রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২

‘অসত্যের কাছে নত নাহি হবে শির, ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর’


আবদুল হাই শিকদার




১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল। বিজয়ের বয়স মুহূর্ত ১৬ ডিসেম্বর থেকে আমরা যখন আর মাত্র দু’দিন দূরে, সেই সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা উন্মত্ত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বুদ্ধিজীবী নিধনে। পাকিস্তান বাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল এ জাতিকে সম্পূর্ণরূপে মেধাশূন্য করা। এ জাতিকে চিরকালের জন্য ভেতর থেকে বিকলাঙ্গ করে ফেলা। যাতে আমরা আমাদের কষ্টলব্ধ স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে না পারি।
আমি যখন এই লেখাটি লিখছি সেই সময় দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ৪১তম বার্ষিকী। অর্থাত্ আজ ১৪ ডিসেম্বর ২০১২। এখন দুপুর। দেশ ও জাতির সেই সব মহান সন্তানের জন্য আয়োজিত শোক সভায় অংশ নেয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু গতকাল (১৩ ডিসেম্বর) থেকে এখন পর্যন্ত আমি এবং আমার সব সহকর্মী আছি সীমাহীন উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠায়। গতকাল সূর্যাস্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি। দেশের বিশিষ্টজনরা নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন আমার দেশ-এ। সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের কাছে। তারা আসছেন সংহতি জানাতে। আসছেন পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করার কথা জানাতে। নিচে পুলিশ ঘিরে রেখেছে আমার দেশ কার্যালয়। বলা হচ্ছে, যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন আমাদের সময়ের সাহসের প্রতীক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। সরকার বন্ধ করে দিতে পারে আমার দেশ। অর্থাত্ আমাদেরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শোক পালনের কোনো সুযোগ দিচ্ছে না সরকার। পাকিস্তানিরা চেয়েছিল মস্তিষ্কবিহীন বাংলাদেশ। আর এখন আমাদের বর্তমান সরকার চাচ্ছে ন্যায়, নীতি, আদর্শ, সততা, সাহস, শ্রেয়বোধ, দেশপ্রেম উচ্ছেদ করে দুর্নীতি, দুঃশাসন, গুম, খুন, ধর্ষণ, জোর যার মুল্লুক তার, দখল, মিথ্যাচার, হিংসা, ঘৃণা, বিভেদ, হানাহানি জর্জরিত একটি বিকৃত, বিকলাঙ্গ, বিকারগ্রস্ত, প্রতিশোধপরায়ণ এবং জিঘাংসায় উন্মত্ত বাংলাদেশ। ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে ইয়াহিয়ার প্রেতাত্মা ভর করেছে এই সরকারের ঘাড়ে। একই কায়দায় চালাচ্ছে নিষ্পেষণ।
সেই জন্যই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে তারা পথের কাঁটা হিসেবে বেছে নিয়েছে দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী, সময়ের সাহসী পুরুষ, সত্য প্রকাশে অকুতোভয় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। এর আগে বুদ্ধিজীবী বিনাশের অংশ হিসেবে তারা প্রাণ খুলে গালমন্দ করেছে দেশের গৌরব একমাত্র নোবেলজয়ী বাংলাদেশী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের মতো মানুষকে।
দুই.
মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এবার সরকার দায়ের করেছে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা। কী রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছেন মাহমুদুর রহমান? গত ৮ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা চার দিন দৈনিক আমার দেশ-এ স্কাইপিতে বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম ও বেলজিয়ামে অবস্থানরত আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কথোপকথন প্রকাশিত হয়, যা নাকি কঠিন রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল ও একই সঙ্গে তথ্য প্রযুক্তি আইনের অপরাধ! এই মামলা হয়েছে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
এই মামলার আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বিচারপতি নিজামুল হক ও জিয়াউদ্দিনের কথোপকথন প্রকাশের ওপর জারি করে নিষেধাজ্ঞা। এটা গত ১২ তারিখের কথা।
এদিকে ১৩ ডিসেম্বর মামলার আগে সরকার পক্ষ যায় হাইকোর্টে, সেখানে বিচারপতি শামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি রুল জরি করেন। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের চাঞ্চল্যকর স্কাইপ সংলাপ প্রকাশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। একই সঙ্গে এই সংলাপ প্রকাশের দায়ে আমার দেশ সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে গ্রেফতারে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তাও জানাতে বলেন। আমার দেশ মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘন করেছে কিনা তা জানাতে রুল জারি করেন ঢাকার ডিসির প্রতি।
উল্লেখ্য, এই বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীকে এর আগে জাতীয় সংসদের স্পিকার ‘স্যাডিস্ট’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তাছাড়া তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে দৈনিক আমার দেশ এর আগে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বিচারপতি তথ্য গোপন করে লন্ডনে বাড়ি ক্রয়সহ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়। পরে মাহমুদুর রহমান বিচারপতির বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ১৯টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে তাকে অভিশংসনের জন্য রাষ্ট্রপতি বরাবর আবেদন জানান। রাষ্ট্রপতি সেই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। গত ৮ নভেম্বর বঙ্গভবন থেকে চিঠি দিয়ে এ উদ্যোগের কথা মাহমুদুর রহমানকে জানানো হয়। আমার দেশ সম্পাদকের অভিযোগ নিষ্পত্তি চলাকালেই বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিকের বেঞ্চ থেকে আমার দেশ বিষয়ে রুল জারি করা হলো। অর্থাত্ অভিযুক্ত ব্যক্তিই হয়ে গেলেন বিচারক।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, আড়াই বছর আগে ২০১০ সালের ১ জুন অত্যন্ত ঠুনকো অজুহাতে পুলিশ আমার দেশ প্রকাশনা বন্ধ করে বিনা ওয়ারেন্টে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে। দিনের পর দিন রিমান্ডে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। ১০ মাস কারাভোগের পর আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি মুক্তিলাভ করেন সে যাত্রায়।
মাহমুদুর রহমানের অপরাধ তিনি সাদাকে সাদাই বলেন। দুর্নীতিকে দুর্নীতিই বলেন। জুলুমকে জুলুমই বলেন। তার কাছে সবার ওপরে দেশ সত্য তাহার উপরে নাই। তার কাছে সবার উপরে দেশের স্বাধীনতা। দেশের মানুষের নাগরিক অধিকার। এজন্যই তিনি ফারাক্কা প্রশ্নে সোচ্চার। সীমান্তের জমি রক্ষার আন্দোলনে তিনি অগ্রনায়ক। টিপাইমুখ বাঁধ রুখতে লড়াই করছেন সর্বস্ব পণ করে। ট্রানজিটের নামে করিডোর দেয়াকে তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব বিলীনের চক্রান্ত বলে মনে করেন। সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠ সবার ওপরে। বাংলাদেশে লাঞ্ছিত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের চুরি, ডাকাতি, দুর্নীতি, লুণ্ঠন, দলবাজি ও দখল বাণিজ্যের তিনি প্রবল প্রতিপক্ষ। গণতন্ত্রের প্রশ্নে তিনি আপসহীন।
এসবই শাসকদের ক্ষিপ্ত করে তোলে। সেজন্যই তারা সহ্য করতে চান না তাকে। এজন্যই বার বার নির্যাতনের স্টিম রোলার চাপিয়ে দিতে উন্মাদ হয়ে ওঠে এই সরকার। ভয় দেখিয়ে, নির্যাতন চালিয়ে বন্ধ করতে চান তার কণ্ঠ, তার পত্রিকা।
কিন্তু শাসকরা তো জানে না মাহমুদুর রহমানের জীবন দর্শনই হলো :
‘অসত্যের কাছে নত নাই হবে শির,
ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর।’
তিন.
বিচারপতি ও একজন প্রবাসীর স্কাইপে সংলাপ প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার যে অভিযোগ মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করেছে সরকার, এরকম আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে। যা ইতিহাসে ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারি নামে খ্যাত হয়ে আছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের দু’জন সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টেইন ও বব উডওয়ার্ড সেই কেলেঙ্কারি উন্মোচনের নায়ক। ডেমোক্র্যাটদের সদর দফতর ওয়াটার গেটে রিপাবলিকান পার্টি স্থাপন করেছিল আড়ি পাতা মেশিন। ফলে ডেমোক্র্যাটদের সব গোপন সংবাদ মুহূর্তে পেয়ে যেত রিপাবলিকানরা তথা প্রেসিডেন্ট নিক্সন। ফলে দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন নিক্সন। এই আড়ি পাতার সব কারসাজি সংলাপসহ যাবতীয় গোপন তথ্য ওই দু’জন সাংবাদিক ফাঁস করে দেন পত্রিকায়। শুরু হয় তোলপাড়। প্রথম দিকে নিক্সন বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে তদন্তে ফেঁসে যান। বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন তিনি।
এই ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির ঘটনা আবিষ্কারের জন্য, তা দেশবাসীর সামনে সাহসের সঙ্গে উপস্থাপনের জন্য কার্ল এবং বব রাতারাতি আমেরিকার জাতীয় বীরে পরিণত হন। সে বছর কৃতজ্ঞ জাতি সাংবাদিকতায় নোবেল বলে পরিচিত বিখ্যাত পুলিত্সার পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে এই দুই সাংবাদিককে।
স্কাইপে কেলেঙ্কারির মতো এই ধরনের এক্সক্লুসিভ সংবাদের জন্য একজন সাংবাদিক বা একটি পত্রিকা অষ্টপ্রহর ব্যাকুল থাকে। অপেক্ষা করে দিনের পর দিন। কিন্তু সততার অভাবে, সাহসের অভাবে বেশিরভাগ সংবাদপত্র মালিক এটা ছাপতে সাহস করে না। অথবা না ছাপিয়ে তা সংশ্লিষ্টদের হাতে তুলে দিয়ে কামাই করে নেন কোটি কোটি টাকা। কিংবা আশ্রয় নেন ব্ল্যাকমেইলের।
কিন্তু অর্থ ও প্রতিপত্তির লোভ না থাকাতে মাহমুদুর রহমান সততা ও সাহস নিয়ে, দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণের জন্য জনস্বার্থে এই বেআইনি ও অনৈতিক স্কাইপে কেলেঙ্কারি পুরোটাই ছাপিয়ে দেন তার পত্রিকায়।
এই দুর্দান্ত সাহসী ও সত্ কর্মের জন্য যেখানে মাহমুদুর রহমানকে আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে, জাতীয়ভাবে ধন্যবাদ জানানো দরকার, যেখানে তাকে পুরস্কৃত করা আমাদের সবার কর্তব্য, যাতে তার কর্তব্যনিষ্ঠা, কর্মনিষ্ঠা, সততা ও সাহস দেখে পরবর্তী প্রজন্মও উজ্জীবিত হতে পারে সত্য প্রতিষ্ঠায়, দেশপ্রেমে; সেখানে তার বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা। গ্রেফতার ও প্রাণনাশের আশঙ্কা পোহাতে হচ্ছে সবাইকে। আর ব্যথিত-বিচলিত চোখ দিয়ে দেখতে হচ্ছে ব্রেকিং নিউজ ‘যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন মাহমুদুর রহমান।’
অবশ্য যারা বরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে দু’বছর গৃহবন্দী করে তিলে তিলে ঠেলে দিয়েছে মৃত্যুর দিকে, যারা লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিল মানুষ, যারা বড়াইগ্রামের উপজেরা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবুকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে, যারা টেইলার্স কর্মী বিশ্বজিত্ দাশকে হত্যা করেছে কুপিয়ে কুপিয়ে, যারা পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বিশ্ব সভায় বাংলাদেশকে ডুবিয়েছে অপমানের শেষ স্তরে, যারা হলমার্ক দিয়ে দেশকে বানিয়েছে দুর্নীতির হাবিয়া ‘জেল’-এ, যারা তিতাসের গতিরোধ করে পথ বানিয়ে দিয়েছে আধিপত্যবাদের—তাদের কাছে ভালো কিছু আশা করা দুরাশা মাত্র।
তাছাড়া মিডিয়া নিধনে তাদের অতীত রেকর্ড তো জঘন্য। শেখ মুজিব কলমের এক খোঁচায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন দেশের সব পত্র-পত্রিকা। আর এবার শেখ হাসিনার রাজত্বে বন্ধ হয়ে গেছে ২০০ সংবাদপত্র। নিহত হয়েছেন ১০ জনের মতো সাংবাদিক। আর নির্যাতিত হয়েছেন দুই শতাধিক।
চার.
আগুন নিয়ে যারা খেলে তারা জানে না সেই আগুনেই হয় তাদের সর্বনাশ। সাপ নিয়ে যারা খেলে তাদের মৃত্যু হয় সাপের কামড়েই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের পরাজয়ের বড় কারণ ছিল রাশিয়া আক্রমণ এবং অসংখ্য যুদ্ধ ফ্রন্ট খোলা। ফলে বেশি ধকল আর সামলাতে পারেনি। আমাদের এই সরকারও শেষ বেলায় এসে একের পর এক যুদ্ধ ফ্রন্ট খুলছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠেছে। ফলে মরণ কামড় দিতে যাচ্ছে সব সুস্থতার ওপর, দেশের ওপর, জাতির ওপর। কিন্তু নৌকার তলা যখন ফুটো হয়ে যায় তখন হাজার পানি সেচলেও কাজ হয় না। হবে না। আর এ তো হলো সংবাদ মাধ্যম।
সেই জন্যই বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেছেন, ‘দৈনিক আমার দেশ বিচারপতি নাসিম ও জিয়াউদ্দিনের কথোপকথনের বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ পরিবেশন করেছে। বিচারপতি নাসিম এটা মেনে নিয়েই পদত্যাগ করেছেন। এরই মধ্যে প্রভাবশালী সাময়িকী ইকনোমিস্ট তা বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। এত কিছুর পরও সরকার আদালতকে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ফ্যাসিস্ট কায়দায় আমার দেশ বন্ধের পাঁয়তারা করছে। এটা স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর প্রকাশ্য হামলা এবং সংরক্ষিত তথ্য অধিকার আইনেরও পরিপন্থী। বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীর সংবিধান লঙ্ঘন, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনৈতিক কাজের বিবরণ দিয়ে তার বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানিয়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগনামাও দাখিল করেছেন। কাজেই কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগকারীর বিচার করতে পারে না। এটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কোনো গণতান্ত্রিক দেশে মিডিয়া দমন বা পীড়ন কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। সাংবাদিক সমাজ বরাবরই স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যমের পক্ষে সোচ্চার। আমরা মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেছি। এ অবস্থায় আমার দেশ-এর ওপর নতুন করে দমন-পীড়ন সাংবাদিক সমাজ মেনে নেবে না। স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের বিরুদ্ধে যারাই অবস্থান নেয়, তাদের পরিণতি খুব ভালো হয়নি। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, সরকার যাতে আমার দেশ-এর ওপর অন্যায় আচরণ থেকে বিরত থাকে।’
এরই মধ্যে সরকারের দমন-পীড়ন ও জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ভাষায় জবাব দিয়েছেন বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম। তিনি জনগণের দ্বারা সরকারের ওপর কার্ফু জারির হুশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, প্রয়োজন হলে মন্ত্রী-এমপিদের বাড়িঘর অবরোধ করা হবে। সরকার সোজা পথে না এলে, আমরা ঘরে বসে বসে ললিপপ চুষব না।
সেজন্যই সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা গণতান্ত্রিক আচরণ, সংযম, পরিমিতি বোধ ও সতর্কতা। নইলে সর্বনাশ ঠেকানো যাবে না।
আর একটা কথা বলেই ইতি টানছি আজকের লেখার। মহীউদ্দীন খান আলমগীর গত টার্মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১০টা ডক্টরেট হায়ার করে এনে ডুবিয়েছিলেন। সেই ম খা আলমগীর এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার আচরণ ও কর্মে কোনো মানবিক ও পরিমিতি বোধ কাজ করে না। সেজন্যই ভয়, তিনি হয়তো বেপরোয়াভাবে এই সরকারের কফিনে শেষ পেরেকগুলো ঠোকার কাজ করে যাচ্ছেন। অতএব সাধু সাবধান।
a_hyesikder@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন