মঙ্গলবার, ৫ জুন, ২০১২

আমি থাকি খালে, আর তুমি থাকো ডালে, তোমার আমার দেখা হবে মরণকালে



খান মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী : 
ছোট সময় বড় ভাইবোন আমাদেরকে আনন্দ দেয়ার জন্য অনেক মজার মজার কথা বলতো। এগুলোকে গ্রাম্য ভাষায় বলা হয় শ্লোক। তার একটি হল খালের পাশে মরিচ গাছের মরিচ দেখে মাছ বলছে, ‘‘আমি থাকি খালে আর তুমি থাকো ডালে তোমার আমার দেখা হবে মরণকালে।’’ এ রূপক বক্তব্য থেকে আমরা বুঝতে পারি মরণ যে একদিন হবে এটা সবাই জানে। পৃথিবীতে কেউ না মরে থাকতে পারেনি। আবার কোন অন্যায়কারী আজীবন দাপট দেখাতেও পারেনি। যারা দাপুটে তারা যখন ক্ষমতায় রঙ্গীন চশমাটা পরে তখন সবই দেখে রঙ্গীন। তাই পৃথিবীটাকে তাদের রঙ্গীন ভাবতেই ভাল লাগে। এদিকে কত মানুষ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তা আর রঙ্গীন চশমায় ধরা পড়ে না। অন্যায় সে তো অন্যায়। হউক সরকারি দল কিংবা বিরোধী দল, হউক শাসক কিংবা প্রজা। সকলের অন্যায়ই তাকে ধ্বংস করবে এটা চির সত্য। আজকে আমাদের সরকার যে নির্যাতনের স্টীম রোলার চালাচ্ছে তাতে বিশ্বের দরবারে আমাদেরকে ছোট হতে হচ্ছে। আলেম উলামাদের সাথে যে অমানবিক আচরণ করছে তা বিশ্ববিবেককে নাড়া দিচ্ছে। তাদের অঙ্গসংগঠন ওলামা লীগ বলছে কাজটা ঠিক হচ্ছে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্র আজ কেবল মুখের বুলি। গণতন্ত্রের অর্থ কি বিরোধী দলকে অযথা কতগুলো মামলায় জড়িয়ে জেলে বন্দী করে রাখা? সচিবালয়ের সামনে কে বা কারা বোমা ফাটিয়ে বিরোধী দলের উপর দোষ চাপালো? আর যদি বিরোধী দলের কেউ করে থাকে তার কি কোন প্রমাণ আছে? অথচ এ জন্য বিরোধী দলের প্রায় সকল নেতার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হল, অথচ মালিবাগে প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচু করে ইকবাল সাহেব যে লোক হত্যাসহ যে ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, তার কিন্তু সচিত্র প্রমাণ রয়েছে। এর পরেও কেউ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়নি কারণ এমন একটি নোংরা কাজের নির্দেশ কোন দলের শীর্ষ নেতারা দিতেই পারেন না। কি বিএনপি, কি আওয়ামী লীগ বা অন্য কোন দল। রামপুরায় গাড়ি ভাঙ্গার মামলায় জড়ানো হয়েছিল মুজাহিদ সাহেবকে। কি বিচিত্র এদেশের রাজনীতি। দেশের স্বার্থে জনগণের সাথে যেখানে সমঝোতার সংলাপ হওয়া দরকার সেখানে দিন দিন রাজনীতি উত্তপ্ত হচ্ছে আর সংলাপ যাচ্ছে হিমাগারে। এ অবস্থার জন্য দায়ী কে বিরোধী দল নাকি সরকার? দেশের বিবেকবান লোকেরা যেমন বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ সকলেই বলছেন রাজনীতিকে সংঘাতের দিকে না নিয়ে বরং সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানো দরকার। অথচ সরকার পক্ষ থেকে এমন কোন পরিবেশই তৈরি করছে না। আমরা দেখি ছেলেমেয়েরা মারামারি করলে সেখানে যখন অভিভাবক চলে আসে তখন সবাই স্বস্তি পায় কারণ এখন আর মারামারি হবে না। আর আমাদের জাতি তার সম্পূর্ণ উল্টো দিকে চলছে। যখন সরকার আর বিরোধী দল মুখোমুখি তখন জনগণ আশা করে অভিভাবক অর্থাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসলেই আমরা একটি সুন্দর সমাধান পাব। এ আশা করাটা একেবারেই যুক্তিযুক্ত এ জন্য যে, দু'জন কিশোর যখন মারামারি করে এ অবস্থায় একজনের বাবা সেখানে হাজির হলে তিনি চড়টা মারবেন কার গালে নিজের সন্তানের নাকি অন্যের সন্তানের গালে? চূড়ান্ত সত্য কথা হলো দায়িত্বশীল বাবা-মা নিজের ছেলের গালে চড় মেরে তাকে যেমন শাসন করে থাকেন, আবার এ অবস্থা দেখে অন্যেরা শিক্ষা লাভ করে থাকে। অথচ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশায় আমরা বসে থাকি যে তিনি এসে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান দিবেন। আর যা পেয়ে থাকি তা হল, ‘‘নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না। বিরোধী দলীয় নেত্রী কি চান? তিনি কি চান আবার কোন অসুভ শক্তি ক্ষমতায় আসুক? তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে জেলে ঢুকিয়েছে তার অবিবাহিতা যুবতীদেরও রেহাই দেয়নি। বিরোধী দলীয় নেত্রী দেশের মানুষের জন্য আন্দোলন করছেন না তিনি তার দুর্নীতিগ্রস্ত সন্তানদের মুক্তির জন্য আন্দোলন করছেন। মানুষকে পুড়িয়ে মারবেন আর বলবেন গণতন্ত্রের আন্দোলন। জোট সরকার এমনভাবে দুর্নীতি করেছে এখন আমরা দেশ চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। বিদ্যুৎ তো উৎপাদন করেইনি কেবল খাম্বা তৈরি করেছে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে। আমরা জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি আমরা এখানে সাজগোছ করতে আসিনি। সর্বশেষ চমক দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। এছাড়াও আরো কত কথা উনারা সংসদে আসবেন না আবার বেতন-ভাতা ঠিক রাখার জন্য ঠিকই হাজিরা দিবেন ইত্যাদি কথাগুলো স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। সুরঞ্জিত বাবু আর কামরুল সাহেব বা মাহবুবুল আলম হানিফ সাহেব যে ভাষায় কথা বলবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার চেয়ে আরো মোলায়েম ভাষায় বলবেন এটাই কাম্য। কিন্তু কই জনাব ওবায়দুল কাদের বা অন্যান্য ব্যক্তিদের কথায় যতটুকু না আলোচনার সম্ভাবনা দেখা দেয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথায় তা বানচাল হয়ে যায়। মরিচ হয়তো নিজেকে ডাঙ্গায় দেখে ভেবেছে সে ধরা ছোঁয়ার বাইরে আর মাছ যখন তখন কারো জালে আটকা পরতে পারে তাই গৌরবে মরিচ বলেছিল আমি থাকি ডালে আর তুমি থাকো খালে। এর জবাবে মাছ উত্তর দিয়েছিল তাতে কি তোমার আমার দেখা হবে মরণকালে। আমাদের দেশের সরকারগুলো যখন ক্ষমতায় থাকে তখন মনে করে আর মনে হয় ক্ষমতা থেকে নামতে হবে না। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকার একটু বেশিই আত্মবিশ্বাসী। তারা যেমন দলীয়ভাবে একক ক্ষমতাশালী আবার ভৌগোলিকভাবেও অনুকুল অবস্থানে। সংগত কারণেই ২০২১ সালের স্বপ্ন দেখে থাকেন। এমনভাবে কথা বলে ‘‘আমরা ২১ সালের মধ্যে এই করব ঐ করব। মনে হয় জনগণ তাদেরকে ২১ সালের জন্য মেন্ডেড দিয়েছে। ক্ষমতাসীনরা এ রকমই ভাবে। ক্ষমতায় গেলে আর ভাবে না নামতে হবে আর এমন মনেই করে না। যেমন মানুষ ভাবে না মৃত্যুর কথা। কিন্তু হউক দু'দিন আগে কিংবা দু'দিন পরে তাকে কবরে যেতেই হবে। তবে কেন এত অহমিকা কেন এত দাম্ভিকতা? কেবল রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মানুষকে এত অপমান এত নির্যাতন তা আবার দাম্ভিক মনোভাব নিয়ে। এ কি কোন সভ্য সমাজের আচরণ হতে পারে? আমাদের সামাজিক মুল্যবোধ, আমাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচার যেন নির্বাসিত হতে চলেছে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া ও জাতিকে মুক্তি দেয়ার জন্য সরকার ও বিরোধী দল উভয়কেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। উভয়দলকে মনে রাখতে হবে জনগণ এখন বড়ই বেদনাতুর। আজ সাধারণ মানুষ চিৎকার করে মহান আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করছে হে প্রভু এ জালিম অধ্যুষিত জনপথ থেকে আমাদের রক্ষা কর। আমাদের জন্য তোমার পক্ষ থেকে সাহায্যকারী ও ত্রাণকর্তা নিযুক্ত কর। এ ফরিয়াদ যেন আজ জাতীয় ফরিয়াদে পরিণত হয়েছে মানুষ আজ পরিবর্তনের অপেক্ষায়। অসৎ ও ছলচাতুরির রাজনীতি যেন তাদের নিকট আজ ঘৃণার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যত শিগগির এটা বুঝা যাবে ততই জাতির জন্য মঙ্গল। মঙ্গল সরকারি ও বিরোধী দলের জন্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন