আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
ভারতে গণতন্ত্রের পতন হয়েছে একথা বলা ঠিক হবে না। আমার বলার কথা, দেশটির কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব দুর্বল হতে হতে আজ এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যাকে কুড়ির ও ত্রিশের দশকের জার্মানী ও ইতালির দুর্বল গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ফ্যাসিবাদের অভ্যুত্থানে ইউরোপে এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতন ঘটে। ভারতে গণতন্ত্র দুর্বল হলেও সে বর্তমানের ঘাত-প্রতিঘাত কাটিয়ে উঠে আবার শক্তিশালী হবে, এই প্রত্যাশা আমরা এখনো করি। কিন্তু ভারতে যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সত্যি অচল হয়ে পড়ে তাহলে ‘হিন্দুত্ববাদের’ আড়ালে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ অথবা প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্রের আঞ্চলিকতাবাদ মাথা তুলতে পারে এবং শুধু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নয়, ভারতীয় গণতন্ত্রের ঐক্য ও সংহতিকেও বিপন্ন করে তুলতে পারে। ইউরোপের বলকানাইজেশনের প্রক্রিয়াও অন্য কোনো ধাঁচে ভারতেও শুরু হতে পারে।
এর একটি আলামত গুজরাটে সংখ্যালঘু হত্যার হোতা, নরপশু নরেন মোদীকে ‘উন্নয়নের প্রতীক’ আখ্যা দিয়ে তাকে ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খাড়া করার চেষ্টা। ভারতের বিগ মিডিয়ার একটা বড় অংশ একাজে তত্পর। পিছনে মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতাও রয়েছে। গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে হাজার হাজার সংখ্যালঘু হত্যার জন্য (অনেকটা গণহত্যার সামিল) নরেন মোদী নিজ দেশে অভিযুক্ত এবং মানবতা-বিরোধী অপরাধের জন্য যে লোকটিকে এই কিছুদিন আগেও আমেরিকায় যেতে মার্কিন সরকার ভিসা দেয়নি, সেই নরেন মোদীকেই ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সবচাইতে যোগ্য লোক আখ্যা দিয়ে মার্কিন পত্র-পত্রিকায় সম্প্রতি প্রচারণার ঝড় তোলা হয়েছে। টাইম ম্যাগাজিন নরেন মোদীর ছবি কভারে ছেপে তাকে নিয়ে কভার স্টোরি করেছে।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস-নেত্রী মমতা ব্যানার্জিও মার্কিন ম্যাগাজিনের কভারে উঠে এসেছেন এবং তিনি কভার স্টোরি হয়েছেন। একশ্রেণীর মার্কিন মিডিয়ার কাছে মমতা এখন ভারতের রাইজিং স্টার। অনেক ভারতীয় পলিটিক্যাল অবজার্ভারও মনে করেন, মমতার দৃষ্টি এখন দিল্লির মসনদের দিকে। দিল্লির বর্তমান কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বকে কার্যত অস্বীকার করে তিনি এখন আঞ্চলিক কর্তৃত্বের খেলা খেলছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত ও ছিটমহল সমস্যা, তিস্তার পানি ও টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প ইত্যাদি নিয়ে তিনি দিল্লির ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে বিপজ্জনক আঞ্চলিকতার খেলা খেলে সস্তা জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তার পেছনে ব্যুরোক্রেসি, বিগ বিজনেস ও বিগ মিডিয়ার একটা বড় অংশ চতুর সমর্থন জুগিয়ে চলেছে বলে অনেকের ধারণা।
মমতা ব্যানার্জি এখন পর্যন্ত ভারতের একটি মাত্র রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তার তৃণমূল কংগ্রেসের তেমন কোনো অস্তিত্ব ও প্রভাব নেই। তা সত্ত্বেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বেইজিং থেকে ছুটে এসে ঢাকা হয়ে একেবারে কলকাতা ছুটলেন মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে দেখা করতে, এই অভাবনীয় ঘটনা কি ইঙ্গিত দেয়? একটি ইঙ্গিতই কি দেয় না যে, মমতা ব্যানার্জির পেছনে কেবল দেশি নয়, বিদেশি শক্তিশালী খুঁটির জোরও আছে।
ভারতে কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতীক যে আর কংগ্রেস দল নয়, তার প্রমাণ মিলেছে এবার কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফলে। রাহুল গান্ধীর পারিবারিক ক্যারিশমা এবার কংগ্রেসের নির্বাচন জেতায় কাজ দেয়নি। অর্থাত্ গান্ধী-নেহেরু নামের তাবিজ ধারণ করে কংগ্রেস ভবিষ্যতে লাভবান হবে না, তারই আভাস পাওয়া গেছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল শক্তিশালী হচ্ছে। কংগ্রেস এরকম কিছু আঞ্চলিক দলের সমর্থনের উপর ক্ষমতায় টিকে আছে।
মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস এরকম একটি আঞ্চলিক দল। কংগ্রেস দল মার্কিন মৈত্রীর লোভে বামফ্রন্টের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করে তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়ার পর এখন মমতাসহ কিছু আঞ্চলিক দলের সমর্থনের উপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক শক্তি দুর্বল হচ্ছে। আঞ্চলিকতা মাথা তুলছে। এই আঞ্চলিকতা সকল সময় গণতন্ত্রের সপক্ষশক্তি নয়। ভারতের গণতন্ত্র তাই দু’দিক থেকে আক্রান্ত। একদিকে হিন্দুত্ববাদের স্লোগানের আড়ালে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের এবং অন্যদিকে আঞ্চলিক স্বার্থের দোহাই পেড়ে বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন গণতন্ত্র বিরোধী শক্তির উত্থান। যদিও তাদের গায়ে গণতন্ত্রের নামাবলি চাপানো। দিল্লীর সিংহাসনে মনমোহন সিংয়ের অবস্থা এখন অনেকটাই শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহের মতো। যদিও তার হাতে পরমাণু মিশাইল আছে এবং গলায় মার্কিন পরমাণু সহযোগিতা চুক্তির মালা ঝোলানো রয়েছে। আমাদের মনে রাখা দরকার, সামরিক শক্তিতে আমেরিকার সঙ্গে সমকক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়ন টিকতে পারেনি। কারণ, তার অর্থনৈতিক শক্তির ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছিলো।
ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য বিপদের সূচনা করে গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী নিজেই। তার ছেলে সঞ্জয় গান্ধীর তবু রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞান ছিলো, রাজনীতির চাতুর্য্য জানা ছিলো। রাজীব গান্ধী ছিলেন সম্পূর্ণ রাজনীতি-বিমুখ। বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রী পদ গ্রহণের আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন পেশায় বিমানের পাইলট। ভারতের মতো বিশাল দেশকে নেতৃত্বদানের মতো অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা তিনি কখনো অর্জন করেননি। যখন অর্জন করেন, তখন তাকে হত্যা করা হয়। ইন্দিরা গান্ধী অত্যন্ত দূরদর্শী রাজনীতিক হওয়া সত্ত্বেও পরিবারতন্ত্রের স্বার্থ দেখতে গিয়ে ভারতীয় গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য যোগ্য ও অভিজ্ঞ উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করে যাননি।
কংগ্রেস নেতৃত্বে এরকম যোগ্য ও অভিজ্ঞ উত্তরাধিকারী হওয়ার মতো নেতা তখন বহু ছিলেন; কিন্তু পরিবারতন্ত্র যেমন ভারতের কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য ও শক্তিকে এক সময় ধরে রেখেছে, পরে তারই অদক্ষতা ও অনভিজ্ঞতার জন্য তেমনি সেই পরিবারতন্ত্র ভারতীয় গণতন্ত্রকে ক্রমশ দুর্বল হওয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে। শক্তিশালী বাম গণতান্ত্রিক দলগুলোও নিজেদের মধ্যে তাত্ত্বিক বিরোধের জন্য ভারতীয় গণতন্ত্রে কংগ্রেসের বিকল্প সর্বভারতীয় দ্বিতীয় দল হয়ে উঠতে পারেনি। বরং দ্বিতীয় সর্বভারতীয় দল হয়ে ওঠার জন্য হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগটি সৃষ্টি করেছে কংগ্রেসের দুর্বল নেতৃত্ব এবং সেই নেতৃত্বের নীতিহীনতা।
রাজীব হত্যার পর এ পর্যন্ত কংগ্রেসে আর কোনো সবল নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর আবির্ভাব হয়নি। নরসীমা রাও সর্বভারতীয় নেতা হওয়ার যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন না। মনমোহনসিংয়ের তো সেই যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। দিল্লির কোনো কোনো সংবাদপত্র তাকে আখ্যা দিয়েছে, রাহুল গান্ধীর প্রক্সি প্রধানমন্ত্রী। অর্থাত্ যদিও তিনি ভোটদাতাদের ভোটে এবার প্রধানমন্ত্রী, আসলে রাহুল গান্ধীর প্রতিনিধি। তিনি নিজেই বলেছেন, রাহুল চাইলেই তিনি তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেবেন। প্রণব মুখার্জি তো আগে ভাগেই কর্তাভজা গীত গেয়েছেন; বলেছেন, ‘আমাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী রাহুল গান্ধী’; কিন্তু ভারতের কয়েকটি রাজ্যের (রাহুলের নিজের উত্তর প্রদেশসহ) নির্বাচনের ফল এই সম্ভাবনাকে পোক্ত করেনি। বরং দুর্বল করে দিয়েছে। সম্ভাবনা বাড়ছে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর নরেন মোদীর, এমন কি তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জিও সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
ওয়াশিংটন ভারতীয় গণতন্ত্রের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে। অবশ্য এই সুযোগ তারা খুঁজেছে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই। নেহেরুর নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ভূমিকার জন্য তারা ভারতকে পশ্চিমা শিবিরে ভেড়াতে পারেনি। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করে এবং পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে নানা বিরোধ উস্কে দিয়ে তারা ভারতকে কাবু করতে চেয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক শক্তি যতোই দুর্বল হয়েছে, ততোই এই কাবু করার কাজটি সফল করা সহজ হয়েছে। অতীতে চীন ও সোভিয়েট ইউনিয়নের বিরোধের সুযোগ আমেরিকা যেমন নিয়েছে, তেমনি বর্তমানে নিচ্ছে ভারত ও চীনের মধ্যে বিরোধের। হিন্দুত্ববাদী বিজেপির উত্থান, শিক বিদ্রোহ এবং আঞ্চলিক স্বার্থ কেন্দ্রিক দলগুলোর (যেমন মমতার তৃণমূল) শক্তি অর্জনেও আমেরিকার নেপথ্য মদদ রয়েছে বলে মার্কিন সূত্রেই খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এ সবেরই উদ্দেশ্য, ভারতের কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য ও শক্তিকে দুর্বল করা এবং মার্কিন চাপের কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য করা। বিজেপি ক্ষমতায় এসে নিজেদের দলীয় স্বার্থে এই কাজটি করে গেছে; পরবর্তীকালে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ক্ষমতায় এসে কংগ্রেস আরেক ধাপ এগিয়ে আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু সহযোগিতার চুক্তির নামে কণ্ঠিবদলের পর্বটি শেষ করেছে। দিল্লির আশা, সে চীনের মতো মার্কিন সহযোগিতায় এশিয়ায় চীনের প্রতিযোগী সুপার পাওয়া হবে।
ভারত-আমেরিকার মৈত্রীর ফলাফল ইতিমধ্যেই উপমহাদেশের রাজনীতিতে দেখা দিতে শুরু করেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। মনমোহন সরকার এখনো একদিকে আন্না হাজারে, অন্যদিকে মমতা ব্যানার্জিকে সামলাতে ব্যস্ত। প্রতিবেশী দেশগুলোর বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে না। আঞ্চলিক দলগুলোর উপর কংগ্রেস সরকারের নির্ভরতা, শুধু ভারতীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রীয় শক্তিকেই দুর্বল করেনি, ডানপন্থী আঞ্চলিক দল ও দল বিশেষের কাছে তাকে নতজানু করে রেখেছে।
সবচেয়ে বিপদের খবর হলো, ভারতীয় সেনাবাহিনীর গণতান্ত্রিক আনুগত্যের যে অর্ধশতাব্দিরও বেশি সময়ের সুনাম, তাতে সন্দেহের তীর বিদ্ধ হয়েছে। মার্কিন প্রভাবের সেখানে অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং সামরিক বাহিনীতে এক ধরনের অস্থিরতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সাবেক মেজর জেনারেল কে. কে. গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতায় ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকায় (১৮ এপ্রিল বুধবার, ২০১২) এ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। যদিও তিনি বিষয়টি লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু বিষয়টি যে লঘু নয় তা নিবন্ধটি পাঠ করলেই বোঝা যায়।
ভারতের সামরিক বাহিনী বেশির ভাগ রাশিয়ান অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। এতোদিন পর সেনা কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এখন সরকারের কাছে প্রকাশ্যে দাবি জানাচ্ছেন, তাদের নতুন অস্ত্রশস্ত্র দেওয়া হোক। নতুন অস্ত্র মানে আমেরিকার কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র কেনা। অস্ত্র ব্যবসায়ের মাধ্যমেই আমেরিকা অন্য দেশের রাজনীতিতেও প্রভাব ও কর্তৃত্ব বিস্তার করে। ভারতের সামরিক বহিনীতেও মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ের অনুপ্রবেশ দেশটির রাজনীতিতে কি অবাঞ্ছিত পরিবর্তন ঘটাবে সে সম্পর্কে অনেকেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করছেন।
কিছুদিন আগে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে আরেকটি ঘটনা বিরাট চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিলো। ভারতীয় সামরিক বহিনীর দু’টি ইউনিট ১৫-১৬ জানুয়ারি তারিখে হঠাত্ কেন দিল্লি অভিমুখে যাত্রা করেছিলো তা নিয়ে ভারতীয় সংবাদপত্রে বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। কেউ কেই এটাকে বলছেন, রজ্জুতে সর্পভ্রম। কিন্তু সাপ যে প্রয়োজনে রজ্জুর ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে, বাংলাদেশের এক এগারোর ঘটনা কি তার প্রমাণ নয়? আমার কথা, ভারতীয় গণতন্ত্র এখন এক অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে চলছে। গণতন্ত্র প্রিয় প্রতিটি মানুষের কামনা ভারত এই অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোক। নইলে তার প্রতিবেশী দেশগুলোতেও দুর্বল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে; দেশি বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল চক্রগুলোর ষড়যন্ত্রে সারা উপমহাদেশে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠবে। গত শতকের বিশের ও ত্রিশের দশকে জার্মানী ও ইতালিতে গণতন্ত্রের পতন ও ফ্যাসীবাদের অভ্যুত্থানে সারা ইউরোপ বিপন্ন হয়েছে, সর্বত্র যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠেছিলো। ভারতে গণতন্ত্র বিপন্ন হলে সারা উপমহাদেশে প্রায় বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। ধর্মীয় অথবা অন্য ধরনের ফ্যাসিবাদ মাথা তুলবে। সেই আশঙ্কা সম্পর্কে সারা উপমহাদেশেই এখন সচেতনতা সৃষ্টি হওয়া দরকার। আমরা যেন আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মিউনিক চুক্তির মতো একটি ব্যর্থ চুক্তি সম্পাদনের আশায় বসে না থাকি। (সমাপ্ত)
লন্ডন, ২৬ মে শনিবার, ২০১২
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন