সালাহউদ্দীন আহমদ
পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মই এক বিভ্রান্তির মধ্যে। আমি পাকিস্তান আমলে প্রায়ই বলতাম, ‘পাকিস্তান ইজ ক্রিয়েটেড অন কনফিউশন এ্যান্ড মেনটেন্ড বাই ফ্রড।’ এক বিভ্রান্তির মধ্যে জন্ম নেয়া রাষ্ট্রটিকে প্রতারণা আর ছলচাতুরি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। পাকিস্তানে তাই এখন যা হচ্ছে তা চলতেই থাকবে। এটা হতেই বাধ্য। তাই চোখের সামনে যখন দেখলাম রাষ্ট্রটা ভেঙ্গে পড়ছে, খুব অবাক হইনি তাতে। এটাই তো ছিল অনিবার্য।
মনে আছে আশির দশকে সিন্ধী নেতা জিএম সৈয়দ অসাধারণ একটি কথা বলেছিলেন। জেনারেল জিয়াউল হক তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। তিনি পাকিস্তানকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করলেন। জিয়ার কাণ্ডকীর্তি দেখে জিএম সৈয়দ বলেছিলেন, ‘তিনি যা করছেন তাতে পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এটাই তো আমি চাই।’ সিন্ধীদের সংগঠিত করা এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংহতির বিরুদ্ধে কাজ করা ইত্যাদি অভিযোগে তিনি অবশ্য জেল খেটেছেন। জেলেই মারা যান এই নেতা। তবে তাঁর ছিল আশ্চর্য সাহস। পাকিস্তানে বসেই তিনি বলছেন পাকিস্তানের ধ্বংস চান তিনি!
কেন এই দশা হলো পাকিস্তানের? ওই যে সেই ইতিহাসের কাছে ফিরতে হবে। সেই বিভ্রান্তির কথা জানতে হবে। ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সম্মেলনে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল, সে ইতিহাস তো সবাই জানেন। তাতে বলা হয়, ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে একাধিক স্বাধীন সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র গঠন করা হবে। একটা জিনিস লক্ষ্য করার মতো। বলা হয়েছিল মুসলিমপ্রধান অঞ্চলগুলো নিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে, মুসলিম রাষ্ট্র অবশ্যই নয়।
এ সময়ই মুসলিম লীগের নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর উদ্ভাবিত দ্বিজাতিতত্ত্বের ঘোষণা দিলেন। তাঁর মত ছিল, ‘মুসলিমস অব ইন্ডিয়া আর এ্যা সেপারেট নেশন।’ তাই এই দু’টি জাতি এক রাষ্ট্রে থাকতে পারে না।
আসলে মুসলমানদের ভয় ছিল যে, ভারতের হিন্দুদের আধিপত্যের মধ্যে মুসলমানরা তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে পারবেন না। আমার মনে আছে, কোন এক ইংরেজ সাংবাদিক ১৯৪৩-৪৪ সালের দিকে কলকাতায় বসে জিন্নাহ সাহেবের একটি সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন। তিনি জিন্নাহকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘টু নেশন ইন এভরি প্রভিন্স, এভরি টাউন, এভরি ভিলেজ?’ জিন্নাহ উত্তর দিলেন, ‘ইয়েস, টু নেশন ইন এভরি প্রভিন্স, এভরি টাউন, এভরি ভিলেজ।’ তখন সেই সাংবাদিকের মন্তব্য ছিল‘দ্যাটস এ্যা টেরিবল সলিউশন মিস্টার জিন্নাহ।’ জিন্নাহ উত্তরে বললেন, ‘আই নো দ্যাট, বাট দ্যাটস দ্য অনলি ওয়ান।’ আসলে তখন ভারতের প্রতিটি প্রদেশেই হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশেই ছিলেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতেও হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।
জিন্নাহ এবং মুসলিম লীগ এই দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়ে ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সময়কালে অনেকদূর এগিয়ে গেলেন। তাঁদের এই সাফল্যের পেছনে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের একটি ঐতিহাসিক ভুল, যাকে আমি হঠকারিতা বলব, দায়ী ছিল। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু“ হলে কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের বক্তব্য ছিল এটা সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধ। তবে একটা শর্তে কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন দিতে রাজি ছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভারতের স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হবে, এই প্রতিশ্রুতি দিলেই কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারকে যুদ্ধে পূর্ণ সমর্থন দেবে। ব্রিটিশ সরকার ততক্ষণে মহাযুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে কিভাবে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ব্যাপারে কথা দেয়া সম্ভব?
কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে একমাত্র এমএন রায় বলেছিলেন, এটা প্রথম মহাযুদ্ধের মতো সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধ নয়। এটা ফ্যাসিস্ট-বিরোধী যুদ্ধ আর এই যুদ্ধে ফ্যাসিস্টরা যদি জিতে যায় তাহলে ভারত সরাসরি একটি দাস রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এই চিন্তা থেকেই তিনি কংগ্রেসকে বলেছিলেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন দিতে। বিনিময়ে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নিতে। কিন্তু তখন যাঁরা এ কথা বলতেন তাঁদের রেনিগেট বা দালাল বলে আখ্যা দেয়া হতো।
ওদিকে মুসলিম লীগ সুকৌশলে ব্রিটিশদের সমর্থন করে নিজেদের দাবিটা আদায় করে নেয়। অথচ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৩৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এগারোটি প্রদেশের মধ্যে নয়টিতেই কংগ্রেস জয়ী হয়। মুসলিম লীগের কোন নামগন্ধই ছিল না তখন।
কমিউনিস্টরাও একই ঐতিহাসিক ভুল করেছিল। সিপিআই এই যুদ্ধকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ আখ্যা দিয়ে দূরে থাকে। মজার ব্যাপার হলো, মহাযুদ্ধের এক পর্যায়ে ফ্যাসিস্টরা যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করল তখন কমিউনিস্টরা হঠাৎ করেই বলতে শুরু করল, ‘এটা পিপলস ওয়ার: জনগণের যুদ্ধ।’
আসলে এরা বুঝতে পারেননি যে স্বয়ং সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন পর্যন্ত জানতেন যে, ফ্যাসিস্টরা সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করবে। ব্রিটেন বা ফ্রান্স বিশ্বাসঘাতকতা করে কিনা এ নিয়ে তিনি একটু সন্দিহান ছিলেন বটে। তাই সাময়িকভাবে ওদের সমর্থন করা থেকে দূরে ছিলেন তিনি। কিন্তু ফ্যাসিস্টরা যে এক সময় সোভিয়েতকেও আক্রমণ করতে পারে এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত ছিলেন।
এভাবেই উপমহাদেশের রাজনীতি নতুন দিকে মোড় নিল। ১৯৪৬ সালের মধ্যে মুসলিম লীগ অনেক প্রভাবশালী হয়ে উঠল। এ বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মুসলিম লীগ অনেক আসন পেল। এরপর জিন্নাহ মুসলিম লীগের নবনির্বাচিত নেতাদের নিয়ে এক সভা ডাকলেন দিল্লীতে। সে সভায় তিনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলো নিয়ে একটিমাত্র রাষ্ট্র গঠনের কথা বললেন। সভায় ছিলেন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম। তিনি এর প্রতিবাদে বললেন, ‘১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলো নিয়ে একাধিক রাষ্ট্র গঠনের কথা ছিল। আমরা পাঁচ বছর ধরে এই জন্যই আন্দোলন করছি। এখন এই সিদ্ধান্ত হলে তা ওই রেজুলেশনকে ভায়োলেট করবে।’ ওই সময় জিন্নাহর সঙ্গে বিতর্ক করার মতো সাহসী লোক মুসলিম লীগে তেমন ছিলেন না। কিন্তু আবুল হাশিম ছিলেন অন্য রকম। কারণ মুসলিমপ্রধান অঞ্চলগুলো নিয়ে মুসলিম লীগের আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবিটি সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর বিরাট ভূমিকা ছিল। জিন্নাহসহ অন্য নেতারা কেউ গণমানুষের কাছের লোক ছিলেন না। কমিউনিস্ট নেতাদের সঙ্গেও আবুল হাশিমের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
যাহোক, ওই ঘটনার পর জিন্নাহ রেগে গিয়ে বললেন, ‘মৌলভী সাহেব, টেক ইওর সিট। ইট ওয়াজ এ্যা প্রিন্টিং মিসটেক।’ তখন রেজুলেশন বের করার প্রশ্ন উঠল। মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী লাহোর প্রস্তাবটি বের করে দেখালেন। তাতে একাধিক রাষ্ট্র (স্টেটস) শব্দটি ছিল। জিন্নাহ তখন ঘোষণা করলেন, ‘মিটিং ইজ এ্যাডজরড।’
পরদিন মুসলিম লীগের নেতারা আবুল হাশিমকে বোঝাতে চাইলেন যে, ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে টিকে থাকার জন্য পাকিস্তানকে এক রাষ্ট্রই হতে হবে। একাধিক রাষ্ট্র হলে মুসলিমরা দুর্বল হয়ে যাবে। তারা এক রাষ্ট্রের ধারণাটি নিয়ে মুভ করতে বললেন আবুল হাশিমকেই। তিনি বলে দিলেন, আমি অসুস্থ। পারব না। এরপর ওঁরা সোহরাওয়ার্দীকে দিয়ে কাজটা করালেন।
আবুল হাশিম মারা যাওয়ার আগে তাঁর একটি সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম আমি। সে সময় তিনি আমাকে এই ঘটনাটির বিবরণ দিয়েছিলেন। স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব নামের বইতে আমি এটা তুলে ধরেছি।
এভাবেই হিন্দুদের প্রতি একটা আজন্ম ঘৃণা নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলো। এই রাষ্ট্র গঠনের পেছনে রয়েছে প্রতারণা আর মিথ্যা। এখনও পাকিস্তানে এর ধারাবাহিকতা চলছে। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটি তা হলোÑমুসলিমরা একজাতি বা হিন্দুরা একজাতিÑ চিন্তাটাই ভুল। কারণ বাঙালী আর পাঞ্জাবী ধর্মে মুসলমান হলেও জাতিতে ভিন্ন। জিন্নাহ এবং মুসলিম লীগের নেতারা নিজেদের স্বার্থে এভাবেই একটি অবাস্তব ধারণার ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম দিলেন।
তবে পাকিস্তান গঠনের পরপরই জিন্নাহ তাঁর দ্বিজাতিতত্ত্ব থেকে সরে এলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানে হিন্দু-মুসলিম কোন ভেদাভেদ থাকবে না। ধর্মীয় কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণেই পাকিস্তানের জন্ম।’ এটাই ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে তাঁর স্পষ্ট অবস্থানের প্রমাণ।
১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে জিন্নাহ্ মারা যান। তার কয়েক মাস আগে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তিনি ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ ততদিনে তিনি ছিলেন খুব অসুস্থ। তাঁর শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের ক’দিন আগেই লখনৌ মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারি চৌধুরী জালাল উদ্দিন জিন্নাহকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনারা তো পাকিস্তানে চলে যাচ্ছেন। আমরা ভারতের মুসলমানরা কি করব?’ তখন জিন্নাহ বললেন, ‘ইউ বিকেম লয়্যাল টু ইন্ডিয়া।’ জিন্নাহর সঙ্গে চৌধুরীর এই আলাপচারিতার বিষয়টি চৌধুরী তাঁর পার্টওয়ে টু ইন্ডিয়া বইতে লিখেছেন।
পাকিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি নিজেই একজন অপরাধী। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর স্বামী। বেনজির প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি মিস্টার টেন পারসেন্ট হিসাবে পরিচিত ছিলেন। দুর্নীতির দায়ে জেলও খেটেছেন দীর্ঘদিন। সবচেয়ে বড় কথা, বেনজিরের দুই ভাইকে হত্যা করার পেছনে তাঁর হাত রয়েছে বলে প্রমাণিত। এ রকম একজন অপরাধী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। আর তাঁকে রক্ষা করতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি। ওদিকে সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান পাকিস্তানের রাজনীতিকে এই পাঁক থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করছেন। এখানে কেউ সফল হবেন কিনা, সন্দেহ আছে।
কারণ পাকিস্তান একটি সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে সামন্তীয় চেতনাই প্রাধান্যশীল। সার্বভৌমত্বের ধারণাটিও এ রাষ্ট্রে নেই। তাই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীই সবচেয়ে প্রভাবশালী। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে উপমহাদেশীয় অঞ্চলে কমিউনিজমের প্রভাব ঠেকাতে দুধ-কলা দিয়ে কিছু সাপ পুষেছে। এই যেমন তালেবানদের মতো উগ্র ধর্মভিত্তিক দলকে আফগানিস্তানে সমর্থন দেয়া। পাকিস্তানের সামরিক সরকারগুলোকেও একই কারণে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্যই যুক্তরাষ্ট্র পরে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক বোমা আছে বলে তাকে ভয়ও পাচ্ছে সবাই।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং আইএসআই কতটা শক্তিশালী দেখুন। তারা একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। অন্যদিকে তালেবান নেতা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছে। ক্যান্টনমেন্টের কাছেই থাকতেন বিন লাদেন কিন্তু সশস্ত্রবাহিনী নাকি সেটা জানত না। এখন তালেবানদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা জাওয়াহিরীকেও আশ্রয় দিয়ে রেখেছে এই বাহিনী।
এই রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে যেভাবে প্রতারণা আর মিথ্যার মধ্যে, তার ফলেই এই ঘটনাগুলো ঘটছে। ঘটতেই থাকবে।
লেখক : জাতীয় অধ্যাপক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক
পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মই এক বিভ্রান্তির মধ্যে। আমি পাকিস্তান আমলে প্রায়ই বলতাম, ‘পাকিস্তান ইজ ক্রিয়েটেড অন কনফিউশন এ্যান্ড মেনটেন্ড বাই ফ্রড।’ এক বিভ্রান্তির মধ্যে জন্ম নেয়া রাষ্ট্রটিকে প্রতারণা আর ছলচাতুরি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। পাকিস্তানে তাই এখন যা হচ্ছে তা চলতেই থাকবে। এটা হতেই বাধ্য। তাই চোখের সামনে যখন দেখলাম রাষ্ট্রটা ভেঙ্গে পড়ছে, খুব অবাক হইনি তাতে। এটাই তো ছিল অনিবার্য।
মনে আছে আশির দশকে সিন্ধী নেতা জিএম সৈয়দ অসাধারণ একটি কথা বলেছিলেন। জেনারেল জিয়াউল হক তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। তিনি পাকিস্তানকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করলেন। জিয়ার কাণ্ডকীর্তি দেখে জিএম সৈয়দ বলেছিলেন, ‘তিনি যা করছেন তাতে পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এটাই তো আমি চাই।’ সিন্ধীদের সংগঠিত করা এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের সংহতির বিরুদ্ধে কাজ করা ইত্যাদি অভিযোগে তিনি অবশ্য জেল খেটেছেন। জেলেই মারা যান এই নেতা। তবে তাঁর ছিল আশ্চর্য সাহস। পাকিস্তানে বসেই তিনি বলছেন পাকিস্তানের ধ্বংস চান তিনি!
কেন এই দশা হলো পাকিস্তানের? ওই যে সেই ইতিহাসের কাছে ফিরতে হবে। সেই বিভ্রান্তির কথা জানতে হবে। ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সম্মেলনে লাহোর প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল, সে ইতিহাস তো সবাই জানেন। তাতে বলা হয়, ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে একাধিক স্বাধীন সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র গঠন করা হবে। একটা জিনিস লক্ষ্য করার মতো। বলা হয়েছিল মুসলিমপ্রধান অঞ্চলগুলো নিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হবে, মুসলিম রাষ্ট্র অবশ্যই নয়।
এ সময়ই মুসলিম লীগের নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর উদ্ভাবিত দ্বিজাতিতত্ত্বের ঘোষণা দিলেন। তাঁর মত ছিল, ‘মুসলিমস অব ইন্ডিয়া আর এ্যা সেপারেট নেশন।’ তাই এই দু’টি জাতি এক রাষ্ট্রে থাকতে পারে না।
আসলে মুসলমানদের ভয় ছিল যে, ভারতের হিন্দুদের আধিপত্যের মধ্যে মুসলমানরা তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে পারবেন না। আমার মনে আছে, কোন এক ইংরেজ সাংবাদিক ১৯৪৩-৪৪ সালের দিকে কলকাতায় বসে জিন্নাহ সাহেবের একটি সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন। তিনি জিন্নাহকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘টু নেশন ইন এভরি প্রভিন্স, এভরি টাউন, এভরি ভিলেজ?’ জিন্নাহ উত্তর দিলেন, ‘ইয়েস, টু নেশন ইন এভরি প্রভিন্স, এভরি টাউন, এভরি ভিলেজ।’ তখন সেই সাংবাদিকের মন্তব্য ছিল‘দ্যাটস এ্যা টেরিবল সলিউশন মিস্টার জিন্নাহ।’ জিন্নাহ উত্তরে বললেন, ‘আই নো দ্যাট, বাট দ্যাটস দ্য অনলি ওয়ান।’ আসলে তখন ভারতের প্রতিটি প্রদেশেই হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশেই ছিলেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতেও হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।
জিন্নাহ এবং মুসলিম লীগ এই দ্বিজাতিতত্ত্ব নিয়ে ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সময়কালে অনেকদূর এগিয়ে গেলেন। তাঁদের এই সাফল্যের পেছনে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের একটি ঐতিহাসিক ভুল, যাকে আমি হঠকারিতা বলব, দায়ী ছিল। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু“ হলে কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তাদের বক্তব্য ছিল এটা সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধ। তবে একটা শর্তে কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন দিতে রাজি ছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভারতের স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে হবে, এই প্রতিশ্রুতি দিলেই কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারকে যুদ্ধে পূর্ণ সমর্থন দেবে। ব্রিটিশ সরকার ততক্ষণে মহাযুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে কিভাবে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ব্যাপারে কথা দেয়া সম্ভব?
কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে একমাত্র এমএন রায় বলেছিলেন, এটা প্রথম মহাযুদ্ধের মতো সাম্রাজ্যবাদীদের যুদ্ধ নয়। এটা ফ্যাসিস্ট-বিরোধী যুদ্ধ আর এই যুদ্ধে ফ্যাসিস্টরা যদি জিতে যায় তাহলে ভারত সরাসরি একটি দাস রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এই চিন্তা থেকেই তিনি কংগ্রেসকে বলেছিলেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন দিতে। বিনিময়ে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নিতে। কিন্তু তখন যাঁরা এ কথা বলতেন তাঁদের রেনিগেট বা দালাল বলে আখ্যা দেয়া হতো।
ওদিকে মুসলিম লীগ সুকৌশলে ব্রিটিশদের সমর্থন করে নিজেদের দাবিটা আদায় করে নেয়। অথচ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৩৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এগারোটি প্রদেশের মধ্যে নয়টিতেই কংগ্রেস জয়ী হয়। মুসলিম লীগের কোন নামগন্ধই ছিল না তখন।
কমিউনিস্টরাও একই ঐতিহাসিক ভুল করেছিল। সিপিআই এই যুদ্ধকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ আখ্যা দিয়ে দূরে থাকে। মজার ব্যাপার হলো, মহাযুদ্ধের এক পর্যায়ে ফ্যাসিস্টরা যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করল তখন কমিউনিস্টরা হঠাৎ করেই বলতে শুরু করল, ‘এটা পিপলস ওয়ার: জনগণের যুদ্ধ।’
আসলে এরা বুঝতে পারেননি যে স্বয়ং সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন পর্যন্ত জানতেন যে, ফ্যাসিস্টরা সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করবে। ব্রিটেন বা ফ্রান্স বিশ্বাসঘাতকতা করে কিনা এ নিয়ে তিনি একটু সন্দিহান ছিলেন বটে। তাই সাময়িকভাবে ওদের সমর্থন করা থেকে দূরে ছিলেন তিনি। কিন্তু ফ্যাসিস্টরা যে এক সময় সোভিয়েতকেও আক্রমণ করতে পারে এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত ছিলেন।
এভাবেই উপমহাদেশের রাজনীতি নতুন দিকে মোড় নিল। ১৯৪৬ সালের মধ্যে মুসলিম লীগ অনেক প্রভাবশালী হয়ে উঠল। এ বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মুসলিম লীগ অনেক আসন পেল। এরপর জিন্নাহ মুসলিম লীগের নবনির্বাচিত নেতাদের নিয়ে এক সভা ডাকলেন দিল্লীতে। সে সভায় তিনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলো নিয়ে একটিমাত্র রাষ্ট্র গঠনের কথা বললেন। সভায় ছিলেন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম। তিনি এর প্রতিবাদে বললেন, ‘১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলো নিয়ে একাধিক রাষ্ট্র গঠনের কথা ছিল। আমরা পাঁচ বছর ধরে এই জন্যই আন্দোলন করছি। এখন এই সিদ্ধান্ত হলে তা ওই রেজুলেশনকে ভায়োলেট করবে।’ ওই সময় জিন্নাহর সঙ্গে বিতর্ক করার মতো সাহসী লোক মুসলিম লীগে তেমন ছিলেন না। কিন্তু আবুল হাশিম ছিলেন অন্য রকম। কারণ মুসলিমপ্রধান অঞ্চলগুলো নিয়ে মুসলিম লীগের আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবিটি সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর বিরাট ভূমিকা ছিল। জিন্নাহসহ অন্য নেতারা কেউ গণমানুষের কাছের লোক ছিলেন না। কমিউনিস্ট নেতাদের সঙ্গেও আবুল হাশিমের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
যাহোক, ওই ঘটনার পর জিন্নাহ রেগে গিয়ে বললেন, ‘মৌলভী সাহেব, টেক ইওর সিট। ইট ওয়াজ এ্যা প্রিন্টিং মিসটেক।’ তখন রেজুলেশন বের করার প্রশ্ন উঠল। মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী লাহোর প্রস্তাবটি বের করে দেখালেন। তাতে একাধিক রাষ্ট্র (স্টেটস) শব্দটি ছিল। জিন্নাহ তখন ঘোষণা করলেন, ‘মিটিং ইজ এ্যাডজরড।’
পরদিন মুসলিম লীগের নেতারা আবুল হাশিমকে বোঝাতে চাইলেন যে, ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে টিকে থাকার জন্য পাকিস্তানকে এক রাষ্ট্রই হতে হবে। একাধিক রাষ্ট্র হলে মুসলিমরা দুর্বল হয়ে যাবে। তারা এক রাষ্ট্রের ধারণাটি নিয়ে মুভ করতে বললেন আবুল হাশিমকেই। তিনি বলে দিলেন, আমি অসুস্থ। পারব না। এরপর ওঁরা সোহরাওয়ার্দীকে দিয়ে কাজটা করালেন।
আবুল হাশিম মারা যাওয়ার আগে তাঁর একটি সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম আমি। সে সময় তিনি আমাকে এই ঘটনাটির বিবরণ দিয়েছিলেন। স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব নামের বইতে আমি এটা তুলে ধরেছি।
এভাবেই হিন্দুদের প্রতি একটা আজন্ম ঘৃণা নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলো। এই রাষ্ট্র গঠনের পেছনে রয়েছে প্রতারণা আর মিথ্যা। এখনও পাকিস্তানে এর ধারাবাহিকতা চলছে। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটি তা হলোÑমুসলিমরা একজাতি বা হিন্দুরা একজাতিÑ চিন্তাটাই ভুল। কারণ বাঙালী আর পাঞ্জাবী ধর্মে মুসলমান হলেও জাতিতে ভিন্ন। জিন্নাহ এবং মুসলিম লীগের নেতারা নিজেদের স্বার্থে এভাবেই একটি অবাস্তব ধারণার ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম দিলেন।
তবে পাকিস্তান গঠনের পরপরই জিন্নাহ তাঁর দ্বিজাতিতত্ত্ব থেকে সরে এলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানে হিন্দু-মুসলিম কোন ভেদাভেদ থাকবে না। ধর্মীয় কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণেই পাকিস্তানের জন্ম।’ এটাই ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে তাঁর স্পষ্ট অবস্থানের প্রমাণ।
১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে জিন্নাহ্ মারা যান। তার কয়েক মাস আগে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তিনি ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ ততদিনে তিনি ছিলেন খুব অসুস্থ। তাঁর শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের ক’দিন আগেই লখনৌ মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারি চৌধুরী জালাল উদ্দিন জিন্নাহকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনারা তো পাকিস্তানে চলে যাচ্ছেন। আমরা ভারতের মুসলমানরা কি করব?’ তখন জিন্নাহ বললেন, ‘ইউ বিকেম লয়্যাল টু ইন্ডিয়া।’ জিন্নাহর সঙ্গে চৌধুরীর এই আলাপচারিতার বিষয়টি চৌধুরী তাঁর পার্টওয়ে টু ইন্ডিয়া বইতে লিখেছেন।
পাকিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি নিজেই একজন অপরাধী। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর স্বামী। বেনজির প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি মিস্টার টেন পারসেন্ট হিসাবে পরিচিত ছিলেন। দুর্নীতির দায়ে জেলও খেটেছেন দীর্ঘদিন। সবচেয়ে বড় কথা, বেনজিরের দুই ভাইকে হত্যা করার পেছনে তাঁর হাত রয়েছে বলে প্রমাণিত। এ রকম একজন অপরাধী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট। আর তাঁকে রক্ষা করতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি। ওদিকে সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান পাকিস্তানের রাজনীতিকে এই পাঁক থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করছেন। এখানে কেউ সফল হবেন কিনা, সন্দেহ আছে।
কারণ পাকিস্তান একটি সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে সামন্তীয় চেতনাই প্রাধান্যশীল। সার্বভৌমত্বের ধারণাটিও এ রাষ্ট্রে নেই। তাই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীই সবচেয়ে প্রভাবশালী। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে উপমহাদেশীয় অঞ্চলে কমিউনিজমের প্রভাব ঠেকাতে দুধ-কলা দিয়ে কিছু সাপ পুষেছে। এই যেমন তালেবানদের মতো উগ্র ধর্মভিত্তিক দলকে আফগানিস্তানে সমর্থন দেয়া। পাকিস্তানের সামরিক সরকারগুলোকেও একই কারণে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্যই যুক্তরাষ্ট্র পরে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক বোমা আছে বলে তাকে ভয়ও পাচ্ছে সবাই।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং আইএসআই কতটা শক্তিশালী দেখুন। তারা একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। অন্যদিকে তালেবান নেতা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছে। ক্যান্টনমেন্টের কাছেই থাকতেন বিন লাদেন কিন্তু সশস্ত্রবাহিনী নাকি সেটা জানত না। এখন তালেবানদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা জাওয়াহিরীকেও আশ্রয় দিয়ে রেখেছে এই বাহিনী।
এই রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে যেভাবে প্রতারণা আর মিথ্যার মধ্যে, তার ফলেই এই ঘটনাগুলো ঘটছে। ঘটতেই থাকবে।
লেখক : জাতীয় অধ্যাপক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন