আসিফ আরসালান
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে দু'টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেছে। দু'টি ঘটনাই উচ্চতর আদালত সম্পর্কিত। পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের রায়ে ইউসূফ রাজা গিলানী পাক পার্লামেন্টের সদস্য পদ হারিয়েছেন এবং সেই সুবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত থাকার অযোগ্য বলে ঘোষিত হয়েছেন। সুপ্রীম কোর্টের অর্ডার মান্য করে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি হলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রী রাজা আশরাফ পারভেজ। অন্যদিকে বাংলাদেশেও বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের কথিত অশোভন উক্তি নিয়ে বাংলাদেশ পার্লামেন্টে স্পীকার আবদুল হামিদ চৌধুরী একটি দীর্ঘ রুলিং দিয়েছেন। সে রুলিংয়ে সুস্পষ্ট ভাষায় তিনি বলেছেন যে, শামসুদ্দিন চৌধুরী ৫ জুন আদালতে স্পীকার সম্পর্কে যেসব উক্তি করেছেন তার ফলে তিনি সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছেন। এ ব্যাপারে তার সম্পর্কে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সেই ভার তিনি প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
দুই দেশের দু'টি ঘটনাই অসাধারণ গুরুত্ব বহন করে। তাই প্রথমে কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়েছিলাম। কোন্টা ছেড়ে কোন্টা লিখব। দু'টির মধ্যে যদি যে কোনো একটি লিখি তাহলে পরের সপ্তাহে অর্থাৎ আগামী রোববার সেটি বাসী হয়ে যেতে পারে। তাই ঠিক করলাম যুগপৎ দু'টি বিষয় নিয়েই লিখব।
প্রথমে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। স্পীকারের রুলিংয়ের পূর্ন বিবরণ প্রায় সব পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় সবগুলো টেলিভিশন চ্যানেলই রুলিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সম্প্রচার করেছে। আমরা সেজন্য ঐ রুলিংয়ের বিবরণ দিতে যাচ্ছি না। হাইকোর্টের একজন কর্মরত বিচারপতি সম্পর্কে এমন একটি রায় দেয়া স্বাভাবিক অবস্থায় মেনে নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু স্পীকারের পক্ষে সম্ভবত এছাড়া আর কোনো পথ ছিলো না। কারণ স্পীকার তাকে যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছেন। এই রুলিং দিতে তিনি ১৩ দিন দেরি করেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘‘আমাদের প্রত্যাশা ছিলো, মাননীয় বিচারপতি সমস্ত বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করবেন এবং মাত্রা অতিক্রমকারী বক্তব্য পরিহারের যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।’’ সুতরাং ১৩ দিন অপেক্ষা করার পর এই রুলিংটি জারী করতে হয়েছে। অনেকটা এই রকম একটি ঘটনা ঘটেছিলো ১৯৯৩ সালে। শেষ মুহুর্তে সংশ্লিষ্ট বিচারপতির শুভ বুদ্ধি জাগ্রত হয়েছিলো। তাই তৎকালীন স্পীকারকে এমন একটি রুলিং জারী করতে হয়নি।
আজ থেকে ১৯ বছর আগে হাইকোর্টের একজন বিচারপতি ১৯৯৩ সালের ১১ই মে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ অধিবেশনের কার্য্যবিবরণী তলব করেছিলেন পরের মাস অর্থাৎ জুন মাসের ১৭ তারিখে। সেদিনও তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠেছিলো। তথ্যমন্ত্রী ১১ই মে পার্লামেন্টে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন হাইকোর্টের আলোচ্য বেঞ্চ সেটিকে আদালত অবমাননা গণ্য করে ১১ই মের কার্য্য বিবরণী তলব করেছিলেন। সেদিনও জাতীয় সংসদের কয়েকজন সদস্য হাইকোর্টের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তারা প্রশ্ন তুলেছিলেন যে সংসদ অধিবেশনে কে কি বলবেন সেটি নিয়ে আদালত কোনো প্রশ্ন তুলতে পারে কিনা? সেদিনও বলা হয়েছিলো যে সংশ্লিষ্ট বিচারপতি কার্য্য বিবরণীর কপি তলব করে সংবিধানের ৭৮ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধানের ৭৮ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনের অভিযোগে সেদিনও সংসদ সদস্যরা সংশ্লিস্ট বিচারপতির বিরুদ্ধে স্পীকারের রুলিং দাবী করেছিলেন। ১৯৯৩ সালের ১৯ জুন স্পীকার বলেছিলেন, ‘‘এটা পরিস্কার যে হাইকোর্টের হাত অনেক লম্বা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাদের হাত কি এতই লম্বা যে সেটি পার্লামেন্ট পর্যন্ত পৌঁছতে পারে? বিচারপতির মন্তব্যের সত্যায়িত কপি পাওয়ার পর আমি বিষয়টি বিবেচনা করব।’’ সেদিন বিচারপতি বিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছিলেন। আদালতের মন্তব্যের সত্যায়িত কপি স্পীকারের কাছে প্রেরণের পূর্বেই ঐ বিচারপতি ২১শে জুন ১৯৯৩ সালে তার মন্তব্য প্রত্যাহার করেন। এর ফলে স্পীকারকে আর রুলিং দিতে হয়নি। কিন্তু বর্তমান স্পীকার আবদুল হামিদের সামনে রুলিং দেয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিলো না। ১৩ দিন তিনি অপেক্ষা করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেন। যদি জনাব শামসুদ্দিন মানিক ১৯৯৩ সালের মতো তার মন্তব্য প্রত্যাহার করতেন তাহলে হয়ত স্পীকারকে আর এই রুলং দিতে হতো না। স্পীকারের এই রুলিংয়ের তাৎপর্য অসীম। এব্যাপারে তাঁর রুলিংই চূড়ান্ত। এব্যাপারে কোনো বিতর্কের সুযোগ নাই।
\ দুই \
স্পীকারের এই রুলিংয়ের পর জনাব শামসুদ্দিন সম্পর্কিত ব্যবস্থা গ্রহণের যাবতীয় দায়িত্ব পড়ে গেছে এখন প্রধান বিচারপতির ওপর। এখন প্রধান বিচারপতি কি করবেন, সেটি তিনিই ভাল বোঝেন। এই মুহূর্তে তিনি বিদেশে আছেন। ফিরে আসার পর এই বিরোধটির নিস্পত্তি তাকেই করতে হবে। প্রধান বিচারপতির সামনে এখন দুটি পথ খোলা আছে। একটি হলো, বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় হলো, শামসুদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। তিনি যদি এড়িয়ে যান তাহলে পার্লামেন্টে এ বিষয়টি পুনরায় উত্থাপিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিষয়টি তখন মাননীয় প্রধান বিচারপতির জন্যও বিব্রতকর হবে। আর যদি তিনি শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে যান তাহলে সেটি সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করা ছাড়া নিতে পারেন কিনা সেটি ভেবে দেখার বিষয়।
তবে একটি বিষয় আমরা পরিস্কার বলতে চাই। সেটি আগেও বলেছি আজকেও বলছি। এটি আর যাই হোক না কেন এটি অন্তত বিচার বিভাগ এবং পার্লামেন্টের মধ্যে দ্বনেদ্বর কোনো বিষয় নয়। এটি একজন বিচারপতির রিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়। এখন প্রধান বিচারপতি কিভাবে বিষয়টি নিত্তি করেন সেটি দেখার জন্য দেশবাসী গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন।
\ তিন \
এবার পাকিস্তান প্রসঙ্গ। পাকিস্তানের সুপ্রীম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী ইউসূফ রাজা গিলানীকে অযোগ্য ঘোষণা করার পর বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্রিকাই আশংকা প্রকাশ করেছিলো যে পাকিস্তান আবার এক গুরুতর রাজনৈতিক সংকটে নিক্ষিপ্ত হলো। আমার কিন্তু প্রথম থেকেই সেটা মনে হয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে যে এটি জনাব গিলানীর ব্যক্তিগত ভাগ্য বিপর্যয়। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে শাসক দল পিপলস পার্টির (পিপিপি) সদস্য সংখ্যা হলো ১২৪। আর কারো এতো সদস্য নাই। একজন অর্থাৎ গিলানী অযোগ্য হয়েছেন, তার জায়গায় আরেকজন আসবেন। ফলে সংকট সৃষ্টি হবে কিভাবে? এছাড়া পাকিস্তানের সরকার সংসদীয় পদ্ধতির সরকার নয়। আগে তো এটি একক ভাবে প্রেসিডেন্ট কেন্দ্রিক সরকার ছিলো। পাঠক লক্ষ্য করবেন যে আমি কিন্তু ‘প্রেসিডেন্ট কেন্দ্রিক' বলেছি, ‘প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির' বলিনি। অতীতে পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দিতেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এখন সংসদীয় দল যাকে নেতা নির্বাচিত করে তাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেন। এছাড়াও সাম্প্রতিক সাংবিধানিক সংশোধনীতে প্রেসিডেন্টের বেশ কিছু ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে অর্পণ করা হয়েছে। যদি পাকিস্তানে বাংলাদেশের মতো সরকার পদ্ধতি সংসদীয় হতো তাহলে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ বা অপসারণের সাথে সাথে সমগ্র মন্ত্রী সভারই বিলোপ ঘটতো এবং নতুন মন্ত্রী সভা গঠন করতে হতো। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থেকে যেতো। গিলানীর অপসারণের পর বস্ত্রমন্ত্রী মাখদুম শাহাবুদ্দিনকে প্রাথমিক ভাবে পিপিপি সংসদীয় দলের নেতা হিসাবে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু এই খবর প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথেই একটি দুর্নীতির মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হয়। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, বস্ত্রমন্ত্রী মখদুম শাহাবুদ্দিনের পরিবর্তে বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফকে নতুন নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনিই গিলানীর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
এই কলামে আমি অতীতে বহুবার পিপিপি নেতা প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারীর অনেক সমালোচনা করেছি। আমি এখনো ঐ সব সমালোচনায় ষ্টিক করছি। কিন্তু বলতেই হবে যে এবার তিনি ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। সুপ্রীম কোর্টের রায় যদিও ব্যাক্তিগতভাবে গিলানীকে হিট করেছে, কিন্তু বাস্তবে এটি দল হিসাবে পিপিপি এবং তার নেতা প্রেসিডেন্ট জারদারীর ওপর পরোক্ষভাবে আঘাত হেনেছে। তারপরেও প্রেসিডেন্ট জারদারী শান্তভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। তিনি সুপ্রীম কোর্টের রায় নিয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য করেননি। বরং তাৎক্ষণিক ভাবে রায়টি মেনে নিয়েছেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী তালাশ করেছেন।
তবে এই রায়টি ভবিষ্যতে যে কোনোই সংকট সৃষ্টি করবে না এমন কথা এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। এই কথাটি বুঝতে হলে সুপ্রীম কোর্টের রায়টির তাৎপর্য ভালভাবে বুঝতে হবে। আসলে গিলানীর অপরাধ কি ছিলো? গিলানীর অপরাধ ছিলো এই যে সুপ্রীম কোর্টের প্রথম নির্দেশটি তিনি অমান্য করেছিলেন। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে জারদারী এবং তার মরহুমা পত্নী বেনজীর ভূট্টো র্দুনীতির মাধ্যমে অর্জিত প্রায় ১০০ কোটি রূপী গোপনে সুইস ব্যাংকে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সুপ্রীম কোর্ট গিলানীকে সুইস ব্যাংকে চিঠি লিখতে বলেছিলেন। দুর্নীতি তদন্ত করার জন্য সুইস ব্যাংক যেন তাদের একাউন্ট খুলে দেয় সেই অনুরোধ সুইস ব্যাংককে করেন প্রধানমন্ত্রী গিলানী। সাংবিধানিক দায় মুক্তির প্রশ্ন তুলে গিলানী এই কাজটি করতে অস্বীকার করেন। তার অস্বীকৃতিকে সুপ্রীম কোর্ট আদালত অবমাননা হিসাবে গণ্য করেছে এবং অবমাননার দায়ে প্রতিকী শাস্তি হিসাবে প্রধানমন্ত্রীকে ৩০ সেকেন্ডের জন্য আদালতে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সুপ্রীম কোর্ট কি একই নির্দেশ নতুন প্রধানমন্ত্রীকেও দিবে? যদি দেয় তাহলে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে।
\ চার \
শেষ করার আগে একটি কথা বলতেই হয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে যদি কিছু বোঝায় তাহলে সেই স্বাধীনতা এবার দেখিয়েছে পাকিস্তানের সুপ্রীম কোর্ট, বিশেষ করে তার প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মাহমুদ চৌধুরী। তাঁর কলমের খোঁচায় যেমন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীর পতন ঘটল, তেমনি তার সাথে সংঘাত এবং সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার কারণে মহাপরাক্রমশালী মিলিটারী ডিক্টেটর জেনারেল পারভেজ মোশাররফকেও গদি থেকে সরে যেতে হয়েছে। ইস্পাত কঠিন মনের অধিকারী হলেন এই মানুষটি। ২০০৭ সালের ৯ মার্চ প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফ তাকে তলব করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ছাড়াও সেখানে উপবিষ্ট ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানসহ আরো ৫ জন লে. জেনারেল। তাদের সামনে প্রধান বিচারপতিকে বলা হয়েছিলো পদত্যাগ করতে। প্রেসিডেন্ট জেনারেল পারভেজ মোশাররফসহ ৬ জন জেনারেলের সামনেও বিচারপতি চৌধুরী ছিলেন অকুতোভয়। তিনি পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন এবং শির উঁচু করে কামরা থেকে বেরিয়ে আসেন। প্রেসিডেন্ট জেনারেল মোশাররফ তাকে অপসারণের লক্ষ্যে তার বিরুদ্ধে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেন। অতঃপর জেনারেল মোশাররফ তাকে সাসপেন্ড করেন এবং গৃহবন্দী করেন।
বিচারপতি ইফতেখার মাহমুদ চৌধুরী জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রীম কোর্টে মামলা দায়ের করেন। বিচারপতি চৌধুরীর বিরুদ্ধে মোশাররফের গৃহীত ব্যবস্থায় সারা পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন ওঠে যে একজন প্রধান বিচারপতিকে সাসপেন্ড করার ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট মোশাররফের টেকনিক্যালি আছে কিনা। ২০০৭ সালের ২০ জুলাই ১৩ জন বিচারপতি সমবায়ে গঠিত সুপ্রীম কোর্টের ফুল বেঞ্চ জাস্টিস চৌধুরীকে সসম্মানে প্রধান বিচারপতি পদে পুনর্বহালের রায় ঘোষণা করেন। সুপ্রীম কোর্টের এই রায়ের পরেও জাস্টিস চৌধুরীকে তার পদে পুনর্বহাল করা হয়নি। জারদারী ক্ষমতায় আসার পরেও টালবাহানা করা হয়। অবশেষে জনমতের প্রচন্ড চাপে সাসপেনশনের ২ বছর ৭ দিন পর এবং সুপ্রীম কোর্টের পুনর্বহাল রায়ের ২ বছর ৪ মাস ৪ দিন পর তাকে পিপিপি সরকারের আমলে প্রধান বিচারপতি হিসাবে পুনর্বহাল করা হয়।
আইনের শাসনের প্রতি নিষ্ঠা এবং নিরপেক্ষতা থাকলে একজন প্রধান বিচারপতি যে আইন ও নৈতিকতার জোরে মিলিটারী ডিক্টেটর এবং আইন লঙ্ঘনকারী বেসামরিক রাষ্ট্রনায়ককেও যে হটিয়ে দিতে পারেন তার জীবন্ত নজির হলেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মাহমুদ চৌধুরী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন