॥ ড. এম আজিজুর রহমান ॥
সমগ্র বিশ্ব মন্দার প্রভাবে জর্জরিত। ইউরোপের ৫১ শতাংশ ও আমেরিকায় ২২ শতাংশ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এখনো মন্দার কবলে। বাংলাদেশে বিশ্বমন্দার প্রভাব তুলনামূলকভাবে কম। বিশ্বমন্দা ও আন্তর্জাতিক ক্রেতা সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের রফতানি খাত বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বাংলাদেশের দ্রব্যসামগ্রীর বৈদেশিক ক্রেতা দেশগুলো এখনো মন্দার হাত থেকে পুরোপুরি মুক্তি পায়নি। আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও বাংলাদেশের ২০১২-১৩ বাজেটটি বড় উচ্চাভিলাষী বাজেট। নতুন বছরের মোট বাজেটের পরিমাণ এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপির পরিমাণ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। যার প্রায় ৬১ শতাংশ অর্থাৎ ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার জোগান দেয়া হবে দেশীয় উৎস থেকে। বাকি ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অর্থাৎ উন্নয়ন বাজেটের ৩৯ শতাংশ দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ করা হবে। ঋণের দেশীয় উৎস প্রধানত দু’টি, যেমন : ব্যাংকিং খাত ও সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন নন ব্যাংকিং খাত। আমাদের রাজস্ব আয় থেকে অর্জিত অর্থ এক লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। সর্বমোট এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটের বাকি ৭৫ হাজার কোটি টাকার সামগ্রিক অর্থ কোথা থেকে কিভাবে আসবে তা জনগণের কাছে অস্পষ্ট। সমসাময়িক অর্থনীতি, আর্থিক শঙ্কা ও সঙ্কটাপন্ন পরিবেশ, অর্থের অনিশ্চিত জোগান, ঋণের সহজ লভ্যতা, ঋণ পরিশোধে পরবর্তী প্রজন্মের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং একাধারে উচ্চাভিলাষী বাজেট এবং বাজেটকৃত অর্থের সুষ্ঠু ও দক্ষ ব্যবহার সব কিছু মিলিয়ে আমাদের দেশে একটা আর্থিক টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০১১-১২) বিগত ৯ মাসে বা ৭৫ শতাংশ সময়ে উন্নয়ন বাজেটের মাত্র ৪৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। চলতি অর্থ বছরের বাকি আছে মাত্র তিন মাস বা ২৫ শতাংশ সময়। এ অল্প সময়ে এডিপির ৫৫ শতাংশ কাজ কিভাবে সম্পন্ন হবে এ নিয়ে মানুষ বড় দ্বিধা-সঙ্কচে পড়ছে।
বাজেটের গতি-প্রকৃতি ও খাতওয়ারি বিতরণ মোটামুটিভাবে গ্রহণযোগ্য। যেমনÑ অবকাঠামোগত উন্নয়নের ভেতরে রয়েছেÑ আলো, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও তেল ইত্যাদি সমৃদ্ধিকরণ এবং সামাজিক মূলধন গঠন। যেমনÑ রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদিসহ পরিবহন ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন। প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাতকে। আর অগ্রাধিকারের দ্বিতীয় খাতটি হলো যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা। কৃষি খাতেও ভর্তুকির যথেষ্ট সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ সেবাখাতের অগ্রাধিকার দেয়া দরকার, তা সম্ভব হয়নি। ১০০ ভাগ শিক্ষার হার অর্জন করার জন্য শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশের মতো শিক্ষায় ২০ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ থাকা দরকার, যা ২০১২-১৩ বাজেটে সম্ভব হয়নি। বিষয়টিকে আমরা বড় ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি না। ১৬ কোটি লোকের নবম বৃহত্তম বাংলাদেশের সম্পূর্ণ দায়িত্ব শুধু সরকারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা খাতে বেসরকারি সংস্থা অংশ নিচ্ছে। বেসরকারি খাতে এ ধরনের অংশ নেয়া দিন দিন বেড়েই চলছে। সামাজিক মূলধন গঠনের যেসব খাতে বেসরকারিভাবে অংশ নেয়া অপ্রতুল সেই সব খাতে সরকারি হস্তক্ষেপ অবশ্যই প্রয়োজন। যেমনÑ রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি। একটি দৈনিক পত্রিকা মতে, অতি সাম্প্রতি ভারত থেকে গৃহীত ১০০ কোটি ডলারের ৮০ শতাংশই ব্যয় হবে রেলওয়ে খাত উন্নয়ন সাপেক্ষে। রেলওয়ে খাতের উন্নয়ন খুব প্রয়োজন। ব্রিটিশ ভারত স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রেলওয়ের খাতে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। রেলওয়ে খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন। ১০০ কোটি ঋণের ৮০ শতাংশই রেলওয়ে খাতে ব্যয় করতে হবে তা যুক্তিসঙ্গত কি না, ভেবে দেখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ঢাকা যদি দৈনিক এক লাখ লোক যাতায়াত করে, যার হয়তো ৮০ শতাংশই হবে সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে। তাই ভৌগোলিকভাবে ছোট আয়তনের এ বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ খাতের উন্নয়ন উপেক্ষা করে রেলওয়ে খাতের গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত করার অবকাশ নেই।
পদ্মা সেতুর বাজেট হয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা, যা মুদ্রাস্ফীতির কারণে আগামী ১০ বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আগামী অর্থ বছরের উন্নয়ন বাজেট থেকে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে রাখা হয়েছে মাত্র তিন হাজার কোটি টাকা। এই খাতে বরাদ্দের আমূল পরিবর্তন ঘটাতে না পারলে পদ্মা সেতু নির্মাণে আমাদের এখন থেকে কমপক্ষে একযুগের অধিক সময় লেগে যেতে পারে। বিগত সময়গুলোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক দিতে চেয়েছে ১.৫০ বিলিয়ন ডলার, বা ১,৫০০ মিলিয়ন ডলার, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ৬১৫ মিলিয়ন ডলার, জেএআইসিএ ৪১৫ মিলিয়ন, (আইডিবি) ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ১৪০ মিলিয়ন এবং দেশীয় উৎস থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার। বহির্ভূত উৎস থেকে জোগান দেয়া হবে, ২৭০০ মিলিয়ন ডলার বা ২৭০ কোটি ডলার বা ২২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। দেশীয় উৎস থেকে জোগান দেয়া হবে ৫০ মিলিয়ন ডলার বা ৫ কোটি ডলার বা ৪১৫ কোটি টাকা। সব মিলে ২২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। পদ্মা সেতুর এত বড় বাজেট মোটেই সাশ্রয়ী নয়। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার ওপর নির্ভরশীলতা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। প্রচলিত নিয়মে বিশ্বব্যাংকের সুদের ১.৮৩। বিকল্প হিসেবে মালয়েশিয়াসহ অন্য কোনো উৎস থেকে অধিক উচ্চহারে সুদ দেয়া বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। আমি মনে করি, উচ্চাভিলাষী এ বাজেটের পদ্মা সেতু বাবদ মাত্র তিন হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ একটি অবাঞ্ছিত প্রস্তাব। অতীতের সব ভুলভ্রান্তি সংশোধন করে পদ্মা সেতু নির্মাণের বৃহৎ স্বার্থে আমাদেরকে ডব্লিউবি, এডিবি, জেএআইসিএ, আইডিবি ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে একটি দক্ষ ও উৎপাদনমুখী আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতা সৃষ্টি বড়ই গুরুত্বপূর্ণ।
বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তেল ও গ্যাস থেকে। অদূর ভবিষ্যতে আমরা কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করব। ফুলবাড়িয়া কয়লা খনি খনন ও কয়লা উত্তোলনের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে তা থেকে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বা মোট চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আইএমএফের শর্ত মোতাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও গ্যাস ব্যবহারে সরকারি ভর্তুকি কমাতে হবে। ভর্তুকি কমালে জ্বালানি ব্যবহারের খরচ আরো বাড়বে, যা বাংলাদেশের জনসাধারণের কাছে আইএমএফের একটি অপ্রিয় সিদ্ধান্ত। বিদ্যুৎ উৎপাদনের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা দুটোই বাড়তে হবে। তাহলে সাশ্রয়মূল্যে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারের সর্বোত্তম উৎস হচ্ছে বেসরকারি খাত। আমরা তেল ও গ্যাসের উৎস মূল্য কমাতে পারব না। কিন্তু উৎপাদন ও বিতরণসহ ব্যবস্থাপনার দক্ষতায় আমাদের মোট উৎপাদন খরচ হ্রাস পাবে। স্বাভাবিকভাবে আমরা আশাবাদী পূর্ণ প্রতিযোগিতার কারণে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনের দক্ষতা সরকারি খাতের চেয়ে বেশি ও খরচ তুলনামূলকভাবে কম। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ছয় হাজার মেগাওয়াট। চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াট। মোট ঘাটতি ছয় হাজার মেগাওয়াট। ছয় হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা থাকলেও আমরা বাস্তবে উৎপাদন করতে পারছি অনেক কম। বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়িত্ব সরকারি খাতে থাকার দরুন আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের বর্তমান উৎসকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না। গ্যাস, বিদ্যুৎ, তেল ও জ্বালানি খাতে প্রদেয় অগ্রাধিকার প্রশংসনীয়। গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ২.৫০ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ২.১০ কোটি ঘনফুট। অর্থাৎ প্রতিদিন আমাদের গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে ৪০-৫০ লাখ ঘনফুট। আগামী অর্থবছরে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ পেলে পেট্রোবাংলা সাবলম্বী হবে। বিদেশী ঋণের প্রয়োজন হবে না। কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়, কারণ অতি সম্প্রতি হরিপুর ও কৈলাসটিলায় দু’টি তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। দু’টি তেলের খনি মিলে প্রায় ১৩ কোটি ব্যারেলের অধিক পরিমাণ তেল মজুদ আছে। বাস্তব প্রেক্ষাপটে যার ৪০ শতাংশ বা সর্বমোট পাঁচ কোটি ব্যারেলের অধিক পরিমাণের তেল উত্তোলন সম্ভব। পেট্রোবাংলা প্রথম ধাপ হিসেবে একটি বিদেশী কোম্পানিকে দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে তেল উত্তোলন করতে আগ্রহী। অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে পেট্রোবাংলা নিজস্ব প্রযুক্তিতে নিজেরাই উৎপাদন করতে পারবে। বিধায়, অতিরিক্ত খরচের ব্যাপারটি আগামী ২০১২-১৩ বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্যের কথা কতটা ভাবা হয়েছে, তা সুস্পষ্ট নয়। যেমন সুবিধা বঞ্চিত অঞ্চল, আদিবাসী, উপজাতি ও পাহাড়ি এলাকা, বৈষম্যপীড়িত দক্ষিণ ও উত্তর বাংলার উন্নয়নের কথা অবশ্যই ভাবতে হবে। উত্তর বাংলা উন্নয়নের কথা তুলনামূলকভাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর বাংলা ও বিশেষ করে রংপুরে গরিব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪২ শতাংশ, যা সামগ্রিকভাবে গোটা দেশের জন্য মাত্র ৩২ শতাংশ । সম্প্রতি, চট্টগ্রাম বিভাগের মাথাপ্রতি আয়ও ১৭ হাজার ২৪ টাকা। ঢাকা বিভাগের মাথাপ্রতি আয় ১৩ হাজার ৭০০ টাকা। অথচ উত্তর বাংলা তথা রংপুর বিভাগের মাথাপিছু আয় মাত্র ৬০০ টাকা। বৈষম্যপীড়িত উত্তর বাংলা ও বিশেষ করে বৃহত্তর রংপুরে অতিমাত্রায় দারিদ্র্যের হার নিয়ে নর্থ ডেভেলপমেন্টের কাউন্সিলের (এনডিসি) চেয়ারম্যান ড. এম আজিজুর রহমান বিশেষভাবে শঙ্কিত। আশা করা হচ্ছে, প্রস্তাবিত বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ ও উত্তর বাংলার দারিদ্র্যবিমোচনের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাবে।
কালো থেকে সাদা টাকা বাংলাদেশে বেশ কিছু দিন ধরে একটি মুখরোচক আলোচ্য বিষয়। আমি মনে করি, এই সঙ্কট নিয়ে দুরূহ চিন্তাভাবনার সময় এখন এতটা ঘনীভূত হয়নি। কারণ নিম্নরূপ : বাংলাদেশ বসবাস করে কালো টাকার ভেতরে। কালো টাকা বসবাস করে বাংলাদেশের ভেতরে। এর সর্বোত্তম কারণ হচ্ছে সরকার এবং বিশেষ করে কর বিভাগের দায়িত্বহীনতা। বাংলাদেশে আমরা কেউ কর দিই না। ১৬ কোটি লোকের এই দেশে মাত্র ৪০ লাখ লোকের ট্যাক্স ফাইল আছে। প্রকৃত করদাতার সংখ্যা ১০ লখের বেশি নয়। ট্যাক্স না দেয়ার ঘটনাটি বাংলাদেশে বড় ধরনের অবাক কাণ্ড। ঢাকা ও এর উপশহরে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ লোক বসবাস করে। আমরা যদি বস্তিবাসী, রিকশাওয়ালা, নিম্ন আয়ের কিছু শ্রমিক ও পরিবার বাদ দেই তাহলেও দেখা যাবে শুধু ঢাকা শহরেই কর প্রদেয় মানুষের সংখ্যা প্রায় অর্ধ কোটির কাছাকাছি। সারা দেশ জরিপ করলে দেখা যাবে বাংলাদেশের লোকজন কর দেয় না। তাই ওপরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বাস করে কালো টাকার ভেতর এবং কালো টাকা বাস করে বাংলাদেশের ভেতর। তাই, কালো থেকে সাদা টাকার সমস্যা ভাবার আগে ভাবতে হবে বাংলাদেশে আমরা কি আদৌ কর দিই? আমরা কী পরিমাণ লোক কর দিই? প্রকৃত করদাতার শতকরা হার কত? ১৬ কোটি লোকের এই দেশে কতজন লোকের টিআইএন নম্বর আছে। প্রকৃত করদাতার সংখ্যা কত ইত্যাদি ইত্যাদি? ১৬ কোটি লোকের এত বড় দেশের সরকারি বেসরকারি খাতগুলো কিভাবে চলছে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। তাই কালো থেকে সাদা টাকা সমস্যার সমাধান, করের আওতা বাড়ানো, সর্বোচ্চ পরিমাণ মানুষের টিআইএন নম্বর এবং এই উন্নয়নশীল দেশে প্রোগ্রেসিব ট্যাক্স্যেশন সিস্টেমের মাধ্যমে আয়ের সুষম বণ্টন ও দারিদ্র্যবিমোচন এবং সর্বসাকুল্যে প্রকৃত উন্নয়ন ইত্যাদি স্ববিস্তারে এবং সমান্তরালভাবে ভাবতে হবে এবং প্রয়োগ করতে হবে।
উপসংহারে বলা যায়, বাজেটের খাতওয়ারি অগ্রাধিকার মোটামুটিভাবে ঠিক আছে। উচ্চাভিলাষী বাজেট হলেও আমরা যদি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আমরা সফলকাম হবো। গ্যাস, তেল, বিদ্যুৎসহ ইত্যাদি জ্বালানি খাতে অগ্রাধিকার, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টের উন্নয়ন, বিদেশী বিনিয়োগ ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের বেসরকারিকরণ এবং পূর্ণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জ্বালানি মূল্যের সাশ্রয় ও স্থিতিশীলতা আনয়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ মুহূর্তে কালো থেকে সাদা টাকার বিষয়টি খুব বড় ধরনের সমস্যা নয়। কারণ কালো থেকে সাদা টাকায় সরকারের আয়কর বাড়বে, উদ্যোক্তা গোষ্ঠীর বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নশীলতা বেড়ে উঠবে, হার ও রফতানি আয় বাড়বে। সবশেষে বাজেটের বাস্তবায়নস্বরূপ বর্জুয়া গোষ্ঠীসহ সমগ্র দেশটি দক্ষ, কর্মঠ ও সচেতন হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতার হিসাব নিরিখে সবার দায়িত্ব বাড়াতে হবে। সবশেষে সাধারণ প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ইত্যাদিসহ বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করা গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের উচ্ছেদ, অরাজনীতিকরণের অপসংস্কৃতি বন্ধ এবং সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রশাসনের নিশ্চিতকরণসহ নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা ইত্যাদির সুষ্ঠু সমন্বয় অতি জরুরি।
লেখক : ভাইস চ্যান্সেলর, উত্তরা ইউনিভার্সিটি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন