শামসুদ্দীন আহমেদ
আমাদের মূল সমস্যা কী, সেটা চিহ্নিত করতে হবে এবং সংলাপ হতে হবে সেই সমস্যা সমাধান করার জন্য, যেটা জাতি হিসেবে আমরা আজ পর্যন্ত করতে পারিনি। আমাদের মূল সমস্যা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নয়। আমাদের মূল সমস্যা দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যব¯’া ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে।
দেশের রাজনৈতিক পরি¯ি’তি খুবই হতাশাব্যঞ্জক। আইন-শৃংখলা পরি¯ি’তির চরম অবনতি ঘটেছে। সাধারণ মানুষের জানমালের আদৌ কোন নিরাপত্তা নেই। হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি, রাহাজানি ইত্যাদি দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। অপরাধীরা দিব্যি ঘুরে বেড়া”েছ এবং সমাজের নিরীহ মানুষ একের পর এক তাদের হিংস্র ছোবলের শিকার হ”েছ। একজন খুনি ও ধর্ষণকারীকে যদি গ্রেফতার করে আইনানুযায়ী বিচারপূর্বক যথাযথভাবে শাস্তি প্রদান না করা হয় তাহলে ওই খুনি ও ধর্ষণকারী অবলীলাক্রমে আরও খুন-ধর্ষণ করবে এবং তাদের অনুকরণে আরও অনেকে খুন-ধর্ষণের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-র“নী নিজেদের ফ্ল্যাটে খুন হলে প্রধানমন্ত্রী বললেনÑ যা তার বলা উচিত হয়নিÑ কারও বেডর“মের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব নয়। কিš‘ ঢাকায় সৌদি কূটনীতিক খুন হলেন গুলশানের রাজপথে এবং সম্প্রতি বহুল আলোচিত বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার দুর্ঘটনাও ঘটল বনানীর রাজপথে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বলা উচিত ছিলÑ যা তিনি বলেননিÑ সরকার রাজপথে জনগণের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আসলে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ননির্ভর রাজনীতির কারণেই দেশের এই কর“ণ অব¯’া। তাছাড়া এ সরকার পূর্ববর্তী বিএনপি সরকারের মতো ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। শুধু ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখার জন্যই সরকার রাজনৈতিক দলীয়করণের নীতি অনুসরণের মাধ্যমে সিভিল প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গঠন প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা করেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে যেমন তাদের রাষ্ট্রীয় পরিচয় হারিয়ে ফেলতে বসেছে, অন্যদিকে নিরপেক্ষভাবে শুধু ন্যায়নীতি ও জাতীয় স্বার্থে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হ”েছ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুলিশ বাহিনীÑ যার সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা ও স্বার্থ নিবিড়ভাবে জড়িত। স্বাধীনতার পর পুলিশের জনবল বৃদ্ধি পেয়েছে বহু গুণ এবং সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে অফিসারদের পদ ও পদমর্যাদা। কিš‘ গুর“ত্বপূর্ণ ও শীর্ষ পর্যায়ে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এবং ক্রমাগত রাজনৈতিক সরকারের দলীয়করণের ফলে পুলিশ একটি অযোগ্য, অপদার্থ ও পোশাকি দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তবে জাতিকে বেশি মাশুল দিতে হ”েছ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার ফলে। শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করে জাতিকে মেধাহীন এবং নীতি ও নৈতিকতাবিবর্জিত করা হ”েছ। দলীয় নিয়োগ ও দলীয় ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটসহ দেশের অন্য সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সন্ত্রাস, সংঘর্ষ ও অ¯ি’রতা বিরাজ করছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশন ধর্মঘট করছে। দিনের পর দিন ক্লাস বন্ধ; কিš‘ দলীয়ভাবে নিযুক্ত উপাচার্য পদত্যাগ করবেন না।
আসলে বিগত দুই দশক ধরে কোন নির্বাচিত সরকার দেশে সত্যিকার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যব¯’া ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিন্দুমাত্র উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বিধায় খুন, ডাকাতি, রাহাজানি, অপহরণ, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ইত্যাদি অপরাধমূলক অসামাজিক কর্মকাণ্ড সমাজে বিস্তার লাভ করেছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গোটা সমাজ ও জাতীয় জীবনে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে প্রতিশ্র“ত অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর শেষে জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী কাতসোয়া ওকাদা পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের প্রতি পরোক্ষভাবে সমর্থন জানিয়েই সরকারকে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। এছাড়া তিনি জাপানি ঋণ-সহায়তার অর্থ ব্যয়ে স্ব”ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারকে দুর্নীতি দমন অভিযান জোরদার করার আহ্বান জানান। ভাবতে অবাক লাগে, হাজার মাইল দূর থেকে বিশ্বব্যাংক ও জাপান আমাদের দুর্নীতির ধোঁয়া দেখতে পায়; কিš‘ আমাদের প্রধানমন্ত্রী সে ধোঁয়া দেখতে পান না। তিনি মিডিয়ায় বহুল সমালোচিত মন্ত্রী আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত না করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে অন্য একটি গুর“ত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের
মন্ত্রী বানালেন। চমৎকার এ সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান!
আজ দু’বছরের বেশি হবে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। সম্প্রতি আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। কিš‘ বিচারের অগ্রগতি শূন্যের কোঠায়। বাদীপক্ষ এখন পর্যন্ত একমাত্র সাঈদী ছাড়া অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীরের বির“দ্ধে অভিযোগ গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি। সরকার পক্ষ যুদ্ধাপরাধী মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে গ্রেফতার করার জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেছে; কিš‘ ইতিমধ্যে আবুল কালাম আজাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে এতদিনে সম্ভবত তার নিরাপদ গন্তব্য¯’ান পাকিস্তানে পৌঁছে গেছে। সরকার আবুল কালাম আজাদের পরিবারের সদস্যদের ও বন্ধুকে আটক করেছে তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করার অভিযোগে। অথচ সরকারের উচিত রাষ্ট্রের বেতন ও সুযোগ-সুবিধাভোগী পুলিশ ও গোয়েন্দা সং¯’ার যেসব সদস্যের কর্তব্য ও দায়িত্ব ছিল আবুল কালাম আজাদের ওপর সার্বক্ষণিকভাবে কড়া নজর রাখা, তাদের আটক করা এবং তাদের বির“দ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যব¯’া নেয়া। যদি বলা হয়, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সদস্যরাই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বা”চু রাজাকারকে বিচার ও সম্ভাব্য শাস্তি এড়িয়ে যেতে সাহায্য করেছে, তাহলে কি অন্যায় বলা হবে? তবে সর্বোপরি সব দায়-দায়িত্ব সরকারের অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর ওপর বর্তায়। তিনি যেমন একের পর এক তথাকথিত ‘সমুদ্র জয়ের’ দলীয় সংবর্ধনার আয়োজন করে বিজয়ের মুকুট পরিধান করে আÍতৃপ্তি অনুভব করছেন, তেমনি এ সরকারের
দেশ শাসনে সব ব্যর্থতার দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে।
সরকারের দেশ শাসনে ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে বিএনপি সভা, সমাবেশ, মহাসভা, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, হরতাল ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করেছে, যা রাজনীতিতে যথেষ্ট উত্তাপ সৃষ্টি করেছে এবং জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ইতিমধ্যে প্রথমে লাগাতার তিনদিন ও পরে দুইদিন হরতাল আহ্বান করেছে, যা সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দলের আহূত একের পর এক হরতাল ও বিক্ষোভ মিছিল এ সরকারকে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এ দেশ ও জনগণকে। হরতালের নামে রাস্তায় নির্বিচারে বাস-গাড়ি পুড়িয়ে ও ভাংচুর করে জনগণ ও রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হ”েছ। এতে সরকারের কোন ক্ষতি হ”েছ না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বন্ধ করে দিয়ে এবং শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ ধ্বংস করে গোটা জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করা হ”েছ। কলকারখানায় উৎপাদন বন্ধ এবং সব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে জাতীয় অর্থনীতিকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হ”েছ। খালেদা জিয়া যে দুটি দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চান, অতীতের অগণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতায় তা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। বিরোধী দলের দাবি হ”েছÑ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যব¯’া যা সংবিধান থেকে বাতিল করা হয়েছে, তা পুনর্বহাল করে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে এবং এ সরকারকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। বিএনপির হুমকি-ধমকির ভাষা অতীতের আওয়ামী লীগের অনুরূপ। অনেক রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সুধীজনকে বলতে শুনেছি, আমাদের রাজনীতির দুই নেত্রী সংলাপের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান দিতে পারেন। সংলাপের বিকল্প নেই, এটা অনস্বীকার্য। কিš‘ সংলাপ মানে এই নয় যে, দুই নেত্রী কিছুক্ষণের জন্য একসঙ্গে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসি দিলেন এবং দলীয় চাটুকাররা করতালির মধ্য দিয়ে এ অভিনব দৃশ্য উপহার দেয়ার জন্য নেত্রীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। সংলাপ অবশ্যই অর্থবহ ও ফলপ্রসূ হতে হবে। সংলাপ কী বিষয়ে ও কী উদ্দেশে হবে, সেটা আগেই নির্ধারণ করতে হবে।
নির্দলীয় তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচন সুষ্ঠু, সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হবে, এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিš‘ নির্বাচন যতই সুষ্ঠু, সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হোক না কেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়েই নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু ও কারচুপিমুক্ত হয়নি বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দোষারোপ করেছেÑ যখনই তাদের দল নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। আমার দল জিতলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে এবং পরাজিত হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, এটাই হ”েছ দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নীতিগত অব¯’ান। বিগত দু’দশকের ইতিহাস এমনই সাক্ষ্য দেয়। তাহলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা কোথায়? তাছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু ও কারচুপিমুক্ত হলেও ওই নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার দেশ ও জাতিকে আজ অবধি দুর্নীতিমুক্ত, জনকল্যাণমুখী ও জাতীয় উন্নয়নে নিবেদিত শাসন ব্যব¯’া যাকে সুশাসন বলা যায়, তা উপহার দিতে পারেনি।
আমাদের মূল সমস্যা কী, সেটা চিহ্নিত করতে হবে এবং সংলাপ হতে হবে সেই সমস্যা সমাধান করার জন্য, যেটা জাতি হিসেবে আমরা আজ পর্যন্ত করতে পারিনি। আমাদের মূল সমস্যা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নয়। আমাদের মূল সমস্যা দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যব¯’া ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে। এটা অনস্বীকার্য যে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিš‘ তাতে কি আইনের শাসন, ন্যায়নীতি ও সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এদেশে? না। কারণ শুধু পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যব¯’ার অধীনেই আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, ন্যায়নীতি ও সত্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। শুধু সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকার গঠন করা হলেই দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস এর সাক্ষ্য বহন করে। পক্ষান্তরে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যব¯’া এবং রাজনীতিতে গণতন্ত্রের অনুশীলন ও পরিচর্যা দেশে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করে। বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশ এর সাক্ষ্য বহন করে। আমাদের দেশের মূল সমস্যা হ”েছ, আওয়ামী ও জাতীয়তাবাদী নির্বিশেষে কোন সরকার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যব¯’া ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ করেনি। দেশে গণতন্ত্রকে শক্ত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে যেসব অন্তরায় আছে, তা দূর করতে হবে প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের মাধ্যমে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যারা রাজনৈতিক সংস্কারের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছিলেন, দুই নেত্রী তাদের ‘সংস্কারপš’ী’ আখ্যায়িত করে দলের মধ্যে নিগৃহীত করে রেখেছেন। বিএনপির প্রয়াত মান্নান ভুঁইয়াকেও সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে দলের মহাসচিব পদ ও দল থেকে অপসারিত করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আবদুর রাজ্জাক শেষ পর্যন্ত ভগ্নহƒদয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ওবায়দুল কাদের দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত হওয়ার পর মাত্র কয়েক মাস হল মন্ত্রিসভায় যোগদান করেছেন। ওবায়দুল কাদের আক্ষেপ করে নিজেকে ‘বিকাল বেলার মন্ত্রী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। আজ যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হ”েছ রাজনীতিকে কালো টাকা ও পেশিশক্তির রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করা এবং মূল রাজনৈতিক ধারাকে গণতন্ত্রের রাজপথে পরিচালিত করা। এ লক্ষ্যেই প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে উদ্যোগ নিতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
তবে এ মুহূর্তে সরকার ও বিরোধী দল উভয়কেই সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করে দেশে বহু প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যব¯’া ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। একাত্তরে লাখ লাখ শহীদের রক্ত ও অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে আমরা বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এ দেশের মাটিতে সত্যিকার গণতন্ত্র এবং শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ ব্যব¯’া গড়ে তোলার জন্য। আপামর জনসাধারণের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। বিশেষ কোন ব্যক্তি বা পরিবার বা গোষ্ঠী এ দেশকে নিজেদের ‘তালুক’ মনে করে শাসন ও শোষণ করবে বছরের পর বছর ধরে, এজন্য অবশ্যই নয়। জাতি এ দুর্বিষহ পরি¯ি’তি থেকে মুক্তি চায়।
শামসুদ্দীন আহমেদ : সাবেক রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন