রবিবার, ২৪ জুন, ২০১২

রাজনৈতিক দলের সংস্কার সময়ের দাবি

মেজর জিল্লুর রহমান (অব.)


ব্রিটিশ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে দেশ বিভাগ হয় ১৯৪৭ সালে। ১৯৭১ সালে অধিকার আদায়ের স্বাধীনতা সংগ্রাম। সব আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রাণশক্তি ছিল একটি গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শোষণহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও সেই স্বপ্নের রাষ্ট্রব্যবস্থা স্বপ্নই রয়ে গেল। স্বাধীনতার আগে লড়াই করেছি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। আর দেশ বিভাগের পর যুদ্ধ করেছি পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে। এখন আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে নিজেদের মধ্যে। লড়াই-সংগ্রাম দেখতে দেখতে জাতি ক্লান্ত। জাতির সব স্বপ্ন-সাধ ম্রিয়মাণপ্রায়। এখন অবস্থা হয়েছে এমন_ ভিক্ষা চাই না কুকুর ঠেকাও। রাজনীতির হালচাল দেখে মনে হচ্ছে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা-চেতনা রাজনীতিকরা ভুলে গেছেন। এত রক্ত, এত জীবন, এত মা-বোনের আর্তনাদ কি বলি দেওয়া হয়েছিল কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠীর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য? আজ পারিবারিক ক্ষমতাধারার বীজ নিবিড়ভাবে রোপণের কর্মকাণ্ডে রাজনীতি গোলকধাঁধার মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। দেশের বর্তমান রাজনীতি জনকল্যাণ, দেশের কল্যাণ নির্বাসন দিয়ে পরিবার আর ব্যক্তিপূজা-অর্চনায় মগ্ন। রাজনীতিতে সরকারি, বিরোধী দল বলে কোনো পক্ষ-বিপক্ষ নেই, রাজনীতি ব্যবহার হচ্ছে ব্যক্তিগত আক্রোশ আর প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে। নিরীহ অবহেলিত মানুষ একেক সময় একেক দলকে ভোট দেয় একবুক আশা নিয়ে কিন্তু যারাই ক্ষমতায় আসে তারাই ফিরে যায় মান্ধাতা আমলের জগাখিচুরি রাজনীতির বলয়ে। যুগের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কিছুতেই পারছে না বর্তমান রাজনীতি।

স্বাধীন দেশে কৃষক সারের জন্য গুলিবিদ্ধ হচ্ছে, মেয়েরা থানায় ধর্ষিত হচ্ছে। পানি-বিদ্যুতের জন্য মিছিল দেখতে হচ্ছে, টেন্ডারবাজি দেখতে হচ্ছে, ছাত্র রাজনীতি কলুষিত হচ্ছে, বিরোধী দলের ওপর দমননীতি, দ্রব্যমূল্য অসহনীয়, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, সংসদে অশ্রাব্য ভাষায় শীর্ষ নেতাদের কটাক্ষ করা, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, ফাঁসির আসামিদের ক্ষমা, দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয়দান, প্রশাসন দলীয়করণ, সাংবাদিক নির্যাতন- এই অনাকাঙ্ক্ষিত কাজের জন্য দায়ী রাজনীতিকরা। সম্প্রতি সরকারি কর্মচারীদের শিখা অনির্বাণে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মিছিল সহকারে যোগদান আরেকটি অবক্ষয়ের জলজ্যান্ত উদাহরণ। স্বাধীনতার আগে বাঙালি অনেক কঠিন সময় পার করেছে, তখনো সরকারি কর্মচারীরা রাজনৈতিক ব্রান্ডের লেবেল গায়ে লাগায়নি। রাজনীতিকদের বিচক্ষণতার এমন আকাল হয়েছে যে, নিজ ঘরে আগুন লাগিয়ে নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। জাতীর স্বার্থের কথা বলার মতো সেই সাহসী নেতারা কোথায়? আইয়ুব-ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে যারা মাঠে-ময়দানে জ্বলে উঠেছিলেন কোথায় সেই সাহসী নেতারা, যারা জাতির স্বার্থে ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। কোথায় সেই রাজপথের লড়াকু নেতারা, কোথায় সেই দুর্দান্ত জীবনীশক্তির নেতারা, কোথায় সেই দরদি নেতারা, যারা নিজ সংসার ত্যাগ করে বিরাগী হয়েছিলেন মানুষের কল্যাণে। উত্তর খুব সহজ, আমরা তাদের স্তব্ধ করেছি। এক কবি লিখেছেন বিবেককে জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি কোথায়? বিবেক উত্তর দিল- ক্যান আমি তো কফিনের পেরেকের গোড়ায়, প্রশ্ন করল ওখানে ক্যান? বিবেক বলল- তোমরা তো আমাকে এখানে পাঠিয়েছ।

'৭১-এ যাদের ডাকে বাঙালি রাস্তায় নেমেছিল, যাদের দাপটে রাজপথ কাঁপত আজ সেই নেতাদের দলের মধ্যে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন অনুগত চাটুকার দিয়ে দলের, দেশের মঙ্গল করা যাবে না। যোগ্যতার চেয়ে আনুগত্য প্রধান্য পাচ্ছে বড় পদ পাওয়ার জন্য, সেখানেই সমস্যা। অযোগ্য, অদক্ষ, অনুগত দিয়ে গতিশীল রাজনীতি চলে না। স্বৈরাচারীর একটা Golden doctrin আছে Rule No.1 Boss is always right. Rule No 2. If boss is wrong see rule no.1। আমাদের রাজনীতিকদের কথাবার্তায় মনে হয় তারা এই বিদ্যায় পারঙ্গম। নেত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য বলার মতো সাহসী নেতার অভাব। এক ব্যক্তির সব সিদ্ধান্ত সব সময় সঠিক হবে এটা যেমন ভাবা যায় না তেমনি বেঠিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বলার মতো রাজনীতিকের দরকার, তা না হলে ক্ষমতার ভারসাম্য হবে না। শীর্ষ দুই নেত্রী শুধু সমর্থন চান, কোনো পরামর্শ আমলে নিতে চান না। তারা ভাবেন, তাদের সব চিন্তা সঠিক। কোমর ভাঙা, চাটুকার, চামচা চরিত্রের ব্যক্তিকে নেতা বানাতে চান যাতে নেত্রীর সব ইচ্ছা সমবেত সংগীতাকারে বাজাতে পারে। যারা কর্মীদের কাছে গ্রহণীয়, জনসমর্থন আছে সে সব প্রভাবশালী নেতারা ছিটকে পড়েছেন দলের মূল কাঠামো থেকে। চাটুকারদের রমরমা বাণিজ্যে আজ তারা নির্লিপ্ত। দলের কাউন্সিল ডাকা এটা শুধু গণতন্ত্রের নামে আইওয়াশ। কাউন্সিল ডেকে এক জায়গায় বিলাসবহুল কেন্দ্রে দেখা-সাক্ষাৎ, খাওয়া-দাওয়া আর স্বৈরাচারী কানুনে কমিটি গঠনের দায়িত্ব নেত্রীর ওপর পরম তৃপ্তিতে অর্পণ করে নিজ ঘরে ফিরে যান কাউন্সিলররা। প্রশ্ন আসে কাউন্সিলররা কি বেড়াতে আসেন, না তাদের দায়িত্ব সম্পাদন করতে আসেন? গণতন্ত্রের কোনো গন্ধ কি পাওয়া যায়, এই কমিটি যে পদ্ধতিতে গঠন করা হয়। একক পছন্দ-অপছন্দের ওপর ভর করে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয় যা গণতন্ত্রের জন্য অশনি-সংকেত। এই পদ্ধতির কারণে মন্ত্রী পাওয়া যায়, গায়ক পাওয়া যায়, নায়িকা পাওয়া যায়, ব্যবসায়ী পাওয়া যায়_ ক্ষমতার কেন্দ্রে কিন্তু নেতা পাওয়া যাচ্ছে না। দলীয় আনুগত্য, দলীয় অনুরাগীদের আশকারা দেওয়ায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা বিতর্কিত হচ্ছেন। অন্যদিকে সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা পেশাদারিত্বকে করা হচ্ছে অবজ্ঞা। এই সস্তা নীতিতে প্রশাসনসহ সব প্রতিষ্ঠানে অদক্ষ লোকের দাপট বেড়েছে, যে কারণে কর্মের গতি মন্থর হচ্ছে। দলীয় আনুগত্যের ওপর ভর করে শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও শৃঙ্খলা ভেঙে আইন নিজের হাতে নিয়ে ক্ষমতা প্রদর্শনের উল্লাসে মেতেছে। সিবিএ নেতারা অনেকে মন্ত্রীদের চেয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। রাজনীতি রাজনীতিকদের হাতে নেই, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী বিতর্কিত ব্যক্তিদের হাতে। টাউট-দলবাজদের রাজনীতি থেকে এখনই অপসারণ জরুরি। রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা করে রাজনীতি সুষ্ঠু ধারায় আনা এখনই দরকার। রাজনৈতিক অঙ্গনে অরাজনৈকিত ব্যক্তির আবির্ভাব উচ্ছৃঙ্খলতাকে উসকে দেবে। রাজনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারে শীর্ষ নেতৃত্ব। যাদের নামে দুর্নীতির গন্ধ আছে তাদের কোনোভাবেই অনুকম্পা দেখানো উচিত নয়। পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে সনদ দিল কোনো দুর্নীতির আলামত পাওয়া যায়নি। আজ বিশ্বব্যাংক নাম ধরে ফিরিস্তি দিয়েছে। ফলে তদন্ত আবার দুদক শুরু করেছে। বিতর্কিত ব্যক্তিদের মন্ত্রিত্বে বহাল থাকায় আজ বিপত্তি ঘটছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি পদ্মা সেতু। কোটি কেটি মানুষের সাধ অপূর্ণ থাকবে কি এক ব্যক্তির মন্ত্রিত্ব রক্ষা করার জন্য? বিশ্বব্যাংক বলছে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে অর্থ ছাড় দেবে না। দেশের মানুষও কোনো দুর্নীতিবাজকে দায়িত্বে দেখতে চায় না। দুর্ভাগ্য হয়তো ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবে তা অনেক দেরিতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। সরকারের হাতে সময় কম, কবে এই সেতুর কাজ করবে। দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পাছে না, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এর আগে দুদকের এক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ সাক্ষ্য দেয় তারা তাদের মতো করে স্বাধীনভাবে দুর্নীতিবাজদের পাকড়াও করতে পাছে না। বর্তমান চেয়ারম্যান তো খোলামেলা বলেই দিলেন দুদক দন্তহীন বাঘ, খাঁচায় পুরা বাঘ। এত সংকেত দুদক থেকে আসার পর সরকারের উচিত এই প্রতিষ্ঠানকে কার্যকরভাবে কাজ করতে দেওয়া।

দলীয় হাইকমান্ডে কেবিনেটে যদি তথ্যনির্ভর যুক্তির কথা বলার লোক থাকে তাহলেই প্রতিটি ইস্যুর বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত হতো। শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে কথা বলার মতো সাহসী কোনো নেতা নেই। পদ হারানের ভয়ে নেত্রীর মুখের ভঙ্গি দেখে নেত্রীর ইচ্ছা সমর্থন করা ছাড়া তাদের উপায় থাকে না। এই পরিস্থিতি থেকে দলকে বের করতে হবে দুই নেত্রীর। আদর্শিক উত্তরাধিকারের চেয়ে পারিবারিক উত্তরাধিকারের কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান এখন প্রয়োজন। সৎ, যোগ্য লোক রাজনীতিতে আসতে দেওয়ার দায়িত্ব দুই নেত্রীর। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার চাকরির সুবাদে দেখেছি নেত্রীকে শুধু একটি সালাম বা মুখ দেখানোর জন্য অনেক নেতা দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকে কর্মহীনভাবে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়বার সালাম দেওয়ার পরও নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষিত না হলে উচ্চৈঃস্বরে ঝাঁপিয়ে নেত্রীর সম্মুখে সালামের তরিকাও দেখেছি। তারা জানে নেত্রী মুখটা চিনলে ভবিষ্যতে একটা ব্যবস্থায় কোথাও না কোথাও ঠাঁই দিবে। যে কারণে ঢাকায় বসে মফস্বল এলাকায় অনেকে কমিটিতে ঢোকেন। নেত্রীর বোঝা উচিত এই চামচা লোক ক্ষমতার পূজা করে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এসব চামচা নয় সত্যিকারের কর্মীরা পাশে থাকে।

যোগ্য লোকের পদায়ন করতে হবে যোগ্য জায়গায়। বিশেষ জেলার প্রতি দুর্বলতা প্রদর্শন করে প্রশাসন অকেজো করা থেকে দূরে থাকতে পারলে প্রশাসনে গতি আসবে। মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ জ্বলন্ত উদাহরণ। তার উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে জেলে ঢুকিয়েছিলেন দুর্নীতির দায়ে। আজ মাহাথির সেই জাতির পরম মধ্যমণি। ভারতেও সম্প্রতি অনেক মন্ত্রী জেলে ঢুকেছেন। মহাত্দা গান্ধীর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের আস্থাভাজন সহযোদ্ধা ছিলেন বল্লভ ভাই প্যাটেল। জহরলাল নেহেরুর সততা, দেশপ্রেম, আপসহীন ব্যক্তিত্ব আর পাণ্ডিত্ব অল্প সময় মুগ্ধ করেছিল গান্ধীকে। তাই গান্ধী প্যাটেলকে বলেছিলেন, তোমার অবদান দেশের জন্য অনেক, অসাধারণ মেধার অধিকারী তুমি। তারপরও দেশ ও দশের বৃহত্তর স্বার্থে নেহরুই ভারতের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সবদিক দিয়ে যোগ্য। কাছের অনুগত প্যাটেলকে গান্ধী পাশ কাটিয়ে নেহরুকেই ভারত গড়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আজ প্রমাণিত গান্ধীর নেতৃত্ব নির্বাচনে ব্যক্তি অনুগতদের চেয়ে যোগ্যতার মাপকাঠিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই গণতন্ত্রের সুফল ভারত আজো ভোগ করছে। আমাদের নেত্রীরা নেতা নির্বাচনের উপমা এখানেও পাবেন। আমাদের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বাধা কোথায়। দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী যদি একবার সাজা পায় তাতে সরকারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে। দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে গেলে দলের জনপ্রিয়তা রক্ষা হবে না। জনগণ অনেক সচেতন, তারা সবই বোঝেন। কারও আবেগে, দুর্বলতায় তারা এখন দুর্বল হয় না। জাতির স্বার্থে এখন রাজনীতি কালিমামুক্ত করা রাজনীতিকদের দায়িত্ব। রাজনীতিকরা পরিস্থিতি উপলব্ধি করে ব্যবস্থা নিলে গণতন্ত্র বিকশিত হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড রাজনীতি অঙ্গনে ঘটে গেল। আদালতের রায় রকেটগতিতে সংসদে বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন করা হলো। উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এই ইস্যুর ওপর হরতাল, অগি্নসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুর, অগি্নদহ কি না ঘটানো হলো। বিরোধী দল স্বপ্নে বিভোর তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি নিরপেক্ষ নির্বাচনের তাবিজ যা তাদের ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করবে। বিগত কোনো তত্ত্বাবধায়কের নির্বাচনে দুই দলের কেউ হেরে গেলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে বলে মেনে নেয়নি। নির্বাচন পদ্ধতি নিরপেক্ষ হলে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা নেই, রাজনীতিতে জনগণের অংশীদারিত্ব নেই, সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের গুণগত কোনো পরিকল্পনা না থাকলে সেই তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি জনগণের কতটুকু কল্যাণে আসবে। শুধু ক্ষমতার পালাবদল ছাড়া দুঃখী মানুষের ভাগ্য বদলানোর কোনো কর্মসূচি রাজনীতিকদের ভাবনায় নেই। যুগোপযোগী রাজনীতি মুখ্য। প্রয়োজন সৎ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক নেতাদের মূল্যায়ন করা। দুই নেত্রীর স্লোগান জনগণ সব ক্ষমতার উৎস, তারাই দেশের মালিক। বাস্তবতা হলো দলের মধ্যে এমন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে সেই ব্যবস্থায় দুই নেত্রীকে দেশের মালিক ও সর্বময় ক্ষমতার মালিকে পরিণত করেছে। দুই নেত্রীর মনস্তাত্তি্বক পরিবর্তন দরকার গণতন্ত্রকে বিকশিত করার জন্য। অন্যথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেন, আসমানের ফেরেশতা দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করলেও জাতির কপালে সুখ-শান্তি জুটবে না। ক্ষমতায় যেতে পারলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, হারলে কারচুপি-পক্ষপাতিত্ব হয়। দুই দলের এই বিবৃতি প্রমাণ করে বড় দল রাজনীতি করে শুধু ক্ষমতার লিপ্সায়। জনগণের কল্যাণ, দেশের মঙ্গল তাদের নীতিতে নেই, আছে শুধু ক্ষমতা দখলের নীতি। দলে আত্দশুদ্ধির মাধ্যমে যোগ্য নেতা নির্বাচন করে আধুনিক দেশ গড়ার কর্মসূচি জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চেয়ে দলকে বেশি ফল দিবে, তাতেই জাতির মঙ্গল নিহিত।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক

ই-মেইল : zillu65@hotmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন