অরবিন্দ রায়
৮ জুন দেশের সব ক’টি জাতীয় দৈনিকে নিশাত হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হয়েছে। ৫ জুন রাত ৮টা সেগুনবাগিচার একটি বাসায় নিশাত বানু নামে ৪৩ বছর বয়সী এক ধনাঢ্য মহিলা দুর্বৃত্তের হাতে খুন হন। খুন হওয়া নিশাত বানুর লাশের পাশেই তার বৃদ্ধ (৭৩) মাকে বেঁধে রাখা হয়। অসহায় মা চেয়ে চেয়ে দেখেছেন তার প্রাণপ্রিয় সন্তানের হত্যা দৃশ্য। এরপর জনমানবহীন বাসায় লাশের পাশে কাটিয়েছেন ৩৬ ঘণ্টা। তারপরও বৃদ্ধার আর্তচিৎকারে সাড়া মেলেনি কারও। এমনকি প্রতিবেশীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেও সাহায্য পাননি এ অসহায় বৃদ্ধা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যে অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করলেন তাকে এক কথায় ভয়াবহ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। একদিন এ বৃদ্ধাকেও চলে যেতে হবে এবং চলে যাবেন পৃথিবী থেকে। এ দেশ ও সমাজ থেকে। কিš‘ যাওয়ার আগে দেশ ও সমাজকে যে ধিক্কার ও অভিসম্পাত দিয়ে যাবেন, তা যদি ঈশ্বর সত্যি সত্যি কবুল করে নেন তাহলে এর পরিণতি কী হবে কে জানে! দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা এক অপরাধপ্রবণ সমাজের বাসিন্দা। তবে এ হত্যাকাণ্ড অবশ্যই ঠেকানো যেত যদি সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তায় আগাম ব্যব¯’া নিত। কী সেই ব্যব¯’া তা বলার জন্যই আজকের এ লেখা।
বেশ কয়েক বছর আগে হুমায়ূন খান পন্নীর বৃদ্ধ স্ত্রীকে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। সে সময়ও অসহায় নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার মনে হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে ভাবার এখন সময় এসেছে বলে মনে হয়। আজ নিশাতের হাতে যদি একটি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থাকত, তাহলে মনে হয় না তাকে এভাবে দুর্বৃত্তদের হাতে অসহায় আÍসমর্পণ করতে হতো। আÍরক্ষার পাশাপাশি অশীতিপর বৃদ্ধ মাকে তার হত্যা দৃশ্য দেখাতে হতো না। নিশাত বড় ভুল করেছিলেন, তা বলতেই হবে। কেন তিনি এত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও একটি লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র বাড়িতে রাখার প্রয়োজন বোধ করেননি। তিনি তো নিজেও জানেন, তাদের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের মনোমালিন্য চলছে। যে কোন সময় তারা সম্পদের লোভে মরিয়া হয়ে যে কোন বড় অঘটন ঘটাতে পারে। তার জন্য নিজেকে এভাবে নিরস্ত্র রাখাটা তার উচিত হয়নি বলে মনে হয়। এ ভুল কেবল নিশাতের নয়। এ ভুল গোটা সমাজের। এ বিষয়ে নিশাতকে সজাগ করে দিয়ে আÍরক্ষার্থে তার হাতে বৈধ অস্ত্র ও তা চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়ার দায়িত্ব ছিল সমাজের। কিš‘ সমাজ তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে ব্যর্থতার দায়ে অকালে প্রাণ হারাতে হল নিশাতকে।
এ সমাজের নিয়মই মনে হয় এরকম যে, সর্বনাশের আগে কেউই কিছু ভাবেন না। আহাজারি, প্রলাপ, বিলাপ শুর“ হয় যখন সর্বনাশের কোন কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। কিš‘ যা করণীয় তা করতে হবে সর্বনাশের আগেই। নিশাতের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার খবর যদি দুর্বৃত্তদের জানা থাকত, তাহলে মনে হয় না তারা কেউই এভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে বাসায় ঢোকার সাহস পেত। বরং কোন ঝুটঝামেলা পাকানোর সাহসই পেত না।
জনগণের নিরাপত্তা বিধান যদি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের আওতায় পড়ে, তাহলে সরকারের উচিত অসহায় নারীদের নিরাপত্তা বিধানে কার্যকরী ব্যব¯’া নেয়া। কেবল ধনাঢ্য বলে নয়, পুর“ষ বা অভিভাবকহীন এ ধরনের পরিবারগুলোর নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নেয়া জর“রি হয়ে পড়েছে। যার যতটুকু সামর্থ্য সেই অনুযায়ী নিরাপত্তাসামগ্রী তার তুলে দিতে হবে। সেটি বন্দুক হতে পারে। টেঁটা, চাকু, বল্লম ও লাঠিসোটাও হতে পারে। শরীরে শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত সে যেন লড়াই করতে পারে। এ লড়াইয়ের ফলাফল যেসব সময় দুর্বৃত্তের পক্ষে যাবে তা নয়। কারণ নিশাতরা তখন লড়াইয়ের প্র¯‘তি নিয়েই থাকবেন। আগে থেকে এ ধরনের ব্যব¯’া রাখা হলে ৮ জুনের দৈনিকগুলোয় হয়তো উল্টো খবরও পরিবেশিত হতে পারত। খবরের শিরোনাম হতো এরকম, ‘দুর্বৃত্তরা হত্যার উদ্দেশ্যে গৃহে প্রবেশ করে নিজেরাই নিহত’। গোটা জাতি দিনের শুর“টা করতে পারত একটি সুখবর পড়ে। ‘নিশাত নামের এক অসম সাহসী মহিলা গ্রিল কাটা দুর্বৃত্তদের র“খে দিয়েছেন। আÍরক্ষার জন্য গর্জে উঠেছে তার অস্ত্র। এ যুদ্ধে কেবল নিশাতই রক্ষা পাননি। সেই সঙ্গে তিনি রক্ষা করতে পেরেছেন তার ৭৩ বছর বয়সী বৃদ্ধ মাকেও।’ এ দেশে কবে এ ধরনের খবর পরিবেশিত হবে জানি না। সেই দিনটির অপেক্ষায় থাকলাম।
অরবিন্দ রায় : একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি পরামর্শক
ধৎধনরহফধৎড়ু২০০৩@ুধযড়ড়.পড়স
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন