সোমবার, ২৮ মে, ২০১২

দ্য ইকোনোমিস্টের রিপোর্ট এবং বাংলাদেশের বাস্তবতা



 রতনতনু ঘোষ  
লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী সাময়িকী ‘দ্য ইকোনোমিস্ট’ বাংলাদেশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে পরপর দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রিপোর্ট দুটির বক্তব্যের প্রতিবাদ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায় হতে এবং সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে। তাদের প্রতিক্রিয়া ও অভিমত অনুযায়ী প্রতিবেদন দুটোর ভাষ্য অসত্য, বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পরিপন্থি। তাদের মতে প্রতিবেদন দুটি অগণতান্ত্রিক, সুবিধাভোগী ও চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্রের অংশ। যুক্তরাজ্যের দ্য ইকোনোমিস্টের শনিবারের সংখ্যায় প্রতিবেদন দুটোর শিরোনাম ছিল:
১. বাংলাদেশের বিষাক্ত রাজনীতি : হ্যালো দিল্লী এবং ২. প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবেদনের মূল ভাষ্য হলো: ১. বাইরের বিশ্ব বাংলাদেশ সম্পর্কে খুব কমই নজরে রাখে। কারণ এর কোনোকিছুরই পরিবর্তন হয় না। ২. বাংলাদেশের ১৭ কোটি দরিদ্র মুসলমান পৃথিবীর নিকৃষ্ট শাসনের মধ্যে বসবাস করছে। যেহেতু এদেশের রাজনীতিকরা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে আগ্রহী নয়। তাই বাইরের বিশ্বকে এ কাজ করতে হবে। ৩. সংসদ নির্বাচনের আঠার মাস আগে বাংলাদেশের রাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে, বিরোধী দলের নেতাদের জেলে পাঠানো হয়েছে। ৪. আগামী নির্বাচন কার অধীনে হবে এবং স্বচ্ছ হবে কী না তা নিয়ে বিবাদ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় অনেক পর্যবেক্ষক সন্দিহান হয়ে পড়েছেন যে, দেশটিতে আদৌ নির্বাচন হবে কী না। ৫. সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে গ্রাস করতে চায়। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দীর্ঘ অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি এতটা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে যে, দাতারাও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ৬. বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে জোরালো সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ৭. শেখ হাসিনা যতই কঠোর হচ্ছেন জনগণ ততই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ৮. ক্ষমতায় এসে সংবিধান পরিবর্তন করে তিনিই (শেখ হাসিনা) সেই ব্যবস্থা (নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার) বাতিল করে দিয়েছেন। ৯. ঢাকার জরাজীর্ণ সড়কের মতোই বাংলাদেশের রাজনীতিও যানজট কবলিত। আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
দ্য ইকোনোমিস্টে প্রকাশিত এসব বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেশের বাস্তব পরিস্থিতি ও সরকারের ভাবমূর্তি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা যেতে পারে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রতিবেদনের ভাষ্যকে মনগড়া ও ভিত্তিহীন বলা হলেও এ নিয়ে দেশের পত্র-পত্রিকায় তোলপাড় হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিকে বলা হয়েছে ‘বিষাক্ত’ এবং দেশের পরিস্থিতিকে ‘বিপজ্জনক’ রূপে গণ্য করা হয়েছে। বাস্তবত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংঘাতময়, উত্তপ্ত এবং উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত হরতাল, ভাঙচুর, হুমকি ও বিভেদ সৃষ্টি করেছে সহিংসতা, অনৈক্য ও অনাস্থা। শান্তিপ্রিয় জনগণের নিকট এ অবস্থা অকাম্য। এর দ্রুত নিরসন হওয়া উচিত দেশ ও জনগণের দিকে তাকিয়ে। এক্ষেত্রে সরকারি ও বিরোধী দলকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন এ বক্তব্য সরকার অস্বীকার করেছে। এজন্য বিরোধী দলের নৈরাজ্যমূলক কর্মসূচিকে দায়ী করা হয়েছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের মতে সরকারই তাদেরকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে, সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দেশে যা কিছু ঘটছে তার জন্য সরকারই দায়ী।
বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত হয়েছিল ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে। বিগত চার দশকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, সমস্যা-সংকট, টানাপোড়েন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও বাংলাদেশ অনেক দিক দিয়ে অগ্রসর হয়েছে। শুধু বিষাক্ত রাজনীতির প্রভাবে জনজীবন প্রায়শ দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সেজন্য সরকার ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক তত্পরতাই মূলত দায়ী। জাতীয় সংসদকে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধান এবং রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুরূপে গড়ে তোলা হয়নি কার্যকরভাবে। সংসদীয় রীতি-নীতি ভঙ্গ করা এবং লাগাতার সংসদ বর্জন করাও এক্ষেত্রে দায়ী। জনগণ কার্যকর সংসদ এবং সংসদীয় গণতন্ত্র প্রত্যাশী। অনৈক্য ও বিভেদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি জনগণের অপছন্দ। দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবেলায় বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান প্রত্যাশিত নয় যদিও অতীতে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সংগঠন ‘ট্যুইসডে গ্রুপকে’ এ ব্যাপারে ভূমিকা পালন করতে হয়েছে, নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক এসেছেন। দেশের প্রধান দুটো দলের শীর্ষ নেত্রীদ্বয়কে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয়া, হরতাল না করার এবং সংসদকে কার্যকর করার অঙ্গীকার করিয়েছেন ’৯১-এর নির্বাচনের পূর্বে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। এবার দ্য ইকোনোমিস্ট শঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশের গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে, নির্বাচন হবে কীনা তা নিয়েও। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী আগামী দশম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন এবং নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং এ নিয়ে কোনরূপ সংশয় নেই। সরকারের বক্তব্য হলো ২০১৪ সালের নির্বাচন হবে অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো নির্বাচিত ও ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই।
সংবিধান অনুযায়ী তিন মাসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়। তবে এ সরকার হবে শাসনতন্ত্রের বিধান মেনে এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে, অনির্বাচিতদের নিয়ে নয়। তিন মাসের জন্য সরকার কোনো নীতিনির্ধারণী কাজ করবে না। অন্যদিকে বিরোধী দলের বক্তব্য হলো: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। প্রয়োজনে ‘তত্ত্বাবধায়ক’-এর পরিবর্তে অন্য নামকরণ করা যেতে পারে। বিরোধী দলের এ দাবি মানলে তারা সংসদে যাবেন, আলোচনা করবেন। কিন্তু সরকার নিঃশর্ত আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। বিরোধী দলের প্রস্তাবিত দাবি নিয়ে সংসদে আলোচনার পর তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করতেও সম্মত আছেন সরকার। সংসদই হলো সংলাপ বা আলোচনার উপযুক্ত স্থান। সাংসদরা সংসদেই সুন্দর। বিরোধী দল তাদের দাবি মেনে নিতে অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। হরতালের সময় বোমাবাজি ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের দায়ে সরকার বিএনপির ৩৩ নেতাকে বিএনপির আমলে পাসকৃত জামিন অযোগ্য আইনে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেছেন। শেষ পর্যন্ত গ্রেফতারকৃত পাঁচজন সংসদ সদস্যকে মুক্তি দেয়া হয়েছে সংসদের বাজেট অধিবেশন উপলক্ষে। কারাবন্দী বাকি নেতাদের কেন মুক্তি দেয়া হবে না সে সম্পর্কে রুল জারি করেছে আদালত। সরকার বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের বিরোধী দলীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আইন অনুযায়ী নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে নাশকতার দায়ে এবং জনগণের জান-মাল রক্ষার্থে। বিরোধীদল গ্রেফতারের প্রতিবাদে হরতালও পালন করেছে। সরকার আরো কঠোর আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আর বিরোধী দল ১০ জুনের মধ্যে তাদের দাবি মানার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। পারস্পারিক কঠোর পদক্ষেপের কারণেই জনমনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা ও উদ্বেগ।
এ অবস্থা থেকে রক্ষার জন্য ইকোনমিস্ট পত্রিকাটি দিল্লির হস্তক্ষেপ আহ্বান করলেও একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তা মেনে নেয়া সম্মানজনক নয়। কারণ বিদেশের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা ও মৈত্রীতে বিশ্বাসী, কোনরূপ হস্তক্ষেপ কিংবা আধিপত্যমূলক তত্পরতায় নয়। এজন্য ‘দ্য ইকোনোমিস্টের’ রিপোর্টকে ‘অনভিপ্রেত’ বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। জনগণও চায় সরকার তার দৃঢ়তা বজায় রাখুক। কিন্তু বিরোধী দলের সহযোগিতা ছাড়া তা পারবে কি সরকার? আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে হবে যাতে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। এ ব্যাপারে প্রয়োজন সংসদীয় আলোচনা, সংবিধানসম্মত সংলাপ এবং  বাঞ্ছিত মতৈক্যে পৌঁছানো। ইতোমধ্যে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, নেতাদের জেলে রেখে তারা সংসদে যোগ দেবেন না। তাহলে সমাধান কি! দেশের সুশীল সমাজ ও রাজনীতি বিষয়ে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, বিরোধী দলের উচিত সংসদে যোগ দিয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরা আর সরকারের উচিত তাদের বক্তব্য বিবেচনা করা। কোনোরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই তা করা উচিত। তাহলেই জনগণ স্বস্তি পাবে, রাজনীতি তার বিষাক্ত বৃত্ত থেকে মুক্ত হবে। সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করেছেন। ড. ইউনূসকে সম্পদের মালিকানা সংক্রান্ত সুপারিশ করতে বলা হয়েছে। নোবেল বিজয়ী ড.মুহম্মদ ইউনূস রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ বলেছেন এবং রাজনৈতিক দল গঠন করে রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশের আগ্রহও প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। এবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ড. মুহম্মদ ইউনূস ও স্যার ফজলে হোসেন আবেদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন ঢাকায়। তিনি গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. মুহম্মদ ইউনূসের মর্যাদার উপর আঘাত যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেবে না বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীদের এক প্রশ্নোত্তর পর্বে। দ্য ইকোনোমিস্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ড. মুহম্মদ ইউনূসকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন এবং সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে গ্রাস করতে চান। বাস্তবত গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের অংশ রয়েছে। সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে তত্পর নন। এছাড়া সরকারি দলের মন্ত্রীরা ড. মুহম্মদ ইউনূসকে রাজনীতিতে নেমে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একজন নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিত্ব রাজনীতি সম্পর্কে তার অভিমত দিতে পারেন। কিন্তু তিনি দেশের রাজনীতিকে বিদেশি হস্তক্ষেপের মুখোমুখি করতে সহায়তা করবেন তা কাম্য নয়। সরকার মনে করেন বিগত সেনাসহায়ক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ‘মাইনাস টু ফর্মূলার’ তিনি সহায়ক হয়েছেন।  এ ধারণা থেকেই সম্ভবত ড. ইউনূসের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশিত। স্বীয় অভিজ্ঞতার আলোকে প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ‘দানবীয়’ বলেছেন।
সব তত্ত্বাবধায়ক সরকার দানবীয় না হলেও বিতর্কমুক্ত নয়। প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেননি বরং উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী সংসদ তা বাতিল করেছেন। এ রায়ের বাকি অংশ অর্থাত্ ‘সংসদ চাইলে আগামী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হতে পারে’— এ বক্তব্যের মীমাংসা করতে প্রয়োজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের যথাযথ ভূমিকা পালন। সেজন্য বিরোধী দলকে  সংসদে গিয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করা জরুরি। নির্বাচন ভবিষ্যতে হবে কিনা তা নিয়ে যে সংশয় প্রকাশিত হয়েছে তা কেটে যাবে এ প্রক্রিয়ায় এবং দেশও সংঘাতমুক্ত হতে পারবে। দাতা ও বিনিয়োগকারীরা দেশের সংঘাতময় রাজনীতি নিয়ে শঙ্কিত হতেই পারেন। তবে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ তাদের চেয়েও বেশি উদ্বিগ্ন হন দেশের রাজনৈতিক সংঘাতের পরিস্থিতিতে। কারণ সংঘাত, বিভেদ ও সহিংসতার যাবতীয় কুফল জনগণকেই বেশি ভোগ করতে হয়। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন, ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী এবং জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী তানাকা ওকাদা বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন ও কৃষি উত্পাদনের প্রশংসা করেছেন। তারা চান এ দেশটির রাজনীতি সংঘাতমুক্ত হয়ে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হোক। অতি কঠোরতা প্রায়শ প্রতিহিংসা ও অসহিষ্ণুতার সৃষ্টি করে। কিন্তু জনগণের জান-মালের নিরাপত্তাদানে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে চরম পর্যায়ে কঠোর না হয়ে উপায়ও থাকে না।
গণতন্ত্রে প্রয়োজন সহিষ্ণুতা, সমঝোতা, সহমর্মিতা ও মতৈক্য। দেশে সংসদ,  সংবিধান, আইন-আদালত আছে। সরকার ও বিরোধী দল উভয়কে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ের দিকে নজর দিতে হবে। তাহলেই সংঘাতমুক্ত, সংশয়মুক্ত হওয়া যাবে এবং অনিশ্চয়তার পথ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। দুর্নীতি, গুম, অপহরণ ও হত্যা বন্ধে সরকারকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ১৯৯০ সালে গণতন্ত্র অর্জনের সুকঠিন সংগ্রামে এ দেশের রাজনীতিবিদরা উত্তীর্ণ হয়েছেন ছাত্র-জনতার সহায়তায়। অতীতে দেশে বার বার সমস্যা এসেছে। রাজনীতিবিদরা সকলের সহযোগিতায় তা কাটিয়ে উঠেছেন। এবারও তাই করতে হবে। বিদেশি হস্তক্ষেপে নয়, দেশি রাজনীতিবিদদের প্রজ্ঞা, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং অতীত অভিজ্ঞতার আলোকেই সমঝোতার মাধ্যমে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠবেন— জনগণ এমনটি আশা করে। তাহলেই ‘ঢাকার জরাজীর্ণ সড়কের মতোই বাংলাদেশের রাজনীতিও সংকটকবলিত’ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। অগণতান্ত্রিকতার বিপক্ষে গণতন্ত্র, সংঘাতের বিপরীতে সমঝোতা, অসহিষ্ণুতার বিপরীতে সহিষ্ণুতা, সহিংসতার বিপরীতে অহিংসা জয়ী হোক। বাংলাদেশের রাজনীতি হোক জনগণের সমস্যা নিরসনের গণতান্ত্রিক উপায়।
n লেখক: প্রবান্ধিক ও গবেষক
ই-মেইল-ratantanukc@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন