
॥ মে. জে. (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক ॥
বিগত দুইটি সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবারে প্রকাশিত কলামগুলোর ধারাবাহিকতায় এই কলামটি লিখছি। আশা করি ১৯৯৬ সালের মে মাসের ২০ তারিখের ঘটনা প্রসঙ্গে অতি সংপ্তি বর্ণনা এবং মূল্যায়ন আজকের কলামের মাধ্যমে শেষ করতে পারব। ধারাবাহিক আলোচনার যেখানে এসে আমরা আলোচনা স্থগিত রেখেছিলাম সেটা ছিল এ রকম : বিভিন্ন সেনানিবাস থেকে সৈন্যদল রওনা দিয়েছিল। কেন সৈন্যদল রওনা দিয়েছিল, প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য কী কারণ ছিল, সেগুলো কিঞ্চিৎ আলোচনা করেছিলাম।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে আরেক স্থানে কোনো সৈন্য দলকে গমনাগমনের জন্য আদেশ করতে পারেন। তিনটি কারণে এ আদেশ দেয়া যেতে পারে। সম্ভাব্য প্রথম কারণ অপারেশনাল প্রয়োজন, দ্বিতীয় কারণ প্রশিণসংক্রান্ত প্রয়োজন এবং তৃতীয় কারণ প্রশাসনিক প্রয়োজন। প্রথমে অপারেশনাল কারণের বিষয়ে বলছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী গোষ্ঠী (যার নাম ছিল ‘শান্তি বাহিনী’), এর বিরুদ্ধে কর্তব্য পালনের জন্য বাংলাদেশের কোনো একটি স্থান থেকে একটি ব্যাটালিয়ন বা রেজিমেন্টকে চলাচলের জন্য আদেশ করা। আরো একটি উদাহরণ দেয়া যায়; যেমন কক্সবাজার জেলার দণি-পূর্ব সীমান্তে নাফ নদীর তীরে কাউকে না কাউকে পাঠানো যেতে পারে, যদি মিয়ানমারের প থেকে কোনো হুমকি থাকে তা মোকাবেলার জন্য। অথবা আমাদের অন্য কোনো প্রতিবেশী যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমান্তের কাছাকাছি কোনো গ্রাম বা জায়গা দখল করে নেয় এবং সেই দখলদার বাহিনীকে হটিয়ে দেয়ার জন্য যদি সাবেক বিডিআর বা বর্তমানের বিজিবি সমর্থ না হয়, তাহলে সেখানে সেনাবাহিনীর সেনাদল পাঠানো যেতে পারে। অথবা আরেকটি উদাহরণ দেইÑ ময়মনসিংহ শহরে এত গণ্ডগোল হচ্ছে যে, স্থানীয় পুলিশ বা পুলিশের সহায়তাকারী বিজিবি ওই পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না, এমনকি ময়মনসিংহ সেনানিবাসে মজুদ সেনাবাহিনী নিয়োজিত হওয়ার পরও পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে না, তাহলে নিকটবর্তী অন্য কোনো সেনানিবাস, যেমন টাঙ্গাইল বা ঢাকা থেকে সেনাবাহিনীর সেনাদল পাঠানো যেতে পারে। দ্বিতীয় প্রকৃতির সেনা চলাচলের উদাহরণ হলো, প্রশিণের জন্য চলাচল। কয়েক বছর আগেও যশোর সেনানিবাস থেকে বেঙ্গল রেজিমেন্টের অনেক সৈনিক সুদীর্ঘ রেল ভ্রমণের মাধ্যমে শান্তাহার, ময়মনসিংহ, ভৈরব, আখাউড়া, ফেনী ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন হয়ে চট্টগ্রাম শহরের ১২ মাইল উত্তরে হাটহাজারী রেলস্টেশন পর্যন্ত যেত। ওখানে রেলগাড়ি থেকে নেমে এক মাইল পশ্চিমে ফায়ারিং রেঞ্জে যেতে হয়। কারণ হাটহাজারীতেই দূরপাল্লার ফায়ারিং অনুশীলনের একমাত্র রেঞ্জ ছিল। অল্প দূরত্বেও প্রশিণের জন্য চলাচল করা হয়। শীতকালে ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারিতে প্রায় সব সেনানিবাস থেকেই সেনাদল বের হয়ে চলে যায় কাছে বা দূরে মফস্বল এলাকায়, যেখানে উপযুক্ত স্থান বেছে নিয়ে তারা শীতকালীন অনুশীলনে অংশগ্রহণ করে। তৃতীয় প্রকারের চলাচলের উদাহরণ হচ্ছে, প্রশাসনিক কাজের জন্য চলাচল। ঢাকা মহানগরের তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে ১৬ ডিসেম্বরের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এই কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের জন্য সাভার সেনানিবাস থেকে ঢাকা মহানগরে আগমনের কাজটি প্রশাসনিক চলাচলের উদাহরণ।
১৯৯৬ সালের ২০ মে ঢাকা থেকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নাসিম ময়মনসিংহে অবস্থানরত জিওসি মেজর জেনারেল আইনুদ্দিন বীরপ্রতীক, বগুড়ায় অবস্থানরত জিওসি মেজর জেনারেল গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান বীরবিক্রম এবং যশোরের জিওসি মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীককে আদেশ দেন ঢাকার উদ্দেশ্যে সৈন্যদল পাঠানোর জন্য। আদেশটি মৌখিক ছিল। কেউ মৌখিক আদেশে সৈন্য প্রেরণ করেন, কেউ করেননি। লিখিত আদেশ অপরাহ্ণে পাওয়া যায়। যশোরে লিখিত আদেশ পৌঁছেছিল ফ্যাক্স মারফত অপরাহ্ণ ৪ ঘটিকার পর। ওই সময়ের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ড কন্ট্রোল তথা নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত পরিস্থিতিটি কী রকম বিদঘুটে ও জটিল ছিল সেটি নিম্নলিখিত বর্ণনা থেকে বোঝা যাবে।
ময়মনসিংহ থেকে সৈন্যবাহিনী রওনা দিয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে যশোর ও বগুড়া থেকেও রওনা হয়ে গিয়েছে, তোমরা তাড়াতাড়ি যাও। বগুড়া থেকে রওনা দেয়ার সময় বলা হয়েছে, যশোরের লোকেরা দৌলতদিয়া থেকে আরিচার উদ্দেশে ফেরিতে উঠে গেছে; তোমরা তাড়াতাড়ি যাও। যশোরকে বলা হচ্ছে, ময়মনসিংহের সৈন্যরা জয়দেবপুরের কাছে চলে এসেছে, বগুড়ার সৈন্যরা আরিচা আসার উদ্দেশ্যে নগরবাড়ী থেকে ফেরিতে উঠছে। কিন্তু তোমরা যশোরের লোকেরা এখনো লিখিত আদেশের জন্য পীড়াপীড়ি করছ। ইতঃপূর্বে ২০ মে ১৯৯৬ সকাল বেলায়, সাভার সেনানিবাস থেকে সৈন্যবাহিনী আরিচা ফেরিঘাটে গিয়ে সব ফেরি দখল করে নেয় যেন বগুড়ার সেনারা নগরবাড়ী থেকে বা যশোরের সেনারা দৌলতদিয়া থেকে ফেরিতে উঠতে না পারে। সাভার থেকে সৈন্যবাহিনী জয়দেবপুর চৌরাস্তায় গিয়ে অবস্থান নেয় যেন ময়মনসিংহের সৈন্যদল ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে। কুমিল্লার জিওসি যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তিনি সব দিকে যোগাযোগ করছিলেন এবং যেখানে সম্ভব বলছিলেন, শান্ত থাকতে এবং বুঝে শুনে পদপে নিতে। চট্টগ্রামের জিওসি যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, তিনি ওই মুহূর্তে ছিলেন চট্টগ্রাম থেকে অনেক দূরে তার বাড়িতে। সাভারের জিওসিও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তিনি প্রত্যভাবে রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের নির্দেশ মোতাবেক সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নাসিমের বিপে পদপে নিচ্ছিলেন।
সাধারণত বেলা ২টার সময় সেনাবাহিনীর সদর দফতরের অফিস ছুটি হয়। ছুটির আগে দুপুরবেলা সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নাসিম ঢাকা সেনানিবাসে চাকরিরত সব অফিসারকে একটি সম্মেলনে বা আলোচনা সভায় দাওয়াত দেন; স্থান ছিল সেনাকুঞ্জ। সেখানে তিনি সংপ্তিভাবে পরিস্থিতি তুলে ধরেন। উপস্থিত অফিসারদের মধ্যে একজন অফিসার প্রশ্ন করেছিলেন অনেকটা এ রকম, ‘আপনাকে যদি সরকার এখন অপসারণ করে তখন আপনি কী করবেন?’ উত্তরে জেনারেল নাসিম অনেকটা এ রকম বলেছিলেন, ‘তখন আপনারা আছেন, আপনারা বুঝবেন, আপনারা দেখবেন।’ বাস্তবেই এ রকম একটি ঘটনা ওই দিন ঘটেছিল। ২০ মে ১৯৯৬ তারিখে অফিস ছুটির কিছু আগে তৎকালীন চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ বা সিজিএস মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান (যিনি পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হয়েছেন, সেনাবাহিনী প্রধান হয়েছেন, অবসর জীবনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েছেন এবং বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য) অফিস থেকে বের হয়ে ধীরগতিতে বাসায় চলে গেলেন। তার কিছুণ পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে ঘোষণা করলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নাসিমকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে তথা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং তার বদলে মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানকে অস্থায়ীভাবে বা আগামী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সেনাপ্রধান নিযুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা সেনানিবাসে কয়েকটি ব্রিগেড আছে যেগুলোকে স্বতন্ত্র ব্রিগেড বলা হয় এবং এরা সরাসরি সেনাবাহিনী প্রধানের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এইরূপ একটি স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নাসিমের রাষ্ট্রপতির প্রতিকূলে প্রদত্ত নির্দেশ মানতে সম্মত ছিলেন না, আবার প্রত্যভাবে বলতেও পারছিলেন না যে, মানব না। তাই সেই ব্রিগেড কমান্ডার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলেন। সেনাবাহিনী প্রধান এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা ব্রিগেড কমান্ডারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে অন্য একজন ব্রিগেডিয়ারকে এই দায়িত্ব দিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেনাবাহিনী প্রধান কর্তৃক নতুন ব্রিগেড কমান্ডার নিযুক্ত হলেও ওই স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের অন্তর্ভুক্ত ব্যাটালিয়ন কমান্ডার তথা অফিসার ও সৈনিকদের কাছে তিনি আন্তরিকতার আঙ্গিকে অগ্রহণযোগ্য ছিলেন। অপর একটি স্বতন্ত্র ব্রিগেড ছিল ‘ইঞ্জিনিয়ার স্বতন্ত্র ব্রিগেড’। এই ব্রিগেড কমান্ডার স্বচ্ছভাবেই রাষ্ট্রপতির আদেশ পালন করলেন, সেনাবাহিনী প্রধানের বিপ।ে এই অজুহাতে জেনারেল নাসিম, সেই স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড কমান্ডারকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে নতুন একজন ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডিয়ারকে ব্রিগেড কমান্ডার নিযুক্ত করলেন। নিযুক্ত হলেও নতুন ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডিয়ার দিনের অবশিষ্ট সময়ে কার্যকরভাবে দায়িত্ব বুঝে নিতে পারেননি প্রতিকূল পরিবেশের কারণে। আরেকটি স্বতন্ত্র ব্রিগেড হলো সিগন্যাল ব্রিগেড। তারা সেনাবাহিনী প্রধান প থেকে যেই দু-একটি ুদ্র আদেশ পেয়েছিলেন সেগুলো পালন করলেন।
সেই ১৯৯৬ সালের কথা। সেনাবাহিনী সদর দফতরে অন্তত পাঁচজন মেজর জেনারেল র্যাংকের অফিসার কর্মরত থাকতেন ওই আমলে, সেনাবাহিনী প্রধানের নিচে। একজন হতেন সামরিক বাহিনীর প্রধান প্রকৌশলী তথা ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ। অপরজন চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ বা সিজিএস। তৃতীয়জন অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল বা এজি। চতুর্থজন মাস্টার জেনারেল অব অর্ডন্যান্স বা এমজিও এবং পঞ্চমজন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল বা কিউএমজি। ওই আমলে, এই পাঁচজনের মধ্যে একজন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। উদাহরণস্বরূপ মেজর জেনারেল হারুন-অর-রশীদ বীরপ্রতীক, যিনি ছিলেন কিউএমজি। মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুবাদে তিনি ছিলেন জেনারেল নাসিমের সশরীরে অতি নিকটে অবস্থিত একজন শুভাকাক্সী। ২০ মে ১৯৯৬ সারা দিনই তিনি জেনারেল নাসিমের অফিসে বসেই সর্বপ্রকার সহযোগিতা প্রদান করেন জেনারেল নাসিমকে। এ দিকে স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের পুরনো কমান্ডারকে বিদায় দিয়ে নতুন কমান্ডারকে অবস্থান গ্রহণে সহায়তা করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল গোলাম কাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়, সেনাবাহিনী প্রধান কর্তৃক।
ঘটনা দ্রুত ঘটে যাচ্ছিল। রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সেনাবাহিনী প্রধান অপসারিত হওয়ার পর, জেনারেল মাহবুব কার্যকরভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঝুলন্ত কমান্ডে ছিল (মহান আল্লাহ তায়ালা যেন এ রকম আর কোনো সময় না করেন)। ২০ মে সন্ধ্যার পর কোনো এক সময়, জেনারেল নাসিম সম্মত হন নিজের অফিস থেকে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে অনিশ্চয়তার পথে পদপে নিতে। তখন প্রয়োজন হয় নতুন সেনাবাহিনী প্রধানের, সেনাবাহিনীর সদর দফতরে সেনাবাহিনী প্রধানের অফিসে এসে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। পুরনো সেনাবাহিনী প্রধান এবং নতুন সেনাবাহিনী প্রধান উভয়ের মধ্যে সাঁকো নির্মাণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সহায়তা করতে নির্দেশ দেয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল গোলাম কাদেরকে এবং মেজর জেনারেল হারুন-অর-রশীদ বীরপ্রতীককে। উভয়েই নিজ দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করেছিলেন; কিন্তু দু’জনের ভাগ্যে বিপরীতধর্মী পুরস্কার জোটে।
২০ মে ১৯৯৬ সালের সারা দিনের ঘটনাটি বিয়োগান্ত পরিণতি হয় কারো কারো জন্য এবং ইতিবাচক পরিণতি হয় কারো কারো জন্য। দেশে শান্তি বজায় থাকে, সৈন্যদের একে অপরকে গুলি করতে হয়নি, আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া। ওই রাতেই বগুড়ার জিওসি মেজর জেনারেল গোলাম হেলাল মোর্শেদ খানকে বগুড়াতে, মেজর জেনারেল আইনুদ্দিনকে ময়মনসিংহে এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাসিমকে ঢাকা সেনানিবাসে বন্দী করা হয়। আরো কয়েকজন অফিসারকে বন্দী করা হয়েছিল। তারা ব্রিগেডিয়ার বা এর নিচের র্যাংকের, এখানে নাম উল্লেখ করলাম না। ২০ মে আনুমানিক রাত ১০টা থেকে মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান কার্যকরভাবে সেনাবাহিনীর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেন। পরের দিন ব্যস্ত ও উদ্বেগসঙ্কুলভাবে কাটলেও কোনো অঘটন ঘটেনি। ২১ মে দিবাগত রাত ১২টার পাঁচ মিনিট আগে বঙ্গভবন থেকে রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস টেলিফোন করেছিলেন সেনাবাহিনীর সদর দফতরের পদাতিক পরিদফতরের পরিচালক তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ মতিউর রহমান বীরপ্রতীককে। রাষ্ট্রপতি টেলিফোনেই তাকে মেজর জেনারেল র্যাংকে সরাসরি প্রমোশন দেন। টেলিফোনেই তাকে জানিয়ে দেন, ‘আগামীকাল সকাল থেকে আপনি একটি কোর্ট অব ইনকোয়ারির প্রেসিডেন্ট হবেন, আপনার সাথে আরো দু-তিনজন থাকবেন, অতিসত্বর তদন্ত করে রিপোর্ট দেবেন ২০ মের ঘটনার কারণ কী, কারা দায়ী এবং কী শাস্তি দেয়া উচিত ইত্যাদি।’ কোর্ট অব ইনকোয়ারি মানে একটি তদন্ত আদালত; আদালত হলেও তারা শাস্তি দেয় না বা বিচার করে না, তারা শুধু সুপারিশ করতে পারে। অতঃপর সেনাবাহিনীতে জ্যেষ্ঠ র্যাংকে প্রচুর রদবদল ঘটে যায়।
বলে রাখা ভালো যে, ১০ জুন ১৯৯৬ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল (এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল)। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি অংশ বলছিল, নির্বাচনকে প্রভাবান্বিত করার জন্য অপরপ সেনাবাহিনীর মধ্যে এই ধরনের কাণ্ড-কারখানা ঘটিয়েছে। নির্বাচনের আগে বড় দু’টি দলের পে প্রচারণার সময় ২০ মে ঘটনাটি কোনো জায়গায় পরোভাবে আবার কোনো জায়গায় প্রত্যভাবে আলোচনায় বা ভাষণে আসে। কোনো কোনো জায়গায় এমন প্রচারণা হয়েছিল যে, মুক্তিযোদ্ধা নাসিমকে বাঁচাতে হলে নৌকায় ভোট দাও। যা হোক, বাস্তবে নির্বাচন হলো এবং ফলাফলে দেখা গেল, আওয়ামী লীগ সামান্য ব্যবধানে জয়লাভ করেছে। ওই আমলের রাষ্ট্রপতি ও প্রতিরা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব, জনাব আবদুর রহমান বিশ্বাস তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিলেন ২০ মে প্রসঙ্গটির ইতি টানতে।
১২ থেকে নিয়ে ১৭ তারিখ পর্যন্ত সময়ে ১৫ জন অফিসারকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে বিদায় দেয়া হয়। কিছু সংখ্যককে বরখাস্ত করা হয়, কিছু সংখ্যককে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। মেজর জেনারেল গোলাম কাদের, মেজর জেনারেল এজাজ আহমেদ চৌধুরী, মেজর জেনারেল ইবরাহিম প্রমুখ বাধ্যতামূলক অবসর পান। মেজর জেনারেল হারুন-অর-রশীদকে রেখে দেয়া হয়েছিল, পরে আওয়ামী লীগ আমলে যিনি সিজিএস ও সেনাবাহিনী প্রধান এবং ২০০১ সালে বিএনপি আমলে অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন এবং অবসর জীবনে বহু আলোচিত ডেসটিনি গ্র“পের সভাপতি ও প্রখ্যাত সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হয়েছিলেন। যাকে নিয়ে এত কিছু, যার জন্য ‘রাজা বা বাদশাহ’ নাসিম (প্রতীকী অর্থে) তার সিংহাসন ও রাজ্য সবই হারিয়েছিলেন, সেই প্রিয় উজির (প্রতীকী অর্থে) মেজর জেনারেল গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান বরখাস্ত হয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ আমলে বরখাস্তের বদলে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এবারের আওয়ামী লীগ আমলে তিনি যুগপৎ মনোনীত ও নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ডার তথা সরকারের এক হাত দূরত্বের ব্যক্তিত্ব! সেই ১৯৯৬ সালে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চাকরিরত কোনো ব্রিগেডিয়ার বা মেজর জেনারেলের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন কী করেননি, সেটা কোর্ট অব ইনকোয়ারির বিবরণে আছে। সেই আমলের সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম বীরবিক্রম পরে অবসর জীবনে একটি বই লিখেছেন। ওই আমলের যিনি প্রতিরা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর বা ডিজিএফআই প্রধান ছিলেন এবং জেনারেল নাসিমের প্রতিকূলে অন্যতম শক্তি ছিলেন, সেই মেজর জেনারেল মো: আবদুল মতিন বীরপ্রতীক নিজেও একটি বই লিখেছেন। উভয় বইয়ে ভিন্নধর্মী ও বিপরীতধর্মী বক্তব্য আছে। আগ্রহী পাঠক বইগুলো পড়তে পারবেন। আমার জীবনে লেখা প্রথম বই ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত, নাম ‘সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে আটাশ বছর’-এ ১৯৯৬ প্রসঙ্গে দীর্ঘ বক্তব্য আছে। আমার লেখা ১১তম তথা সর্বশেষ বই ‘মিশ্র কথন’ যেটা ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়েছে। সেটাতে এই প্রসঙ্গে সংপ্তি বক্তব্য আছে। ১৯৯৬ সালে অবসর পাওয়ার পরে যখন নিজের ভাগ্য নিয়ে গবেষণা(!) করছিলাম তখন শুনেছিলাম যে, তখনকার বিরোধী শিবিরের দুইজন রাজনৈতিক কনিষ্ঠ নেতা এবং একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বগুড়ার জিওসির সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এবং যোগাযোগ রাখতেন; এমনকি সশরীরেও দেখাসাাৎ হয়েছে। তাদের মধ্যে শুধু একজন এই মুহূর্তে রাজনৈতিক সুস্বাস্থ্যে আছেন বলে জানি, অর্থাৎ সেই ১৯৯৬-এর পরিশ্রমের উপযুক্ত পুরস্কার পেয়েছেন, একজন অবহেলিত হয়েছেন, আরেকজন দূরে নিপ্তি।
১৯৯৬ সালের মে মাসের ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনীতে কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল বা নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের আঙ্গিকে একটি অপ্রিয় বৈশিষ্ট্য আগমন করে। কোনো জ্যেষ্ঠ অধিনায়ক তার কোনো কনিষ্ঠকে কোনো হুকুম দিলে, ওই কনিষ্ঠ অফিসারের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় যে, হুকুমটির কোন জায়গা থেকে উৎপত্তি? অতীতে সেনাবাহিনীর কোনো স্তরের কোনো ব্যক্তিত্ব তার অধিনায়কের প্রশ্নের প্রোপট বা উৎপত্তিস্থল বা আন্তরিকতা নিয়ে চিন্তাও করতেন না। কিন্তু ১৯৯৬ সালের পর এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুরু হয়। যেহেতু ১৫ জুন ১৯৯৬ সাল থেকে আমি আর সেনাবাহিনীতে নেই; সেহেতু নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না, এখন কী অবস্থা। অথবা কিছুটা অনুভূতি আমার মধ্যে থাকলেও, স্পর্শকাতরতার কারণে সেটা প্রকাশ করব না।
গত ১৮ মাসে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষত আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর অংশে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক গণবিস্ফোরণ হয়েছে। এটা এক দিনে হয়নি, সময় নিয়ে হয়েছে। গণবিস্ফোরণ চলাকালে সে দেশের পুলিশ বাহিনী ও প্রতিরা বাহিনীর সদস্যরা প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছিলেন। ওই কারণে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও প্রতিরা বাহিনীর সদস্য, জ্যেষ্ঠ অফিসারসহ, গণবিস্ফোরণে জনগণের কাতারে নিজেদের নাম লেখায় তথা সরকারের বিরুদ্ধে তথা সরকারের দমননীতি ও গণবিরোধী নীতিগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন। এই ধরনের পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং একাধিক আঙ্গিকে পরিহারযোগ্য। পরিহার করতে হলে একাধিক মহলকে সচেতন থাকতে হয়। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের ঘটনাবলির প্রতি সচেতন কলাম-পাঠকদের (যাদের বয়সে কুলায়) স্মৃতি ফিরিয়ে নিচ্ছি। সেই সময়ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রচণ্ড চাপে ছিল। আমার লেখা বই ‘মিশ্র কথন’-এ প্রসঙ্গটি আলোচনা করেছি।
তখনকার আমলে যেমন, এখনো এই কথাটি সত্য যে, দেশ আগে, রাজনৈতিক দল পরে এবং সবশেষে ব্যক্তি। ‘দেশ’ বলতে বোঝায় মাটি ও মানুষ। যখন মাটি ও মানুষ বিপন্ন হয় তখন দেশপ্রেমিক ব্যক্তি মাত্রই উদ্বেগাড়–ল হয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার ও সৈনিকেরা এরূপ একটি ক্রান্তিলগ্নে ছিলেন। তখন বেঙ্গল রেজিমেন্টগুলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। অনেক বাঙালি অফিসার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিকূল পরিবেশে থেকেও বিদ্রোহ করেছিলেন, সেনাবাহিনীতে, সিভিল সার্ভিসে, কূটনৈতিক সার্ভিসে, পুলিশ বাহিনীতে, স্বাস্থ্য সার্ভিসে। কথায় কথায় আমরা যেমন বলি সেই রামও নেই সেই অযোধ্যাও নেই। অনুরূপ এটাও বলা যায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগ, এটা মোবাইল ফোনের যুগ, অরেঞ্জ রেভ্যুলুশনের যুগ, এটা টিউলিপ রেভ্যুলুশনের যুগ, আরব বসন্তের যুগ। এই যুগটা আসলে কিসের যুগ, তা পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুধাবনের ওপর নির্ভর করে।
আমার উপসংহার কী? বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের চেতনাগুলোকে রা করতে হবে। পুনশ্চ, এই প্রসঙ্গে প্রকাশিত এর আগের কলামগুলো নয়া দিগন্তের ওয়েবসাইটের আর্কাইভে অথবা আমার নিজের (www.kallyan-ibrahim.com) ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সামরিক বাহিনী অনেক দূর এগিয়েছে। বিশ্বে সুপরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্মদিন থেকেই (২৬ মার্চ ১৯৭১ অথবা ২১ নভেম্বর ১৯৭১ অথবা ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ অথবা ১৪ এপ্রিল ১৯৭১Ñ যেই তারিখটিই ধরেন না কেন) সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে করতে ১৯৯৬ সালের জুন মাসের ১৫ তারিখ বাধ্যতামূলক অবসর পেয়েছি। আজ থেকে ১৪-১৫ দিন আগের কলামে লিখেছি, একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করার জন্য প্যারিস গিয়েছিলাম এবং ফিরতি পথে পবিত্র ওমরাহ-হজ পালন করার জন্য জেদ্দা হয়ে আসার পরিকল্পনা ছিল। জেদ্দা বিমানবন্দরের ভেতর থেকে বের হয়েই দেখা পেয়েছিলাম ইঞ্জিনিয়ার হুমায়ূন কবির ভুঁইয়ার নেতৃত্বে কয়েকজন বন্ধু এবং জেদ্দায় বাংলাদেশ কনসুলেটের একজন সম্মানিত দ্বিতীয় সচিবের। ঢাকা থেকে আমার পরিবারের টেলিফোন পেয়ে বন্ধুরা জেনে গিয়েছিলেন আমার অবসরপ্রাপ্তির খবর (আমি জানার আগেই)। আমার পাশে থেকে মানসিক স্বস্তি প্রদানের জন্যই তারা বিমানবন্দরে ছিলেন, কিন্তু জানতাম না কেন হঠাৎ এত বন্ধু এসেছে? দ্বিতীয় সচিবের সাথে জেদ্দা মহানগরীতে অবস্থিত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল জনাব মোহসিন আলী খানের বাসভবনে যাই (জনাব মোহসিন পরে রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন)। সেখানে গিয়ে এক পৃষ্ঠা কাগজ পাই যেখানে লেখা ছিল আমার অবসরপ্রাপ্তির আদেশ। পরবর্তী তিন ঘণ্টার মধ্যে আমি ‘এহরাম’ পরিহিত অবস্থায়, মহান আল্লাহ তায়ালার ঘর পবিত্র কাবা শরিফের দেয়ালের সামনে ছিলাম। আবেগে ভরপুর কণ্ঠে বলেছিলাম আল্লাহ তায়ালাকে অনেকটা এ রকম : ‘আপনি চাকরি দিয়েছিলেন, চাকরিজীবনে অনেক সম্মান দিয়েছেন, আপনি সেই চাকরি ফিরিয়ে নিলেন, আপনার প্রতি শুকরিয়া এবং এত তাড়াতাড়ি শুকরিয়া জানানোর জন্য আপনার ঘরের সামনে উপস্থিত থাকতে পারছি, তার জন্যও শুকরিয়া। তবে, হে মহান আল্লাহ তায়ালা, আপনি সর্বজ্ঞানী এবং অন্তর্যামী; আপনার সামনে সাী দিচ্ছি, যে কথিত অপরাধে আমাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে, আমি সেই অপরাধ করিনি। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করিনি। আগামী দিনে তোমারই সাহায্যে এবং তোমারই দয়ায় দেশের ও দশের কাজে লিপ্ত থাকতে চাই এবং সম্মানের সাথে থাকতে চাই। তুমি ইজ্জত দেয়ার মালিক এবং বিচারের মালিক। দোষীদের প্রসঙ্গে তুমিই সিদ্ধান্ত নিয়ো। তোমারই দয়ায় মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিতে পেরেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যেই সেনাবাহিনী ও দেশ সৃষ্টিতে জড়িত ছিলাম, সে সেনাবাহিনী ও দেশকে তুমি হেফাজত করো। ষোলো বছর পর ২২ মে ২০১২ তারিখে তথা আজকে এ লেখা পাঠক পড়ছেন; এ দিনও একটিই বড় প্রার্থনা ও একটিই বড় অঙ্গীকার করছি। প্রার্থনাটি হলো, আল্লাহ যেন সেনাবাহিনী ও দেশকে হেফাজত করেন। অঙ্গীকার হলো, দেশের জন্য তথা মানুষের জন্যই রাজনীতিতে এসেছি, রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চাই, তার জন্য পরিশ্রম করেই যাবো।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
বিগত দুইটি সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবারে প্রকাশিত কলামগুলোর ধারাবাহিকতায় এই কলামটি লিখছি। আশা করি ১৯৯৬ সালের মে মাসের ২০ তারিখের ঘটনা প্রসঙ্গে অতি সংপ্তি বর্ণনা এবং মূল্যায়ন আজকের কলামের মাধ্যমে শেষ করতে পারব। ধারাবাহিক আলোচনার যেখানে এসে আমরা আলোচনা স্থগিত রেখেছিলাম সেটা ছিল এ রকম : বিভিন্ন সেনানিবাস থেকে সৈন্যদল রওনা দিয়েছিল। কেন সৈন্যদল রওনা দিয়েছিল, প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য কী কারণ ছিল, সেগুলো কিঞ্চিৎ আলোচনা করেছিলাম।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে আরেক স্থানে কোনো সৈন্য দলকে গমনাগমনের জন্য আদেশ করতে পারেন। তিনটি কারণে এ আদেশ দেয়া যেতে পারে। সম্ভাব্য প্রথম কারণ অপারেশনাল প্রয়োজন, দ্বিতীয় কারণ প্রশিণসংক্রান্ত প্রয়োজন এবং তৃতীয় কারণ প্রশাসনিক প্রয়োজন। প্রথমে অপারেশনাল কারণের বিষয়ে বলছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী গোষ্ঠী (যার নাম ছিল ‘শান্তি বাহিনী’), এর বিরুদ্ধে কর্তব্য পালনের জন্য বাংলাদেশের কোনো একটি স্থান থেকে একটি ব্যাটালিয়ন বা রেজিমেন্টকে চলাচলের জন্য আদেশ করা। আরো একটি উদাহরণ দেয়া যায়; যেমন কক্সবাজার জেলার দণি-পূর্ব সীমান্তে নাফ নদীর তীরে কাউকে না কাউকে পাঠানো যেতে পারে, যদি মিয়ানমারের প থেকে কোনো হুমকি থাকে তা মোকাবেলার জন্য। অথবা আমাদের অন্য কোনো প্রতিবেশী যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমান্তের কাছাকাছি কোনো গ্রাম বা জায়গা দখল করে নেয় এবং সেই দখলদার বাহিনীকে হটিয়ে দেয়ার জন্য যদি সাবেক বিডিআর বা বর্তমানের বিজিবি সমর্থ না হয়, তাহলে সেখানে সেনাবাহিনীর সেনাদল পাঠানো যেতে পারে। অথবা আরেকটি উদাহরণ দেইÑ ময়মনসিংহ শহরে এত গণ্ডগোল হচ্ছে যে, স্থানীয় পুলিশ বা পুলিশের সহায়তাকারী বিজিবি ওই পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না, এমনকি ময়মনসিংহ সেনানিবাসে মজুদ সেনাবাহিনী নিয়োজিত হওয়ার পরও পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে না, তাহলে নিকটবর্তী অন্য কোনো সেনানিবাস, যেমন টাঙ্গাইল বা ঢাকা থেকে সেনাবাহিনীর সেনাদল পাঠানো যেতে পারে। দ্বিতীয় প্রকৃতির সেনা চলাচলের উদাহরণ হলো, প্রশিণের জন্য চলাচল। কয়েক বছর আগেও যশোর সেনানিবাস থেকে বেঙ্গল রেজিমেন্টের অনেক সৈনিক সুদীর্ঘ রেল ভ্রমণের মাধ্যমে শান্তাহার, ময়মনসিংহ, ভৈরব, আখাউড়া, ফেনী ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন হয়ে চট্টগ্রাম শহরের ১২ মাইল উত্তরে হাটহাজারী রেলস্টেশন পর্যন্ত যেত। ওখানে রেলগাড়ি থেকে নেমে এক মাইল পশ্চিমে ফায়ারিং রেঞ্জে যেতে হয়। কারণ হাটহাজারীতেই দূরপাল্লার ফায়ারিং অনুশীলনের একমাত্র রেঞ্জ ছিল। অল্প দূরত্বেও প্রশিণের জন্য চলাচল করা হয়। শীতকালে ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারিতে প্রায় সব সেনানিবাস থেকেই সেনাদল বের হয়ে চলে যায় কাছে বা দূরে মফস্বল এলাকায়, যেখানে উপযুক্ত স্থান বেছে নিয়ে তারা শীতকালীন অনুশীলনে অংশগ্রহণ করে। তৃতীয় প্রকারের চলাচলের উদাহরণ হচ্ছে, প্রশাসনিক কাজের জন্য চলাচল। ঢাকা মহানগরের তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে ১৬ ডিসেম্বরের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এই কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণের জন্য সাভার সেনানিবাস থেকে ঢাকা মহানগরে আগমনের কাজটি প্রশাসনিক চলাচলের উদাহরণ।
১৯৯৬ সালের ২০ মে ঢাকা থেকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নাসিম ময়মনসিংহে অবস্থানরত জিওসি মেজর জেনারেল আইনুদ্দিন বীরপ্রতীক, বগুড়ায় অবস্থানরত জিওসি মেজর জেনারেল গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান বীরবিক্রম এবং যশোরের জিওসি মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীককে আদেশ দেন ঢাকার উদ্দেশ্যে সৈন্যদল পাঠানোর জন্য। আদেশটি মৌখিক ছিল। কেউ মৌখিক আদেশে সৈন্য প্রেরণ করেন, কেউ করেননি। লিখিত আদেশ অপরাহ্ণে পাওয়া যায়। যশোরে লিখিত আদেশ পৌঁছেছিল ফ্যাক্স মারফত অপরাহ্ণ ৪ ঘটিকার পর। ওই সময়ের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ড কন্ট্রোল তথা নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত পরিস্থিতিটি কী রকম বিদঘুটে ও জটিল ছিল সেটি নিম্নলিখিত বর্ণনা থেকে বোঝা যাবে।
ময়মনসিংহ থেকে সৈন্যবাহিনী রওনা দিয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে যশোর ও বগুড়া থেকেও রওনা হয়ে গিয়েছে, তোমরা তাড়াতাড়ি যাও। বগুড়া থেকে রওনা দেয়ার সময় বলা হয়েছে, যশোরের লোকেরা দৌলতদিয়া থেকে আরিচার উদ্দেশে ফেরিতে উঠে গেছে; তোমরা তাড়াতাড়ি যাও। যশোরকে বলা হচ্ছে, ময়মনসিংহের সৈন্যরা জয়দেবপুরের কাছে চলে এসেছে, বগুড়ার সৈন্যরা আরিচা আসার উদ্দেশ্যে নগরবাড়ী থেকে ফেরিতে উঠছে। কিন্তু তোমরা যশোরের লোকেরা এখনো লিখিত আদেশের জন্য পীড়াপীড়ি করছ। ইতঃপূর্বে ২০ মে ১৯৯৬ সকাল বেলায়, সাভার সেনানিবাস থেকে সৈন্যবাহিনী আরিচা ফেরিঘাটে গিয়ে সব ফেরি দখল করে নেয় যেন বগুড়ার সেনারা নগরবাড়ী থেকে বা যশোরের সেনারা দৌলতদিয়া থেকে ফেরিতে উঠতে না পারে। সাভার থেকে সৈন্যবাহিনী জয়দেবপুর চৌরাস্তায় গিয়ে অবস্থান নেয় যেন ময়মনসিংহের সৈন্যদল ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে। কুমিল্লার জিওসি যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তিনি সব দিকে যোগাযোগ করছিলেন এবং যেখানে সম্ভব বলছিলেন, শান্ত থাকতে এবং বুঝে শুনে পদপে নিতে। চট্টগ্রামের জিওসি যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, তিনি ওই মুহূর্তে ছিলেন চট্টগ্রাম থেকে অনেক দূরে তার বাড়িতে। সাভারের জিওসিও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তিনি প্রত্যভাবে রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের নির্দেশ মোতাবেক সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নাসিমের বিপে পদপে নিচ্ছিলেন।
সাধারণত বেলা ২টার সময় সেনাবাহিনীর সদর দফতরের অফিস ছুটি হয়। ছুটির আগে দুপুরবেলা সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নাসিম ঢাকা সেনানিবাসে চাকরিরত সব অফিসারকে একটি সম্মেলনে বা আলোচনা সভায় দাওয়াত দেন; স্থান ছিল সেনাকুঞ্জ। সেখানে তিনি সংপ্তিভাবে পরিস্থিতি তুলে ধরেন। উপস্থিত অফিসারদের মধ্যে একজন অফিসার প্রশ্ন করেছিলেন অনেকটা এ রকম, ‘আপনাকে যদি সরকার এখন অপসারণ করে তখন আপনি কী করবেন?’ উত্তরে জেনারেল নাসিম অনেকটা এ রকম বলেছিলেন, ‘তখন আপনারা আছেন, আপনারা বুঝবেন, আপনারা দেখবেন।’ বাস্তবেই এ রকম একটি ঘটনা ওই দিন ঘটেছিল। ২০ মে ১৯৯৬ তারিখে অফিস ছুটির কিছু আগে তৎকালীন চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ বা সিজিএস মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান (যিনি পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হয়েছেন, সেনাবাহিনী প্রধান হয়েছেন, অবসর জীবনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়েছেন এবং বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য) অফিস থেকে বের হয়ে ধীরগতিতে বাসায় চলে গেলেন। তার কিছুণ পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে ঘোষণা করলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নাসিমকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে তথা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং তার বদলে মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমানকে অস্থায়ীভাবে বা আগামী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সেনাপ্রধান নিযুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা সেনানিবাসে কয়েকটি ব্রিগেড আছে যেগুলোকে স্বতন্ত্র ব্রিগেড বলা হয় এবং এরা সরাসরি সেনাবাহিনী প্রধানের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এইরূপ একটি স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নাসিমের রাষ্ট্রপতির প্রতিকূলে প্রদত্ত নির্দেশ মানতে সম্মত ছিলেন না, আবার প্রত্যভাবে বলতেও পারছিলেন না যে, মানব না। তাই সেই ব্রিগেড কমান্ডার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলেন। সেনাবাহিনী প্রধান এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা ব্রিগেড কমান্ডারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে অন্য একজন ব্রিগেডিয়ারকে এই দায়িত্ব দিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেনাবাহিনী প্রধান কর্তৃক নতুন ব্রিগেড কমান্ডার নিযুক্ত হলেও ওই স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের অন্তর্ভুক্ত ব্যাটালিয়ন কমান্ডার তথা অফিসার ও সৈনিকদের কাছে তিনি আন্তরিকতার আঙ্গিকে অগ্রহণযোগ্য ছিলেন। অপর একটি স্বতন্ত্র ব্রিগেড ছিল ‘ইঞ্জিনিয়ার স্বতন্ত্র ব্রিগেড’। এই ব্রিগেড কমান্ডার স্বচ্ছভাবেই রাষ্ট্রপতির আদেশ পালন করলেন, সেনাবাহিনী প্রধানের বিপ।ে এই অজুহাতে জেনারেল নাসিম, সেই স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড কমান্ডারকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে নতুন একজন ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডিয়ারকে ব্রিগেড কমান্ডার নিযুক্ত করলেন। নিযুক্ত হলেও নতুন ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডিয়ার দিনের অবশিষ্ট সময়ে কার্যকরভাবে দায়িত্ব বুঝে নিতে পারেননি প্রতিকূল পরিবেশের কারণে। আরেকটি স্বতন্ত্র ব্রিগেড হলো সিগন্যাল ব্রিগেড। তারা সেনাবাহিনী প্রধান প থেকে যেই দু-একটি ুদ্র আদেশ পেয়েছিলেন সেগুলো পালন করলেন।
সেই ১৯৯৬ সালের কথা। সেনাবাহিনী সদর দফতরে অন্তত পাঁচজন মেজর জেনারেল র্যাংকের অফিসার কর্মরত থাকতেন ওই আমলে, সেনাবাহিনী প্রধানের নিচে। একজন হতেন সামরিক বাহিনীর প্রধান প্রকৌশলী তথা ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ। অপরজন চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ বা সিজিএস। তৃতীয়জন অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল বা এজি। চতুর্থজন মাস্টার জেনারেল অব অর্ডন্যান্স বা এমজিও এবং পঞ্চমজন কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল বা কিউএমজি। ওই আমলে, এই পাঁচজনের মধ্যে একজন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। উদাহরণস্বরূপ মেজর জেনারেল হারুন-অর-রশীদ বীরপ্রতীক, যিনি ছিলেন কিউএমজি। মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুবাদে তিনি ছিলেন জেনারেল নাসিমের সশরীরে অতি নিকটে অবস্থিত একজন শুভাকাক্সী। ২০ মে ১৯৯৬ সারা দিনই তিনি জেনারেল নাসিমের অফিসে বসেই সর্বপ্রকার সহযোগিতা প্রদান করেন জেনারেল নাসিমকে। এ দিকে স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের পুরনো কমান্ডারকে বিদায় দিয়ে নতুন কমান্ডারকে অবস্থান গ্রহণে সহায়তা করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল গোলাম কাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়, সেনাবাহিনী প্রধান কর্তৃক।
ঘটনা দ্রুত ঘটে যাচ্ছিল। রেডিও ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সেনাবাহিনী প্রধান অপসারিত হওয়ার পর, জেনারেল মাহবুব কার্যকরভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঝুলন্ত কমান্ডে ছিল (মহান আল্লাহ তায়ালা যেন এ রকম আর কোনো সময় না করেন)। ২০ মে সন্ধ্যার পর কোনো এক সময়, জেনারেল নাসিম সম্মত হন নিজের অফিস থেকে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে অনিশ্চয়তার পথে পদপে নিতে। তখন প্রয়োজন হয় নতুন সেনাবাহিনী প্রধানের, সেনাবাহিনীর সদর দফতরে সেনাবাহিনী প্রধানের অফিসে এসে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। পুরনো সেনাবাহিনী প্রধান এবং নতুন সেনাবাহিনী প্রধান উভয়ের মধ্যে সাঁকো নির্মাণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সহায়তা করতে নির্দেশ দেয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল গোলাম কাদেরকে এবং মেজর জেনারেল হারুন-অর-রশীদ বীরপ্রতীককে। উভয়েই নিজ দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করেছিলেন; কিন্তু দু’জনের ভাগ্যে বিপরীতধর্মী পুরস্কার জোটে।
২০ মে ১৯৯৬ সালের সারা দিনের ঘটনাটি বিয়োগান্ত পরিণতি হয় কারো কারো জন্য এবং ইতিবাচক পরিণতি হয় কারো কারো জন্য। দেশে শান্তি বজায় থাকে, সৈন্যদের একে অপরকে গুলি করতে হয়নি, আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া। ওই রাতেই বগুড়ার জিওসি মেজর জেনারেল গোলাম হেলাল মোর্শেদ খানকে বগুড়াতে, মেজর জেনারেল আইনুদ্দিনকে ময়মনসিংহে এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাসিমকে ঢাকা সেনানিবাসে বন্দী করা হয়। আরো কয়েকজন অফিসারকে বন্দী করা হয়েছিল। তারা ব্রিগেডিয়ার বা এর নিচের র্যাংকের, এখানে নাম উল্লেখ করলাম না। ২০ মে আনুমানিক রাত ১০টা থেকে মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান কার্যকরভাবে সেনাবাহিনীর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেন। পরের দিন ব্যস্ত ও উদ্বেগসঙ্কুলভাবে কাটলেও কোনো অঘটন ঘটেনি। ২১ মে দিবাগত রাত ১২টার পাঁচ মিনিট আগে বঙ্গভবন থেকে রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস টেলিফোন করেছিলেন সেনাবাহিনীর সদর দফতরের পদাতিক পরিদফতরের পরিচালক তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ মতিউর রহমান বীরপ্রতীককে। রাষ্ট্রপতি টেলিফোনেই তাকে মেজর জেনারেল র্যাংকে সরাসরি প্রমোশন দেন। টেলিফোনেই তাকে জানিয়ে দেন, ‘আগামীকাল সকাল থেকে আপনি একটি কোর্ট অব ইনকোয়ারির প্রেসিডেন্ট হবেন, আপনার সাথে আরো দু-তিনজন থাকবেন, অতিসত্বর তদন্ত করে রিপোর্ট দেবেন ২০ মের ঘটনার কারণ কী, কারা দায়ী এবং কী শাস্তি দেয়া উচিত ইত্যাদি।’ কোর্ট অব ইনকোয়ারি মানে একটি তদন্ত আদালত; আদালত হলেও তারা শাস্তি দেয় না বা বিচার করে না, তারা শুধু সুপারিশ করতে পারে। অতঃপর সেনাবাহিনীতে জ্যেষ্ঠ র্যাংকে প্রচুর রদবদল ঘটে যায়।
বলে রাখা ভালো যে, ১০ জুন ১৯৯৬ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল (এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল)। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি অংশ বলছিল, নির্বাচনকে প্রভাবান্বিত করার জন্য অপরপ সেনাবাহিনীর মধ্যে এই ধরনের কাণ্ড-কারখানা ঘটিয়েছে। নির্বাচনের আগে বড় দু’টি দলের পে প্রচারণার সময় ২০ মে ঘটনাটি কোনো জায়গায় পরোভাবে আবার কোনো জায়গায় প্রত্যভাবে আলোচনায় বা ভাষণে আসে। কোনো কোনো জায়গায় এমন প্রচারণা হয়েছিল যে, মুক্তিযোদ্ধা নাসিমকে বাঁচাতে হলে নৌকায় ভোট দাও। যা হোক, বাস্তবে নির্বাচন হলো এবং ফলাফলে দেখা গেল, আওয়ামী লীগ সামান্য ব্যবধানে জয়লাভ করেছে। ওই আমলের রাষ্ট্রপতি ও প্রতিরা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব, জনাব আবদুর রহমান বিশ্বাস তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিলেন ২০ মে প্রসঙ্গটির ইতি টানতে।
১২ থেকে নিয়ে ১৭ তারিখ পর্যন্ত সময়ে ১৫ জন অফিসারকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে বিদায় দেয়া হয়। কিছু সংখ্যককে বরখাস্ত করা হয়, কিছু সংখ্যককে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। মেজর জেনারেল গোলাম কাদের, মেজর জেনারেল এজাজ আহমেদ চৌধুরী, মেজর জেনারেল ইবরাহিম প্রমুখ বাধ্যতামূলক অবসর পান। মেজর জেনারেল হারুন-অর-রশীদকে রেখে দেয়া হয়েছিল, পরে আওয়ামী লীগ আমলে যিনি সিজিএস ও সেনাবাহিনী প্রধান এবং ২০০১ সালে বিএনপি আমলে অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন এবং অবসর জীবনে বহু আলোচিত ডেসটিনি গ্র“পের সভাপতি ও প্রখ্যাত সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হয়েছিলেন। যাকে নিয়ে এত কিছু, যার জন্য ‘রাজা বা বাদশাহ’ নাসিম (প্রতীকী অর্থে) তার সিংহাসন ও রাজ্য সবই হারিয়েছিলেন, সেই প্রিয় উজির (প্রতীকী অর্থে) মেজর জেনারেল গোলাম হেলাল মোর্শেদ খান বরখাস্ত হয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ আমলে বরখাস্তের বদলে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এবারের আওয়ামী লীগ আমলে তিনি যুগপৎ মনোনীত ও নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ডার তথা সরকারের এক হাত দূরত্বের ব্যক্তিত্ব! সেই ১৯৯৬ সালে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চাকরিরত কোনো ব্রিগেডিয়ার বা মেজর জেনারেলের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন কী করেননি, সেটা কোর্ট অব ইনকোয়ারির বিবরণে আছে। সেই আমলের সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম বীরবিক্রম পরে অবসর জীবনে একটি বই লিখেছেন। ওই আমলের যিনি প্রতিরা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর বা ডিজিএফআই প্রধান ছিলেন এবং জেনারেল নাসিমের প্রতিকূলে অন্যতম শক্তি ছিলেন, সেই মেজর জেনারেল মো: আবদুল মতিন বীরপ্রতীক নিজেও একটি বই লিখেছেন। উভয় বইয়ে ভিন্নধর্মী ও বিপরীতধর্মী বক্তব্য আছে। আগ্রহী পাঠক বইগুলো পড়তে পারবেন। আমার জীবনে লেখা প্রথম বই ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত, নাম ‘সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে আটাশ বছর’-এ ১৯৯৬ প্রসঙ্গে দীর্ঘ বক্তব্য আছে। আমার লেখা ১১তম তথা সর্বশেষ বই ‘মিশ্র কথন’ যেটা ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়েছে। সেটাতে এই প্রসঙ্গে সংপ্তি বক্তব্য আছে। ১৯৯৬ সালে অবসর পাওয়ার পরে যখন নিজের ভাগ্য নিয়ে গবেষণা(!) করছিলাম তখন শুনেছিলাম যে, তখনকার বিরোধী শিবিরের দুইজন রাজনৈতিক কনিষ্ঠ নেতা এবং একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বগুড়ার জিওসির সাথে যোগাযোগ করেছিলেন এবং যোগাযোগ রাখতেন; এমনকি সশরীরেও দেখাসাাৎ হয়েছে। তাদের মধ্যে শুধু একজন এই মুহূর্তে রাজনৈতিক সুস্বাস্থ্যে আছেন বলে জানি, অর্থাৎ সেই ১৯৯৬-এর পরিশ্রমের উপযুক্ত পুরস্কার পেয়েছেন, একজন অবহেলিত হয়েছেন, আরেকজন দূরে নিপ্তি।
১৯৯৬ সালের মে মাসের ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনীতে কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল বা নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের আঙ্গিকে একটি অপ্রিয় বৈশিষ্ট্য আগমন করে। কোনো জ্যেষ্ঠ অধিনায়ক তার কোনো কনিষ্ঠকে কোনো হুকুম দিলে, ওই কনিষ্ঠ অফিসারের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় যে, হুকুমটির কোন জায়গা থেকে উৎপত্তি? অতীতে সেনাবাহিনীর কোনো স্তরের কোনো ব্যক্তিত্ব তার অধিনায়কের প্রশ্নের প্রোপট বা উৎপত্তিস্থল বা আন্তরিকতা নিয়ে চিন্তাও করতেন না। কিন্তু ১৯৯৬ সালের পর এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শুরু হয়। যেহেতু ১৫ জুন ১৯৯৬ সাল থেকে আমি আর সেনাবাহিনীতে নেই; সেহেতু নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না, এখন কী অবস্থা। অথবা কিছুটা অনুভূতি আমার মধ্যে থাকলেও, স্পর্শকাতরতার কারণে সেটা প্রকাশ করব না।
গত ১৮ মাসে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষত আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর অংশে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক গণবিস্ফোরণ হয়েছে। এটা এক দিনে হয়নি, সময় নিয়ে হয়েছে। গণবিস্ফোরণ চলাকালে সে দেশের পুলিশ বাহিনী ও প্রতিরা বাহিনীর সদস্যরা প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছিলেন। ওই কারণে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও প্রতিরা বাহিনীর সদস্য, জ্যেষ্ঠ অফিসারসহ, গণবিস্ফোরণে জনগণের কাতারে নিজেদের নাম লেখায় তথা সরকারের বিরুদ্ধে তথা সরকারের দমননীতি ও গণবিরোধী নীতিগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন। এই ধরনের পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং একাধিক আঙ্গিকে পরিহারযোগ্য। পরিহার করতে হলে একাধিক মহলকে সচেতন থাকতে হয়। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের ঘটনাবলির প্রতি সচেতন কলাম-পাঠকদের (যাদের বয়সে কুলায়) স্মৃতি ফিরিয়ে নিচ্ছি। সেই সময়ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রচণ্ড চাপে ছিল। আমার লেখা বই ‘মিশ্র কথন’-এ প্রসঙ্গটি আলোচনা করেছি।
তখনকার আমলে যেমন, এখনো এই কথাটি সত্য যে, দেশ আগে, রাজনৈতিক দল পরে এবং সবশেষে ব্যক্তি। ‘দেশ’ বলতে বোঝায় মাটি ও মানুষ। যখন মাটি ও মানুষ বিপন্ন হয় তখন দেশপ্রেমিক ব্যক্তি মাত্রই উদ্বেগাড়–ল হয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার ও সৈনিকেরা এরূপ একটি ক্রান্তিলগ্নে ছিলেন। তখন বেঙ্গল রেজিমেন্টগুলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। অনেক বাঙালি অফিসার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিকূল পরিবেশে থেকেও বিদ্রোহ করেছিলেন, সেনাবাহিনীতে, সিভিল সার্ভিসে, কূটনৈতিক সার্ভিসে, পুলিশ বাহিনীতে, স্বাস্থ্য সার্ভিসে। কথায় কথায় আমরা যেমন বলি সেই রামও নেই সেই অযোধ্যাও নেই। অনুরূপ এটাও বলা যায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগ, এটা মোবাইল ফোনের যুগ, অরেঞ্জ রেভ্যুলুশনের যুগ, এটা টিউলিপ রেভ্যুলুশনের যুগ, আরব বসন্তের যুগ। এই যুগটা আসলে কিসের যুগ, তা পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুধাবনের ওপর নির্ভর করে।
আমার উপসংহার কী? বাংলাদেশকে বাঁচাতে হবে, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের চেতনাগুলোকে রা করতে হবে। পুনশ্চ, এই প্রসঙ্গে প্রকাশিত এর আগের কলামগুলো নয়া দিগন্তের ওয়েবসাইটের আর্কাইভে অথবা আমার নিজের (www.kallyan-ibrahim.com) ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সামরিক বাহিনী অনেক দূর এগিয়েছে। বিশ্বে সুপরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্মদিন থেকেই (২৬ মার্চ ১৯৭১ অথবা ২১ নভেম্বর ১৯৭১ অথবা ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ অথবা ১৪ এপ্রিল ১৯৭১Ñ যেই তারিখটিই ধরেন না কেন) সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে করতে ১৯৯৬ সালের জুন মাসের ১৫ তারিখ বাধ্যতামূলক অবসর পেয়েছি। আজ থেকে ১৪-১৫ দিন আগের কলামে লিখেছি, একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করার জন্য প্যারিস গিয়েছিলাম এবং ফিরতি পথে পবিত্র ওমরাহ-হজ পালন করার জন্য জেদ্দা হয়ে আসার পরিকল্পনা ছিল। জেদ্দা বিমানবন্দরের ভেতর থেকে বের হয়েই দেখা পেয়েছিলাম ইঞ্জিনিয়ার হুমায়ূন কবির ভুঁইয়ার নেতৃত্বে কয়েকজন বন্ধু এবং জেদ্দায় বাংলাদেশ কনসুলেটের একজন সম্মানিত দ্বিতীয় সচিবের। ঢাকা থেকে আমার পরিবারের টেলিফোন পেয়ে বন্ধুরা জেনে গিয়েছিলেন আমার অবসরপ্রাপ্তির খবর (আমি জানার আগেই)। আমার পাশে থেকে মানসিক স্বস্তি প্রদানের জন্যই তারা বিমানবন্দরে ছিলেন, কিন্তু জানতাম না কেন হঠাৎ এত বন্ধু এসেছে? দ্বিতীয় সচিবের সাথে জেদ্দা মহানগরীতে অবস্থিত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল জনাব মোহসিন আলী খানের বাসভবনে যাই (জনাব মোহসিন পরে রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন)। সেখানে গিয়ে এক পৃষ্ঠা কাগজ পাই যেখানে লেখা ছিল আমার অবসরপ্রাপ্তির আদেশ। পরবর্তী তিন ঘণ্টার মধ্যে আমি ‘এহরাম’ পরিহিত অবস্থায়, মহান আল্লাহ তায়ালার ঘর পবিত্র কাবা শরিফের দেয়ালের সামনে ছিলাম। আবেগে ভরপুর কণ্ঠে বলেছিলাম আল্লাহ তায়ালাকে অনেকটা এ রকম : ‘আপনি চাকরি দিয়েছিলেন, চাকরিজীবনে অনেক সম্মান দিয়েছেন, আপনি সেই চাকরি ফিরিয়ে নিলেন, আপনার প্রতি শুকরিয়া এবং এত তাড়াতাড়ি শুকরিয়া জানানোর জন্য আপনার ঘরের সামনে উপস্থিত থাকতে পারছি, তার জন্যও শুকরিয়া। তবে, হে মহান আল্লাহ তায়ালা, আপনি সর্বজ্ঞানী এবং অন্তর্যামী; আপনার সামনে সাী দিচ্ছি, যে কথিত অপরাধে আমাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে, আমি সেই অপরাধ করিনি। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করিনি। আগামী দিনে তোমারই সাহায্যে এবং তোমারই দয়ায় দেশের ও দশের কাজে লিপ্ত থাকতে চাই এবং সম্মানের সাথে থাকতে চাই। তুমি ইজ্জত দেয়ার মালিক এবং বিচারের মালিক। দোষীদের প্রসঙ্গে তুমিই সিদ্ধান্ত নিয়ো। তোমারই দয়ায় মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিতে পেরেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যেই সেনাবাহিনী ও দেশ সৃষ্টিতে জড়িত ছিলাম, সে সেনাবাহিনী ও দেশকে তুমি হেফাজত করো। ষোলো বছর পর ২২ মে ২০১২ তারিখে তথা আজকে এ লেখা পাঠক পড়ছেন; এ দিনও একটিই বড় প্রার্থনা ও একটিই বড় অঙ্গীকার করছি। প্রার্থনাটি হলো, আল্লাহ যেন সেনাবাহিনী ও দেশকে হেফাজত করেন। অঙ্গীকার হলো, দেশের জন্য তথা মানুষের জন্যই রাজনীতিতে এসেছি, রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চাই, তার জন্য পরিশ্রম করেই যাবো।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন