শুক্রবার, ৮ জুন, ২০১২

বা¯—বায়নই মূল চ্যালেঞ্জ








মা মু ন র শী দ
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গেল বৃহস্পতিবার সংসদে মহাজোট সরকারের চতুর্থ বাজেট এবং প্রজাতন্ত্রের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার ষষ্ঠ বাজেট পেশ করেছেন। গণমাধ্যম, বিভিন্ন নীতিবিশে­ষণী প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনীতিবিদদের কল্যাণে বাজেট নিয়ে গেল কয়েক বছর যাবৎই জনমনে বেশ উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে এবং বাজেট বিশে­ষণেও এসেছে বেশ ঋজুতা।
এই বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো হয়েছে। প্রথমবারের মতো দলিত সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে আবারও বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বেসরকারি রফতানি অঞ্চলগুলোকেও কর অবকাশ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে আবার নির্দিষ্টহারে কর পরিশোধের সঙ্গে অতিরিক্ত জরিমানা দিয়ে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। আয় বাড়ানোর জন্য মোবাইল ফোনের বিল তথা টক টাইমের ওপর উৎসে কর আরোপ করা হয়েছে। তবে পুঁজিবাজারের কর্মকাÊকে উৎসাহিত করার জন্য মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্পোরেট কর হ্রাস করা হয়েছে। আইপিওতে কর রেয়াত রাখা হয়েছে। ৫ হাজার টাকা পর্যš— লভ্যাংশ কর মুক্ত। অন্যদিকে আবার কর মুক্ত আয়ের সীমা একই রাখা হয়েছে। ন্যূনতম আয় করের সীমা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩ হাজার টাকা। রেলওয়ে খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
দিনবদলের প্রতিশ্র“তি দিয়ে ¶মতায় আসা বর্তমান মহাজোট সরকারের এ বাজেটে আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য প্রায় এক লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এতে রাজ¯^ আহরণের ল¶্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। সরকার অবশ্য আগেই নতুন অর্থবছরের জন্য ৫৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন করেছেন। 
অর্থমন্ত্রী বাজেটে কৃষি খাত ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নানামুখী পদ¶েপ নিয়েছেন। বৃহৎ কোম্পানিগুলোকেও দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারী (পিপিপি) খাত এবং অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন তথা বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণের ল¶্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে কাজ করার বিষয়ে আবারও বিশেষভাবে জোর দিয়েছে বাজেট। 
দেশে দুর্নীতির প্রকোপ কমাতে এই সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং তথ্যপ্রযুক্তির সমšি^ত নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে হবে। এ ল¶্যইে সরকার উপজেলা তথা গ্রাম পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে ভ‚মি রেজিস্ট্রেশনকে প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী দেরিতে হলেও অটোমেশনের আওতায় আনার কথা বলেছেন।
আমাদের বিদ্যুৎ, সেতু এবং ¶ুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করার পাশাপাশি নীতি-সহায়তা প্রদানেরও আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী।
করখাত সম্প্রসারণে এই বাজেটে বেশ ক’টি নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমার কাছে বিরাট ‘ছায়া অর্থনীতি’কে ধীরে ধীরে মূল ধারার অর্থনীতির সঙ্গে স¤পৃক্ত করার মহতী উদ্যোগের আলোকে এগুলোকে বেশ অভিনব এবং উৎসাহব্যঞ্জক মনে হয়েছে। 
অর্থমন্ত্রী মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার নতুন অর্থবছরের জন্য সাত দশমিক দুই শতাংশে প্রাক্কলন এবং মূল্যস্ফীতিকে নামিয়ে সাড়ে সাত শতাংশে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আš—র্জাতিক বাজারে যে কোন সময় পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও অভ্যš—রীণ বাজারে ভর্তুকি কমিয়ে আনার প্রে¶িতে, আমার কাছে এটি বেশ দুরূহ হবে বলে মনে হচ্ছে।
নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে জিডিপির পাঁচ শতাংশ। এই ঘাটতির ১ দশমিক ৮ শতাংশ বৈদেশিক ঋণ সাহায্য নিয়ে এবং বাকি তিন দশমিক দুই শতাংশ অভ্যš—রীণ উৎস থেকে মেটানো হবে। বৈদেশিক ঋণ বা সাহায্যের বিরাট পাইপ লাইনের আলোকে এটি ঠিকই আছে। তবে সরকারকে অবশ্যই উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে হবে। ব্যাংকিং খাত থেকে যত কম ঋণ নেয়া সম্ভব ততই ভালো।
নতুন বাজেটকে অর্থনৈতিক অš—র্ভুক্তির আলোকে বেশ ভালো মনে হলেও প্রবৃদ্ধি পরিকল্পনার ¶েত্রে এটি একই সঙ্গে উচ্চাভিলাষীও বটে। সন্দেহ নেই যে, সরকার নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকেই এই বাজেট দিয়েছে। এটি বা¯—বায়ন হলে বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে অর্থমন্ত্রী আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, এ ধরনের বড় ব্যয় সংবলিত বাজেট বা¯—বায়ন করা কি সম্ভব? যদি এর উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয় তাহলে এটি বা¯—বায়নের প্রধান পদ¶েপটা নেবেন কে বা কোত্থেকে আসবে? কারণ বাজেট বা¯—বায়নের সামর্থ্য যেমন থাকতে হয় তেমনি এজন্য একসঙ্গে কাজ করাও অপরিহার্য। প্রয়োজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব, স্থানীয় সরকার কাঠামো এবং উন্নয়ন প্রশাসনের হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়া। উন্নয়ন প্রশাসনের সামগ্রিক দ¶তা এবং সামর্থ্যরে বিষয়টিও এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। খটকা লাগার বিষয়টিও এখানেই। এ প্রসঙ্গে কয়েক বছর আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের উলে­খিত একটি বইয়ের কথা মনে পড়ছে। বইটি হল, ল্যারি বসিডি এবং রামচরণ লিখিত ‘এ·িকিউশন: দি ডিসিপি­ন অব গেটিং থিংস ডান’। বইটির শিরোনামই যেন বাংলাদেশের আজকের বাজেট বা¯—বায়নের ¶েত্রে বেশ প্রযোজ্য বলে মনে হয়।
মামুন রশীদ : অর্থনীতি বিশে­ষক এবং ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন