রবিবার, ৬ মে, ২০১২

দুই মহান অতিথির কাকতালীয় সফর



বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম
গত ৫ মে ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ দিন। একদিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকার ক্ষমতাধর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন চায়নার বেইজিং থেকে কলকাতা হয়ে দিল্লি যাওয়ার পথে সরাসরি ঢাকায় আসেন, অন্যদিকে ভারতের বর্ষীয়ান নেতা বাঙালি ও বাংলাদেশের সুহৃদ ভারতের প্রবীণ অর্থমন্ত্রী শ্রী প্রণব মুখার্জী আসেন ম্যানিলা থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে সরাসরি দিল্লি যাওয়ার পথে ঢাকায়। একজন ওঠেন সোনারগাঁওয়ে, অন্যজন গুলশানের ওয়েস্টিনে। জানি না দুই পরাশক্তির ক্ষমতাধর নেতাদের একই সময় ঢাকা সফর কাকতালীয় কিনা। তবু লোকজন বলাবলি করছে ওয়াশিংটন গিয়ে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত্ পাননি। এমন কী হলো যে তিনি ঢাকায় এসে সাক্ষাত্ দিয়ে গেলেন। একি আমাদের জন্য সুসংবাদ, নাকি কোনো দুঃসংবাদের ইঙ্গিত? অল্প কিছুদিনে দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গন ভীষণ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ঘুষ, দুর্নীতি, গুম, নির্যাতন গণতন্ত্রের পথে এক বিরাট প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। ইলিয়াস আলীর ছোট্ট মেয়ে হিলারি ক্লিনটনের হাতে তার যে আবেগমথিত স্বহস্তে লিখিত পত্র দিয়েছে তা পড়ে বিশ্ব মানবতার হৃদয় কেঁপে না উঠে পারে না। দুই অতিথি যেমন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন, দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক, আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, তেমনি বিরোধী দলের নেতার সঙ্গেও করেছেন। সবাইকে নিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে অক্ষুণ্ন রাখা এটা কি শক্তিধর রাষ্ট্রের আমাদের প্রতি অনুরোধ না নির্দেশ কিছুদিনের মধ্যেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। অন্যদিকে বেশ রাতে ভারতের প্রবীণ রাজনীতিবিদ শ্রী প্রণব মুখার্জী ঢাকায় আসেন। তার সঙ্গে রাতেই আমার দেখা হয়। বছরখানেক আগেও তার শরীর-স্বাস্থ্য যেমন দেখেছি তেমনটা দেখলাম না। সেই কবে ’৭৭ থেকে তার সঙ্গে পরিচয়। একদিনের জন্যও সম্পর্কের কোনো ভাটা পড়েনি। গতবার যখন কয়েক ঘণ্টার ঝটিকা সফরে আসেন তখন তাকে দিল্লিতে ফোনে পেয়েছিলাম। ছেলেমেয়েরা দেখা করবে বলতেই তিনি তখনকার ভারতীয় হাই কমিশনার রজিত মিতারকে ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন। যাওয়ার পথে খুব সংক্ষিপ্ত সাক্ষাত্। তাও আধ ঘণ্টার বেশি সময় কেটে গিয়েছিল। ছাড়তে চাচ্ছিলেন না। দীপের যখন দেড়-দুই বছর বয়স তখন তিনি আমার বর্ধমানের বাড়িতে গিয়েছিলেন। দীপ তখন খুবই নাদুস-নুদুস ছিল। শুধু হাসত বলে তাকে কোলে নিয়ে আদর করে নাম দিয়েছিলেন সদানন্দ। এখনও ওনামেই ডাকেন। আমার ছেলে-মেয়েদের দু’পাশে নিয়ে কথা বলতে বলতে অনেক সময় কেটে গিয়েছিল। সেদিন আওয়ামী লীগের নেতা আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। প্রণবদার আসতে যতটা সময় লেগেছিল সেই সময়টুকু মান্যবর হাই কমিশনারের স্ত্রী আমার ছেলেমেয়েদের নিয়ে যে খেলাধুলা করেছিলেন তা অভাবনীয়। এবারও প্রণবদার ঢাকা সফরের আগের দিন ফোন করে কথা বলতে গিয়ে বিস্মিত হয়েছিলাম। তিনি দিল্লিতে নেই। বাইরে গেছেন সেখান থেকেই বাংলাদেশ হয়ে ফিরবেন। তাই আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ৫ মে রাত সাড়ে দশটায় সরাসরি সোনারগাঁওয়ে গিয়েছিলাম। সাধারণত যোগাযোগ না করে খুব একটা কোথাও যাই না। হোটেলে ঢুকতেই রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হলো। দায়িত্বশীল কেউ একজন এসে বললেন, ‘অতিথি আসছেন, কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।’ দশ-বারো মিনিট গাড়িতেই ছিলাম। মান্যবর অতিথি তার স্যুটে গেলে হোটেলের গেটেই এক ভদ্রলোক সাদর সম্ভাষণ জানালেন। ‘আপনি এসেছেন শুনে দাঁড়িয়ে আছি। কারও সঙ্গে দেখা করবেন নাকি?’ বললাম, ‘হ্যাঁ, মান্যবর মূল অতিথির সঙ্গেই দেখা করতে এসেছি।’ দাদাকে একটা চিঠি লিখেছিলাম, আমি এসেছিলাম, ছেলেমেয়েদের দেখার সুযোগ দিলে খুশি হব।’ চিঠি লেখা শেষ হলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মান্যবর অতিথির সফর সঙ্গী প্রদ্যুত গুহ আছেন কিনা?’ রিসেপশনিস্ট তত্ক্ষণাত্ বললেন, ‘হ্যাঁ, ৮১১ নম্বর কক্ষে তিনি আছেন।’ রিং দিতেই তাকে পাওয়া গেল। আমি হোটেলের নিচে এসেছি বলতেই প্রদ্যুত গুহ, ‘বাঘাদা কেমন আছেন’ বলে মনে হয় লাফিয়ে উঠল। বললাম, ‘আগে যোগাযোগ করতে পারিনি, দেখা করতে চাই।’ বললেন, ‘ঠিক আছে, আমি এখনই জানাচ্ছি। উনি অ্যাম্বাসির লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। কথা শেষ হলেই আপনাকে বলছি।’ আরও মিনিট দশেক লবিতে ছিলাম। প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লে. কর্নেল এটিএম মহিউদ্দিন সেরনিয়াবাত পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। গত ৩৫ বছর প্রণবদাকে যেভাবে জেনেছি তাতে বার বার মনে হচ্ছিল তক্ষুণি হয়তো আমাদের ফিরতে হবে। রাত তখন এগারোটা কয়েক মিনিট। একেবারে বাসার গেটে। প্রদ্যুত গুহের ফোন এলো, ‘বাঘাদা, আপনি কোথায়? আমি লবিতে।’ বললাম, ‘আমি তো বেরিয়ে এসেছি।’
—এক্ষুণি চলে আসুন। আপনার সঙ্গে কথা বলে দাদা স্নানে যাবেন।
কী করা! আবার গাড়ি ঘুরালাম। ফরিদ দৌড়ে গিয়ে এবার বইমেলায় প্রকাশিত আমার দু’টি বই ‘বজ্রকথন’ ও ‘তারা আমার বড় ভাই-বোন’ নিয়ে এলো। কাঁটায় কাঁটায় এগারোটা ত্রিশ মিনিটে সোনারগাঁওয়ে ঢুকলাম। সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে গেল মান্যবরের স্যুটে। গিয়ে দেখি প্রণবদার সফর সঙ্গী জহুর সরকার বসে আছেন। আমি যখন বর্ধমানে ছিলাম তিনি তখন বর্ধমানের ডিএম। আমাদের দেশে যেখানে জেলা প্রশাসক বলে, ওখানে তাকে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট বলে। প্রণবদা স্নান করতে ঢুকেছিলেন। মিনিট পনের পর তাকে দেখতে পেলাম। অন্য সময়ের চেয়ে তাকে শ্রান্ত-ক্লান্ত ও একটু দুর্বল মনে হলো। আরও কয়েকজন আমাদের দেশের নাগরিক ছিলেন। চমচম নিয়ে এসেছি বলে তারা তাদের কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলতে চাচ্ছিলেন। বললাম, ‘চমচম ওটা আমার আনার জিনিস। আমি যাই, আপনারা কথা বলুন।’ প্রণবদাকে দু’টি বই দিয়ে বললাম, ‘ছেলেমেয়েরা দেখতে চায়।’ সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘কাল দু’টার পর ওদের নিয়ে এসো।’ চলে এলাম হোটেল থেকে। সারাপথ মনে মনে ভাবলাম আমরা এত নিকট প্রতিবেশী কিন্তু আমাদের সমস্যার অন্ত নেই। তিস্তার পানি, টিপাই বাঁধ, ট্রানজিট; আরও কত কী! আন্তরিক হলে এসব কি সমাধান করা যায় না? হয়তো যায়। কিন্তু কেন যায় না? ইদানীং বাংলাদেশে যা কিছু হচ্ছে বাতাসে শোনা যায় সবই নাকি ভারতের কারসাজি। মানুষ কেন যেন পাকিস্তান আমলে যতটা না ভারতবিদ্বেষী ছিল তার চেয়ে বেশি বিদ্বেষী হয়ে উঠেছে যা টিক্কা-ইয়াহিয়ার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কীভাবে যেন তাদের প্রেতাত্মারা আজ তা করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের উভয় দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কারও কি কিছু করার নেই? ভারত কি শুধু বাংলাদেশের কোনো দলের, নাকি দেশের জনগণের? কেন যেন প্রশ্নগুলো বারবার নাড়া দেয়। আন্তরিকভাবে এখনই এসবের সমাধান না খুঁজলে কারও জন্য ফলাফল ভালো হবে না।
এপ্রিলের এক অংশ বাংলা বর্ষের শেষ, অন্য অংশ শুরু। কত জনমের আশা ছিল এবারের বাংলা বছর মোটামুটি মানবের হবে, নির্মল হবে। কিন্তু না শুরুটাতে তার লেশমাত্রও দেখতে পাচ্ছি না। কেমন যেন শঙ্কাময় অস্বস্তিকর ভয়াবহ গুমোট পরিবেশ। চারদিকে সব বড় বড় অঘটনের আলামত। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও অনেকটা এমন ছিল। ৩ এপ্রিল প্রথম আমরা গোড়ান-সাটিয়াচরায় পাকিস্তানি হানাদারদের প্রতিরোধ করেছিলাম। ঢাকার বাইরে হানাদাররা প্রথম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল। কিন্তু আমরা তছনছ হয়ে গিয়েছিলাম। বিভীষিকাময় সেদিনের কথা মনে হলে আজও বুকে কাঁপন ধরে। ঢাকার দিক থেকে পালিয়ে যাওয়া আশ্রয় নেয়া শতাধিক এবং গোড়ান-সাটিয়াচরার স্থায়ী বাসিন্দা আরও শতাধিক নিহত হয়েছিল সেই প্রতিরোধ যুদ্ধে। কৃষক শ্রমিক ছাত্র নিয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনীর ১৩-১৪ জন এবং ইপিআরের মধ্য থেকে আরও ১২-১৩ জন শহীদ হয়েছিল। ছাত্রদের মধ্যে গোড়ানের জুমারত আলী দেওয়ান ছিল প্রথম শহীদ। তেমনি ইপিআরের হাওলদার বগুড়ার আব্দুল খালেক ছিল টাঙ্গাইলের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ। কতজন কত খেতাব পেয়েছে কিন্তু সেদিনের এই অসম সাহসী যোদ্ধা তার নাম কোথাও আছে কিনা বলতে পারব না। তিনি ময়মনসিংহ থেকে এসে টাঙ্গাইলের প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তখনও কাদেরিয়া বাহিনী গঠিত হয়নি। টাঙ্গাইল গণমুক্তি পরিষদ গঠিত বাহিনীর অধীনে ছিলাম। তাই যুদ্ধ শেষে যেমন জুমারত আলী দেওয়ানের জন্য কোনো সুপারিশ পাঠাইনি, তেমনি ইপিআরের হাওলাদার আব্দুল খালেক সম্পর্কেও নয়। তাই তারা অবহেলায় অতলে তলিয়ে গেছে। অথচ যেসব সুপারিশের উপর ভিত্তি করে বীর উত্তম, বীর বিক্রম, বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দেয়া হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি প্রথম প্রতিরোধে হাওলাদার আব্দুল খালেক দেখিয়েছিলেন। টাঙ্গাইলের বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক জনাব ফজলুর রহমান খান ফারুক ছিলেন মির্জাপুরের এমপি। তিনি আবদুল খালেকের বাংকারে ২ এপ্রিল রাতে ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হলে জোর করে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেন। প্রথম প্রথম ফজলুর রহমান সরতে চাননি। কিন্তু হাওলাদার তাকে বলেছিলেন, ‘আমরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোক। একটা কিছু করতেই পারব। আপনার কোনো ট্রেনিং নেই, আপনি একজন নেতা, আপনি মারা গেলে দেশের অনেক ক্ষতি হবে। চলে যান আমার বাংকার থেকে।’ ফজলুর রহমান খান সেখান থেকে সামান্য একটু সরলেই আবদুল খালেকের লাইট মেশিনগান বিকল হয়ে যায়। বিকল মেশিনগান ঠিক করার চেষ্টা করতে করতেই হানাদারদের একঝাঁক মেশিনগানের গুলি এসে আবদুল খালেকের বুক ঝাঝরা করে দেয়। সে চিরনিদ্রায় ঢলে পড়ে। কথাটা বললাম এজন্য যে, গত ৩০ এপ্রিল অন্যদিনের মতো মোহাম্মদপুরের বাড়ির বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলাম। ঢাকায় থাকলে প্রতিদিন সকালে সেখানে বসেই খবরের কাগজ পড়ি। একদিন ওখানে না বসলে কেমন যেন খালি খালি লাগে। বিশেষ করে বারান্দার কাছে দুটি নারিকেল গাছ ’৭২ সালে মা বুনেছিলেন। এখন মস্তবড় হয়েছে। বারো মাস তাতে নারিকেল থাকে। বারান্দায় বসলে বাতাসে যখন লম্বা লম্বা ডালগুলো নড়ে, তখন কেন যেন শুধু শুধু মা’র কথা মনে হয়। মনে হয় মা’ই যেন কত কথা বলছে। হাত বাড়িয়ে আছে সন্তানকে আদর করার ভঙ্গিমায়। সেদিনও তেমনি বারান্দায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলাম। হঠাত্ই কাজের ছেলে এসে বলল, ‘আপনাদের ধানগড়ার নাদু ভাইর বৌ মারা গেছে।’ বয়স হয়েছে এখন কোনো মৃত্যু সংবাদ খুব বেশি আকুল করে না। কিন্তু আপনাদের ধানগড়ার নাদু ভাইর বৌ মারা গেছে—খবরটা শুনে বুকের ভেতর ছ্যাত্ করে উঠেছিল। মুহূর্তে কেমন যেন হয়ে গেলাম। ধানগড়ার নাজির হোসেন নাদু, তারা আমার রক্তের কেউ নন। তারা কারিগর সম্প্রদায়। আর ইয়ামেন থেকে আসা পূর্বপুরুষের আওলাদ বুনাদ আমরা। তারপরও তার মৃত্যু সংবাদ আমাকে অমন করে আকুল করল কেন? ১৮ দলের ডাকা ২য় বারের হরতালের ২য় দিন না থাকলে তখনই নাজির হোসেন নাদুর স্ত্রী হাফছা খাতুনের দাফনে শরিক হতে ধানগড়া যেতাম। কিন্তু হরতালের কারণে তক্ষুণি যাওয়া হয়নি। মৃত্যু সংবাদ শোনার পর মন বড় অশান্ত হয়ে গিয়েছিল। কোনো কাজেই মন বসছিল না। গত কয়েক বছর দেহমন কোনোকিছুতে শান্ত করতে না পারলে শেষমেষ কাগজপত্র এবং বই-পুস্তক হাতাহাতি করি। তাতে অনেকবার দেখেছি হঠাত্ হঠাত্ এমন সব জরুরি কাগজপত্র পেয়ে যাই যা দেখে দুঃখের কথা আর কিছুই মনে থাকে না। সেদিনও তেমনি হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে বিদেশবিভূঁইয়ে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের উপর স্বাধীনতা ’৭১ বই লিখতে গিয়ে সেই সময় অনেক নেতাকর্মীর সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছিল। প্রায় তিনশ’ রেকর্ডকৃত সাক্ষাত্কারের মধ্যে গোড়ান-সাটিয়াচরার প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে ফজলুর রহমান ফারুকের রেকর্ড করা সাক্ষাত্কারটি ছিল। যা আমি ৬-৭ বার কাটছাঁট করে একটি বইয়ের আকারে পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছি। সেই সাক্ষাত্কারগুলো পড়তে পড়তে হঠাত্ করেই ফজলুর রহমান ফারুকের সেদিনের সেই হাওলাদার খালেকের ঘটনা পড়ে অভিভূত হয়েছিলাম। কেমন করে নিজের জীবন বিপন্ন করে একজন নেতাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। এখন অনেকেই অনেক কথা অস্বীকার করে। তাই ফজলুর রহমানের সেই সাক্ষাত্কার তিনি আবার কি অস্বীকার করবেন? এই সন্দেহে ক্যাসেট বের করে দুই-তিনবার শুনে আরও অভিভূত হলাম। তিনি যে দরদ দিয়ে সেদিনের সেই ঘটনার উল্লেখ করেছেন আমাদের লেখায় তার তেমন কিছুই ফুটে ওঠেনি। শব্দ উচ্চারণে হৃদয়ের আবেগ থাকলে যে ভাবের সৃষ্টি হয়, হাজারবার লিখেও সে ভাব ফুটিয়ে তোলা যায় না। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। (চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন