা নাজুক অবস্থায় রেখেছে এ দেশের পনের কোটি মানুষ এবং তাদের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে। সরকারের উচিত দ্রুত কুইক রেন্টালের বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসা, পুরনো বিদ্যুেকন্দ্রগুলোর সংস্কার এবং নতুন গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন করা। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে সঞ্চালনযোগ্য লাইন স্থাপন করে কমদামে বিদ্যুত্ কেনা একটি ভালো উপায় হতে পারে। সরকার এমন কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে, যা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। আগামী একশ’ বছরের মধ্যে পৃথিবীর তেল ও গ্যাসক্ষেত্রগুলো নিঃশেষিত হয়ে যাবে। তখন নবায়নযোগ্য জ্বালানি উত্সগুলোই হবে ভবিষ্যত্ প্রজন্মের আশা-ভরসা। সূর্যের অনিঃশেষ ও অপরিমেয় আলোয় উদ্ভাসিত বাংলাদেশে সৌরশক্তিই দিনে ও রাতে আলো জোগাবে। রাশিয়ার সহযোগিতায় সরকার যে পরমাণু শক্তিনির্ভর বিদ্যুেকন্দ্রটি স্থাপন করতে যাচ্ছে তা সাম্প্রতিক বছরগুলোর ঘাটতি চমত্কার মিটিয়ে দেবে সত্যি, কিন্তু পরমাণু শক্তির ব্যবহার বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বিদ্যুতের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নিহিত রয়েছে মাতা সূর্যেই-যে দেদীপ্যমান নক্ষত্র আমাদের গ্রহটির সকল শক্তি, সকল প্রাণের উত্স; সকল প্রাণের ধারক!
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন