মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১২

বাজেটের চাল-চরিত ॥ একটি পর্যালোচনা

রাহাত খান


গত ৭ জুন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ২০১২-২০১৩ সময় পর্বের বার্ষিক বাজেট ঘোষণা করেছেন। এই বাজেটের আকার গত বছরের চেয়ে ১৮.১ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাজেটে ঘাটতি ৫ শতাংশ। 
বাজেট প্রতিক্রিয়া সব মিলিয়ে মিশ্র। সিপিডির ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন: বাজেট এমন সুন্দরভাবে করা হয়েছে যে বিদ্যমান বাস্তবতার আঙ্গিকে সত্য বলে মনে হয় না। দেবপ্রিয়র মতে, এই বাজেট একটা ইন্দ্রজাল। একটা মোহ। ব্যাকরণসিদ্ধ বটে তবে বাস্তবসম্মত নয়। এই বাজেট বাস্তবায়নে প্রশাসনিক বিপ্লবের প্রয়োজন হবে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানও বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের উপকার হবে কিনা তা নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর। 
এফবিসিসিআই মনে করে এবারের বাজেট ব্যবসাবান্ধব। কোন সন্দেহ নেই তাতে। তবে অর্থনীতির ওপর চাপ বৃদ্ধি করবে এবারকার বাজেট। বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেয়া, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ, সরকারী কর্মকর্তাদের ঋণ ও আগাম নেয়ার পরিমাণ বাড়ানো ইত্যাদি আগামী দিনে অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়াবে। একই সঙ্গে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। (দ্রষ্টব্য : প্রথম আলো, ৯ জুন)। 
বর্তমান বছরের বাজেটকে সাহসী বাজেট বলে উল্লেখ করেছে এমসিসিআই বা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। তারা বলেছে, বাজেটে বিশ্ব-অর্থনৈতিক মন্দার পরিপেক্ষিত গণ্য করা হয়েছে। যা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও বাস্তব। সেই হিসেবে উন্নয়ন লক্ষ্যকে উচ্চাকাক্সক্ষী কিংবা ইন্দ্রজাল (মোহ) সৃষ্টির চেষ্টা বলে ধরে নেয়া ঠিক নয়। এমসিসিআইর মতে অঘোষিত অর্থের ওপর প্রচলিত হারে করসহ অতিরিক্ত ১০ পার্সেন্ট করারোপ তথা দ-াদেশ দেয়াটা সঠিক হয়েছে। বিশ্বজুড়ে মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মূল্য-স্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর রাখার প্রয়োজন রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি কমিয়ে ৬ হাজার কোটি রাখা এবং রফতানি পণ্যের ওপর উৎসে কর শূন্য দশমিক ছয় ও শূন্য দশমিক সাত থেকে বৃদ্ধি করে ১.২ শতাংশে বৃদ্ধি হওয়ায় এমসিসিআই হতাশা ব্যক্ত করেছে। করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি না করা, করপোরেট আয় করের সীমা বৃদ্ধি না করায় সংস্থা হতাশা ব্যক্ত করেছে। সংস্থার মতে, মোবাইল ফোনের বিলের ওপর ২শতাংশ হারে কর আরোপ সময়োপযোগী নয়। নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে (দ্রষ্টব্য : বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৯ জুন)।
বাজেট প্রতিক্রিয়ার পরিধি আরও সুপরিসর। আরও কিছু বাজেট-প্রতিক্রিয়া বর্তমান নিবন্ধে যুক্ত করা সঙ্গত কারণেই দরকার। বাজেট মোটা দাগে বলতে গেলে ক্ষমতাসীন সরকারের দেয়া উন্নয়নের টার্গেট, অর্থায়নের ফিরিস্তি এবং সরকারের বছরওয়ারি আয়-ব্যয়ের হিসাব বৈ কিছু নয়। তবে যে কোন দেশেরই জাতীয় বাজেট নির্ধারণের পেছনে একটি দর্শন থাকে। সেটা হচ্ছে দেশের গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষের উন্নয়ন, তবে সেটা কোন শ্রেণীর লোককে ক্ষতিগ্রস্ত করে নয়। কারণ, জাতীয় বাজেট হচ্ছে ধষষ বহপধসঢ়ধংংরহম বা দেশের মানুষের জন্য সর্বব্যাপ্ত ব্যাপার। শেষ কথায় বাজেটের মূল দর্শন অবশ্যই জাতিকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। 
এ প্রসঙ্গে পরে আলোচনায় আসছি। আগে গত ৭ জুন, জাতীয় সংসদে ঘোষিত ২০১২-২০১৩ আর্থিক বছরের বাজেট প্রতিক্রিয়ার আরও কিছু মন্তব্য, বক্তব্য ও বিশ্লেষণ উল্লেখ করা যাক। 
বাংলাদেশে রফতানি খাতের একটি বড় অঙ্কের উদ্গাতা তৈরি পোশাক শিল্পের প্রতিধিত্বশীল সংস্থা বিজিএমএ বলেছে: রফতানি পণ্যের উৎসে কর বর্তমান বাজেটে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প-খাত হুমকির মুখে পড়তে পারে। তারা বিশ্ব বাজারে সফল প্রতিযোগিতার স্বার্থে তথা দেশের জন্য আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের স্বার্থে তৈরি শিল্প-খাতে দেয়া প্রণোদনা আরও তিন বছর বহাল রাখার দাবি জানান। 
আইএফবি, ইন্টারন্যাশন্যাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে বলেছে, সময়োপযোগী এবং সাহসী বাজেটÑ সন্দেহ নেই। তবে বাজেটের সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হলে চাই সুশাসন। আইএফবি আরও বলেছে, বাজেটের ঘাটতি মেটাবার জন্য ব্যাংক থেকে ঘোষণা মোতাবেক ২৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলে অর্থনীতি বড় চাপের মধ্যে পড়বে। তবে এই চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব দেশে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে। বাজেটের কিছু ত্রুটি সত্ত্বেও তাঁরা সেটা উল্লেখ করেছেন। কর ফাঁকি রোধে আয়কর আইনে নতুন বিধান সংযোজন, রফতানিমুখী শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের পরিধি বৃদ্ধি, পর্যটন খাতে উৎসাহ বৃদ্ধি, বাজেটে ইত্যাকার ঘোষণা অর্থনীতি বিকাশের স্বার্থে খুবই উপযোগী পদক্ষেপ বলেও মনে করে আইএফবি। বেসরকারী খাত দেশের উন্নয়নের বেশি অবদান রাখে। এই মন্তব্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের। তিনি বলেছেন, ব্যাংকিং এবং আর্থিক খাতের যথোচিত সংস্কার ও সমন্বয় না হলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার টার্গেট অধরাই থেকে যাবে। এও বলেছেন, ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়া সরকারের উচিত হবে না। 
এবারের ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে বিরোধী দলের যা বলা উচিত তারা তা-ই বলেছে। যা বলা উচিত না, যুক্তিপূর্ণ বা সঙ্গত না, তাও বলেছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাজেটের বিশ্লেষণে না গিয়ে রাজকীয় সুলভ ভঙ্গিতে বলেই দিয়েছেন এ বাজেট কিচ্ছু হয়নি। একেবারে অর্থহীন এবং জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী ছাড়া এই বাজেটকে আর কিছুই বলা যায় না। একদা বাংলাদেশে কিছুকালের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন থাকা এবং সংগঠনহীন এক রাজনৈতিক দলের প্রায় অবসরে যাওয়া রাজনীতিবিদ প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরীর এবারের বাজেট সংক্রান্ত বক্তব্য প্রায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদেরই অনুরূপ। এঁদের বক্তব্য এরকমই একপেশে এবং বিদ্বেষপূর্ণ হবে সেটা সবাই জানে। সবাই জানে বিএনপি-জামায়াত সংসদে যাবে না, সংসদে গিয়ে কোনই প্রস্তাব দেবে না। সংসদের চেয়ে বাজেট-ভাবনা প্রকাশে হোটেলই অনেক ভাল তাদের কাছে। সংবিধান মোতাবেক জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগে কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী ছায়া বাজেট বা বাজেট ভাবনা সরকারী বাজেটের বিকল্প হিসেবে ঘোষণা করতে পারে নাÑ এই বিধানকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে আসছে বিরোধী দলে থাকাকালীন বিএনপিÑ এটাও সবাই জানে। 
এবারে ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে যা যা প্রতিক্রিয়া, সেসবকে একতরফা ভাল বলা যায় না, একতরফা মন্দ বলাও যায় না। বলা চলে ঘোষিত বাজেটের ব্যাপারে অর্থনীতির তাত্ত্বিক, গবেষক ও বিশ্লেষকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয়েছে। আমি মনে করি, প্রতিক্রিয়ার বিচারে ঘোষিত বাজেটের অবস্থান বেশির ভাগই ইতিবাচক। একটা ক্রমোন্নয়নশীল দেশের বাজেট খানিকটা উচ্চাকাক্সক্ষীই তো থাকবে। সেটা বাজেটের জন্য সময়োপযোগী ও সাহসী পদক্ষেপ। তবে এরপরও কথা থেকে যায়। বাজেট শুধু সময়োপযোগী ও সাহসী হলে চলে না, সেটা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কতখানি সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। দেখতে হবে বাজেটে নিহিত উচ্চাকাক্সক্ষা রূপায়ণে আমাদের অভ্যরীণ সম্পদ, আহরণযোগ্য সম্পদ এবং বাইরের বিনিয়োগসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাহায্য কতটা সমর্থ বা নাগালের ভেতরে, কতটা বাইরে। 
এ ছাড়া বাজেটে নিহিত, ধরা যাক, জাতীয় আশা, আকাক্সক্ষা পূরণে আমাদের জনশক্তি কতটা নিবেদিতপ্রাণ এবং দক্ষ সেটিও দেখার বিষয়। অধ্যাপক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যথার্থই বলেছেন, ঘোষিত এই আকারের বাজেট বাস্তবায়নে একটা প্রশাসনিক বিপ্লব দরকার। বেতো ঘোড়া আর রেসের ঘোড়া, দুই জিনিস। আইনের বাধ্যবাধকতার কারণেই আমাদের আমলাতন্ত্রের ইচ্ছে করলেও দ্রুত কাজ করার উপায় নেই। টায়ারের পর টায়ার রেখে আর প্রশাসনকে কেন্দ্রানুগ করে ক্ষমতা অপব্যবহার তথা দুর্নীতি এবং সীমাহীন জবাবদিহিহীন সময় ক্ষেপণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বাস্তবায়নে অন্তত ষাট থেকে আশি ভাগ সাফল্য চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। যে কোন দলের অর্থমন্ত্রীই তাঁর ঘোষিত এবং পার্লামেন্টে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া বাজেটের উল্লেখিত সাফল্য চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে আমার ক্ষুদ্র ধারণা মতে মরা ঘোড়ার ঢিমে তালে চলা আমলাতন্ত্র দিয়ে এই কাক্সিক্ষত সাফল্যের কিয়দংশের বেশি সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। আশা করি প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী দু’জনেই সত্যের খাতিরে বিষয়টা স্বীকার করে নেবেন। 
আমার মতে প্রশাসনে ফাইল চালাচালির একটা সময়সীমা বেঁধে দেয়া উচিত। যত গুরুত্বপূর্ণ কাজই হোক, সিদ্ধান্ত নেয়ার তথা সর্বোচ্চ ফাইল পৌঁছে দেয়ার সময়সীমা কিছুতেই এক মাসের বেশি হওয়া বাঞ্ছিত নয়। কেন্দ্রানুগ শাসন পদ্ধতিরও কিছু মৌলিক সংস্কার বা পরিবর্তন হওয়া উচিত। ফাইল চালাচালিতে ঢিলেমি এবং সময় ক্ষেপণ, দুটোই দুর্নীতির মা ও বাপ। সরকারের দরকার দক্ষ ও সময় ক্ষেপণ না হওয়া একটি প্রশাসন। শুধু তো বাজেট নয়। সরকারের ভিশন কার্যসূচী বহুলাংশে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্যও তো চাই তেমনি একটি প্রশাসন। 
বিশাল অঙ্কের বাজেট। ঘাটতি প্রচুর। এই বাজেটের অর্থায়ন চ্যালেঞ্জিং হবে সেটা আর বিচিত্র কি। বাংলাদেশ এখন পাঁচ বছর আগের বাংলাদেশ নেই। অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থায় বহু ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি অর্থনীতি এবং শিল্পক্ষেত্রে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ ট্যাক্স নেট আরও বিস্তৃত হতে পারে এবং যদি অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ সন্তোষজনক পর্যায়ে আনতে পারা যায় তাহলে বাজেটের ঘাটতি পূরণে তা উল্লেখযোগ্য সহায়ক শক্তি হিসেবে গণ্য হতে পারে। কথাটা যত সহজভাবে বললাম, কাজটা তারচেয়ে অনেক বেশি কঠিন। তবে চ্যালেঞ্জ নেয়া তো একেই বলে। 
কালোটাকা বা অপ্রদর্শিত আয় সাদা বা লিগ্যাল করার সুবিধা আগের বেশ কয়েকটি (বিএনপি-আওয়ামী লীগ সরকারসহ) বাজেটে ও রাখা হয়েছিল। যতটা মনে আছে, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অপ্রদর্শিত টাকা লিগ্যাল করার হার শতকরা এগারোর বেশি কোনবারই দেখা যায়নি। এবারে কতটা হবে সেটা বলা কঠিন। তবে এটা ঠিক দেশে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয়ের পরিমাণ বিশাল। লুকানো টাকার ৪০ থেকে ৫০ ভাগও যদি লিগ্যাল সিস্টেমে ফিরে আসত, পিপিপির প্রকল্প কিংবা শেয়ারমার্কেটে বিনিয়োজিত হতে পারত, তাহলে ঘাটতি বাজেট নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু থাকত না। বাজেট বাস্তবায়নে বিদেশ নির্ভরতা বা বিশ্বব্যাংক আর আইএমএফের গরিব দেশ নিয়ে খেলার ‘নিষ্ঠুরতা’ অনেকটাই কমানো সম্ভবপর হতো। অনেকের মতো আমারও মনে হয়, স্বৈর দ্ইু শাসক এবং গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের নিশ্চিত ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে যারা এই ধরনের অপ্রদর্শিত আয়ের অধিকারী হয়েছে, তারা আত্মপরিচিতি জনসমক্ষে প্রকাশ হওয়ার ভয়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে এগিয়ে আসছে না। তাদের ও কি আত্মপরিচিতি গোপনের গ্যারান্টি দেয়া দরকার? সে যাই হোক, বিশ্বজুড়ে বিরাজমান মহামন্দার এই দুঃসময়ে অর্থ-আহরণের দায় লাঘব করতে অপ্রদর্শিত আয় দ-সহ লিগ্যাল করার সিদ্ধান্তকে সমালোচনায় বিদ্ধ করার কিছু নেই। 
অর্থায়নই বর্তমান সরকার ঘোষিত বাজেট বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় ও কঠিন চ্যালেঞ্জ। আইএমএফ তার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারলে বাজেটে অর্থায়ন সহজ হয়ে আসতে পারে। তবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক দুটোই তো বিশেষ একটি মহাশক্তিধর রাষ্ট্র ও পশ্চিমা জোটের ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় এনে কখন যে ওরা সাহায্যের যোগসূত্র শ্লথ কিংবা বন্ধ করে দেয়, সে এক বিরাট প্রশ্ন বটে। প্রশ্নের মীমাংসা বর্তমান সরকারকেই করতে হবে।
তবে বাইরের চাপ উপেক্ষা করে বাংলাদেশে কৃষি ভর্তুকি যদি কমিয়ে দেয়া না হয়, সেটা হবে সরকারের ভুলপথে হাঁটা। গ্রামের বেশিরভাগ লোকই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের অনুরাগী কৃষিতে ভর্তুকি-হ্রাসের কারণেই সেচের জন্য সময় মতো বিদ্যুত সরবরাহ হওয়াতে। সার ও বীজের মূল্য আগের চেয়ে অনেক কম থাকায়। আমাদের পরামর্শ আর যা-ই করুন কৃষি ভর্তুকি কমাবেন না। সেটা হবে নির্বাচনী রাজনীতিতে আত্মঘাতী। 
অর্থনৈতিক কম, রাজনৈতিক মন্তব্য বেশি হচ্ছে বর্তমান ঘোষিত বাজেট নিয়ে, একথা বলেছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খানসহ আরও কেউ কেউ। কথাটা মোটেও ফেলে দেয়ার মতো নয়। আমি মনে করি, চ্যালেঞ্জই তো জীবন। বর্তমান সরকার যদি বাজেটে যুক্ত উন্নয়ন বাজেটের পঞ্চাশ পার্সেন্ট এবং মূল বাজেটের ৬০ শতাংশের বাস্তবায়নও করতে পারে, তাহলে সেটা হবে সরকারের বিশাল সাফল্য। কানেকটিভিটি স্থাপন এবং সমুদ্র জয়ের পর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনা বেড়েছে বহুগুণ। বিদেশী বিনিয়োগের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ, অবশ্য যদি সন্ত্রাসী ও জঙ্গীরা রাজনীতির মুখোশ পরে দেশ অচল করে দেয়ার সুযোগ না পায়। জঙ্গী ও সন্ত্রাসী দমনে বাইরের মিত্র দেশগুলো যে বর্তমান সরকারকে সম্ভাব্য সবরকম সাহায্য যুগিয়ে যাবে এ বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। 

লেখক : কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন