সৈয়দ আবদাল আহমদ
গত ১১ জুন নয়াপল্টনের জনসভায় বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন। জনসভায় তিনি বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব মন্ত্রীই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন।’ খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেয়, তা লক্ষ্য করা গেছে তার তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়। পরদিনই একটি অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের দুর্নীতি দেখার আগে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখুন। কার চাল-চলন কী রকম, পোশাক-পরিচ্ছদ কিংবা চলাফেরা দেখলেই দুর্নীতিবাজ কে সেটা বোঝা যাবে। এখন তিনি কালো টাকা সাদা করার বিরোধিতা করছেন। কিন্তু তিনি নিজেই কালো টাকা সাদা করেছেন’ ইত্যাদি ইত্যাদি। অর্থাত্ দুর্নীতির কথা শুনলেই সাপের মতো ফোঁস করে উঠছেন শেখ হাসিনা। সেটা খালেদা জিয়ার অভিযোগ হোক কিংবা কারও মুখ থেকেই হোক বা সংবাদপত্রের কোনো রিপোর্ট থেকে হোক।
মানুষকে রি-অ্যাক্ট করতে দেখা যায় তখনই, যখন তার দুর্বল জায়গায় কেউ আঘাত করে। কারণ দুর্বলতার বিষয়টি তার জানা থাকে। তিনি যখন দেখেন তার দুর্বলতার বিষয়টি অন্যরা জেনে গেছেন, তখনই তার মাথা খারাপ হয়ে যায় এবং তিনি প্রতিক্রিয়া দেখান। ইদানীং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও একই আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার সরকারের দুর্নীতির কথা নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। আর সে কারণে তিনিও এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। ক্ষেপে যাচ্ছেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে দুর্নীতি এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংবাদপত্রে দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে। সেটা হয় কোনো মন্ত্রীর দুর্নীতির খবর, না হয় ক্ষমতাসীন দলের কোনো এমপি কিংবা শরিক দলের নেতার। সেই দুর্নীতিটা হয় কোনো প্রকল্প থেকে ঘুষ নেয়া, কমিশন নেয়া, চাকরির তদবির বাণিজ্য কিংবা অবৈধ উপায়ে গাড়ি-বাড়ি বা জমির মালিক হওয়া, চাঁদাবাজি বা অন্য কোনো উপায়ে অসত্ উপার্জন।
সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি খবরের উদাহরণ টানলেই বিষয়টি বোঝা যাবে। ২০ জুন দৈনিক প্রথম আলোর শীর্ষ খবর : পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন — ১০% ঘুষ চান মন্ত্রী-সচিব, ২১ জুন ডেইলি স্টারের খবর : চধফসধ নত্রফমব নত্রনব ধিং ত্বধফু ভড়ত্ ৬. ১১ জুন দৈনিক মানবজমিনের খবর : সরকারি প্লট নিয়ে আলোচনায় মেনন, ৫ জুন বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবর : মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার ছয় প্লট, ২২ মে দৈনিক প্রথম আলোর খবর : এমপি গিয়াসউদ্দিনের যত অনিয়ম, সাংসদের নিয়োগ-বাণিজ্য, ঘুষ নিয়েও চাকরি দেননি; ১৪ জুন দৈনিক আমার দেশ-এর খবর : মন্ত্রণালয়ের না হলেও মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাসের উন্নতি অভাবনীয়, ১৬ মে বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবর : পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিমানমন্ত্রীর সমঝোতা, ২৯ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তরের খবর : দুর্নীতির খনি এলজিইডি, দৈনিক প্রথম আলোর খবর : মন্ত্রীর বাড়ির সামনে শেষ হলো জেলা সড়ক, বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবর : খাদ্যের যত কেলেঙ্কারি, টেন্ডার নিয়োগ টিআর কাবিখায় অনিয়ম; সমকালের খবর : হুইপ ওহাবের রাজত্ব চালায় সিন্ডিকেট, সম্পদ বাড়াতেই ব্যস্ত তিনি; দৈনিক যুগান্তরের খবর : অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে নৌমন্ত্রীর কোটি কোটি টাকা অপচয় ইত্যাদি।
গত ১৬ জুন শনিবার ঢাকায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সদস্যদের বার্ষিক সভা ছিল। সেই সভা শেষে টিআইবি’র ঘোষণাপত্রে দেশে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে, তাতে দলটির ঘোষিত প্রথম পাঁচ অঙ্গীকারের অন্যতম ছিল দুর্নীতি দমন। কিন্তু বর্তমানে সরকারের বিরুদ্ধে বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর মতো একটি বিরাট প্রকল্প অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রেলওয়েতে লোক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকল্পগুলোতেও বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। একইভাবে সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় দুর্নীতি ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে। জনপ্রশাসনে নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি ইত্যাদি নিয়েও দুর্নীতি হচ্ছে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা ও পেশি শক্তির দৌরাত্ম্য অনেক বেড়েছে আগের চেয়ে ।
১৭ জুন রাজধানীর একটি হোটেলে উইমেন চেম্বারের অনুষ্ঠানে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণে আমেরিকান একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অনভিজ্ঞ এই প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজ পেল, খতিয়ে দেখতে হবে। এর সঙ্গে দেশের উচ্চ পর্যায়ের কেউ জড়িত রয়েছে। দেশের বড় দুর্নীতিবাজরা শাস্তি না পেয়ে এখন পুরস্কৃত হচ্ছেন। উইমেন চেম্বারের সেমিনারে আরও বলা হয়, ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বাড়তি টাকা দাবি করেন বলে বাংলাদেশের লাখ লাখ নারী উদ্যোক্তা ট্রেড লাইসেন্স করান না। দুর্নীতির ব্যাপকতার এটি একটি উদাহরণ।
গত ১৩ জুন আমেরিকান চেম্বারের (অ্যামচেম) মধ্যাহ্ন ভোজসভায় বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক পরিচালক অ্যালেন গোল্ডস্টেইন বলেন, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছ কার্যক্রমে বিশ্বব্যাংক সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী নয়। তাই বাংলাদেশের সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক এখন আর সক্রিয় নয়। সরে এসেছে। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য ট্র্যাজেডি যে, তার প্রচুর অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের প্রয়োজন থাকার পরও এখানেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়। আমরা যখন কোনো কার্যক্রমে দুর্নীতি ও অনিয়মের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাই, তখন আমরা তা মেনে নিতে পারি না। আমাদের অর্থসম্পদ রক্ষার্থে আমরা সেখান থেকে সরে আসি।
বিশ্বব্যাংক পরিচালক গোল্ডস্টেইনের এ বক্তব্যের কয়েকদিন পর ১৯ জুন বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর আরেকটি খবর। এতে বলা হয়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ ছিল চার কোটি ৭০ লাখ ডলার। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের কাছে ১০ শতাংশ অর্থ কমিশন চেয়েছিলেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ তিনজন। এরা হলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং পদ্মা সেতুর সাবেক প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম। তাদের প্রতিনিধিরা এই অর্থ কমিশন হিসেবে চান।
অর্থের অবৈধ লেনদেনের জন্য গ্রেফতার হওয়া এসএনসি-লাভালিনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়েরে দুহাইমের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছে কানাডা পুলিশ। আর বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিবেদনে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততার তথ্যও রয়েছে। দুর্নীতির এই সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়ে নতুন করে আবার তদন্ত শুরু করেছে দুদক। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক সরকারের কাছে একটি চিঠি দিয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার ঋণ স্থগিত করে রাখে বিশ্বব্যাংক। মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরাননি, এক মন্ত্রণালয় থেকে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন মাত্র। একইভাবে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের চাকরির নিয়োগ-বাণিজ্যে শত শত কোটি টাকার ঘুষ লেনদেনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্রিকায়। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাসায় গভীর রাতে ৭৫ লাখ টাকার বস্তাসহ মন্ত্রীর এপিএস ও মন্ত্রণালয়ের জিএম যাচ্ছিলেন। সেই গাড়ি পিলখানায় বিজিবি গেটে ধরা পড়ে। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত চাপে পড়ে পদত্যাগও করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী বানিয়ে রেখে দিয়েছেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সব সময়ই বড় বড় কথা বলে। কিন্তু দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সময়ই দুর্নীতি হয় বেশি। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ এ নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে তিনবার। সব মেয়াদেই একই ঘটনা ঘটেছে। স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২-৭৫ মুজিব শাসনামলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও লুটপাটের কাহিনী এখনও কিংবদন্তি হয়ে আছে। ওই সময় শেখ মুজিবুর রহমান দুঃখ করে বলতেন, ‘চাটার দল সব খেয়ে ফেলে’, ‘অন্যরা পেয়েছে সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি’। তেমনি ১৯৯৬-২০০০ সময়ে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে বাংলাদেশ বিশ্বের এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। বাংলাদেশের কপালে এভাবেই দুর্নীতির তিলক পরিয়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তেমনি ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়। দুর্নীতির ব্যাপকতা এখন সর্বত্র। শুধু দেশের মানুষই নয়, বিদেশিরা পর্যন্ত বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরে এসে বলে গেছেন, দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ বিশেষায়িত মার্কিন সহায়তা তহবিল মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্টে (এমসিএ) অন্তর্ভুক্ত হতে পারছে না। তেমনি জাপানি উপ-প্রধানমন্ত্রী কাতশুইয়া ওকাদা ঢাকা সফরে এসে বলেছেন, জাপানের অর্থায়নের সদ্ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশকে দুর্নীতি রোধ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ফয়সালা না করলে জাপানের পক্ষেও পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করা সম্ভব নয়।
বর্তমানে দুর্নীতি হচ্ছে বড় বড় স্কেলে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ কেন্দ্রের দুর্নীতির কথা এখন সারাদেশেই আলোচিত খবর। ক্ষমতাসীনরা রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। শেয়ারবাজার তো এখন একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত খাত। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি করে এক লাখ কোটি টাকা লুটপাট করেছে ক্ষমতাসীনরা। টেলিকম খাতে দুর্নীতি হচ্ছে দেদার। অবৈধ ভিওআইপির ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টি এখন ওপেন-সিক্রেট। জ্বালানি খাতে দুর্নীতির জন্য নানাভাবে নাম আসছে মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খানের পরীক্ষা ছাড়াই ২৭ হাজার ৫শ’ ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে কমিশন নেয়ার অভিযোগ উঠেছে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে আছে পরিবহন সেক্টরে একচ্ছত্র চাঁদাবাজির অভিযোগ।
সরকার সম্প্রতি নিজেদের লোককে আটটি ব্যাংক দিয়েছে। এ নিয়েও আছে বিরাট দুর্নীতি। তেমনি বর্তমান সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং টেলিভিশন দিয়েছে দলীয় লোকদের। সবকিছুতেই আছে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া ও দুর্নীতি।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে, তার পাঁচ অগ্রাধিকারের অন্যতম ছিল দুর্নীতি দমন। সেখানে বলা হয়েছিল—দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদ বিবরণী দিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ ও নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাড়ে তিন বছরে মানুষ কী দেখল? দুর্নীতি দমনে সরকারের অঙ্গীকার পূরণের কোনো প্রয়াস নেই বরং উল্টো কাজই হয়েছে। দুর্নীতি এখন ব্যাপকতা পেয়েছে, সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের সক্ষমতা বাড়ানো তো দূরের কথা, দুদককে নখ-দন্তহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। বড় বড় দুর্নীতি যেখানে হচ্ছে, তার ধারে-কাছেও যাচ্ছে না দুদক। বরং চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতিমুক্ত সার্টিফিকেট দিতে ব্যস্ত প্রতিষ্ঠানটি। আর আওয়ামীলীগ সরকার মুন্সীয়ানার সঙ্গে দুর্নীতি করে যাচ্ছে। সরকারের এই দুর্নীতি টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড হলেও দুর্নীতিবাজরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যাচ্ছেন।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
abdal62@gmail.com
মানুষকে রি-অ্যাক্ট করতে দেখা যায় তখনই, যখন তার দুর্বল জায়গায় কেউ আঘাত করে। কারণ দুর্বলতার বিষয়টি তার জানা থাকে। তিনি যখন দেখেন তার দুর্বলতার বিষয়টি অন্যরা জেনে গেছেন, তখনই তার মাথা খারাপ হয়ে যায় এবং তিনি প্রতিক্রিয়া দেখান। ইদানীং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও একই আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার সরকারের দুর্নীতির কথা নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। আর সে কারণে তিনিও এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। ক্ষেপে যাচ্ছেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে দুর্নীতি এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো সংবাদপত্রে দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে। সেটা হয় কোনো মন্ত্রীর দুর্নীতির খবর, না হয় ক্ষমতাসীন দলের কোনো এমপি কিংবা শরিক দলের নেতার। সেই দুর্নীতিটা হয় কোনো প্রকল্প থেকে ঘুষ নেয়া, কমিশন নেয়া, চাকরির তদবির বাণিজ্য কিংবা অবৈধ উপায়ে গাড়ি-বাড়ি বা জমির মালিক হওয়া, চাঁদাবাজি বা অন্য কোনো উপায়ে অসত্ উপার্জন।
সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি খবরের উদাহরণ টানলেই বিষয়টি বোঝা যাবে। ২০ জুন দৈনিক প্রথম আলোর শীর্ষ খবর : পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন — ১০% ঘুষ চান মন্ত্রী-সচিব, ২১ জুন ডেইলি স্টারের খবর : চধফসধ নত্রফমব নত্রনব ধিং ত্বধফু ভড়ত্ ৬. ১১ জুন দৈনিক মানবজমিনের খবর : সরকারি প্লট নিয়ে আলোচনায় মেনন, ৫ জুন বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবর : মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার ছয় প্লট, ২২ মে দৈনিক প্রথম আলোর খবর : এমপি গিয়াসউদ্দিনের যত অনিয়ম, সাংসদের নিয়োগ-বাণিজ্য, ঘুষ নিয়েও চাকরি দেননি; ১৪ জুন দৈনিক আমার দেশ-এর খবর : মন্ত্রণালয়ের না হলেও মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাসের উন্নতি অভাবনীয়, ১৬ মে বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবর : পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিমানমন্ত্রীর সমঝোতা, ২৯ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তরের খবর : দুর্নীতির খনি এলজিইডি, দৈনিক প্রথম আলোর খবর : মন্ত্রীর বাড়ির সামনে শেষ হলো জেলা সড়ক, বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবর : খাদ্যের যত কেলেঙ্কারি, টেন্ডার নিয়োগ টিআর কাবিখায় অনিয়ম; সমকালের খবর : হুইপ ওহাবের রাজত্ব চালায় সিন্ডিকেট, সম্পদ বাড়াতেই ব্যস্ত তিনি; দৈনিক যুগান্তরের খবর : অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে নৌমন্ত্রীর কোটি কোটি টাকা অপচয় ইত্যাদি।
গত ১৬ জুন শনিবার ঢাকায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সদস্যদের বার্ষিক সভা ছিল। সেই সভা শেষে টিআইবি’র ঘোষণাপত্রে দেশে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে, তাতে দলটির ঘোষিত প্রথম পাঁচ অঙ্গীকারের অন্যতম ছিল দুর্নীতি দমন। কিন্তু বর্তমানে সরকারের বিরুদ্ধে বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর মতো একটি বিরাট প্রকল্প অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রেলওয়েতে লোক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকল্পগুলোতেও বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। একইভাবে সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় দুর্নীতি ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে। জনপ্রশাসনে নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি ইত্যাদি নিয়েও দুর্নীতি হচ্ছে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা ও পেশি শক্তির দৌরাত্ম্য অনেক বেড়েছে আগের চেয়ে ।
১৭ জুন রাজধানীর একটি হোটেলে উইমেন চেম্বারের অনুষ্ঠানে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উেক্ষপণে আমেরিকান একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অনভিজ্ঞ এই প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজ পেল, খতিয়ে দেখতে হবে। এর সঙ্গে দেশের উচ্চ পর্যায়ের কেউ জড়িত রয়েছে। দেশের বড় দুর্নীতিবাজরা শাস্তি না পেয়ে এখন পুরস্কৃত হচ্ছেন। উইমেন চেম্বারের সেমিনারে আরও বলা হয়, ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বাড়তি টাকা দাবি করেন বলে বাংলাদেশের লাখ লাখ নারী উদ্যোক্তা ট্রেড লাইসেন্স করান না। দুর্নীতির ব্যাপকতার এটি একটি উদাহরণ।
গত ১৩ জুন আমেরিকান চেম্বারের (অ্যামচেম) মধ্যাহ্ন ভোজসভায় বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক পরিচালক অ্যালেন গোল্ডস্টেইন বলেন, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছ কার্যক্রমে বিশ্বব্যাংক সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী নয়। তাই বাংলাদেশের সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক এখন আর সক্রিয় নয়। সরে এসেছে। তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য ট্র্যাজেডি যে, তার প্রচুর অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের প্রয়োজন থাকার পরও এখানেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়। আমরা যখন কোনো কার্যক্রমে দুর্নীতি ও অনিয়মের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাই, তখন আমরা তা মেনে নিতে পারি না। আমাদের অর্থসম্পদ রক্ষার্থে আমরা সেখান থেকে সরে আসি।
বিশ্বব্যাংক পরিচালক গোল্ডস্টেইনের এ বক্তব্যের কয়েকদিন পর ১৯ জুন বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর আরেকটি খবর। এতে বলা হয়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ ছিল চার কোটি ৭০ লাখ ডলার। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের কাছে ১০ শতাংশ অর্থ কমিশন চেয়েছিলেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ তিনজন। এরা হলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং পদ্মা সেতুর সাবেক প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম। তাদের প্রতিনিধিরা এই অর্থ কমিশন হিসেবে চান।
অর্থের অবৈধ লেনদেনের জন্য গ্রেফতার হওয়া এসএনসি-লাভালিনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়েরে দুহাইমের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছে কানাডা পুলিশ। আর বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিবেদনে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততার তথ্যও রয়েছে। দুর্নীতির এই সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়ে নতুন করে আবার তদন্ত শুরু করেছে দুদক। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক সরকারের কাছে একটি চিঠি দিয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার ঋণ স্থগিত করে রাখে বিশ্বব্যাংক। মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরাননি, এক মন্ত্রণালয় থেকে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন মাত্র। একইভাবে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের চাকরির নিয়োগ-বাণিজ্যে শত শত কোটি টাকার ঘুষ লেনদেনের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্রিকায়। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাসায় গভীর রাতে ৭৫ লাখ টাকার বস্তাসহ মন্ত্রীর এপিএস ও মন্ত্রণালয়ের জিএম যাচ্ছিলেন। সেই গাড়ি পিলখানায় বিজিবি গেটে ধরা পড়ে। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত চাপে পড়ে পদত্যাগও করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী বানিয়ে রেখে দিয়েছেন।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সব সময়ই বড় বড় কথা বলে। কিন্তু দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সময়ই দুর্নীতি হয় বেশি। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ এ নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে তিনবার। সব মেয়াদেই একই ঘটনা ঘটেছে। স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২-৭৫ মুজিব শাসনামলে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও লুটপাটের কাহিনী এখনও কিংবদন্তি হয়ে আছে। ওই সময় শেখ মুজিবুর রহমান দুঃখ করে বলতেন, ‘চাটার দল সব খেয়ে ফেলে’, ‘অন্যরা পেয়েছে সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি’। তেমনি ১৯৯৬-২০০০ সময়ে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে বাংলাদেশ বিশ্বের এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। বাংলাদেশের কপালে এভাবেই দুর্নীতির তিলক পরিয়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তেমনি ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়। দুর্নীতির ব্যাপকতা এখন সর্বত্র। শুধু দেশের মানুষই নয়, বিদেশিরা পর্যন্ত বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরে এসে বলে গেছেন, দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ বিশেষায়িত মার্কিন সহায়তা তহবিল মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ অ্যাকাউন্টে (এমসিএ) অন্তর্ভুক্ত হতে পারছে না। তেমনি জাপানি উপ-প্রধানমন্ত্রী কাতশুইয়া ওকাদা ঢাকা সফরে এসে বলেছেন, জাপানের অর্থায়নের সদ্ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশকে দুর্নীতি রোধ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ফয়সালা না করলে জাপানের পক্ষেও পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করা সম্ভব নয়।
বর্তমানে দুর্নীতি হচ্ছে বড় বড় স্কেলে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ কেন্দ্রের দুর্নীতির কথা এখন সারাদেশেই আলোচিত খবর। ক্ষমতাসীনরা রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। শেয়ারবাজার তো এখন একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত খাত। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি করে এক লাখ কোটি টাকা লুটপাট করেছে ক্ষমতাসীনরা। টেলিকম খাতে দুর্নীতি হচ্ছে দেদার। অবৈধ ভিওআইপির ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টি এখন ওপেন-সিক্রেট। জ্বালানি খাতে দুর্নীতির জন্য নানাভাবে নাম আসছে মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খানের পরীক্ষা ছাড়াই ২৭ হাজার ৫শ’ ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে কমিশন নেয়ার অভিযোগ উঠেছে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের বিরুদ্ধে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে আছে পরিবহন সেক্টরে একচ্ছত্র চাঁদাবাজির অভিযোগ।
সরকার সম্প্রতি নিজেদের লোককে আটটি ব্যাংক দিয়েছে। এ নিয়েও আছে বিরাট দুর্নীতি। তেমনি বর্তমান সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং টেলিভিশন দিয়েছে দলীয় লোকদের। সবকিছুতেই আছে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া ও দুর্নীতি।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে, তার পাঁচ অগ্রাধিকারের অন্যতম ছিল দুর্নীতি দমন। সেখানে বলা হয়েছিল—দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদ বিবরণী দিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ ও নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাড়ে তিন বছরে মানুষ কী দেখল? দুর্নীতি দমনে সরকারের অঙ্গীকার পূরণের কোনো প্রয়াস নেই বরং উল্টো কাজই হয়েছে। দুর্নীতি এখন ব্যাপকতা পেয়েছে, সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের সক্ষমতা বাড়ানো তো দূরের কথা, দুদককে নখ-দন্তহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। বড় বড় দুর্নীতি যেখানে হচ্ছে, তার ধারে-কাছেও যাচ্ছে না দুদক। বরং চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতিমুক্ত সার্টিফিকেট দিতে ব্যস্ত প্রতিষ্ঠানটি। আর আওয়ামীলীগ সরকার মুন্সীয়ানার সঙ্গে দুর্নীতি করে যাচ্ছে। সরকারের এই দুর্নীতি টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড হলেও দুর্নীতিবাজরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যাচ্ছেন।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
abdal62@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন