রবিবার, ২৭ মে, ২০১২

ছাদের উপর ঘোড়া খোঁজা আর ফখরুল ইসলামের বাসায় ইলিয়াস আলীকে খোঁজার মধ্যে পার্থক্য কোথায়?


খান মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী : 
এক লোকের ঘোড়া হারিয়ে যাওয়ার পর সে তার বিল্ডিং-এর ছাদে উঠে ঘোড়া খোঁজতেছিল। অন্য একজন জিজ্ঞেস করল ভাই এত হন্যে হয়ে কি খুঁজছেন? ঘোড়া হারানো বেদনায় ব্যথিত ব্যক্তি বলল ‘‘আমার ঘোড়াটি হারিয়ে গেছে, তাই খুঁজে দেখছি। অন্যজন বলছেন, আপনি কি আহম্মক নাকি? কেউ কি ছাদের উপর ঘোড়া খুঁজে? ঘোড়ার মালিক বলল আহম্মক বলেন আর যাই বলেন, আমার জিনিস হারিয়েছে আমাকে আর বাছবিচার করে খুঁজলে চলবে না, কোনো জায়গাই বাদ রাখতে চাই না। তার মূল্যবান সম্পদ ঘোড়াটি হারানোর পর সর্বত্রই খুঁজে বেড়িয়েছে লোকটিকে আপাতদৃষ্টিতে আহম্মক মনে হলেও তার একটা যুক্তি ছিল। আমি কোন জায়গা বাদ রাখতে চাই না। বর্তমানে সারাদেশের আলোচনার বিষয়বস্তু এবং একটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া। আরো অনেকেই হত্যা ও গুমের শিকার হচ্ছেন সব ঘটনাই বেদনার। এর পরেও আমরা দেখি, যখন বলা হয়-‘‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাই’’ তখন কেউ বলে না বঙ্গবন্ধু পরিবারের হত্যার বিচার চাই এর অর্থ এই দাঁড়ায় না যে, কেবল বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাওয়া হচ্ছে। এ দাবির মধ্যেই সকল হত্যার বিচার চাওয়ার ইঙ্গিত থাকে। বর্তমানে ইলিয়াস আলীর সন্ধান চাওয়ার অর্থ এই নয় যে, জনগণ ইলিয়াস আলী বা সুরঞ্জিত বাবুর ড্রাইভারের সন্ধান চায় না। বলার সময় সাধারণত: যে ব্যক্তি বেশি আলোচিত তার নামটাই আসে। ইলিয়াস আলী বর্তমান রাজনীতিতে একজন উদীয়মান নেতা তা অস্বীকার করার ক্ষমতা নেই। এই নেতার এমন নির্মম পরিণতি দেশের জনগণকে মারাত্মকভাবে ব্যথিত করেছে। যারা সব সময় লাশের উপর দিয়ে হাঁটে, যারা বলে একটার পরিবর্তে দশটা লাশ চাই, তাদের হৃদয় নাড়া দেয় কিনা জানি না। তবে এ বেদনাদায়ক ঘটনার রহস্য উঘাটন করা সরকার ও বিরোধী দল উভয় মিলেই করবে তা যুক্তিযুক্ত। তবে সরকার এর মূল কারণ খুঁজে বের করবে এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বিএনপি বা অন্যদের কাছে কোন্ ধরনের সহযোগিতা চায় সরকার তা সরকারকেই পরিষ্কার করতে হবে। তা না করে ইলিয়াস আলীকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় খোঁজতে যাওয়াটা কত বড় রকমের রসিকতা তা ভাববার বিষয়। যদি ওই ঘোড়া হারানো লোকটির মতো সব জায়গা খোঁজার পর এখন বাকি কেবল মির্জা ফখরুলের বাড়ি তাও দেখব এমনটি হলে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। অথচ আওয়ামী লীগের কোন নেতার বাসা তল্লাশি না করে বিএনপি নেতাদের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে সরকার বুঝাতে চায় ইলিয়াস আলীকে বিএনপিই লুকিয়ে রেখেছে। যেখানে আজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এই বুঝি স্বামী এলো এলো। যতই দিন যাচ্ছে ততই তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আরো তীব্র হচ্ছে। যদি বিএনপিই এমন পশুসুলভ আচরণটি করত তবে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে কানে কানে বলে দিত ভাবি বা মা দুঃখ করবেন না, আমরা একটি নাটক করছি, তাকে অচিরেই খুঁজে পাব। বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে যদি পুলিশলীগ, ছাত্রলীগ আর যুবলীগের যৌথ বাহিনী ময়দানে না থাকে তাহলেই প্রমাণিত হয়ে যায়। আলাদা কোন নাটক করতে হবে বা নাটক সাজাতে হবে এটা বাতুলতা মাত্র। অতএব ইলিয়াস আলীর সন্ধান দেয়া সরকারেরই দায়িত্ব। যদি সত্যি সত্যিই বিএনপি-এ নাটক করে থাকে তবে তাও জনগণের সামনে তুলে ধরে ইলিয়াস আলীকে তার মায়ের বুকে সন্তানের কাছে ও স্ত্রীর কাছে ফিরিয়ে দিয়ে বিএনপি'র আসল চেহারা উন্মোচিত করে দিন। আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবো বিএনপিকে। বিএনপি নেতা বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সুন্দর করেই বলেছেন, ‘‘যদি ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেয়ার রাস্তা খুঁজে না পান তাহলে আমার বাসায় রেখে যান এ জন্য যদি আমাকে দু'বছর জেল খাটতে হয় তাও আমি রাজি। বিজ্ঞজনের মন্তব্য হচ্ছে এ ঘটনা উদঘাটন করা সরকারের দায়িত্ব। কোন কোন পত্রিকা কিছু ইঙ্গিত দিয়ে বুঝাতে চেয়েছে, কারা এটি করতে পারে। যেমন ইতোপূর্বে সৌদী রাষ্ট্রদূত হত্যার পর নানামুখী তদন্ত হয়েছে। তখন শ্রীলঙ্কার গার্ডেন পত্রিকার বরাত দিয়ে আমাদের দেশের সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল ১০০ জন ছাত্রলীগ ক্যাডারকে ভারতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে ছাড়া হয়েছে। তাদের মহান দায়িত্বসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গুম করা। জানি না এসব খবর কতটা সত্য তবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে এর পুরো রহস্য বের করা উচিত অন্যথায় এসব ইতিহাস হয়ে থাকবে। ৩০ এপ্রিল বিভিন্ন পত্রিকায় দেখা গেল বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, ‘‘হত্যা আর গুম করার জন্য সরকার বিশেষ বাহিনী তৈরি করেছে।’’ অতএব দেশটা যেন আবার সেই রক্ষীবাহিনী নামের কোন নতুন বাহিনীর দ্বারা পর্দার আড়াল থেকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়। এটা যেমন অকল্যাণ বয়ে আনবে দেশের জন্য তেমনি অকাল মৃত্যু ঘটাতে পারে সরকারেরও। আর মনে রাখতে হবে মানুষকে নির্যাতন আর জুলুম করার পর যে সব জুলুমকারীকে অকাল মৃত্যুবরণ করতে হয় তাদের কুলখানিও ভাগ্যে জোটে না। আজ দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, অপহরণ ইত্যাদি যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। একদিকে মানুষ দ্রব্যমূল্যের যন্ত্রণায় দিশেহারা তার পরে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সমস্যা এর পরেও যদি উপরোল্লিখিত সমস্যাগুলো যোগ হয় তবে মানুষ আর কার কাছে যাবে? এমতাবস্থায় সরকারকে আরো উদার ও আন্তরিকতার সাথে সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন করতে হবে। যেন কাটা ঘায়ে লবণ ছিটিয়ে না দেন। একদিকে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বলছেন দিন দিন আমি ভেঙে পড়ছি, অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহানুভূতি না দেখিয়ে বিভিন্ন মিটিং-এ মুচকি হাসছেন এ যেন এক হৃদয়বিদারক ঘটনা।
সেদিন দেখলাম আইন প্রতিমন্ত্রী বললেন, ‘‘ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে। এ কথা শুনে আমার স্কুলপড়ুয়া নাতনী বললো এ বুড়োটা কি বলছে।’’ মাননীয় আইন প্রতিমন্ত্রী মনে করেছেন খুব একটা ভাল কথাই তার নাতনী বলেছে। দেশের একজন খ্যাতনামা আইনজীবীর ব্যাপারে স্কুলপড়ুয়া মেয়ে যদি এমন মন্তব্য করে থাকে তা কি আনন্দের না বেদনার? হতে পারে আনন্দের কারণ যেমন মন্ত্রী তার তেমন নাতনী না হলে কি আর চলে? আমরা দেখেছি ছোট সময় আববা বা বড় ভাইয়ের সাথে কারো ঝগড়া লাগলে সেখানে আমরা কোন কথা বললে মুরুববীরা চড়-থাপ্পড় মেরে বলতেন যাও- মুরুববীদের মধ্যে তোমার কথা বলা শোভা পায় না। আর মন্ত্রী মহোদয় তার নাতনীকে একথা না বলে বরং তার কথা কোড করে জাতির সামনে উপস্থাপন করলেন। একটি প্রবাদ আছে এক লোক অন্যজনকে জিজ্ঞেস করেছিল ভাই আপনার বাড়ি কোথায়? উত্তরদাতা বলেছিলেন ‘‘অাঁরেনি কন?’’ তখন প্রশ্নকর্তা বললেন আর বলতে হবে না। আপনার বাড়ি কোথায় আমি বুঝে ফেলেছি। যাইহোক এতদিন জনাব কামরুল ইসলাম সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা থাকলেও তার পরিবার সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। এবার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কেও একটা ধারণা লাভ করা সম্ভব হলো। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এমন একজন আইনজীবী যিনি বেগম খালেদা জিয়া ও বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উভয়ের মামলা পরিচালনা করেছেন। উভয় নেত্রী যাকে সম্মানের সাথেই সম্বোধন করে থাকেন আর আইন প্রতিমন্ত্রীর নাতনী তাকে বলেছে বুড়োটা কি বলে এতে যে মন্ত্রী মহোদয় কত খুশি হয়েছেন তা তার বর্ণনার ভঙ্গিতেই বুঝা যায়। তাই আসুন আমরা নিজেরাও আদর্শবান হই আর সন্তান-সন্তুতি ও নাতী-নাতনীকেও আদর্শ রূপে তৈরি করি এবং যত শিগ্গির সম্ভব ইলিয়াস আলীসহ তার ড্রাইভার ও মহাশয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ড্রাইভার-এর সন্ধান করে তাদেরকে জনগণের সামনে হাজির করার ব্যবস্থা করি। এতে সরকারের অনেক লাভ হবে, একদিকে ইলিয়াস আলীকে বিএনপিই লুকিয়ে রেখে আন্দোলন চাঙ্গা করেছে তাও প্রমাণ হবে আবার সুরঞ্জিত বাবু যে নির্দোষ তাও তার ড্রাইভারের মাধ্যমে প্রমাণ হবে। এতে সরকারেরই ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
Kanyeakub ali@yahoo.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন