শনিবার, ২৩ জুন, ২০১২

জনগণই পারে সবকিছু বদলে দিতে

কাজী সিরাজ


প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অব্যাহত একগুঁয়েমিপনা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এক সুপ্ত অবস্থার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত তাদের পূর্বাবস্থান পরিবর্তন করেছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাতিল করা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগেকার কাঠামোর ব্যাপারে তারা আর অনড় নয়। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থান হচ্ছে, যে নামেই ডাকা হোক তারা একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চান। আগামী নির্বাচন কোন ধরনের সরকারের অধীনে হলে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন হতে পারে সে ব্যাপারে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পেঁৗছার একটি সহনীয় পথ তিনি দেখিয়েছেন। কিন্তু সরকার পক্ষ তা মানতে রাজি নয়। তারা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন, সংবিধানের বাইরে কোনো ব্যবস্থা তারা মানবেন না। তার এ বক্তব্য আরও নিশ্চিত করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০ জুন মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি আবার 'বাঙালকে হাইকোর্ট দেখানো'র মতো বলেছেন, 'সর্বোচ্চ আদালতের রায় না মানলে রিভিউর আপিল করুন অথবা নির্বাচনে আসুন। দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনুন। এ ছাড়া কোনো উপায়ে এটা করা সম্ভব নয়' (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২১ জুন ২০১২)। প্রধান দুই দলের পরস্পরবিরোধী এ অবস্থান অদূরভবিষ্যতে প্রচণ্ড এক রাজনৈতিক ঝড়েরই ইঙ্গিত দেয়। এরকম একটা পরিস্থিতিই অনাকাঙ্ক্ষিত ওয়ান-ইলেভেনকে অপরিহার্য করে তুলেছিল। গণতান্ত্রিক রাজনীতি হচ্ছে একাধিক রাজনৈতিক দল ও বহু মতের অনুসারীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমঝোতার এক সুরভিত পুষ্পমালা। কিন্তু আমাদের দেশের মূল রাজনৈতিক নেতৃত্বের অর্থাৎ মূলত দুই নেত্রীর জেদ, অহঙ্কার, ঈর্ষা, হিংসা সর্বোপরি ক্ষমতার কাঙালিপনা সহযোগিতা-সমঝোতার সব পথই রুদ্ধ করে দিয়েছে। অবস্থাটা এক-এগারোর আগে যেমন ছিল এখনো তা স্থিতাবস্থায়ই আছে। কাজেই আবারও একই ধরনের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনার প্রতি যারা ইঙ্গিত করছেন তারা যথার্থই বলছেন বলে মনে হয়। জাতীয় নেতৃত্বের বৈরিতা, পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপারগতার কারণেই নিদারুণ কষ্ট ভোগের শিকার হয় নিরীহ, শান্তিপ্রিয় জনসাধারণ।

পরিস্থিতি যে কত বিপজ্জনক পথে মোড় নিচ্ছে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব বিশ্বস্ত ব্যক্তি ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের মুখ দিয়েই বেরিয়ে এসেছে। ১৭ জুন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্ধিত সভায় তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনাকে আরও দুই মেয়াদ ক্ষমতায় আনতে হবে। এক মেয়াদে জাতির ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব নয়। এ বক্তব্য থেকে বিরোধী দলের আশঙ্কা যথার্থ বলেই মনে করা যায়। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল বলছে, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন লীগ সরকার ক্ষমতা অাঁকড়ে রাখার জন্যই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিত্যপণ্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊধর্্বগতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হত্যা, গুমসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, বিদ্যুৎ-গ্যাস ও পানির মহাসংকটসহ নানা ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার কারণে আগামী নির্বাচনে জিততে পারবে না বলেই সরকার নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাতিল করে দিয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে দলবাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় কারচুপি করে তারা আবার ক্ষমতায় আসতে চায়। বিরোধী দল জেনেশুনে 'বিষ পান' করবে, সরকারের এটা ভাবা উচিত নয়। মাহবুব-উল আলম হানিফের বক্তব্যের তাৎক্ষণিক জবাবই এসেছে প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের কথায়। ১৭ জুন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ কয়টা সিট পাবে প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, আগামী নির্বাচনে তারা ১৭৫টি আসন পাবেন তখন বিষয়টি বোঝার কারও বাকি থাকে না। কিন্তু এ স্বপ্ন এ দেশের মানুষ পূরণ করতে দেবে না।'

এ অবস্থায় সামনে ভয়াবহ রাজনৈতিক 'দাঙ্গা' যাতে এড়ানো যায় সে জন্য সুশীলসমাজসহ নানা মহল থেকে দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপের কথা বলা হচ্ছে। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে শাসনতন্ত্র পরিবর্তনের ফলেই এ জটিল রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর পর থেকেই সংকট নিরসনে বিশেষ করে আগামী দশম সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্দলীয় নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার না দলীয় সরকারের অধীনে হবে তা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি, টকশো, সেমিনার ইত্যাদি হচ্ছে। সর্বত্র সরকারের পোষ্য, ধামাধরারা ছাড়া শিল্পী, সাহিত্যিক, সুশীলসমাজ, প্রবীণ নাগরিকসহ সর্বসাধারণের মত হচ্ছে, আগামী নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া সমীচীন হবে না। সবাই দুই নেত্রীকে একসঙ্গে বসতে বলছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, দুজনকে একসঙ্গে বসাবে কে? গত রবিবার এই কলামে এ জন্য সাতজন অবিতর্কিত অথবা কম বিতর্কিত প্রবীণ ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছিলাম। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে দুই নেত্রীকে একসঙ্গে বসানোর জন্য ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমদ, অ্যাডভোকেট শামসুল হক চৌধুরী, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদরা যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন কেউ তাদের নাম প্রস্তাব করে উদ্যোক্তা প্যানেল ঠিক করে দেয়নি। তারা স্বউদ্যোগেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে জাতীয় দায়িত্বটি পালন করেছিলেন। ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ থেকে কেউ কেউ বলছেন, এখন সবাই টকশোতে গিয়ে দুই নেত্রীর সংলাপের কথা বলছেন। দুজনের কাছে গিয়ে এ জন্য কেউ তো চাপ সৃষ্টি করছেন না। তবে কি এ জন্য একটি 'উদ্যোক্তা প্যানেল' ঠিক করে তাদের এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বাধ্য করার জন্যও একটি আন্দোলন করতে হবে? এটা ক্ষুব্ধ নাগরিকদের একটি অংশের প্রতিক্রিয়া। ধরা যাক, বিচারপতি সাহাবউদ্দিন আহমদ, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, এবিএম মূসা, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ড. জহির, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য_ এই সাতজন উদ্যোগ নিয়ে সবার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দুই নেত্রীকে একসঙ্গে বসালেন। একজন 'ভিশন-২০২১' নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন, আরেকজন পারলে আজই মসনদ অধিকার করেন। এ অবস্থায় সংলাপের কি ফলাফল আমরা আশা করতে পারি? দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা যখন তার প্রতিপক্ষ শ্বেতাঙ্গ নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেন তখন তিনি বলতেন, 'আমরা কে জিতলাম আর কে হারলাম সেটা বড় কথা নয়_ সবচেয়ে বড় কথা হলো, দেশ জিতেছে কিনা'। অভিযোগ আছে, আমাদের দুই নেত্রীর মধ্যে আমার দল, বিশেষ গোষ্ঠী, আমার পরিবার এবং সবশেষে আমি জিতলাম কিনা, এ প্রবণতাই প্রবল। যদি এটাও ধরে নেওয়া যায় যে, দুই নেত্রীকে একসঙ্গে বসানো গেল। তারা বসলেন, সমঝোতায়ও পেঁৗছলেন। সেই সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারও সদ্য বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. শামসুল হুদার মতো বিদায়ী ভাষণে হয়তো বলবেন গত নির্বাচনে অধিকাংশ প্রার্থীই ছিল অযোগ্য। অর্থাৎ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরই শুরু হবে মনোনয়ন বাণিজ্য। পার্টি টিকিটে নির্বাচন করে সরকার গঠন করবে হয় আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি। কিন্তু সংসদে জিতে আসবেন কারা? সৎ, আদর্শবাদী, যোগ্য ও মেধাবী রাজনৈতিক নেতা সংগঠকরা কি দুই দলের মনোনয়ন পাবেন? যারা বছরের পর বছর নিরলস পরিশ্রম করে দলের ঝাণ্ডা উঁচিয়ে রেখেছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, তারা কি সংসদ অধিবেশন কক্ষে ঢোকার সুযোগ পাবেন? বিভিন্ন জরিপের ওপর নির্ভর করে বলা হয়, বর্তমান সংসদে শতকরা ৭০ জন সদস্য ব্যবসায়ী। এরশাদ আমল থেকেই অবস্থাটা একই রকম। দিন দিন তার অবনতি ঘটছে। সংরক্ষিত মহিলা আসন বিক্রিরও নজির আছে। এ ব্যাপারে বর্তমান সংসদেই এরশাদ সাহেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তাহলে অবস্থাটা দাঁড়াবে কি? তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুন। নির্বাচনের দেড়-দুই বছর পর আবার উত্তাল রাজপথ, জুলুম-নির্যাতন, পুলিশের লাঠিপেটা, গুলি, টিয়ারগ্যাস, রক্ত, মৃত্যু। তাহলে কি লাভ হবে এ ধরনের সংলাপ, সমঝোতা এবং কালো টাকা ও পেশিশক্তিনির্ভর নির্বাচনের? তাই দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপ যদি হয়ও তাতে সর্বাগ্রে স্থান দিতে হবে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন লাভের যোগ্য কারা হবেন সে বিষয়টি। দলের পোড়খাওয়া যোগ্য আদর্শবাদী প্রার্থী ছাড়া কোনো দল কোনো টাকার কুমির 'বসন্তের কোকিল'কে মনোনয়ন দেবে না, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই নির্বাচনে কালো টাকার দাপট কমবে, বৈধ-অবৈধ অস্ত্র ও পেশিশক্তির প্রয়োজনও ফুরাবে। তখনই সংসদে আসবেন যোগ্য ও মেধাবীরা। অধিবেশন চলাকালে তখন আর আসন শূন্য হয়ে থাকবে না, কোরাম সংকটও হবে না। সে রকম একটি সংসদই হবে প্রাণবন্ত সংসদ_ সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে সেই সংসদে, বেরিয়ে আসবে জাতীয় সব সমস্যা সমাধানের সুচিন্তিত পথ ও দিকনির্দেশনা। এ ধরনের একটি স্বপি্নল পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিকে পরিশুদ্ধ হতে হবে। এ জন্য যা দরকার সেই কথা বললে সরকারি মহল থেকে বলা হয়, এ যে রীতিমতো রাষ্ট্রদ্রোহিতা আর বিএনপি থেকে বলা হয় দল ভাঙার ষড়যন্ত্র। তবুও বলা দরকার যে, রাজনৈতিক দলে সংস্কার করা না হলে সৎ, আদর্শবাদী ও মেধাবীরা ওই দুই দলের রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। সে জন্যই আসে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির কথা। কয়দিন আগে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আক্কাস নাদিম বলছিলেন, 'আমরা তো দলকে দুর্বৃত্তদের কবল থেকে মুক্ত করে আরও শক্তিশালী করতে চেয়েছিলাম। যারা দলের সংস্কারের পক্ষে মান্নান ভূঁইয়ার সঙ্গে একযোগে কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে আগামী নির্বাচনে যারা নমিনেশন কেনার সামর্থ্য রাখেন তারা আর দলে 'অস্পৃশ্য-অশুচি' নন, নবম সংসদ নির্বাচনও অনেকে করেছেন। কিন্তু যারা শহীদ জিয়ার প্রকৃত অনুসারী, ত্যাগী, আদর্শবাদী ও মেধাবী তারা দেখি ম্যাডামেরও আক্রোশের শিকার।' তার বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তারা বিএনপিকে ভালোবাসেন এখনো। তারা চান পরিবর্তন, স্বচ্ছ, দক্ষ, মেধাবী ও আদর্শবাদী নেতৃত্ব। এ চাওয়া অন্যায় নয়। আওয়ামী লীগেও যারা সংস্কারবাদী ছিলেন এবং এখনো তাতে অনড় তাদেরও একই কথা। কিন্তু দুই দলের বর্তমান মূল নেতৃত্ব ও নেতৃত্বকে ঘিরে রাখা স্বার্থান্ধ, সুযোগ-সন্ধানীদের কোটারির কাছে এসব কথার কোনো মূল্য নেই। আর নেতৃত্বের কাছে ভালো কথার মূল্য না থাকার মূল্য দেয় দল, দেশ ও জাতি। কিন্তু এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। এ জন্যই তৃতীয় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন অগ্রসর চিন্তার মানুষেরা। সাধারণ মানুষের চিন্তাটা স্বচ্ছ না হলেও দুই দল ও দুই নেত্রীর ওপর তারা বিরক্ত। তারাও এর বাইরে একটা কিছু চায়। ১৫ জুন ভাসানী অনুসারী পরিষদের এক বর্ধিত সভায় প্রবীণ শিক্ষাবিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শফিউল্লাহ জনগণের সেই মনোভাব ব্যক্ত করে তার অভিজ্ঞতা দিয়ে বললেন, 'গবেষণার কাজে প্রায়ই প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। তারা দুই দলের বাইরে অন্য কাউকে চায়। তারাই প্রশ্ন করে, স্যার, তৃতীয় শক্তি নাকি আসবে? কবে? প্রশ্ন করেছি, তৃতীয় শক্তি কে? মিলিটারি? জবাব দেয়_ না। তাহলে? কিছু আর বলতে পারে না। তাদের সে অব্যক্ত শক্তিই হলো জনগণের শক্তি।' আসলে এটাই প্রকৃত সত্য যে, দেশপ্রেমিক জনগণই দুই দলের বিকল্প শক্তি। রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন শক্তিকেন্দ্র জনগণের এ শক্তিকে জাগিয়ে দিতে পারে, এগিয়ে দিতে পারে। সব অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, দুরাচার, দলবাজি, পরিবারবাজি সবকিছু বদলে দিতে পারে জনগণ, একমাত্র জনগণ। সময় হয়তো বেশি দূরে নয়, যখন জনগণই সব বদলে দেবে, ব্যর্থ ও লোভী নেতৃত্ব বিসর্জন দিয়ে দুর্বৃত্তায়িত, রাজনীতির ধ্বংসস্তূপের ওপর তারা নির্মাণ করবে নতুন জাতীয় নেতৃত্ব, শেষ সূচনা করবে দেশপ্রেমের রাজনীতি।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

ই-মেইল : kazishiraz@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন