সোমবার, ৪ জুন, ২০১২

বাজেট ভাবনায় তৃতীয় মাত্রা


এ. এ. জা ফ র  ই ক বা ল
যারা ফসল ফলান বাজেট নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। ধান আবাদ করে লাভ হয়নি বলে এবার তারা ধানের জমিতে আবাদ করবে তরমুজ কিংবা অন্য কোনো ফসল। বিপাকে পড়বে দেশ। খাদ্য উত্পাদন এবং চাহিদার বর্ডার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দেশটিকে আবার যদি আমদানির দিকে যেতে হয় তাহলে বিপর্যয় অনিবার্য। সে ক্ষেত্রে অর্থনীতির কোনো আগাম হিসাব উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবে না। 
ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, কৃষিতে বাড়তি ভর্তুকি দেওয়ার সুযোগ সীমিত। সরাসরি এভাবে এ কথাটি না বলে ফসলের ‘বাই ব্যাক গ্যারান্টি’ নিশ্চিত করার বিকল্প পথ তৈরিতে নতুন সম্ভাবনাময় প্রণোদনা খুঁজে বের করা উচিত ছিল। ধান উত্পাদক কৃষক যদি চাল বিক্রির পাশাপাশি খড়, কুড়া এবং তুষ বিক্রি করে বাড়তি আয়ের সুযোগ পায়, তাহলে চালের দাম কেজিতে দুই-তিন টাকা কমলেও ধান আবাদ তারা পরিত্যাগ করবে না। খড়, কুড়া এবং তুষ এখনও বিক্রি হয়, তবে শিল্প উপাদান হিসেবে নয়। খড় থেকে কাগজের মণ্ড, কুড়া থেকে ভোজ্যতেল এবং তুষ থেকে কাঠের বিকল্প আধুনিক প্রক্রিয়ায় উত্পাদন শুরু হলে অবশ্যই ধান আবাদে আসবে নতুন মাত্রা। 
শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ধানের উপজাত সামগ্রীকে সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন শিল্প গড়ে তোলার চেষ্টা ও সুযোগ বাজেটে কতটুকু অবারিত রাখা হয়েছে কিংবা এ নিয়ে সরকারের কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি না তা আমাদের কাছে অজ্ঞাত। সরকার হয়তো বলবে, কৃষিজাত ও কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার সকল সুযোগ তো দিয়ে রাখাই হয়েছে। কিন্তু তারপরেও ধান আবাদকে সমুন্নত রাখার প্রয়োজনে বিশেষ সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন; তাত্ক্ষণিকভাবে বছর ভিত্তিতে সে খাতে নতুন বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। 
পদ্মা সেতু পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করা গেলে দেশের একটি অংশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হবে সরকার। কিন্তু সমপরিমাণ অর্থ প্রণোদনা হিসেবে ব্যবহার করে যদি ধান আবাদকারী কৃষকদের এই প্রধান খাদ্যশস্যটি আবাদে আগ্রহী করে রাখা যায় তাহলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রেখে সীমিত আয়ের স্বল্পবিত্ত মানুষের সমর্থন পেতে সরকারের বেগ পেতে হবে না। অন্যদিকে ভোজ্যতেল, কাগজ তৈরির মণ্ড এবং বিকল্প কাঠের আসবাব আমদানি কমিয়ে আনা যাবে অনায়াসে। 
এসব কাজ করতে গেলে কিছুটা ফলিত গবেষণা করা প্রয়োজন। বিসিএসআইআর সে ধরনের ফলিত গবেষণার জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। সেই কবে প্রতিষ্ঠানটি থেকে পারটেক্স আবিষ্কার হয়েছে তারপর এই প্রতিষ্ঠানটি তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য শিল্পসামগ্রী উপহার দিতে পারেনি। বাজেটে বাড়তি কিছু অর্থ বরাদ্দ রেখে সময়ভিত্তিক লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে নিত্যনতুন শিল্পসম্ভার আবিষ্কারের সুযোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি এবং এ কাজটি করা উচিত কৃষি উপজাত কাঁচামালের ওপর নির্ভর করে। সরকারের এ ধরনের কোনো উদ্যোগ আছে বলে জানা যায়নি। এই মুহূর্তে আরও একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি কিংবা ভারতের সাহারাকে এক লাখ একর জমি দিয়ে আধুনিক আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার চেয়ে আমাদের প্রয়োজন সেবা খাতের ব্যয় যতটা সম্ভব কমিয়ে শিল্প খাতে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করা। 
আমরা এখন বৃহত্ শিল্প, মাঝারি শিল্প এবং ক্ষুদ্র শিল্প নিয়ে তিনটি পৃথক আঙ্গিকে অগ্রসর হচ্ছি। এই ধাপগুলোও পরিবর্তন এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। শুধু কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে শিল্প স্থাপনের চেষ্টাকে প্রাধান্য দেওয়ার চেয়ে সেই শিল্পকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন যে শিল্পের কাঁচামাল দেশি, উত্পাদিত পণ্যের স্থানীয় চাহিদা আছে এবং স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজার। দ্বিতীয় ধাপে আসবে আমদানিনির্ভর কাঁচামালের উত্পাদিত পণ্য, যার রয়েছে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার। তৃতীয় ধাপে আসবে কাঁচামাল আমদানি করে আনা শিল্প, যার উত্পাদন রফতানিনির্ভর। সবারই জানা কারিগরি প্রযুক্তির আধুনিকতা কায়িক শ্রমের বাজার সঙ্কুচিত করে আনছে। সুতরাং কোনো শিল্পকেই আর শুধু জনশক্তি ব্যবহারের বারোয়ারি এবং খয়রাতি সহযোগিতা বিবেচনা করার উপায় থাকছে না। 
উত্পাদিত পণ্যের বাজার চাহিদা থাকলে শিল্প বাঁচবে। ভর্তুকি আর প্রণোদনা দিয়ে শিল্প বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা সাময়িক কিংবা আন্তর্বর্তীকালীন শিল্প রক্ষার চেষ্টা হতে পারে, টেকসই কোনো প্রক্রিয়া নয়। যে শিল্পে উত্পাদিত পণ্যের ‘বাই ব্যাক গ্যারান্টি’ নিশ্চিত সে শিল্পই টেকসই অবস্থানে যেতে পারে মাত্র। বাজেটে শিল্প খাতে অনেক প্রণোদনাই থাকবে হয়তো। কিন্তু অতীতে আলোচিত বিষয়গুলোকে কখনই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। 
শোনা যাচ্ছে এবারের বাজেটে সর্বাধিক ব্যয় ধরা হচ্ছে বিদ্যুত্ খাতে। এ খাতে ব্যয় বৃদ্ধির যথেষ্ট প্রয়োজনও আছে। সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে পরিমিত বিদ্যুত্ সরবরাহ নিশ্চিত করতে। সরকারের চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েই বলতে হচ্ছে বিদ্যুত্ খাতে অর্থ ব্যয়ের উদার উদ্যোগ বারবার কী কারণে ব্যর্থ হচ্ছে তার সঠিক পর্যালোচনা করা না হলে খুব একটা লাভ হবে না। আইএমএফের চাপে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির অজুহাতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখলেও পরিমিত বিদ্যুত্ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে না-যদি অপচয় আর সিস্টেম লসের বর্তমান অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়। আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুসারে আমরা শুধু বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের অন্য পরামর্শগুলোকেও কাজে লাগানো অত্যন্ত জরুরি। বিদ্যুত্ উত্পাদন এবং বিপণনের ব্যবসাটি পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে না রেখে এলাকাভিত্তিতে অন্তত পরীক্ষামূলকভাবে সবকিছুই বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন। পরীক্ষামূলকভাবে এ কাজটি করা গেলে বোঝা যেত বিদ্যুত্ উত্পাদন ও বিতরণ দক্ষতায় প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হচ্ছে কি না। 
বোঝা গেছে পর্যায়ক্রমে হলেও গ্যাসের দাম, জ্বালানির দাম এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাবে। আইএমএফের প্রেসক্রিপশনের দোহাই দিয়ে ভর্তুকি কমানোর লক্ষ্যে সরকার এ কাজ করবে। কিন্তু তার যে প্রতিফলন ভোক্তা পর্যায়ে আসবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হবে। গৃহস্থালীর সেবাখাত থেকে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির যে প্রতিযোগিতা শুরু হবে সে প্রতিযোগিতা সামাল দেওয়ার টেকনিক আদৌ সরকারের আছে কি? সীমিত আয়ের প্রান্তিক এবং মাঝারি জনগোষ্ঠী যে কোনো বিরূপ পরিবেশে সর্বাধিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে থাকে উন্নয়নকামী দেশগুলোতে। আমরা তার ব্যতিক্রম নই। তাই এই মাঝারি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গতি ও আয়ব্যয়ের সরল অঙ্ককে বিবেচনায় না এনে সরকার যদি গ্যাস-বিদ্যুত্-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কৌশল নেয়, তাহলে তা অবশ্যই প্রতিধ্বনিত হবে গ্রাম থেকে শহর-নগরে। 
বার্ষিক আয়-ব্যয়ের খসড়া, যা বাজেট নামে পরিবেশন করতে যাচ্ছে সরকার, তাতে আয়ের নিশ্চয়তা যথার্থ না হলেও ব্যয়ের তাগিদ প্রয়োজনের সঙ্গে কম-বেশি সঙ্গতিপূর্ণ। ব্যয় মেটানোর বেলায় অপরিহার্য খাতগুলোর বেলায় যত্নবান থেকে সেবা খাতগুলোর প্রতি যতটুকু সম্ভব রক্ষণশীল হওয়াটাও এখন খুবই জরুরি। কারণ যে বাজেট আসছে সে বাজেটকে ঘাটতি বাজেট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঋণ করে ঘৃতান্নতে উদরপূর্তির চেষ্টা করার পরিবর্তে ঋণ পরিশোধের তাগিদ থেকে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে হলেও আধপেটা স্বাবলম্বী থাকাটা অনেক বেশি যৌক্তিক। 
বিদেশ থেকে পাওয়া অর্থসাহায্য এবং ঋণ গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। পিপিপির মাধ্যমে বিনিয়োগ আসার যে সম্ভাবনা সূচিত হয়েছিল সে সম্ভাবনার সাফল্যও উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। সরকার মানতে না চাইলেও দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে বিদেশিরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। বিদেশ থেকে সুবিধাজনক শর্তে পরিমিত ঋণ কিংবা সাহায্য না পাওয়া গেলে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে, যা সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। 
রাজস্ব আয় এবং অন্যান্য খাত থেকে আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা সরকারের রয়েছে তা সঠিকভাবে যথাসময়ে আহরণ করার পরও সরকারকে হাত পাততে হবে ব্যাংকগুলোর কাছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে সব ব্যবসায়ী সংগঠন। অর্থনীতির পণ্ডিতেরাও এ নিয়ে অকাট্য যুক্তি দাঁড় করিয়ে আপত্তি তুলেছে। কিন্তু সরকারের তো উপায় নেই। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের যুক্তি খণ্ডন করার চেষ্টা না করে এ প্রসঙ্গে সাধারণ মানুষের সরল মন্তব্য হল ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক বিনিয়োগ প্রক্রিয়া ব্যাহত না করে এবং সময়মতো ঋণ পরিশোধের অঙ্গীকার করে সরকার চাইলে ব্যাংক ঋণ নিতে পারে। তবে সেই ঋণ ব্যবহারে অবশ্যই সরকারকে যত্নবান থাকতে হবে উত্পাদনমুখী খাতে।  
মুদ্রাস্ফীতি তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নকামী দেশগুলোর জন্য নৈমিত্তিক বিষয়। আমাদের দেশেও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যদি মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকে তাহলে ভয়াবহ আর্থিক মন্দার দিকে ধাবিত হয় দেশ। মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে মুদ্রা সরবরাহের ওপর। অন্যদিকে কাগজের টাকা ছেপে সরকারের ব্যয় মেটানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই দুটি পরস্পরবিরোধী উদ্যোগের শেষ পরিণতি কী হবে কে জানে, তবে বোঝা যাচ্ছে জাতীয় অর্থনীতিতে এক অভাবনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে অপ্রত্যাশিতভাবে। 
জনবলের কর্মসংস্থান আমাদের অর্থনীতির জন্য এক বড় হুমকি। দেশের শ্রমবাজারে প্রতিবছর প্রায় ১৮ লাখ নতুন বেকার যোগ হচ্ছে। এই নতুন বেকারের সঙ্গে পুরনো কর্মহীন জনসংখ্যার যোগফল একীভূত করলে একটি ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসে। সরকারি বেসরকারি অফিস কিংবা ফ্যাক্টরিতে চাকরি দিয়ে বেকার জনগোষ্ঠীর এই সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। অথচ একটি দেশের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশে বেকার সমস্যা নিরসনের কোনো বিকল্প নেই। বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে কয়েক বছর আগেই কর্মসংস্থান ব্যাংক নামে একটি বিশেষ আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। সে ব্যাংকটিতে ঋণ দেওয়ার মতো কোনো তহবিল নেই। বেকারদের মধ্যে বিদেশে যারা চাকরি নিয়ে যেতে চান তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি একেবারেই নতুন, নতুন বলেই এই ব্যাংকে এখনও ভালো তহবিল আছে। খুব বেশি দিন প্রতিষ্ঠানটি সচ্ছল থাকবে তেমনটি মনে করারও কোনো কারণ নেই। সুতরাং সরকারকে ভাবতে হবে বেকারত্ব নিরসনের নতুন পথ। বেকারদের দেশে চাকরি দিয়ে কিংবা জনশক্তি বিদেশে রফতানি করে যে কর্মসংস্থান হচ্ছে তা তো অব্যাহত রাখতেই হবে, পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ অবারিত করতে হবে। বার্ষিক বাজেটে এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ এবং কর্মসংস্থানের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত জরুরি। সরকারি পর্যায়ে হোক, বেসরকারি পর্যায়ে হোক কিংবা জনশক্তি রফতানি করে হোক প্রতিবছর কমপক্ষে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা না গেলে আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখাও কষ্টসাধ্য হবে। প্রসঙ্গক্রমে বলে দেওয়াই ভালো, শুধু পুরুষ নয় নারীদের কর্মসংস্থানের প্রতিও আমাদের যত্নবান হওয়া জরুরি। বিদেশে চাকরি দিয়ে কিংবা দেশের ভেতর চাকরি দিয়ে বেকার সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। প্রয়োজন সৃজনশীল, উত্পাদনমুখী আয় উত্সারী খাতে স্বাধীনভাবে শ্রম বিনিয়োগ। 
অনেকেরই আশা এবারের বাজেট হবে দরিদ্রবান্ধব। কারণ সরকারকে ভোটের প্রস্তুতি নিতে হবে। দরিদ্রবান্ধব বাজেট হলে সরকারকে নিজ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ওপর নতুন করারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে। বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দরিদ্রবান্ধব বাজেট করা কি সম্ভব? সকল ক্ষেত্রে এই চিন্তার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব না হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবশ্যই সম্ভব। আমরা এখন ধনী-দরিদ্রের ব্যবধানের মাঝ দিয়ে বিলাসে অবগাহনের অপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী আমদানি এবং সেগুলো ব্যবহারে অতিউত্সাহী। অনেকটা কৃপণ হয়ে হলেও এই অপ্রয়োজনীয় বিলাস আমাদের পরিহার করতে হবে। এ সমস্ত ক্ষেত্রে সরকারের করারোপের একটি নতুন উদ্যোগ খুবই জরুরি। মনে রাখতে হবে, কষ্ট করে নিজেরা নিজেদের উত্পাদিত চাল দিয়ে ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টায় আমরা সফল হলেও আঙ্গুর, আপেল আমদানি কমাতে না পারলে বিলাসিতা গ্রাস করবে সঙ্গতির সীমিত সুযোগগুলোকে। 
সবশেষে বাজেট নিয়ে ড. আকবর আলি খানের সাম্প্রতিক মন্তব্য দিয়ে উপসংহার টানতে হচ্ছে। তিনি বলেছেন, এ বাজেটকে গণতান্ত্রিক বাজেট বলা যায় না। তিনটি কারণে। প্রথমটি হল, জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নেই। দ্বিতীয়টি, বাজেট উপস্থাপনের আগে বাজেট নিয়ে আলোচনার জন্য যে খসড়া প্রকাশ করা দরকার ছিল তাও সময়মতো প্রকাশিত হয়নি। তৃতীয়টি, জাতীয় সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোতে বাজেট নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
লেখক : সাবেক ব্যাংকার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন