শা হ আ হ ম দ রে জা
১৯ জুন রাতে টিভিতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনছিলাম। বলছিলেন সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে, যারা তাদের দাবির কথা জানাতে গিয়েছিলেন। দাবি কতটা পূরণ করেছেন সে সম্পর্কে জানা না গেলেও শেখ হাসিনার মুখে শুনতে হয়েছে বহুবার উচ্চারিত কিছু কথা। এসবের মধ্যে ছিল ১৯৯৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ। শেখ হাসিনা যথারীতি ‘ভোট চুরির’ কেচ্ছা শোনাচ্ছিলেন। তিনি তাই বলে স্বীকার করেননি, ওই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস হয়েছিল বলেই শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। সেজন্যও তাকে আবার এরশাদের দুই সহযোগী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং আ স ম আবদুর রবের সমর্থন নিতে হয়েছিল। এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন তিনি! এরও ক’দিন আগে ‘বঙ্গবন্ধু’পন্থী পুরুষ ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে শাড়ি আর গহনা নিয়ে কথা বলতে শুনেছি। নিজের শাড়ি-গহনা নয়, বেগম খালেদা জিয়ার শরীরে কতটা দামি ও বাহারি শাড়ি-গহনা থাকে সে সম্পর্কেই পুরুষ ইঞ্জিনিয়ারদের জ্ঞান দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বোঝাচ্ছিলেন, খালেদা জিয়া নাকি শুধু ‘খাওয়ার জন্য’ ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছেন এবং সে কারণেই শেখ হাসিনা ‘বিপুল সাফল্য’ অর্জন করা সত্ত্বেও বিএনপি তার বিরোধিতা করছে। প্রধানমন্ত্রী সেই সঙ্গে লুটপাট এবং অর্থ পাচারের বহুবার বলা কাহিনীও শোনাচ্ছিলেন। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জানতে চাচ্ছিলেন, অনেক তো খেয়েছেন, আর কত খেতে চান? বক্তৃতায় তার সাফল্যেরও ফিরিস্তি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তালিকায় তিন-সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের প্রসঙ্গ ছিল। তিন আর সাড়ে তিনের মধ্যকার পাঁচশ মেগাওয়াটের ব্যবধান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর ধারণা রয়েছে কিনা সে প্রশ্ন তোলার সাহস না দেখিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু’পন্থী ইঞ্জিনিয়াররাও শেখ হাসিনার কথাগুলোকে হা করে গিলছিলেন। লজ্জা লাগছিল, টিভিতে যখন বারকয়েক সফেদ দাড়িওয়ালা রাজউকের চেয়ারম্যানকেও ধন্য হয়ে যাওয়া চামচার মতো দেখা যাচ্ছিল। চামচাদের পাল্লায় পড়ে শেখ হাসিনা সম্ভবত তাল ও দিশা হারিয়ে ফেলেছিলেন। এজন্যই দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি বলে বসেছেন, তার নাকি মাঝে-মধ্যে সাত দিনের জন্য বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার ইচ্ছা হয়! তাহলেই মানুষ নাকি বুঝতে পারবে, বিদ্যুত্ সত্যিই তারা উত্পাদন করেছেন কিনা! আরও কিছু কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী—যেগুলোর মধ্যে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ‘সোনার বাংলা’ হবে ধরনের কিছু বিষয়ের পুনরাবৃত্তি ছিল।
চিবিয়ে চিবিয়ে বললেও এবং বলার সময় গর্বের হাসি হাসলেও শেখ হাসিনা কিন্তু লক্ষ্য করেননি, ‘বঙ্গবন্ধু’পন্থী ইঞ্জিনিয়ারদের সামনে বসিয়ে যাদের উদ্দেশে নিজের কীর্তি ও সাফল্যের বর্ণনা দেয়া সে জনগণই এখনও সুফল ভোগ করার ধারে-কাছে যেতে পারেনি। তারা বরং প্রতিদিন লাফিয়ে বেড়ে চলা পণ্যমূল্যের চাপ সামলাতে গিয়ে চিড়েচ্যাপ্টা হচ্ছে। তার সরকারের বদৌলতে সাধারণ মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও আজকাল বাজারে যাওয়ার কথায় আঁতকে উঠছেন। আড়াইশ’-তিনশ’ টাকার সবজি কিনেও চার-পাঁচজনের পেট ভরাতে পারছেন না তারা। মাছ-মাংস ও ডিমের কথা তো অনেকে ভুলতেই বসেছেন। বাস্তবে মূল্যস্ফীতিসহ পণ্যমূল্য, বেকারত্ব এবং বিদ্যুত্ ও গ্যাসের সঙ্কট থেকে সংসদ এবং জনগণকে অন্ধকারে রেখে ভারতের ইচ্ছা পূরণের মতো বিষয়গুলোর উল্লেখ করলে প্রধানমন্ত্রীকে উল্টো বিপাকে পড়তে হবে। তা সত্ত্বেও মানুষের যখন জিহ্বা বেরিয়ে পড়ছে তখনও কল্পিত সফলতার ঢেঁকুর তুলেছেন তিনি। সাড়ে তিন বছর কাটিয়ে দেয়ার পর সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে কীর্তি ও সাফল্যের বর্ণনা দেয়ার পাশাপাশি সবকিছুর জন্য ২০২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানানোয় বুঝতে বাকি থাকেনি যে, ওই সময় পর্যন্ত তাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি যাতে ক্ষমতায় থাকতে পারেন সে ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করারও পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। এজন্যই সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হয়েছে।
ওপরে বর্ণিত দুটি অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী যথারীতি ‘চোর-বাটপার’ বলে বিএনপিকে গালাগাল করেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ব্যঙ্গ-তামাশা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ভাবতে ও বলতেই পারেন কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগগুলো কেবল তাদের মুখেই শোনা যাচ্ছে। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে এবং সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই-এর এজেন্টকে ধরে-বেঁধে এনেও কোনো একটি বিষয়ে এ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেননি তারা। তাছাড়া এসব বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে এবং বিচারাধীন কোনো বিষয়ে এভাবে বললে বিচার বিভাগের ওপর প্রভাব খাটানোর উদ্দেশ্য গোপন থাকে না। প্রধানমন্ত্রী তবু পেট পুরে ‘খাওয়ার’ এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলেছেন। খালেদা জিয়াকে ‘লোভ’ সামলানোর পরামর্শ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে মানুষের মুখে আলোচিত বিপরীত বিষয়গুলোকে এড়িয়ে গেছেন। বলা হচ্ছে, বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যারা দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন তারাও মোটেই ‘ধোয়া তুলসীপাতা’ নন। বরং বিশেষ কারও কারও স্বজনসহ অনেকের সম্পর্কেই বিদেশে বসে কমিশন খাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক দুর্নীতিতেও স্বজনদের নামই উঠে এসেছে। ‘টেন পার্সেন্ট’ নাকি ঘুষের সবচেয়ে কম হার! টাকার পরিমাণও নাকি হাজার হাজার কোটি এবং সব টাকাই মার্কিন ডলার কিংবা ইউরো ও পাউন্ডে পরিশোধ করতে হয়। সুতরাং অন্য কাউকে গালাগাল করার আগে সবারই সতর্ক থাকা দরকার। কে জানে, কখন কাকে কোন অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়!
বিরোধী দল কেন সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং সরকারের বিরোধিতা করছে তার কারণ নাকি বুঝতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী। এই বুঝতে না পারাটা খুবই কৌতূহলোদ্দীপক সন্দেহ নেই, অন্যদিকে বাস্তব অবস্থা এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যখন প্রধানমন্ত্রী চাইলে সাধারণ মানুষের কাছেও তার জিজ্ঞাসার উত্তর জেনে নিতে পারেন। গুম, হত্যা এবং ধর্ষণের মতো কিছু বিষয়েই বলা যাক। এই সরকারের আমলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গুম, গুপ্তহত্যা এবং ক্রসফায়ার। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডেরই শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা। চৌধুরী আলম থেকে ইলিয়াস আলী পর্যন্ত কতজনের নাম শুনতে চান প্রধানমন্ত্রী? পাশাপাশি রয়েছে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার থেকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানোর মতো দমনমূলক কর্মকাণ্ড। গুম ও হত্যা-নির্যাতনের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যথেষ্ট উদ্বেগের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। সমালোচিত হচ্ছে সরকার। ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত কথায় কথায় শেখ হাসিনা যাদের দোহাই দিতেন সে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও যখন প্রতিবাদ জানায় ও বিরোধিতা করে তখন প্রধানমন্ত্রীর অন্তত বোঝা উচিত, কেন বিরোধী দল তার সরকারের বিরোধিতা করছে।
সমাজের পচনও তারাই ধরিয়েছেন। আজকাল পিতার সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করছে আওয়ামী বখাটেরা। এরকম সর্বশেষ এক ঘটনায় (১২ জুন) চট্টগ্রামের হাতিয়ার নলচরা এলাকায় সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতার বাসাসংলগ্ন স্থানে মেয়েটিকে টেনেহিঁচড়ে বাস থেকে নামিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। বখাটেরা যে আওয়ামী লীগের সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই কারও। শুধু ধর্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না বখাটেরা, অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষিতাকে হত্যাও করছে তারা। ক’দিন আগে রাজধানীর হাতিরপুলের একটি হোটেলে এক তরুণীকে হত্যার পর ২৬ টুকরা করে চারদিকে ছুড়ে ফেলেছে এক ঘাতক যুবক। সব মিলিয়ে নারীদের ওপর নির্যাতন চালানো ডাল-ভাতের মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে! বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার অপরাধ দমনে সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না বলেই অপরাধ বেড়ে চলার পাশাপাশি সমাজে পচনও ঘটছে ভয়ঙ্করভাবে। হাতিরপুলের হত্যাকাণ্ডে দেখা গেছে, ধর্ষণের পর তরুণীর দেহকে ২৬টি টুকরো করে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়ার দায়ে ধরা পড়া যুবকের মধ্যে কোনো অপরাধবোধই লক্ষ্য করা যায়নি। সে বরং টিভি ক্যামেরার সামনেও নির্বিকারভাবে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। এর কারণ, সরকার ও পুলিশের বদৌলতে এ ধরনের ভয়ঙ্কর অপরাধের জন্যও কোনো শাস্তি পেতে হয় না। এজন্যই ঘাতক যুবক এতটা দুঃসাহস দেখাতে পেরেছে। বাস্তবেও প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায়, মিডিয়ার হৈচৈয়ের কারণে দিন কয়েক হাজতে বা রিমান্ডে কাটানোর পর প্রথমে জামিনে বেরিয়ে এসে এক পর্যায়ে রেহাইও পেয়ে যায় ঘাতকরা। এই প্রেক্ষাপটেই কঠিন শাস্তির বিধান সংবলিত দ্রুত বিচারের দাবি উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীও দ্রুত বিচারের কথা বলেছেন। কিন্তু সেটা হরতালকারীদের বিচারের জন্য! তিনি সেই সঙ্গে আইন তৈরির হুমকিও শুনিয়ে রেখেছেন!
প্রশ্ন উঠেছে, বাস্তবে শেখ হাসিনার সরকার কোন ক্ষেত্রে ঠিক কোন ধরনের সফলতা অর্জন করেছে, যার জন্য বিরোধিতার পরিবর্তে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে নৃত্য করতে হবে? বিদ্যুতের কথা বলবেন? ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের প্রচণ্ড যন্ত্রণায় মানুষের জিহ্বা বেরিয়ে আসি আসি করছে। শিল্প-কারখানার উত্পাদন ৬০/৭০ ভাগ পর্যন্ত কমে গেছে। কিন্তু এমন এক কঠিন অবস্থার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শোনাচ্ছেন, তারা নাকি তিন-সাড়ে হাজার তিনশ’ মেগাওয়াট বেশি বিদ্যুত্ উত্পাদন করেছেন! অন্যদিকে তাদের অবহেলায় দু-চারটি মাত্র নয়, ৩৯টি সরকারি বিদ্যুত্ কেন্দ্র অচল হয়ে পড়ে আছে। অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, দুনিয়ার যত পুরনো ও ঝালাই করা ইঞ্জিন এবং যন্ত্রপাতি দিয়ে কোনোভাবে কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলো চালু করেছেন আওয়ামী রেন্টালওয়ালারা। এসবের কার্যক্ষমতাও ‘কুইকই’ কমে আসছে। ক’দিন আগেও কুইক রেন্টালের ছয়টি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্যই সাত দিনের জন্য সরবরাহ বন্ধের ভয় দেখানোর কৌশল নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভয় দেখানোর আড়ালে তিনি আসলে যুক্তি বা গ্রাউন্ড তৈরি করে রাখতে চাচ্ছেন। ওদিকে তার হিসাবেও কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। যেমন তিনি যখন তিন-সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট উত্পাদনের গালগল্প শোনাচ্ছেন তখন দেখা যাচ্ছে, ১৩৩১ মেগাওয়াট ক্ষমতার কুইক রেন্টাল কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত্ পাওয়া গেছে মাত্র ২৭৮ মেগাওয়াট। আপত্তির অন্য একটি কারণ হলো, দরকার যখন ছিল সঙ্কট সমাধানের বাস্তবসম্মত কোনো উপায় খুঁজে বের করা, সরকার তখন দাম বাড়ানোর সহজ পথে হাঁটতে শুরু করেছে। মাত্র এক বছরের মধ্যে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ফলে মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই মানুষকে ১০০ টাকার বিদ্যুত্ কিনতে হচ্ছে ১৫০/১৫৫ টাকায়। বিলের পরিমাণও দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। এক মাস আগেও যিনি দেড় থেকে দু’ হাজার টাকা বিল দিয়েছেন, চলতি মাস জুনে তাকেই দিতে হয়েছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থার মধ্যেও জুলাই থেকে আবারও দাম বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। আপত্তির কারণ হলো, ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে শুধু জনগণকেই, মুনাফা লুণ্ঠনকারী আওয়ামী রেন্টালওয়ালাদের দিকে চোখই পড়ছে না সরকারের। ভর্তুকি কমানোর অজুহাতকে সামনে আনা হলেও জনগণের জন্য নয়, ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে আসলে কুইক রেন্টাল কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত্ কেনার কারণে। কোনো টেন্ডার না ডেকে এসব কেন্দ্র সরাসরি ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের দেয়া হয়েছে। তারা একদিকে অত্যধিক হারে দাম আদায় করছে, অন্যদিকে উত্পাদনের জন্য জ্বালানি আমদানির নামে ব্যয় করছে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু বছরে ২২ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেয়ার পরও লোডশেডিং বেড়েই চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী নিজেদের ‘কৃষক-বান্ধব’ হিসেবে পরিচয় দিলেও তার আমলেই কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিনামূল্যে সার পাওয়া দূরের কথা, কৃষকদের এখন প্রায় দ্বিগুণ দামে সার কিনতে হচ্ছে। সারের টাকা যোগাড় করতে গিয়ে অনেককে এমনকি ঘরের চাল পর্যন্ত বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে ‘খাওন’ থাকছে না বাড়িতে। এক কেজি মোটা চাল যোগাড় করতেও জিহ্বা বেরিয়ে যাচ্ছে গ্রামের মানুষের। আটা থেকে সয়াবিন পর্যন্ত কোনো কিছুই নেই নাগালের মধ্যে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, ভাত দূরের কথা, অনেক এলাকার মানুষ এমনকি পেট ভরে খুদের জাউও খেতে পারছে না। কারণ, খুদের কেজিও ২৮/৩০ টাকায় পৌঁছে গেছে। অথচ কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলে বসেছেন, মানুষ নাকি চার বেলা পেট পুরে খাচ্ছে! অন্যদিকে নুন-সাবান ও শাড়ি-কাপড়সহ কোনো কিছুরই নাগাল পাচ্ছে না গ্রামের মানুষ। পণ্যমূল্যের এই লাগামহীন বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না কৃষকরা। পুরুষরা তো বটেই, বাড়ির বউ-ঝিদের সঙ্গে ছেলেমেয়েরাও কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। কিন্তু কাজ দিচ্ছে না কেউ। ভিজিএফ নামে সরকার যে কার্ড চালু করেছে সে কার্ডও শুধু তারাই পাচ্ছে, যারা আওয়ামী চেয়ারম্যানদের পছন্দের লোক।
এভাবে পর্যালোচনায় পরিষ্কার হয়ে যাবে, প্রধানমন্ত্রী কতটা সত্য বলেছেন এবং মানুষের যখন জিহ্বা বেরিয়ে পড়ছে তখনও কল্পিত সফলতার ঢেঁকুর তোলাটা ঠিক হয়েছে কিনা। আমরা শুধু বলতে চাই, লজ্জা বলেও তো একটা কথা আছে!
লেখক : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক
shahahmadreza@yahoo.com
চিবিয়ে চিবিয়ে বললেও এবং বলার সময় গর্বের হাসি হাসলেও শেখ হাসিনা কিন্তু লক্ষ্য করেননি, ‘বঙ্গবন্ধু’পন্থী ইঞ্জিনিয়ারদের সামনে বসিয়ে যাদের উদ্দেশে নিজের কীর্তি ও সাফল্যের বর্ণনা দেয়া সে জনগণই এখনও সুফল ভোগ করার ধারে-কাছে যেতে পারেনি। তারা বরং প্রতিদিন লাফিয়ে বেড়ে চলা পণ্যমূল্যের চাপ সামলাতে গিয়ে চিড়েচ্যাপ্টা হচ্ছে। তার সরকারের বদৌলতে সাধারণ মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও আজকাল বাজারে যাওয়ার কথায় আঁতকে উঠছেন। আড়াইশ’-তিনশ’ টাকার সবজি কিনেও চার-পাঁচজনের পেট ভরাতে পারছেন না তারা। মাছ-মাংস ও ডিমের কথা তো অনেকে ভুলতেই বসেছেন। বাস্তবে মূল্যস্ফীতিসহ পণ্যমূল্য, বেকারত্ব এবং বিদ্যুত্ ও গ্যাসের সঙ্কট থেকে সংসদ এবং জনগণকে অন্ধকারে রেখে ভারতের ইচ্ছা পূরণের মতো বিষয়গুলোর উল্লেখ করলে প্রধানমন্ত্রীকে উল্টো বিপাকে পড়তে হবে। তা সত্ত্বেও মানুষের যখন জিহ্বা বেরিয়ে পড়ছে তখনও কল্পিত সফলতার ঢেঁকুর তুলেছেন তিনি। সাড়ে তিন বছর কাটিয়ে দেয়ার পর সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে কীর্তি ও সাফল্যের বর্ণনা দেয়ার পাশাপাশি সবকিছুর জন্য ২০২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানানোয় বুঝতে বাকি থাকেনি যে, ওই সময় পর্যন্ত তাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি যাতে ক্ষমতায় থাকতে পারেন সে ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করারও পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। এজন্যই সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হয়েছে।
ওপরে বর্ণিত দুটি অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী যথারীতি ‘চোর-বাটপার’ বলে বিএনপিকে গালাগাল করেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ব্যঙ্গ-তামাশা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ভাবতে ও বলতেই পারেন কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগগুলো কেবল তাদের মুখেই শোনা যাচ্ছে। মাইক্রোস্কোপ দিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে এবং সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই-এর এজেন্টকে ধরে-বেঁধে এনেও কোনো একটি বিষয়ে এ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেননি তারা। তাছাড়া এসব বিষয়ে আদালতে মামলা চলছে এবং বিচারাধীন কোনো বিষয়ে এভাবে বললে বিচার বিভাগের ওপর প্রভাব খাটানোর উদ্দেশ্য গোপন থাকে না। প্রধানমন্ত্রী তবু পেট পুরে ‘খাওয়ার’ এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ তুলেছেন। খালেদা জিয়াকে ‘লোভ’ সামলানোর পরামর্শ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে মানুষের মুখে আলোচিত বিপরীত বিষয়গুলোকে এড়িয়ে গেছেন। বলা হচ্ছে, বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যারা দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন তারাও মোটেই ‘ধোয়া তুলসীপাতা’ নন। বরং বিশেষ কারও কারও স্বজনসহ অনেকের সম্পর্কেই বিদেশে বসে কমিশন খাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক দুর্নীতিতেও স্বজনদের নামই উঠে এসেছে। ‘টেন পার্সেন্ট’ নাকি ঘুষের সবচেয়ে কম হার! টাকার পরিমাণও নাকি হাজার হাজার কোটি এবং সব টাকাই মার্কিন ডলার কিংবা ইউরো ও পাউন্ডে পরিশোধ করতে হয়। সুতরাং অন্য কাউকে গালাগাল করার আগে সবারই সতর্ক থাকা দরকার। কে জানে, কখন কাকে কোন অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়!
বিরোধী দল কেন সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং সরকারের বিরোধিতা করছে তার কারণ নাকি বুঝতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী। এই বুঝতে না পারাটা খুবই কৌতূহলোদ্দীপক সন্দেহ নেই, অন্যদিকে বাস্তব অবস্থা এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, যখন প্রধানমন্ত্রী চাইলে সাধারণ মানুষের কাছেও তার জিজ্ঞাসার উত্তর জেনে নিতে পারেন। গুম, হত্যা এবং ধর্ষণের মতো কিছু বিষয়েই বলা যাক। এই সরকারের আমলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গুম, গুপ্তহত্যা এবং ক্রসফায়ার। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডেরই শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা। চৌধুরী আলম থেকে ইলিয়াস আলী পর্যন্ত কতজনের নাম শুনতে চান প্রধানমন্ত্রী? পাশাপাশি রয়েছে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার থেকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানোর মতো দমনমূলক কর্মকাণ্ড। গুম ও হত্যা-নির্যাতনের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যথেষ্ট উদ্বেগের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। সমালোচিত হচ্ছে সরকার। ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত কথায় কথায় শেখ হাসিনা যাদের দোহাই দিতেন সে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও যখন প্রতিবাদ জানায় ও বিরোধিতা করে তখন প্রধানমন্ত্রীর অন্তত বোঝা উচিত, কেন বিরোধী দল তার সরকারের বিরোধিতা করছে।
সমাজের পচনও তারাই ধরিয়েছেন। আজকাল পিতার সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করছে আওয়ামী বখাটেরা। এরকম সর্বশেষ এক ঘটনায় (১২ জুন) চট্টগ্রামের হাতিয়ার নলচরা এলাকায় সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতার বাসাসংলগ্ন স্থানে মেয়েটিকে টেনেহিঁচড়ে বাস থেকে নামিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। বখাটেরা যে আওয়ামী লীগের সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই কারও। শুধু ধর্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না বখাটেরা, অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষিতাকে হত্যাও করছে তারা। ক’দিন আগে রাজধানীর হাতিরপুলের একটি হোটেলে এক তরুণীকে হত্যার পর ২৬ টুকরা করে চারদিকে ছুড়ে ফেলেছে এক ঘাতক যুবক। সব মিলিয়ে নারীদের ওপর নির্যাতন চালানো ডাল-ভাতের মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে! বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার অপরাধ দমনে সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না বলেই অপরাধ বেড়ে চলার পাশাপাশি সমাজে পচনও ঘটছে ভয়ঙ্করভাবে। হাতিরপুলের হত্যাকাণ্ডে দেখা গেছে, ধর্ষণের পর তরুণীর দেহকে ২৬টি টুকরো করে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়ার দায়ে ধরা পড়া যুবকের মধ্যে কোনো অপরাধবোধই লক্ষ্য করা যায়নি। সে বরং টিভি ক্যামেরার সামনেও নির্বিকারভাবে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। এর কারণ, সরকার ও পুলিশের বদৌলতে এ ধরনের ভয়ঙ্কর অপরাধের জন্যও কোনো শাস্তি পেতে হয় না। এজন্যই ঘাতক যুবক এতটা দুঃসাহস দেখাতে পেরেছে। বাস্তবেও প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায়, মিডিয়ার হৈচৈয়ের কারণে দিন কয়েক হাজতে বা রিমান্ডে কাটানোর পর প্রথমে জামিনে বেরিয়ে এসে এক পর্যায়ে রেহাইও পেয়ে যায় ঘাতকরা। এই প্রেক্ষাপটেই কঠিন শাস্তির বিধান সংবলিত দ্রুত বিচারের দাবি উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীও দ্রুত বিচারের কথা বলেছেন। কিন্তু সেটা হরতালকারীদের বিচারের জন্য! তিনি সেই সঙ্গে আইন তৈরির হুমকিও শুনিয়ে রেখেছেন!
প্রশ্ন উঠেছে, বাস্তবে শেখ হাসিনার সরকার কোন ক্ষেত্রে ঠিক কোন ধরনের সফলতা অর্জন করেছে, যার জন্য বিরোধিতার পরিবর্তে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে নৃত্য করতে হবে? বিদ্যুতের কথা বলবেন? ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিংয়ের প্রচণ্ড যন্ত্রণায় মানুষের জিহ্বা বেরিয়ে আসি আসি করছে। শিল্প-কারখানার উত্পাদন ৬০/৭০ ভাগ পর্যন্ত কমে গেছে। কিন্তু এমন এক কঠিন অবস্থার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শোনাচ্ছেন, তারা নাকি তিন-সাড়ে হাজার তিনশ’ মেগাওয়াট বেশি বিদ্যুত্ উত্পাদন করেছেন! অন্যদিকে তাদের অবহেলায় দু-চারটি মাত্র নয়, ৩৯টি সরকারি বিদ্যুত্ কেন্দ্র অচল হয়ে পড়ে আছে। অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, দুনিয়ার যত পুরনো ও ঝালাই করা ইঞ্জিন এবং যন্ত্রপাতি দিয়ে কোনোভাবে কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলো চালু করেছেন আওয়ামী রেন্টালওয়ালারা। এসবের কার্যক্ষমতাও ‘কুইকই’ কমে আসছে। ক’দিন আগেও কুইক রেন্টালের ছয়টি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্যই সাত দিনের জন্য সরবরাহ বন্ধের ভয় দেখানোর কৌশল নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভয় দেখানোর আড়ালে তিনি আসলে যুক্তি বা গ্রাউন্ড তৈরি করে রাখতে চাচ্ছেন। ওদিকে তার হিসাবেও কিন্তু শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। যেমন তিনি যখন তিন-সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট উত্পাদনের গালগল্প শোনাচ্ছেন তখন দেখা যাচ্ছে, ১৩৩১ মেগাওয়াট ক্ষমতার কুইক রেন্টাল কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত্ পাওয়া গেছে মাত্র ২৭৮ মেগাওয়াট। আপত্তির অন্য একটি কারণ হলো, দরকার যখন ছিল সঙ্কট সমাধানের বাস্তবসম্মত কোনো উপায় খুঁজে বের করা, সরকার তখন দাম বাড়ানোর সহজ পথে হাঁটতে শুরু করেছে। মাত্র এক বছরের মধ্যে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ফলে মাত্র এক বছরের ব্যবধানেই মানুষকে ১০০ টাকার বিদ্যুত্ কিনতে হচ্ছে ১৫০/১৫৫ টাকায়। বিলের পরিমাণও দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। এক মাস আগেও যিনি দেড় থেকে দু’ হাজার টাকা বিল দিয়েছেন, চলতি মাস জুনে তাকেই দিতে হয়েছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থার মধ্যেও জুলাই থেকে আবারও দাম বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। আপত্তির কারণ হলো, ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে শুধু জনগণকেই, মুনাফা লুণ্ঠনকারী আওয়ামী রেন্টালওয়ালাদের দিকে চোখই পড়ছে না সরকারের। ভর্তুকি কমানোর অজুহাতকে সামনে আনা হলেও জনগণের জন্য নয়, ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে আসলে কুইক রেন্টাল কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত্ কেনার কারণে। কোনো টেন্ডার না ডেকে এসব কেন্দ্র সরাসরি ক্ষমতাসীন দলের লোকজনদের দেয়া হয়েছে। তারা একদিকে অত্যধিক হারে দাম আদায় করছে, অন্যদিকে উত্পাদনের জন্য জ্বালানি আমদানির নামে ব্যয় করছে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু বছরে ২২ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেয়ার পরও লোডশেডিং বেড়েই চলেছে।
প্রধানমন্ত্রী নিজেদের ‘কৃষক-বান্ধব’ হিসেবে পরিচয় দিলেও তার আমলেই কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিনামূল্যে সার পাওয়া দূরের কথা, কৃষকদের এখন প্রায় দ্বিগুণ দামে সার কিনতে হচ্ছে। সারের টাকা যোগাড় করতে গিয়ে অনেককে এমনকি ঘরের চাল পর্যন্ত বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে ‘খাওন’ থাকছে না বাড়িতে। এক কেজি মোটা চাল যোগাড় করতেও জিহ্বা বেরিয়ে যাচ্ছে গ্রামের মানুষের। আটা থেকে সয়াবিন পর্যন্ত কোনো কিছুই নেই নাগালের মধ্যে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, ভাত দূরের কথা, অনেক এলাকার মানুষ এমনকি পেট ভরে খুদের জাউও খেতে পারছে না। কারণ, খুদের কেজিও ২৮/৩০ টাকায় পৌঁছে গেছে। অথচ কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলে বসেছেন, মানুষ নাকি চার বেলা পেট পুরে খাচ্ছে! অন্যদিকে নুন-সাবান ও শাড়ি-কাপড়সহ কোনো কিছুরই নাগাল পাচ্ছে না গ্রামের মানুষ। পণ্যমূল্যের এই লাগামহীন বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছে না কৃষকরা। পুরুষরা তো বটেই, বাড়ির বউ-ঝিদের সঙ্গে ছেলেমেয়েরাও কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। কিন্তু কাজ দিচ্ছে না কেউ। ভিজিএফ নামে সরকার যে কার্ড চালু করেছে সে কার্ডও শুধু তারাই পাচ্ছে, যারা আওয়ামী চেয়ারম্যানদের পছন্দের লোক।
এভাবে পর্যালোচনায় পরিষ্কার হয়ে যাবে, প্রধানমন্ত্রী কতটা সত্য বলেছেন এবং মানুষের যখন জিহ্বা বেরিয়ে পড়ছে তখনও কল্পিত সফলতার ঢেঁকুর তোলাটা ঠিক হয়েছে কিনা। আমরা শুধু বলতে চাই, লজ্জা বলেও তো একটা কথা আছে!
লেখক : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক
shahahmadreza@yahoo.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন