শা হ আ হ ম দ রে জা
১১ জুনের গণসমাবেশ উপলক্ষেও যথারীতি যথেষ্টই দেখিয়েছে সরকার। ১২ মার্চের ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচির প্রাক্কালে যেভাবে গ্রেফতার এবং দমন-নির্যাতনের অভিযান চালানো হয়েছিল, সেভাবেই এবারও চালানো হয়েছে। কয়েকদিন আগে থেকেই জেলা-উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত ১৮ দলীয় জোটের শত শত নেতা-কর্মীকে কারাগারে ঢুকিয়েছে পুলিশ। নেতা-কর্মীরা ঢাকায় এসেছেন পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে। পাশাপাশি ছিল যানবাহন চলাচলের ওপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। রাজধানী অভিমুখীন যাত্রাবাহী বাস তো বটেই, লঞ্চ-স্টিমারের চলাচলও বন্ধ করিয়েছিল সরকার। তিন-চারদিন আগে থেকে রিকুইজিশনের নামে শত শত বাস দখল করে নিয়েছিল পুলিশ। ট্রেন চলাচলও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে সরকার। বাইরের কোনো ট্রেনকে ঢাকায় ঢুকতে দেয়া হয়নি বললেই চলে। যে দু’চারটি ট্রেন ঢাকায় এসেছে সেগুলোর যাত্রীদের ওপরও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। একযোগে তল্লাশির নামে পুলিশ বাস ও ট্রেন যাত্রীদের চরম হয়রানির শিকার বানিয়েছে। গণসমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীরা সরকারের দেয়া হুকুমের কারণে রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতে থাকতে পারেননি। সরকার এমনকি খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এভাবে সবদিক থেকেই রাজধানীকে এক নিষিদ্ধ নগরীতে পরিণত করেছিল সরকার। এ ছিল যেন ক্ষমতাসীনদের হরতাল! ফলে লাখ লাখ মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের অসহায় শিকার হতে হয়েছে।
অথচ বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এমন কোনো পরিকল্পনাই ছিল না, যাকে ‘প্রতিহত’ করার প্রয়োজন পড়তে পারে। কারণ, ১২ মার্চ ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচি শেষে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশের ভাষণে বেগম খালেদা জিয়া দাবি পূরণের জন্য ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ১০ জুনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিতে হবে। না হলে কঠোর আন্দোলনের পথে পা বাড়াবে বিরোধী দল। এটা ছিল সম্পূর্ণ গণতন্ত্রসম্মত বক্তব্য। বক্তব্যের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানোর মতো কোনো চেষ্টার কথা ছিল না। তাছাড়া ‘ঢাকা চলো’র প্রাক্কালে শুধু নয়, তারও আগে দেশের বিভিন্ন বিভাগে রোডমার্চ ও মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের দিক থেকে উস্কানি থাকা সত্ত্বেও কোনো একটি উপলক্ষেই কথিত নাশকতামূলক কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি কর্মসূচি বরং অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। লাখ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছিল এসব কর্মসূচিতে। সে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই ধরে নেয়া হয়েছিল, ১১ জুনের গণসমাবেশেও ব্যতিক্রম ঘটবে না। স্বয়ং খালেদা জিয়াও ঘোষণা করেছিলেন, গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে শান্তিপূর্ণভাবে।
কিন্তু বিরোধী দলের নেত্রীর এই উপর্যুপরি ঘোষণা সত্ত্বেও সরকার এগিয়েছে চরম স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায়। প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা ব্যক্ত করে জনমনে ভয়-ভীতি ছড়িয়েছেন। তারা বোঝাতে চেয়েছেন যেন ১১ জুনই সরকারের পতন ঘটানোর মতো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে—তাও আবার ‘পেছনের দরজা’ দিয়ে! এ ধরনের প্রচারণা অবশ্য হালে পানি পায়নি। কারণ, ক্ষমতাসীনরা প্রচারণা চালালেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটও তো বুড়িগঙ্গার পানিতে ভেসে আসেনি। জনগণ তাদের ভালোভাবেই চেনে। সে কারণে জনগণকে বিশ্বাসই করানো যায়নি যে, খালেদা জিয়ার মতো দেশপ্রেমিক একজন নেত্রী সত্যি ‘পেছনের দরজা’ দিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালাতে বা ষড়যন্ত্র করতে পারেন। ক্ষমতাসীনদের প্রচারণায় বিশ্বাস না করার মাশুলই অবশ্য জনগণকে গুনতে হয়েছে। সরকার ঢাকাকে নিষিদ্ধ নগরী বানানোর মাধ্যমে জনগণকে চরম দুর্ভোগের শিকার বানিয়ে ছেড়েছে। তা সত্ত্বেও ১১ জুনের গণসমাবেশ সফল হয়েছে সম্পূর্ণ রূপে। লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে নয়াপল্টন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছিল জনসমুদ্রের। মানতেই হবে, সরকারকে জবর একটা চপেটাঘাত করেছে ১৮ দলীয় জোট।
অথচ এমন পরিস্থিতি সরকার সহজেই এড়াতে পারত। কারণ, বেগম খালেদা জিয়া ১১ জুনের দু’-চারদিন আগে আলটিমেটাম ঘোষণা করেননি, দিয়েছিলেন ৯০ দিনের দীর্ঘ সময়। কিন্তু যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্ত্বেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মহাজোট সরকার দাবি পূরণের ধারে-কাছে যায়নি। ক্ষমতাসীনরা বরং উল্টো কথাই শুনিয়ে এসেছেন। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিটিকেই সোজা নাকচ করে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রী এ কথা পর্যন্ত বলেছেন যে, তারা তত্ত্বাবধায়ক নামের ‘দানব’কে আর ক্ষমতায় দেখতে চান না। প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরণ করার ব্যাপারে মহাজোটের অন্য নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ কয়েকজন যেখানে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেখানে আবারও সংবিধানের ‘হাইকোর্ট’ দেখিয়েছেন। মুখস্থ বাক্যের মতো তিনি বলে বেড়িয়েছেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের কোনো সুযোগই নাকি আর নেই! ক্ষমতাসীনরা এমনকি সংলাপ বা আলোচনার প্রশ্নেও সাড়া দেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সুর মাঝে-মধ্যে কিছুটা নরম মনে হয়েছে সত্য, কিন্তু তিনিও সংবিধানের ‘আলোকে’ এবং সংসদের ভেতরে গিয়েই আলোচনার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। বলেছেন, বিরোধী দলকে সংসদে গিয়ে প্রস্তাব পেশ করতে হবে। তারপর দেখা যাবে, প্রস্তাবটি সংবিধানসম্মত কিনা। সংবিধানসম্মত হলেই কেবল আলোচনার ব্যাপারে চিন্তা করা যেতে পারে। তারা তাই বলে শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, একই সঙ্গে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা চাপানোর এবং দমন-নির্যাতন চালানোর পথেও পা বাড়িয়েছেন। ১১ জুনের মহাসমাবেশকে সামনে রেখে আবারও দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল গ্রেফতারের অভিযান। পুলিশও যথারীতি ‘করেই’ দেখিয়েছে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও কঠোর ভাষায় কথিত ‘নৈরাজ্য’ সৃষ্টির অপচেষ্টা প্রতিহত করার জন্য দলীয় কর্মীদের প্রতি ‘মাঠ’ দখলে রাখার হুকুম জারি করেছেন। বোঝাই যাচ্ছিল, পুলিশ যেমন আরও একবার ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে; আওয়ামী লীগের ক্যাডার ও কর্মীরাও তেমনি নেতাদের হুকুম তামিল করবে অক্ষরে অক্ষরে। ফলে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ভীতি ও আশঙ্কাও ছড়িয়ে পড়েছিল একই কারণে।
ক্ষমতাসীনরা বুঝতে না চাইলেও এমন পরিস্থিতি কিন্তু কোনো বিচারেই কাম্য হতে পারে না। কারণ, গণতন্ত্রকে সুসংহত করার পাশাপাশি উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়াসহ বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা দরকার। এজন্য সবচেয়ে বেশি দরকার বিরোধী দলের দাবির প্রতি সম্মান দেখানো। সাধারণ মানুষও সে আশাই করেছিল। প্রসঙ্গক্রমে বর্তমান পর্যায়ের সঙ্কটের কারণ স্মরণ করা যেতে পারে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেন্দ্রিক বর্তমান সঙ্কট কিন্তু বিরোধী দল তৈরি করেনি। প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা স্বীকার করতে লজ্জা পেলেও সত্য হলো, তত্ত্বাবধায়ক নামের যে সরকারকে তারা এখন ‘দানব’ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছেন, জেনারেল মইন উ’র নেতৃত্বে ফখরুদ্দীনদের সে সরকারের জন্য পথ তারাই তৈরি করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাসের মাধ্যমে ওই সরকারের জন্মও তারাই দিয়েছিলেন। বলা হয়, লগির ঔরসে এবং বৈঠার গর্ভেই জন্ম হয়েছিল ওই সরকারের। তখন কিন্তু মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনদের সরকারকে শেখ হাসিনারা ‘দানব’ মনে করেননি, তারা বরং একে ‘দেবতা’র মতো সম্মান দিয়েছিলেন। নানা কার্যক্রমের জন্য ওই ‘দানবের’ প্রশংসায়ও তারাই বেশি পঞ্চমুখ হয়েছিলেন। তাছাড়া এ সত্যও এতদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়ার পেছনে অবদান রয়েছে একই ‘দানব’ সরকারেরই। ওই ‘দানব’ না থাকলে আওয়ামী লীগ যে ‘জীবনেও’ ক্ষমতায় আসতে পারত না সে কথাটা অন্য অনেকের সঙ্গে মহাজোটের দ্বিতীয় প্রধান পার্টনার জেনারেল এরশাদও বহুবার শুনিয়ে রেখেছেন। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী বা ক্ষমতাসীনদের মুখে ‘দানবের’ সমালোচনা যেমন মানায় না তেমনি সে ‘দানবের’ অপকর্মের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেই বাতিল বা অস্বীকার করার সুযোগ থাকতে পারে না।
তাছাড়া যে অজুহাতে এবং যে প্রক্রিয়ায় তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন তার কোনোটিও গণতন্ত্রসম্মত ও সংবিধানসম্মত হয়নি। কারণ, উচ্চ আদালতের বিতর্কিত একটি রায়ের দোহাই দিলেও বাস্তবে সে একই রায়ের দ্বিতীয় অংশকে তারা বেমালুম চেপে গেছেন। অথচ সেখানে পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছিল, পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতের নিযুক্ত অ্যামিকাস কিউরিদের আটজনের মধ্যে সাতজনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। তা সত্ত্বেও আদালতের রায়ে ব্যবস্থাটিকে কেন বাতিল করা হয়েছে, কেন পূর্ণাঙ্গ রায় এখনও প্রকাশ করা হয়নি—এসব বিষয়ে বিতর্কে না গিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার, রায়ে পরবর্তী দুটি নির্বাচনের ব্যাপারেও নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা রায়ের শুধু সে অংশটুকুর ‘আলোকে’ই সংবিধান সংশোধন করেছেন, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের কথা রয়েছে। বলা বাহুল্য, এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাসীনদের চরম সুবিধাবাদিতা ও অসত্ উদ্দেশ্যেরই প্রকাশ ঘটেছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পর্যন্ত প্রত্যেকে এমনভাবে বলেছেন, যা শুনে মনে হয়েছে যেন আদালতের অবস্থান সংসদেরও অনেক ওপরে! যেন আদালতের প্রতি ভক্তিতে তারা ‘মরি মরি’ হয়ে পড়েছেন! বাস্তবে এটা যে তাদের কুটিল কৌশলেরই অংশ ছিল অর্থাত্ ভক্তি যে নিতান্ত লোক দেখানো এবং তারা যে আদালতকে সর্বতোভাবে নিজেদের স্বার্থেই ব্যবহার করেছেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে ক’দিন আগে। মাননীয় স্পিকার সম্পর্কে একজন মাননীয় বিচারপতির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সংসদের ভেতরে নিন্দা-সমালোচনার তুফান তোলার পাশাপাশি ওই বিচারপতিকে অপসারণের জন্য ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম ঘোষণার মাধ্যমেও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, আদালতের প্রতি ন্যূনতম ভক্তি-শ্রদ্ধাও তাদের নেই। থাকলে কথায় যথেষ্ট সংযম দেখাতেন তারা। এখানেই শেষ নয়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর নেতৃত্বে এমনভাবেই তত্পরতা চালানো হয়েছিল যাতে বিরোধী দল কোনোভাবেই সংবিধান সংশোধন করার কর্মকাণ্ডে অংশ না নিতে পারে। এ উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত সংসদীয় বিশেষ কমিটিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে মাত্র একটি সদস্যপদ দেয়া হয়েছিল। আরেক বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীকে সুযোগই দেয়া হয়নি। সব মিলিয়েই নিজেদের মতো করে সংবিধান সংশোধন করে নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। বিরোধিতাও এসেছে একই কারণে। বলা দরকার, বিরোধী দলগুলো শুধু নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ বিদেশিরাও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছে। এমনকি ক্ষমতাসীনদের ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারতের প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রণব মুখার্জিও সম্প্রতি বলে গেছেন, তারা সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। অর্থাত্ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি এখন আর শুধু বিরোধী দলের দাবি নয়। এজন্যই নাকচ বা প্রত্যাখ্যান করার এবং দমন-নির্যাতনের পথে পা বাড়ানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত আলোচনার টেবিলে আসা এবং বিরোধী দলের দাবি ও পরামর্শ অনুযায়ী নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা নির্ধারণ করা।
কিন্তু এ ব্যাপারেও ক্ষমতাসীনরা যথারীতি বুঝতে ভুলই করে চলেছেন। তারা ভেবেছিলেন, ১৮ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতাদের মামলায় ফাঁসানো এবং জেলে ঢোকানো হলেই বিরোধী দল পিছু হটবে। সেই সঙ্গে দমন-নির্যাতন চালানো হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তো পরিত্যাগ করবেই, সুড়সুড়িয়ে গিয়ে জাতীয় সংসদেও ঢুকে পড়বে। অন্যদিকে ১১ জুনের গণসমাবেশ কিন্তু বিপরীত সম্ভাবনার কথাই জানান দিয়েছে। গণসমাবেশের ভাষণে খালেদা জিয়া দিন-ক্ষণ ধরে নতুন কোনো আলটিমেটাম উচ্চারণ করেননি সত্য কিন্তু এই না করার মধ্যেই যা বলার তা বলে দিয়েছেন। সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথা নির্দলীয় সরকারের দাবি না মেনে নেয় তাহলে ঈদুল ফিতরের পর তিনি কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন। সে আন্দোলনে থাকবে হরতাল-অবরোধসহ সব ধরনের কর্মসূচি। সুতরাং ক্ষমতাসীনদের জন্য নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর মতো অবকাশ মোটেও সৃষ্টি হয়নি। তাদের বরং সময় থাকতে খালেদা জিয়ার মূল কথা এবং ১১ জুনের বার্তা অনুধাবন করা দরকার।
লেখক : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক
shahahmadreza@yahoo.com
অথচ বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এমন কোনো পরিকল্পনাই ছিল না, যাকে ‘প্রতিহত’ করার প্রয়োজন পড়তে পারে। কারণ, ১২ মার্চ ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচি শেষে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশের ভাষণে বেগম খালেদা জিয়া দাবি পূরণের জন্য ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ১০ জুনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিতে হবে। না হলে কঠোর আন্দোলনের পথে পা বাড়াবে বিরোধী দল। এটা ছিল সম্পূর্ণ গণতন্ত্রসম্মত বক্তব্য। বক্তব্যের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানোর মতো কোনো চেষ্টার কথা ছিল না। তাছাড়া ‘ঢাকা চলো’র প্রাক্কালে শুধু নয়, তারও আগে দেশের বিভিন্ন বিভাগে রোডমার্চ ও মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের দিক থেকে উস্কানি থাকা সত্ত্বেও কোনো একটি উপলক্ষেই কথিত নাশকতামূলক কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি কর্মসূচি বরং অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। লাখ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছিল এসব কর্মসূচিতে। সে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই ধরে নেয়া হয়েছিল, ১১ জুনের গণসমাবেশেও ব্যতিক্রম ঘটবে না। স্বয়ং খালেদা জিয়াও ঘোষণা করেছিলেন, গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে শান্তিপূর্ণভাবে।
কিন্তু বিরোধী দলের নেত্রীর এই উপর্যুপরি ঘোষণা সত্ত্বেও সরকার এগিয়েছে চরম স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায়। প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের আশঙ্কা ব্যক্ত করে জনমনে ভয়-ভীতি ছড়িয়েছেন। তারা বোঝাতে চেয়েছেন যেন ১১ জুনই সরকারের পতন ঘটানোর মতো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে—তাও আবার ‘পেছনের দরজা’ দিয়ে! এ ধরনের প্রচারণা অবশ্য হালে পানি পায়নি। কারণ, ক্ষমতাসীনরা প্রচারণা চালালেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটও তো বুড়িগঙ্গার পানিতে ভেসে আসেনি। জনগণ তাদের ভালোভাবেই চেনে। সে কারণে জনগণকে বিশ্বাসই করানো যায়নি যে, খালেদা জিয়ার মতো দেশপ্রেমিক একজন নেত্রী সত্যি ‘পেছনের দরজা’ দিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালাতে বা ষড়যন্ত্র করতে পারেন। ক্ষমতাসীনদের প্রচারণায় বিশ্বাস না করার মাশুলই অবশ্য জনগণকে গুনতে হয়েছে। সরকার ঢাকাকে নিষিদ্ধ নগরী বানানোর মাধ্যমে জনগণকে চরম দুর্ভোগের শিকার বানিয়ে ছেড়েছে। তা সত্ত্বেও ১১ জুনের গণসমাবেশ সফল হয়েছে সম্পূর্ণ রূপে। লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে নয়াপল্টন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছিল জনসমুদ্রের। মানতেই হবে, সরকারকে জবর একটা চপেটাঘাত করেছে ১৮ দলীয় জোট।
অথচ এমন পরিস্থিতি সরকার সহজেই এড়াতে পারত। কারণ, বেগম খালেদা জিয়া ১১ জুনের দু’-চারদিন আগে আলটিমেটাম ঘোষণা করেননি, দিয়েছিলেন ৯০ দিনের দীর্ঘ সময়। কিন্তু যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্ত্বেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মহাজোট সরকার দাবি পূরণের ধারে-কাছে যায়নি। ক্ষমতাসীনরা বরং উল্টো কথাই শুনিয়ে এসেছেন। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিটিকেই সোজা নাকচ করে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রী এ কথা পর্যন্ত বলেছেন যে, তারা তত্ত্বাবধায়ক নামের ‘দানব’কে আর ক্ষমতায় দেখতে চান না। প্রধানমন্ত্রীকে অনুসরণ করার ব্যাপারে মহাজোটের অন্য নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ কয়েকজন যেখানে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেখানে আবারও সংবিধানের ‘হাইকোর্ট’ দেখিয়েছেন। মুখস্থ বাক্যের মতো তিনি বলে বেড়িয়েছেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের কোনো সুযোগই নাকি আর নেই! ক্ষমতাসীনরা এমনকি সংলাপ বা আলোচনার প্রশ্নেও সাড়া দেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সুর মাঝে-মধ্যে কিছুটা নরম মনে হয়েছে সত্য, কিন্তু তিনিও সংবিধানের ‘আলোকে’ এবং সংসদের ভেতরে গিয়েই আলোচনার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। বলেছেন, বিরোধী দলকে সংসদে গিয়ে প্রস্তাব পেশ করতে হবে। তারপর দেখা যাবে, প্রস্তাবটি সংবিধানসম্মত কিনা। সংবিধানসম্মত হলেই কেবল আলোচনার ব্যাপারে চিন্তা করা যেতে পারে। তারা তাই বলে শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, একই সঙ্গে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা চাপানোর এবং দমন-নির্যাতন চালানোর পথেও পা বাড়িয়েছেন। ১১ জুনের মহাসমাবেশকে সামনে রেখে আবারও দেশজুড়ে শুরু হয়েছিল গ্রেফতারের অভিযান। পুলিশও যথারীতি ‘করেই’ দেখিয়েছে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও কঠোর ভাষায় কথিত ‘নৈরাজ্য’ সৃষ্টির অপচেষ্টা প্রতিহত করার জন্য দলীয় কর্মীদের প্রতি ‘মাঠ’ দখলে রাখার হুকুম জারি করেছেন। বোঝাই যাচ্ছিল, পুলিশ যেমন আরও একবার ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে; আওয়ামী লীগের ক্যাডার ও কর্মীরাও তেমনি নেতাদের হুকুম তামিল করবে অক্ষরে অক্ষরে। ফলে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ভীতি ও আশঙ্কাও ছড়িয়ে পড়েছিল একই কারণে।
ক্ষমতাসীনরা বুঝতে না চাইলেও এমন পরিস্থিতি কিন্তু কোনো বিচারেই কাম্য হতে পারে না। কারণ, গণতন্ত্রকে সুসংহত করার পাশাপাশি উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়াসহ বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা দরকার। এজন্য সবচেয়ে বেশি দরকার বিরোধী দলের দাবির প্রতি সম্মান দেখানো। সাধারণ মানুষও সে আশাই করেছিল। প্রসঙ্গক্রমে বর্তমান পর্যায়ের সঙ্কটের কারণ স্মরণ করা যেতে পারে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেন্দ্রিক বর্তমান সঙ্কট কিন্তু বিরোধী দল তৈরি করেনি। প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা স্বীকার করতে লজ্জা পেলেও সত্য হলো, তত্ত্বাবধায়ক নামের যে সরকারকে তারা এখন ‘দানব’ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছেন, জেনারেল মইন উ’র নেতৃত্বে ফখরুদ্দীনদের সে সরকারের জন্য পথ তারাই তৈরি করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাসের মাধ্যমে ওই সরকারের জন্মও তারাই দিয়েছিলেন। বলা হয়, লগির ঔরসে এবং বৈঠার গর্ভেই জন্ম হয়েছিল ওই সরকারের। তখন কিন্তু মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনদের সরকারকে শেখ হাসিনারা ‘দানব’ মনে করেননি, তারা বরং একে ‘দেবতা’র মতো সম্মান দিয়েছিলেন। নানা কার্যক্রমের জন্য ওই ‘দানবের’ প্রশংসায়ও তারাই বেশি পঞ্চমুখ হয়েছিলেন। তাছাড়া এ সত্যও এতদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়ার পেছনে অবদান রয়েছে একই ‘দানব’ সরকারেরই। ওই ‘দানব’ না থাকলে আওয়ামী লীগ যে ‘জীবনেও’ ক্ষমতায় আসতে পারত না সে কথাটা অন্য অনেকের সঙ্গে মহাজোটের দ্বিতীয় প্রধান পার্টনার জেনারেল এরশাদও বহুবার শুনিয়ে রেখেছেন। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী বা ক্ষমতাসীনদের মুখে ‘দানবের’ সমালোচনা যেমন মানায় না তেমনি সে ‘দানবের’ অপকর্মের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেই বাতিল বা অস্বীকার করার সুযোগ থাকতে পারে না।
তাছাড়া যে অজুহাতে এবং যে প্রক্রিয়ায় তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন তার কোনোটিও গণতন্ত্রসম্মত ও সংবিধানসম্মত হয়নি। কারণ, উচ্চ আদালতের বিতর্কিত একটি রায়ের দোহাই দিলেও বাস্তবে সে একই রায়ের দ্বিতীয় অংশকে তারা বেমালুম চেপে গেছেন। অথচ সেখানে পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছিল, পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতের নিযুক্ত অ্যামিকাস কিউরিদের আটজনের মধ্যে সাতজনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। তা সত্ত্বেও আদালতের রায়ে ব্যবস্থাটিকে কেন বাতিল করা হয়েছে, কেন পূর্ণাঙ্গ রায় এখনও প্রকাশ করা হয়নি—এসব বিষয়ে বিতর্কে না গিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার, রায়ে পরবর্তী দুটি নির্বাচনের ব্যাপারেও নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা রায়ের শুধু সে অংশটুকুর ‘আলোকে’ই সংবিধান সংশোধন করেছেন, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের কথা রয়েছে। বলা বাহুল্য, এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাসীনদের চরম সুবিধাবাদিতা ও অসত্ উদ্দেশ্যেরই প্রকাশ ঘটেছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পর্যন্ত প্রত্যেকে এমনভাবে বলেছেন, যা শুনে মনে হয়েছে যেন আদালতের অবস্থান সংসদেরও অনেক ওপরে! যেন আদালতের প্রতি ভক্তিতে তারা ‘মরি মরি’ হয়ে পড়েছেন! বাস্তবে এটা যে তাদের কুটিল কৌশলেরই অংশ ছিল অর্থাত্ ভক্তি যে নিতান্ত লোক দেখানো এবং তারা যে আদালতকে সর্বতোভাবে নিজেদের স্বার্থেই ব্যবহার করেছেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে ক’দিন আগে। মাননীয় স্পিকার সম্পর্কে একজন মাননীয় বিচারপতির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সংসদের ভেতরে নিন্দা-সমালোচনার তুফান তোলার পাশাপাশি ওই বিচারপতিকে অপসারণের জন্য ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম ঘোষণার মাধ্যমেও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, আদালতের প্রতি ন্যূনতম ভক্তি-শ্রদ্ধাও তাদের নেই। থাকলে কথায় যথেষ্ট সংযম দেখাতেন তারা। এখানেই শেষ নয়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর নেতৃত্বে এমনভাবেই তত্পরতা চালানো হয়েছিল যাতে বিরোধী দল কোনোভাবেই সংবিধান সংশোধন করার কর্মকাণ্ডে অংশ না নিতে পারে। এ উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত সংসদীয় বিশেষ কমিটিতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে মাত্র একটি সদস্যপদ দেয়া হয়েছিল। আরেক বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীকে সুযোগই দেয়া হয়নি। সব মিলিয়েই নিজেদের মতো করে সংবিধান সংশোধন করে নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। বিরোধিতাও এসেছে একই কারণে। বলা দরকার, বিরোধী দলগুলো শুধু নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ বিদেশিরাও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছে। এমনকি ক্ষমতাসীনদের ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারতের প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রণব মুখার্জিও সম্প্রতি বলে গেছেন, তারা সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। অর্থাত্ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি এখন আর শুধু বিরোধী দলের দাবি নয়। এজন্যই নাকচ বা প্রত্যাখ্যান করার এবং দমন-নির্যাতনের পথে পা বাড়ানোর পরিবর্তে সরকারের উচিত আলোচনার টেবিলে আসা এবং বিরোধী দলের দাবি ও পরামর্শ অনুযায়ী নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা নির্ধারণ করা।
কিন্তু এ ব্যাপারেও ক্ষমতাসীনরা যথারীতি বুঝতে ভুলই করে চলেছেন। তারা ভেবেছিলেন, ১৮ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতাদের মামলায় ফাঁসানো এবং জেলে ঢোকানো হলেই বিরোধী দল পিছু হটবে। সেই সঙ্গে দমন-নির্যাতন চালানো হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তো পরিত্যাগ করবেই, সুড়সুড়িয়ে গিয়ে জাতীয় সংসদেও ঢুকে পড়বে। অন্যদিকে ১১ জুনের গণসমাবেশ কিন্তু বিপরীত সম্ভাবনার কথাই জানান দিয়েছে। গণসমাবেশের ভাষণে খালেদা জিয়া দিন-ক্ষণ ধরে নতুন কোনো আলটিমেটাম উচ্চারণ করেননি সত্য কিন্তু এই না করার মধ্যেই যা বলার তা বলে দিয়েছেন। সরকার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথা নির্দলীয় সরকারের দাবি না মেনে নেয় তাহলে ঈদুল ফিতরের পর তিনি কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন। সে আন্দোলনে থাকবে হরতাল-অবরোধসহ সব ধরনের কর্মসূচি। সুতরাং ক্ষমতাসীনদের জন্য নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর মতো অবকাশ মোটেও সৃষ্টি হয়নি। তাদের বরং সময় থাকতে খালেদা জিয়ার মূল কথা এবং ১১ জুনের বার্তা অনুধাবন করা দরকার।
লেখক : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক
shahahmadreza@yahoo.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন