সোমবার, ৪ জুন, ২০১২

এখনই সময়



 মাসুদ খান সুজন    
কিছুদিন আগপর্যন্তও আমি এই ভেবে আশ্বস্ত ছিলাম যে, কোনকিছু করার জন্য বৃহত্ পরিসরে সরাসরি অংশগ্রহণের কোন প্রয়োজন নেই। আমার আশা ও বিশ্বাস ছিল, নিজের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টাসমূহ এবং আর-সকল একই মূল্যবোধ এবং ধারণা পোষণকারী ব্যক্তি ও সংগঠনের মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমাদের রাজনৈতিক জীবনে সৃষ্ট ক্ষতগুলোর নিরাময় সম্ভব, যার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয়/সরকারি ব্যবস্থাপনাতে/কাঠামোতে আমাদের বিগত নেতাদের/শাসকগোষ্ঠীর ফেলে যাওয়া এবং বিদ্যমান সীমাবদ্ধতার গহ্বরগুলো পূরণ হবে।
আমি একপাশে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে তাদেরকে দেখেছি যারা নিজেদের বক্তব্যগুলো/কণ্ঠস্বরগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন এবং তুলনামূলক দৃষ্টিতে সামগ্রিক পরিবর্তনের জন্য আমার ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে নেয়া উদ্যোগগুলোকে যথেষ্ট বলে যুক্তিযুক্ত মনে করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল, রাষ্ট্রীয় সংস্থাসমূহের অক্ষমতা এবং অসমতার ধ্বংসাত্মক প্রভাব অধিকতর প্রকট হয়ে না উঠলে মানুষের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ও সুসম্পর্ক এবং সম্মিল্লিত পারিবারিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগসমূহের দ্বারা একটি সামাজিক ভারসাম্য নির্মাণ সম্ভব। আমি মূলত একজন আশাবাদীর আকাশকুসুম পরাবাস্তবতায় বসবাস করছিলাম। এই পরাবাস্তবতা আমাকে প্রতিদিনের সংবাদপত্রের রক্তচক্ষু এবং ধারাল অস্ত্রের দৌরাত্ম্যবাহী সংবাদের আক্রমণ থেকে আড়াল করে রেখেছিলো।
গত কয়েক মাসের বেশকিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, আমার আশার উজ্জ্বল জায়গাগুলো হয়েছে বেশ-খানিকটা নিষ্প্রভ, সুনামির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত কোন ভাসমান ভেলার মত ভঙ্গুর রূপ নিয়েছে আমার ভবিষ্যতের উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো; এবং সর্বোপরি, তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়েছে আমারই তৈরি সেই আকাশকুসুম পরাবাস্তব জগত্। এসবের কারণ মূলত এদেশের বিষমধার রাজনৈতিক সংঘাত, দুর্নীতি এবং পেশীশক্তির দৌরাত্ম্য, যেগুলো দেশের জনগণকে দিনদিন আশা-ভরসাহীন এক দুর্ভাগ্যজনক অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যখনই আমি এসবের কথা চিন্তা করি, ঠিক তখনই আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমার ৬-৭ বছর বয়সে দেখা মায়ের রান্নাঘরে মৃত্যু যন্ত্রণায় চারিদিকে শরীর ছুঁড়তে থাকা একটি মাগুর মাছের মৃত্যুদৃশ্য। সামাজিকভাবে একজন উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষ হয়েও এবং তুলনামূলকভাবে আর দশজন নাগরিকের দৈনিক দুর্বিষহ জীবন থেকে অনেক নিরাপদে থাকা সত্ত্বেও আমি অনুভব করি দেশের এই গভীর নিরাপত্তাহীনতা এবং দুঃসহ অচলাবস্থার কথা। আমি কল্পনা করি, কি পরিমাণ ভয় এবং নিশ্চয়তাহীনতার মধ্য দিয়ে কাটে একজন সাধারণ নাগরিকের এক-একটি দিন।
আমাদের রাষ্ট্র প্রক্রিয়ার/ব্যবস্থার সার্বিক এই পচন মূলত দৃশ্যমান অচলাবস্থার চেয়েও আরো বহুগুণ গভীর। এই পচন আমাদের প্রতিদিনের বিভিন্ন কার্যকলাপের সাথে শুরু হয়ে আরও গভীর থেকে গভীরতর রূপ নেয় যখন প্রত্যেকটিবার আমরা নিজেদেরকে বিকিয়ে দেই ক্ষণস্থায়ী প্রলোভনের জন্য, নির্লিপ্তভাবে আইনভঙ্গ করি, কোন কাজের জন্য কাউকে ঘুষ দেই কিংবা নীতিগতভাবে জঘন্যতম কাজগুলো করি এবং সেই অনৈতিকতাকে হালাল করতে নির্লজ্জভাবে বলে উঠি ‘বাংলাদেশে বাঁচতে হলে এগুলো করতে হবে’ অথবা ‘সবাই-ই তো করছে’। এই পচনের দুর্গন্ধ বের হয় ‘চামচাগিরি’তে ছেয়ে যাওয়া পুরো রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক কাঠামো থেকে যেখানে যেকোন ভিন্নমতের বিপক্ষে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং চিন্তাশীল নেতারা তাদের চারিদিকে ‘জি-হুজুর জি হুজুর’ বলা মোসাহেব দ্বারা পরিবৃত হয়ে থাকেন। এই পচন অতীতের বিভিন্ন অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক এবং ক্ষণস্থায়ী সমাধানের ধারাবাহিকতারই ফলাফল, যেগুলো একইসাথে আমাদের গণতন্ত্রের স্বাভাবিক ধারাকে বারবার ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং জাতির পুরানো ক্ষতগুলোকে করেছে আরও গভীর কষ্টদায়ক। আমাদের রাষ্ট্রীয় চরিত্রের এই পচনের মাত্রা আরও তীব্র হয় যখন আমরা আইনের যথাযথ বিচার ব্যবস্থা উপেক্ষা করি এবং নিশ্চুপ থেকে বাহবা দেই ক্রসফায়ারের দাঁতে পিষ্ট প্রতিটি মৃত্যুকে। আমরা তখন এরকম আরও অস্বাভাবিক মৃত্যু, আরও রক্তচক্ষুর প্রতিশোধ এবং আরও হত্যাযজ্ঞের জন্য দামামা বাজাতে থাকি যেখানে ইতিমধ্যেই অসংখ্য নিষ্পাপ মানুষের রক্তে ভিজে গেছে আমাদের এই বাংলার মাটি। এই সবকিছুর সাথে ধীরে ধীরে ঘটতে থাকে আমাদের প্রতিটি ব্যক্তি এবং বৃহত্ জাতিগত আত্মার করুণ মৃত্যু।
 মোহভঙ্গের এসব অনুভূতি নিয়ে যখন আমি আশাহীন অন্ধকারে খুঁটিহীন ভেলার মত ভেসে বেড়াচ্ছি তখন, নিয়তিই যেন আমার ছোট চাচার রূপে, আমার সামনে এনে দাঁড় করালো বহুদিন ধরে সমৃদ্ধিলাভ করা অন্যরকম এক সক্রিয় আশাবাদ। যা কিনা আমার, পূর্বের সকল আরামদায়ক বাস্তবতার সম্পূর্ণ বিপরীত। এর সূত্রপাত ঘটে এক সকালের চায়ের টেবিলে তার উপলব্ধি এবং সক্রিয়তা প্রসঙ্গে বিভিন্ন আলাপচারিতার/আলোচনার মধ্য দিয়ে (আমার চাচা যিনি বর্তমানে ৮২ বছর বয়সে বেশকিছু সাপ্তাহিক কলামে নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেন এবং গভীরভাবে বিশ্বাস করেন যে, একমাত্র সত্ এবং যোগ্য ব্যক্তিদের এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের বৃহত্ পরিসরে সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমেই যথাযথ সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব; তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে আমি কিছুটা সংশয়ী হলেও, রাজনৈতিক সক্রিয়তার প্রতি তার মনোভাব এবং বুদ্ধবৃত্তিক দৃঢ়তা আমার মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছে)। আমার মনে হতে থাকে, গত কয়েকযুগ ধরে অসংখ্য না পাওয়া এবং না হওয়ার মধ্যে থেকেও তিনি (আমার চাচা) যদি রাজনৈতিকভাবে আশাবাদী হতে পারেন তাহলে গত কিছুদিনের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় দেশের ভবিষ্যতের প্রতি আশাহীন হয়ে অন্ধকারের কাছে আমার আত্মসমর্পণের মধ্যে কোন যুক্তি নেই।
আমার চাচা এবং বিভিন্ন সমমনা ব্যক্তির সাথে বেশকিছু আলাপ-আলোচনার পর আমার চিন্তা এবং উপলব্ধির ব্যাপক পরিবর্তন আমি অনুভব করছি।  শুধুমাত্র একজন দর্শকের ভূমিকা থেকে চলমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে দেখা এবং তার বিচার-বিশ্লেষণ করা কখনোই একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান হতে পারে না। আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘটতে থাকা বিভিন্ন শুভ প্রভাব এবং পরিবর্তনগুলোকে সার্থক করে তুলতে হলে দেশের শিক্ষিত, প্রকৃত মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত, ধৈর্যশীল এবং আত্মসংযমী মানুষদের রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এমনকি এই পরিবর্তনের জন্য কয়েকপ্রজন্মব্যাপী সময়ের প্রয়োজন হলেও তা সম্ভব। আমার বিশ্বাস, নিশ্চুপ এই অসংখ্য আমরাই হচ্ছি সেই মানুষগুলো এবং দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এই আমাদেরই সরাসরি অংশগ্রহণ প্রয়োজন। যারা এদেশের মাটিকে তাদের ব্যক্তিগত জ্ঞাতিদ্বন্দ্বের জায়গা বলে মনে করে, যারা নেতৃত্বের যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই তাকে তাদের জন্মগত অধিকার মনে করে, এই অসংখ্য আমরাই পারি তাদের পৈশাচিক কামড় থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে এবং তাদের কুক্ষিগত রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করে দেশের চাকাকে সঠিক দিকে পথনির্দেশ করতে। মূলত এখনও পর্যন্ত রাজনীতিবিমুখ এই আমাদেরই উচিত দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাথে নিজেদেরকে সরাসরি সম্পৃক্ত করা এবং যেসব ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদ, যারা প্রতি ৫ বছর পর পর দেশের ক্ষমতায় ফিরে আসাকে অবশ্যম্ভাবী মনে করে তাদের হিংস্র হাত থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের ধারাকে মুক্ত করে স্বাভাবিক করে তোলা। যেসব গোঁড়া রাজনীতিবিদ আমাদেরকে একটি গোলকধাঁধাকর অবস্থায় জিম্মি করে রেখেছেন এবং জনগণের ভবিষ্যত্ আকাঙ্ক্ষাকে অবহেলা করে শুধুমাত্র অতীতের অন্ধকারেই পড়ে আছেন, তাদের কবল থেকে দেশের ভবিষ্যত্ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাকে মুক্ত করতে হলে এই আমাদেরকে অবশ্যই বর্তমান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরাসরি অংশগ্রহণ করতে হবে।
রাজনৈতিকভাবে একজন রক্ষণশীল এবং বাস্তববাদী হিসেবে একটি বিকশিত গণতান্ত্রিক অবস্থায় পৌঁছানোর জন্য আমি যেকোন কাটাপথ কিংবা শর্টকাট ব্যবহারের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি। আমি আশা করি আমরা যেন যেকোন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারি। আমার অনুরোধ, আমরা যেন কোনকিছুকে বা কাউকে মাইনাস করার ডাকে সাড়া না দেই এবং এদেশে আরব-বসন্তের মত কোনকিছুর অলীক স্বপ্নে রোমাঞ্চিত না হই। এর কারণ, ইতিহাসের সীমিত জ্ঞান থেকে আমার মনে হয়, এ ধরনের যেকোন শর্টকাট আমাদেরকে এমন কোন ফাঁকা বা শূন্য অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে যা কিনা পরবর্তীতে আরও বড় কোন সাম্রাজ্যবাদী, সুবিধাবাদী, চরমপন্থি কিংবা মৌলবাদী কালো শক্তির উত্থান ডেকে আনতে পারে এবং দীর্ঘদিনের জন্য সকল সম্ভাবনা থেকে  আমাদেরকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে পারে। যেখানে ইতিমধ্যেই আমাদের দেশের কয়েক দশকের ধ্বংসাত্মক ইতিহাস এ ধরনের বিভিন্ন কালো অধ্যায়ের সাক্ষ্য বহন করছে, সেখানে আমরা আর কোন শর্টকাট কিংবা উর্দিপরা কোন শাসকের অনুপ্রবেশ চাই না।
আমার মতে, আমাদের মূলত যা প্রয়োজন তা হলো, আমাদের এই বিশাল নিশ্চুপ জনগোষ্ঠীর সরাসরি রাজনৈতিক অংশগ্রহণ। এই নিশ্চুপ জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছেন আমাদের কঠোর পরিশ্রমী কৃষক-শ্রমিক থেকে শুরু করে দুর্নীতির সুযোগ না নেওয়ার কারণে সাময়িকভাবে নিশ্চুপ হয়ে থাকা বিভিন্ন সত্ সরকারি চাকরিজীবী, একনিষ্ঠ এনজিও কর্মী, উদ্যোক্তা, শিল্পী, শিক্ষক, আইনজীবী, আইনজ্ঞ এবং চিকিত্সকসহ অসংখ্য পেশাজীবী মানুষ, যাদের সহায়তায় দেশে বিভিন্ন অপশাসন থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ উন্নয়নের বিভিন্ন পরিসংখ্যানে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে এবং অর্জন করেছে সম্মানজনক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে এর গঠনকাঠামোকে আরো শক্তিশালী এবং দৃঢ় করে তুলতে হলে আমাদের এই বিশাল নিশ্চুপ জনগোষ্ঠীর সরাসরি রাজনৈতিক অংশগ্রহণ আবশ্যক।
এজন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন আমাদের নিজেদের দিকে তাকানো এবং দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজেদের স্বভাবগত পরিবর্তন ও ঐক্য, যাতে আমরা ক্ষণস্থায়ী প্রলোভনের থেকে জন্ম নেয়া সকল স্বভাবগত অভ্যাস এবং ‘সবাই-ই তো করছে’ ধরনের অনৈতিক সব যুক্তি ত্যাগ করতে পারি। আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে সমাজের সকল পর্যায় থেকে এবং জাতিগতভাবে মুখোশ খুলে তুলে ধরতে হবে সকল আইনভঙ্গকারীর আসল রূপ। ধিক্কার দিতে হবে অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত সকলকে, যারা জনগণের সম্মানকে খাটো করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। আমাদেরকে অবশ্যই দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর  সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে এবং এই ব্যবস্থার মাধ্যমেই ক্ষমতাবানদের অবৈধ কর্মকান্ডকে প্রতিহত করতে হবে (যতটুকু সম্ভব পারা যায়)। যারা দেশের আইন এবং বিচার প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেয় তাদেরকে বিচারিক ব্যবস্থার মুখোমুখি করতে হবে এই আমাদেরকেই।
আমরা যারা পারি, তাদেরকে অবশ্যই একটি রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে হবে। এজন্য আমরা আমাদের নিজেদের পেশাগত এবং প্রতিবেশীমূলক সম্পর্কের জায়গাগুলোতে নিজেদেরকে সক্রিয় করতে পারি কিংবা, নিজেদের গ্রামীণ সুসম্পর্ক এবং সহায়তার জায়গাগুলোতে নিজেদেরকে সক্রিয়ভাবে তুলে ধরতে পারি। আমরা আমাদের প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক ভিত্তিগুলোর মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারি অথবা, বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোতে যোগ দিয়ে সেগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক ধারা এবং চর্চার দাবি তুলতে পারি। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং সভা-সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের সম্মিলিত আওয়াজ তুলতে হবে যাতে পরিবর্তনের এই ডাক বর্তমান নেতাদের মদদপুষ্ট ‘জি-হুজুর’বাদসহ বিভিন্ন মোসাহেবীপনার শোরগোল ছাপিয়ে দেশের গণমানুষের কাছে গিয়ে পৌঁছায়। গণযোগাযোগের অর্থায়নের সুবিধার্থে আমাদেরকে নতুন নতুন বিভিন্ন উপায় বের করে আনতে হবে। বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীর তহবিল গঠন/অর্থায়নের সাথে দেশের নাগরিকদেরকে সম্পৃক্ত করার জন্য আমরা মোবাইল কলিং ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদেরকে সাহায্য করতে পারি। এর মাধ্যমে দেশের নাগরিকেরা ছোট ছোট অনুদানের দ্বারা প্রার্থীদের অর্থায়নে ভূমিকা রাখতে পারেন (ছোট ছোট অনুদানগুলো mobile money কিংবা flexi load payments এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা যেতে পারে।) group SMS এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা একটা রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করতে পারি যার দ্বারা আমরা নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ করা, ভোট ব্যাংকের আয়তনে নিজেদেরকে সংগঠিত করা এবং আসন্ন নির্বাচনে যোগ্য ও একনিষ্ঠ প্রার্থীকে নির্বাচিত করার মত কাজ করতে পারি। আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের অবস্থান, সংগঠন, তহবিল এবং বিভিন্ন করণীয় ব্যাপারগুলো বর্তমান বৃহত্ রাজনৈতিক দলগুলোর বিকল্প হিসেবে সবার সামনে নিয়ে আসতে হবে যাতে সত্, যোগ্য ও জনসেবায় নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিরা এবং অন্যান্য দলের দলগত পচনের দ্বারা প্রভাবিত না হওয়া ও প্রয়োজনে দলত্যাগ করতে সক্ষম এমন রাজনীতিবিদরা আমাদের রাজনৈতিক অবস্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে পারেন। শ্রদ্ধেয় পাঠকবৃন্দ, সকল ভয়-ভীতি এবং শঙ্কাকে দূরে সরিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হবে এবং তা শুরু করতে হবে এখনই।
উল্লেখিত বিষয়গুলো দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আমাদের কার্যকর অংশগ্রহনের ব্যাপারে আমার নিজের চিন্তা এবং ধারণার অংশমাত্র। আমার সীমিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার আলোকে উল্লেখিত বিষয়গুলোর কথা আমি ভেবেছি এবং আমি আশা করবো এ ব্যাপারে আপনারা আপনাদের কার্যকরী ও সুস্পষ্ট ধারণা, পরিকল্পনাগুলো ও চিন্তাগুলো আমাদেরকে জানাবেন। আমি আরও আশা করবো, বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছেন আপনাদের জানা কিংবা পরিচিত এমন কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের যেকোন উদাহরণের কথাও আপনারা আমাদেরকে জানাবেন যাতে করে আমরা তাদের করা কাজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। আপনাদের চিন্তা, ধারণা, বক্তব্য এবং উদাহরণের কথাগুলো জানিয়ে সম্পাদকের ঠিকানায় লিখে পাঠান কিংবা ই-মেইল (সম্পাদকের ই-মেইল) করুন যাতে করে আপনাদের কথাগুলো আমরা আমাদের পরবর্তী লেখায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।
ভাষান্তর : আরাফাত আহমেদ পার্থ
লেখক : আইনজীবী ও ইংলিশ উইকলি হলিডে’র মরহুম এনায়েতুল্লাহ খানের ছেলে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন