রবিবার, ১৭ জুন, ২০১২

উপদেষ্টা ও দফতরবিহীন মন্ত্রীদের বৈধতা কোথায়?

ড. তুহিন মালিক


পৃথিবীর সব আশ্চর্যের কেন্দ্রবিন্দুতে বাংলাদেশ নিজেকে বিতর্কিত রেখেছে। সারাবিশ্বের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও সব সাংবিধানিক আইনের বাধ্যবাধকতা ভেঙে বাংলাদেশ তার রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থায় বড় ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ দেশে আছেন মন্ত্রীর উপরে খবরদারির জন্য আইনবহির্ভূত উপদেষ্টারা। আছেন সোহেল তাজ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাবুর মতো দফতরবিহীন মন্ত্রী। একজন ব্যক্তি মন্ত্রী থাকতে চান না অথচ তাকে জোর করে রাখা হচ্ছে। অথচ রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্র কাঠামোতে সবসময় এর উল্টোটাই ঘটে। মন্ত্রী হওয়ার জন্য অনেককে নানা ধরনের তদবির, দৌড়ঝাঁপ ও টাকা ঢালতে হয়। কিন্তু সোহেল তাজ মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন, বেতন-ভাতাও নিচ্ছেন না। পরে তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন। অথচ তাকে জোরপূর্বক সংসদ সদস্য তো বটেই, দফতরবিহীন মন্ত্রি পদেও রাখা হয়েছে। আমাদের গণতন্ত্রে দফতরবিহীন মন্ত্রীদের আগে 'খামাখা' মন্ত্রী বলা হতো। এদের কোনো কাজ বা পোর্টফলিও নেই। এ দফতরবিহীন মন্ত্রিত্বের সংস্কৃতিটা এসেছে পাকিস্তান শাসনামল থেকে। সে সময় পাকিস্তানের স্বৈরশাসকরা নিজেদের মর্জিতে জমিদারি প্রথার মতো এ ব্যবস্থাটা চালিয়েছেন। কাউকে কাউকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্যই এটির উদ্ভাবন। হোক না সে সুযোগ-সুবিধা জনগণের টাকায়! তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রব্যবস্থায় এ ধরনের বৈষম্য ও লুটপাটের কারণে আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের জন্ম হলো। পরবর্তীতে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আত্দনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আপেক্ষিকভাবে দেশ স্বাধীন হলেও সেই পাকিস্তানি মনমানসিকতা থেকে এখনো বের হতে পারিনি আমরা। এখনো আমাদের শাসকশ্রেণী সে মানসিকতাই ধারণ করছে যে, তারা বিশেষ সুবিধা দিয়ে কিছু খামাখা মন্ত্রীকে জনগণের টাকায় লালন-পালন করবেন। এটি ২০১২ সালের বাস্তবতায় কতটুকু যুক্তিযুক্ত ও ন্যায়বোধসম্পন্ন সেটি জনগণের কাছে বিরাট একটি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। খামাখা মন্ত্রীর উপযোগিতা বা গ্রহণযোগ্যতা কি সেদিকে না গিয়ে তারা যে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন এটার আইনগত কোনো বৈধতা আছে কিনা সেদিকে আলোকপাত করতে চাই। বিশেষ করে সোহেল তাজের ঘটনা। প্রথমে মন্ত্রিত্ব থেকে এবং কিছুদিন আগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি। আমাদের সংবিধানে ৫৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, 'প্রধানমন্ত্রী ছাড়া যে কোনো মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর পদ শূন্য হবে যখন তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করিবেন।' সংবিধানের ব্যাখ্যা অত্যন্ত স্পষ্ট। এক্ষেত্রে তারা পদত্যাগপত্রটি জমা দেবেন আর প্রধানমন্ত্রী শুধু পোস্টবঙ্ হিসেবে কাজ করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পেঁৗছামাত্র পদ শূন্য হয়ে যাবে। চিঠিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পেঁৗছে দেবেন। সোহেল তাজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাংবিধানিকভাবে সেদিন থেকে তার পদ শূন্য। পরবর্তীতে তিনি বেতন-ভাতা, বাংলাদেশের পতাকা ব্যবহার ও অন্যান্য সুবিধাদির কোনোটারই অধিকার রাখেন না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, এরপরও তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের পোর্টফলিও দেওয়া হচ্ছে। যতবার তিনি দেশে এসেছেন, ততবার তাকে এয়ারপোর্টের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে শুরু করে সব জায়গায় মন্ত্রীর প্রটোকল প্রদান করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ সংবিধানবিরোধী। এ কারণে তিনি নিজেও বিব্রতবোধ করেছিলেন। এর প্রতিবাদস্বরূপ সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করলেন সোহেল তাজ। তবে স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ সে পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে বলেছেন, পদত্যাগপত্র দুই রকম কালিতে লেখা, বলপেন, ফাউন্টেন পেন ইত্যাদি_ বিভিন্ন খোঁড়া যুক্তি দেখাচ্ছেন তিনি। ওই বিতর্কে আমি যেতে চাই না। আমি শুধু দফতরবিহীন মন্ত্রী ও উপদেষ্টার পদ সংবিধানসম্মত কিনা তা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। সোহেল তাজ পদত্যাগের পর সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি আর মন্ত্রী নন। অথচ প্রধানমন্ত্রী তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করেছেন। আরেকজন খামাখা মন্ত্রী হলেন বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার এপিএসের গাড়িতে পাওয়া বিপুল টাকার সঙ্গে জড়িত। এ কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রী তাকে তিরস্কারও করেছেন। সুরঞ্জিত বাবুর দীর্ঘ ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনের ইতি টানাও হয়ে গেছে। আইনের মৌলিক তত্ত্ব হলো_ নিজের বিচার নিজে করা যায় না। কিন্তু সুরঞ্জিত বাবুর পিএসের গাড়িতে মধ্যরাতে পাওয়া বস্তাভর্তি টাকার রহস্য উদ্ঘাটনের দায়িত্ব দিয়েছেন তারই নিজের লোককে। সুতরাং মন্ত্রী যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবেই তদন্ত প্রতিবেদন হয়েছে। কালো বিড়াল সাদা হয়ে রাজনীতিতে আবার ফিরে এসেছেন তিনি। সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে বাধ্য হলেন তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করতে। সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পদত্যাগ করার পর দফতরবিহীন মন্ত্রিত্ব পেতে হলে আবার নতুন করে শপথ ও নিয়োগপত্র নিতে হবে। এ বিষয়ে আরও বিশ্লেষণের আগে জানতে হবে মন্ত্রিসভা কাকে বলে। সংবিধানের ৫২(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী বা তার কর্তৃত্বে সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত করা হবে মন্ত্রী-উপমন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীর কাছে। ৫৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মন্ত্রিসভা যৌথভাবে সংসদের কাছে দায়ী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে তারা নির্বাহী ক্ষমতা ভোগ করবেন। সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের ১-এর উপধারা অনুযায়ী প্রত্যেক মন্ত্রী-উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী নিয়োগপ্রাপ্ত হলে তাদের অবশ্যই শপথ নিতে হবে। এরপর শপথনামায় স্বাক্ষর করতে হবে। সংবিধানের ১৪৮-এর ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে_ শপথের পর তার কার্যভার গ্রহণ করা হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। তাই সংবিধান অনুযায়ী দফতরসহ বা দফতরবিহীন মন্ত্রীদের অবশ্যই শপথ নিতে হবে। এরপর তাদের কার্যকাল শুরু হবে। এর আগে কোনো ধরনের সুবিধাই নেওয়া যাবে না। অথচ দফতরবিহীন মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মিনিট খানেক পরই সব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এটির সাংবিধানিক কোনো ভিত্তিও নেই। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা আইনের শাসনের ভেতর চলব, না ব্যক্তিবিশেষের পছন্দমতো চলব। আইনের শাসনের সবচেয়ে বড় ভিত্তি হলো সংবিধান। সংবিধানের অনুচ্ছেদের ৭-এ স্পষ্ট বলা হয়েছে, সব আইন-কানুনের ওপর প্রাধান্য থাকবে সংবিধানের। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সংসদে প্রণীত আইনের অসামঞ্জস্য অংশটুকু এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে। তাই এরকম শপথবিহীন মন্ত্রীদের সব কাজ ও সুযোগ-সুবিধা অবৈধ। সংবিধানের কোথাও উপদেষ্টা-সংক্রান্ত একটা শব্দও নেই। আইন তো অনেক দূরের কথা, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা শব্দটি ছিল। অথচ বেশ কজন উপদেষ্টা দিয়ে দেশ চালানো হচ্ছে। এ উপদেষ্টারা কারা? এরা হচ্ছেন মন্ত্রিপরিষদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি, যারা মন্ত্রী-উপমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্বকে গৌণ করে নিজেদের দায়িত্বকে মুখ্য করে তুলেছেন। এটি তারা করছেন তাদের কাজ ও আচরণের মাধ্যমে। প্রথমত, সংবিধানে নির্বাহীদের যে গঠন বিন্যাস করা হয়েছে সেখানে উপদেষ্টা বলতে কোনো শব্দ নেই। দ্বিতীয়ত, স্বাধীনতার পর যতগুলো আইন প্রণয়ন হয়েছে সেসব আইনে এ-সংক্রান্ত কিছুই নেই।

তৃতীয়ত, সংসদের অবর্তমানে রাষ্ট্রপতি প্রজ্ঞাপন দ্বারাও উপদেষ্টাদের নিয়োগ, তাদের ক্ষমতা, বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত কোনো আইন কিংবা বিধি তৈরি করেননি। এ ধরনের কোনো আইন না পেয়ে আমি মনে মনে ভাবলাম_ তাহলে কিসের ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে? নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে। তা না হলে তারা বেতন-ভাতা নিচ্ছেন কিসের ভিত্তিতে? মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা যেভাবে নোট তৈরি করে বেতন-ভাতা, গাড়ি-বাড়ি, বিদেশ সফর, গাড়ির তেল, ড্রাইভারের বেতনসহ যাবতীয় সুবিধাদি নিচ্ছেন, তারাও হয়তো সেভাবেই নিচ্ছেন। হয়তো অফিস নোটিং আছে। এর একটি হতে পারে, হয়তো রুলস অব বিজনেস তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু রুলস অব বিজনেস কখনো নিয়োগের ক্ষেত্রে হতে পারে না। এটি হয়ে থাকে নিয়োগকৃত লোকেরা কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন সে বিষয়ে। সর্বশেষ যেটা হতে পারে তা হলো, প্রধানমন্ত্রী হয়তো একটি অফিস অর্ডার দিতে পারেন। তাই যদি হয় তা হলে এ অফিস অর্ডারে কীভাবে উপদেষ্টাদের মন্ত্রীর পদমর্যাদা প্রদান করা হলো। মন্ত্রী হলো সাংবিধানিক পদ। সে পদের বিপরীতে প্যারালাল আরেকটি পদ সৃষ্টি করলেন, যা সাংবিধানিক আইনের বড় ধরনের বিচ্যুতি। এভাবে যদি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়, সেটা হবে বড় ধরনের ভুল। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী সংবিধানের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে শুধু দীর্ঘমেয়াদি কারাভোগ নয়, মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। অথচ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করে আরেকটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। তথ্য অধিকারের কথা এত ফলাও করে প্রচার করা হলেও জনগণ এখনো জানে না উপদেষ্টারা কীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। এটি জানানো দরকার। এ খামাখা মন্ত্রী বা খামাখা উপদেষ্টাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নেই। জবাবদিহিতা নেই বলেই যা খুশি তাই করে বেড়াচ্ছেন তারা। এর ভয়ানক পরিণতি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। আজকে দেশে যেসব জনবিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে সেসবের হোতা হচ্ছেন ওইসব উপদেষ্টা। এসব জবাবদিহিবিহীন ব্যক্তিই প্রধানমন্ত্রীকে এ ধরনের উপদেশ দিতে পারেন। তাই তাদের এ নিয়োগ নিয়ে শুধু আইনগত বিশ্লেষণের দিক দিয়ে বিচার করলে চলবে না, তাদের জবাবদিহিতা নিয়েও ভাবতে হবে। আজকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা জেলে কেন? দেশ কেন পিছিয়ে যাচ্ছে? কারণ সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি। এটির প্রধান কারণ জবাবদিহি ছাড়া লোক দিয়ে দেশ চালানো।

সংবিধানের ৮৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সরকারি অর্থের রক্ষণাবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ সংসদ দ্বারা প্রণীত আইনের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হবে। এটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। কিন্তু উপদেষ্টাদের বেতন-ভাতাদি নেওয়ার বৈধতা কোথায়? সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী_ এ তিন ধরনের পদ ছাড়া উপদেষ্টাদের বিষয়ে কোনো শব্দ নেই। সংবিধানে ৫৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে_ প্রধানমন্ত্রী যেরূপ মনে করবেন সেরূপ মন্ত্রিসভা নির্ধারণ করবেন। এখানে প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি স্পষ্ট বলা আছে, ওই তিন ধরনের মন্ত্রীর ব্যাপারে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সে অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেষ্টা নিয়োগের সুযোগ নেই। সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে_ প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনার, পিএসপির সদস্য_ এদের পারিশ্রমিক বিশেষ অধিকার ও কর্মের শর্ত সংসদের আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে। এখানেও উপদেষ্টাদের কথা নেই। তবে এ বিষয়ে একমাত্র আইন করতে পারে জাতীয় সংসদ। কিন্তু সংসদেও এ ধরনের কোনো আইন করা হয়নি। তাই তাদেরকে দেওয়া সব সুযোগ-সুবিধা অবৈধ।

তাদের নীতিনির্ধারণী, নোটিংসহ সব কাজকর্ম অবৈধ। সংবিধানে অনেক সময় অনেক কিছু লেখা থাকে না। আবার অনেক কিছু বোঝাও যায় না। তাই সংবিধানের সর্বশেষ ১৫২ অনুচ্ছেদে বিভিন্ন শব্দের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রজাতন্ত্রের কর্মের ব্যাখ্যা আছে। সে ব্যাখ্যা অনুযায়ী উপদেষ্টারা কোনো সংজ্ঞার আওতায় পড়েন না। সেখানে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কারা? এ ছাড়া ১৩৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে_ সংবিধানের বিধান সাপেক্ষে সংসদের আইন দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করবে পিএসসি। কিন্তু উপদেষ্টাদের নিয়োগ পিএসপির মাধ্যমেও হয়নি। তাই দফতরবিহীন মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের কারও কাছে জবাবদিহিও করতে হয় না। সংবিধানের মূল ভিত্তি ১১ অনুচ্ছেদের শেষ অংশে বলা হচ্ছে_ প্রশাসনের সব পর্যায়ের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যক্রম অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। অথচ এ উপদেষ্টারা জনগণের প্রতিনিধি নন।

লেখক : সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ

E-mail: malik.law.associates@hotmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন