আ সি ফ র শী দ
অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, তিনি অকপটে ¯^ীকার করেছেন, দেশে সুশাসন নেই। শনিবার সুশাসন বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেছেন, সুশাসন না থাকার অন্যতম দুটি কারণ দুর্নীতি ও আইনের শাসনের অভাব। তিনি আরও বলেছেন, ‘দেশের সব জায়গায় দুর্নীতি। বিচার-প্রশাসন, শি¶া, ¯^াস্থ্য, ভ‚মি, কর আদায়কারী সংস্থা থেকে শুর“ করে থানা পর্যš— দুর্নীতি বি¯—ৃত।’ অর্থাৎ তিনি ব্যাপক দুর্নীতির কথাও ¯^ীকার করে নিয়েছেন।
সুশাসন বা গুড গভর্নেন্স মূলত একটি পশ্চিমা অভিধা। বাংলাদেশে সুশাসন ও সুশীল সমাজ সংক্রাš— সাম্প্রতিক অনেক ধারণাই গত শতকের নব্বইয়ের দশকে আš—র্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো এবং তাদের পলিসি এজেন্ডা থেকে উদ্ভ‚ত। দাতা সংস্থাগুলো প্রায়ই সাহায্য প্রদানের ¶েত্রে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার শর্ত জুড়ে দেয় প্রত্য¶ বা পরো¶ভাবে। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও ঢাকা সফরে এসে সুশাসন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গেছেন। তিনিও বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা বৃদ্ধির ¶েত্রে একধরনের শর্ত হিসেবে সুশাসনের ওপর গুর“ত্বারোপ করেছেন। সত্য হল, ‘সুশীল’ কথাটির মতোই ‘সুশাসন’ শব্দটিও অনেকের কাছে অস্পষ্ট। আসলে সুশাসনের কোন সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা নেই। সুশাসন মানে ভালোভাবে দেশ পরিচালনাÑ বিষয়টিকে এভাবে সরলীকরণ করা যেতে পারে। কিন্তু সে¶েত্রেও প্রশ্ন থেকে যায়, ভালোভাবে দেশ পরিচালনা বলতে ঠিক কী বোঝায়?
সাধারণভাবে কয়েকটি বিষয়কে সুশাসনের মানদÊ হিসেবে ধরা যেতে পারে, যেমনÑ মানবাধিকার ও আইনের শাসন, দেশ পরিচালনার বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের অংশগ্রহণ, ¯^চ্ছতা ও জবাবদিহি প্রক্রিয়া, বহুমুখী অংশীদারিত্ব, রাজনীতিতে নানা মতের চর্চা, একটি দ¶ ও কার্যকর সরকারি খাত, শি¶া, তথ্য ও অন্যান্য জ্ঞান আহরণের সুযোগ, জনগণের রাজনৈতিক ¶মতায়ন, সমতা ও ন্যায়বিচার, দায়িত্বশীলতা, ঐক্য ও সহনশীলতা উৎসাহিত হয় এমন আচরণ ও মূল্যবোধ ইত্যাদি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভ‚তপূর্ব কমিশন ইউএনসিএইচআরের ২০০০/৬৪ নং প্র¯—াবে সুশাসনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হল ¯^চ্ছতা, দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণ ও সাড়া প্রদান (জনগণের চাহিদার প্রতি)। এ প্র¯—াবে সুশাসনকে টেকসই মানব উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। মানবাধিকার ভোগ করা এবং টেকসই মানব উন্নয়নের সহায়ক একটি অনুক‚ল পরিবেশের সঙ্গে সুশাসনকে স্পষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে। এতে আরও উলেখ রয়েছে : সুশাসন ও মানবাধিকারের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে চারটি ¶েত্রেÑ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো, রাষ্ট্র কর্তৃক জনগণকে সেবা প্রদান, আইনের শাসন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ।
সুশাসন বলতে আমরা যদি এ বিষয়গুলোকে ধরে নেই তাহলে মানতেই হয়, সুশাসন ছাড়া গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয়। এ বিবেচনায় সুশাসনের পূর্বশর্ত হল সমাজে গণতন্ত্রায়নের জন্য সব ধরনের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি। যে সমাজে জনগণ শাসন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে না, যেখানে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো হয় না, যেখানে তথ্যপ্রবাহ অবাধ নয়, সুশীল সমাজ ও বিচার ব্যবস্থা দুর্বল, সে সমাজে জনগণের জীবনমানের উন্নতি আশা করা যায় না। এসব বিষয় তখনই নিশ্চিত হতে পারে, যখন থাকে ¯^াধীন ও নিরপে¶ নির্বাচন কমিশন, ¯^াধীন বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসন, ¯^াধীন গণমাধ্যম ও বাক¯^াধীনতা, ¯^াধীন দুর্নীতি দমন কমিশন, কার্যকর সংসদ, ¯^াধীন মানবাধিকার কমিশন, ¯^াধীন ন্যায়পাল ব্যবস্থা, বিনিয়োগবান্ধব সরকার ও উন্নত সেবা খাত।
এ বিবেচনায় ¯^াধীনতার চার দশকেও দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায়নি। অবশ্য ¯^ীকার করতে হয়, দেশে মানুষের বাক¯^াধীনতা আছে। শক্তিশালী না হলেও রয়েছে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। তারপরও মানুষ ¯^¯ি—তে নেই। কারণ সুশাসনের অধিকাংশ শর্ত দেশে অনুপস্থিত। এসব শর্ত যে সরকার যত বেশি পূরণ করতে পারবে, সেই সরকার তত সফল বলে বিবেচিত হবে। তবে অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, কোন সরকারই সুশাসনের বিষয়ে আš—রিক নয়। ¶মতায় এসে তারা সর্বত্র দলীয়করণের মাধ্যমে দলবাজিকে উৎসাহিত করে। প্রশ্রয় দেয় দুর্নীতিকে। বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালায়। মানবাধিকারের তোয়াক্কা করে না। উপে¶া করে জন¯^ার্থকে।
এসবের অনিবার্য পরিণতি জনসমর্থন খোয়ানো। ফলে জনগণের ওপর সরকার আর আস্থা রাখতে পারে না। পরবর্তী নির্বাচনে যে কোন উপায়ে জয়লাভের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। আশ্রয় নেয় ক‚টকৌশলের। সে প্রক্রিয়া বিরোধী দল প্রত্যাখ্যান করে। শুর“ হয় সংঘাত। একসময় পরিস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। অথচ যথার্থ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অভিজ্ঞতা বলে, সরকার সুশাসনের ব্যাপারে আš—রিক হলে কোন ক‚টকৌশলের দরকার হয় না। জনগণই তাদের পুনঃনির্বাচিত করে। দুর্ভাগ্যজনক, সুশাসন যে সরকারের জন্য মঙ্গলজনক, এটি এখন পর্যš— আমাদের কোন সরকারই বুঝতে চায়নি। যতদিন সরকার এটি অনুধাবন না করবে, ততদিন দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পাবে না। সে বোধোদয় কবে কোন সরকারের হবে, কে জানে!
আসিফ রশীদ : সাংবাদিক ও লেখক
ধংরভ.ৎধংযববফ@ুধযড়ড়.পড়স
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন