
॥ মে. জে. (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক ॥
আজকের এই লেখাটিকে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়বস্তুর আলোকে না সাজিয়ে আপাতদৃষ্টিতে আমাকে বা আমার মতো শতসহস্্র ব্যক্তিকে যে উদ্বেগ গ্রাস করে ফেলছে, সেই বেদনাতুর বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে, পাঠকের মনের আলোছায়া আর আশা-নিরাশাকে ভাগ করে নিয়ে নিজের মনকে একটু হালকা করতে চাই। আর এসব উদ্বেগসঙ্কুল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো উপায় আছে কি না সে প্রসঙ্গে দু-চারটি কথা বলে উদ্বেগের অন্তর্জ্বালাকে একটু প্রশান্তি দিতে লেখাটির অবতারণা। একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করার মানে এই নয় যে, শুধু সরকারের ক্যাবিনেটের অংশ হবেন অথবা পার্লামেন্টের সদস্য হবেন এবং নিয়মিত কিছু কাজ করবেন। একজন মানুষ যেমন পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সমন্বয়ে গড়া এর পরও অনেকে বলে মানুষের মাঝে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বিদ্যমান। তদ্রƒপভাবে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালায় বিভাগ বিদ্যমান। তার মধ্যে একটি হলো নির্বাহী বিভাগ, অপরটি আইন প্রণয়ন বিভাগ আর তৃতীয় বিভাগটি হলো বিচার বিভাগ। এ ছাড়া মানবিক দিক বিবেচনায় চতুর্থ একটি বিভাগের কথা অনায়াসে বলা যায় সেটি হলো দেশপ্রেম ও বিবেক বিভাগ। এই তিনটি বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে যদি দেশপ্রেম ও বিবেক না থাকে তাহলে তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ও সুষ্ঠুভাবে পালন করতে ব্যর্থ হন। দু-একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বোঝা যাবে।
যদি একজন ব্যক্তিকে বিসিএস পরীায় প্রিলিমিনারি বা লিখিত এবং চূড়ান্ত ভাইভা কিংবা মৌখিকভাবে পাস করার পর আপাতত নির্বাচন করা হয় বা মনোনয়ন দেয়া হয়, স্বাস্থ্যগত পরীায় পাস করাসাপে।ে অতঃপর তিনি মনোনয়ন পান চূড়ান্তভাবে। তিনি সরকারের কাছ থেকে একটি পত্র পান সেই শর্ত মোতাবেক যেখানে রিপোর্ট করার কথা সেখানে রিপোর্ট করেন বা নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত থাকেন। তারপর তিনি যে ক্যাডারের অফিসার সে ক্যাডারের মৌলিক কিছু প্রশিণ আছে এবং তিনি সেই প্রশিণটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেন। বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের প্রশিণ এক রকম, বিসিএস কর ক্যাডারের প্রশিণ অন্য রকম। আবার বিসিএস সিভিল বা আনসার বাহিনীতে যারা যান তাদের প্রশিণ আরো ভিন্নতর। এভাবে প্রতিটি বিভাগের প্রশিণ বিভিন্ন ক্যাটাগরি অনুসারে বিভক্ত। আর এই প্রশিণ দেয়ার উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিটি তার জীবনের শুরু থেকে ২৫-২৬ বছর পর্যন্ত যা কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, সেই অভিজ্ঞতাকে চাকরির চাহিদা দিয়ে প্রলেপ দেয়া। চাকরিটি করতে গেলে কী কাজ জানতে হবে, কোন নিয়মে কাজ করতে হবে তার পূর্বধারণা দেয়াই হলো প্রশিণের উদ্দেশ্য।
আরেকটা উদাহরণ দিই। সেনাবাহিনীর অফিসারদের প্রশিণের দিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, সাড়ে ১৭ থেকে সাড়ে ১৯ বছর বয়সসীমার মধ্যে আবেদন করতে হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য। প্রথমে একটি ভাইভা বা মৌখিক পরীা হয়, তারপর একটি লিখিত পরীা হয়, এরপর ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে দেড় বা সাড়ে তিন দিনের একটি পরীা নেয়া হয়। তারপর চূড়ান্ত মেডিক্যাল হয় এবং এরপর তিনি নিয়োগ পান। এরপর প্রশিণের জন্য গেলে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ১০ মাইল উত্তরে অবস্থিত বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি ভাটিয়ারিতে উপস্থিত হতে হয়। সেখানে প্রায় দুই বছর প্রশিণ নেন অতঃপর তিনি একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোর বা রেজিমেন্টে নিয়োগ পান। ওখানে আসার তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই তিনি মৌলিক প্রশিণের জন্য নির্বাচিত হন। তিনি যদি যোগাযোগ বা সিগন্যাল কোরের অফিসার হন তাহলে তিনি যশোর যাবেন। আর তিনি যদি পদাতিক কোর বা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার হন তবে তিনি সিলেট যাবেন কিংবা গোলন্দাজ বাহিনীর অফিসার হলে তিনি চট্টগ্রামের হালিশহর যাবেন। তিনি যদি আর্মি সার্ভিসেস কোরের অফিসার হন তাহলে তিনি খুলনার উত্তরে গিলাতলায় যাবেন। এরূপ বাকিদের জন্য নির্দিষ্ট প্রশিণ কেন্দ্রে গিয়ে প্রশিণ গ্রহণ করতে হয়। এসব কথা বলার মানে হলো আগামী দিনে যে যেই ধরনের কাজ করবেন তাকে সেই বিষয়ের নির্দিষ্ট প্রশিণ নিতে হয়।
অপর দিকে গ্রামের মসজিদগুলোতে ইমামতি করা এমন কোনো কষ্টসাধ্যের ব্যাপার নয়। যুগ যুগ ধরে সেই কাজটি হয়ে আসছে। গ্রামদেশের মসজিদগুলোতে যারা ইমামতি করেন তারা সম্মানিত ব্যক্তি হন। সাধারণ মুসলমান গ্রামগুলোতে ইমাম সাহেবদের দ্বারাই বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন ও উদযাপন করা হয়। যেমনÑ ঈদে মিলাদুন্নবী, মহররমের দিন, শবেমেরাজের সন্ধ্যায়, শবেবরাতের রাত এবং বিয়ে, খতনাÑ এই জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে তাদের মধ্যে কেউ না কেউ উপস্থিত থাকেন। ইমামতি তথা মসজিদের ইমাম হতে হলে একজন ব্যক্তিকে নামাজের পদ্ধতি তথা ঈমান আকিদা কুরআন-সুন্নাহ ইত্যাদি সব বিষয়ে তাকে জ্ঞান রাখতে হয়। তার পোশাক-আশাক আচার-আচরণ দায়িত্ব ও মূল্যবোধ চলন-বলন ইত্যাদি গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সর্বোপরি তাকে একজন ঈমানদার ও নামাজি হতে হবে। যাতে সমাজের অন্যরা তাকে অন্য ১০ জনের চেয়ে আলাদা বা সম্মানিত মনে করেন এবং এ-ও ভাবেন যেন তিনি একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। তবেই গ্রামবাসী তাকে ইমাম হিসেবে মেনে নেবেন। যেসব ব্যক্তি মসজিদে ইমামতি করেন তারা মাদরাসা থেকে এসব বিষয় শিখে আসেন বিধায় তারা ইমামতি করেন। কিন্তু একটি মসজিদের ইমাম শুধু কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানো কিংবা ধর্র্র্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনের জন্যই ওখানে নিযুক্ত হন? নাকি আরো কোনো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মতা রাখেন? একসময় পাকিস্তান সরকার বা বর্তমান বাংলাদেশ সরকার মনে করল ইমাম সাহেবরা এসব কাজ ছাড়াও আরো বৃহত্তর দায়িত্ব পালন করার মতা রাখেন। ঠিক তখনই ইমাম প্রশিণের ব্যবস্থা করা হলো। সেই ইমাম প্রশিণের মাধ্যমে ইমামদের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন আনা, জ্ঞানের পরিবর্তন আনা, আচার-আচরণে পরিবর্তন আনা, চিন্তাশক্তির পরিবর্তন আনা এবং কর্মের স্পৃহায় নতুনত্বে জোর দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন যার সদর দফতর ঢাকাতে অবস্থিত তারা ইমাম প্রশিণ দিয়ে আসছে। গত কয়েক বছরে তারা কয়েক হাজার ইমামকে প্রশিণ দিয়েছে। মুরগি পালন, বাচ্চাদের টিকা দেয়া, সামাজিক কুসংস্কার, ব্যাধি, যৌতুকপ্রথা, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, মাদকদ্রব্যসহ ইত্যাদি বিষয় রোধ করতে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তাদেরকে নানা বিষয়ে প্রশিণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিণের ফলে একজন প্রশিণপ্রাপ্ত ইমাম তার আগের গুণগত অবস্থা থেকে আরো অনেক বেশি গুণগত এবং কর্মস্পৃহায় আরো উদ্যোগী হয়ে ওঠেন।
আমি তিনটি উদাহরণ দিলাম এই মর্মে যে, প্রশিণ একজন মানুষকে বাস্তব জীবন ও কর্মস্পৃহায় শক্তিশালী করে তোলে। তাহলে এখন প্রশ্ন জাগতে পারে দেশ চালানোর জন্য কি কোনো প্রশিণের প্রয়োজন আছে? আমাদের দেশের শাসকেরা আদৌ দেশ পরিচালনার জন্য কোনো প্রশিণ গ্রহণ করেন কি? দেশ পরিচালনা কাজে দুই প্রকারের ব্যক্তি জড়িত। এক প্রকারের ব্যক্তির নাম আমলা, অপরটি হলো রাজনীতিবিদ বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। পাঠককুলের কাছে প্রশ্ন, এই দুই ক্যাটাগরির ব্যক্তিদের মধ্যে কাদের কতটুকু প্রশিণের প্রয়োজন রয়েছে? এটা বিবেচনার ভার আপনাদের কাঠগড়ায় রেখে দিলাম। গত ৪১ বছরের বাংলাদেশকে যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব, এ দেশের শুরু থেকে যা-ই কিছু অর্জন হয়েছে এসবের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্বদানকারীদের অবদান যা অনস্বীকার্য। তার জন্য প্রথমে আমরা সব রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানাই। সর্বেেত্র কমবেশি তাদের অবদান বিদ্যমান, তা না হলে আজকের বাংলাদেশ এই পর্যায়ে আসতে পারত না। ভালো হোক মন্দ হোক বা কম ভালো হোক বা কম মন্দ হোক একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন বলে বর্তমান প্রাইভেট সেক্টরে শিল্প উদ্যোক্তারা এবং এনজিওগুলো কিছু অবদান রাখতে পেরেছেÑ যার ফলে বর্তমান বাংলাদেশে কিছুটা উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি এইটুকু উন্নয়ন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকব? এতটুকুই কি আমাদের ভাগ্যে লেখা ছিল? উত্তরে নির্দ্বিধায় বলতে হচ্ছেÑ না, আমাদের এইটুকু উন্নয়ন ভাগ্যে লেখা ছিল না আর এইটুকু নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না। আমাদের ভাগ্যে আরো অনেক বেশি কিছু লেখা ছিল কিন্তু আমরা সেটাকে ধরতে পারিনি, বা সেটার মূল্যায়ন করিনি। তার জন্য দুই প্রকৃতির ব্যক্তি যারা দেশের নেতৃত্ব দেন বা দেশ প্রশাসনের সাথে প্রত্য ও পরোভাবে জড়িত তারা দায়ী। যথা রাজনীতিবিদ বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আর আমলা বা সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আমলাতন্ত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের মধ্যে যদি সূক্ষ্মদর্শী ও দূরদর্শিতার অভাব থাকে, তাদের মধ্যে যদি চিন্তাশক্তি কিংবা কল্পনাশক্তির ীণতা থাকে, সমন্বয় করার শক্তি বা পরিকল্পনা করার শক্তি না থাকে, তাহলে তারা গতানুগতিক নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন। কখনো তারা ব্যতিক্রমধর্মী বা উল্লেখযোগ্য কোনো নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। একটি দেশকে দ্রুতগতিতে সামনে এগিয়ে নিতে হলে যে প্রকারের উল্লেখযোগ্য বা ব্যতিক্রমধর্মী দিকনির্দেশনার প্রয়োজন, সেই প্রকারের ব্যতিক্রমধর্মী দিকনির্দেশনা সর্বযুগে সর্বদাই বিদ্যমান ছিল। বিনা মূল্যে বাতাস থেকে অক্সিজেন পাওয়া যায় না। জাতির ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে ওই জাতি কত ঘন ঘন ব্যতিক্রমধর্মী নেতৃত্ব পাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, আমেরিকার সব প্রেসিডেন্টই আমেরিকার আইজেন হাওয়ার কিংবা জন এফ কেনেডির মতো নন। অপর পে সবাই আবার মনিকা লিউনস্কির সাথে কেলেঙ্কারি খ্যাত প্রেসিডেন্ট বিল কিনটনও নন অথবা যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ নন। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সবাই উইনস্টন চার্চিল নন, আবার মার্গারেট থ্যাচারও নন। ইন্ডিয়ার ইতিহাসে সবাই প্রধানমন্ত্রী নেহরু নন। গত ১৫-২০ বছরে ভারতে কেউ পাঁচ বছর মতায় ছিলেন, আবার কেউ নয় মাস মতায় ছিলেন। তবে কেউ এ পর্যন্ত নেহরুর পর্যায়ে যেতে পারেননি। আবার দেখা গেছে, নেহরু না হয়ে কেউ দ্বিতীয় প্রজন্মের ভারতীয়দের মধ্য থেকে নিজের স্থানকে মজবুত করে জায়গা করে নিয়েছেন। যেমনÑ ড. মনমোহন সিং। যদিও তিনি সর্বভারতব্যাপী গৃহীত একজন নেতা নন কিংবা যৌবন থেকে তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত নন। তবে এ েেত্র মালয়েশিয়ার কপালটা বেশ ভালো। তারা ডা: মাহাথির মোহাম্মদকে পেয়েছিল। মালয়েশিয়ার মতো দেশে ২২ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডা: মাহাথির মোহাম্মদ। আমাদের দেশে প্রায় সব লোকই এই কথাটি বলে যে, আমরা যদি একজন মাহাথির মোহাম্মদ পেতাম, আমাদের দেশে যদি একজন মাহাথির মোহাম্মদ থাকতেন কতই না ভালো হতো!! তো সেই মাহাথির মোহাম্মদ কিভাবে আধুনিক মালয়েশিয়া সাজালেন, তার গল্প লেখা আছে তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে। সে বইটির নাম A Doctor In The House : The Memoirs of Tun Dr. Mahathir Mohamad। যার বাংলা অর্থ হবে ‘বাড়ির ভেতরে একজন ডাক্তার : মাহাথির মোহাম্মদের স্মৃতিচারণ’। আসলে মালয়েশিয়াকে যদি একটি রুগ্ণ ঘর ধরি এবং প্রধানমন্ত্রীকে যদি ডাক্তার মনে করি এবং ডাক্তার ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র দিয়ে রোগীকে সুস্থ করলেনÑ তাহলে এটা সহজে অনুধাবনযোগ্য যে, জনাব মাহাথির উপযুক্ত ডাক্তার হিসেবে কী চিন্তায় কী নিয়মে কী অভিনব দূরদর্শিতায় আধুনিক মালয়েশিয়াকে সাজালেন। কোন প্রতিকূলতার মাঝে কিভাবে উত্তরণ ঘটিয়েছেন তার লেখা ৮৫০ পৃষ্ঠার বইটিতে তার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। অপর একজন হলেন বিশ্বখ্যাত আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার লি কুয়ান ইউ। সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ প্রায় দুই দশক প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্বে ছিলেন। তাকে আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার বলা হয়ে থাকে। তিনি দীর্ঘ একটি পুস্তক লিখেছেন সোয়া ৭০০ পৃষ্ঠার বইটির নাম হলো From Third World To First : The Singapore Story। যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ সিঙ্গাপুর প্রথম বিশ্বের দেশে রূপান্তর হওয়ার কাহিনী’। এই কথাগুলো বলার পেছনে কারণ হচ্ছে, এই দু’টি জনপ্রিয় সৃজনশীল স্রষ্টার জীবনী পড়ার জন্য আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে অনুরোধ করব বাংলাদেশের সব সচেতন নাগরিক এবং রাজনীতিবিদদের, যারা বাংলাদেশ পরিচালনা করার জন্য আগ্রহী। এই দু’জন ছাড়াও আমরা প্রধানমন্ত্রী নেহরুর নাম নিতে পারি। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এসব আধুনিক রূপকারেরা (মাহাথির, লি কুয়ান ইউ ও নেহরু) কি ফেরেশতা ছিলেন? উত্তরে সবাই আমার সাথে একমত হবেন যে, এরা কেউ ফেরেশতা ছিলেন না। বরং তারা অন্য ১০ জনের মতো রক্ত-মাংসের সমন্বয়ে গড়া মানুষ ছিলেন। শুধু পার্থক্য ছিল তাদের মাথা, চিন্তাচেতনা, বুদ্ধিমত্তা, দেশপ্রেম এবং রাষ্ট্র পরিচালনা ছিল অন্য শত কোটি মানুষের চিন্তাচেতনার চেয়েও অত্যধিক পাণ্ডিত্য ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন। তাদের দূরদর্শিতা মানবতা এবং দেশপ্রেমে প্রবল আসক্তি তাদেরকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে সাহায্য করেছিল। তাই তারা তাদের দেশকে এগিয়ে নিতে সম হন। তারা দৈনন্দিন রাজনীতি করেছেন, বার্ষিক রাজনীতি করেছেন, নির্বাচনের রাজনীতি করেছেন, এর বাইরেও তারা দেশকে কিভাবে সামনে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই চিন্তা করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। এই চারটি জিনিসের মধ্যে সময়ের বণ্টন, চিন্তার বণ্টন, আগ্রহের বণ্টন সব কিছুকে সমন্বিত করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সম হয়েছেন বিধায় তারা সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায়, আমরা সব সময় মারামারি-কাটাকাটিতে লিপ্ত। বিরোধী দলকে নির্মূলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথা নির্দলীয় নিরপে সরকারের অধীনে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিভাবে মতায় দীর্ঘ দিন থাকা যায়, নিজেদের অবস্থান আরো পাকাপোক্ত করা যায় সেসব ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমাদের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তি, যিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, তার লেখা রায় নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তার রায় লিখতে তিনি সময় নিয়েছেন তার ভাষ্যমতে ৯ মাসেরও বেশি। সেই রায়ের গ্রহণযোগ্যতা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। সেই রায়ের লিখিত কপি জমা হওয়ার প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি এখন পর্যন্ত এই রায় কোথায় আছে কেউ জানে না, বিশেষ করে দেশবাসী জানে না। আমাদের সংসদে কোরাম সঙ্কট হয় যদিও চার ভাগের তিন ভাগই একটি সুনির্দিষ্ট দলের সদস্য। আমাদের বাজেট বক্তৃতায় যেসব তথ্য উপস্থাপন করা হয় সেগুলো বিতর্কিত থাকে। আমাদের দেশে চুরি-ডাকাতি, লুটপাটকে বৈধতা দিতে কারো কোনো প্রকার আপত্তি থাকে না কিংবা রাষ্ট্রের চুরি-ডাকাতির টাকাকে ধামাচাপা দিতে তদবিরের কোনো কমতি থাকে না। মোট কথা এসব রাষ্ট্রীয় চুরি-ডাকাতি ও দুর্নীতিকে প্রকাশ্য স্বীকৃতি দিয়ে অতি আগ্রহের সাথে এসব বাস্তবায়ন করা হয়। ফলে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ দিনকে দিন পিছিয়ে পড়ে যাচ্ছে। আমি না হয় আমার মতো বয়সীদের কথা বাদই দিলাম, ভালো হোক মন্দ হোক একটা জীবন কাটিয়ে দিলাম কিন্তু ভয় হয় তাদের নিয়ে যাদের বয়স এখন ২৫-৩০ কিংবা ৩৫ তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? তারা কোথায় যাবে? পৃথিবী ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসছে। ক্রমান্বয়ে এই পৃথিবী প্রতিযোগিতার পৃথিবী হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার পৃথিবীতে আমাদের তরুণ ও যুবসমাজ কিভাবে টিকে থাকবে? টিকে থাকার জন্য তাদের যে একটা পরিবেশ দরকার, সুযোগ-সুবিধার দরকার সে রকম পরিবেশ কি আমরা আদৌ সৃষ্টি করতে পারছি কি না কিংবা ভবিষ্যতে পারব কি না এমন একটি প্রশ্ন মনে থেকেই যাচ্ছে? আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে চাচ্ছি যে বিষয়টি, তা হলো বিতর্ক মানুষ করতে পারে আর এই বিতর্ক করার জন্য যথেষ্ট জ্ঞান এবং তথ্য দরকার। এসব তথ্য উপস্থাপন করার পর যদি কোনো প অস্বীকার করে তাহলে তার জন্য ফয়সালা দরকার। কিন্তু আমরা কোনো কিছুতেই ফয়সালা করতে রাজি না।
আমি একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে, সেটি হলোÑ বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন কত ছিল। এখন থেকে ১১ বছর আগে কত ছিল, এখন থেকে আট বছর আগে কত ছিল, এখন থেকে পাঁচ বছর আগে কত কত ছিল, এখন থেকে তিন বছর আগে এবং গত বছর কত ছিল, বর্তমানে কত আছে, অন্তত এ তথ্যটি যদি আমরা আজ জাতির সামনে তুলে ধরতে পারি তাহলে কোনো পই কোনো পক্ষকে কাদা ছোড়াছুড়ির সুযোগ পাবে না। যেকোনো জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন প্রয়োজন, তেমনি দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা ও সাহসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। কথাটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লেখায় বারবার বলেছি। আজো বলছি, আমাদের নেতৃত্বের কাছ থেকে আমরা সেই চিন্তার শক্তিটি, আগ্রহটি বা দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের আসক্তিটা কামনা করছি। সর্বোপরি সেটি আনার জন্য তাদের প্রশিণ দরকার। তাদের অনুশীলন দরকার এবং এর জন্য প্রশিণ দরকার তা না হলে একটি দেশ হঠাৎ করে সিঙ্গাপুর কিংবা মালেশিয়ার মতো আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠবে না। রাজপথে জনগণকে রাজপথের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রশিণ দেয়া হয়। দেশকে সূক্ষ্মভাবে পরিচালনা করার জন্য সেক্রেটারিয়েটে বসে প্রশিণ দেয়া হয় না এবং রাজপথের প্রশিণও আমরা এখন ভুলে যাচ্ছি। উদাহরণস্বরূপ বলতে হচ্ছে, কোন কারণে আজকে ২০টি বছর ডাকসুর নির্বাচন হতে দেয়া হচ্ছে না? এ প্রসঙ্গে কেউ কোনো আন্দোলন কিংবা আপত্তি তুলছে না। না বলেন সাবেক ছাত্রনেতারা, না বলেন রাজনৈতিক নেতারা। সবাই কেবল গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার দিয়ে গলা ফাটান কিন্তু গণতন্ত্রের সূতিকাগার যদি ছাত্রসমাজ হয় তাহলে সেই ছাত্রসমাজ কেন গণতন্ত্রের স্বাদ পাচ্ছে না? এর কোনো উত্তর কেউ দিচ্ছেন না। আমরা কি নিজেদের সাথে প্রতারণা করছি না? আমি আহ্বান জানাচ্ছি তরুণ সমাজকে চিন্তা করতে, তাদের মধ্যে সেই দূরদৃষ্টি কিভাবে আনা যায় তারাই চিন্তা করবেন। তাদের সাথে ইন্টারেকশন বা মিথস্ক্রিয়ায় বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি প্রবীণ এবং তরুণের সমন্বয়ে একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
লেখক : গবেষক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও চেয়ারম্যান বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.kallyan-ibrahim.com
আজকের এই লেখাটিকে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়বস্তুর আলোকে না সাজিয়ে আপাতদৃষ্টিতে আমাকে বা আমার মতো শতসহস্্র ব্যক্তিকে যে উদ্বেগ গ্রাস করে ফেলছে, সেই বেদনাতুর বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে, পাঠকের মনের আলোছায়া আর আশা-নিরাশাকে ভাগ করে নিয়ে নিজের মনকে একটু হালকা করতে চাই। আর এসব উদ্বেগসঙ্কুল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো উপায় আছে কি না সে প্রসঙ্গে দু-চারটি কথা বলে উদ্বেগের অন্তর্জ্বালাকে একটু প্রশান্তি দিতে লেখাটির অবতারণা। একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করার মানে এই নয় যে, শুধু সরকারের ক্যাবিনেটের অংশ হবেন অথবা পার্লামেন্টের সদস্য হবেন এবং নিয়মিত কিছু কাজ করবেন। একজন মানুষ যেমন পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সমন্বয়ে গড়া এর পরও অনেকে বলে মানুষের মাঝে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বিদ্যমান। তদ্রƒপভাবে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিমালায় বিভাগ বিদ্যমান। তার মধ্যে একটি হলো নির্বাহী বিভাগ, অপরটি আইন প্রণয়ন বিভাগ আর তৃতীয় বিভাগটি হলো বিচার বিভাগ। এ ছাড়া মানবিক দিক বিবেচনায় চতুর্থ একটি বিভাগের কথা অনায়াসে বলা যায় সেটি হলো দেশপ্রেম ও বিবেক বিভাগ। এই তিনটি বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে যদি দেশপ্রেম ও বিবেক না থাকে তাহলে তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ও সুষ্ঠুভাবে পালন করতে ব্যর্থ হন। দু-একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বোঝা যাবে।
যদি একজন ব্যক্তিকে বিসিএস পরীায় প্রিলিমিনারি বা লিখিত এবং চূড়ান্ত ভাইভা কিংবা মৌখিকভাবে পাস করার পর আপাতত নির্বাচন করা হয় বা মনোনয়ন দেয়া হয়, স্বাস্থ্যগত পরীায় পাস করাসাপে।ে অতঃপর তিনি মনোনয়ন পান চূড়ান্তভাবে। তিনি সরকারের কাছ থেকে একটি পত্র পান সেই শর্ত মোতাবেক যেখানে রিপোর্ট করার কথা সেখানে রিপোর্ট করেন বা নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত থাকেন। তারপর তিনি যে ক্যাডারের অফিসার সে ক্যাডারের মৌলিক কিছু প্রশিণ আছে এবং তিনি সেই প্রশিণটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি নেন। বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের প্রশিণ এক রকম, বিসিএস কর ক্যাডারের প্রশিণ অন্য রকম। আবার বিসিএস সিভিল বা আনসার বাহিনীতে যারা যান তাদের প্রশিণ আরো ভিন্নতর। এভাবে প্রতিটি বিভাগের প্রশিণ বিভিন্ন ক্যাটাগরি অনুসারে বিভক্ত। আর এই প্রশিণ দেয়ার উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিটি তার জীবনের শুরু থেকে ২৫-২৬ বছর পর্যন্ত যা কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, সেই অভিজ্ঞতাকে চাকরির চাহিদা দিয়ে প্রলেপ দেয়া। চাকরিটি করতে গেলে কী কাজ জানতে হবে, কোন নিয়মে কাজ করতে হবে তার পূর্বধারণা দেয়াই হলো প্রশিণের উদ্দেশ্য।
আরেকটা উদাহরণ দিই। সেনাবাহিনীর অফিসারদের প্রশিণের দিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, সাড়ে ১৭ থেকে সাড়ে ১৯ বছর বয়সসীমার মধ্যে আবেদন করতে হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য। প্রথমে একটি ভাইভা বা মৌখিক পরীা হয়, তারপর একটি লিখিত পরীা হয়, এরপর ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে দেড় বা সাড়ে তিন দিনের একটি পরীা নেয়া হয়। তারপর চূড়ান্ত মেডিক্যাল হয় এবং এরপর তিনি নিয়োগ পান। এরপর প্রশিণের জন্য গেলে তাকে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ১০ মাইল উত্তরে অবস্থিত বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি ভাটিয়ারিতে উপস্থিত হতে হয়। সেখানে প্রায় দুই বছর প্রশিণ নেন অতঃপর তিনি একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোর বা রেজিমেন্টে নিয়োগ পান। ওখানে আসার তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই তিনি মৌলিক প্রশিণের জন্য নির্বাচিত হন। তিনি যদি যোগাযোগ বা সিগন্যাল কোরের অফিসার হন তাহলে তিনি যশোর যাবেন। আর তিনি যদি পদাতিক কোর বা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার হন তবে তিনি সিলেট যাবেন কিংবা গোলন্দাজ বাহিনীর অফিসার হলে তিনি চট্টগ্রামের হালিশহর যাবেন। তিনি যদি আর্মি সার্ভিসেস কোরের অফিসার হন তাহলে তিনি খুলনার উত্তরে গিলাতলায় যাবেন। এরূপ বাকিদের জন্য নির্দিষ্ট প্রশিণ কেন্দ্রে গিয়ে প্রশিণ গ্রহণ করতে হয়। এসব কথা বলার মানে হলো আগামী দিনে যে যেই ধরনের কাজ করবেন তাকে সেই বিষয়ের নির্দিষ্ট প্রশিণ নিতে হয়।
অপর দিকে গ্রামের মসজিদগুলোতে ইমামতি করা এমন কোনো কষ্টসাধ্যের ব্যাপার নয়। যুগ যুগ ধরে সেই কাজটি হয়ে আসছে। গ্রামদেশের মসজিদগুলোতে যারা ইমামতি করেন তারা সম্মানিত ব্যক্তি হন। সাধারণ মুসলমান গ্রামগুলোতে ইমাম সাহেবদের দ্বারাই বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন ও উদযাপন করা হয়। যেমনÑ ঈদে মিলাদুন্নবী, মহররমের দিন, শবেমেরাজের সন্ধ্যায়, শবেবরাতের রাত এবং বিয়ে, খতনাÑ এই জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে তাদের মধ্যে কেউ না কেউ উপস্থিত থাকেন। ইমামতি তথা মসজিদের ইমাম হতে হলে একজন ব্যক্তিকে নামাজের পদ্ধতি তথা ঈমান আকিদা কুরআন-সুন্নাহ ইত্যাদি সব বিষয়ে তাকে জ্ঞান রাখতে হয়। তার পোশাক-আশাক আচার-আচরণ দায়িত্ব ও মূল্যবোধ চলন-বলন ইত্যাদি গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সর্বোপরি তাকে একজন ঈমানদার ও নামাজি হতে হবে। যাতে সমাজের অন্যরা তাকে অন্য ১০ জনের চেয়ে আলাদা বা সম্মানিত মনে করেন এবং এ-ও ভাবেন যেন তিনি একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। তবেই গ্রামবাসী তাকে ইমাম হিসেবে মেনে নেবেন। যেসব ব্যক্তি মসজিদে ইমামতি করেন তারা মাদরাসা থেকে এসব বিষয় শিখে আসেন বিধায় তারা ইমামতি করেন। কিন্তু একটি মসজিদের ইমাম শুধু কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানো কিংবা ধর্র্র্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনের জন্যই ওখানে নিযুক্ত হন? নাকি আরো কোনো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মতা রাখেন? একসময় পাকিস্তান সরকার বা বর্তমান বাংলাদেশ সরকার মনে করল ইমাম সাহেবরা এসব কাজ ছাড়াও আরো বৃহত্তর দায়িত্ব পালন করার মতা রাখেন। ঠিক তখনই ইমাম প্রশিণের ব্যবস্থা করা হলো। সেই ইমাম প্রশিণের মাধ্যমে ইমামদের মধ্যে গুণগত পরিবর্তন আনা, জ্ঞানের পরিবর্তন আনা, আচার-আচরণে পরিবর্তন আনা, চিন্তাশক্তির পরিবর্তন আনা এবং কর্মের স্পৃহায় নতুনত্বে জোর দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন যার সদর দফতর ঢাকাতে অবস্থিত তারা ইমাম প্রশিণ দিয়ে আসছে। গত কয়েক বছরে তারা কয়েক হাজার ইমামকে প্রশিণ দিয়েছে। মুরগি পালন, বাচ্চাদের টিকা দেয়া, সামাজিক কুসংস্কার, ব্যাধি, যৌতুকপ্রথা, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, মাদকদ্রব্যসহ ইত্যাদি বিষয় রোধ করতে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তাদেরকে নানা বিষয়ে প্রশিণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিণের ফলে একজন প্রশিণপ্রাপ্ত ইমাম তার আগের গুণগত অবস্থা থেকে আরো অনেক বেশি গুণগত এবং কর্মস্পৃহায় আরো উদ্যোগী হয়ে ওঠেন।
আমি তিনটি উদাহরণ দিলাম এই মর্মে যে, প্রশিণ একজন মানুষকে বাস্তব জীবন ও কর্মস্পৃহায় শক্তিশালী করে তোলে। তাহলে এখন প্রশ্ন জাগতে পারে দেশ চালানোর জন্য কি কোনো প্রশিণের প্রয়োজন আছে? আমাদের দেশের শাসকেরা আদৌ দেশ পরিচালনার জন্য কোনো প্রশিণ গ্রহণ করেন কি? দেশ পরিচালনা কাজে দুই প্রকারের ব্যক্তি জড়িত। এক প্রকারের ব্যক্তির নাম আমলা, অপরটি হলো রাজনীতিবিদ বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। পাঠককুলের কাছে প্রশ্ন, এই দুই ক্যাটাগরির ব্যক্তিদের মধ্যে কাদের কতটুকু প্রশিণের প্রয়োজন রয়েছে? এটা বিবেচনার ভার আপনাদের কাঠগড়ায় রেখে দিলাম। গত ৪১ বছরের বাংলাদেশকে যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব, এ দেশের শুরু থেকে যা-ই কিছু অর্জন হয়েছে এসবের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্বদানকারীদের অবদান যা অনস্বীকার্য। তার জন্য প্রথমে আমরা সব রাজনৈতিক ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানাই। সর্বেেত্র কমবেশি তাদের অবদান বিদ্যমান, তা না হলে আজকের বাংলাদেশ এই পর্যায়ে আসতে পারত না। ভালো হোক মন্দ হোক বা কম ভালো হোক বা কম মন্দ হোক একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন বলে বর্তমান প্রাইভেট সেক্টরে শিল্প উদ্যোক্তারা এবং এনজিওগুলো কিছু অবদান রাখতে পেরেছেÑ যার ফলে বর্তমান বাংলাদেশে কিছুটা উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি এইটুকু উন্নয়ন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকব? এতটুকুই কি আমাদের ভাগ্যে লেখা ছিল? উত্তরে নির্দ্বিধায় বলতে হচ্ছেÑ না, আমাদের এইটুকু উন্নয়ন ভাগ্যে লেখা ছিল না আর এইটুকু নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না। আমাদের ভাগ্যে আরো অনেক বেশি কিছু লেখা ছিল কিন্তু আমরা সেটাকে ধরতে পারিনি, বা সেটার মূল্যায়ন করিনি। তার জন্য দুই প্রকৃতির ব্যক্তি যারা দেশের নেতৃত্ব দেন বা দেশ প্রশাসনের সাথে প্রত্য ও পরোভাবে জড়িত তারা দায়ী। যথা রাজনীতিবিদ বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আর আমলা বা সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। আমলাতন্ত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের মধ্যে যদি সূক্ষ্মদর্শী ও দূরদর্শিতার অভাব থাকে, তাদের মধ্যে যদি চিন্তাশক্তি কিংবা কল্পনাশক্তির ীণতা থাকে, সমন্বয় করার শক্তি বা পরিকল্পনা করার শক্তি না থাকে, তাহলে তারা গতানুগতিক নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন। কখনো তারা ব্যতিক্রমধর্মী বা উল্লেখযোগ্য কোনো নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। একটি দেশকে দ্রুতগতিতে সামনে এগিয়ে নিতে হলে যে প্রকারের উল্লেখযোগ্য বা ব্যতিক্রমধর্মী দিকনির্দেশনার প্রয়োজন, সেই প্রকারের ব্যতিক্রমধর্মী দিকনির্দেশনা সর্বযুগে সর্বদাই বিদ্যমান ছিল। বিনা মূল্যে বাতাস থেকে অক্সিজেন পাওয়া যায় না। জাতির ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে ওই জাতি কত ঘন ঘন ব্যতিক্রমধর্মী নেতৃত্ব পাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, আমেরিকার সব প্রেসিডেন্টই আমেরিকার আইজেন হাওয়ার কিংবা জন এফ কেনেডির মতো নন। অপর পে সবাই আবার মনিকা লিউনস্কির সাথে কেলেঙ্কারি খ্যাত প্রেসিডেন্ট বিল কিনটনও নন অথবা যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ নন। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সবাই উইনস্টন চার্চিল নন, আবার মার্গারেট থ্যাচারও নন। ইন্ডিয়ার ইতিহাসে সবাই প্রধানমন্ত্রী নেহরু নন। গত ১৫-২০ বছরে ভারতে কেউ পাঁচ বছর মতায় ছিলেন, আবার কেউ নয় মাস মতায় ছিলেন। তবে কেউ এ পর্যন্ত নেহরুর পর্যায়ে যেতে পারেননি। আবার দেখা গেছে, নেহরু না হয়ে কেউ দ্বিতীয় প্রজন্মের ভারতীয়দের মধ্য থেকে নিজের স্থানকে মজবুত করে জায়গা করে নিয়েছেন। যেমনÑ ড. মনমোহন সিং। যদিও তিনি সর্বভারতব্যাপী গৃহীত একজন নেতা নন কিংবা যৌবন থেকে তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত নন। তবে এ েেত্র মালয়েশিয়ার কপালটা বেশ ভালো। তারা ডা: মাহাথির মোহাম্মদকে পেয়েছিল। মালয়েশিয়ার মতো দেশে ২২ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডা: মাহাথির মোহাম্মদ। আমাদের দেশে প্রায় সব লোকই এই কথাটি বলে যে, আমরা যদি একজন মাহাথির মোহাম্মদ পেতাম, আমাদের দেশে যদি একজন মাহাথির মোহাম্মদ থাকতেন কতই না ভালো হতো!! তো সেই মাহাথির মোহাম্মদ কিভাবে আধুনিক মালয়েশিয়া সাজালেন, তার গল্প লেখা আছে তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে। সে বইটির নাম A Doctor In The House : The Memoirs of Tun Dr. Mahathir Mohamad। যার বাংলা অর্থ হবে ‘বাড়ির ভেতরে একজন ডাক্তার : মাহাথির মোহাম্মদের স্মৃতিচারণ’। আসলে মালয়েশিয়াকে যদি একটি রুগ্ণ ঘর ধরি এবং প্রধানমন্ত্রীকে যদি ডাক্তার মনে করি এবং ডাক্তার ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র দিয়ে রোগীকে সুস্থ করলেনÑ তাহলে এটা সহজে অনুধাবনযোগ্য যে, জনাব মাহাথির উপযুক্ত ডাক্তার হিসেবে কী চিন্তায় কী নিয়মে কী অভিনব দূরদর্শিতায় আধুনিক মালয়েশিয়াকে সাজালেন। কোন প্রতিকূলতার মাঝে কিভাবে উত্তরণ ঘটিয়েছেন তার লেখা ৮৫০ পৃষ্ঠার বইটিতে তার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। অপর একজন হলেন বিশ্বখ্যাত আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার লি কুয়ান ইউ। সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ প্রায় দুই দশক প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্বে ছিলেন। তাকে আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার বলা হয়ে থাকে। তিনি দীর্ঘ একটি পুস্তক লিখেছেন সোয়া ৭০০ পৃষ্ঠার বইটির নাম হলো From Third World To First : The Singapore Story। যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ সিঙ্গাপুর প্রথম বিশ্বের দেশে রূপান্তর হওয়ার কাহিনী’। এই কথাগুলো বলার পেছনে কারণ হচ্ছে, এই দু’টি জনপ্রিয় সৃজনশীল স্রষ্টার জীবনী পড়ার জন্য আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে অনুরোধ করব বাংলাদেশের সব সচেতন নাগরিক এবং রাজনীতিবিদদের, যারা বাংলাদেশ পরিচালনা করার জন্য আগ্রহী। এই দু’জন ছাড়াও আমরা প্রধানমন্ত্রী নেহরুর নাম নিতে পারি। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এসব আধুনিক রূপকারেরা (মাহাথির, লি কুয়ান ইউ ও নেহরু) কি ফেরেশতা ছিলেন? উত্তরে সবাই আমার সাথে একমত হবেন যে, এরা কেউ ফেরেশতা ছিলেন না। বরং তারা অন্য ১০ জনের মতো রক্ত-মাংসের সমন্বয়ে গড়া মানুষ ছিলেন। শুধু পার্থক্য ছিল তাদের মাথা, চিন্তাচেতনা, বুদ্ধিমত্তা, দেশপ্রেম এবং রাষ্ট্র পরিচালনা ছিল অন্য শত কোটি মানুষের চিন্তাচেতনার চেয়েও অত্যধিক পাণ্ডিত্য ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন। তাদের দূরদর্শিতা মানবতা এবং দেশপ্রেমে প্রবল আসক্তি তাদেরকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে সাহায্য করেছিল। তাই তারা তাদের দেশকে এগিয়ে নিতে সম হন। তারা দৈনন্দিন রাজনীতি করেছেন, বার্ষিক রাজনীতি করেছেন, নির্বাচনের রাজনীতি করেছেন, এর বাইরেও তারা দেশকে কিভাবে সামনে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেই চিন্তা করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। এই চারটি জিনিসের মধ্যে সময়ের বণ্টন, চিন্তার বণ্টন, আগ্রহের বণ্টন সব কিছুকে সমন্বিত করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সম হয়েছেন বিধায় তারা সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখা যায়, আমরা সব সময় মারামারি-কাটাকাটিতে লিপ্ত। বিরোধী দলকে নির্মূলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথা নির্দলীয় নিরপে সরকারের অধীনে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিভাবে মতায় দীর্ঘ দিন থাকা যায়, নিজেদের অবস্থান আরো পাকাপোক্ত করা যায় সেসব ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমাদের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তি, যিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, তার লেখা রায় নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তার রায় লিখতে তিনি সময় নিয়েছেন তার ভাষ্যমতে ৯ মাসেরও বেশি। সেই রায়ের গ্রহণযোগ্যতা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। সেই রায়ের লিখিত কপি জমা হওয়ার প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি এখন পর্যন্ত এই রায় কোথায় আছে কেউ জানে না, বিশেষ করে দেশবাসী জানে না। আমাদের সংসদে কোরাম সঙ্কট হয় যদিও চার ভাগের তিন ভাগই একটি সুনির্দিষ্ট দলের সদস্য। আমাদের বাজেট বক্তৃতায় যেসব তথ্য উপস্থাপন করা হয় সেগুলো বিতর্কিত থাকে। আমাদের দেশে চুরি-ডাকাতি, লুটপাটকে বৈধতা দিতে কারো কোনো প্রকার আপত্তি থাকে না কিংবা রাষ্ট্রের চুরি-ডাকাতির টাকাকে ধামাচাপা দিতে তদবিরের কোনো কমতি থাকে না। মোট কথা এসব রাষ্ট্রীয় চুরি-ডাকাতি ও দুর্নীতিকে প্রকাশ্য স্বীকৃতি দিয়ে অতি আগ্রহের সাথে এসব বাস্তবায়ন করা হয়। ফলে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশ দিনকে দিন পিছিয়ে পড়ে যাচ্ছে। আমি না হয় আমার মতো বয়সীদের কথা বাদই দিলাম, ভালো হোক মন্দ হোক একটা জীবন কাটিয়ে দিলাম কিন্তু ভয় হয় তাদের নিয়ে যাদের বয়স এখন ২৫-৩০ কিংবা ৩৫ তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? তারা কোথায় যাবে? পৃথিবী ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসছে। ক্রমান্বয়ে এই পৃথিবী প্রতিযোগিতার পৃথিবী হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার পৃথিবীতে আমাদের তরুণ ও যুবসমাজ কিভাবে টিকে থাকবে? টিকে থাকার জন্য তাদের যে একটা পরিবেশ দরকার, সুযোগ-সুবিধার দরকার সে রকম পরিবেশ কি আমরা আদৌ সৃষ্টি করতে পারছি কি না কিংবা ভবিষ্যতে পারব কি না এমন একটি প্রশ্ন মনে থেকেই যাচ্ছে? আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে চাচ্ছি যে বিষয়টি, তা হলো বিতর্ক মানুষ করতে পারে আর এই বিতর্ক করার জন্য যথেষ্ট জ্ঞান এবং তথ্য দরকার। এসব তথ্য উপস্থাপন করার পর যদি কোনো প অস্বীকার করে তাহলে তার জন্য ফয়সালা দরকার। কিন্তু আমরা কোনো কিছুতেই ফয়সালা করতে রাজি না।
আমি একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে, সেটি হলোÑ বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন কত ছিল। এখন থেকে ১১ বছর আগে কত ছিল, এখন থেকে আট বছর আগে কত ছিল, এখন থেকে পাঁচ বছর আগে কত কত ছিল, এখন থেকে তিন বছর আগে এবং গত বছর কত ছিল, বর্তমানে কত আছে, অন্তত এ তথ্যটি যদি আমরা আজ জাতির সামনে তুলে ধরতে পারি তাহলে কোনো পই কোনো পক্ষকে কাদা ছোড়াছুড়ির সুযোগ পাবে না। যেকোনো জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন প্রয়োজন, তেমনি দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা ও সাহসিকতারও প্রয়োজন রয়েছে। কথাটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লেখায় বারবার বলেছি। আজো বলছি, আমাদের নেতৃত্বের কাছ থেকে আমরা সেই চিন্তার শক্তিটি, আগ্রহটি বা দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের আসক্তিটা কামনা করছি। সর্বোপরি সেটি আনার জন্য তাদের প্রশিণ দরকার। তাদের অনুশীলন দরকার এবং এর জন্য প্রশিণ দরকার তা না হলে একটি দেশ হঠাৎ করে সিঙ্গাপুর কিংবা মালেশিয়ার মতো আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠবে না। রাজপথে জনগণকে রাজপথের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রশিণ দেয়া হয়। দেশকে সূক্ষ্মভাবে পরিচালনা করার জন্য সেক্রেটারিয়েটে বসে প্রশিণ দেয়া হয় না এবং রাজপথের প্রশিণও আমরা এখন ভুলে যাচ্ছি। উদাহরণস্বরূপ বলতে হচ্ছে, কোন কারণে আজকে ২০টি বছর ডাকসুর নির্বাচন হতে দেয়া হচ্ছে না? এ প্রসঙ্গে কেউ কোনো আন্দোলন কিংবা আপত্তি তুলছে না। না বলেন সাবেক ছাত্রনেতারা, না বলেন রাজনৈতিক নেতারা। সবাই কেবল গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার দিয়ে গলা ফাটান কিন্তু গণতন্ত্রের সূতিকাগার যদি ছাত্রসমাজ হয় তাহলে সেই ছাত্রসমাজ কেন গণতন্ত্রের স্বাদ পাচ্ছে না? এর কোনো উত্তর কেউ দিচ্ছেন না। আমরা কি নিজেদের সাথে প্রতারণা করছি না? আমি আহ্বান জানাচ্ছি তরুণ সমাজকে চিন্তা করতে, তাদের মধ্যে সেই দূরদৃষ্টি কিভাবে আনা যায় তারাই চিন্তা করবেন। তাদের সাথে ইন্টারেকশন বা মিথস্ক্রিয়ায় বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি প্রবীণ এবং তরুণের সমন্বয়ে একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
লেখক : গবেষক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও চেয়ারম্যান বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
www.kallyan-ibrahim.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন