ড. ফে র দৌ স আ হ ম দ কো রে শী
প্রবীণ আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক উল হক আমাদের দুই বড় রাজনৈতিক দলের দুই নেত্রীকে একত্রে বসে আলাপ-আলোচনা করে বর্তমান জাতীয় সংকট উত্তরণের উপায় উদ্ভাবন করতে আহবান জানিয়েছেন। তাদের একত্রে টেলিভিশনে মুখোমুখি বসার জন্য তিনি মিডিয়াকে আহবান জানিয়েছেন। তার মতে, দুজনের কেউ যদি এরকম আলোচনায় বসতে রাজি না হন, সেটাও জাতি জানবে।
১৮ অক্টোবর ২০০০, এই কাগজে একটা নিবন্ধে লিখেছিলাম : ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরকারি দল ও বিরোধী দলের বৈরী অব¯’ানের কারণে গণতান্ত্রিক রাজনীতির কোনই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে উঠতে পারছে না। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও মতবিনিময়ের অভাবে অনেক ছোটখাটো বিষয় নিয়েও জাতীয় পর্যায়ে উত্তেজনা ও অচলাব¯’া দেখা দি”েছ। ঃএই অব¯’ার অবসান ঘটাতে পারেন আমাদের দুই নেত্রী। ঃ শীর্ষ পর্যায়ে সৌজন্য ও সদ্ভাব কেবল জাতীয় রাজনীতিতেই নয়, সমাজ জীবনেও বিরাট প্রভাব ফেলে। নিুস্তরের নেতাকর্মীদের আচরণে যার প্রকাশ ঘটতে বাধ্য। ঃ এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই আমাদের দুই নেত্রীর কাছে দেশবাসীর হয়ে আবেদন জানাই, অনুগ্রহ করে পরস্পরের সঙ্গে মাঝেমধ্যে একটু কুশল বিনিময়, একটু হাসি বিনিময় কর“ন। তাহলেই দেখবেন আপনাদের কর্মীরাও পরস্পরের দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে। একটু হাসবে। পরিণামে সংঘাত, সংঘর্ষ, সন্ত্রাস কিছুটা হলেও কমে আসবে। ঃ’
২০০০ সালের ওই সময় ক্ষমতাসীন ছিল অওয়ামী লীগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল হেরে গিয়েছিল। বিপুলভাবে জয়ী হয়েছে বিরোধী বিএনপি জোট। ২০০০ সালের পর ২০০৬ সাল। আবার সেই একই পরি¯ি’তি। নির্বাচন নিয়ে শংকা। একদল নির্বাচন করবেই। আরেক দলের ধনুর্ভঙ্গ পণÑ নির্বাচন ‘নিরপেক্ষ’ হবে না, অতএব তা ‘হতে দেয়া হবে না’।
এ অব¯’ায় ১৩ ডিসেম্বর, ২০০৬। আবার লিখেছিলামÑ “এখন তো সরকারি দল ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কুশল বিনিময়ও বন্ধ হয়ে গেছে। এ যেন দুটি ভিন্ন সম্প্রদায়। এতই ভিন্ন যে বিয়েশাদির অনুষ্ঠানেও তারা একত্রে বসেন না। একদলের নেতার ছেলেমেয়ের বিয়েতে অন্যদলের লোকজন দাওয়াত পায় না, পেলেও যায় না। গেলেও এক টেবিলে বসে না।ঃ (আমার নিজের মেয়ের বিয়েতেই পুরনো বন্ধুরা, বিশেষ করে যারা ক্ষমতায় আছেন, দু-চারজন ছাড়া অন্যরা আসেননি। সশরীরে, সস্ত্রীক গিয়ে দাওয়াত করে আসার পরও)।
“এই ‘জাতিভেদ’ জাতিকে কোন রসাতলে নিয়ে যা”েছ, তা উপলব্ধি করা দরকার। রাজনৈতিক মতভেদকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন পর্যন্ত টেনে নেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। এর অবসান ঘটাতে হলে উপর থেকেই ঘটাতে হবে। ”
অর্থাৎ, দুই নেত্রীকে উদ্যোগ নিতে হবে। কথা বলতে হবে।
লেখা দুটি খুঁজে বের করার পর কম্পিউটারে বসে আমার সহকারীর মন্তব্যÑ ‘স্যার, এই লেখা দুটি আমরা আবার কাগজে পাঠিয়ে দেই। একটু উনিশ-বিশ করে দিলেই হবে। কেউ বুঝতে পারবে না যে পুরনো লেখা।’
হায়! ২০০০ সাল ও ২০০৬ সালের পর আজ ২০১২ সালে এসেও কি পরি¯ি’তির কোন পরিবর্তন ঘটেছে?
ব্যারিস্টার রফিক উল হক শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। বর্তমান সংকট নিরসনে তিনি যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং যে প্রত্যাশা করেছেন, সেটা এখন মুখে মুখে। ঃদুই নেত্রী বসুন। কথা বলুন।
দুই
‘সারাদেশের মানুষের মনে এখন বিরাট শংকা বিরাজ করছে। সবাই আশংকা করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পরি¯ি’তির আরও অবনতি ঘটবে। অনেকে বলবেন, এখনই যা ঘটছে, পরি¯ি’তির এর চেয়ে বেশি অবনতি আর কী ঘটতে পারে?’
“কিš‘ আমাদের সরকারি দল ও বিরোধী দল কোন পক্ষই জনগণের এ শংকা দূর করার মতো কিছু করছেন না। তাদের সে রকম ই”ছাও আছে বলে মনে হ”েছ না। বরং দুই পক্ষেই যেন রীতিমতো ‘রণপ্র¯‘তি’ চলছে। কিসের জন্য এই ‘রণপ্র¯‘তি’? যে কোন প্রকারেই হোক নির্বাচনে জিততে হবে।ঃ ”
উপরের কথাগুলোও ২০০০ সালের। তখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। অতঃপর ২০০৬ সাল। তখন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি। ওই সালের শেষ কয়েকটি মাস দেশের রাজনৈতিক পরি¯ি’তি ছিল ভয়াবহ। সরকারের জনপ্রিয়তায় বিরাট ধস নেমেছে। কিš‘ ক্ষমতায় যে থাকতেই হবে! আর সেই প্রেক্ষাপটে লিখেছিলামÑ
ঃ“প্রতিপক্ষের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বিএনপি তিন দফায় দীর্ঘদিন দেশ শাসন করেছে। তার মধ্য দিয়ে ভালো-মন্দ মিশিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি ও জাতীয় জীবনে এ দলের একটি ভালো অব¯’ানও গড়ে উঠেছে। এরকম একটি জনসমর্থিত জাতীয় দল কেবল ক্ষমতার জন্যই রাজনীতি করবে, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করে হলেও ক্ষমতায় যেতে চাইবে, তা মোটেই প্রত্যাশিত নয়। বিএনপি দাবি করে এ দল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপসহীন। এই দলের প্রতিষ্ঠাতাকে তুলে ধরা হয় আমাদের ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হিসেবে। নানা করণে তীব্রভাবে সমালোচিত হলেও দলটির অর্জনের ভাণ্ডার একেবারেই শূন্য নয়। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি জিয়ার সুকীর্তিগুলো এখনও তার শত্র“-মিত্র সবাই কম-বেশি স্মরণ করে থাকেন। এ পর্যায়ের একটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে জাতি অবশ্যই দায়িত্বশীলতা এবং নীতি-নিষ্ঠা প্রত্যাশা করতে পারে।
“দুর্ভাগ্যবশত সাম্প্রতিককালে এই দলের কার্যক্রমে সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটছে না। একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবে, ক্ষমতা থেকে চলে যাবে, আবার ক্ষমতায় ফিরে আসবেÑ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটাই নিয়ম। অপরদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি থাকবে, যা সেই দলকে বৈশিষ্ট্য প্রদান করবে, যা তাকে অন্যান্য দল থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করবে। দল ক্ষমতায় গেলে ওইসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে এবং ক্ষমতার বাইরে থাকলেও নিজেদের সেই অব¯’ানের সপক্ষে জনমত গড়ার কাজে নিবেদিত থাকবে। এভাবেই বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সামগ্রিক জাতীয় রাজনীতিতে অব্যাহত অবদান রাখে। ক্ষমতায় থাকলেও, না থাকলেও।
“দল হিসেবে তিনবারে প্রায় ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকেছে বিএনপি। বিরোধী দলে থেকেছে প্রায় ১৪ বছর। ’৮১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ’৮০-এর দশকে এই দল এক গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৯৬-এর নির্বাচনে ক্ষমতা থেকে সরে গেলেও এই দল আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছে ২০০১ সালে। এখনও দলটির বিপুল জনসমর্থন রয়েছে, অন্যরা যা-ই বলুক না কেন।
“অতএব, ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর দিকে মনোনিবেশ না করে খোলা মনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণের মুখোমুখি হতে এই দলের ভয় পাওয়ার কোন কারণ ছিল না। আমাদের দেশে ‘ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর’ বা ‘ক্ষমতায় থাকার দায়’ নির্বাচনে বড় রকমের প্রভাব ফেলে। তা সত্ত্বেও বর্তমান অব¯’ায় সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির একেবারে ‘ভরাডুবি’র তেমন সম্ভাবনা আমি দেখি না, গতবারের মতো বিপুল বিজয় সম্ভব না হলেও।
“কিš‘ বিএনপির উপরতলার, বিশেষ করে কিছু শীর্ষ নেতার মনোভাব দেখে মনে হয়, নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে ’৯৬ এর ১৫ ফেব্র“য়ারি মার্কা নির্বাচনে যেতেও তাদের আপত্তি নেই।” (দৈনিক দেশবাংলা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০০৬)।
আজ ২০১২ সালের এই দিনে দেশে যে পরি¯ি’তি বিরাজ করছে তার পরিপ্রেক্ষিতে কি উপরের একই কথাগুলো হুবহু লিখে দেয়া যায় না, কেবল বিএনপির জায়গায় আওয়ামী লীগ বসিয়ে দিয়ে?
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার চেষ্টা সব দলই করবে। বিএনপি করবে। আওয়ামী লীগও করবে। তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিš‘ আমাদের জাতীয় রাজনীতির বর্তমান দুই প্রধান দলকে নির্বাচনে ‘পরাজয়’ মেনে নেয়ার জন্যও মানসিকভাবে প্র¯‘ত থাকতে হবে। তা না হলে নির্বাচন হয়ে দাঁড়ায় মধ্যযুগীয় ইউরোপের দুই প্রেমিকের ‘ডুয়েল’ লড়ার মতো। বিজয়ী প্রেমিক পাবে সুন্দরীর পাণি গ্রহণের সুযোগ (এক্ষেত্রে ক্ষমতার); বিজেতার বুকে বুলেট।
তিন
লক্ষ্য করার বিষয়, আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে সরকারপক্ষ এবং বিরোধী দলের কলহের সুযোগ বিদেশীরাও নি”েছ। মার্কিন গ্যাস কোম্পানি থেকে শুর“ করে বন্ধু জাপানের ‘কাফকো’ পর্যন্ত কেউ সে সুযোগ হাতছাড়া করছে না। মৌলিক জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য না থাকলে জাতিকে এভাবেই মূল্য দিয়ে যেতে হবে। সাম্প্রতিককালে সমুদ্র সীমার ব্যাপারে যা ঘটেছে।
এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, আমাদের দেশে বাস্তবে আমরা কোন রাজনৈতিক ‘দল’ গড়ি না। নেত্রী বা নেতার অনুসারীরা দলবদ্ধ হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নানা ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। ব্যারিস্টার রফিক উল হক সে জন্যই দুই দলের কাছে আবেদন না জানিয়ে দুই নেত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। দেখা যা”েছ, আমরাও অনেকে বারবার সেই আবেদন-নিবেদনই করে এসেছি। কিš‘ ‘ন্যাড়া’ কতকাল এভাবে বেল তলায় যাবে?
ব্যারিস্টার সাহেব তার পর বলেছেন, যদি তারা এগিয়ে না আসেন, অর্থাৎ, একত্রে না বসেন, তাহলে নতুন কাউকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। অতঃপর যোগ করেছেন, ‘তৃতীয় শক্তি নয়, তৃতীয় দল’ গড়ার জন্য কাউকে এগিয়ে আসতে হবে।
আমাদের দেশে ‘তৃতীয় শক্তি’ বলতে বিশেষ কিছু বোঝায়। ভাসুরের নাম মুখে নেয়া বারণ। তাই বলতে হয় ‘উত্তর পাড়া’। তিনি যে উত্তর পাড়াকে ডাকছেন না, তা স্পষ্ট করার জন্যই সম্ভবত তড়িঘড়ি যোগ করেছেনÑ তৃতীয় শক্তি নয়, ‘তৃতীয় দল’। কিš‘ এই তৃতীয় দল কে গড়বেন? আবার কোন একক নেতা আবির্ভূত হবেন এবং পূজারিরা সেদিকে ছুটবে? কিভাবে তিনি তশরিফ আনবেন? ব্যারিস্টার সাহেব সে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
চার
২০০৭ সালের শুর“তে দেশের অবনতিশীল আইন-শৃংখলা পরি¯ি’তির প্রেক্ষাপটে জর“রি অব¯’া জারি করা হয়। ১১ জানুয়ারি ঘটে যায় এক বড় পরিবর্তন, যাকে আখ্যায়িত করা হয় ১/১১ নামে। অজকাল অনেকে ১/১১ শুনলেই তেড়ে ওঠেন (বিশেষ করে যারা ওই সময় বুক ফুলিয়ে বলেছেন, এক-এগারোর পরিবর্তন ‘আমাদের’ আন্দোলনের ফসল)। কিš‘ সেদিনের প্রেক্ষাপটে সেটি ছিল এক অনিবার্য ঘটনা, যা জাতিকে এক ভয়ংকর গৃহ-সংঘাত থেকে রেহাই দিয়েছে।
ওই ঘটনার দুই দিন আগে লিখেছিলামঃ ‘আইন-শৃংখলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনে সহায়তা করার জন্য দেশের সর্বত্র সেনাবাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনীর উপ¯ি’তির কারণেই বর্তমান অ¯ি’তিশীল উত্তেজনাময় রাজনৈতিক পরি¯ি’তিতে এখনও আইন-শৃংখলার গুর“তর অবনতি লক্ষ্য করা যা”েছ না।
“অস্বীকার করার উপায় নেই, এ মুহূর্তে আমরা এক ভয়াবহ দুঃসময় অতিক্রম করছি। আমাদের রাজনীতিকরা গোটা জাতিকে যেন এক আগ্নেয়গিরির ওপর বসিয়ে রেখেছেন। তথাকথিত ‘চার দলীয় জোট’ ও ‘মহাজোটে’র আপসহীনতার যুপকাষ্ঠে আমাদের বহু কষ্টার্জিত গণতন্ত্র বলি হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
“২২ জানুয়ারি, ২০০৭ ঘোষিত নির্বাচন যথাযথভাবে হতে পারবে কি-না, হলে সেটি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারির নির্বাচনের মতোই প্রহসনে পরিণত হতে যা”েছ কী-না অথবা সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনীতির দুই বিবদমান পক্ষের মুখোমুখি অব¯’ান ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী পরি¯ি’তি সৃষ্টি করবে কি-না, সেসব প্রশ্ন আজ সব মহলকে উদ্বিগ্ন করে রেখেছে।
“আরও উদ্বেগের বিষয়, এক্ষেত্রে আমাদের সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে! এখন পর্যন্ত সারাদেশে মোতায়েনকৃত সেনাসদস্যরা রাজনৈতিক সংঘাতে প্রশংসনীয় নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলেছেন। সেনাবাহিনীর উপ¯ি’তিই বহু ক্ষেত্রে আইন-শৃংখলা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। কিš‘ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনবিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ততই কঠোর ও মারমুখী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা। কেবল ‘বর্জন’ নয় নির্বাচনের ঘোষিত তারিখে একপক্ষ চাইবে ঠিকমতো ভোট হোক, অন্যপক্ষ চাইবে কেউ যেন ভোটকেন্দ্রে না যায়। ইতিমধ্যে মহাজোটের পক্ষ থেকে নির্বাচন ‘প্রতিরোধ’ করার ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কোন পক্ষে থাকবে?
“রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সেনাবাহিনীর ও সাংবিধানিক প্রধান, সর্বাধিনায়ক। তিনি সেনাবাহিনীকে নির্বাচন নির্বিঘœ করতে বলবেন, সেটাই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে যারা নির্বাচন ‘প্রতিরোধ’ করতে চাইবে তাদের বাধা দেয়া সেনাবাহিনীর কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ, ২২ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এবং নির্বাচনবিরোধীরা সেই নির্বাচন ‘প্রতিহত’ করার অঙ্গীকার নিয়ে মাঠে নামলে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীকেও বিক্ষোভকারীদের বির“দ্ধে অব¯’ান নিতে হবে।”
“এ পরি¯ি’তিটাই দুশ্চিন্তার। রাজনৈতিক বিবাদ-বিসম্বাদে আজ আমাদের সব জাতীয় প্রতিষ্ঠান দ্বিধাবিভক্ত। একমাত্র সেনাবাহিনী এখনও তার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দৃঢ়ভাবে ধারণ করে রেখেছে। রাজনৈতিক সংঘাতে যদি সেনাবাহিনীকে পক্ষাবলম্বন করতে হয়, তাহলে এই প্রতিষ্ঠানটিও তার প্রাতিষ্ঠানিক সুসংবদ্ধতা হারিয়ে ফেলতে পারে। এ মুহূর্তে জাতির জন্য তার চেয়ে বড় বিপর্যয় আর কিছুই হতে পারে না।
“আমাদের জাতীয় সেনাবাহিনীকে তেমন আÍঘাতী পরি¯ি’তি থেকে অবশ্যই দূরে রাখতে হবে। আর সেজন্যই প্রয়োজন বর্তমান রাজনৈতিক অচলাব¯’ার দ্র“ত অবসান।
“দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এই যে, আমাদের জাতীয় রাজনীতি ঃকোন পক্ষই যুক্তি-তর্কের কাছে মাথানত করতে রাজি নয়। কোন পক্ষই জনগণের প্রকৃত রায় হƒষ্টচিত্তে মেনে নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা অপর পক্ষের হাতে ছাড়তে রাজি নয়। কোন পক্ষই অপর পক্ষকে সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করে না, এ যেন কেবলই চির¯’ায়ী শত্র“তার সম্পর্ক। অপর পক্ষের পরিপূর্ণ বিনাশ ছাড়া কোন পক্ষই যেন সু¯ি’র হতে পারছে না।
“দুই নেত্রীর, দুই দলের, দুই জোটের সেই স্বার্থের লড়াইয়ে ধীরে ধীরে জড়িয়ে ফেলা হ”েছ জাতীয় সেনাবাহিনীকেও।
২২ জানুয়ারি সেনাবাহিনীকে দিয়ে নির্বাচন করানো হলে সেই নির্বাচনের ফলাফল ধরে রাখার জন্যও সেনাবাহিনীকেই আবার মাঠে থাকতে হবে। যা মোটেই সেনাবাহিনীর সুস্বা¯ে’্যর অনুকূল হবে না।ঃ” (দৈনিক দেশবাংলা, ৯ জানুয়ারি, ২০০৭)।
কে কী মনে করবেন জানতে চাই না। দেশে এখনই আগামী নির্বাচনের বাতাস বইতে শুর“ করেছে। মনে হ”েছ সবকিছুই ঘটছে সেদিকে চোখ রেখে। হবে নাইবা কেন। ক্ষমতায় থাকলে স্বর্গ প্রাপ্তি। ক্ষমতার বাইরে থাকা নরক বাস। অতএব ক্ষমতা ধরে রাখতেই হবে, যেভাবেই হোক। ক্ষমতায় যেতেই হবে, যেভাবেই হোক।
এই প্রেক্ষাপটে উপরের বক্তব্যটিও হুবহু তুলে ধরলে কি অযৌক্তিক হবে?
২০০০ সালের লেখাটার সমাপ্তি ছিল এভাবেÑ ‘এই ঘনঘোর বিষণœতার পরিবেশ অসহ্য হয়ে উঠেছে। প্রাণভরে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চাই । হাসতে চাই।’
আজ ১২ বছর পরও ঠিক তেমনি একটি পরিবেশে দাঁড়িয়ে এদেশবাসীর কি তার চেয়ে বেশিকিছু চাওয়ার আছে?
ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী : রাজনীতিক, ভূ-রাজনীতি গবেষক
ংযধঢ়ংযরহ@মঃষনফ.পড়স
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন