এম আবদুল হাফিজ
প্রবাদের উটের পৃষ্ঠে সর্বশেষ খড়কুটো চাপানোর বোঝা আমরা এ দেশের সাধারণ মানুষ আমাদের পৃষ্ঠেই ধারণ করে ছেচড়িয়ে ছেচড়িয়ে সামনে এগোচ্ছি যে কোনো মুহূর্তে থুবড়ে পড়ার শঙ্কা নিয়ে। দৈনন্দিন খরচ মেটাতে গত এক বছরে মানুষের ব্যয় বেড়েছে ৫০ শতাংশের অধিক, যার বিপরীতে আয় বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ১৮ শতাংশ। নিরুপায় মধ্য ও নিম্নবিত্তরা ব্যয় সংকোচন করে এবং প্রয়োজনের অনেক কিছু বর্জন করেও আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারছেন না। হিড়িক পড়েছে পেনশনভোগী ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর। ব্যয় সংকোচন করতে তারা মারাত্মক ব্যাধি না হলে চিকিৎসায়ও বিমুখ। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের প্রদত্ত পূর্বাভাসে বোঝা যায় যে, এত কিছু করে আগামীর জীবনেও কোনো সুদিনের সুখবর নেই। বরং ক্রমবর্ধমানভাবেই এই মহার্ঘতা দানবীয় রূপ ধারণ করছে। তা নিত্যপণ্যের মূল্যেই হোক, বাড়ি ভাড়ায়ই হোক, যানবাহনের ভাড়ায়ই হোক, লেখাপড়ার বা চিকিৎসার খরচেই হোক_ সর্বত্র একই অবস্থা, একই ভীতি, একই নৈরাশ্য। এমনই এক প্রেক্ষিতের বিপরীতে আমাদের রস-রসিকতায় টইটম্বুর এককালের স্বৈরশাসক এরশাদেরও অর্থমন্ত্রী সম্ভবত ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের এই মেয়াদের শেষ বাজেটটি পেশ করেছেন। অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছি যে, বাজেট-পাটিগণিতের মারপ্যাঁচ কদাচিৎ আমার বোধগম্য। ওইগুলো বোঝার জন্য আছে সিপিডি, বিআইডিএস, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের অর্থনীতিবিদরা। তাদের এক্সপার্ট মতামত এবং কোথাও নেই কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক অঙ্গনে লব্ধপ্রতিষ্ঠ এমন বিশেষজ্ঞদের মত ও মন্তব্য এখনও অব্যাহত আছে। তাদের প্রায়ই সাংঘর্ষিক মতামতে আরও বিভ্রান্ত হতে হয়। আমার মতো ছাপোষা সাধারণ মানুষ আগ্রহ ভরে দেখে যে, অন্তত আগামী এক বছর জীবনটা কীভাবে এবং কেমন কাটবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের আলোকে সেখানেও আমাদের মতো অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম থেকে সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয়র মতানুযায়ী সামনে মুদ্রাস্ফীতি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। তার মতে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপে জ্বালানির দাম বাড়ানো হলে মুদ্রাস্ফীতিতে খুবই প্রভাব পড়বে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য কমেছে। তা সত্ত্বেও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, যাতে নিত্যপণ্যসহ পরিবহন ইত্যাদি সবকিছুর খরচ ঊর্ধ্বমুখী হবে_ যৌক্তিক নয়। তা ছাড়া বছর বছর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে রেকর্ড গড়েছে মহাজোট সরকার। ক্ষমতা গ্রহণের পর মহাজোট সরকার পাইকারি বিদ্যুতের দাম পাঁচবার ও খুচরা বিদ্যুতের দাম চারবার বৃদ্ধি করেছে। এরপরও কখন, কোন সেবা খাতের মূল্য কতটা বাড়বে তারও গুঞ্জন রয়েছে। কার্যত সর্বক্ষণ আমাদের গর্দানের ওপর অস্বস্তিকরভাবে ঝুলে আছে ডেমাক্লিসের তলোয়ার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের মতো চালচুলোহীন মানুষকে সুখস্বপ্ন দেখান যে, আমরা ২০২০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলেই আমাদের আয় ও ব্যয়ের বৈষম্য দূর হবে। হয়তোবা হবে। কিন্তু তাই বলে তো সামাজিক বৈষম্য ফুৎকারে উবে যাবে না। সেটি তো একটি কাঠামোগত বা শ্রেণী বিভাগভিত্তিক বাস্তবতা। তাই সম্ভবত তেমন আয়ের দেশেও বিভক্তি একটি থেকেই যাবে। তাই আমজনতার জন্য অন্ধকার হয়তো ঘুচবে না, তাদের দুর্দিনের অবসানও ঘটবে না। অন্তত এবারে বাজেটে তার কোনো সংকেত নেই। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সোপান প্রবৃদ্ধি। জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রায় সবাই সন্দিহান। করারোপের পরিধি সম্প্রসারণে যাদের করের আওতায় আনা হয়েছে তার অন্তর্ভুক্ত কেউই কর প্রদানে সক্ষম নন।
বাজেট আসে বাজেট যায়_ আমাদের ভাগ্যের কোনো ইতিবাচক পরিণতি নেই। যেই যেখানে ছিলাম, সেখানেই আছি। অথবা আগের অবস্থান থেকেও পেছনে ছিটকে পড়েছি। জঠরের দাবি, পরিবারের যৎসামান্য শখ-আহ্লাদ বা নিজের মান-সম্ভ্রম_ এগুলোর মধ্যে একটি ভারসাম্য বহাল রাখতেই সার্বক্ষণিক যুদ্ধ। টানাপড়েনের জীবনে অনেক অজানা বিষয় থাকে, যা কারও সঙ্গে শেয়ার করা যায় না। শুধু এক বোবা অনুভূতির শিরা বেয়ে নিরন্তর রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
মধ্য আয়ের বা নিম্ন আয়ের দেশের সিংহভাগ মানুষের আয়ে কোনো প্রবৃদ্ধি নেই। তারা বাজেটে বর্ণিত ছয়, সাত বা দশ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতেও নিশ্চল, প্রতিক্রিয়াহীন। কেননা তাতে তাদের কী এসে যায়। কার্যত এসবই বিত্তবানদের বিষয়, যাদের আয়-ব্যয়ে বাজেট প্রভাব বিস্তার করে। হায় রে 'মধ্যম আয়ের দেশ', আমাদের কল্পনায় তা ধরাও যায় না, ছোঁয়াও যায় না। ছোঁয়ার কখনও কোনো স্পৃহাও হয় না!
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ :সাবেক মহাপরিচালক বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
প্রস্তাবিত বাজেটের আলোকে সেখানেও আমাদের মতো অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম থেকে সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয়র মতানুযায়ী সামনে মুদ্রাস্ফীতি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। তার মতে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপে জ্বালানির দাম বাড়ানো হলে মুদ্রাস্ফীতিতে খুবই প্রভাব পড়বে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য কমেছে। তা সত্ত্বেও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, যাতে নিত্যপণ্যসহ পরিবহন ইত্যাদি সবকিছুর খরচ ঊর্ধ্বমুখী হবে_ যৌক্তিক নয়। তা ছাড়া বছর বছর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে রেকর্ড গড়েছে মহাজোট সরকার। ক্ষমতা গ্রহণের পর মহাজোট সরকার পাইকারি বিদ্যুতের দাম পাঁচবার ও খুচরা বিদ্যুতের দাম চারবার বৃদ্ধি করেছে। এরপরও কখন, কোন সেবা খাতের মূল্য কতটা বাড়বে তারও গুঞ্জন রয়েছে। কার্যত সর্বক্ষণ আমাদের গর্দানের ওপর অস্বস্তিকরভাবে ঝুলে আছে ডেমাক্লিসের তলোয়ার।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের মতো চালচুলোহীন মানুষকে সুখস্বপ্ন দেখান যে, আমরা ২০২০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলেই আমাদের আয় ও ব্যয়ের বৈষম্য দূর হবে। হয়তোবা হবে। কিন্তু তাই বলে তো সামাজিক বৈষম্য ফুৎকারে উবে যাবে না। সেটি তো একটি কাঠামোগত বা শ্রেণী বিভাগভিত্তিক বাস্তবতা। তাই সম্ভবত তেমন আয়ের দেশেও বিভক্তি একটি থেকেই যাবে। তাই আমজনতার জন্য অন্ধকার হয়তো ঘুচবে না, তাদের দুর্দিনের অবসানও ঘটবে না। অন্তত এবারে বাজেটে তার কোনো সংকেত নেই। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সোপান প্রবৃদ্ধি। জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রায় সবাই সন্দিহান। করারোপের পরিধি সম্প্রসারণে যাদের করের আওতায় আনা হয়েছে তার অন্তর্ভুক্ত কেউই কর প্রদানে সক্ষম নন।
বাজেট আসে বাজেট যায়_ আমাদের ভাগ্যের কোনো ইতিবাচক পরিণতি নেই। যেই যেখানে ছিলাম, সেখানেই আছি। অথবা আগের অবস্থান থেকেও পেছনে ছিটকে পড়েছি। জঠরের দাবি, পরিবারের যৎসামান্য শখ-আহ্লাদ বা নিজের মান-সম্ভ্রম_ এগুলোর মধ্যে একটি ভারসাম্য বহাল রাখতেই সার্বক্ষণিক যুদ্ধ। টানাপড়েনের জীবনে অনেক অজানা বিষয় থাকে, যা কারও সঙ্গে শেয়ার করা যায় না। শুধু এক বোবা অনুভূতির শিরা বেয়ে নিরন্তর রক্তক্ষরণ হতে থাকে।
মধ্য আয়ের বা নিম্ন আয়ের দেশের সিংহভাগ মানুষের আয়ে কোনো প্রবৃদ্ধি নেই। তারা বাজেটে বর্ণিত ছয়, সাত বা দশ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতেও নিশ্চল, প্রতিক্রিয়াহীন। কেননা তাতে তাদের কী এসে যায়। কার্যত এসবই বিত্তবানদের বিষয়, যাদের আয়-ব্যয়ে বাজেট প্রভাব বিস্তার করে। হায় রে 'মধ্যম আয়ের দেশ', আমাদের কল্পনায় তা ধরাও যায় না, ছোঁয়াও যায় না। ছোঁয়ার কখনও কোনো স্পৃহাও হয় না!
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ :সাবেক মহাপরিচালক বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন