মা হ মু দু ল বা সা র
ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী উনিশ শতকের বাঙালি সমাজে রেনেসাঁর উদ্ভব ঘটেছিল এ কথা অস্বীকার করেও বলেন, ‘অসামান্য মানুষেরাই চর্চা করেছেন গদ্যের। মাথা ঠিক রাখা কঠিন ছিল সে যুগে। এরা ঠিক রেখেছিলেন মাথা। নিষ্ঠা ছিল, ছিল আন্তরিকতা।’ (উনিশ শতকের বাংলা গদ্যের সামাজিক ব্যাকরণ)
বর্তমান মহাজোট সরকারকেও সজাগ করে দিতে চাই মাথা ঠিক রাখার জন্য। মাথা গরম করে কোন সিদ্ধান্ত নিলে তাড়াহুড়াজনিত ভুল সিদ্ধান্তের ছিদ্র দিয়ে বিরোধী দল আঙুল ঢুকিয়ে দেবে, ভুলের তিলকে তাল করবে, রজ্জকে সর্প বলবে, কাশির রোগীকে যক্ষ্মা রোগী বলবেÑ এটাই স্বাভাবিক।
দেশী-বিদেশী পত্রিকার জরিপ যা-ই হোক না কেন, দেশের রাজনৈতিক পরি¯ি’তি সু¯’ ও স্বাভাবিক রাখা, গুম-খুন, সন্ত্রাস আর নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের মুখ্য দায়িত্ব। আইনের শাসন কায়েম করাও সরকারের দায়িত্ব। সরকারে বসে কাউকে দোষারোপ করার অবকাশ নেই। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজের পতনের ১০১টা কারণ দেখানো যেতে পারে; কিš‘ বাস্তব সত্য এটাই যে, সিরাজ পরাজিত হয়েছিলেন। তদ্রƒপ সরকারের ব্যর্থতা কারণ দেখিয়ে আর দোষারোপ করে ঢাকা দেয়া যাবে না।
জনপ্রিয়, প্রবীণ, অভিজ্ঞ কলাম লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আজকাল প্রতিটি পত্রিকায় সরকারের শাসনের দিনগুলো নিয়ে খুব আশংকা প্রকাশ করছেন। সরকার যেন প্রশাসন ও ক্ষমতার জোরে মৌলিক কিছু সিদ্ধান্ত জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে। বিরোধী জোট ও সুশীল সমাজ মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনটা কর“ক, এই দাবিতে যত সো”চার, মহাজোট ও সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল সুশীল সমাজের লোকেরা তত সো”চার হয়ে বলছেন না যে, ‘আমরা নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।’
বিবেক এখনও বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদালতের দ্বিতীয় অপশন মেনে নিলে তিনি একটু শান্তিতে দেশ চালাতে পারতেন। দেশকে অ¯ি’র করার সুযোগটা তিনি নিজেই বিরোধী দলের হাতে তুলে দিয়েছেন। বিরোধী দল প্রতি পদে সরকারের ছিদ্র খুঁজবে, সরকারকে ব্যর্থ বলবে, সরকারের অসহিষ্ণুতা উৎপাদন করবে, সরকারের যাতে মাথা গরম হয় সেসব কাজ করবেÑ এটাই স্বাভাবিক। তাদের তো ক্ষমতায় যাওয়া দরকার। পরপর দু’বার পরাজিত হলে বিএনপির মতো একটি পাঁচমিশালি দলের অস্তিত্বে টান পড়বে। সরকারের চোখের ঘুম কেড়ে নেয়ার কৌশল তারা আঁটবেই। রাজনীতিতে এটা প্রচলিত আছে যে, ‘মারি অরি পারি যে কৌশলে।’ সেক্ষেত্রে বিরোধী দলের হাতে একটা জেনুইন ইস্যু তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন।
আমরা আদার বেপারী, জানি না প্রধানমন্ত্রী কিভাবে দেশ চালা”েছন। একক সিদ্ধান্তে দেশ চালা”েছন, নাকি মহাজোটের নেতাদের পরামর্শ নিয়ে দেশ চালা”েছন? ক্ষমতায় থাকতে যদি শরিকদের তোয়াক্কা না করেন, ক্ষমতায় যাওয়ার সময় কি আর শরিক পাবেন? আজকাল তো জোটেরই রাজনীতি চলছে। কিছুদিন আগে মহাজোটের বড় শরিক দল জাপার চেয়ারম্যান এরশাদ সাহেব বললেন, ‘আমিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।’ এটা সরকারের জন্য গভীর ভাবনার বিষয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদ সাহেবকে ফ্যাক্টর না ভেবে উপায় নেই। তিনি যদি প্রতিটি নির্বাচনেই জামায়াতের চেয়ে বেশি আসন পান। এমন একটি শরিক দলকে কি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আমি তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে যে স্ট্যান্ড নিতে যা”িছ, তার সঙ্গে আপনারা একমত কিনা।’
একা ঝুঁকি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিপদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মহাজোট পরিমণ্ডলের সবার সঙ্গে হার-জিত ভাগ করে নিলে ভবিষ্যতে মঙ্গল হবে।
প্রধানমন্ত্রীর চারপাশ এলোমেলো, সমন্বয়হীন। তিনি নিজেই বলেছেন, তার এমপিদের আমলনামা তার হাতে আছে। এ থেকে বুঝতে পারি এমপি সাহেবানরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারা”েছন। আমরা কি দিবাস্বপ্ন দেখব যে, গফরগাঁওয়ের এমপি গিয়াসউদ্দীন সাহেব আবারও নির্বাচনে বিজয়ী হবেন?
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুদর্শন এমপি এইচবি ইকবাল গিয়াসউদ্দীন সাহেবের মতো মিছিলের জনগণের দিকে তাক করে পিস্তল উঁচিয়ে ধরেছিলেন। তার খেসারত দিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানি না গফরগাঁওয়ের এমপি সাহেবের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কতটা খেসারত দিতে হয়।
সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয়র একটি অংশ এমন, ‘তিন বছর আগে যাদের রায়ে বিজয়ী হয়েছিলেন, তিন বছর পর সেই জনতার দিকেই পিস্তল তুললেন গফরগাঁওয়ের সংসদ সদস্য। ক্ষমতার টাগ অর ওয়্যারে কাঁপছে গফরগাঁও।’ (জনকণ্ঠ- ২৩-৫-১২)
এর মাত্র কয়েকদিন আগে দেখেছি, গুর“ত্বপূর্ণ সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বিকে এলাকার জনগণ ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছে। এসব তো সুখবর হতে পারে না।
আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন মাঠ পর্যায়ের নেতা আমাকে বলেছেন, ‘আপনি তো কলাম লেখেন, শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়ে বলবেন, তার রাজনৈতিক মাঠ খুব এলোমেলো, নির্বাচিত এমপিরা জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না।’
সরকার ভেবেচিন্তে, মাথা ঠিক রেখে সিদ্ধান্ত নিক, আমরা তা মনেপ্রাণে চাই।
মাহমুদুল বাসার : প্রাবন্ধিক, গবেষক
ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী উনিশ শতকের বাঙালি সমাজে রেনেসাঁর উদ্ভব ঘটেছিল এ কথা অস্বীকার করেও বলেন, ‘অসামান্য মানুষেরাই চর্চা করেছেন গদ্যের। মাথা ঠিক রাখা কঠিন ছিল সে যুগে। এরা ঠিক রেখেছিলেন মাথা। নিষ্ঠা ছিল, ছিল আন্তরিকতা।’ (উনিশ শতকের বাংলা গদ্যের সামাজিক ব্যাকরণ)
বর্তমান মহাজোট সরকারকেও সজাগ করে দিতে চাই মাথা ঠিক রাখার জন্য। মাথা গরম করে কোন সিদ্ধান্ত নিলে তাড়াহুড়াজনিত ভুল সিদ্ধান্তের ছিদ্র দিয়ে বিরোধী দল আঙুল ঢুকিয়ে দেবে, ভুলের তিলকে তাল করবে, রজ্জকে সর্প বলবে, কাশির রোগীকে যক্ষ্মা রোগী বলবেÑ এটাই স্বাভাবিক।
দেশী-বিদেশী পত্রিকার জরিপ যা-ই হোক না কেন, দেশের রাজনৈতিক পরি¯ি’তি সু¯’ ও স্বাভাবিক রাখা, গুম-খুন, সন্ত্রাস আর নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের মুখ্য দায়িত্ব। আইনের শাসন কায়েম করাও সরকারের দায়িত্ব। সরকারে বসে কাউকে দোষারোপ করার অবকাশ নেই। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজের পতনের ১০১টা কারণ দেখানো যেতে পারে; কিš‘ বাস্তব সত্য এটাই যে, সিরাজ পরাজিত হয়েছিলেন। তদ্রƒপ সরকারের ব্যর্থতা কারণ দেখিয়ে আর দোষারোপ করে ঢাকা দেয়া যাবে না।
জনপ্রিয়, প্রবীণ, অভিজ্ঞ কলাম লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আজকাল প্রতিটি পত্রিকায় সরকারের শাসনের দিনগুলো নিয়ে খুব আশংকা প্রকাশ করছেন। সরকার যেন প্রশাসন ও ক্ষমতার জোরে মৌলিক কিছু সিদ্ধান্ত জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে। বিরোধী জোট ও সুশীল সমাজ মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনটা কর“ক, এই দাবিতে যত সো”চার, মহাজোট ও সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল সুশীল সমাজের লোকেরা তত সো”চার হয়ে বলছেন না যে, ‘আমরা নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।’
বিবেক এখনও বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদালতের দ্বিতীয় অপশন মেনে নিলে তিনি একটু শান্তিতে দেশ চালাতে পারতেন। দেশকে অ¯ি’র করার সুযোগটা তিনি নিজেই বিরোধী দলের হাতে তুলে দিয়েছেন। বিরোধী দল প্রতি পদে সরকারের ছিদ্র খুঁজবে, সরকারকে ব্যর্থ বলবে, সরকারের অসহিষ্ণুতা উৎপাদন করবে, সরকারের যাতে মাথা গরম হয় সেসব কাজ করবেÑ এটাই স্বাভাবিক। তাদের তো ক্ষমতায় যাওয়া দরকার। পরপর দু’বার পরাজিত হলে বিএনপির মতো একটি পাঁচমিশালি দলের অস্তিত্বে টান পড়বে। সরকারের চোখের ঘুম কেড়ে নেয়ার কৌশল তারা আঁটবেই। রাজনীতিতে এটা প্রচলিত আছে যে, ‘মারি অরি পারি যে কৌশলে।’ সেক্ষেত্রে বিরোধী দলের হাতে একটা জেনুইন ইস্যু তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন।
আমরা আদার বেপারী, জানি না প্রধানমন্ত্রী কিভাবে দেশ চালা”েছন। একক সিদ্ধান্তে দেশ চালা”েছন, নাকি মহাজোটের নেতাদের পরামর্শ নিয়ে দেশ চালা”েছন? ক্ষমতায় থাকতে যদি শরিকদের তোয়াক্কা না করেন, ক্ষমতায় যাওয়ার সময় কি আর শরিক পাবেন? আজকাল তো জোটেরই রাজনীতি চলছে। কিছুদিন আগে মহাজোটের বড় শরিক দল জাপার চেয়ারম্যান এরশাদ সাহেব বললেন, ‘আমিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।’ এটা সরকারের জন্য গভীর ভাবনার বিষয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এরশাদ সাহেবকে ফ্যাক্টর না ভেবে উপায় নেই। তিনি যদি প্রতিটি নির্বাচনেই জামায়াতের চেয়ে বেশি আসন পান। এমন একটি শরিক দলকে কি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আমি তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে যে স্ট্যান্ড নিতে যা”িছ, তার সঙ্গে আপনারা একমত কিনা।’
একা ঝুঁকি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিপদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মহাজোট পরিমণ্ডলের সবার সঙ্গে হার-জিত ভাগ করে নিলে ভবিষ্যতে মঙ্গল হবে।
প্রধানমন্ত্রীর চারপাশ এলোমেলো, সমন্বয়হীন। তিনি নিজেই বলেছেন, তার এমপিদের আমলনামা তার হাতে আছে। এ থেকে বুঝতে পারি এমপি সাহেবানরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারা”েছন। আমরা কি দিবাস্বপ্ন দেখব যে, গফরগাঁওয়ের এমপি গিয়াসউদ্দীন সাহেব আবারও নির্বাচনে বিজয়ী হবেন?
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুদর্শন এমপি এইচবি ইকবাল গিয়াসউদ্দীন সাহেবের মতো মিছিলের জনগণের দিকে তাক করে পিস্তল উঁচিয়ে ধরেছিলেন। তার খেসারত দিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানি না গফরগাঁওয়ের এমপি সাহেবের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কতটা খেসারত দিতে হয়।
সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয়র একটি অংশ এমন, ‘তিন বছর আগে যাদের রায়ে বিজয়ী হয়েছিলেন, তিন বছর পর সেই জনতার দিকেই পিস্তল তুললেন গফরগাঁওয়ের সংসদ সদস্য। ক্ষমতার টাগ অর ওয়্যারে কাঁপছে গফরগাঁও।’ (জনকণ্ঠ- ২৩-৫-১২)
এর মাত্র কয়েকদিন আগে দেখেছি, গুর“ত্বপূর্ণ সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বিকে এলাকার জনগণ ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেছে। এসব তো সুখবর হতে পারে না।
আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন মাঠ পর্যায়ের নেতা আমাকে বলেছেন, ‘আপনি তো কলাম লেখেন, শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিয়ে বলবেন, তার রাজনৈতিক মাঠ খুব এলোমেলো, নির্বাচিত এমপিরা জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না।’
সরকার ভেবেচিন্তে, মাথা ঠিক রেখে সিদ্ধান্ত নিক, আমরা তা মনেপ্রাণে চাই।
মাহমুদুল বাসার : প্রাবন্ধিক, গবেষক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন