রবিবার, ২৭ মে, ২০১২

ঘুষের মধ্যেও এখন দুর্নী


 মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম  

হায়রে কপাল! সমাজের হাল এখন কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে! এখন কিনা ঘুষের মধ্যেও দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। গত ২২ মে তারিখে বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেল যে, সরকারদলীয় একজন সংসদ সদস্য এক ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিবেন বলে তার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছিলেন। কিন্তু ঘুষ নিয়েও সেই ব্যক্তিকে তিনি চাকরি দেননি। ঘুষ হিসেবে নেয়া টাকাও এমপি মহোদয় সেই ব্যক্তিটিকে ফেরত দেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য একজনের কাছ থেকে আরো বেশি টাকা পাওয়ায় তাকেই তিনি চাকরিটা দিয়েছেন। একে তো ঘুষের কারবার। সেই ঘুষের কারবারেও কিনা আবার দুর্নীতি। মানুষ যাবে কোথায়?
‘পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতি’ ‘বাজার রাজনীতির’ জন্ম দিয়েছে। সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ‘বাজারী সংস্কৃতি’। টাকার লোভ, সবকিছুকেই দেনা-পাওনার বাজারি মানদণ্ডে বিবেচনা করা, আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা, প্রদর্শনবাদ, ভোগবাদ ইত্যাদি রোগ সমাজদেহে দানা বেঁধে সমাজের প্রাণশক্তিকে দহন করে তাকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছে। দ্রব্যমূল্য, ভেজাল, দূষণ, মাদকাসক্তি, নৈতিক অবক্ষয়, অভাবনীয় সংখ্যক সব মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, অপরাধমূলক কাজকর্ম ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই শনৈঃ শনৈঃ ‘উন্নতি’ হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতির (!) ঠেলায় আজ মানুষের সামাজিক জীবন ওষ্ঠাগত।
অর্থমন্ত্রী স্বয়ং কয়েকদিন আগে বলেছেন, সমাজের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সর্বত্র ঘুষ-দুনীতি ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের অগ্রগতির পথে এটাই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। সর্বত্র ঘুষ দুর্নীতি চলছে বলে স্বীকার করার জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অর্থমন্ত্রীকে তিরস্কৃত হতে হয়েছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে।
‘নিয়োগ বাণিজ্য’ যে এদেশে আগে থেকেই বিরাজমান ছিল না, তা নয়। বৃটিশ আমলেও চাকরির উমেদারি করতে বড় সাহেবকে ‘ভেট’ পাঠানোর অনেক দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায়। কোম্পানির শাসক ক্লাইভ, হেস্টিংস প্রমুখের পর্বতপ্রমাণ সব ঘুষ-দুর্নীতির কথা ইতিহাসে সুবিদিত। আজকাল অবশ্য ‘নিয়োগ বাণিজ্যের’ সাথে সাথে অনুরূপ অনেক ‘বাণিজ্য’ যুক্ত হয়েছে। সিট বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, ফুটপাত বাণিজ্য, টার্মিনাল বাণিজ্য, ইজারা বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্য ইত্যাদি থেকে শুরু করে দলে-পদায়ন বাণিজ্য, নির্বাচনে-মনোনয়ন বাণিজ্য ইত্যাদি আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেঁকে বসেছে। প্রশাসনে আরো আছে প্রমোশন বাণিজ্য, বদলী বাণিজ্য, সিআর বাণিজ্য ইত্যাদি। ঘুষ-দুর্নীতিকে আবার নানা নামের বাহার দিয়ে ঘোমটা পরানোর চেষ্টা করা হয়ে থাকে। চা-নাস্তার খরচ, স্পিডমানি ইত্যাদি নামে তৃণমূলে যে ঘুষ-দুর্নীতি চলে, দেশি-বিদেশি বিশাল কোম্পানি-কর্পোরেশন ও মন্ত্রী-সচিব উপদেষ্টাদের ক্ষেত্রে তা লবিস্ট বাবদ ব্যয়, কমিশন বাবদ খরচ, অতিরিক্ত ব্যয়, গণসংযোগ বাবদ ব্যয় ইত্যাদি নামে জায়েজ করা হয়। দুর্নীতির সাক্ষ্য আরও পাওয়া যায় একথা থেকে যে, হাল আমলে সব সরকারের সময়েই বেশকিছু মন্ত্রী-মিনিস্টার-কর্মকর্তার নামের সাথে ‘মিস্টার টেন পার্সেন্ট’ ধরনের লেবেল যুক্ত হয়ে পড়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটে না। সরকার আসে-যায়, রেজিম চেঞ্জ ঘটে— কিন্তু ‘মিস্টার টেন পার্সেন্ট’-ওয়ালারা বহালই থেকে যায়। তাদের চেহারা ও পরিচয় কেবল বদল হয় মাত্র।
সমাজে নানা প্রকারের ‘দুর্নীতি’ আছে। অভিধান মতে দুর্নীতির অর্থ হলো ‘যা নীতি বিরুদ্ধ, কুনীতি, অসদাচরণ’। এই সংজ্ঞা থেকে একথা স্পষ্ট যে, দুর্নীতি যেমন পরিব্যাপ্ত থাকতে পারে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, তেমনি তা সংগঠিত হতে পারে সামাজিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক, নীতি-নৈতিকতা, ধর্মীয়, রাজনৈতিক প্রভৃতি পরিমণ্ডলেও। একটি প্রচলিত ধারণা হলো, দুর্নীতি হচ্ছে মূলত অর্থনীতি সম্পৃক্ত কোনো দুষ্কর্ম। আর্থিক-দুর্নীতি ‘দুর্নীতির’ একটি প্রধান ক্ষেত্র হলেও সমাজে কিন্তু এর বাইরে অন্যান্য ধরনের বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত দুর্নীতির প্রকোপ মোটেও কম নয়।
‘দুর্নীতি’ সম্পর্কে আরো একটি সরল ভ্রান্তি রয়েছে। কিছু মহল এমন একটি ধারণা প্রচার করে থাকে, ‘দুর্নীতির’ বিষয়টি হলো একেবারেই একটি রাজনৈতিক রাষ্ট্রক্ষমতা সম্পৃক্ত ব্যাপার। ব্যবসায়ী নেতারা বলতে ভালবাসেন যে, বেসরকারি খাতে দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। এর কারণ নাকি এই যে, বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী-শিল্পপতি-বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত নন। তারা ব্যবসা করেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনো আইন ভঙ্গ করলে তাকে বেআইনী কাজ বলা যেতে পারে। কিন্তু তাকে দুর্নীতি বলে আখ্যায়িত করা যেতে পারে না।
এসব কথা যুক্তিগ্রাহ্য নয়, অনেকগুলো কারণে। প্রথমত, দেশের সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৮০ শতাংশই হলো ব্যবসায়ী। দু-চার জন ব্যতিক্রমী বাদে মন্ত্রীদের মধ্যে প্রায় সবাই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে ব্যবসা করেন। আমলাতন্ত্রের বড় বাবু থেকে শুরু করে তার উপর তলার অনেকেই কোনো না কোনোভাবে ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত আছেন অথবা ভবিষ্যতে হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাহলে কীভাবে একথা মেনে নেয়া যায় যে, ব্যবসায়ীরা রাজনীতি ও রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে থাকা ধোয়া তুলসিপাতা? দ্বিতীয়ত, একটি ইংরেজি উদ্ধৃতি দিয়ে দুর্নীতি (corruption) সম্পর্কে বলা হয় যে, ‘Power corrupts and absolute power corrupts absolutely’ (ক্ষমতা দুর্নীতির জন্ম দেয়, আর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিরঙ্কুশ দুর্নীতির পথ করে দেয়)। অর্থাত্ ‘ক্ষমতা’-ই হলো দুর্নীতির উত্স। এখন প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয়-প্রশাসনিক ক্ষমতাই কি ‘ক্ষমতার’ একমাত্র রূপ? অর্থনৈতিক ক্ষমতাও কি ‘ক্ষমতার’ আরেকটি রূপ নয়। অধিকন্তু অর্থনৈতিক ক্ষমতা কি রাজনৈতিক ক্ষমতার চেয়ে আরো নিয়ন্ত্রণমূলক ও নির্ধারণমূলক শক্তি নয়? তৃতীয়ত, আইনসংগত যা, তা যে সব সময় ন্যায়-নীতিসম্মত হবে— তেমন কথা মোটেও ঠিক নয়। আইনসংগত ব্যবসার ক্ষেত্রেও ‘শুর্নীতি’ ঘটতে পারে। ৭৫০ টাকা খরচ করে উত্পাদিত কৃষকের ধান যে ব্যবসায়ী ৪০০/৫০০ টাকায় কিনে নিয়ে দু’দিন পরে সরকারের কাছে ৭২০ টাকায় (এমনকি, খোলা বাজারে পরবর্তীতে আরো বেশি দামে) বিক্রি করবে, তাদের এই ব্যবসা কি দুর্নীতি নয়? এতো গেল নিচের দিকের ঘটনা। ওপরতলায় ব্যবসার নামে যে ক্রমেই গোটা দেশের সম্পদ ও স্বার্থ বেচে দেয়া হচ্ছে, সেসব তো ‘মহাদুর্নীতি’।
অর্থমন্ত্রীর কথা অনুসারে দেশে অবৈধ ‘কালো অর্থনীতির’ মোট পরিমাণ হলো জাতীয় আয়ের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ ও সম্ভবত ৮৩ শতাংশের কাছাকাছি। একদিকে, দেশের দৃশ্যমান অর্থনীতির বড় অংশ হলো কোনো না কোনো ধরনের ‘দুর্নীতির’ প্রক্রিয়ার ফসল। তার সাথে যদি কালো অর্থনীতির গোটাটাই যোগ করা হয় তাহলে কে অস্বীকার করতে পারবে যে, দেশ আজ ‘দুর্নীতির’ দখলে চলে গেছে।
নিচের তলার ক্ষুদে ঘুষ-দুর্নীতি (petty bribery) নিয়ে অভিযোগ-অনুযোগ বহুদিনের। সেসব নিয়ে কতো রকম কেচ্ছা-কাহিনী, গপ্পো বহুদিন ধরে প্রচলিত রয়েছে। লিখতে লিখতে এ ধরনের একটি গপ্পের ঘটনা মনে পড়ে গেল। সম্ভবত সেটা ১৯৬৬ সালের শুরুর দিকের ঘটনা ছিল। আমরা তখন ইন্টারমিডিয়েটের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তখন আমরা ছাত্র ইউনিয়নের একনিষ্ঠ কর্মী। সাথে সাথে সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদের আদর্শে দীক্ষিত হয়ে গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সাথেও যুক্ত। এমনি কোনো এক সময়ে আমাদের কলেজের পার্টি গ্রুপের কয়েকজন কৃষক আন্দোলনের সাথে সংহতি জানাতে ও হাতে- কলমে শ্রেণিসংগ্রামের শিক্ষা নিতে নরসিংদির রায়পুরা এলাকায় গিয়ে কয়েকদিন থেকেছিলাম। ওই এলাকায় আলগি বাজারে কৃষক সমিতির একটি জনসভার প্রচার কাজে আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেই জনসভায় জননেতা মহিউদ্দিন আহমেদ বক্তৃতা করেছিলেন। দীর্ঘদেহী সুপুরুষ মহিউদ্দিন ভাই তার বক্তৃতায় সমাজে দুর্নীতির হাল কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে তার চিত্র তুলে ধরার জন্য এই গপ্পটি বলেছিলেন।
গ্রামের এক কৃষকের বাড়িতে চুরি হয়েছে। গৃহস্থ গেলেন থানায় এজাহার দিতে। দারোগা সাহেব তাকে বললেন, ‘এজাহার তো নিবো, কিন্তু এজন্য তো টাকা কিছু দিতে হবে। একশ টাকা দে! তোর কাজ কমেই করে দিব।’ কৃষক বললো, ‘দারোগা সাহেব এতো টাকা কোথায় পাবো? টাকাতো নেই।’ দারোগা বললেন, ‘এ কেমন কথা? একশ টাকা দিতে পারবি না তাহলে এজাহার লিখবো কীভাবে। ঠিক আছে, পঞ্চাশ টাকা দে।’ কৃষক বললো, ‘দারোগা সাহেব পঞ্চাশ টাকাও তো নেই।’ দারোগা বললেন, ‘চোপ ব্যাটা! দে, তাহলে দশ টাকাই দে, এজাহার লিখে নিচ্ছি।’ কৃষকের কাছে সেই টাকাও নেই জানতে পেরে দারোগা বললেন, ‘হারামজাদা! গরীব মানুষ! ঠিক আছে, একটা সিগারেট এনে দে!’ কৃষক তখন বললো, ‘হুজুর! আমার কাছে যে একটা পয়সাও নাই। সিগারেট এনে দিব কি দিয়ে। হতাশ ও বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত দারোগা কৃষককে বললো, ‘ব্যাটা কিছু না দিয়ে এজাহার লেখাবি? এটা কি হয় কোনো দিন। আমি কি তা করতে পারি। কিছু একটা তো তোকে দিতেই হবে।’ দারোগা সাহেব তার পিঠের কাপড় ওপরে তুলে ধরে কৃষককে বললেন, ‘ঠিক আছে। দে, পিঠটা চুলকিয়ে দে! কিছু একটা তো নেই!’
মেয়ের জন্য সুপাত্রের খোঁজ নিতে অন্যান্য নানা বিষয়ের সাথে প্রস্তাবিত পাত্রের বেতনের খোঁজের চেয়ে আরো বেশি আগ্রহ নিয়ে যে ‘উপরি পাওনা কতো’ তার খবর নেয়া হতো, সেসব চুটকি-গল্প সবসময়ই মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। শুধু সরকারি কর্মচারীই নয়, উকিল সাহেবরা মৃত্যুর সময় আইন পেশায় আসা পুত্রের জন্য কতগুলো মামলা ঝুলিয়ে রেখে উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তর করে যেতে সক্ষম হলেন, সত্তদাগরি অফিসে চাকরি করে কে কীভাবে কতো টাকা হাতিয়ে নিতে পারলো— এসব গল্প-ছড়াতো মুখে মুখে।
কিন্তু ঘুষ-দুর্নীতির এসব ঘটনা সম্পর্কে আগাগোড়াই ধারণা ছিল, এগুলো হলো ব্যতিক্রম। শুধু ধারণাই নয়, বাস্তবটাও ছিল তেমনি। সততা ছিল নিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতি ছিল ব্যতিক্রম। যারা ঘুষ-দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকতো, তারা সে ধরনের কাজ করতো সংগোপনে। আড়ালে, আবডালে, লুকিয়ে। ঘুষ-দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকার অভিযোগ ছিল একটি সামাজিক তিরস্কারের বিষয়। ঘুষ-দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকাটা ছিল— সমাজে মুখ দেখানো যায় না, এমন একটি গুরুতর অপরাধ ও লজ্জাবোধের বিষয়। নায়ক কখনোই অথবা কোনো অবস্থাতেই ঘুষ-দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকতে পারে না। ঘুষ-দুর্নীতির কাজ হলো ভিলেনের তথা খল-নায়কের চরিত্রের সাথে জড়িত বিষয়, নায়কের চরিত্রের সাথে নয়। এটাই ছিল ধ্রুব সত্য।
অবস্থা বদলাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক বদলেও গেছে। আমরা আগাতে পারিনি, পিছিয়েছি। সেটা অনেক ক্ষেত্রেই, বিশেষত ‘দুর্নীতির’ ক্ষেত্রে। এতোদিন যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা তা হলো ‘ঘুষ-দুর্নীতি’ সম্পর্কে। কথাটি হলো ‘ঘুষ-দুর্নীতি’ অর্থাত্ যে দুর্নীতি ‘ঘুষ’ রূপে সংগঠিত হয়, তা নিয়ে। ঘুষ ছাড়াও দুর্নীতির আরো অনেক রূপ আছে। এমনকি, যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি দিয়ে একথাও প্রমাণ করা যায় যে, ব্যক্তিগত পুঁজির সহযোগে মালিক যে মুনাফা পকেটস্থ করে, তা হলো প্রকৃতভাবে শ্রমিকের শ্রম-শক্তি দ্বারা সৃষ্ট উদ্বৃত্ত-মূল্যের অন্যায় আত্মসাত্। পুঁজিবাদের মর্মকথা হলো শোষণ। তাই, পুঁজিবাদে মুনাফার বিষয়টি হলো চূড়ান্ত বিবেচনায় সবচেয়ে বড় ‘দুর্নীতি’। কিন্তু এ নিয়ে সবাই একমত নাও হতে পারে। তাই সে কথা থাক। ‘ঘুষ-দুর্নীতির’ কথাতেই না হয় আজ সীমাবদ্ধ থাকি।
দুর্নীতির সবচেয়ে আলোচিত রূপ হলো ‘ঘুষ’। কিন্তু আমাদেরকে এখন ‘ঘুষ-দুর্নীতি’ নিয়ে আলোচনা থেকে একধাপ ‘এগিয়ে’ শুনতে হচ্ছে ‘ঘুষে দুর্নীতির’ কথা। অর্থাত্ ‘ঘুষের মধ্যে দুর্নীতি ঢুকে পড়ার’ কথা। এই ‘পশ্চাত্মুখী অভিযাত্রার’ যুগের অবসান ঘটাতে হলে লুটপাটের অর্থনৈতিক-সামাজিক দর্শন থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। এটি একটি আবশ্যিক কর্তব্য। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার গতিপথ ঘুরিয়ে দেশকে প্রগতিশীল ‘অগ্রমুখী অভিযাত্রা’র ট্র্যাকে নিয়ে আসার জন্য নবশক্তি জাগরণও আজ সেই সাথে অপরিহার্য।
++লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
E-mail : selimcpb@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন