
॥ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম ॥
(চার)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কেন যেন হঠাৎ করেই বাংলা ১৪১৯ বছরটা বড় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ দেশে মন্ত্রীরা খুব একটা পদত্যাগ করেন না। রেলের সাত হাজার চাকরির সুবাদে প্রায় দুই-তিন শ’ কোটি টাকার ঘুষবাণিজ্য হয়েছে। সেখানে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ওমর ফারুকের মাননীয় মন্ত্রী শ্রী সুরঞ্জিত সেনের বাড়িতে যাওয়ার পথে গাড়িতে মাত্র ৭০ লাখ টাকা ধরা পড়ায় মন্ত্রী ১৬ এপ্রিল পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু পরদিনই তাকে তোমার কন্যা খামাখা মন্ত্রী বানিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনের একেবারে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। এর পরের ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। ইলিয়াস আলী নামে সিলেটে বিএনপির এক রাজনৈতিক নেতা, তোমার সময় কেউ তার নাম শোনেনি, আমিও শুনিনি; কিন্তু এখনকার একজন নামকরা মানুষ। দুই-দুইবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা শাখার সভাপতি। হঠাৎ করেই গুম হয়ে গেছেন। দেশের একটা কাকপী হারালেও যে সেটা খুঁজে বের করা সরকারের দায়িত্ব এখন আর সরকার সেটা মানতে চায় না। অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো কেমন যেন সবার অভ্যাস হয়ে গেছে। আমি যখন এ লেখা লিখছি তখন তার হারিয়ে যাওয়ার ১২ দিন পার হলো। এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি তাকে। ২১ এপ্রিল শনিবার দুঃখী পরিবার-পরিজনকে সান্ত্ব—না দিতে তার বাড়ি গিয়েছিলাম। তার ছোট্ট মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। পরদিন থেকে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি হরতাল ডেকেছিল। মানুষের নিদারুণ কষ্ট হয় বলে যখন-তখন হরতাল আমরা পছন্দ করি না। তবুও সে দিনের সে হরতালে সমর্থন জানিয়েছিলাম। কিন্তু পরপর তিন দিন হরতাল ডাকায় অতিষ্ঠ হয়ে জীবনে প্রথম বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছিলাম অন্য কিছু করা যায় কি না তার পরামর্শ দিতে। শুনলে তুমি অবাক হবে, তোমার সময় স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদেরও কত সম্মান দেখাতে। ফজলুল কাদের চৌধুরী জেলে থাকতে তাকে বাড়ির খাবার দেয়া হয় না বলে তার মেয়ে তোমার কাছে এসে অভিযোগ করলে তুমি তাকে বুকে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে কত সান্ত্ব—না দিয়েছিলে। সব সময় বাড়ি থেকে তাকে খাবার দিতে ব্যবস্থা করেছিলে। মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সব অস্ত্র তোমার হাতে তুলে দিয়েছি, ১৬ বছর তোমার হত্যার প্রতিবাদে সংগ্রাম করেছি, ২৮ বছর গোশত মুখে দেইনি; তার পরও তোমার কন্যার সরকার আমার প্রতি, আমার স্ত্রীর প্রতি, আমার দলের নেতাকর্মীর প্রতি সামান্য সৌজন্যও দেখায়নি। বিএনপি অফিসে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ৮-১০ জন নেতাকর্মীকে ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে পল্টন থানার গারদে ফেলে দেয়। খুবই বিরক্ত হয়ে পল্টনের রাজপথে গামছা বিছিয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। এতে পিঠে ১০-১৫টা ফোসকা পড়েছে। প্রিয়তমা পতœী নাসরীন সিদ্দিকী সর্বণ আমার কাছে বসে ছিল। কেন যেন শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ায় নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়া হয়। আমি বাড়ি ফিরেছি। কিন্তু যাকে নিয়ে ঘটনা সেই ইলিয়াস আলী এখনো ফেরেনি। কবে ফিরবে তা-ও জানি না। শুনেছি আমাদের গ্রেফতারের কথা শুনে নাকি তোমার কন্যা খুবই বকাঝকা করেছেন। অত বাড়াবাড়ি না করতে বারণ করেছেন। হতেও পারে আবার না-ও হতে পারে। তবে দেশটা মোটেই ভালো চলছে না। সামনে বড় দুর্গম অন্ধকার। পরলোক থেকে তুমি যদি রুহানি তাগিদে এই সময় জাতিকে কোনো সাহায্য করতে, বড় ভালো হতো। যখন তুমি এপারে ছিলে তখন তো বাঙালি জাতির জন্য কত কিছু করেছ। ফাঁসির মঞ্চে যেতেও পিছপা হওনি। তাহলে বাঙালির এত দুঃখে তুমি নীরব থাকবে কী করে?
যে সখিপুর থেকে যুদ্ধ করে আমি দেশকে স্বাধীন করেছি, সেই সখিপুরের কয়েকটি ইউনিয়ন গত ২১ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে একেবারে বিরান হয়ে গেছে। সরকারি দলের সংসদ সদস্য, সে শুধু নাচ-গান, হাউজি-জুয়া নিয়েই ব্যস্ত। এলাকার মানুষ বলাবলি করছে, আল্লাহ-রাসূলের নাম না নিয়ে এমন করলে অমন গজব নাকি পড়েই। তা-ই বা মানি কী করে? শত হলেও নিজের এলাকার মানুষ, তাদের দুঃখে স্থির থাকা যায় না। তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো, দোয়া করো, আমার যারা কালবৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ে তবিত হয়েছে তাদের যেন আল্লাহ রহম করেন। তোমাকে আর কত কী বলব, যেখানে হাজার হাজার মণ ধান হতো সেখানে এক কেজি ধানও কেউ পাবে না। যেখান দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে একটা ঘর অত নেই। আকাশ থেকে শিল পড়ে ঘরের চালে অত বড় বড় শত শত ফুটো হতে পারে বাপ-দাদার জনমে দেখিনি। এ কি কিয়ামতের আলামত? তা-ও তো বুঝতে পারছি না। বর্তমানে বড় অশান্তিতে আছি। শান্তি ও সুস্থিতির জন্য তুমি আল্লাহর কাছে দয়া করে একটু দোয়া করো। এবার সে দিনের সেই মরণঘুমের কথায় আসি।
সে যে কী মরণঘুম ঘুমিয়েছিলাম, জেগে আর তোমাকে পাইনি। কোনো দিন পাবোও না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ঘুমে সব খান খান তছনছ হয়ে গেল। অমন মরণঘুম শতজনমেও কেউ যেন না ঘুমায়। গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যখন বুঝলাম তখন সব শেষ। বেদনায় বুক ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে চুরমার হয়ে গেল। বুদ্ধিহীনের মতো প্রথম শেরেবাংলা নগর রীবাহিনী ক্যাম্পের দিকে যাচ্ছিলাম। এত দিনে অনেক কিছুই মনে নেই, সম্ভবত আবুল মনসুর নামে এক জয়েন্ট সেক্রেটারি রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে ছিল, ‘কোথায় যান?’
Ñরীবাহিনী ক্যাম্পে।
কেন, খবর জানেন না?
Ñসে জন্যই তো যাচ্ছি।
আর ওদিকে যাবেন না। রীবাহিনী তাতে কী? কোনো অস্ত্রধারীকে বিশ্বাস করতে নেই। আগে খবর নিন, তারপর যান। গণভবনের দণি-পশ্চিম কোণ থেকে কেন তার কথায় ফিরেছিলাম বলতে পারব না। ওখান থেকে গিয়েছিলাম ২৭ নম্বর রোড ধরে ৩২ নম্বরে তোমার বাড়ির দিকে। তোমার বাড়ির দুই বাড়ি পশ্চিমে এক ভদ্রলোক ছুটে এসে আমার গাড়ি আটকে জোর করে নামিয়ে নিয়েছিল। স্বাধীনতার পর একবার টাঙ্গাইল থেকে ঢাকার পথে এক হাইজ্যাকার দলের সামনে পড়েছিলাম। আর একবার ’৭১ সালের ডিসেম্বরের ২৭-২৮ তারিখ মধুপুর থেকে ফেরার পথে পালিয়ে থাকা রাজাকারেরা কী করে যে কালিহাতীর বাগুটিয়ায় আমার বহরের গতি রোধ করেছিল আজো ভাবতে অবাক লাগে। ঘটনা দু’টি পরে বলব। কিন্তু ওই দুই জায়গার কোনো জায়গায়ই হাইজ্যাকার বা লুটেরারা আমাকে স্পর্শ করেনি বা করতে পারেনি। কিন্তু তোমার মৃত্যুদিনে সকাল সাড়ে ৬-৭টার দিকে ধানমন্ডির সেই ভদ্রলোক একেবারে হাইজ্যাকারের মতো এক ঝটকায় গাড়ির দরজা খুলে আমার পাখনা ধরে তার বাড়ির ড্রয়িংরুমে নিয়ে তুলেছিলেন। আমি কোনো কিছু বুঝতেও পারিনি। বসার পর এক গ্লাস পানি এনে দেন। পানি পান করে শরীর ঘামছিল। আর ঝরঝর করে চোখের পানি পড়ছিল। বুকের ভেতর পাথরচাপা ব্যথা। ভদ্রলোক মাথায় হাত দিয়ে যখন বললেন, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’
Ñকেন, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি!
দেখছেন না, কত মিলিটারি বাড়ি ঘিরে আছে? সব শেষ হয়ে গেছে। আপনি গেলে আপনার ওপরও মাত্র কয়েকটা বুলেট খরচ করবে। ও বাড়িতে কেউ বেঁচে নেই। কথাগুলো শুনে সম্বি^ৎ ফিরে আসে। আল্লাহকে হাজার শুকরিয়া জানিয়ে সেখান থেকে মোহাম্মদ মোদাব্বের দাদুর বাসায় গিয়েছিলাম। সে কথা আগেই বলেছি। হয়তো তুমি-আমি দু’জনই ঘুমিয়েছিলাম। সেই সময় ঢাকা গ্যারিসনের খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন ডিভিশনের ফারুক-রশীদের ল্যান্সার ব্যাটালিয়ন তাদের সব ক’টি ট্যাংক নিয়ে নতুন বিমানবন্দরে একত্র হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সেখান থেকে তারা শহরে আসে। একদল তেজগাঁও বিমানবন্দরের মধ্য দিয়ে রীবাহিনীর ক্যাম্প ঘিরে ধরে, অন্য দল তোমার বাড়িতে আক্রমণ চালায়, আরেক দল যায় যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাড়ি। সর্বশেষ দল আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি আক্রমণ করে। ভীষণ নিষ্ঠুরতা চালায় তারা সেখানে। শোনা যায় যার প্রতি তাদের ছিল সব থেকে বেশি রাগ সেই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। অন্য দিকে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী আরজু মনির ওপর খুনিরা নির্বিচার গুলি চালায়। শেখ ফজলুল হক মনি সেখানেই মারা যায়। কিন্তু তাদের যখন হাসপাতালে নিয়ে ফেলে রাখা হয় তখনো সন্তানসম্ভবা আরজু মনির দেহে প্রাণ ছিল। ঢাকা মেডিক্যাল চত্বর ভরে গিয়েছিল আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ ফজলুল হক মনির বাড়ির আহত-নিহতদের দিয়ে। পরশ ও তাপস খুবই ছোট ছিল। তারা ও শেখ সেলিম কিভাবে বেঁচে ছিল বলতে পারব না। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে তারা এখনো বেঁচে আছে। তাপস তো এখন বেশ বড়সড় নেতা। ওর সাথে মাঝে মধ্যেই দেখা হয়। শেখ সেলিমের সাথেও মাঝে মধ্যে সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখাসাাৎ হয়। কিন্তু পরশকে খুব একটা দেখি না। নাকি চিনি না বলে চোখে পড়ে না। তোমার হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশটাই বদলে দিয়েছে। দেশের মানচিত্র ঠিকই আছে। কিন্তু প্রাণ নেই, মর্যাদা নেই। যারা বাংলাদেশ বানিয়েছে তারা প্রায় সবাই অনাদৃত অবহেলিত। যাদের স্বাধীনতায় কোনো ভূমিকাই ছিল না আজ তারাই রথী-মহারথী।
১৫ আগস্ট তোমার বাড়িতে শুধু রমা নামে একটি কাজের ছেলে ছাড়া আর কেউ বেঁচে ছিল না। শুনেছি ছোট্ট রাসেল শেষ পর্যন্ত বেঁচে ছিল। কিন্তু তাকেও দেয়ালের কাছে নিয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। ওর শরীরের রক্তমাংস ও মগজ নাকি অনেক দিন দেয়ালে লেগে ছিল। খুনিরা যখন তোমার বাড়ির গেটে আসে, সেনাবাহিনীর যারা ছিল তারা স্যালুট দিয়ে রাস্তা ছেড়ে দেয়। দু-চারজন পুলিশ ওজর-আপত্তি করায় তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়। নিচতলার রিসিপশন রুমে এক ডিএসপি আর শেখ কামালের লাশ পড়ে ছিল। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, তোমার পরিবারে যে ছিল সবচেয়ে বিনয়ী, ছোটরাও যাকে আগে সালাম দিতে পারত না সেই শেখ কামাল ব্যাংক লুটের অপবাদ নিয়ে পরপারে পাড়ি জমালো। তোমার ছেলের ব্যাংক লুটের কি কোনো প্রয়োজন ছিল? কামালকে খুশি করার জন্য ব্যাংকের কোনো শাখায় যত টাকা থাকে তার চেয়েও বেশি দিতে অনেক টাকাওয়ালাই দৌড়াদৌড়ি করত। কিন্তু তাও অনেকেই বিশ্বাস করেছিল শেখ কামাল বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্তঘর থেকে মানে স্ট্রংরুম থেকে টাকা লুট করেছিল। অপপ্রচারের মাহাত্ম্য কী? বাংলাদেশ ব্যাংকের স্ট্রংরুমের চাবি না থাকলে একমাত্র প্লাস দিয়ে লোহার প্লেট কেটে ভেতরে প্রবেশ করা যেতে পারে। কিন্তু তা-ও পরতে পরতে লোহার প্লেট কেটে স্ট্রংরুমে ঢুকতে কয়েকজন মিলে লাগাতার কাজ করলেও দু-তিন দিনের প্রয়োজন হবে। অন্য কোনোভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্ট্রংরুমে ঢোকার কোনো উপায়ই নেই। ডিনামাইটের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে স্টংরুমটাই হয়তো মূল ভবন থেকে কামানের গোলার মতো বাইরে আনা যেতে পারে। বিস্ফোরণের মতা বেশি হলে পুরো স্ট্রংরুমটা একটা অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়ে ছাই হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেটাকে আস্ত পাওয়ার কোনো উপায় নেই। তবুও কামালের ওপর অপবাদ ছিল সে ব্যাংক লুট করেছে। কামাল আগাগোড়াই কিছুটা ডেসপারেট স্বভাবের ছিল। আইয়ুব-মোনায়েমবিরোধী আন্দোলনেও দেখা গেছে। ছয় দফা আন্দোলনে তুমি যখন জেলে, ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল জলিল না জালাল মিয়ার ভয়ে যখন সবাই অস্থির, তখন প্রিন্সিপালের নাকের ডগা দিয়ে ছাত্রদের বের করে এনে মিছিল করতে ভয় করেনি। মুক্তিযুদ্ধে কত নেতার পুত্রসন্তানেরা পালিয়ে বেরিয়েছে; কিন্তু কামাল তেমন করেনি। তোমাকে পাকিস্তানি হানাদারেরা গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পরপরই সে মুজিবনগরে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর স্টাফ অফিসারের দায়িত্ব পালন করে। তোমার ছেলে বলে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে কখনো গর্ব করেনি। অন্য কর্মীদের চেয়ে সব সময় বেশি শ্রম দিয়েছে। কেন যে কামাল রাজনীতিতে এসেছিল খুব একটা ভেবে পাই না। দারুণ সুন্দর গিটার বাজাত। খেলাধুলায় ছিল সবার আগে। সব খেলাতেই কমবেশি পারদর্শী। নিজে বড় খেলোয়াড় হওয়ার চেয়ে জাতিকে খেলাধুলায় অগ্রণী করার স্বপ্নে ছিল বিভোর। তাই তোমার নেতৃত্বে আমরা যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ায় দিনরাত এক করছিলাম, তখন শেখ কামাল ক্রীড়াপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আবাহনীর জন্ম দিয়েছিল। আবাহনী এখন বাংলাদেশের ক্রীড়াজগতে এক বিরাট মহীরুহ।
(চলবে)
(চার)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
কেন যেন হঠাৎ করেই বাংলা ১৪১৯ বছরটা বড় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ দেশে মন্ত্রীরা খুব একটা পদত্যাগ করেন না। রেলের সাত হাজার চাকরির সুবাদে প্রায় দুই-তিন শ’ কোটি টাকার ঘুষবাণিজ্য হয়েছে। সেখানে মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ওমর ফারুকের মাননীয় মন্ত্রী শ্রী সুরঞ্জিত সেনের বাড়িতে যাওয়ার পথে গাড়িতে মাত্র ৭০ লাখ টাকা ধরা পড়ায় মন্ত্রী ১৬ এপ্রিল পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু পরদিনই তাকে তোমার কন্যা খামাখা মন্ত্রী বানিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনের একেবারে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। এর পরের ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। ইলিয়াস আলী নামে সিলেটে বিএনপির এক রাজনৈতিক নেতা, তোমার সময় কেউ তার নাম শোনেনি, আমিও শুনিনি; কিন্তু এখনকার একজন নামকরা মানুষ। দুই-দুইবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা শাখার সভাপতি। হঠাৎ করেই গুম হয়ে গেছেন। দেশের একটা কাকপী হারালেও যে সেটা খুঁজে বের করা সরকারের দায়িত্ব এখন আর সরকার সেটা মানতে চায় না। অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো কেমন যেন সবার অভ্যাস হয়ে গেছে। আমি যখন এ লেখা লিখছি তখন তার হারিয়ে যাওয়ার ১২ দিন পার হলো। এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি তাকে। ২১ এপ্রিল শনিবার দুঃখী পরিবার-পরিজনকে সান্ত্ব—না দিতে তার বাড়ি গিয়েছিলাম। তার ছোট্ট মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনি। পরদিন থেকে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি হরতাল ডেকেছিল। মানুষের নিদারুণ কষ্ট হয় বলে যখন-তখন হরতাল আমরা পছন্দ করি না। তবুও সে দিনের সে হরতালে সমর্থন জানিয়েছিলাম। কিন্তু পরপর তিন দিন হরতাল ডাকায় অতিষ্ঠ হয়ে জীবনে প্রথম বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছিলাম অন্য কিছু করা যায় কি না তার পরামর্শ দিতে। শুনলে তুমি অবাক হবে, তোমার সময় স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদেরও কত সম্মান দেখাতে। ফজলুল কাদের চৌধুরী জেলে থাকতে তাকে বাড়ির খাবার দেয়া হয় না বলে তার মেয়ে তোমার কাছে এসে অভিযোগ করলে তুমি তাকে বুকে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে কত সান্ত্ব—না দিয়েছিলে। সব সময় বাড়ি থেকে তাকে খাবার দিতে ব্যবস্থা করেছিলে। মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সব অস্ত্র তোমার হাতে তুলে দিয়েছি, ১৬ বছর তোমার হত্যার প্রতিবাদে সংগ্রাম করেছি, ২৮ বছর গোশত মুখে দেইনি; তার পরও তোমার কন্যার সরকার আমার প্রতি, আমার স্ত্রীর প্রতি, আমার দলের নেতাকর্মীর প্রতি সামান্য সৌজন্যও দেখায়নি। বিএনপি অফিসে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ৮-১০ জন নেতাকর্মীকে ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে পল্টন থানার গারদে ফেলে দেয়। খুবই বিরক্ত হয়ে পল্টনের রাজপথে গামছা বিছিয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। এতে পিঠে ১০-১৫টা ফোসকা পড়েছে। প্রিয়তমা পতœী নাসরীন সিদ্দিকী সর্বণ আমার কাছে বসে ছিল। কেন যেন শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ায় নেতাকর্মীদের মুক্তি দেয়া হয়। আমি বাড়ি ফিরেছি। কিন্তু যাকে নিয়ে ঘটনা সেই ইলিয়াস আলী এখনো ফেরেনি। কবে ফিরবে তা-ও জানি না। শুনেছি আমাদের গ্রেফতারের কথা শুনে নাকি তোমার কন্যা খুবই বকাঝকা করেছেন। অত বাড়াবাড়ি না করতে বারণ করেছেন। হতেও পারে আবার না-ও হতে পারে। তবে দেশটা মোটেই ভালো চলছে না। সামনে বড় দুর্গম অন্ধকার। পরলোক থেকে তুমি যদি রুহানি তাগিদে এই সময় জাতিকে কোনো সাহায্য করতে, বড় ভালো হতো। যখন তুমি এপারে ছিলে তখন তো বাঙালি জাতির জন্য কত কিছু করেছ। ফাঁসির মঞ্চে যেতেও পিছপা হওনি। তাহলে বাঙালির এত দুঃখে তুমি নীরব থাকবে কী করে?
যে সখিপুর থেকে যুদ্ধ করে আমি দেশকে স্বাধীন করেছি, সেই সখিপুরের কয়েকটি ইউনিয়ন গত ২১ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে একেবারে বিরান হয়ে গেছে। সরকারি দলের সংসদ সদস্য, সে শুধু নাচ-গান, হাউজি-জুয়া নিয়েই ব্যস্ত। এলাকার মানুষ বলাবলি করছে, আল্লাহ-রাসূলের নাম না নিয়ে এমন করলে অমন গজব নাকি পড়েই। তা-ই বা মানি কী করে? শত হলেও নিজের এলাকার মানুষ, তাদের দুঃখে স্থির থাকা যায় না। তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো, দোয়া করো, আমার যারা কালবৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ে তবিত হয়েছে তাদের যেন আল্লাহ রহম করেন। তোমাকে আর কত কী বলব, যেখানে হাজার হাজার মণ ধান হতো সেখানে এক কেজি ধানও কেউ পাবে না। যেখান দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে একটা ঘর অত নেই। আকাশ থেকে শিল পড়ে ঘরের চালে অত বড় বড় শত শত ফুটো হতে পারে বাপ-দাদার জনমে দেখিনি। এ কি কিয়ামতের আলামত? তা-ও তো বুঝতে পারছি না। বর্তমানে বড় অশান্তিতে আছি। শান্তি ও সুস্থিতির জন্য তুমি আল্লাহর কাছে দয়া করে একটু দোয়া করো। এবার সে দিনের সেই মরণঘুমের কথায় আসি।
সে যে কী মরণঘুম ঘুমিয়েছিলাম, জেগে আর তোমাকে পাইনি। কোনো দিন পাবোও না। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ঘুমে সব খান খান তছনছ হয়ে গেল। অমন মরণঘুম শতজনমেও কেউ যেন না ঘুমায়। গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যখন বুঝলাম তখন সব শেষ। বেদনায় বুক ভেঙে দুমড়ে-মুচড়ে চুরমার হয়ে গেল। বুদ্ধিহীনের মতো প্রথম শেরেবাংলা নগর রীবাহিনী ক্যাম্পের দিকে যাচ্ছিলাম। এত দিনে অনেক কিছুই মনে নেই, সম্ভবত আবুল মনসুর নামে এক জয়েন্ট সেক্রেটারি রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে ছিল, ‘কোথায় যান?’
Ñরীবাহিনী ক্যাম্পে।
কেন, খবর জানেন না?
Ñসে জন্যই তো যাচ্ছি।
আর ওদিকে যাবেন না। রীবাহিনী তাতে কী? কোনো অস্ত্রধারীকে বিশ্বাস করতে নেই। আগে খবর নিন, তারপর যান। গণভবনের দণি-পশ্চিম কোণ থেকে কেন তার কথায় ফিরেছিলাম বলতে পারব না। ওখান থেকে গিয়েছিলাম ২৭ নম্বর রোড ধরে ৩২ নম্বরে তোমার বাড়ির দিকে। তোমার বাড়ির দুই বাড়ি পশ্চিমে এক ভদ্রলোক ছুটে এসে আমার গাড়ি আটকে জোর করে নামিয়ে নিয়েছিল। স্বাধীনতার পর একবার টাঙ্গাইল থেকে ঢাকার পথে এক হাইজ্যাকার দলের সামনে পড়েছিলাম। আর একবার ’৭১ সালের ডিসেম্বরের ২৭-২৮ তারিখ মধুপুর থেকে ফেরার পথে পালিয়ে থাকা রাজাকারেরা কী করে যে কালিহাতীর বাগুটিয়ায় আমার বহরের গতি রোধ করেছিল আজো ভাবতে অবাক লাগে। ঘটনা দু’টি পরে বলব। কিন্তু ওই দুই জায়গার কোনো জায়গায়ই হাইজ্যাকার বা লুটেরারা আমাকে স্পর্শ করেনি বা করতে পারেনি। কিন্তু তোমার মৃত্যুদিনে সকাল সাড়ে ৬-৭টার দিকে ধানমন্ডির সেই ভদ্রলোক একেবারে হাইজ্যাকারের মতো এক ঝটকায় গাড়ির দরজা খুলে আমার পাখনা ধরে তার বাড়ির ড্রয়িংরুমে নিয়ে তুলেছিলেন। আমি কোনো কিছু বুঝতেও পারিনি। বসার পর এক গ্লাস পানি এনে দেন। পানি পান করে শরীর ঘামছিল। আর ঝরঝর করে চোখের পানি পড়ছিল। বুকের ভেতর পাথরচাপা ব্যথা। ভদ্রলোক মাথায় হাত দিয়ে যখন বললেন, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’
Ñকেন, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি!
দেখছেন না, কত মিলিটারি বাড়ি ঘিরে আছে? সব শেষ হয়ে গেছে। আপনি গেলে আপনার ওপরও মাত্র কয়েকটা বুলেট খরচ করবে। ও বাড়িতে কেউ বেঁচে নেই। কথাগুলো শুনে সম্বি^ৎ ফিরে আসে। আল্লাহকে হাজার শুকরিয়া জানিয়ে সেখান থেকে মোহাম্মদ মোদাব্বের দাদুর বাসায় গিয়েছিলাম। সে কথা আগেই বলেছি। হয়তো তুমি-আমি দু’জনই ঘুমিয়েছিলাম। সেই সময় ঢাকা গ্যারিসনের খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন ডিভিশনের ফারুক-রশীদের ল্যান্সার ব্যাটালিয়ন তাদের সব ক’টি ট্যাংক নিয়ে নতুন বিমানবন্দরে একত্র হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সেখান থেকে তারা শহরে আসে। একদল তেজগাঁও বিমানবন্দরের মধ্য দিয়ে রীবাহিনীর ক্যাম্প ঘিরে ধরে, অন্য দল তোমার বাড়িতে আক্রমণ চালায়, আরেক দল যায় যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাড়ি। সর্বশেষ দল আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়ি আক্রমণ করে। ভীষণ নিষ্ঠুরতা চালায় তারা সেখানে। শোনা যায় যার প্রতি তাদের ছিল সব থেকে বেশি রাগ সেই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। অন্য দিকে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী আরজু মনির ওপর খুনিরা নির্বিচার গুলি চালায়। শেখ ফজলুল হক মনি সেখানেই মারা যায়। কিন্তু তাদের যখন হাসপাতালে নিয়ে ফেলে রাখা হয় তখনো সন্তানসম্ভবা আরজু মনির দেহে প্রাণ ছিল। ঢাকা মেডিক্যাল চত্বর ভরে গিয়েছিল আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ ফজলুল হক মনির বাড়ির আহত-নিহতদের দিয়ে। পরশ ও তাপস খুবই ছোট ছিল। তারা ও শেখ সেলিম কিভাবে বেঁচে ছিল বলতে পারব না। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে তারা এখনো বেঁচে আছে। তাপস তো এখন বেশ বড়সড় নেতা। ওর সাথে মাঝে মধ্যেই দেখা হয়। শেখ সেলিমের সাথেও মাঝে মধ্যে সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখাসাাৎ হয়। কিন্তু পরশকে খুব একটা দেখি না। নাকি চিনি না বলে চোখে পড়ে না। তোমার হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশটাই বদলে দিয়েছে। দেশের মানচিত্র ঠিকই আছে। কিন্তু প্রাণ নেই, মর্যাদা নেই। যারা বাংলাদেশ বানিয়েছে তারা প্রায় সবাই অনাদৃত অবহেলিত। যাদের স্বাধীনতায় কোনো ভূমিকাই ছিল না আজ তারাই রথী-মহারথী।
১৫ আগস্ট তোমার বাড়িতে শুধু রমা নামে একটি কাজের ছেলে ছাড়া আর কেউ বেঁচে ছিল না। শুনেছি ছোট্ট রাসেল শেষ পর্যন্ত বেঁচে ছিল। কিন্তু তাকেও দেয়ালের কাছে নিয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। ওর শরীরের রক্তমাংস ও মগজ নাকি অনেক দিন দেয়ালে লেগে ছিল। খুনিরা যখন তোমার বাড়ির গেটে আসে, সেনাবাহিনীর যারা ছিল তারা স্যালুট দিয়ে রাস্তা ছেড়ে দেয়। দু-চারজন পুলিশ ওজর-আপত্তি করায় তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়। নিচতলার রিসিপশন রুমে এক ডিএসপি আর শেখ কামালের লাশ পড়ে ছিল। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, তোমার পরিবারে যে ছিল সবচেয়ে বিনয়ী, ছোটরাও যাকে আগে সালাম দিতে পারত না সেই শেখ কামাল ব্যাংক লুটের অপবাদ নিয়ে পরপারে পাড়ি জমালো। তোমার ছেলের ব্যাংক লুটের কি কোনো প্রয়োজন ছিল? কামালকে খুশি করার জন্য ব্যাংকের কোনো শাখায় যত টাকা থাকে তার চেয়েও বেশি দিতে অনেক টাকাওয়ালাই দৌড়াদৌড়ি করত। কিন্তু তাও অনেকেই বিশ্বাস করেছিল শেখ কামাল বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্তঘর থেকে মানে স্ট্রংরুম থেকে টাকা লুট করেছিল। অপপ্রচারের মাহাত্ম্য কী? বাংলাদেশ ব্যাংকের স্ট্রংরুমের চাবি না থাকলে একমাত্র প্লাস দিয়ে লোহার প্লেট কেটে ভেতরে প্রবেশ করা যেতে পারে। কিন্তু তা-ও পরতে পরতে লোহার প্লেট কেটে স্ট্রংরুমে ঢুকতে কয়েকজন মিলে লাগাতার কাজ করলেও দু-তিন দিনের প্রয়োজন হবে। অন্য কোনোভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্ট্রংরুমে ঢোকার কোনো উপায়ই নেই। ডিনামাইটের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে স্টংরুমটাই হয়তো মূল ভবন থেকে কামানের গোলার মতো বাইরে আনা যেতে পারে। বিস্ফোরণের মতা বেশি হলে পুরো স্ট্রংরুমটা একটা অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়ে ছাই হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেটাকে আস্ত পাওয়ার কোনো উপায় নেই। তবুও কামালের ওপর অপবাদ ছিল সে ব্যাংক লুট করেছে। কামাল আগাগোড়াই কিছুটা ডেসপারেট স্বভাবের ছিল। আইয়ুব-মোনায়েমবিরোধী আন্দোলনেও দেখা গেছে। ছয় দফা আন্দোলনে তুমি যখন জেলে, ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল জলিল না জালাল মিয়ার ভয়ে যখন সবাই অস্থির, তখন প্রিন্সিপালের নাকের ডগা দিয়ে ছাত্রদের বের করে এনে মিছিল করতে ভয় করেনি। মুক্তিযুদ্ধে কত নেতার পুত্রসন্তানেরা পালিয়ে বেরিয়েছে; কিন্তু কামাল তেমন করেনি। তোমাকে পাকিস্তানি হানাদারেরা গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পরপরই সে মুজিবনগরে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর স্টাফ অফিসারের দায়িত্ব পালন করে। তোমার ছেলে বলে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে কখনো গর্ব করেনি। অন্য কর্মীদের চেয়ে সব সময় বেশি শ্রম দিয়েছে। কেন যে কামাল রাজনীতিতে এসেছিল খুব একটা ভেবে পাই না। দারুণ সুন্দর গিটার বাজাত। খেলাধুলায় ছিল সবার আগে। সব খেলাতেই কমবেশি পারদর্শী। নিজে বড় খেলোয়াড় হওয়ার চেয়ে জাতিকে খেলাধুলায় অগ্রণী করার স্বপ্নে ছিল বিভোর। তাই তোমার নেতৃত্বে আমরা যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ায় দিনরাত এক করছিলাম, তখন শেখ কামাল ক্রীড়াপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আবাহনীর জন্ম দিয়েছিল। আবাহনী এখন বাংলাদেশের ক্রীড়াজগতে এক বিরাট মহীরুহ।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন