ফ কী র আ ব দু র রা জ্জা কএকজন রাজনৈতিক নেতার গল্প : পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান। ছোট বয়সেই তিনি মা-বাবা হারান। এরপর এক খালার তত্ত্বাবধানে বড় হন। তারাই তাকে সন্তানের মতো মানুষ করেন। দাদা-বাবার উত্তরাধিকার হিসেবে তিনি ছিলেন বিরাট ভূসম্পদের মালিক। ছোটখাটো জোতদার। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার কারণে সম্পদের খোঁজ-খবর বা বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না তার। কিন্তু ওই নেতার খালা-খালু সবই জানতেন। তিনি নাবালক ও এতিমের সম্পদ বুঝে নিতে সাহায্য করেন। তত্কালীন তার নিজ মহকুমা (বর্তমানে জেলা) ছাড়াও আশপাশের চারটি মহকুমায় তাদের ভূসম্পদ ছিল। রাজনৈতিক নেতাটি ইতোমধ্যে স্কুল-কলেজ পেরিয়ে সাবালক হয়েছেন। ছাত্রনেতা হিসেবে তার পরিচিতিও ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে। কিন্তু পৈতৃক সম্পদের দিকে তার খেয়াল নেই। খালা-খালুই তার সব। তারাই তাকে ওইসব সম্পদ থেকে আহূত অর্থ দিয়ে পরবর্তীকালে আধুনিক ব্যবসা-বাণিজ্য কারখানা গড়ে দিয়েছেন। যেহেতু অর্থ সম্পদের ওই বিপুল বৈভব নিয়ে ব্যস্ত হওয়া তার স্বভাব নয়, সেহেতু তার অভিভাবকগণ নেতার খালাতো ভাইদের দায়িত্ব দিয়েছেন ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করার। এখন সেসব সম্পদ ফুলেফেঁপে বিশাল আকার ধারণ করেছে। ষাটের দশকের পর, বিশেষ করে স্বাধীনতার পর থেকে ওই দক্ষিণাঞ্চলের নেতা কেন্দ্রীয় নেতায় পরিণত হন। ক্রমান্বয়ে জাতীয় নেতার পর্যায়ে উন্নীত হতে তার কষ্ট হয়নি। একবার সরকারের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু ওই নেতার খুব কাছে যারা গিয়েছেন, মিশেছেন তারা অনেকেই জানেন, ভদ্রলোকের হাতের আঙুলগুলো নাকি সহজভাবে খোলা থাকে না। একটু মুষ্টিবদ্ধ থাকে। ঠাট্টা করে তার ঘনিষ্ঠজনরা বলতেন, ওর হাতের আঙুলগুলো যদি খোলা থাকে তাহলে তো হাতের টাকা পড়ে যাবে। আর মুষ্টিবদ্ধ থাকলে তা পড়বে না। আসলে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হলেও রাজনীতির জন্য বা সাধারণ কর্মীদের জন্য উদার হাতে তিনি খরচ করতেন না। অনেকে সেজন্য তাকে কৃপণ বলতেন। সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে একাধিকবার পরাজিত হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণও ছিল নাকি প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় না করা। এসব ঘটনার পর অন্য এক নেতা তো বলেই ফেললেন, এমন লোক কখনই বড়মাপের রাজনৈতিক নেতা হতে পারবে না। প্রয়োজনে উদার হস্তে দল ও কর্মীদের জন্য অর্থ ব্যয় করার মানসিকতা যাদের নেই তারা বড় মাপের নেতা হতে পারেন না। এ অভিযোগ বা ঘাটতি দেশের অনেক নেতার বিরুদ্ধেই রয়েছে। শোনা যায় ড. কামাল তাদের মধ্যে অন্যতম।
যা হোক হাতের মুষ্টি যখন খুলে যায়, তখন হাতের নিয়ন্ত্রণে অর্থসম্পদ যেমন থাকে না; তেমনি কোনো ক্ষমতাসীন সরকারের মুষ্টিবদ্ধ হাত যখন খুলে যায়, তখন তার নিয়ন্ত্রণেও থাকে না দেশের প্রশাসনযন্ত্র। মনে হচ্ছে বর্তমানে শেখ হাসিনার মহাজোট সরকারের হাত থেকেও একে একে ঘুড়ির সুতা খুলে যাচ্ছে। প্রশাসন সার্বিক অর্থেই তুলনামূলকভাবে অদক্ষ এবং নিয়ন্ত্রণহীন। সরকার সঠিক অর্থে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে বলে বলে হয় না। জাতীয় সংবাদপত্রে বিভিন্ন সময় যেসব খবর প্রকাশ পায় তাতেই তার চিত্র পাওয়া যায়। অন্য ক্ষেত্রের কথা বাদ দিলেও সাম্প্রতিককালে দেশের পুলিশ বাহিনীর ব্যাপারে যে খবর প্রকাশ পেয়েছে এবং সাড়া জাগানো কতিপয় মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামি গ্রেফতারের ব্যাপারে তাদের যে ব্যর্থতার চিত্র প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে তাতেই বোঝা যায় এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটি এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণের অনেকখানি বাইরে চলে গেছে। নইলে পুলিশ কীভাবে সাহস পায় কোর্ট প্রাঙ্গণে একজন নারীর শ্লীলতাহানি করতে? পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ সারা দেশে অসংখ্য রয়েছে। কিন্তু রাজধানী শহরে সরকার ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নাকের ডগার সামনে দিনে-দুপুরে একজন বিচারপ্রার্থী নারীকে পুলিশ ক্লাবে ধরে নিয়ে শ্লীলতাহানি করতে পারে তা কল্পনা করা যায় না। এমন সাহস তারা পায় কোথা থেকে? এখানেই প্রশ্ন আসে, সরকারের প্রথম দিকের নিয়ন্ত্রণ এখন আর কার্যকর নেই। একে একে মুষ্টিবদ্ধ হাত খুলে যাচ্ছে। নাটাইয়ের সুতা দ্রুত হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যা ও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুমের রহস্য উদ্ঘাটন করতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে পুলিশ। এরপর সাংবাদিক পিটিয়ে ‘দক্ষতা’র পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে তারা। কারণ ওই সময়ই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে, দেশে অপরাধের পরিমাণও আগের তুলনায় কমেছে। তার ভাষায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।
‘আগের তুলনায় পুলিশ এখন অনেক ভালো,’ ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে উন্নতির দিকে’-এধরনের কথাবার্তা বিয়াল্লিশ বছর ধরে জাতি অনেক শুনেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যিনিই হয়েছেন তিনি এ বাক্যটি মুখস্থ করে চেয়ারে বসেছেন। কিন্তু কঠিন বাস্তবতা হল-দেশের আইন-শৃঙ্খলার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি তো হয়নি, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরাধ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরাধের ধরনও দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে।
আর পুলিশের দক্ষতা ও তাদের আচরণ আগের তুলনায় ভালো হয়েছে এমন ভাবার কোনো অবকাশ নেই। আগে পুলিশ বাহিনীতে অশিক্ষিতের পরিমাণ বেশি ছিল। এখন শিক্ষিতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এক ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধি পেলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থাত্ অপরাধ তদন্ত ও আসামি দ্রুত গ্রেফতারের ব্যাপারে তাদের ব্যর্থতা মাঝেমধ্যেই প্রকট হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে পুলিশের অসততা ও দুর্নীতির বিষয়ও। আমরা জানি অতীতের সব সরকারের আমলেই পুলিশের চাকরিতে অসত্ ও অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিদের প্রবেশ ঘটেছে বিপুল। রাজনৈতিক দলের ক্যাডার, সমাজে কম লেখাপড়া জানা মস্তান, বাড়ির বখে যাওয়া সন্তান তাদের বেশিরভাগই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে ঢুকেছে। রাজনৈতিক আশ্রয় ও ঘুষের কল্যাণে তারা চাকরি পেয়েছে। অনেকের ধারণা, তাদের দ্বারাই পুলিশ বাহিনী আজ ভারাক্রান্ত। স্বাভাবিক কারণেই পুলিশের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। অথচ এই পুলিশ বাহিনীই একদা দেশের বড় বড় অপরাধের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে, দ্রুততম সময়ে আসামি গ্রেফতারের নজির সৃষ্টি করেছে। ডাকাতি চুরি লুট হওয়া সম্পদ অল্প সময়ে উদ্ধার করেছে, গুম-খুনের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে এবং ভুক্তভোগী অসহায় মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এখন পুলিশ কেন আতঙ্কের নাম? পুলিশকে জনগণ কেন এড়িয়ে চলে? গ্রামগঞ্জে কোনো ঘটনা দুর্ঘটনা বা অপরাধ সংঘটিত হলে মানুষ থানা-পুলিশকে না জানিয়ে নিজেরাই তা মীমাংসা করার চেষ্টা করে কেন? জনগণ জানে থানা-পুলিশে গেলেই বিপুল অর্থ ব্যয় হবে, বাড়বে ঝক্কি ঝামেলা। অপরাধীরা এক সময় পুলিশের সঙ্গে রফা করে বেরিয়ে এসে তাদের ওপরই প্রতিশোধ নেবে। অতএব পুলিশকে যত বেশি এড়িয়ে চলা যায় ততই মঙ্গল। সরকার একেই কি আইনের শাসন বলে বাহবা নেবে? পুলিশকে ‘জনগণের বন্ধু’ পর্যায়ে উন্নীত করতে কতকাল লাগবে কেউ তা বলতে পারে না।
অনেকদিন আগের কথা। আমার এক সিনিয়র বন্ধু ছিলেন পুলিশের সর্বোচ্চের এক ধাপ নিচের কর্মকর্তা। একদিন অফিসে ফোন করে ডাকলেন দুপুরে তার অফিসে তার সঙ্গে লাঞ্চ করার জন্য। বললেন কথা আছে জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক বছরের সিনিয়র বন্ধুর ডাক উপেক্ষা করতে পারলাম না। যথারীতি তার রাজারবাগের অফিসে যেতেই কয়েক পুলিশ সাদরে তাদের বসের রুমে নিয়ে গেলেন। বন্ধুটির সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হল। কয়েকদিন আগেই দেশের পুলিশি ব্যবস্থার ওপর বাংলার বাণীতে একটা উপসম্পাদকীয় লিখেছিলাম। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক সভায় ওই লেখাটি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে এবং কর্মকর্তারা আমার এই বন্ধুটিকে দায়িত্ব দিয়েছেন আমাকে ডেকে নিয়ে ধন্যবাদ জানাতে। মূলত এ কারণেই বন্ধুটি আমাকে তার অফিসে ডেকেছিলেন। প্রায় ২৫-৩০ বছর আগের ঘটনা, তবু যা মনে পড়ে সে লেখাটিতে ভালো-মন্দ মিলিয়ে পুলিশের ব্যাপারে সমালোচনাও ছিল। তবে তা গঠনমূলক। যেমন ছিল সীমাবদ্ধতা ও ঘাটতি সত্ত্বেও পুলিশ দুঃসাহসিক কাজে সাফল্য দেখাচ্ছে, দ্রুত চুরি-ডাকাতির ঘটনা উদ্ঘাটন করছে। চাইলে জঘন্য অপরাধী পাকড়াও করতে তাদের বেগ পেতে হয় না এবং অত্যন্ত সীমিত বেতন-ভাতাতেও অনেক ক্ষেত্রেই আন্তরিকতার সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে চলেছে। আবার বহু ক্ষেত্রেই পুলিশের দুষ্কর্মে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে, ঘুষ না দিলে পুলিশকে সক্রিয় করা অসম্ভব ব্যাপার। এধরনের সমালোচনার পরও সেদিন সেই বন্ধু পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বাহবা দিয়েও নিজে কিছু কথা বলেছিলেন, যা প্রণিধানযোগ্য। বলেছিলেন পুলিশের জনবল বাড়াতে হবে। দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় সেদিন তো বটেই, এখনও পুলিশের জনবলে বিরাট ঘাটতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষিত, কমপক্ষে এসএসসি পাস বেকার যুবকদের চাকরিতে নিতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবে যেন মস্তান, ক্যাডার বা অপরাধীরা পুলিশে ঢুকতে না পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। ক্ষমতাসীন সরকারের রক্ষিতার মতো যাতে পুলিশকে ব্যবহার করা না হয় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। স্বাধীনভাবে তাকে কাজ করতে দিতে হবে। আর বলেছিলেন, আমরা যদি পুলিশের দুর্নীতি পঞ্চাশ ভাগও কমিয়ে আনতে পারি তাহলে সীমাবদ্ধতার পরেও এই বাহিনী দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম।
উল্লেখ্য, প্রয়োজনের তুলনায় এখনও পুলিশের জনবল অনেক কম, যদিও এ সরকার বহু নতুন নিয়োগ দিয়েছে। পুলিশের বেতন-ভাতা, খাবার, ট্রেনিংয়ের ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করেছে। তবু প্রয়োজনের তুলনায় বিরাট কিছু নয়। সরকার তার সাধ্যের মধ্যে থেকে পুলিশ বা অন্যান্য সেক্টরের দিকে নজর দিচ্ছে এটাই বড় কথা। কিন্তু সরকার বোধহয় দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠতে পারছে না। অতীতের সরকারগুলো দলীয়করণের যেসব উলঙ্গ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছে তার তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে এ সরকারকেও।
ফলে দলীয় চাপের মুখে সরকারের পক্ষে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবু সরকারকে আমরা বলব বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নিয়োগের প্রশ্নে একটা ভারসাম্য রক্ষা করা মঙ্গলজনক হবে। কারণ দেশ ও দেশের প্রশাসন গোটা জাতির, কোনো একটি বা দুটি রাজনৈতিক দলের নয়। যদিও আমরা জানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশেও নতুন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার সময় আগের স্টাফদের বিদায় দিয়ে প্রায় দুই হাজার দলীয় ব্যক্তিকে নতুন নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তাদের ক্ষেত্রে কেউ দলীয়করণের অভিযোগ তোলে না। তবে পৃথিবীর অনেক গণতান্ত্রিক দেশের ন্যায় বাংলাদেশও বিশ্বাস করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার একমাত্র ভিত্তি হতে হবে মেধাগত যোগ্যতা। আর নিয়োগপ্রাপ্ত ওই সরকারি কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন কেবল প্রজাতন্ত্রের, নিরপেক্ষভাবে। কিন্তু গত সরকারগুলো মুখে বললেও কেউই দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। বর্তমান সরকার কি পারবে দেশ ও প্রশাসনের বৃহত্তর স্বার্থে দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠতে? একথা আর অস্বীকার করা যাবে না দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাদের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের বেশিরভাগই দক্ষতা-যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেনি। প্রশাসনিক দিক দিয়ে তারা সরকারের বিরাট কোনো সহায়ক হয়নি, বরং বিশৃঙ্খলা-সঙ্কট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে প্রশাসনে।
সম্প্রতি পুলিশ কয়েকটি বড় ও সংবেদনশীল হত্যা খুনের ঘটনার কোনো সুরাহা করতে পারেনি বলে জনগণ দারুণভাবে ক্ষুব্ধ ও সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছে। আর জনগণের মনোভাব উস্কে দেওয়ায় সাহায্য করেছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক মহল ও এক ধরনের মিডিয়া এবং সুশীল সমাজের একটি অংশ। এরা মূলত উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার লক্ষ্যেই করেছেন। কিন্তু একই সময়ে পুলিশ বিস্ময়কর কিছু সাফল্যও দেখিয়েছে, যেমন-একজন নারীকে হত্যা করে ২৬ টুকরা করার পর বর্বর হত্যাকারীকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কয়েকদিন আগে একটি শিশুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা জঘন্য সন্ত্রাসীদের জীবিত শিশুসহ গ্রেফতার করেছে। আবার একইভাবে অন্য শিশুকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দেওয়ার সময়সীমা পার হওয়ার আগে শিশুটিকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করে ফেললেও পুলিশ ওই অপহরণকারীদের দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। সারা দেশে পুলিশের নানা ব্যর্থতার পরেও রয়েছে অনেক বিস্মিত হওয়ার মতো সাফল্য। আমাদের সুশীল সমাজ বা এক ধরনের মিডিয়া কিন্তু ফলাও করে এসব সাফল্যের কথা প্রচার করে না, তারা যা করলে রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়া যায় তাই নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
এতদসত্ত্বেও আমরা বলব, সাগর-রুনি হত্যার রহস্য ও ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা উন্মোচন করতে না পারা পুলিশের চরম ব্যর্থতারই পরিচায়ক। এটা ক্ষমতার অযোগ্যতা, ব্যর্থতা। একইভাবে কোর্টে বিচার চাইতে এসে পুলিশ কর্তৃক একজন নারীর শ্লীলতাহানি বা ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই ক্ষমা করতে পারছে না রাষ্ট্র। অবিলম্বে আসামিদের আইনে সোপর্দ করে উপযুক্ত বিচার করতে হবে। নইলে মনে হবে সরকারের তিন বছর পরে হাত থেকে ঘুড়ির সুতা ছিঁড়ে যাচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে সরকার। এ অবস্থা চলতে থাকলে সরকারের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। জনমনের এই ধারণা ও বিশ্বাস দূর করতে হলে এখনই সরকারকে প্রায় ছিঁড়ে যাওয়া সুতাকে শক্তহাতে আঁকড়ে ধরতে হবে। সময় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে, সে কারও জন্যই অপেক্ষা করে না।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন