শনিবার, ৩০ জুন, ২০১২

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া



ইমরান রহমান
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৭ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিতি মিট দ্য প্রেসে ব্রিটেনের পক্ষে তা প্রকাশ করেন দেশটির হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন। এদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে এখানকার শাসন ব্যবস্থা নিয়ে তার কণ্ঠে দেশবাসীর হতাশাই পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা এবং বিচার ব্যবস্থা নিয়ে তার মন্তব্য ছিল সাধারণ মানুষের অভিন্ন বহিঃপ্রকাশ।
বাংলাদেশ যে ক্রমেই একটা ‘ডাকাতদের গ্রাম’-এ পরিণত হচ্ছে তা সরকারের ঘুম না ভাঙালেও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে নিয়মিতই। দেশে হত্যা-গুমের যে মহোত্সব শুরু হয়েছে তাতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক উদ্বেগজনক মুল্যায়নে একটি টেকসই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের দাবি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সন্ধান চেয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইলিয়াস আলীর মতো নেতা নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বিরাট রহস্য। এর আগে বিএনপির আরেক নেতা চৌধুরী আলমও নিখোঁজ হয়েছেন। সে রহস্য আজও অনাবৃত রয়ে গেল। পত্রপত্রিকা খুললে দেখা যায়, দু’একজন গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনা এখন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের মানবাধিকারের ক্ষেত্রে এখন প্রধান সমস্যা হলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন। বিষয়টি যৌক্তিকভাবেই তুলে ধরেছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার। তাদের এসব বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জননিরাপত্তাই শুধু ওষ্ঠাগত নয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডও বেড়ে চলেছে সোত্সাহে। খোদ পুলিশ দফতর থেকেই বলা হয়েছে এবছর ছয় মাসেই যত্রতত্র দুই হাজার লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার কথা। এদিকে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও আমাদের মাঝেমধ্যে শুনতে হচ্ছে। যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত, মানবতার ঝাণ্ডা তুলে ধরবেন—তাদের বুটের নিচেই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এটি দলিত হচ্ছে।
স্বাধীনতার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগ কখনোই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ছিল না। কিন্তু বর্তমান মহাজোট সরকার অন্যান্য সেক্টরের মতো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচার বিভাগে যে নির্লজ্জ দলীয়করণ ঘটিয়েছে, তা নজিরবিহীন। সংশ্লিষ্ট বিভাগ দুটির পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে ও রাজনীতিকীকরণের কুফলে যে দুর্গন্ধ মাঝে মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, তা সংক্রমিত করে বহির্বিশ্বের বাতাসকেও। শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় এখানেও প্রেসিডেন্টর ক্ষমা পেয়ে যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। পাশাপাশি গণমাধ্যম ও বাক স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, সাংবাদিক নির্যাতন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতাও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের ন্যুব্জ মানবধিকার পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে সরকার যেখানে শপথাবদ্ধ সেখানে এই সঙ্কটময় মুহূর্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কণ্ঠে প্রায়ই ভাঙা রেকর্ড বাজে যে, গত ১০ বছরের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা এখনই নাকি সবচেয়ে ভালো। এটা জননিরাপত্তা নিয়ে নির্মম তামাশাই শুধু তাই নয়, একটা দয়িত্বহীন সরকারের আচরণিক ত্রুটিও।
বাংলাদেশ বিদেশনির্ভর দেশ। সম্প্রতি পোশাক শ্রমিক নেতা আমিনুল হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে মানবাধিকার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের যে আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তার চরম মাশুল গুনছে বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে বিনিয়োগের ব্যাপারে নিরুত্সাহিত বোধ করছে। বোঝা যাচ্ছে, সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে হত্যা-গুম জাতীয় কল্যাণের কত বড় কবর রচনা করতে পারে। উল্লেখ্য, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে বাংলাদেশের প্রধান ক্ষেত্র পোশাক শিল্প।
মানুষ নিরাপত্তা চায়। অনিশ্চিত জীবন মানুষের স্বাভাবিক মানবিক বিকাশে অন্তরায়। সুস্থ-স্বাভাবিক রাজনীতির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহিতা ও বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন সময়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের বিকল্প নেই। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ যেসব গুমের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর দায় সরকার এড়াতে পারবে না। চাঞ্চল্যকর এসব ঘটনার রহস্য সরকারকেই উদঘাটন করতে হবে। ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধান রহস্য থেকে সাগর-রুনি হত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন