সোমবার, ১৮ জুন, ২০১২

মহামহিম বাঙালি প্রণব মুখার্জি



ব ঙ্গ বী র কা দে র সি দ্দি কী বী র উ ত্ত ম
বেশ কিছুদিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল এবার ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতির পদ একজন বাঙালি অলঙ্কৃত করবেন। ধীরে ধীরে সেই সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল, যার পরিসমাপ্তি ঘটেছে ১৫ জুলাই বিকালের দিকে। বর্তমানে ভারতের শাসক জোট ইউপিএ, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অতি সামান্য। ইউপিএ’র শক্তিশালী এক শরিক মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস। শ্রী মুখার্জিকে সবাই সমর্থন করলেও মমতা ব্যানার্জি একজন বাঙালি হয়েও আরেকজন খ্যাতিমান বাঙালিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। সঙ্গে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন সমাজবাদী দলের কর্ণধার পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ মুলায়ম সিং যাদবকে। তার সঙ্গে কী কথা হয়েছে না হয়েছে তা তিনিই জানেন। তবে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে তিনি এপিজে আব্দুল কালাম, ড. মনমোহন সিং, সাবেক স্পিকার সোমনাথ চ্যাটার্জির মধ্য থেকে কাউকে সমর্থন করেন। এ যেন মামার বাড়ির আবদার। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন হাস্যকর অবাস্তব প্রস্তাব আর কখনও কোথাও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। কোনো দেশের নির্বাচিত দায়িত্বরত প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপতি পদে কেউ কোনোদিন প্রস্তাব করেছেন কিনা তাও বলতে পারব না। মনে হয় প্রস্তাব দেয়ার আগে এপিজে আব্দুল কালামের সঙ্গে মমতা ব্যানার্জি কোনো কথা বলারও প্রয়োজনবোধ করেননি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে কথা বলার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর সোমনাথ চ্যাটার্জি সিপিএম-এর মানুষ। মমতা ব্যানার্জি চিরকাল সিপিএম-এর দুশমন, চরম বিরোধী। এর পুরস্কার হিসেবেই কত প্রবীণ নেতা থাকতেও তিনি পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম-বিরোধী নেতা হয়েছেন। তিস্তার পানি বণ্টনে বাগড়া দিয়েছেন। তার অন্তরাত্মা, বিবেক যা বলেছে করেছেন। তিনি যখন ছোট ছিলেন, তার যখন কোনো নামধাম ছিল না, ভারতবাসী বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে তখন বাংলাদেশকে পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করেছে। এখন তিনি বড় হয়েছেন, নেতৃত্ব পেয়েছেন। কারবালার তীরে যেমন মহানবীর দৌহিত্র ইমাম হোসেন এবং তাঁর পরিবারকে ফোরাতের পানি বন্ধ করে সীমার এজিদরা জানে মেরেছিল, নয়া জমানার এজিদরা না হয় তিস্তার পানি বন্ধ করে আমাদের মারার চেষ্টা করবেন এতে আর বিচিত্র কী! তবে দেড় হাজার বছর আগে যেমন এজিদ সীমাররা জয়ী হয়নি, এখনও হবে না এটা সবার জানা থাকা দরকার। প্রায় সব দল প্রণব মুখার্জিকে সমর্থন দিলেও মমতা ব্যানার্জি বলেছেন তার খেল শেষ হয়নি। আগামী মাসে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শেষ হওয়ার আগে হয়তো শেষ হবেও না। তবে বল তার হাতছাড়া হয়ে গেছে। মুলায়ম সিং যাদব একজন তীক্ষষ্ট, ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা। তাঁকে সেই ’৮০-এর আগে থেকে দেখছি মমতা ব্যানার্জি যখন সাধারণ এবং খুবই ছোট ছিলেন সেই তখন থেকে। ইউপিএ প্রথম সরকারের সময় প্রণব মুখার্জির পালক পুত্র পিন্টুর বিয়েতে গিয়েছিলাম। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের সুবার্তু পার্কে পিন্টুর বৌ-ভাতের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে মুলায়ম সিং যাদবের সঙ্গে দেখা হতেই বলে উঠেছিলেন, ‘টাইগার দাদা আপকো ভি লে আয়া?’ বিহারের আলোচিত নেতা লাল্লু প্রসাদ যাদব, তিনি তার দল নিয়ে স্বভাবজাত ভঙ্গিতে প্রণব মুখার্জিকে সমর্থন দিয়েছেন। লাল্লু প্রসাদ যাদবের স্ত্রী শ্রীমতী রাবড়ী দেবী ক্লাস টু-থ্রি পর্যন্ত পড়া একজন গৃহিণী, বাড়িতে গরুর দুধের খামার করতেন। তিনি খুবই যোগ্যতার সঙ্গে দুই-দুইবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদ সামলেছেন। উত্তর প্রদেশের নামকরা নেত্রী মায়াবতী সমর্থন দিয়েছেন প্রণব মুখার্জিকে একজন যোগ্য, দক্ষ, উপযুক্ত মানুষ হিসেবে। বিরোধী জোটের মূল দল বিজেপির নেতারাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রণব মুখার্জির প্রশংসা করেছেন। এমনকি এনডিএ’র প্রধান শ্রীমতী সুষমা স্বরাজ প্রণব মুখার্জির প্রতি ব্যক্তিগত সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। লালকৃষ্ণ আদভানি করেছেন, দক্ষিণের করুণানিধি করেছেন, মহারাষ্ট্রের শারদ পাওয়ার করেছেন, কাশ্মীরের ওমর আবদুল্লাহ করেছেন। কিন্তু একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দিল্লির সর্বোচ্চ আসনে বসার সুযোগ বা সম্মান থেকে বাঙালিকে বঞ্চিত করতে চান। ভারতবর্ষ বা ভারত উপমহাদেশে হাজার বছরের শাসনে দিল্লির শীর্ষ আসনে কোনো বাঙালি বসেনি। সেটা স্বৈরতন্ত্র হোক, গণতন্ত্র হোক, রাজতন্ত্র অথবা পাঠান, মোগল, সুলতানী আমল যখনই হোক, এই প্রথম একজন বাঙালি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় দিল্লির সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে চলেছেন। যেখানে বাঙালি হিসেবে সবার উদ্বেলিত বা খুশি হওয়ার কথা, সেখানে পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র বাঙালি মুখ্যমন্ত্রী সবচাইতে বেশি অখুশি বা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। স্রষ্টা না করুন ভারতে আর পাঁচটা রাজ্যে পাঁচজন মমতা ব্যানার্জি যদি হন তাহলে আমাদের চাইতে করুণ দশা হবে তাদের। আমাদের এক মরহুম মহান রাজনীতিবিদ বাংলার গর্ব ময়মনসিংহ ত্রিশালের সন্তান আবুল মনসুর আহমেদের একটা গল্পের সামান্য তুলে ধরি। কবে একদিন মর্ত্যের কিছু নেতানেত্রীকে স্রষ্টা বেহেশত-দোজখ পরিদর্শনের সুযোগ দিয়েছিলেন। সেখানে নাকি আবুল মনসুর আহমেদও ছিলেন। বেহেশত দেখা শেষে দোজখে এলে নানা জায়গায় নানা শাস্তি দেখতে পান। কারও মাথা ফাটছে, আবার মাথা জোড়া লাগছে। কাউকে টুকরা টুকরা করে আবার জোড়া দেয়া হচ্ছে। কেউ সাপ বিচ্ছু খাচ্ছে। এরকম হাজারো ধরনের শাস্তি দেখতে দেখতে এক জায়গায় তাঁরা দেখেন এক টগবগে ফুটন্ত কড়াইতে কিছু মানুষ ভাজা হচ্ছে। সেখানে কোনো পাহারাদার নেই, তাদের কেউ কেউ কষ্ট করে ওপরে ওঠার চেষ্টা করছে। অনেক কষ্টে কেউ কেউ যখন বেরিয়ে পড়ার অবস্থায় আসছে তখন নিচ থেকে টেনে আবার ফুটন্ত কড়াইতে ফেলে দিচ্ছে। এটা কয়েকবার দেখে আবুল মনসুর আহমেদ তাঁর সঙ্গের পরিদর্শকদের বলেছিলেন, ‘এরা সব আমার ময়মনসিঙ্গা। এরা নিজেরাও ওপরে উঠবে না, কঠোর পরিশ্রম করে কেউ যদি ওপরে ওঠার চেষ্টা করে তাকেও এমন করে টেনে নামায়।’ মমতা ব্যানার্জির কায়কারবার দেখে কেন যেন আমার আবুল মনসুর আহমেদের কথাটি মনে পড়ে গেল।
শ্রী প্রণব মুখার্জি একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার জন্ম বীরভূম জেলার কির্নাহার গ্রামে। পিতা কামদা কিংকর মুখোপাধ্যায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘ দশ বছর কারানির্যাতন ভোগ করেছেন। ’৫২ থেকে ’৬৪ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ছিলেন। শ্রী প্রণব মুখার্জি রাজনীতিতে শরিক হবেন, রাজনীতিবিদ হবেন, তাঁর স্কুল-কলেজ জীবনে তেমন বোঝা যায়নি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে শ্রী প্রণব মুখার্জির সঙ্গে আমার পরিচয় প্রায় ৩৫-৩৬ বছরের। কত স্মৃতিকথা শুনেছি। দুর্গাপূজায় তাঁর গ্রামের বাড়ি কির্নাহার এবং তাঁর দিদি অন্নপূর্ণা দেবীর বাড়িতে গেছি, থেকেছি, খেয়েছি। তাই বলছি তাঁর মা ছেলেবেলায় কোনো কিছু আনতে যখন তাঁকে পয়সা দিতেন আমার মতো সেখান থেকে তিনি কিছু কিছু বাঁচাতেন। এটা কী করে করতেন সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করায় খুব গর্ব করে বলেছেন, ‘মা তো আমাকে জিনিস আনতে পাঠাতেন, সে হিসাবেই পয়সা দিতেন। পরিমাণটা তো ঠিক করতাম আমি।’ যেমনটা ছোটবেলায় বাজার করতে গিয়ে বছরের পর বছর আমিও করেছি। সে কারণে মা’র হাতে মার না খেলেও বাবা, বড় ভাইর হাতে প্রচুর মার খেয়েছি। প্রায় একশ’ ত্রিশ কোটি ভারতবাসীর গৌরবের ধন যিনি মহামান্য রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন তিনি আমার মতো মার খেয়েছেন কিনা এটা বলি কী করে। শ্রী প্রণব মুখার্জি একেবারে গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেছিলেন। ক্লাস ওয়ান থেকে টু-তে উঠেছিলেন। তারপর অনিয়মিত বা বাড়াবাড়িতে হেডমাস্টার খুব বিরক্ত হয়েছিলেন, তাকে স্কুলেই রাখবেন না। কিন্তু কামদা কিংকর মুখোপাধ্যায় একজন সংগ্রামী দেশপ্রেমিক ব্রিটিশবিরোধী নেতা হওয়ায় ভীষণ লোকপ্রিয় ছিলেন। একদিন হেডমাস্টারের কাছে শ্রী মুখার্জিকে ধরে বেঁধে নিয়ে গেলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘তোকে তো আমি স্কুলে রাখবই না, তবু যা যা প্রশ্ন করব যদি উত্তর দিতে পারিস তাহলে ভেবে দেখব রাখা যাবে কি যাবে না।’ মাস্টারমশাই খুব রেগেমেগে প্রশ্ন করা শুরু করেন। প্রশ্ন করতে করতে তাঁর সব প্রশ্ন ফুরিয়ে যায়। আর ছোট বালক পল্টু অবলীলায় সব উত্তর দিয়ে দেয়। হেডমাস্টার তাজ্জব বনে যান। ক্লাস ওয়ান থেকে তাঁর প্রমোশন হয়। টু-থ্রি-ফোরে নয়, একেবারে ফাইভে। তারপর তাঁর লেখাপড়া নিয়ে আর আলোচনা না করাই ভালো। কৃতিত্বের সঙ্গে ডবল না ট্রিপল এমএ পাস করেন। তবে কখনও অর্থনীতি পড়েননি।
অথচ ভারতের সফল অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি খ্যাত। সারা পৃথিবীর একসময় শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অর্থশাস্ত্রের ছাত্র। তার অনুকূলে ওই অমূল্য পুরস্কারটি জোটেনি। জীবন শুরু করেছিলেন মাস্টারি দিয়ে। কয়েকদিন সংবাদপত্রেও লেখালেখি করেছেন। মন বসেছিল কিনা বলতে পারব না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ল পড়ার সময় রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন এবং বাংলা কংগ্রেসে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। বাবার নামের জোরেই হয়তো বাংলা কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ’৬৯ সালে রাজ্যসভার সদস্য হয়ে দিল্লি যান। কিছুদিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে মূল কংগ্রেস নেতাদের বিরোধ বাধে। শেষ পর্যন্ত এরকম একটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইন্দিরাজি সমর্থন করেন নির্দল প্রার্থী বরাহগিরি ভেঙ্কটগিরি মানে ভি ভি গিরিকে। কে কামরাজ, নিজলিংগাপ্পা, এস কে পাতিল, মোরারজি দেশাই, অতুল্য ঘোষের কংগ্রেস সিন্ডিকেট মনোনীত প্রার্থী ছিলেন নীলম সঞ্জীব রেড্ডি। সেই সময় শ্রী প্রণব মুখার্জি ইন্দিরাজির সঙ্গে থেকে যান। সেই থেকেই ইন্দিরাজির চোখের আলো হয়েছিলেন, এখনও দিল্লি আছেন। মাঝে ’৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হলে প্রধানমন্ত্রী হন শ্রী রাজীব গান্ধী। অরুণ নেহেরু, কাশ্মীরের মাখন লাল ফোতেদার, অর্জুন সিং ও অন্যদের ষড়যন্ত্রে শ্রী প্রণব মুখার্জি ও এবিএ গনি খান চৌধুরী মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন এবং ’৮৬ সালে প্রণব মুখার্জিকে কংগ্রেস ছাড়তে হয়। আবার কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর যোগ্যতার কারণেই তাকে অনেক বলে-কয়ে দলে নেয়া হয়। তিনি হন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। কতজন যে কতভাবে তাঁকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করেছে। আবার অনেকের দোয়া ভালোবাসাও পেয়েছেন। বেশ কয়েকবার সরাসরি লোকসভা নির্বাচনে জিততে না পারায় নিন্দুকেরা যে কত নিন্দা করেছে। দু’চার জায়গায় ব্যক্তিগতভাবে ওসব শুনে আমার নিজেরও খারাপ লেগেছে। কিন্তু মালদা-মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুর থেকে বিপুল ভোটে প্রথম লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়ে ইউপিএ সরকার গঠন করে সেই অপবাদ থেকে রেহাই পান। আবার দ্বিতীয়বার তার চাইতেও বেশি ভোটে নির্বাচিত হয়ে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে অশীতিপর বৃদ্ধ হয়েও যখন চির তরুণের মতো কাজ করে চলেছিলেন, ঠিক তখনই তার সামনে এলো মহামান্য রাষ্ট্রপতি পদের হাতছানি। তিনি যেই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি হবেন, জঙ্গীপুরের ভোটাররা তাদের প্রিয় প্রতিনিধি হারাবেন। নতুন কাউকে ওখান থেকে নির্বাচিত হতে হবে। জীবনের প্রায় বেশি সময় যে লোকসভা রাজ্যসভা তিনি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, শ্রী মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হলেও রাজ্যসভার সদস্য হওয়ায় শ্রী প্রণব মুখার্জি প্রধানমন্ত্রী না হয়েও লোকসভার নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। এই দুর্লভ সুযোগ এবং সম্মান খুব বেশি মানুষের ভাগ্যে জোটে না। এইসব মধুময় স্মৃতিবিজড়িত সারাজীবনের বিচরণভূমিতে আর যখন তখন যেতে পারবেন না। ৩০০ কক্ষের বিশাল রাষ্ট্রপতি ভবন হবে আর ক’দিন পরেই তাঁর সার্বক্ষণিক বিচরণভূমি। তবুও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে শ্রী প্রণব মূুখার্জি ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ কর্তৃক মনোনীত এবং অন্যদের সমর্থন পাওয়ায় খুবই আনন্দ ও গর্ববোধ করছি। শুধু ব্যক্তিগত পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতার কারণে নয়, একজন বাঙালি হিসেবে সব অস্তিত্ব দিয়ে অনুভব করছি বাঙালির এ গৌরব। আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রীয় সীমানায় নোবেল পুরস্কার অর্জন করে যে গৌরব এনে দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বাঙালি হিসেবে নোবেল অর্জন করে বাঙালি জাতিকে যে পরিমাণ মহিমান্বিত করেছেন আমাদের মানিকগঞ্জের আরেক সন্তান বিশ্ব নাগরিক অমর্ত্য সেন, দিল্লির রাষ্ট্রপতির পদ অলঙ্কৃত করে তেমনই আমাদের গর্বিত করতে চলেছেন শ্রী প্রণব মুখার্জি।
শ্রী প্রণব মুখার্জি জন্মসূত্রে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মানুষ হলেও শ্রীমতী শুভ্রা মুখার্জি আমাদের বাংলাদেশের যশোরের মেয়ে। স্রষ্টার প্রতি তাঁর যে গভীর আস্থা দিল্লির মিলিটারি হাসপাতালে শয্যাশায়ী অবস্থায় দেখেছি আজ তা আবার দেখলাম নতুন করে। হাসপাতালে দেখতে গেলে আমাকে বলেছিলেন, ‘বাঘা, কখনও দুশ্চিন্তা করো না। সবকিছু কপাল।’ গত দু’তিন দিন জি- নিউজের কল্যাণে বার বার যখন শ্রীমতী শুভ্রা মুখার্জি কপালে হাত দিয়ে দেখাচ্ছিলেন, তখন স্রষ্টার প্রতি তাঁর গভীর বিশ্বাস দেখে আমার মন প্রাণ কানায় কানায় ভরে উঠছিল। তাদের একমাত্র কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নীর অনুভূতি শুনেছি। কিন্তু পুত্র অভিজিত্ মুখার্জির কোনো প্রতিক্রিয়া শুনিনি। আশা করতে পারি সবাই খুশি। বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনগণ, পরিবার-পরিজন এবং আমার পক্ষ থেকে ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত হওয়ায় তাঁকে অগ্রিম অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানাচ্ছি। পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে কায়মনে প্রার্থনা করি তিনি যেন একশ’ ত্রিশ কোটি ভারতবাসীর সঙ্গে সারা দুনিয়ার ৪০ কোটি বাঙালির কল্যাণ করতে পারেন। সেইসঙ্গে সারাবিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হিসেবে পরম দয়াময় আল্লাহ যেন তাঁকে কবুল ও মঞ্জুর করেন, আমিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন