শনিবার, ২৬ মে, ২০১২

তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো ‘দানব’ ছিলো না



 ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার  
মা থাপিছু আয়, আর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রভৃতি দিক থেকে বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও উদ্ভাবনী শক্তির দিক দিয়ে এ দেশটি বিশ্বসমাজে সুপরিচিত। এ দেশের মেধাবি নাগরিকরা অনেক নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করেছেন। শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া ও গবেষণা করে নতুন নতুন ক্ষেত্রে আরও অবদান যুক্ত করতে পারতো। দেশে-বিদেশে আজ ক্ষুদ্রঋণের আলোচনায় বাংলাদেশের নাম এসে যায়। এসে যায় গ্রামীণ ব্যাংকের নাম। গ্রামীণ উন্নয়ন নিয়ে কুমিল্লা মডেল এক সময় বহুল আলোচিত হয়েছে। আশির দশকে উপজেলা নাম দিয়ে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হলে বিষয়টি পাশ্চাত্যের বিদগ্ধ সমাজে আলোচিত হয়েছিল। একইভাবে ১৯৯০-এর দশকে সামরিক শাসনামলে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হলে মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সচল রাখার স্বার্থে দীর্ঘ দুই বছরের আন্দোলন সংগ্রামের পর এ দেশের সম্মানিত রাজনীতিবিদরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার উদ্ভাবন ঘটালে ওই বিষয়টিও বিশ্বসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নির্বাচনে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ স্বল্পায়ুর অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটি কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও কাজ শুরু করেছিল এবং সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি আছে এমন অনেক দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচনে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের তত্ত্বাবধায়ক মডেল আমদানি করবেন কিনা সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছিলেন। আমাদের সম্মানিত রাজনৈতিক নেতারা যদি তাদেরই উদ্ভাবিত এ ব্যবস্থাটির দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে একে আরও সফল করার জন্য সম্মিলিতভাবে  এ ব্যবস্থাকে একটি ত্রুটিমুক্ত ও অধিক গ্রহণযোগ্য রূপ দিতে কাজ করতেন তাহলে অদূর ভবিষ্যতে একই প্রকৃতির সংঘাতময় সংস্কৃতির দেশে আমরা তত্ত্বাবধায়ক মডেল রপ্তানির কথা ভাবতে পারতাম।        
আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৯৯৬ সালে একটি বিস্ফোরন্মুখ পরিস্থিতিতে সর্বসম্মত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক রূপ দেয়ার সময় বিএনপি এককভাবে একটি বিতর্কিত নির্বাচন করতে বাধ্য হয়ে স্বল্পায়ুর সংসদে একতরফাভাবে এ সরকারের রূপরেখা নির্মাণ করে এবং সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিষয়টি সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়। ফলে এ সরকারের রূপরেখায় কিছু সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা থেকে যায়। সব দল মিলে একত্রে সংসদীয় আলোচনার মাধ্যমে ওই সময় এ সংশোধনীটি হলে হয়তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আরও ত্রুটিমুক্ত হতে পারতো। ওই সময় সম্মানিত বিচারপতিদের ওপর আস্থাবান হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যাপারে এ পদে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ছয়টি বিকল্পের মধ্যে প্রথম চারটিতেই বিচারপতিদেরকে সুযোগ দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথম সুযোগ পান সুপ্রীম কোর্টের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। এ প্রক্রিয়ায় বিচারপতি হাবিবুর রহমান এবং বিচারপতি লতিফুর রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়নকারিগণ বুঝতে পারেননি যে আগামীতে রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক লাভ-লোকসানের অঙ্ক কষাকষি করে এ জায়গাটি কলুষিত করবেন। যদি তারা এ ব্যাপারটি তখন বুঝতে পারতেন তাহলে হয়তো প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রটিকে কেবলমাত্র বিচারপতিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে একে আরও প্রসারিত করে ওই ক্ষেত্রে শিক্ষাবিদ, খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব এবং গ্রহণযোগ্য সুশীল সমাজ সদস্যদেরকেও প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ করে দিতেন। যে অপ্রকাশিত ও বিভক্ত রায়ের একাংশের ওপর ভিত্তি করে মহাজোট সরকার এককভাবে সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে, ওই রায়ের অন্য অংশে বিচারপতি মহোদয় শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার সুযোগ দিলেও সেক্ষেত্রে ওই সরকারে বিচারপতিদেরকে অন্তর্ভুক্ত না করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ কথা সত্য যে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের ওপর অগাধ আস্থা রেখে, ন্যায়ের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করে রাজনীতিবিদরা তাদেরকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদে বিবেচনা করলেও ওইসব বিচারপতিরা জাতিকে যতটা না আশাহত করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি আশাহত করেছেন তাদেরকে নিয়ে রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক অঙ্ক কষাকষি করে এবং সমগ্র বিচার বিভাগে রাজনৈতিক কলুষ ছড়িয়ে। কারণ, সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থে ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদরা চেয়েছেন, তাদের পছন্দের বা মতাদর্শে বিশ্বাসী  বিচারপতিরাই যেন সরকারের মেয়াদ শেষ হবার পর সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হন। এ লক্ষ্য সামনে রেখে এরা অনেক আগে থেকেই বিচারপতিদের পদোন্নতি নিয়ে রাজনীতি করে বিচারপতিদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়েছেন। স্বীকার্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টাদের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল, তবে এ ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তার চেয়ে বেশি দায়ী ছিলেন রাজনীতিবিদরা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টাগণ এখতিয়ারবহির্ভূত দায়িত্ব পালন করে বিতর্কিত হন। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহাম্মেদ শিক্ষা সংস্কার কমিটি করে এবং বিচারপতি হাবিবুর রহমান নবম-দশম শ্রেণীতে ধর্ম পড়ানো হবে কিনা সে বিষয়ে জড়িত হয়ে বিতর্কিত হন। এ ছাড়া প্রত্যেক প্রধান উপদেষ্টা তাদের উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রকাশ্যে বা গোপনে তালিকা গ্রহণ করে নিন্দনীয় কাজ করেন। কারণ, সত্ লোক খুঁজতে নেমে যেমন সন্ত্রাসী বা দুর্নীতিবাজদের কাছে নামের তালিকা আহ্বান করা সঙ্গত নয়, একইভাবে উপদেষ্টা হিসাবে দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব খুঁজতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে তালিকা আহ্বান করাও যথার্থ নয়। এ কাজ করায় রাজনৈতিক দলগুলো প্রদত্ত তালিকায় বাহ্যিকভাবে নিরপেক্ষতার মুখোশ পরা কিন্তু ভেতরে নিজ দলীয় আদর্শে বিশ্বাসী বর্ণচোরা ব্যক্তিত্বদের তাদের তালিকাভুক্ত করার সুযোগ পান। নির্বাচনে এনজিওদের প্রভাব বিস্তার রোধেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এ সব দুর্বলতার পরও তত্ত্বাবধায়ক সরকার দলীয় সরকারের চেয়ে নির্বাচন পরিচালনায় ভাল করছিল এবং সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচন সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে মোটামুটি গ্রহণযোগ্যভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এমতাবস্থায় সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল না করে এর দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে এ সরকারকে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে নতুন রূপ দিত, তাহলে সরকারের কাজ নিয়ে কেউ সন্দেহ করতো না। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আরও দুটি নির্বাচন না করে, অথবা এ সরকারকে সংশোধিত রূপ না দিয়ে পরিবর্তে একে সরাসরি নাকচ করে, রাজনৈতিক ও নির্বাচনি সংস্কৃতিতে কোন উন্নতি না ঘটিয়ে, বা নির্বাচন কমিশনকে কোন বাড়তি শক্তি না দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করায় এ উদ্যোগের মধ্যে বিরোধী দলসহ অনেকেই রাজনৈতিক দূরভীসন্ধি খুঁজে পান। এরা বলেন, দেশ পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতার কারণে সরকারের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় সরকার বুঝতে পারে যে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সরকার নির্বাচনে জিততে পারবে না। সে কারণে ক্ষমতায় থেকে নিজ দলীয় তত্ত্বাবধানে নির্বাচন করে সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসতে চান। এ অবস্থায় বিরোধী দলগুলোর সরকারি দলের অধীনে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গড়ে তোলা আন্দোলন অগ্রাহ্য করে সরকার একদিকে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে দমন-পীড়ন ও মামলা দিয়ে দমনের কৌশল অবলম্বন করেন, অন্যদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকার দলীয় মন্ত্রী ও নেতাগণ অব্যাহতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করে যেতে থাকেন। এরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অনির্বাচিত ও অগণতান্ত্রিক সরকার বলে সমালোচনা করে বলেন, আদালত যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিয়েছে সে কারণে আর এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তবে আদালতের রায় যে সংসদের জন্য বাধ্যতামূলক নয় এবং আদালতের রায়ের আলোকেই যে আরও দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক অথবা সংশোধিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা সম্ভব ছিল সে প্রসঙ্গটি সরকারি দলের মন্ত্রী-নেতাগণ পারতপক্ষে বলতে চান না।                      
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ও সমুদ্র বিজয় উপলক্ষে ১৭ মে ছাত্রলীগ প্রদত্ত সম্বর্ধনা সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর আর দশটা গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবে নির্বাচন হবে।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরোধীদলীয় দাবি নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিছুই দিতে পারেনি, দিয়েছে অপশাসন। বাংলাদেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপে আর দানব দেখতে চায় না।’ তিনি ২৩ মে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়কের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি করেছিল সেটা দেশের মানুষের জানা আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইতিহাসের যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত এসব বক্তব্য বিশ্লেষণের দাবি রাখে। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ‘দানব’ বললেন কেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো কি প্রকৃতই দানব ছিল? বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহাম্মেদ, বিচারপতি হাবিবুর রহমান বা বিচারপতি লতিফুর রহমান কি দানব ছিলেন? এঁদের নির্বাচন পরিচালনায় কিছু ভুল-ত্রুটি থাকলেও এদেরকে কেউ কখনো ‘দানব’ বলেছেন বলে জানা যায় না। এদেরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বা আওয়ামী লীগ থেকে অতীতে বিভিন্ন সময় সমালোচনা করা হলেও কখনো ‘দানব’ বলে অভিহিত করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সতর্কভাবে পরীক্ষা করে মনে হয়, তিনি হয়তো ২০০৭ সালে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আসা ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সেনা সমর্ির্থত জরুরি সরকারকে ‘দানব’ বলে থাকতে পারেন। কারণ, এ সরকারের রাস্তাঘাট ফুটপাত ভাংচুর, বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া এবং পেশাদার রাজনীতিবিদদেরকে পাইকারিভাবে সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজ হিসাবে আখ্যায়িত করে তাদের ওপর অমানবিক জুলুম নির্যাতন করার মধ্যে কিছুটা দানবীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল। তবে এ সরকারের দানবীয় চরিত্র যদি তিনি রাজনৈতিক কারণে সুকৌশলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর চাপাতে চান তাহলে সে বিষয়টি মোটেও গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সরকার সাংবিধানিক বিধি, আয়ুষ্কাল বা কর্মকাণ্ড, কোনরকম পরিমাপকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না। কাজেই একটি অসাংবিধানিক ও অ-তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দানব বলে সে দায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর চাপাবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কৌশলটি সাধারণ মানুষ বুঝতে দেরি করলেও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সুশীল সমাজ সদস্যরা বিষয়টি অনুধাবনে দেরি করেননি। ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার না মানার পরও যদি সরকারি দল থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ‘দানব’ বলা হয় তাহলে সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন, বিচারপতি হাবিবুর রহমান বা বিচারপতি লতিফুর রহমান সরকারকে দানব হিসাবে দেখাতে হবে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা তার দল থেকে এ কাজটি আগেও যেমন করা হয়নি এখনও পরিষ্কারভাবে তা করা হচ্ছে না। পরিবর্তে, সরকারি দলের মন্ত্রী-নেতাগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা অব্যাহত রেখে দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। যেখানে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার পরও সেসব নির্বাচনে কিছু কিছু ত্রুটি পাওয়া যাচ্ছে এবং দলগুলো সেসব নির্বাচনে বিভিন্নভাবে প্রভাব    বিস্তারের চেষ্টা করে, সেখানে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সরকারি দলের মাননীয় মন্ত্রী-নেতারা যে সে নির্বাচনে কোনরকম প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবেন না সে বিষয়টি বিরোধী দলের প্রতি সরকারি দলের সাড়ে তিন বছরের আচরণ দেখার পর নাগরিক সমাজের কাছে বিশ্বাসযোগ্য প্রতীয়মান হচ্ছে না। এ কারণেই সরকারি দল থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ‘দানব’ বলে সমালোচনা করা হলেও সাারণ মানুষ এখনও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই সংসদ নির্বাচন চাইছেন।                 
লেখক: অধ্যাপক, রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। akhtermy@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন