শনিবার, ১৬ জুন, ২০১২

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ ও প্রধানমন্ত্রীর সত্যকথন



অ লি উ ল্লা হ নো মা ন
বর্তমান মহাজোট সরকারের চতুর্থ বাজেট পেশ হয়েছে জাতীয় সংসদে। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর জাতীয় সংসদে দীর্ঘ আলোচনা হবে। কালোটাকা সাদা করতে বাজেটে আবারও সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতারাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সবার প্রতিক্রিয়াই প্রায় এক। সবাই এর বিরোধিতা করেছেন। সবার বক্তব্যই হচ্ছে কালো টাকা সাদার করার এই অবাধ সুযোগ সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষজ্ঞরা নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেছেন জাতির সামনে। আমি এখানে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু স্পষ্ট বক্তব্যও তুলে ধরতে চাই।
২০০৫ সালের ১৫ জুন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার শিরোনাম ছিল ‘লুটপাটের টাকা জায়েজ করতেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে —হাসিনা’। ২০০৫ সালের ১৪ জুন সাভারে শ্রমিক লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উক্তি করেছিলেন। ওই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা) আরও বলেছিলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে আবারও চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র করছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা জায়েজ করতেই বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়। তত্কালীন চারদলীয় জোট সরকারের পেশ করা বাজেটে কালো টাকা সাদার করার সুযোগের বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করে তিনি এসব উক্তি করেছিলেন। ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকার বাজেট পেশ করার পর তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, লুটেপুটে খাওয়ার জন্য বাজেটে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনার এ বক্তব্য দিয়ে শিরোনাম করেছিল হালে আওয়ামী লীগের পক্ষের দৈনিক ইনকিলাব। ২০০৬ সালে পেশ করা বাজেটে তত্কালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ রাখেননি। সেজন্য কালো টাকা নিয়ে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ ছিল না। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে থোক বরাদ্দ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছিলেন তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পেশ করা আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতিটি বাজেটে হাজার হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ ছিল। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এই নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতিটি বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয় শেখ হাসিনার সরকার। বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাখা হয় থোক বরাদ্দ। শুধু তাই নয়, শেয়ার মার্কেটের অব্যাহত পতন ঠেকাতে দফায় দফায় প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য অনুযায়ী বলা যায়, ক্ষমতায় আসার পর লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত টাকা জায়েজ করতেই এখনও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে-বিদেশে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা টাকা না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে বহু আগেই। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া গত ১১ জুন মহাসমাবেশের বক্তব্যে বলেছেন, দুর্নীতির কারণে ডুবে গেছে পদ্মা সেতু। বিদ্যুত্ নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই।
পদ্মা সেতুর পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়িতে ৭০ লাখ টাকা পাওয়ার খবরটি। বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলওয়ের কালো বিড়াল খোঁজার ঘোষণা দিয়েছিলেন মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর। সেই কালো বিড়াল পাওয়া গেছে তারই ঘরে। দুর্নীতির অভিযোগ এখন প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধেই উঠেছে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্রের নামে হাজারো কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ নিয়েও নানা আলোচনা-সমালোচনা শোনা যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একসময় সুশীল গোত্রের লোক ছিলেন। তিনি এরশাদের সামরিক শাসনকালে অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তার মুখেও একসময় হরদম কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিরুদ্ধে বক্তব্য শোনা যেত। এখন নিজেই কালো টাকা সাদা করার পক্ষে নানা সাফাই গাইছেন। অথচ দেশে প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা, শীর্ষ ব্যবসায়ীরা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান রেখেছিলেন। এই আহ্বানকে থোরাই কেয়ার করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। সরকার যা করার তা-ই করেছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায় লুটপাটের টাকা জায়েজ করতে হবে। এত লুটপাট হয়েছে যে, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না রেখে উপায় নেই। প্রজ্ঞাপন জারি করে বছরের মাঝখানেও এ সুযোগ দিয়েছে এ সরকার।
২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শেয়ার মার্কেটের পতন আরম্ভ হয়। পতন অব্যাহত থাকে বছরজুড়ে। অব্যাহত পতনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেকেই সব পুঁজি হারিয়ে রাস্তায় বসেছেন। শেয়ার মার্কেট থেকে সরকারদলীয় ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা লক্ষ-কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শেয়ার মার্কেটের কেলেঙ্কারি নিয়ে সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটিও বলে দিয়েছে, কারা শেয়ার মার্কেটে লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকারের একজন মন্ত্রী পরিবারের কোম্পানি, অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির কোম্পানি কীভাবে কারসাজি করে টাকা তুলে নিয়েছে শেয়ার মার্কেট থেকে, সেই বিবরণ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লুটপাটের কারণে শেয়ার মার্কেটের পতন যখন ঠেকানো যাচ্ছিল না, তখন সরকার নানা পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে একটি পদক্ষেপ হচ্ছে অতি উল্লেখযোগ্য। সরাসরি কালো টাকা বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কালো টাকা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করা হলে কোনো রকমের প্রশ্ন করা হবে না বলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বিগত ২০১১-১২ অর্থবছর পর্যন্ত পুঁজিবাজার ও বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অপ্রদর্শিত আয়ের উত্স জানতে চাইবে না বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। সরকারের অন্য কোনো সংস্থা থেকে প্রশ্ন তোলা হবে কিনা জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, এনবিআর কয়েকটি আইন বা অধ্যাদেশের আওতায় চলে। সরকারের অন্য সংস্থাগুলোও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে সুনির্দিষ্ট আইনের অধীনে। গত বছরের ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার এনবিআর ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছিলেন রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ। এনবিআর চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যের মূল স্পিরিট ছিল শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করা কালো টাকার উত্স সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে না। এখানে পুরনো এই ফিরিস্তিগুলো উল্লেখ করে পাঠকদের বিরক্ত করলাম। এর কারণ হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার কতটা দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য অনুযায়ী বোঝা যায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া থেকে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে আবার এই সুযোগ রাখা হলো। আর থোক বরাদ্দ নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর আগের বক্তব্য অনুযায়ী বলা যায়, তারা লুটেপুটে খাওয়ার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বিরোধী দলে নেতা হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে আমরা এমন অনেক কথা শুনেছি, যা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। শুনেছি অনেক হুশিয়ারি। রক্ত ঝরানোর হুংকারও তিনি দিতেন অহরহ। ২০০৬ সালের ৮ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলোর শিরোনাম—‘এম এ আজিজকে রেখে নির্বাচনের চেষ্টা করলে আবার রক্ত ঝরবে’। তখন দায়িত্বে ছিলেন সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছিল। নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগের দাবিতে চলছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের আন্দোলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রক্ত ঝরানোর এই হুংকারের মাত্র ১০ দিন আগে তারই আহ্বানে লগি-বৈঠা নিয়ে উপস্থিত হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে ৪ জনকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। পল্টন মোড়ে এই হত্যাকাণ্ডের পর লাশের ওপর উঠে লাফিয়েছিল আওয়ামী দানবরা। এই দৃশ্য তখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত হয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছিল লগি-বৈঠার তাণ্ডবে কী ঘটেছে পল্টন মোড়ে। সেই তাণ্ডবের প্রতি ইঙ্গিত করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯ দিনের মাথায় হুংকার দিয়ে বললেন, এম এ আজিজকে রেখে নির্বাচনের চেষ্টা হলে আবারও রক্ত ঝরবে। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে তিনি ১২ নভেম্বর থেকে লাগাতার সারা দেশে অবরোধ ঘোষণা করেছিলেন। তখন হরতাল-অবরোধ খুবই ভালো কর্মসূচি ছিল। আজ যারা হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে চিত্কার করে কান ঝালাপালা করেন, সেদিন তাদেরও সমর্থন ছিল আওয়ামী হরতাল-অবরোধে। তখন কিন্তু মানুষের অসুবিধা হয়নি, অর্থনীতির কোনো ক্ষতি হয়নি!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সত্য বলেছিলেন র্যাবকে নিয়ে তার বক্তব্যে। তত্কালীন চারদলীয় জোট র্যাব গঠনের পর ২০০৬ সালের ১৬ মার্চ ঘোষাণা করেছিলেন, র্যাব বিলুপ্ত হবে না, বরং বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হবে। ২০০৬ সালের ১৭ মার্চ প্রায় প্রতিটি দৈনিকের শিরোনাম ছিল ‘শেখ হাসিনার ঘোষণা—র্যাব বিলুপ্ত হবে না, বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হবে।’ যেই কথা সেই কাজ। তিনি এ বিষয়ে কথা রেখেছেন। র্যাবকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে র্যাবের ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বিরোধী দলে থাকাকালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জাতিকে দেয়া আরও কিছু প্রতিশ্রুতি এখানে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করছি। চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতার একেবারে শেষ প্রান্তে ১০ অক্টোবর শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ভাষণের মাত্র ১৮ দিনের মাথায় তত্কালীন জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হয়। তার ভাষণে ২৬ দফা অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়েছিল। এই অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে ছিল—দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ গঠন, এক বছরের মধ্যে বিদ্যুত্ ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে আনয়ন, দুর্নীতি উচ্ছেদ, এলিভেটেড রাস্তা, পূর্ব-পশ্চিমমুখী রাস্তা ও রিংরোড নির্মাণ করে যানজট নিরসন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অবস্থা কোন পর্যায়ে যারা নিয়মিত বাজারে যান হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। ২০০৬ সালে ১২ টাকা হালি ডিম এখন ৪০ টাকা হালি। ২০০৬ সালের ২০ টাকা কেজি দামের চাল এখন ৪০ টাকার ওপরে। বিদ্যুতের অবস্থা বলে পাঠকের মনে বিরক্তি ঘটাতে চাই না। কারণ প্রত্যেকে নিজেই এর ভুক্তভোগী। লোডশেডিং ২০০৬ সালের তুলনায় কমেনি, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেড়েছে। এলিভেটেড রাস্তা, রিংরোড সবই মানুষের কল্পনায়। দুর্নীতি-দুঃশাসন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিস্তার লাভ করেছে। টেন্ডার নিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গদলগুলোর মধ্যে মারামারি ক্ষমতায় আসার পরই শুরু হয়েছিল। এই মারামারি অব্যাহত আছে। জ্বালানি তেলের দাম দফায় দফায় বাড়ানোর ফলে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। ২০০৬ সালের তুলনায় বিদ্যুতের দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়লেও লোডশেডিং কমেনি, বরং আগের চেয়ে বেশি।
র্যাবকে বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া, দুর্নীতি-লুটপাটের টাকা জায়েজ করতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আগের বক্তব্য অনুযায়ী চললেও অন্য কোনো ওয়াদা পূরণ করেননি। বরং উল্টো দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। আগে বিদ্যুতের কম লোডশেডিং, কম যন্ত্রণা ভোগ করে যে বিল পরিশোধ করতে হতো, বর্তমানে দুর্ভোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি তার মূল্যও বেড়েছে। অর্থাত্ ২০০৬ সালের তুলনায় বেশি দাম দিয়ে দ্বিগুণ যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। চারদলীয় জোট সরকারের বিদায়ের আগ মুহূর্তে শেখ হাসিনার ২৬ দফা প্রতিশ্রুতির প্রধানটি ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে কমিশন গঠন করা। ক্ষমতায় আসার পর বেমালুম হয়তো ভুলে গেছেন তিনি। কারণ কমিশন নিয়ে একবারের জন্য কোনো আলোচনাও সরকারের পক্ষ থেকে শোনা যায়নি। দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক গতিতে বেড়ে চলেছে।
লেখক : সাংবাদিক, বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক আমার দেশ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন