সোমবার, ৪ জুন, ২০১২

বানরে সঙ্গীত গায়

রাহাত খান
দফতরবিহীন মন্ত্রী শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সম্প্রতি বেগম খালেদা জিয়াকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। একশ্রেণীর পুলিশ হালে আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনা, সাংবাদিক দলন এবং আরও দু’একটি ক্ষেত্রে চরম বাড়াবাড়ি করেছে। পুলিশকে তিরস্কার না করে কিংবা আদালত প্রাঙ্গণে মহিলার শ্লীলতাহানির একটি ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকের ওপর কিছুসংখ্যক পুলিশের চড়াও হয়ে নির্যাতন করা ইত্যকার কিছু ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট পুলিশের শাস্তিদানের কথা কিছু না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনার পর পরই পুলিশের যেরকম প্রশংসা করলেন এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী টুকু সাহেব নিজেদের ভালর জন্য পুলিশ থেকে নিরাপদ দূরত্বের থাকতে সাংবাদিকদের নসিহত যেরকম দিলেন তাতে দেশের সচেতন নাগরিকমাত্রই মর্মাহত এবং সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছিলেন। পরে অবশ্য মন্ত্রী সাহারা খাতুন ও প্রতিমন্ত্রী টুকু সাহেব নিজেদের এই বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু মন্ত্রীদের ওসব দুঃখ প্রকাশের কি দাম আছে গণতন্ত্রের সাক্ষাত ‘মানসপুত্র’ মওদুদ সাহেবদের কাছে! মওদুদ সাহেব এবং বিএনপির আরও কয়েকজন নেতা সাহারা খাতুন ও প্রতিমন্ত্রীকে ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। 
মওদুদ সাহেবদের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পাল্টা বক্তব্যে সংসদে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায়ে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার পদত্যাগ দাবি করেছেন। মন্ত্রী বলেন, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতারও তো দায়িত্ব পালনের একটা ভূমিকা আছে। গত সাড়ে তিন বছর সেই দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন তাঁরা। বিরোধীদলীয় নেতাসহ তাঁর দল ও জোটের এমপিরা শুধু সংসদ পদ টিকিয়ে রাখা তথা বেতন-ভাতা, বিদেশ ভ্রমণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগের জন্য একদিন বা দু’একদিনের জন্য সংসদে যান। এর নাম দায়িত্ব পালনের চরম ব্যর্থতা ছাড়া আর কি হতে পারে? মন্ত্রী সুরঞ্জিত সংসদে তাই বিরোধী দলের নেতা হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
মওদুদ সাহেবদের দাবির জবাবে মন্ত্রী সুরঞ্জিতের পাল্টা বক্তব্য সঠিক হয়েছে কিনা সেই বিচারের ভার মোটেও আমার ওপর বর্তায় না। রাজনীতি বনাম রাজনীতির সেটা করার কথা। রাজনীতির মীমাংসা রাজনীতিই করুক। আমি শুধু বলতে চাই, একশ্রেণীর পুলিশের বাড়াবাড়ি বরাবর ছিল। এখনও আছে। এটা ঠিক, এজন্য ঢালাওভাবে গোটা পুলিশ বা র‌্যাব বাহিনীকে দায়ী করা যায় না। বরং দেশের সন্ত্রাসী ও জঙ্গীরা যেসব সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী, সেসব অস্ত্রশস্ত্র বাংলাদেশের পুলিশ ও র‌্যাবের না থাকা সত্ত্বেও শুধু ইউনিফরম পাওয়ার সম্মানটুকু নিয়ে পুরনো অস্ত্রশস্ত্র ও লক্কড় মার্কা যানবাহন সম্বল করে সামগ্রিকভাবে দেশের জঙ্গী সন্ত্রাস দমন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় যে বিশাল সাফল্যের পরিচয় দিয়ে চলেছে আমাদের পুলিশ ও র‌্যাব বাহিনী তা গর্বের বিষয়। তা অস্বীকার করার অর্থ হবে সত্যকেই অস্বীকার করা।
তবে আমাদের স্বরাষ্ট্র বিভাগের দুই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোন্্ কথাটা বলা উচিত, তা জানেন বলে মনে হয় না। কৌশল ও বুদ্ধির ঘাটতি আছে, তা বলতে আমার কিছুমাত্র দ্বিধা নেই।
কোন্ সরকারের আমলে একশ্রেণীর পুলিশ নানা ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করেনি? প্রশ্নটা আমি বিরোধী দলে গেলেই ভারি গণতান্ত্রিক হয়ে ওঠা বিএনপি-জামায়াত নেতাদেরই জিজ্ঞেস করি। ২০০১-২০০৬ সময় পর্বে একশ্রেণীর পুলিশের বাড়াবাড়ি তো চরমে পৌঁছেছিল বললেও কম বলা হয়। ঐ সময় পর্বে বিএনপি-জামায়াত জোট পুলিশকে দিয়ে যেসব কা- ঘটিয়েছে সেগুলো শুধু জঘন্য নয়, যে কোন বিচারে অমার্জনীয়। কয়েকটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরে আমার বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণের চেষ্টা করা যেতে পারে।
(এক) আচ্ছা, ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড চার্জ করা হয়েছিল তো পুলিশের প্রত্যক্ষ সাহায্য ও সহায়তায়, সে কথা কি মওদুদ সাহেব, এমকে আনোয়ার সাহেবরা ভুলে গেছেন। জনসভায় গ্রেনেড চার্জ করে জঙ্গীরা যাতে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে, পুলিশকে দিয়ে সেই ব্যবস্থা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার করিয়েছিল। ২১ আগস্ট, বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্দেশে পুলিশ জঙ্গীদের শুধু পালাতে সাহায্য করেনি, প্রাণভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত জনতা যাতে কোনমতেই পশ্চিম প্রান্তে (জঙ্গীরা যেদিক দিয়ে নিরাপদে পালিয়েছিল) যেতে না পারে, সেজন্য পশ্চিমমুখো ধাবমান জনতার ওপর কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করেছিল। আওয়ামী লীগপ্রধান এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার ওপর গাড়িতে ওঠার মুহূর্তে দু’বার রাইফেলের গুলিও নিক্ষেপ করেছিল। পুলিশ জঙ্গী হামলার প্রায় সব আলামত নষ্ট করেছিল, যাতে সেই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার নেপথ্যে কারা ছিল সেই রহস্য কোনদিন উদ্ঘাটিত না হতে পারে। পুলিশকে দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট তো জজ মিয়া নাটকও তৈরি করেছিল। পুলিশকে দিয়েই। এই কারণে বলি, পুলিশের বাড়াবাড়ির নিন্দা অবশ্যই করা যায়। আমরাও করি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা সরকারের ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগের দাবি তোলার আগে ক্ষমতায় থাকাকালে এই হঠাৎ হয়ে যাওয়া গণতন্ত্রীদের চেহারা কি ছিল, তাদের সরকারের কি চেহারা ছিল,Ñসেটা দেখে নেয়া উচিত। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের উত্থানে যারা সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশ্রয় দিয়েছিল, প্রতিটি রাজনৈতিক হত্যাকা-ের মামলা ভিন্ন খাতে নিয়ে গিয়ে প্রমাণ করেছিল কালপ্রিট ছিল তারা নিজেরাই, সেই দল ও জোটের নেতাদের আইন-শৃঙ্খলা কিংবা পুলিশের বাড়াবাড়ির প্রশ্নে অত চোটপাট না দেখালে কি ভাল হতো না?
(দুই) প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে প্রতিবাদী একদল সাংবাদিককে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছিল বিএনপি জমানায় সেদিনকার কর্তব্যরত পুলিশ। সেটাও তো ছিল সাংবাদিক দলনে পুলিশী বর্বরতাই, না কি? সেদিন এই নির্দয় বর্বর ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা হয়েছে সরকারী আশ্রয়পুষ্ট দল ও গোষ্ঠী ছাড়া সর্বমহল থেকে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা সরকারের পদত্যাগের দাবি ওঠেনি। বিরোধী দল ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি করেছে। কথায় কথায় তারা কখনও আন্দোলন ও সরকারের পদত্যাগের হুমকি দেয়নি। অথচ মওদুদ সাহেব, রফিকুল ইসলাম মিয়া প্রমুখ বিএনপির কোনদিন আন্দোলনে যোগ না দেয়া নেতারা বর্তমান সরকারের এদিক-ওদিক কিছু বিচ্যুতি বা ব্যর্থতা দেখলেই গণআন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে সরকার পতনের হুমকি দেন। মুচকি হেসে চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন, নির্বাচনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বহাল না করলে আন্দোলন কাকে বলে ও কি কি তা তারা সরকারকে বুঝিয়ে দেবেন। তা পারলে সেটা তাঁরা করবেন, তাতে আমাদের তো কিছু বলার থাকতে পারে না। কিন্তু এইটুকু তো বলা যায় জনগণের দ্বারা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত একটা সরকারকে তারা দেশে জঙ্গী সন্ত্রাসীদের দিয়ে গোলযোগ, হত্যাযজ্ঞ ও বিশৃঙ্খল সৃষ্টি করে পতন ঘটাবার চেষ্টা করবেন, এর নাম তো গণতন্ত্র নয়। বড়জোর সেটাকে স্বৈরশাসন এবং জঙ্গী সরকার গঠনের একটা স্টেজ রিহার্সেল বলা যেতে পারে।
(তিন) মূল প্রসঙ্গে আসি। বলা হচ্ছিল একশ্রেণীর পুলিশের গণনির্যাতন, সাংবাদিক নির্যাতন এবং বিরোধীদলীয় রাজনীতিক নিপীড়নের কথা। এ ধরনের ঘটনা বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে ঘটছে বৈকি। এসবের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই অবশ্যই। দাবি করি সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার শেষে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তিদানের। তবে চাই না বললেও অনেক সময় অনেক কিছু ঘটে যা অনাকাক্সিক্ষত ও দুর্ভাগ্যজনক। শুধু বর্তমান সরকারের আমলে নয়, বিএনপি-জামায়াত জোট, এরশাদ সাহেবের শাসনকাল মিলিয়ে সব আমলেই বাংলাদেশে এসব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। এই ক্ষেত্রে বিএনপি এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের ভূমিকা বোধকরি অল-টাইম শীর্ষ স্থানটা দাবি করতে পারে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ব্যতিক্রম বাদে পুলিশ ও র‌্যাব বাহিনী ছিল প্রায় সরকারের গৃহপালিত। সরকার যা বলত পুলিশ বা র‌্যাবকে অনেক সময় চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তাই করতে হয়েছে। মনে করিয়ে দিই দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনাটি। পুলিশ আধুনিক অস্ত্র ও গ্রেনেড বোঝাই ট্রাকটি কেন ধরেছিল, কেন এনএসআইয়ের (অস্ত্র বোঝাই ট্রাক পাচারে সংশ্লিষ্ট) কয়েকজন কর্মকর্তাকে ধরে থানায় নিয়ে গিয়েছিল, সেই অপরাধে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ কয়েকজনকে শাস্তি হিসেবে ত্বরিত প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছিল। এনএসআইয়ের আটক হওয়া কর্মকর্তাদের স্বয়ং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে ‘সসম্মানে’ ছেড়ে দিতে হয়েছিল পুলিশকে। থানায় বিরোধীদলীয় লোকদের মামলা নেয়া হতো না। এই নির্দেশ ছিল ওপরের। 
(চার) পাঠক, মনে আছে গত বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে এক রাতে একবার শামসুন্নাহার হলে কি ঘটেছিল? সারারাত পুলিশ শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন চালায়। ছাত্রীদের নগ্ন করে পাশবিক উল্লাসে মেতে ওঠে। ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগও ওঠে। নিরীহ ও অসহায় ছাত্রীদের আর্তচিৎকারে সে রাতের আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ হয়েছিল। সে সময়কার শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন এবং পুলিশের কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তাকে সেই রাতেই হলের প্রভোস্ট, দু’জন হাউস টিউটর ঘটনাটি জানায় এবং অনুনয়-বিনয় আর ব্যাকুলতা-কাতরতা প্রকাশ করা হলে ফোর্স পাঠাবার আর্জি জানায়। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলন নিদ্রাজড়িত, উদাসীন কণ্ঠে বলেছেন, তাই নাকি, আচ্ছা, আমি দেখছি, বলেছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি আনোয়ারউল্লাহ্্ চৌধুরীও ‘আচ্ছা, দেখি’ ধরনের বেশিকিছু বলেননি। আর যথাবিহিত তদন্তকারী তথা উদ্ধারকারী পুলিশ শামসুন্নাহার হলে এসে পৌঁছেছিল সূর্যোদয়েরও পরে। সেই ঘটনা এবং ব্যর্থতার দায় নিয়ে তখনকার শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলন এবং নির্লজ্জদের চেয়ে নির্লজ্জ ভিসি আনোয়ারউল্লাহ পদত্যাগ করা দূরে থাক, হলে কয়েকজন ছাত্রীর সহায়তায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত ঢুকেছিল, এই মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে নির্যাতনকারী পুলিশদের পক্ষ নিয়েছিলেন তাঁরা।
(পাঁচ) বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে পুলিশ কর্র্তৃক সাংবাদিক নির্যাতন ও সাংবাদিক হত্যার ঘটনা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার রেকর্ড বিএনপি-জামায়াত নিজেরা ছাড়া আর কেউ ভাঙতে পারবে বলে মনে হয় না। 
বিভিন্ন আমল, বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় একশ্রেণীর পুলিশের পাশবিক ও দানবীয় হয়ে ওঠার আরও বহু ঘটনা উল্লেখ করা যায়। পত্রিকায় স্পেস সীমাবদ্ধতার কারণে সেটা থেকে বিরত থাকলাম। আমার বক্তব্য খুব সহজ। বর্তমান মহাজোট সরকারের কিছু কিছু ব্যর্থতা অবশ্যই আছে। এই আমলে নৌমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মাঝে মাঝে এমনসব উক্তি করেন, যা মহাজোট সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়। আরও কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে যা দুর্ভাগ্যজনক, যা না ঘটলেও জনগণ খুশি হতো। এসব ব্যর্থতা ও দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার দায় সরকারকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। তবে পাশাপাশি বলার কথা, বর্তমান সরকারের কিছু কিছু ব্যর্থতা ও বিচ্যুতি সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রে বিশাল সাফল্য ও পারঙ্গমতার দৃষ্টান্তও রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় বর্তমান আমলে বিরোধীদল হিসেবে বিরোধী দলের উদ্দিষ্ট ও কাক্সিক্ষত ভূমিকাটি বিরোধীদলকে পালন করতে দেখা যায়নি। তাঁরা সংসদে যান না। তাঁরা বাজেট সেশনে হোটেলে বিকল্প বাজেট দেন। হরতাল দিয়ে গণদুর্ভোগ সৃষ্টি করেন। জাতীয় ইস্যুতে কথা বলেন না, বিকল্প প্রস্তাব দিতে সংসদে যান না। তাঁরা শুধু হুমকি দেন। বলেন, তাঁদের দাবি না মানলে ‘জনগণকে’ সঙ্গে নিয়ে বর্তমান সরকারের পতন ঘটাবেন। এটা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কাম্য নয়। স্বৈরাচার এবং একনায়কতন্ত্র থেকে উদ্ভূত বিএনপি সেই পুরনো স্বৈরাচারী দলই যেন রয়ে গেছে। এসবই ব্যর্থতা বৈকি। রাজনৈতিক দল হিসেবে ব্যর্থতা। বিরোধী দল হিসেবে ব্যর্থতা। পেছন ফিরে বিএনপি যে নিজেদের ক্ষমতাকালীন ভয়াবহ অপকা-গুলো একবারও দেখতে চায় না, দেখে নিজেদের সংশোধন করতে চায় না,Ñএটা আমার কাছে ভারি আশ্চর্য বলে মনে হয়। বিএনপির এক পরিবারভুক্ত হয়েছে এখন আবার বাংলাদেশবিরোধী, পাকিস্তান দরদী, হত্যা ও জঙ্গীবাদের দল জামায়াতে ইসলামী। একেবারে সোনায়-সোহাগা। এসব দলের নেতারা গণতন্ত্রের জন্য অশ্রুবর্ষণ করছেন দেখলে বলতেই হয় : বানরে সঙ্গীত গায়, শিলা ভাসে জলে!

লেখক : কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন