বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১২

নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো?


মিনা ফারাহ
তারিখ: ২০ ডিসেম্বর, ২০১২


“মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিলো, বড়ো হও দাদা ঠাকুর
তোমাকে আমি তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
যেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর
খেলা করে।
…তারপর কতো চন্দ্রভুক অমাবস্যা এসে চলে গেলো,
সেই বোষ্টমি আর এলো না
২৫ বছর প্রতীায় আছি।” Ñসুনীল গঙ্গোপধ্যায়।
দুই শিশু, ২৮ বছরেও বড় হলো না। পাঁচ বছরের জন্য মতায় গিয়ে জনপ্রিয়তায় ধস নামায়। ফলে এরা কেউ নির্বাচন দিতে ভয় পায়, অন্যজন তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রাস্তায় জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করে মানুষ খুন করে। তখন মতাসীনদের একমাত্র অস্ত্র, একনায়কতন্ত্র কায়েম করে গদি দখলে রাখা; অন্যথায় জেলে পচতে হবে।
অতীতেও জোট সরকারের যথেষ্ট সমালোচনা করেছি। এখন দেখছি এর চেয়ে শতগুণে বেশি ফ্যাসিস্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সরকার। জোট সরকার যদি চামড়া পর্যন্ত দুর্নীতি করে থাকে এরা করেছে মজ্জা পর্যন্ত। আইন-বিশৃঙ্খলার দেশে তরতাজা বিশ্বজিৎ খুনের পর আমি এই বাংলাদেশে ভালো মন্দের মধ্যে আর কোনো পার্থক্যই দেখছি না। কেউ দেখাতে পারলে লেখালেখি ছেড়ে দেবো। মানুষ সোচ্চার হলে বিশ্বজিৎ একাই সরকারকে টেনে নামাবে। সত্য যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এই সরকার কিছুতেই মানবে না বোঝার জন্য আইনস্টাইন হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাদের চেষ্টা, আরেকটা ‘১/১১’ ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়া। বিদেশে সবারই আস্তানা আছে, লুটপাটের পাহাড় আছে। তার পরেও শেষ রাস্তা হিসেবে রয়েছে জ্ঞানের সর্বোচ্চ চর্চা এবং সেই ল্েয বিরোধী দলকে সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে অবশ্যই যোগ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা পেশ করে ‘১/১১’-এর রাস্তা বন্ধ করতে হবে। এরপর যা হয় হবে। সংসদ এখন টেলিভিশনে, মানুষ বিচার করবে কে ফ্যাসিস্ট।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন ট্যাক্সিড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলে ভাইস-প্রেসিডেন্টের নাম বলতে মাথা চুলকায়। কিন্তু ঢাকার একজন রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলে খালেদা-হাসিনার ইতিহাস মুখস্থ বলতে পারে। এর কারণ হলো, রাজনীতিবিদেরা ৯৯ ভাগ মানুষের মগজ মাথা থেকে নারিকেলের শাঁসের মতো তুলে এনে বিএনপি আর আওয়ামী লীগ নামের দু’টি পাত্রে রেখে দিয়েছে। আমরা এখন মগজবিহীন জাতি। শিাঙ্গনে পড়ানো হয়, বন্দুক-কামান আর লগি-বৈঠা-চাপাতি। ভিসি সাহেবরা যেন পার্টি অফিসের কর্মচারী। বিশ্বে আর কোনো দল আছে যারা বিএনপি-আওয়ামী লীগের মতো বিদেশে দল পালে? এমনকি হার্ভার্ড-কলম্বিয়াতে পর্যন্ত ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিক না থাকলেও বিএনপি-আওয়ামী লীগের ছাত্র আছে যারা পোস্টার হাতে ‘খালেদা-হাসিনা’ করে। নানক আসেন, ফিরতি ফাইটে মির্জা ফখরুল। প্রবাসের বাঙালিরা খালেদা-হাসিনার পোস্টার হাতে কেনেডি এয়ারপোর্টে কুড়াল মারামারি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাগনা বাংলা পত্রিকার ছড়াছড়ি, ঘরে ঘরে সংগঠন আর বাংলা টেলিভিশন। ভারত ও পাকিস্তানের দু-একটি পত্রিকা ছাড়া কিছু নেই। দলের নামগন্ধও নেই। বাঙালি যেটা ধরে, শেষ না করা পর্যন্ত ছাড়ে না।
প্রসঙ্গ হরতাল
সিপিবির হরতাল ঘোষণা শুনে মনে হয়েছে, ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের কথা। এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী বামশক্তি। কিন্তু সাইন বোর্ডসর্বস্ব সুবিধাবাদী কমিউনিস্টগুলো একটি সভা পর্যন্ত করতে পারে না। দুর্ঘটনা ঘটলে মিডিয়ায় লম্বা লম্বা বক্তৃতা, টকশো। তারপর আর পাত্তা নেই। অনেকেই শ্রমিক সংগঠনের নামে নিজেরা বড়লোক হয়, এনজিওর টাকায় ল্যান্ডরোভার গাড়ি চালায় (হায়রে শ্রমিক সংগঠন)। ৫০০-এর বেশি শ্রমিক পুড়ে কাবাব হয়ে গেল, রাজপথে আজ পর্যন্ত একটিও জোরালো প্রতিবাদ করল না বরং হরতাল ডেকেছে জামায়াত নিষিদ্ধ করার দাবিতে। জামায়াত সমর্থন করি না করি, সেটা বড় কথা নয়। যা ধ্র“ব সত্য তা হলো পৃথিবীতে যদি একটি দেশও ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে থাকে সেটা ভারতবর্ষ। মুসলমানদের জন্য আলাদা ভূমির দাবিতে পাকিস্তানের পে বাঙালি মুসলমানদের ভোট ৯৬% আর পশ্চিমা মুসলমানদের ভোট ৪৯%। সেই দিন স্বাধীন বাংলার দাবি ত্যাগ করে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী জিন্নাহর সাথে যোগ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন স্বাধীন পাকিস্তান আন্দোলনে। ক্যাবিনেট মিটিংয়ের অন্যতম দূতিয়ালি সোহরাওয়ার্দী। জিন্নাহর ডানহাত সোহরাওয়ার্দীর অন্যতম শিষ্য শেখ মুজিব। ১৬ আগস্ট ১৯৪৬ সালে ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-তে কলকাতা, নোয়াখালী, খুলনায় যে ভয়াবহ রায়ট হয়, সে ১০ হাজার প্রাণহানির জন্য ইতিহাস কাকে দায়ী করে? সেই রায়টে লাঠিয়াল বাহিনীর সর্দার কে ছিল। তাও সবার জানা। আমি বলছি, ঐতিহ্য পরম্পরায় লগি-বৈঠা আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বাস্তবতা এবং পাকিস্তান পরম্পরায় বাংলাদেশের জন্মের নেপথ্যের পটভূমি। প্রমাণ ছাড়া একপেশে হওয়ার উপায় নেই। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। মুসলিম লীগের মতো বৃহৎ দল পর্যন্ত যুক্তফ্রন্টের কাছে ধরাশায়ী। আবার যুক্তফ্রন্টে কুড়াল মারামারির ফসল আইউব খানের সামরিক শাসন। জামায়াতও যে একদিন ত আর দুর্গন্ধমুক্ত হয়ে বড় শক্তি হবে না এমন কথা বলা যাবে না। কারণ তাদের মধ্যে শিতি এবং প্রগতিশীল চিন্তার প্রজন্ম ঢুকে পড়েছে (সাম্প্রতিকালে জামায়াত-শিবিরকে উদ্দেশ্য করে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখাটি বলতে গেলে মেধাশূন্য)। অতীতের যেকোনো অভিযুক্তমুক্ত এরা শুধু সময়ের পরীার অপোয়। যতই এদের বিলুপ্তির চেষ্টা চলবে, (অতীতের শিা) ততই এরা জনপ্রিয় হবে। জামায়াত বিলুপ্তির দাবিতে সিপিবির কর্মকাণ্ড দেখলে ‘লেনিন’ সাহেব হয়তো আত্মহত্যা করতেন। সেলিম সাহেবকে বলব, অবিলম্বে হাস্যকর হরতাল প্রত্যাখ্যান করে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়াই কাজের কাজ হতে পারে। কারণ পশ্চিমের রক্তচোষারা সস্তা শ্রমিকের খোঁজে পুঁজি করেছে ৩৭ ডলারের জীবন। এজন্য তারা সরকার, বিজিএমইএ, এফবিসিসিআইয়ের সাথে ষড়যন্ত্র করে বেতন আর ট্রেড ইউনিয়নের বারোটা বাজিয়েছে। সঙ্ঘবদ্ধ মাফিয়ারা ভর করেছে হাড়-মাংস সম্বল শ্রমিকদের ওপর। ৩০ পয়সা খরচা করে গার্মেন্ট মালিকেরা লাভ করে তিন হাজার টাকা। এভাবে চলতে দিলে দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য আকাশ ছোঁবে। একই সাথে, এই মাপের ফ্যাসিস্ট আর মুক্তবাজার অর্থনীতি পৃথিবীর কোথাও নেই।
আন্দোলন-অবরোধের বিরুদ্ধে বিএনপিকে সরকার আসলেই কী বোঝাতে চায়? ২৮ অক্টোবর ২০০৬ মূলত ২১ আগস্টের চেয়েও ভয়াল একটি দিন। ২৬ অক্টোবর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ২৮ অক্টোবর সারা দেশে জ্বালাওপোড়াও এবং লগি-বৈঠা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যেকোনোভাবে রাস্তা আমাদের দখলে রাখতে হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত লগি-বৈঠা-চইর নিয়ে আন্দোলন করতে হবে (দ্র: ইউটিউব ভিডিও কিপ)। ওই দিনটি ছিল জোট সরকারের পঞ্চম বার্ষিকী, তাদের শোডাউনের বিপরীতে ২৭ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত লগি-বৈঠা আন্দোলনের ঘোষণায় অকার্যকর হয়ে যায় দেশ। শ্রমিকদের সাথে নিয়ে ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা মারপিটে গোটা পল্টন এবং বায়তুল মোকাররম সেদিন রণত্রে। অবরুদ্ধ দেশ, ভয়াল রাজধানী, রাজপথে পড়ে রয়েছিল পিটিয়ে মারা লাশ। প্রতিটি পয়েন্টে ১৪ দলের মিছিলে উত্তেজিত মানুষের ঢল। পুলিশ, জামায়াত ও ১৪ দলের সংঘর্ষে পল্টন ময়দানের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি। বায়তুল মোকাররম, মুক্তাঙ্গন, পল্টন মোড়ে দিনভর সংঘর্ষে ২১ জনের মৃত্যু রেকর্ড হয়েছিল। এর বাইরেও অনেক মানুষ মারা গেছে। যুবলীগের আগুনে বাসের মধ্যে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে ১১ জন। বেলা ১১টার মধ্যে সারা শহরই রণাঙ্গনের মতো জ্বলছিল, পেট্রল-কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হলো ফুটপাথে শত শত গরিব মানুষের দোকানে, নানা প্রতিষ্ঠানে। ফার্নিচারের দোকান ভেঙে সেই কাঠ এনে রাস্তায় রাস্তায় পুড়িয়ে করা হলো ভয়ঙ্কর ‘ঐতিহাসিক লগি-বৈঠা আন্দোলন।’ কয়েক শ’ হাতবোমা, ৫০০ রাউন্ডেরও বেশি গুলি। পুলিশের ওপর আওয়ামী লীগের মারাত্মক আক্রমণে সেদিন পুলিশ পর্যন্ত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বাঁচল। বিএনপি মতায় এলে ২৮ অক্টোবরকে যেন  ২১ আগস্টের মতো পালন করে।
জানি, হরতাল খারাপ। এতে দেশের তি হয়। তারপরও আওয়ামী লীগের মতো বিএনপি কখনোই হরতালের অধিকার ৫০ ভাগও ভোগ করেনি। ১৭৩ আর ১৩০ দিনের বিপরীতে, এই পর্বে মাত্র ১০ দিনের। কারণ রাস্তা এখন পুরোপুরি মতাসীনদের দখলে। আমরা বোধকরি, হোসনি মোবারকের স্টেশনে পৌঁছে গেছি।
এই সরকার মতায় এসে নিজেদের মামলার সাথে ২৮ অক্টোবরের খুনিদের মামলাও বাতিল করেছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে একটার পর একটা ফাঁসির আসামিকে মা করে দিয়ে গিনেস বুকে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচন সামনে রেখে রাস্তায় খুনি নামানোর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চক্রান্তে মুক্তি দেয়া হচ্ছে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের। অতীতে খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচক হয়েছিলাম বলেই শেখ হাসিনা হাতে অস্ত্র পেয়েছিলেন। এর ব্যাখ্যা আমি এখন করব না, তবে এটুকু বলব যে, এই মধ্যযুগীয় বর্বরতার বিরুদ্ধে কঠিন ভাষায় যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদের চূড়ান্ত সময় এখন। আমরা যারা প্রবাসে থাকি তাদের দেশপ্রেম বরং একটু বেশি। দূরে থাকলেও সবই দেখি। অফিস ঘেরাও, হামলা-মামলা, নেতারা উধাও হয়ে যায়। দেশটাই পুলিশি রাষ্ট্র, ৫৬ হাজার বর্গমাইল এখন একটি কারাগার, এই সরকার এখন পুরোপুরি একটি স্বৈরাচারী সরকার। বিরোধী দলের প্রয়োজন নস্যাৎ করে দিচ্ছে এরা। পুবের অন্য ব্লকে যোগ দিয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত মতা পাকাপাকি করে ফেলেছে বলেই তারা মনে করে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ঘোষণা করলেন, বিরোধীদলীয় নেতা স্মৃতিসৌধে যাওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।’ এই দেশে হোসনি মোবারকের শাসনতুল্য পরিস্থিতি এখন বাস্তবতা। ২০১২ সালে পৌঁছে যারা মসনদে, তারাই রাস্তায়। সংসদের ভেতরে বিরোধী দলের জন্য কাঁটা ফেলে রাখা হয়েছে, আর রাস্তায় নামানো হয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের খুনিদের। অর্থাৎ দেশে বিরোধী দল থাকবে না। এ ল্েযই জামায়াতকে নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে এবং ইলিয়াস আলীদের মতো নেতারা গুম হয়ে যাচ্ছেন। ২০০১-এর সংসদে যখন লাগাতার বর্জন অব্যাহত, মাঝে মাঝে সংসদে গিয়ে তুমুল হইচই, এক দিন শেখ হাসিনার মুখে (দ্র: ইউটিউব ভিডিও কিপ) ইলিয়াস আলীর বিরুদ্ধে বিষোদগার শুনেছিলাম। দারুণ সন্দেহ জাগে। ভাবি, কার নির্দেশে গুম হলো ইলিয়াস আলী?
চোরের মা’র বড় গলা। অবরোধ হরতালের বিরুদ্ধে কামান দাগানো কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। এদিকে ‘১/১১’-এর সরকার ২৮ অক্টোবর ২০০৬ সালে বাসে আগুন দিয়ে ১১ জন মানুষ পুড়িয়ে মারার অভিযোগে শেখ সেলিমকে রিমান্ডে নিয়ে, যা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল তার ুদ্র অংশই শুধু জাতি জানে।
রিমান্ড : আমি মিথ্যা বললে জানাবেন। কারণ আমার কাছে সাী আছে। ওই মিটিংয়ে আপনিও ছিলেন, সেখানে জলিল সাহেবও ছিল, এটা কি সত্য নয় যে শেখ হাসিনার হুকুমেই ১১ জন পুড়ে মারা গেছে? শেখ হাসিনার কড়া হুকুম, যেকোনো মূল্যেই রাস্তা দখলে রাখতে হবে। আপনি কি মনে করেন না, ওনার এরকম একটি কঠিন বক্তব্যের জন্যই পরের দিন এরকম দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে, যেজন্য আপনারা পরের দিন তাকে খুব কঠিনভাবে ধরেছিলেন?
শেখ সেলিম : এই কথাটি তিনি বলেছেন যে, রাস্তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
রিমান্ড : যেভাবেই হোক রাস্তাটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আপনারা তাকে বলার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তিনি বলেছেন খুব শক্তভাবে। শেখ হাসিনা আপনাদের কথা শোনেননি।
শেখ সেলিম : জ্বি।
রিমান্ড : বন্ধ ঘরে সিদ্ধান্ত হয় বাস পোড়ানোর। আমাদের হাতে পুরো তথ্যপ্রমাণ আছে। স্যার, আপনি ঘটনাটা বলেন, আপনিও সেখানে ছিলেন। এই যে কিলিংটা হলো, তার আগের রাতের কাহিনীটা বলেন।
শেখ সেলিম : প্রেসিডিয়াম মিটিংয়ে ঠিক হয় যে রাস্তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
রিমান্ড : তিনি কিন্তু বলেছিলেন ‘যেকোনো মূল্যে হোক’। স্যার, আপনি মনে করার চেষ্টা  করেন।
শেখ সেলিম : মনে করতে পারছি না।
রিমান্ড : যুবলীগের অফিসে ‘যে বাস পোড়ানোর সিদ্ধান্ত হলো, ওটা ওই মিটিংয়ের কার্যক্রমেরই অংশ ছিল।
শেখ সেলিম : যুবলীগের ঘটনা অনেক আগের, শাহবাগের সামনে…।
রিমান্ড : অনেক আগের? পত্রিকা অফিসে গানপাউডার…।
শেখ সেলিম : সে তো অনেক আগের ঘটনা।
রিমান্ড : স্যার! পার্টি অফিসে এই ঘটনার পরে তো এসব নিয়ে মূল্যায়ন করেছেন, জিজ্ঞাসাও করেছেন। তখন স্যার এসব গানপাউডার নিয়ে কথা ওঠেনি?
শেখ সেলিম : হ্যাঁ, গানপাউডারের কথা তো পুলিশই বলেছে।
রিমান্ড : (রেগে চড়া গলায়) স্যার! আপনে খালি ডাইনে-বাঁয়ে কথা বলেন। এখন যদি হঠাৎ করে একটা থাপ্পড় মারি (ঠাস করে চড়ের শব্দ) দাঁত পইরা যাবে স্যার, আমার কিন্তু রাগ উঠতেছে স্যার! সিগারেট কি এমনিই খাওয়াছি? আপনে বলতেছেন, পুলিশ বলছে, আপনারা তো অফিসে আলাপ-আলোচনা করলেন। ওইটা বললেন না কেন? এখন রাত কয়টা বাজে? এত্ত বড় একটা ঘটনা ঘটল; আপনি না বড় প্রেসিডিয়াম মেম্বার? সেই খানে কি এনালাইসিস হলো স্পষ্টভাবে বলেন। ডাইনে-বায়ে কথা বলবেন না। বলেন ওই ঘটনার পর কি আলাপ হইছিল?
শেখ সেলিম : কোথায়?
রিমান্ড : বাসে আগুন দেওয়ার পরে মিটিংয়ে বইসা কী করলেন?
শেখ সেলিম : কিসের মিটিং?
রিমান্ড : ওই যে মিটিংয়ে পর ১১ জন মারা গেল, আন্দোলনের মাঝখানে এই নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করেন নাই?
শেখ সেলিম : আলাপ করছি তো।
রিমান্ড : কী আলাপ করছেন?
শেখ সেলিম : নেত্রীরে বলছি, ঘটনা ঠিক হয় নাই।
রিমান্ড : ঠিক হয় নাই? এতবড় ঘটনা ঘটল, ঠিক হয় নাই?
শেখ সেলিম : বলছি পার্টির জন্য ভালো না। আমাদের লোক যদি জড়িত থাকে, ফাইন্ডআউট করা উচিত। বলছি।
রিমান্ড : আপনেরাই তো জানেন, কে জড়িত ছিল। হঠাৎ কইরা ফাইন্ডআউট কেন?
শেখ সেলিম : বলছি, কারণ আওয়ামী লীগের সবাই তো ঘটনা জানত না।
রিমান্ড : আপনি কী বলছেন?
শেখ সেলিম : বলছি অ্যাকশন নিতে হবে, কাজটা ঠিক হয় নাই।
রিমান্ড : নেত্রী কী বলল?
শেখ সেলিম : আমার খেয়াল নেই।
রিমান্ড : কেন খেয়াল নাই?
শেখ সেলিম : এত দিনের পুরান কথা।
রিমান্ড : কিসের পুরান কথা? আমরা নিজেরা কিছু করি নাই, আমরা জানি কিভাবে?
শেখ সেলিম : ঘটনা ঘটার পর অফিসে যুবলীগের লোক আসছিল।
রিমান্ড : নাম বলেন।
শেখ সেলিম : মনে নাই। বলল, নানক, আজম এইগুলো করছে। ঠিক হয় নাই, ভাই, আপনেরা দেখেন।
রিমান্ড : নেত্রীরে বলছেন? নেত্রী কী বলল?
শেখ সেলিম : নেত্রীকে বললাম, যুবলীগ ঘটনা ঘটাইছে। খবর আছে। এগুলো ঠিক হয় নাই। যা করার করো, তুমি এখন অ্যাকশন নাও।
রিমান্ড : কী বলল?
শেখ সেলিম : বলছে, ঠিক আছে আমি দেখতেছি।
রিমান্ড : পরে অ্যাকশন কী হইছে?
শেখ সেলিম : অ্যাকশন তো হয় নাই।
রিমান্ড : অ্যাকশন হয় নাই? কেন? এত বড় ঘটনা ঘটল, কেন অ্যাকশন হয় নাই? পরে নেত্রীকে জিজ্ঞেস করেন নাই? আপনি তো এত বড় প্রেসিডিয়াম সদস্য।
শেখ সেলিম : না। উনি ব্যবস্থা না নিলে, না শুনলে, আমি কী করব?
রিমান্ড : যুবলীগের মধ্যে ভাঙন ধরছে, আপনাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
শেখ সেলিম : এই কথা তারে বহুবার বলা হইছে। বলা হইছে যে, যুবলীগ আর যুবলীগ নাই।
রিমান্ড : নেত্রী আপনার কথা শোনে নাই?
শেখ সেলিম : নাহ্।
(এই লেখাটিকে কেউ ষড়যন্ত্র বলে চালিয়ে দিতে পারবে না। কারণ কথোপকথনের পুরোটাই যেমন ভিডিও কিপে রয়েছে, তেমনিই পাশাপাশি রয়েছে ২৮ অক্টোবর সব টিভি চ্যানেলের ভিডিও ফুটেজে)।
নিউ ইয়র্ক।
farahmina@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন