সোমবার, ৭ মে, ২০১২

সামরিক বাহিনীতে কী ঘটেছিল সেদিন

সামরিক বাহিনীতে কী ঘটেছিল সেদিন


॥ মে. জে. (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক ॥


কি ছু দিন আগে আমার লিখিত কলামে পাঠক মহলের উদ্দেশে নিবেদন করে রেখেছিলাম, মে মাস এলে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে নিয়ে বিশেষ করে একটি বা দু’টি কলাম লিখব। চলমান মাসটি সেই মে মাস। ১৯৯৬ সালের মে মাসে সংঘটিত ঘটনাবলি প্রসঙ্গে তাই কিছু কথা বলছি। ১৯৯৬ সালের মে মাসের ২০ তারিখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, যার ফলে একই বছর জুন মাসের মাঝামাঝি ১৫ জন সেনাকর্মকর্তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। ১৫ জনের মধ্যে আটজনকে (ডিসমিসাল) বা বরখাস্ত করা হয়েছিল, বাকি সাতজনকে দেয়া হয়েছিল বাধ্যতামূলক অবসর। সাধারণত ডিসমিসাল বা বরখাস্ত একটি শাস্তির পর্যায়ে পড়ে। কারণ যিনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন তিনি তার নামের পাশে কখনো র‌্যাংক যোগ করতে পারেন না। যথাÑ লেফটেন্যান্ট কর্নেল সবুজ, মেজর জেনারেল সাদ্দাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোশনবিশ ইত্যাদি। পাশাপাশি চাকরির মেয়াদ যত বছরই হোক না কেন তার পেনশন-ভাতা সরকার বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। অন্য দিকে যাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় তাদের র‌্যাংক বহাল থাকে এবং সরকারি পেনশনসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পান। ১৯৯৬ সালের মে মাসের ২০ তারিখের ঘটনার পর, জুন মাসের ১৪-১৫ তারিখে অব্যাহতি পাওয়া ১৫ জন সেনাকর্মকর্তার ব্যাপারে প্রশাসনিক আদেশগুলো বের হয়েছিল। এ ঘটনার অনেক দিন পর, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার মতায় থাকার সময়, বরখাস্ত হওয়া আটজনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে এই মর্মে, যেন তাদের বরখাস্তকে পুনর্বিবেচনা করা হয়। পুনর্বিবেচনা করে বরখাস্ত হওয়ার আদেশটিকে পরিবর্তন করে বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়ার আদেশ জারি করে। মূল কথা হলো, যে কয়জন ১৯৯৬ সালে বরখাস্ত হয়েছিলেন, পরে আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্তে তারা সবাই হয়ে গেলেন বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব। অপরপে একই সময়ে যে সাতজন বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তারা সেই পর্যায়েই থেকে গেলেন। এদের বাধ্যতামূলক অবসরের বিষয়টিকে পুনর্বিবেচনা না করে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলতে গেলে, যারা সেই দিন চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন তাদের দোষ ছিল গুরুতর পর্যায়ের, অন্য দিকে যাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল তাদের দোষ ছিল ীণ এবং অগভীর পর্যায়ে। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার উভয়টিকে একপর্যায়ে শামিল করে দিলেন।
বর্তমান মতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তিন বছর পাঁচ মাস শেষ হতে চলেছে। এই মেয়াদেও আওয়ামী লীগ সরকার মতায় এসে সামরিক বাহিনীর অফিসারদের প্রসঙ্গে প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন কিছু অভিনব কায়দায়, যা সামরিক বাহিনীর দীর্ঘ ইতিহাসে অতীতে ঘটেনি বলে আমার বিশ্বাস। অনেক অফিসার রয়েছেন যাদের ২০০১-০৬ মধ্যে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল; তাদের বহুসংখ্যকের অবসরকে পুনর্বিবেচনা করা হয়। তাদেরকে অবসর জীবনেই কাগজে-কলমে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছে, কাগজে-কলমে তাদেরকে এক ধাপ ওপরে প্রমোশন দেয়া হয়েছে, এবং কাগজে-কলমে তাদেরকে উচ্চতর পদ থেকে পুনরায় অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর অর্থ অফিসারেরা অবসর জীবনে যেমন ছিলেন তেমনি আছেন, কিন্তু কাগজে-কলমে প্রত্যেকে প্রমোশন পেয়েছেন। প্রমোশন পাওয়ার ফলে সামরিক বাহিনীর হিসাবরণ বিভাগে তাদের প্রত্যেকের একটা দীর্ঘ মেয়াদের বেতন-ভাতা নতুনভাবে গণনা করা হয় কেউ পায় ১০ লাখ কেউ পায় ২০ লাখ এমনকি কেউ কেউ ৩০ লাখ টাকারও বেশি পরিমাণ টাকা সরকারি তহবিল থেকে পেয়েছেন। অফিসারগণ অন্যায়ের শিকার হয়ে যদি চাকরিচ্যুত হয়ে অবসরে যেতে বাধ্য হন পরবর্তীকালে যদি সেই অন্যায়টিকে সংশোধন করার কোনো রাস্তা থাকে তবে ভালো!! কিন্তু এ রাস্তাটি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রয়োগ না করে সামরিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রয়োগ করা বাঞ্ছনীয় আর বর্তমান সরকার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রয়োগ করেছেন বলে সবাই ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করে। 
আরেকটি প্রসঙ্গ। ১৯৯৫ সালের শুরু থেকে তৎকালীন বিরোধী দল তথা আওয়ামী লীগ রাজপথ উত্তপ্ত রেখেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক হিসেবে তাদের সাথে রাজপথে ছিল তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা (যারা বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আওয়ামী লীগ কর্তৃক অভিযুক্ত)। তৎকালীন মতাসীন দল ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। তখনকার আমলের বিএনপি সরকার বলেছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা দেয়া যাবে না, অপর পে আওয়ামী লীগ ও তার সাথীরা বলেছিলÑ দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে পুরো ১৯৯৫ সাল তীব্র আন্দোলন সংগ্রাম ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে কেটেছে, যা ১৯৯৬ সাল অবধি কিছু সময় ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজমান ছিল। সেই ১৯৯৬ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে তৎকালীন বিএনপি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় সংবিধানকে সংশোধন করার। যেহেতু আওয়ামী লীগ পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছে প্রায় ১৪ মাস আগে তাই নতুনভাবে নির্বাচন করতে হবে। এই ধারাবাহিকতার রেশ ধরে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল; পাশাপাশি সংবিধান সংশোধন করার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাও তারা লাভ করে। সেই শক্তি নিয়ে বিএনপি ফেব্র“য়ারি-মার্চ মাস ধরে চিন্তা করেছিল কী করা যায়, কী প্রক্রিয়া অবলম্বন করে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার একটা সুরাহা হয়ে সম্মানজনক মর্যাদা লাভ করে। 
সেই সময় আমি যশোর সেনানিবাসে চাকরিরত ছিলাম। ১৯৯৬ সালের পেছনে ফিরে তাকালে আমি দেখতে পাই সেই সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু সালেহ মুহাম্মদ নাসিম (বীরবিক্রম), সংেেপ যাকে এ এস এম নাসিম বলে সবাই চেনেন। জেনারেল নাসিম সেনাপ্রধান হওয়ার আগে প্রতিরা গোয়েন্দা মহাপরিদফতর বা ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেসের (ইন্টেলিজেন্স) মহাপরিচালক ছিলেন। সেখান থেকে তিনি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন তৎকালীন মতাসীন বিএনপি চেয়ারপারসন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্তক্রমে। বেগম জিয়ার মতাকালে ১৯৯৫ সালে সারা বাংলাদেশে সাতটি পদাতিক ডিভিশন ছিল। আর এই সাতটি ডিভিশনের মধ্যে ছয়টি পদাতিক ডিভিশনেরই প্রধান দায়িত্বে ছিলেন একাত্তর সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা। চট্টগ্রামে ছিলেন মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান (বীর উত্তম), কুমিল্লায় ছিলেন মেজর জেনারেল আনোয়ার হোসেন (বীরপ্রতীক), ঢাকার অদূরে সাভারে ছিলেন মেজর জেনারেল এম এ মতিন (বীরপ্রতীক, যিনি পরবর্তী সময়ে মেজর জেনারেল ইমামুজ্জান বীরবিক্রমের সাথে অদল-বদল হন), যশোরে ছিলেন মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীরপ্রতীক), ময়মনসিংহে ছিলেন মেজর জেনারেল মুহাম্মদ আইনুদ্দিন (বীরপ্রতীক) এবং বগুড়ায় ছিলেন মেজর জেনারেল গোলাম হেলাল মোরশেদ খান (বীরবিক্রম)। একমাত্র রংপুরে অবস্থিত ডিভিশনের জিওসি দায়িত্বে ছিলেন অমুক্তিযোদ্ধা। স্বাভাবিক অবস্থায়, আমজনতার বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করলে, দশজনে বলবেন যে, সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় যেহেতু মেজরিটি সংখ্যক জিওসি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সেহেতু জেনারেল নাসিমের পে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়া অতি সহজ কাজ ছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অংশ (আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন) বা সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের সম্মানিত প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (সচিবের পদমর্যাদাসম্পন্ন) ছিলেন মেজর জেনারেল সুবিদ আলী ভূঁইয়া (যিনি খেতাবপ্রাপ্ত না হলেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা)। গোয়েন্দা বাহিনীর স্পর্শকাতর নিযুক্তি হলো মহাপরিচালক ডিজিএফআই, সেখানে প্রথমে ছিলেন মেজর জেনারেল ইমামুজ্জামান (বীরবিক্রম); পরবর্তীতে অদল-বদল হয়ে আসেন মেজর জেনারেল আব্দুল মতিন (বীরপ্রতীক)। এই সেনা জেনারেলদের মধ্যে একটা সুসম্পর্কের ভিত্তি গড়ে উঠেছিল। তবে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল নাসিম এবং বগুড়ার জিওসি জনাব হেলাল মোরশেদ খানের মধ্যে সুসম্পর্কের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে নিবিড় থেকে নিবিড়তম ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে রূপ নিয়েছিল। 
আমি গত ১৫ বছরে একাধিক জায়গা থেকে একাধিক সূত্রে শুনেছি যে, ১৯৯৫ সালের শেষ থেকে নিয়ে ১৯৯৬ সালের শুরু অবধি বগুড়ার জিওসি জনাব হেলাল মোরশেদ খান বীরবীক্রম, সরকারের ওপর তথা ওই আমলের বিএনপি সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। মাঝে মধ্যে তিনি জেনারেল নাসিমের কানও ভারী করতে চেষ্টা করতেন। এসব তথ্য সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর কানে যাওয়ার কথা, ১৫ বছর যাবৎ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ধারণা পেয়েছি এবং শুনেছি। সে সময় বাকি সেনাবাহিনী সরকারের প্রতি অনুগত ছিল, যেমন থাকাটাই স্বাভাবিক। সেনাবাহিনী এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেটি সংবিধানের প্রতি অনুগত থাকবে এবং সংবিধানসম্মত সরকারের প্রতি অনুগত থাকবে, যেমনটি থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ তারা এই স্বাভাবিকতার প্রতি অনুগত এবং প্রতিষ্ঠিত। সে সময় এই স্বাভাবিকতার কারণে, সেনাবাহিনী প্রধান সরকারের প্রতি স্বাভাবিকভাবে অনুগত ছিলেন কিন্তু ওনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ওনার কানকে গরম করেছিলেন। এর সাথে রাজনৈতিক অঙ্গনের কিছু ব্যক্তিও ওনাকে কানপড়া দিয়েছিলেন এই মর্মে যে, দেশ গোল্লায় গেল, দেশ রসাতলে গেল, দেশ ধ্বংস হয়ে গেল, আপনারা সেনাবাহিনী বসে বসে মজা দেখছেন, আপনারা সেনাবাহিনী কিছুই করছেন না, আপনাদের চুপচাপ বসে থাকলে চলবে কেমনে!! ...ইত্যাদি কথাবার্তা বলে ওনার মাথাকে গরম করে দিয়েছিলেন। এ সব কিছুই সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীর মাধ্যমে সরকারের কানে যাওয়ার কথা। গত ১৫ বছরে জেনেছি, শুনেছি এবং ধারণা পেয়েছি যে এই ঘটনাটি ঘটেছিল। পাশাপাশি আরো একটি কথা কানে এসেছে; সেটি হলোÑ একই বছর ফেব্র“য়ারির শেষে মার্চের শুরুতে আসলেই সেনাবাহিনীর প থেকে একটি ‘সেনা অভ্যুত্থান’ ঘটানোর প্রক্রিয়া প্রায় কাছাকাছি ছিল। তাই এমন একটি প্রশ্ন অনেকেরই মনে জেগেছিল যে, সে সময়ের বিরোধীদলীয় কোনো কোনো রাজনীতিবিদ কি এই সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য কোনো ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিলেন বা পরোভাবে এই সেনা অভ্যুত্থানের সাথে সম্পৃক্ত থেকে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন? প্রশ্নের উত্তরে বলতে হচ্ছে, আমি স্বাভাবিকভাবে অনুভব করি সে সময়ের বিরোধী (বর্তমান মতাসীন) দলের কয়েকজন ব্যক্তিত্ব ওই ধরনের প্রচেষ্টা বা পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত ছিল। এগুলো এমন স্পর্শকাতর বিষয় যে প্রমাণ করার জন্য আদালতে উপস্থাপন করা যাবে না আর এটি এমন একটি বিষয় যেটি আদালত পর্যন্ত নেয়া সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি। রাজপথে দাবি আদায়ের আন্দোলনটি যেহেতু কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠেছিল, তাই সেই সময়ের বিরোধী দল যদি চিন্তা করে থাকে যে, দেশ বাঁচানোর জন্য যদি সামরিক বাহিনী এগিয়ে আসে তবে মন্দ কী (!) এবং তাদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার-প্রক্রিয়া এলেও তো আসতে পারে!! সে সময় কিছু অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা সেনাকর্মকর্তা তৎকালে চাকরিরত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। বেশির ভাগ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এটিকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। দু-একজন ফিরিয়ে দিতে পারেননি। আর এসবের মধ্য দিয়ে একটা শুভ সিদ্ধান্তের উদয় হয়েছিল এবং তৎকালীন মতাসীন বিএনপি সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল। 
১৯৯৬ সালের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে সংবিধানে সংশোধনী পাস করা হয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর ভেতরে তথা সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে যে অস্থিরতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা করা হয়েছিল, সে কথা তারা ভুলে যাননি এমনকি গোয়েন্দা বাহিনীর ফাইল থেকেও মুছে যায়নি। একই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৯৯৬ সালের মে মাসের ১৮ তারিখে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস একটি আদেশ দেন। সেই আদেশ অনুসারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দু’জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। সেই দু’জন কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন বগুড়া জেলায় অবস্থিত পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল হেলাল মোরশেদ খান এবং তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের পিলখানা সদর দফতরে কর্মরত উপমহাপরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার (বর্তমানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলা হয়) মিরন হামিদুর রহমান। এই দু’জনের অবসর আদেশ থেকেই ’৯৬ সালের ২০ মের এ ঘটনার উৎপত্তি। প্রসঙ্গটি গভীর ব্যাখ্যার দাবিদার। এই কলামে সেই বিষয়টি তুলছি না; আগামীতে আলোচনা করব। আজ শুধু বলতে চাই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গত ৪০টি বছর ধাপে ধাপে তিলে তিলে পেশাদারিত্বের েেত্র অনেক উৎকর্ষ অর্জন করেছে এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। আজীবন তাদের প্রতি সালাম জানাতেই থাকব। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং সংবিধান রার েেত্র সেনাবাহিনীর ভূমিকা অপরিহার্য। সীমান্তরাকাজে বাংলাদেশ রাইফেলস তথা বর্তমানে বিজিবির পরপরই শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দায়িত্ব। এ সেনাবাহিনীকে নিয়ে আমরা কোনো ধরনের মন্দ কথা বলতে চাই না, এমনকি শুনতেও চাই না। তবে গঠনমূলক সমালোচনা বাদ দেবো না। এতে করে অতীতের কোনো ভুলভ্রান্তির ঘটনা যদি রাজনীতিবিদদের কারণে বা অবসরপ্রাপ্ত কোনো অফিসার কর্মকর্তার কারণে অথবা বিদেশী কোনো পরাশক্তির ইন্ধনে হয়ে থাকে তাহলে সেটি যেন অদূরভবিষ্যতে আর না হয়, সে দিকে অবশ্যই দেশ ও জাতির এই গর্বিত সন্তানদের সুনজর রাখা অতীব জরুরি দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং এসব থেকে শিা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। 
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গন ভয়াবহ উত্তপ্ত। দুই দিন হলো ঘুরে গেলেন বিশ্বের মোড়ল মতাধর দেশ তথা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম কিনটন এবং ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি। ঢাকা সফরের সুবাদে কী পেলাম আর কী পেলাম না তা নিয়ে লিখব আগামী কলামে। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি যেন বাঙালির রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ নামক পবিত্র ভূমিটির মাটি কোনো বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীর হাতে বিনষ্ট না হয়। 
লেখক : গবেষক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন