শনিবার, ১৬ জুন, ২০১২

বঙ্গোপসাগরে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও জাতীয় সংহতি


ড. ই শা মো হা ম্ম দ
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে তারা এশিয়ার সাগরগুলোয় নৌবাহিনীর সামরিক তৎপরতা বাড়িয়ে দেবে। এটি অনেক পুরনো ‘আলাপ’। যেটি আমাদের জন্য শংকার, সেটি হ”েছ বঙ্গোপসাগরে মার্কিন রণতরীর আনাগোনা বাড়বে, না কমবে? আমরা ধরেই নিয়েছিলাম ভারতের সামরিক আভিজাত্যে আঘাত লাগে এমন কোন কথা ভারত শুনবে না। ভারত অপমানিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন কোন সামরিক তৎপরতা ভারত মহাসাগর কিংবা বঙ্গোসাগরে চালাবে না। এতদিন এমনই ছিল। ঠাণ্ডা লড়াইয়ের আমলে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর বেশ নিশ্চিত ‘জীবনযাপন’ করেছে। কিš‘ এখন তো আর সে যুগ নেই। বড় ‘দুর্নাম’ মুখে মেখে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক ও পারমাণবিক চুক্তি করেছে। সম্প্রতি অকারণে ভারতের মনে চীনভীতি ঢুকেছে। এসব কারণেই ভারতকে ‘ব্লাকমেইল’ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে মার্কিন রণতরী মোতায়েনের পাঁয়তারা করছে। সম্ভবত অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে মার্কিন রণতরী আসবে।
বঙ্গোপসাগর ছিল বাঙালিদের জন্য অতীব নিরাপদ সাগর। কিš‘ সেই নিরাপত্তা আর রইল না। মার্কিন রণতরী বাংলাদেশের ‘নিরাপত্তা’ পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবে। সঙ্গে থাকবে ভারতের ইন্ধন ও সমর্থন। কিš‘ তারপরও অনেক প্রশ্নের মধ্যে এমন প্রশ্নও উঠতে পারে যে, কেবল চীনের সমুদ্রসমর তৎপরতাই কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বঙ্গোপসাগরে ঠেলে আনছে? এর অন্য কোন কারণ কি নেই? চীনের রণতরীগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে জিতবে, এমন কষ্ট কল্পনা করা উচিত নয়। পৃথিবীবিখ্যাত ‘গানবাটসু’ মার্কিন নেভির পায়ে ধরেও জান বাঁচাতে পারেনি, সে সময়ে। আর এ সময়ে সমুদ্রসমরে তৃতীয় শ্রেণীর ক্ষমতাধারী চীন কী করে মার্কিনিদের পরাজিত করবে? চীনকে অবশ্যই রাশিয়ার দ্বার¯’ হতে হবে। রাশিয়া তো আর সেই আমলের সোভিয়েত রাশিয়া নেই। এখন আর সে ‘বদান্যতা’ করে বিনি পয়সায় ‘সমরযন্ত্র’ বিক্রি করবে না। তাছাড়া ‘কৌশল’-এর দামও তারা নেবে। তারা এখন ধনতন্ত্রী। চীন অতিকষ্টে সবে দুই বেলা ভাত খা”েছ। তার পক্ষে অত যুদ্ধ ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। চীন বহুদিন ধরে যুদ্ধ এড়িয়ে যা”েছ এবং আরও বহুদিন যুদ্ধ এড়িয়ে যাবে। এ খবর মার্কিনিরাও জানে। তবে কেন তারা মিছে ছুতানাতা দেখিয়ে বঙ্গোপসাগরে ঘাঁটি গাড়তে চায়? সন্দেহ করা যায় যে, তাদের উদ্দেশ্য মহৎ নয়।
বঙ্গোপসাগরে সামরিক ঘাঁটি করার জন্য ইউএস নেভি কেন আসবে, তা নিয়ে অনেক সন্দেহের একটি হ”েছÑ বঙ্গোপসাগরে ‘সম্পদ’ আছে। পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশ সে সম্পদ দখল করার আগেই সম্ভবত মার্কিনিরা নিজেরাই তার দখল নিতে চায়। আর কেবল দখল নিয়েও কোন লাভ হবে না, যদি সেই সম্পদ উত্তোলন ও পাচার করা না যায়। তাই তারা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অন্য কোন দেশের এমনকি বাংলাদেশেরও লোকজনকে চলাচল করতে দিতে চায় না। লোকজন চলাচল করলে তাদের গোপন তৎপরতা ফাঁস হয়ে যেতে পারে। তাই অতি গোপনে তারা নিজেদের কুকর্মগুলো সমাধা করার অপকৌশল হিসেবে নৌবহর মোতায়েন করে এলাকাকে ‘লাল অঞ্চল’ ঘোষণা করবে। তারা ঘোষণা দিয়েই বলবে, তাদের রণতরীতে পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র আছে। তাদের আশপাশে অন্য কোন জলযান বা ‘ব¯‘’ থাকতে পারবে না, আসতেও পারবে না। এমনকি তাদের লাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে কোন উড়োজাহাজও যেতে পারবে না। এই বিশেষ নিরাপত্তা নির্দিষ্ট হওয়ার পর তারা লোক-দেখানো যুদ্ধবাজি খেলা করবে, অনেকটা ঠাণ্ডা লড়াইয়ের আধুনিক সংস্করণের মতো করে। এটিও লোক-দেখানো ভড়ংবাজি। এসব যুদ্ধবাজি ও ভড়ংবাজির ডামাডোলের ভেতরে তারা তাদের প্রকৃত কাজটি করে নেবে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সাবমেরিনের সাহায্যে অনুসন্ধান চালিয়ে বঙ্গোপসাগরের মহামূল্যবান ‘খনিজ’ তুলে নিয়ে যাবে। তাদের খনিজ সংগ্রহের এলাকার সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশের। কিš‘ বাংলাদেশকে সেখানে নাক গলাতে দেবে না। কথাও বলতে দেবে না। নাক গলাতে দেবে না শক্তির জোরে, হুংকার দিয়ে। কিš‘ কথা বলতে দেবে না কী করে? বাঙালিরা কাজ না কর“ক, কথা তো বলেই। কথা বন্ধ করার জন্য তারা অন্য ধরনের কৌশল নিয়েছে। তারা রাজনৈতিক অ¯ি’রতা ও রাজনীতিতে হতাশা তৈরির অপকৌশল প্রয়োগ করতে শুর“ করেছে।
রাজনৈতিক অ¯ি’রতা বাংলাদেশে বহু দিন ধরে বিরাজ করছে। সাম্রাজ্যবাদ বহু দিন ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে। কিš‘ কখনোই কোন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসিয়ে বাংলাদেশের সম্পদ লুটপাট করার সাহস দেখায়নি। অথচ এখন দেখা যা”েছ তারা বেশি সাহস দেখা”েছ। এক-এগারোতেও কথা উঠেছিল যে, জনৈক ‘মার্কিন বৎস’ রাষ্ট্রক্ষমতায় বসবে। কিš‘ সে সময়ে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কাছে ‘ষড়যন্ত্র’ পরাস্ত হয়েছিল। এখনও যদি তেমনটি হতো, তবে বড় ভালো হতো। কিš‘ অব¯’ার বেশ পরিবর্তন ঘটায় তা সম্ভব হবে না। আলামতও দেখা যা”েছ। ক’দিন আগে হিলারি লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে তার নিজের ও দেশের আভিজাত্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে ড. ইউনূসের কথা সরাসরি উল্লেখ করে চিঠি লিখেছেন। কেন? কারণ সম্ভবত একটাইÑ প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়া যে, আমাদের হাতে তোমাদের রক্তের ‘বৎস’ আছে। প্রয়োজনে 
তাকে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসাব, যদি এখন আমাদের কথা না শোনো, তবে তোমরা আঁস্তাকুড়ে 
নিক্ষিপ্ত হবে।
ড. ঈশা মোহাম্মদ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন