রবিবার, ১৭ জুন, ২০১২

মানবতা কূটনীতি ও ভূরাজনীতি


॥ আলফাজ আনাম ॥


নাফ নদীর মোহনা থেকে ১১ জন নারী ও শিশু নিয়ে একটি নৌকা এসে ভিড়তে চাইছিল বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। কিন্তু নৌকাটি আটকে দেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা। নৌকায় থাকা একমাত্র পুরুষ সদস্যটি হাত জোড় করে বর্ডার গার্ডের সদস্যদের কাছে আশ্রয় চাইছিলেন। দু’চোখে তার অশ্রু। পাশেই আরেক কিশোরী বাবার কান্না দেখে চিৎকার করে কাঁদছিল। নৌকায় থাকা সাতজনই শিশু। কিন্তু এই আদমসন্তানদের বহন করা নৌকাটি ভিড়তে দেয়া হয়নি। সমুদ্রের দিকে তাদের ঠেলে পাঠানো হয়। তারা চলে যায় অজানার উদ্দেশ্যে। এই ছবিটি ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের আরো বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ ধরনের অনেক ছবি ছাপা হয়েছে। এই ছবিটি দেখে মানুষের মনে যে বেদনা অনুভব হবে তাতে, যাদের কারণে এদের দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে, তাদের চেয়েও যারা আশ্রয় দিচ্ছে না তাদের অমানবিক আচরণ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ পরিচিত হচ্ছে একটি নিষ্ঠুর জাতি হিসেবে।
এই লোকগুলো ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে এসেছে শুধু জীবন বাঁচানোর জন্য। তিনটি কারণে তাদের ঘড়বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসতে হয়েছেÑ ০১. এরা কথা বলে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক বাংলা ভাষায়, ০২. এদের গায়ের রঙ কালো ০৩. ধর্মীয় পরিচয়ে এরা মুসলমান। নাফ নদীর ওপারে মংডু থেকে সমুদ্র উপকূল ধরে আকিয়াব বন্দর পর্যন্ত পুরো এলাকাজুড়ে চলেছে ধ্বংসযজ্ঞ। হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও নিপীড়নের যারা শিকার হয়েছে, তারা নিতান্তই গরিব। অনেকে মাছ ধরে বা মজুরির কাজ করে জীবন নির্র্বাহ করে। এদের লেখাপড়ার সুযোগ নেই, ন্যূনতম চিকিৎসাসুবিধা পায় না, সন্তানধারণের অধিকার হরণ করা হয়েছে। জাতিগত বিদ্বেষ থেকে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। অনেক গণমাধ্যমে এই দাঙ্গাকে বৌদ্ধÑমুসলিম দাঙ্গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এটি কোনো ধর্মীয় দাঙ্গা নয়। রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিত জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূলের জন্য মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও উগ্রবাদী শ্বেতচামড়ার রাখাইনদের অভিযান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই মানুষগুলোর ধর্মীয় পরিচয় ইসলাম হওয়ার কারণে এভাবে চিত্রিত করা হচ্ছে। বসনিয়ার জাতিগত নিধন অভিযান আর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কথিত দাঙ্গার মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। 
নৌকা নিয়ে পালিয়ে আসা আশ্রয় না পাওয়া এই লোকগুলোর ভাগ্যে কী হয়েছে, আমরা জানি না। যদি তারা সমুদ্রে ডুবে মারা না গিয়ে থাকে, তাহলে তাদের আবার ফিরে যেতে হবে মিয়ানমারে। ধরা পড়বে নাসাকা বাহিনীর হাতে। আর নিজ বাড়িতে ফিরতে পারবে না। আশ্রয়কেন্দ্রের নামে তাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে রাখা হবে। পুরুষ সদস্যদের ওপর নেমে আসবে নির্মম নির্যাতন। এদের কাজের নামে দাসের মতো ব্যবহার করা হবে। ঘরবাড়ি হারানো এই লোকগুলো কথিত আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায়নি বলে এরা নৌকা নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়ের চেষ্টা করে। 
মানুষ কতটা অসহায় হলে জীবন বাঁচানোর জন্য কয়েক মাসের সন্তানকে নৌকায় ফেলে রেখে পালিয়ে যেতে পারে, তা অনুমান করাও কষ্টকর। সন্তানটি যেন বেঁচে থাকে, এ জন্য এক রোহিঙ্গা পরিবার নৌকায় শিশুটিকে রেখে চলে গেছে। হাড় জিরজিরে পুষ্টিহীন এই শিশুটি সৌভাগ্যবান যে, একজন বাংলাদেশী কৃষক শিশুটিকে পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন। অসহায় এই মানুষগুলোর জন্য কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। মানবতা জেগে ওঠেনি। নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে তাদের ঠেলে দেয়ার এমন নির্মমতা আমরা দেখছি। 
২.
রোহিঙ্গারা মির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এবারই প্রথম ছুটে আসছে, তা নয়। ১৯৯১ সালে রাখাইনদের জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার হয়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। জাতিসঙ্ঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার হিসাবে এই সংখ্যা ২৯ হাজার। কিন্তু আড়াই থেকে তিন লাখ রোহিঙ্গা টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা: দিপু মনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তিনি আরো বলেছেন, কোনো আন্তর্জাতিক শরণার্থীবিষয়ক আইন, কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইনে অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র বাংলাদেশ নয়। এ কারণে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য খুবই সঠিক। অবশ্যই বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিতে বাধ্য নয়। কূটনীতির ভাষা হিসেবে এগুলো সঠিক। কিন্তু বিশ্বের কোথাও শরণার্থীদের কেউ বাধ্য হয়ে আশ্রয় দেয় না, মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়। আমরা এত দিন জেনেছি, ১৯৭১ সালে মানবিক কারণে বাংলাদেশীদের আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি বলবেন আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে ভারত সে সময় বাংলাদেশীদের আশ্রয় দিয়েছিল? যদি মানবিক কারণে বাংলাদেশীদের আশ্রয় না দিয়ে থাকে, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের ভূমিকা ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথাও বলেছেন, ১৯৭১ সালের পরিস্থিতির সাথে রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, বাংলাদেশীদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে পরিস্থিতি বিবেচনা করলে রোহিঙ্গাদের সাহায্যের যৌক্তিকতা বেশি প্রমাণিত হয়। রোহিঙ্গাদের শুধু মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে না, মিয়ানমার সরকার ও উগ্রবাদীরা একটি জাতিকে নির্মূলের অভিযানে নেমেছে। জাতিগত নির্মূলের শিকার এই লোকগুলোকে সাহায্য করা, আশ্রয় দেয়া শুধু মানবিক নয়, বাংলাদেশের নৈতিক দায়িত্ব। 
বাংলাদেশের উচিত এই শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। কিন্তু সে পথে বাংলাদেশ না গিয়ে কঠোরভাবে রোহিঙ্গা আগমন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। অবশ্য বাংলাদেশ এই ইস্যুতে কতটা আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘ ও ওআইসির কাছ থেকে সহযোগিতা পেতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে মুসলিমবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অতীতে রোহিঙ্গাদের জন্য সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় দেশগুলো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের সাথে মুসলিম বিশ্বের শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে। অন্য দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অবনতিশীল সম্পর্কের কারণে জাতিসঙ্ঘের সহযোগিতা নিয়েও সংশয় রয়েছে। অর্থাৎ কূটনৈতিক ব্যর্থতার ভীতি থেকে হয়তো রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জটিল করে ফেলেছেন। 
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছে। গতকাল (১৬ জুন ২০১২) লেখা চিঠিতে সংস্থাটির প্রধান ক্যান রুথ বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি, এ পরিস্থিতি আপনার দেশের জন্য এক অপ্রত্যাশিত বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। তবে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত উন্মুক্ত রাখুন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বাংলাদেশের সহায়তায় এগিয়ে আসবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। আপনি উন্নয়ন সহযোগী ও প্রত্যাবাসনে সহায়তাকারী দেশগুলোকে আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে এ কাজে সহায়তা করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে ওই এলাকায় অবাধে ত্রাণকাজ পরিচালনার সুযোগ করে দিতে পারেন। সংস্থাটি মনে করিয়ে দিয়েছে, আরাকান রাজ্যে জাতিগত সঙ্ঘাতে যখন জীবন সঙ্কটাপন্ন, সেই মুহূর্তে সীমান্ত বন্ধ রাখার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার রায় তার অঙ্গীকার লঙ্ঘন করছে। জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা লোকজনকে সুরার স্বার্থে সীমান্ত অবারিত রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ মুহূর্তে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই বরং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। সীমান্ত খুলে দিন, মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা প্রকাশের স্বার্থে বৈঠক আহ্বান জরুরি।’ প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক সহায়তা দেয়ার মধ্য দিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এ জন্য দরকার ব্যাপকভিত্তিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। 
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর সাথে রোহিঙ্গা কয়েকটি সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে। তারা জাতিগত সঙ্ঘাতে ইন্ধন জোগাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য দেয়ার আগে পরিস্থিতি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা উচিত ছিল। তিনি এই বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের অবস্থানের সাথে একমত পোষণ করছেন। যেখানে রোহিঙ্গারা জাতিগত নিধনের শিকার, সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল তাদের কিভাবে ইন্ধন জোগাবে? রোহিঙ্গাদের আক্রমণের শিকার হয়ে কোনো রাখাইন তো দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেনি? পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে মিয়ানমারের সাথে ভবিষ্যতে আলোচনাও কঠিন হয়ে পড়বে। মিয়ানমার তখন দাবি করবে, বাংলাদেশে যারা অবস্থান করছে তারা সন্ত্রাসী। তাদের ফেরত নেয়া তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অতি কূটনৈতিক চালবাজির কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনেক সময় বিদেশী স্বার্থের অনুকূলে চলে যায়। ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে আমরা তার এমন অবস্থান দেখেছি, এখন মিয়ানমারের ক্ষেত্রেও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী অবস্থান নিয়েছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক চিহ্নিত করে তিনি পুলকিত বোধ করতে পারেন, কিন্তু দেশের জন্য এর পরিণতি ভালো নয়। মিয়ানমার সরকার যদি এই তথ্য দিয়ে থাকে, তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য সে প্রশ্নও রয়েছে। মিয়ানমারের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে থাকে। দু’দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে নিয়মিত তথ্য বিনিময় হয়। বাংলাদেশবিরোধী নানা প্রচারাণার সাথে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্ঠতা নতুন নয়। এর আগে মনমোহন সিং গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে বলেছিলেন, বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। ভারতীয়দের জামায়াতে ইসলামী নিয়ে ভীতি ছড়ানোর কৌশল অনেক পুরনো, মিয়ানমার যদি সে বক্তব্য দিয়েও থাকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেই অবস্থান নিয়ে কার স্বার্থ রক্ষা করলেন? 
৩.
মিয়ানমারে জাতিগত সঙ্ঘাতের পর পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকা সবচেয়ে নক্কারজনক। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নেয়ার জন্য বাংলাদেশের ওপর যতটা চাপ দেয়া হচ্ছে, জাতিগত নির্মূল অভিযান বন্ধ করতে মিয়ানমারের ওপর ততটা চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি ভালোভাবে সামাল দিচ্ছে। অথচ নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধেও হত্যা, ধর্ষণসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব অং সান সু চিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে মিয়ানমারের ক্ষমতার পটপরিবর্তনের আশায় অপেক্ষা করছে। রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের মধ্যে সু চি ইউরোপ সফরে গেছেন। ইতোমধ্যে সেনাশাসকের উদারীকরণের নামে পশ্চিমা বিনিয়োগ মিয়ানমারে আসছে। সু চিও পার্লামেন্টে গেছেন। তার বাবার সাথে রোহিঙ্গা মুসলামানেরা লড়াই করলেও তাদের এখন তিনি চিনতে পারছেন না। বলছেন ওরা কারা? মিয়ানমারে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় ভারতীয়রাও বসে নেই। এ মাসেই মনমোহন সিং মিয়ানমার সফর করেছেন। প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের মধ্যে স্বার্থের সঙ্ঘাত সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, মিয়ানমারের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশেরও সক্রিয় ভূমিকা দেখতে চায় ওয়াশিংটন। এ কারণেই দিল্লির চোখে নয়, ঢাকার প্রতি সরাসরি দৃষ্টি দিতে চায় ওয়াশিংটন। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত অনেকবার টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার দ্রুত সমাধানেরও আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন। হিলারি কিনটন ঢাকা সফরে এসে এ অঞ্চলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মিয়ানমার, নেপাল ও বাংলাদেশ মিলে এনার্জি হাব গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন। বাংলাদেশে সামরিক বাহিনী বিশেষ করে নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে মার্কিন সহযোগিতা নিয়ে ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা উষ্মা প্রকাশ করেছেন। নিশ্চয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ভালো লাগার বিষয় নয়। এর পরপরই ভারতের গণমাধ্যম বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর ঘাঁটি গাড়ার খবর দিয়েছিল। এ খবর ভিত্তিহীন বলে পেন্টাগন জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে হত্যাযজ্ঞের পেছনে ভূরাজনৈতিক কৌশলের নানা প্রভাবও কাজ করতে পারে। এ কারণে যেকোনো অবস্থান নেয়ার আগে বাংলাদেশের উচিত কারো ফাঁদে পা দেয়া হচ্ছে কি না তা ভেবে দেখা। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতীয় স্টাইলে বাংলাদেশের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের ইন্ধন খোঁজা কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমান সরকার পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে স্বাধীন ভূমিকা নিতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর অবস্থানে কারা লাভবান হচ্ছে, তা ভাবার অবকাশ আছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ নতুন করে চাপের মুখে পড়ছে। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করে প্রতিবেশী দেশের ওপর নির্ভরশীল করার কৌশল বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। এতে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 
alfazanambd@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন