কনক জ্যোতি
বিগত দুই দশকের পৃথিবীতে নিজের একক মদমত্ত শক্তিতে পুঁজিবাদ প্রচন্ড আগ্রাসী থাবায় সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে। পৃথিবী এবং এর মানব সমাজকে ভাসিয়ে দিচ্ছে যুদ্ধ, রক্ত, মৃত্যু, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিপীড়নের বিভীষিকায়। পুঁজিবাদের রাজনৈতিক প্রতাপ সাম্রাজ্যবাদরূপী ভয়াল অক্টোপাসের বর্বরতায় গ্রাস করেছে মানব সভ্যতাকে। পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের একচ্ছত্র দাপটের নৃশংস ধারার নাম দেয়া হয়েছে ‘বিশ্বায়নের যুগ', যেখানে তাবৎ পৃথিবী বন্দি পশ্চিমা সভ্যতার অসভ্য আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-মনোদার্শনিক বলয়ে।
সমাজতন্ত্রের পতিত-পচা লাশের ওপর দাঁড়িয়ে বিগত নববই দশকে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের সর্বাত্মক নবউত্থান সংঘটিত হয়। সে সময় মানবিকতা ও সাম্যের সুমহান আদর্শে বিশ্বের দেশে দেশে মানবমুক্তির মহামন্ত্ররূপে ইসলামের পুনর্জাগরণ ঘটে। সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামের সম্ভাবনাকে ঠেকাতে তখন পশ্চিমের পন্ডিতকুল এবং বিশ্বের দেশে দেশে তাদের লোকাল এজেন্টগণ ইসলামের বিরুদ্ধে তথাকথিত মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার লেভেল লাগিয়ে ইসলামমুখী জনমতকে বিভ্রান্ত করতে সচেষ্ট হয়। তখন সেইসব জ্ঞানপাপী তারস্বরে চিৎকার করতে থাকে পুঁজিবাদের পক্ষে। বলতে থাকে, পুঁজিবাদ হলো উদার, গণতান্ত্রিক, ব্যক্তিস্বাধীনতাপন্থী ইত্যাদি ইত্যাদি। মাত্র দুই দশকেই পুঁজিবাদের দানবীয় শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া শুরু করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, পুঁজিবাদও অচিরেই ইতিহাসের অাঁস্তাকুড়ে গিয়ে সমাজতন্ত্রের পতিত-পচা লাশের পাশে ঠাঁই নেবে।
ইউরো-আমেরিকার একশ্রেণীর পন্ডিত গত দুই দশকে বিশ্বব্যাপী প্রচার চালিয়েছিলেন যে, সাম্প্রতিক সময়ের পুঁজিবাদের চেহারাটা হলো ‘মানবিক' (!)। কিন্তু তাদের সেই চড়া সুরের গান গত শতকে পুঁজিবাদ নিজেই বাতিল করে দেয় নিজ কুকর্ম দিয়ে, নিজ নির্মমতা দিয়ে, সারা দুনিয়ায় লাখ লাখ মানুষকে বেকার বানিয়ে, কোটি কোটি মানুষকে অনাহারে রেখে এবং সংখ্যাতীত নারী ও পুরুষকে যুদ্ধ, হত্যা, রক্ত, মৃত্যুর বিভীষিকার মধ্যে ফেলে দিয়ে।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-এর ‘ক্ষুধা' সংক্রান্ত ২০০৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বে একশত কোটির বেশি মানুষ খিধে পেটে ঘুমিয়েছেন। খাদ্য ও আর্থিক সঙ্কট বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ঐতিহাসিক পর্যায়ে বাড়িয়ে তুলেছে। এই অনাহারী মানুষদের অধিকাংশেরই বাস গরিব দেশগুলোতে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ৬৪ কোটি ২০ লাখ, আফ্রিকার সাহারা সন্নিহিত এলাকায় ২৬ কোটি ৫০ লাখ, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে ৫ কোটি ৩০ লাখ, নিকট-প্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ৪ কোটি ২০ লাখ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ হিসেবে পরিচিত দেশটিতে দীর্ঘকাল ধরে থাকা অনাহারী মানুষের সংখ্যা ছিল দেড় কোটি।
আদি-অন্তহীন বিপুল-বিশাল বৈশ্বিক ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর পুঁজিবাদ যখন একের পর এক আক্রমণ শাণাচ্ছে, বিশ্বায়ন তখন পুঁজিবাদের একান্ত সহযোগীর মতো দাঁড়িয়েছিল। অথচ একশ্রেণির পশ্চিমা পন্ডিত এহেন বিশ্বায়নের মাঝেই দেখেছিলেন ‘মানুষের বেঁচে থাকার জীয়নকাঠি'! আজকাল অবশ্য এ পন্ডিতরা এ বিষয়ে আর মুখ খোলেন না। ‘মানবিক' পুঁজিবাদের মতোই ‘মহান' বিশ্বায়ন এ পন্ডিতদের হাস্যকর-দালালির চেহারাটি সারা বিশ্বের সামনে নগ্নভাবে দেখিয়ে দিয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক বিগত নববই'র দশকেই বলেছিলেন, ‘‘ক্ষুধাকে হটিয়ে দেয়ার অর্থনৈতিক ও কারিগরি উপায় আমাদের আছে। যা নেই, সেটা হচ্ছে, ক্ষুধা চিরতরে দূর করার রাজনৈতিক ইচ্ছা।’’ অনেক আগে, ১৯৭৪ সালে, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হেনরি কিসিঞ্জারও প্রায় একই রকমের একটি কথা বলেছিলেন, যা ছিল কিসিঞ্জারের মুখ দিয়ে বের হওয়া স্বল্পসংখ্যক সত্য-কথার একটি: ‘‘ক্ষুধা অবসানের সামর্থ্য বিশ্বের রয়েছে। তা করায় ব্যর্থতা অক্ষমতার প্রতিফলন নয়, রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাবেরই প্রতিফলন।’’
পুঁজিবাদ কখনওই লাভ ও ব্যবসায়িক স্বার্থবিহীন এমন কোনও রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রকাশ করে না। খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসা ও মুনাফার জন্যেই পুঁজিবাদ বিশ্বে খাদ্যের প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম সঙ্কট চায়; ক্ষুধার্ত মানুষের বিপন্ন মুখ দেখতে চায়। ফলে গত দশক ক্ষুধা অবসানে পুঁজিবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব প্রকটভাবে দেখা গেছে। পৃথিবীর নানা জায়গায় গরীবদের আয়ের অধিকাংশটুকুই খরচ করতে হয়েছে খাবার কেনায়। দশকটির শেষ ভাগে অন্যতম ঘটনা ছিল বিভিন্ন দেশে খাদ্য-দাঙ্গা। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ২০০৮ সালে ৩৭টি দেশে খাদ্যের জন্যে দাঙ্গা হয়। হাইতির অনেক মানুষকে শুকনো বা ভিজা কাদা খেয়ে ক্ষুধা মেটাতে হয়। একই সময়কালে বিশ্বের দেশে দেশে খাদ্যদ্রব্যের দাম এত বেড়ে যায় যে, প্রায় সব দেশের সরকার বিচলিত ও শঙ্কিত হয়ে পড়ে স্থিতিনাশের আশঙ্কায়।
পুঁজিবাদের শোষণের কারণে গরীব আর দেউলিয়া মানুষ কেবল দক্ষিণ গোলার্ধের বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকেনি; পুঁজিশাসিত বিশ্ব ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থ দেশগুলোতেও অবস্থান করেছিল এবং এখনও করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় ফুড স্ট্যাম্পের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা ছিল সেখানকার মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশের বেশি। সবচেয়ে বেশি ছিল সে দেশের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে ১৭.১ শতাংশ। এর এক বছর আগে এ হার ছিল ১৫.১ শতাংশ। মিসিসিপি (২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ১৫.০ এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ১৬.৬ শতাংশ), মিসৌরি একই সময়কালে যথাক্রমে ১৪.৮ এবং ১৬.৮, টেনেসি ১৪.৫ এবং ১৬.৬ শতাংশ। ইডাহোতে ফুড স্ট্যাম্পের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা এক বছরে বেড়ে যায় ৩২ শতাংশ, নেভাডা, উটা ও ফ্লোরিডায় তা বৃদ্ধি পায় প্রায় ২৯ শতাংশ। এ পরিসংখ্যান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কৃষি মন্ত্রণালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি সার্ভিস। উল্লেখ করা দরকার যে, যুক্তরাষ্ট্রে দারিদ্র্য পরিমাপের একটি নির্ভরযোগ্য পন্থা হচ্ছে ফুড স্ট্যাম্পের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা। গত দুই দশকেই যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফুড ইনসিকিওর' বা ‘খাদ্যের দিক থেকে নিরাপত্তাহীন' এবং ‘ভেরি লো ফুড ইনসিকিওর' বা ‘খাদ্যের দিক থেকে খুবই নিরাপত্তাহীন' নামে দু'দল অতি দরিদ্র মানুষের অস্তিত্ব আর অস্বীকার করে রাখা সম্ভব হয়নি। পুঁজিবাদের সেই স্বর্গে বেঁচে থাকার জন্য দরকার এমন পরিমাণ ক্যালোরি কেনার মত অর্থ বা ঋণ এই মানুষদের ছিল না। সে দেশে গত দুই দশকের শেষ বড় দিনের উৎসবগুলোতে লঙ্গরখানায় দেখা গেছে হাজার হাজার নিরন্ন মানুষের লম্বা লাইন। কেবল টেক্সাসে ফুড স্ট্যাম্পের ওপর নির্ভর করা মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ। সারা যুক্তরাষ্ট্রে ফুড স্ট্যাম্প পেয়েছে প্রায় তিন কোটি ২০ লাখ আমেরিকানবাসী। অনুমান করা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে আরও অন্তত এক কোটি মানুষ ফুড স্ট্যাম্প পায় না, যদিও তা তাদের দরকার। নিয়ম অনুযায়ী ফুড স্ট্যাম্পে একজন ব্যক্তি সর্বাধিক পান সপ্তাহে প্রায় ৫০ ডলার; সে হিসাবে প্রতি বেলা খাবারের জন্য সে মানুষটির কপালে বরাদ্দ হচ্ছে মাত্র দু ডলারের কিছু বেশি। আমেরিকার বাজারে দু ডলার খুবই তুচ্ছ অঙ্ক। পুঁজিবাদের মোড়ল তার নাগরিকদের এটাও দিতে পারছে না।
ধনী দেশের বিপরীতে গরীব দেশগুলোতে অবস্থা কেমন ছিল বিশ্বায়নের যুগে পুঁজিবাদের সর্বগ্রাসী এই পরিস্থিতিতে? যুদ্ধ, খরা, মহামারী ও সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদ সৃষ্ট নানা দুর্যোগের কবলে নিপতিত হয়ে দারিদ্র্য ও অনাহারের বিশ্বায়িত মানব-মুখমন্ডল বিশ্বের সর্বত্র দেখা গেছে। এমনকি, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের প্রধান দোসর যুক্তরাজ্যও রেহাই পায়নি। যুক্তরাজ্যের মানুষের মধ্যে অসচ্ছল হওয়ার হার ২০০৯ সালে বৃদ্ধি পায় ২৮.২ শতাংশ। পরিসংখ্যান এটাও জানিয়েছে যে, প্রতি বছরই ব্রিটেন-যুক্তরাজ্যে প্রতি ৬০ জনে একজন অসচ্ছল হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোতে দেউলিয়াত্বের লাল বাতি জ্বলার হার ছিল ৫০ শতাংশ।
পুঁজি যখন মন্দ অবস্থার মুখোমুখি হয়, তখন শ্রমের ওপরেও চাপ পড়ে। বিগত দুই দশকে এবং বর্তমানেও সেটাই দেখা যাচ্ছে। আর এটাই হচ্ছে পুঁজিবাদের ত্রুটি ও অক্ষমতার নানামুখী প্রকাশ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ‘গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস টু ২০০৯' শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে ২০০৯ সালে বিশ্বে পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ কর্মহীন-বেকার হয়েছে। সারা দুনিয়ায় তালিকাভুক্ত বেকারের সংখ্যা আইএলও-এর মতে ২৫ কোটি। পুঁজিবাদের মহাসঙ্কটের কারণে আরও ২০ কোটি মজুর চরম দারিদ্রে্যর মধ্যে চলে যাবে এবং এর ফলে ২০১০ সালটি থেকে বিশ্বে ‘শ্রমজীবী গরিবের' সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫০ কোটি। এ সংখ্যা বিশ্বের সমগ্র শ্রমজীবী মানুষের মোট সংখ্যার অর্ধেক। ‘দ্য কস্ট অব কোআরশন' নামের আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনে আইএলও জানিয়েছে যে, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে পুঁজিবাদী অর্থ ও সমাজ ব্যবস্থায় সাম্রাজ্যবাদী প্রক্রিয়ায় ‘বলপূর্বক মেহনত আদায়ের মাধ্যমে দুনিয়ার মজুরদের কাছ থেকে বছরে শোষণ করে নেওয়া হচ্ছে ২০ বিলিয়ন বা দুই হাজার কোটি ডলার'।
বিশ্বায়নের যুগে পুঁজিবাদী অর্থ ও সমাজ ব্যবস্থায় সাম্রাজ্যবাদী প্রক্রিয়ার মধ্যে আরও অনেক বীভৎস ক্ষত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমান মহা আর্থিক সঙ্কটের ফলে পৃথিবী জুড়ে মানুষ পাচার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। ওইসিডি-এর হিসাব অনুসারে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেকারত্বের ৭০ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতভুক্ত। আইএলও-এর তথ্য অনুসারে বিশ্বে বলপূর্বক মেহনত করানোর ৭৭ শতাংশই ঘটে এই অঞ্চলে। পূর্ব ইউরোপে শ্রম-শোষণের শিকার মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। বেলারুশে ৮০ হাজার মানুষ ‘নিখোঁজ' বলে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, এরা কাজ করার জন্য রাশিয়াসহ বিভিন্ন পার্শ্ববর্তী দেশে গেছে; কিন্তু অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নানা স্থানে, এমনকি জেল-হাজতে ঠাঁই পেয়েছে। এদের আর কোনও স্থায়ী বা নির্দিষ্ট ঠিকানাও পাওয়া যাচ্ছে না। ইউরোপের সবচেয়ে গরিব দেশ হিসাবে পরিচিত মলদোভার এক-চতুর্থাংশ মানুষ দেশান্তরী হতে বাধ্য হয়েছে। এরা জীবিকার তাগিদে অনিশ্চিত গন্তব্যে হারিয়ে গেছে।
খোদ জাতিসংঘের কর্তারাও স্বীকার করেছেন যে, সস্তা পণ্য আর সেবার চাহিদা বিশ্বব্যাপী আধুনিক দাস ব্যবস্থার সৃষ্টি করেছে। উল্লেখ করা দরকার যে, আধুনিক কালের (বিশ্বায়নের পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী কালের) এ দাস ব্যবস্থা হচ্ছে বলপূর্বক মজুর খাটানো। জাতিসংঘের কর্তাদের আশঙ্কা যে, আর্থিত সঙ্কটের প্রতিক্রিয়ায় আরও শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর ফাঁকি দেয়াসহ নানা বেআইনি তৎপরতার চেষ্টা চালাবে; নিজ প্রতিষ্ঠানে মজুরদের সঠিক তথ্য দেবে না; এদের বেতন ও চাকরির কোনও নিয়ম মানা হবে না। এ উদ্দেশ্যে এ সব শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অনেক কাজ-কারবার করতে হবে অতি গোপনে বা অনৈতিক-অবৈধ পথে। আর্থিক সঙ্কটের মুখে থাকা অনেক নামকরা বহুজাতিক কোম্পানি পর্যন্ত বলপ্রয়োগ, সস্তা মজুরি, শিশু শ্রম, নারী শ্রম লুণ্ঠনসহ নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। আর এগুলোই হচ্ছে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের ‘উপহার'।
ইত্যাকার কারণে পৃথিবীতে যে কোনও সময়ের চেয়ে গত দুই দশকে এবং বর্তমান সময়ে শ্রমিক অসন্তোষ তীব্রতর হয়। শ্রমিক-মজুরদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ বৃদ্ধি পাওয়া শোষণের তীব্রতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ারূপে চিহ্নিত করা যায়। অনেক জায়গায় মালিকরা মজুরদের পাওনা পারিশ্রমিক দেয়নি; অনেক জায়গায় মজুরদের বাধ্য করা হয়েছে সম্মত কর্মশর্তাবলীর চেয়ে খারাপ অবস্থায় কাজ করতে। ইউরোপের কোনও কোনও দেশে চীনা মজুররা প্রবল শোষণের মধ্যে পড়েছেন। বিদেশী মজুরদের মজুরি না দেয়া সংক্রান্ত অভিযোগ কোনও কোনও দেশে ১১১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। চীনের শ্রম অবস্থার কারণে প্রায় দুই কোটি শ্রমিক কাজ ছেড়ে স্ব স্ব গ্রামে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। ফিলিপাইনে কাজ হারিয়েছে ১৮ লাখ মানুষ (২০০৯ সালে)। যুক্তরাষ্ট্র, জিব্রাল্টার, মিসর, ফ্রান্স, মেক্সিকো, চিলি, রাশিয়া, ভারত, গ্রীস, বাংলাদেশ এবং আরও অনেক দেশে মজুরদের বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন ঘটে গত দশকে। যুক্তরাষ্ট্রে মজুররা কারখানা দখল করে নেয়। সেই মজুরদের প্রতি খোলা সমর্থন জানায় সমাজের সর্বস্থরের মানুষ। বিক্ষোভ কোথাও কোথাও দাঙ্গায় রূপ নেয়। এ সব দাঙ্গা ছিল পুঁজির যাত্রাপথ নিশ্চিত করতে নানা চেষ্টার বিরুদ্ধে জনমানুষের সুস্পষ্ট বিরোধিতার প্রকাশ।
পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের আরেকটি বিশ্বব্যাপ্ত নগ্নরূপ দেখা যাচ্ছে নানা ধরনের একতরফা হামলা, চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ, আগ্রাসনের রক্তাক্ত ধারা ও সামরিক-সশস্ত্র রণ-হুঙ্কার ইত্যাদি বর্বর আচরণের মাধ্যমে। চলছে বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূ-রাজনীতিগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে দখলদারিত্ব, সামরিক তৎপরতা ও সামরিক ঘাঁটি বিস্তারের অব্যাহত ধারায়। বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী বোমা হামলা, আফগানিস্তান ও ইরাকে আক্রমণ, পাকিস্তানে যুদ্ধের বিস্তৃতি, শ্রীলঙ্কায় সংঘাত, আফ্রিকার দেশে দেশে বিশৃক্মখলা সৃষ্টি, নানা দেশে সরকার উৎখাতের মাধ্যমে দালাল ও তাবেদারদের ক্ষমতায় বসানো, দক্ষিণ ওসেটিয়া যুদ্ধ, চেচনিয়ায় সামরিক অভিযান, দারফুরে হত্যাযজ্ঞ, কঙ্গোয় যুদ্ধ ইত্যাদি ঘটনার মাধ্যমে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বের শান্তি বিনষ্ট করে চলেছে। পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ তথা পশ্চিমা ইউরো-আমেরিকান গোষ্ঠীর লাঠিয়াল বাহিনী নামে কুখ্যাত ন্যাটোর বিস্তৃতি আরও বৃদ্ধি করার মাধ্যমে সঙ্কট ও উত্তেজনাকেও বাড়িয়ে তোলা হয়। সোমালিয়ার উপকূলে নাটকীয় ও রহস্যজনকভাবে উত্থান ঘটানো হয় জলদস্যুদের। পৃথিবীর বিভিন্ন ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে ব্যর্থ বা আধা-ব্যর্থ রাষ্ট্রে পর্যবসিত করা হয় নানা হস্তক্ষেপ ও ইন্ধনের মাধ্যমে। বিভিন্ন সম্পদে সমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোকে ব্যর্থ বা অর্ধ-ব্যর্থ লেবেল দিয়ে সেগুলোকে দুর্বল করা হয় এবং সেখানে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর হস্তক্ষেপের পথ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক লুটপাটের একটি অবাধ চারণভূমিতে পরিণত করা হয়েছে পৃথিবীকে।
ইউরো-আমেরিকার পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদী চক্রের কুকাজ সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও অস্ত্র উৎপাদনের হিড়িক দেখে। বিশ্ব শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিকভাবে চললে এতো অস্ত্রের প্রয়োজন হতো না। অস্ত্রের বিস্তার প্রমাণ করছে যে, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ পৃথিবীর মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে একটি গোপন ও অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। পুরো পরিসংখ্যান জানা না গেলেও বিশ্বের একশটি বড় অস্ত্র উৎপাদন কোম্পানির অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ ২০০৬ সালে ছিল ৩১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৬৩ শতাংশ ছিল ৪১টি মার্কিন কোম্পানির, পশ্চিম ইউরোপের ৩৪টি কোম্পানির ছিল ২৯ শতাংশ। রুশ অস্ত্র তৈরি কোম্পানিগুলোরও বিপুল বৃদ্ধি ঘটে। উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপীয় অস্ত্র শিল্পে ২০০৭ সালে একীভূত হওয়া ও কিনে নেয়ার ৫০টি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটে। এগুলোর মধ্যে তিনটি ছিল ইউরোপে আন্তঃসীমান্ত ও ১৬টি ছিল আন্তঃআটল্যান্টিক। আন্তঃআটল্যান্টিক একীভূত হওয়া ও কিনে নেয়ার প্রায় সবক'টি ঘটনাই ছিল ব্রিটিশ ও আমেরিকান কোম্পানিগুলোর মধ্যে। আরও সংহত আন্তঃইউরোপীয় ইউনিয়নভিত্তিক অস্ত্র শিল্প ও বাজার গড়ে তোলার জন্য অব্যাহত রাজনৈতিক ও কৌশলগত উদ্যোগ অব্যাহত ছিল এবং সেটা এখনও রয়েছে। এ লক্ষ্যে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা সামরিক-রণনীতিগত দু'টি দলিলের ব্যাপারে একমতও হয়েছে। একটি হচ্ছে, ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা কারিগরি ও শিল্প ভিত্তি সংক্রান্ত। অপরটি, সামরিক গবেষণা ও প্রযুক্তি কর্মনীতি সংক্রান্ত। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ থেকে ২০০৮, এই সময়কালে বিশ্ব সামরিক ব্যয় ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সামরিক ব্যয়ের দিক থেকে সাম্প্রতিক সময়ে শীর্ষস্থানীয় ১০টি দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জার্মানী, জাপান, ইতালি, সৌদি আরব ও ভারত। স্টকহোমভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট'-এর গবেষণা তথ্যে জানা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রকৃত অর্থে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছিয়েছে। এর আরেকটি প্রমাণ হলো, ব্যাপকভাবে সংঘাত-গৃহযুদ্ধ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা যুদ্ধের প্রকোপ। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে যে, ২০০৭ সালে বিশ্বের ১৩টি স্থানে ১৪টি বড় ধরনের সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটে। ২০০৮ সালে এসে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬টিতে। এর ফলে মানবাধিকার ও শান্তি ইতিহাসে সবচেয়ে চরম বিপদের মধ্যে পড়েছে।
পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ তাদের জীবনকে সুখী, শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ করার জন্য সম্পদ বণ্টন ও ভোগ ব্যবস্থা থেকে বৈষম্য দূর করতে সমাজের আমূল পরিবর্তনের প্রয়াস চালায়। বিশ্বের নানা প্রান্তে এ কারণেই মানবমুক্তির মহামন্ত্ররূপে ইসলামের দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। যুদ্ধ বা বলপ্রয়োগে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী চক্র মানুষের এই বিশ্বাস ও আস্থার জায়গাটিকে দখল করতে পারেনি। ফলে চলে অন্য খেলা। দেখা যায়, সাধারণ মানুষের পরিবর্তনমুখী বা ইসলামপ্রিয় প্রয়াসকে সরিয়ে চলতি ব্যবস্থার মধ্যেই আটকে রেখে বিদ্যমান পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী অবস্থাটি টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োগ করা হয় এনজিও-পন্থা। বৈষম্যের মূল কারণ দূর করার পথে নেয় না এ পন্থা। এ পন্থার অন্যতম পরীক্ষাগার আফ্রিকার দেশগুলো, বাংলাদেশ, নেপাল। কিন্তু সকল দেশেই এনজিও-পন্থা পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের গুচ্ছ-গুচ্ছ দালাল ও বশংবদ তৈরি করে এই বিশ্ব শোষকদের সাহায্য করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি। প্রমাণ হয় যে, সমাজের মধ্যকার শোষণ ও অব্যবস্থা এনজিওগুলো নিরসন করতে পারেনি। বরং শোষণ ও অবস্থার দুষ্টচক্রে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যকার দেশপ্রেমিক-বিশ্বাসী-সংগ্রামশীলতাকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে পুঁজিবাদী বিশ্বের মদদপ্রাপ্ত এনজিওগুলো।
পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা বিশ্ব চলমান বিশ্বায়নের যে সংজ্ঞা ও সীমা নির্ধারিত করেছে, বিগত দুই দশকে পৃথিবীতে জ্বালিয়ে দিয়েছে নরকের অগ্নিকুন্ড। চলছে দুটি যুদ্ধের আগুন; সময়ের মাপকাঠিতে এই দুই যুদ্ধের আগুন, ইরাক ও আফগানিস্তান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে দীর্ঘতর। লাখ লাখ মানুষ, যারা ঘটনাচক্রে নয়, সুনির্দিষ্ট আক্রমণের কারণে মারা যাচ্ছে, তাদের পরিচয় হলো মুসলমান। লেবানন ও মধ্যপ্রাচ্যের রক্ত আর মৃত্যু দিনে দিনে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় এবং প্রতিরোধের মুখে গণঅভ্যুত্থানের দিকে চলে যাওয়ায়, পশ্চিমা বন্দুক-বোমা-আক্রমণের দিক বদল হয়েছে এক মুসলিম জনপদ থেকে আরেক মুসলিম অঞ্চলে। পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ পৃথিবী ও এর মানুষকে শোষণ ও নির্যাতন করছে---এটা খুবই সত্য কথা। কিন্তু এর চেয়ে নির্মম সত্য হলো শোষণ, নির্যাতন, আক্রমণ হচ্ছে কেবল মুসলিম অঞ্চলেই। সমাজতন্ত্রের লাশের ওপর একচ্ছত্রভাবে দাঁড়িয়ে বসনিয়ার মুসলমানদের নিধনের মাধ্যমে যার সূচনা ঘটেছিল, সেটা এখন ইরাক ও আরব বিশ্বের তেল, আফগানিস্তান থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত দেশসমূহের জ্বালানি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূ-কৌশলগত অঞ্চলের অধিকার হরণের ক্ষেত্রে পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী পৃথিবীর মানচিত্রের জ্বলন্ত ও রক্তাক্ত অংশটুকুর আজকের পরিচয় হলো মুসলিম জগত।
বিশ্বায়নের পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের পৃথিবীর মানুষ দেখতে পাচ্ছে শত-শত কোটি মানুষ কান্না ও রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে তাদের জীবন, সম্পদ, সংগ্রাম, ভূখন্ড, এমনকি, পায়ের তলার মাটিটুকুও। ভেসে যাচ্ছে তাদের পরিচয়, অস্তিত্ব, বিশ্বাস আর অধিকার। এই আক্রান্ত মানুষের মৌলিক পরিচয়, তারা মুসলমান। তাদের রক্তে ভেজা পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ আরও আরও মুনাফা ও লুটপাটের জন্য পাগলা ঘোড়ার মতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তাবৎ বিশ্ব---যার হাত থেকে শান্তিকামী কোনও মানুষেরই রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। মানুষের স্বপ্ন, সংসার, দেশ, জনপদ তছনছ করতে করতে এই উন্মাদ পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ পুরো মানব বংশকেই শোষণ ও দারিদ্রে্যর অন্ধ গহবরে ঠেলে দিচ্ছে। যুদ্ধ, উত্তেজনা, দাঙ্গা আর তাবেদার গোষ্ঠীর মাধ্যমে পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও বীভৎস বিশৃক্মখলা। পুরো মানব সভ্যতাকেই বিষাক্ত শ্বাপদের ছোবলে ছোবলে আক্রান্ত করছে এবং গণমানুষের মুক্তি ও পুনরুত্থানের যে কোনও উদ্যোগকেই নস্যাৎ করছে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী ইউরো-আমেরিকান চক্র। বানোয়াট পন্ডিতদের মধুর কথায় যে পুঁজিকে বলা হয়েছিল ‘মানবিক', সেই পুঁজি আসলে কতোটা শোষক, কতোটা নিপীড়ক, কতোটা নৃশংস ইতিহাস সেটা আবারও দেখতে পাচ্ছে। যেভাবে সমাজতান্ত্রিক সামাজিক-সম্প্রসারণবাদের আড়ালে মানুষকে মিথ্যা সাম্যের-স্বর্গরাজ্যের প্রলোভন দিয়েছিল সাবেক সোভিয়েট ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ; তেমনিভাবে পুঁজিবাদের রঙিন-মোহময় জগতের ভোগ ও যথেচ্ছাচারের দিকে পৃথিবীর মানুষকে এখন টানছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইউরো-আমেরিকান পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী মতাদর্শ। কিন্তু শোষণ-নিপীড়নের ছদ্মাবরণে কোনও অমানবিক দর্শন ও আদর্শই পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারে না---তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়ে নমরূদের প্রাসাদের মতো। ৭০ বছরেই ভেঙে পড়েছিল সমাজতান্ত্রিক শোষণ ও নিপীড়ন। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদের যে বীভৎস-অমানবিক নগ্নরূপ দেখা যাচ্ছে, তাতে এহেন সভ্যতাবিনাশী আদর্শের ৭০ বছরও টিকে থাকার ক্ষমতা নেই। জাগ্রত মানুষের মুক্তির পদতলে অচিরেই কবর রচিত হবে মানবধ্বংসী পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের স্বপ্নসাধ।