শনিবার, ৯ জুন, ২০১২

একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়াউর রহমান



অধ্যক্ষ মো. তারিকুল ইসলাম
নেতৃত্বের অনেক ধরন বা Pattern-এর মধ্যে দু’টি ধরন পৃথকভাবে গুরুত্বের দাবি রাখে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘নেতা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে’ আর অন্যটি হচ্ছে ‘Leaders are the product of given situation’ অর্থাত্ ‘পরিবেশ-পরিস্থিতিই নেতা সৃষ্টি করে।’ কার্যকর বিশ্লেষণে জিয়াউর রহমান দ্বিতীয় ধরনের নেতা।
ঘটনা পরিক্রমায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার মসনদ যখন নেতৃত্বের শূন্যতায় এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগোচ্ছিল, ক্ষমতার তাজ যখন ধুলোয় লুটোপুটি খাচ্ছিল এবং সেই ক্ষমতার তাজকে ঘিরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা যখন বাংলাদেশের সত্তা ও অস্তিত্ব নিয়ে এক ভয়ঙ্কর খেলায় মেতেছিল—ঠিক তখনই জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আবির্ভাব। বলাবাহুল্য, তিনি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ করেননি বা রাজনৈতিক ক্ষমতা বলপূর্বক কারও কাছ থেকে কেড়ে নেননি। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশপ্রেমিক সিপাহি-জনতা দেশের চরম এক ক্রান্তিকালে একজন বিশ্বস্ত, দেশপ্রেমিক, ঈমানদার ও সাহসী ব্যক্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানের দ্বারস্থ হন। সেই সময় ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে বন্দি জিয়াউর রহমানকে তাঁরা দেশ ও জাতির নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য আবেগময়ী আবেদন জানান। শহীদ জিয়া কাপুরুষ ছিলেন না বলেই সেই সময়ের সেই দেশবিনাশী সঙ্কট থেকে জাতিকে উত্তরণের জন্য তিনি জাতীয় নেতৃত্ব গ্রহণের মতো ঝুঁকি নিয়েছিলেন।
বস্তুত ৭ নভেম্বর বিপ্লবের পরিণতি হিসেবেই জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান নিতে বাধ্য হন। বাংলাদেশের সেই চরম দুঃসময়ে পরিস্থিতির পরিবর্তনে দৃশ্যপটে কেন জিয়াউর রহমান, কেন অন্য কেউ নয়? জিয়াউর রহমান এ দেশের মানুষের কাছে আগে থেকেই আস্থা অর্জনকারী একটি নাম। কারণ ’৭১-এ পাকিস্তানিদের অতর্কিত আক্রমণে অপ্রস্তুত এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় জাতিকে পথের নিশানা দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণা দানের মধ্য দিয়ে শহীদ জিয়া। হানাদার বাহিনীর নির্মমতায় স্তম্ভিত সমগ্র জাতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর মনোবল জোগায় তাঁর এই ঘোষণা। সবার মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হয় যে, সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয়েছে এবং জিয়ার নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী অগ্রবর্তী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। হানাদার শক্তির বিরুদ্ধে সেনা, পুলিশ, যুবক, ছাত্র, সর্বস্তরের সাধারণ জনতা প্রতিশোধস্পৃহায় অদম্য সাহসে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই যুগান্তকারী সাহস সঞ্চারী ভূমিকার কারণে এই মানুষটি মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের গহীন বন্দরে স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন।
এক ঘোর অমানিশার মধ্যে অত্যন্ত আকস্মিকভাবে বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে শহীদ জিয়ার উত্থান হলেও তিনি এই আকস্মিকতায় হতচকিত কিংবা বিস্ময়বিমূঢ় হননি। বরং স্বভাবসুলভ অত্যন্ত ধীর, শান্ত মস্তিষ্কে অথচ সাহসী চিত্তে তিনি একটি রাষ্ট্র পরিচালনার সব ক্ষেত্রে দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭৭ সালের ২০ এপ্রিল তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেও তিনি নিশ্চিতভাবে জানতেন এবং স্থিরভাবে বিশ্বাস করতেন, দেশ পরিচালনায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। দ্রুত সামরিক শাসন প্রত্যাহার ও বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ১৯৭৮ সালে দেশে প্রথমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং অব্যবহিত পরেই ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা তিনি করেন। এ দু’টি নির্বাচনেই বাংলাদেশে সেই সময়ে কার্যকর সব রাজনৈতিক দল স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। কারণ, শহীদ জিয়া সব রাজনৈতিক দলকে আস্থায় আনতে পেরেছিলেন এবং সবার মধ্যে এ দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, দেশটি সবার এবং দেশের উন্নয়নে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা একান্ত অপরিহার্য।
শহীদ জিয়ার ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বের গুণে তখন থেকে প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হয় বাংলাদেশে। বহুদল এবং পরমতসহিষ্ণুতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন সারা বিশ্বকে বাংলাদেশের প্রতি আকর্ষিত করে। এখানে উল্লেখ্য যে, গণতন্ত্রের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামে গৌরবদীপ্ত ভূমিকার জন্য যে নেতা একসময় জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার একমাত্র প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন, যার কারামুক্তি ও সুস্থ জীবনের জন্য অনেক মানুষ নফল রোজা রেখে পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করেছেন—সেই শেখ মুজিবই ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষার হীন মানসিকতায় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ‘বাকশাল’ কায়েম করেছিলেন। বাকশালের সেই গণতন্ত্রখেকো গহ্বর থেকে গণতন্ত্রের কঙ্কাল তুলে এনে তাতে আবার প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন শহীদ জিয়া। বস্তুত বাংলাদেশের ইতিহাস অন্য রকম হতো যদি এদেশের রাজনীতির দৃশ্যপটে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব না ঘটত।
শহীদ জিয়া তাঁর ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে সারা বিশ্বকে পৃথিবীর মানচিত্রে উদিত নতুন একটি রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী করে তোলেন। ফলে স্বাধীনতা যুুদ্ধে বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণকারী দেশগুলোসহ সে সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর ফলে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের মুখ দেখে। ‘বিশ্বে আমাদের কেউ প্রভু নয়, সবাই আমাদের বন্ধু’—এটিই ছিল জিয়াউর রহমানের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্লোগান এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তত্কালীন বিশ্বব্যবস্থার বাস্তবতায় কোনো বিশেষ অক্ষশক্তির করায়ত্ত না হয়ে সামগ্রিকভাবে সব পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে সফল হয়েছিল। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল বাংলাদেশের জন্য।
শহীদ জিয়া অনুধাবন করেছিলেন, গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর এজেন্ডা হলো ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা’। একটি যুক্তিনির্ভর গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নির্মাণে স্বাধীন সংবাদ পরিবেশনের কোনো বিকল্প নেই। অথচ স্বাধীনতা-পরবর্তী মুজিব সরকার কুখ্যাত ‘প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাক্ট-৭৩’ এর আওতায় এক ঘোষণায় চারটি অনুগত সংবাদপত্র রেখে বাকি সব সংবাদপত্র প্রকাশনার অনুমতি বাতিল করে। শহীদ জিয়া তাঁর আগের সরকারের এই কালো আইন দ্রুত বাতিল করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংবাদপত্রগুলোকে একে একে প্রকাশের অনুমতি প্রদান করেন। সেই সঙ্গে তিনি বহু নতুন পত্রিকার ডিক্লারেশনের ব্যবস্থা করেছিলেন, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী। এমনকি বিভিন্ন জেলা শহর বা মফস্বল থেকে পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রেও তিনি সংশ্লিষ্টদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন এবং পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন। এর ফলে আগের সরকারের সময়ে চাকরিহারা সাংবাদিকদের পুনঃ কর্মসংস্থান এবং নতুন আরও অনেক শিক্ষিত যুবককে একটি স্বাধীন সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন শহীদ জিয়া। আইনের অপব্যবহার করে কেউ যাতে সাংবাদিকদের হয়রানি না করতে পারে এবং অসত্ উদ্দেশ্যে কোনো সাংবাদিক যাতে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে কারও সম্মানহানি না ঘটাতে পারে, সেজন্য শহীদ জিয়া ‘প্রেস কাউন্সিল’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সাংবাদিকদের পেশাগত মানোন্নয়নে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘প্রেস ইনস্টিটিউট’। সাংবাদিক সমাজের প্রকট আবাসিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান খোদ রাজধানীর মিরপুরে ২২ বিঘা জমি সাংবাদিক ইউনিয়নের নামে বরাদ্দ করেছিলেন। ঢাকার হৃিপণ্ডে অবস্থিত বিশাল এবং সুরম্য অট্টালিকার যে জাতীয় প্রেস ক্লাব, তা প্রতীকী ১ টাকা বিনিময়মূল্যে শহীদ জিয়া কর্তৃক প্রদত্ত জমিতে তাঁর সরকারের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত।
এই ভূখণ্ডের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে ধর্মপরায়ণ। দেশের সিংহভাগ মানুষের আত্মার ধ্বনি, তাঁদের চিন্তা-চেতনা-আকাঙ্ক্ষা-মূল্যবোধ আর বিশ্বাস শহীদ জিয়ার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তাই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মতো একটি ধর্মপরায়ণ দেশের মানুষের একান্ত অনুভূতির কথা বিবেচনায় রেখে সংবিধানে ধর্মরিপেক্ষতার পরিবর্তে ‘পরম করুণাময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ এবং ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করেছিলেন।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে কত বড় প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক ছিলেন তার উত্কৃষ্ট নিদর্শন হলো ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’। এদেশের মানুষের যে একটি আলাদা জাতিসত্তা রয়েছে এবং তা যেমন ধর্মের দোহাই দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে মেলানো যায়নি, তেমনি ভাষা বা অন্য কোনো কারণে স্বার্থ-অন্বেষণকারী কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে যে বিলীন করা যাবে না—শহীদ জিয়া তা অনুধাবন করেছিলেন। বাংালাদেশের মানুষ তার নিজস্ব পরিচয় বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হবে, এটাই ছিল জিয়ার ঐকান্তিক কামনা। বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বসবাসকারী মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, বাঙালি-অবাঙালিসহ সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে এই জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করার মহতী উদ্যোগ নিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত একটি দেশের জন্য বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক রাজনৈতিক নেতার আবির্ভাব ঘটলেও স্টেটস্ম্যান বা রাষ্ট্রনায়কপ্রাপ্তির দুর্লভতা ঘোচানোর ক্ষেত্রে যে নামটি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চিরদিন উচ্চারিত হবে—সে নামটি হলো জিয়াউর রহমান। একটি মানুষের মধ্যে কতখানি রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণাবলী থাকলে তিনি একটি দেশকে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারেন। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শহীদ জিয়া প্রণীত ১৯ দফা অর্থনৈতিক কর্মসূচির কার্যকর প্রয়োগ এবং প্রশংসনীয় সাফল্য সমগ্র বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষে জর্জরিত জাতি অবাক বিস্ময়ে দেখল, কত অল্প সময়ে একজন মানুষ কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারেন, খাদ্য উত্পাদন দ্বিগুণ এমনকি বিদেশে খাদ্য রফতানির মতো দুঃসাহসিক কাজে সফল হতে পারেন। রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন শহীদ জিয়া। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অভূতপূর্ব উন্নতি, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ রোধ, খাল খনন, অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা, একফসলি জমিকে দোফসলি ক্ষেত্রবিশেষে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর, শিল্প-কারখানায় তিন শিফ্ট চালুর মাধ্যমে উত্পাদন বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, মত্স্য চাষ ও গবাদিপশু পালনে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা গ্রহণ—এরকম আরও অনেক জনকল্যাণধর্মী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাংলাদেশের যে নিরন্তর পথযাত্রা, তার পাইওনিয়ার হলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আজকে যে দু’টি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে—গার্মেন্ট শিল্প ও জনশক্তি রফতানি, এই দুই খাতেরই সূচনা শহীদ জিয়ার হাতে। এমনকি জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ থেকে সৈন্য প্রেরণও জিয়াউর রহমানের শাসনামলেই শুরু হয়। সাধারণত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকাকালে জনপ্রিয়তা ক্রমহ্রাসমান হলেও জিয়ার ক্ষেত্রে তা ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা জিয়াকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। অকালমৃত্যুর পর তাঁর জানাজায় ২৫-৩০ লাখ শোকাতুর মানুষের উপস্থিতির উদাহরণ বিশ্বে নজিরবিহীন, একমাত্র মিসরের প্রেসিডেন্ট নাসেরের জানাজার সঙ্গে তুলনাযোগ্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন