আমার দেশঃ ২১-04-২০১০
অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের দেয়া মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা স্থগিত করলেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ মোজাম্মেল হোসেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া বিদেশে যেতে বাধা না দিতে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা গতকাল স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সম্পর্কে অসত্য তথ্য দিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া আদেশের স্থগিতাদেশ চান। মিথ্যা ও ভুল তথ্যের বিষয়টি চেম্বার জজ আদালতের দৃষ্টিতে আনার পরও কোনো কাজ হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের চাহিদা অনুযায়ী স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন প্রতিনিয়ত মঞ্জুর করা হচ্ছে চেম্বার জজ আদালতে। সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠতম আইনজীবী সাবেক বিচারপতি টিএইচ খানের কাছে আদালত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমার দেশকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেয়াটাই যেন চেম্বার জজ আদালতের মূল কাজ। সরকারের পক্ষ থেকে স্থগিতাদেশ চাওয়া হলেই হলো। অনেকটা মুখ দেখেই চেম্বার জজ আদালতে ইদানিং স্থগিতাদেশ দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রবীণতম এই আইনজীবী।
আদালতে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্থগিতাদেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার দেশকে বলেন, কেউ আদালতকে মিথ্য বা ভুল তথ্য দিলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ বাতিল করে দিতে পারে। এ বিষয়ে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার রয়েছে সনদ বাতিল করে দেয়ার। তিনি বলেন, আদালতে ভুল বা মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে কোনো কিছু হতে পারে না। সত্য উদ্ঘাটন করে বিচার করাই হচ্ছে আদালতের দায়িত্ব। সুতরাং মিথ্যা বা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো আদেশ হতে পারে না।
এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিতাদেশ চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে দায়ের করা আবেদনে বলা হয়, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ছয় বছর সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এতে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আবেদনে আরও বলা হয়, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে সৌদি আরব যেতে দেয়া হলে তিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবেন। জবাবে মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, আদালতকে জানানো হয়েছে চারদলীয় জোট সরকারের সময় তিনি কখনও কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন না। তখন তিনি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ছিলেন বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে দেয়া তথ্য সম্পূর্ণ অসত্য বলে উল্লেখ করেন তিনি। মীর নাসির বলেন, চেম্বার জজ আদালতকে জানানো হয়েছে, তিনি ১৯৯৫ সালের ২৩ ফেবু্রয়ারি থেকে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তখন জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে তত্কালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। তিনি বলেন, মাত্র সোয়া বছর তিনি সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ছিলেন ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সালের উল্লেখিত তারিখ পর্যন্ত। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আরোহণের দিনই তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়। সুতরাং এসব বিষয় সরকারের ভালো জানা থাকার কথা। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে কখনও তিনি রাষ্ট্রদূত ছিলেন না এবং কখনও তিনি ৬ বছর সৌদি আরবে ছিলেন না। তার বক্তব্য আমলে না নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল দফতরের অসত্য তথ্যকে আমলে নিয়ে চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করে দেয় বলে জানান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের আবেদনে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার কিছু বিষয়কেও গোপন করা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া বিদেশে যেতে বাধা না দেয়ার জন্য। অথচ অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে চেম্বার জজের কাছে দায়ের করা আবেদনে আইনগত প্রক্রিয়ার বিষয়টি উল্লেখ না করে গোপন করা হয়েছে। এসব ভুল বা মিথ্যা তথ্য চেম্বার জজের দৃষ্টিতে আনার পরও কোনো কাজ হয়নি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল তিনি সৌদি আরব যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে যান। সেখানে তাকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তাকে জানানো হয় ওপরের ক্লিয়ারেন্স না থাকায় তাকে যেতে দেয়া যাচ্ছে না। সৌদি আরবে তার স্ত্রী, কন্যা ও বোনের কবর রয়েছে। ওমরা হজ পালন, রাসুল (সা.)-এর রওজা জিয়ারত ও তার স্ত্রী, কন্যা ও বোনের কবর জিয়ারত করার কথা ছিল। এজন্য তাকে এক মাসের ভিসা দিয়েছিল সৌদি দূতাবাস। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে তিনি রিট অবেদন করেন।
বিদেশে যেতে বাধা দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে সৌদি আরব যেতে বাধা না দেয়ার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের স্থগিতাদেশ চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে আবেদন করা হয় চেম্বার জজ আদালতে। গতকাল চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের আদালতে শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য দুই ছাত্রকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি জামিন দিয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। জামিনের আদেশে বলা হয়েছিল, পরীক্ষা শেষ হলে তারা সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবার আত্মসমর্পণ করবেন। জামিন আদেশের সার্টিফাইড কপি পৌঁছার পরও অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে ফোন করা হয়েছে মর্মে জানিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের মুক্তি দেয়নি। ৬ দিন পর ১৫ ফেবু্রয়ারি চেম্বার জজ দুই পরীক্ষার্থীর জামিন স্থগিত করে দেয়। এতে চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ আদর্শ মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী মাসুম ও আলজাবের ইনস্টিটিউটের ছাত্র লুত্ফুল কবির মুক্ত অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে রিমান্ডে পুলিশের হেফাজতে না নিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেয় হইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। পরের দিনই হাইকোর্ট বিভাগের এই নির্দেশনা স্থগিত করে রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের আদেশ বহাল করেন চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার জজ আদালতে শুনানিকালে আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন বাবর অসুস্থ। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের সামনেই বলেন, বাবর মারা গেলে হত্যা মামলা কইরেন। তারপরও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশটি স্থগিত করে পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে দিয়েছেন চেম্বার জজ। অনুরূপভাবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে নারায়ণগঞ্জের একটি বোমা হামলা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করে। পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডের বৈধতা নিয়ে একটি রিভিশন আবেদন করেছিলেন তিনি। হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ শুনানি শেষে তাকেও রিমান্ডে পুলিশ কাস্টডিতে না নিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়। এটিও চেম্বার জজ আদালতের কাছে গেলে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করে দেয়া হয়।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার আরিফকে রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে না নিয়ে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগ। তাকে পুলিশ কাস্টডি থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে নিয়ে আসার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করায় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের আইনজীবীকে তিরস্কারও করেছিল। সেই আদেশটিও স্থগিত করে পুলিশ কাস্টডিতেই জিজ্ঞাসাবাদে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বহাল করেন চেম্বার জজ।
গত সপ্তাহে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চিকিত্সার জন্য বিদেশ যেতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত।
এছাড়া সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় জামিন পাওয়া আসামিদের না ছাড়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার জজ আদালতে স্থগিতাদেশ চায়। এতে ৩ শতাধিক মামলার আসামির জামিন চেম্বার জজ আদালত স্থগিত করে দেয়।
জরুরি অবস্থার সরকারের সময়ও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করে দিত আপিল বিভাগ। এ নিয়ে আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আদালতের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে।
উল্লেখ্য, সুপ্রিমকোর্ট রুলস অনুযায়ী কোনো মামলা আপিল বিভাগে যাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে উপস্থাপন করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ বা নির্দেশনার বিরুদ্ধে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করা হয়। চেম্বার জজ সেই আবেদনের বিষয়ে যে কোনো রকমের আদেশ দেয়ার এখতিয়ার রাখেন। এছাড়া আপিল বিভাগের কোনো মামলা শুনানির তালিকাভুক্ত করতে বা শুনানির জন্য দিন ধার্য করতে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করতে হয়। প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে চেম্বার জজ হিসেবে দায়িত্ব দেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন প্রতিনিয়ত মঞ্জুর করা হচ্ছে চেম্বার জজ আদালতে। সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠতম আইনজীবী সাবেক বিচারপতি টিএইচ খানের কাছে আদালত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমার দেশকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেয়াটাই যেন চেম্বার জজ আদালতের মূল কাজ। সরকারের পক্ষ থেকে স্থগিতাদেশ চাওয়া হলেই হলো। অনেকটা মুখ দেখেই চেম্বার জজ আদালতে ইদানিং স্থগিতাদেশ দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রবীণতম এই আইনজীবী।
আদালতে ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্থগিতাদেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন আমার দেশকে বলেন, কেউ আদালতকে মিথ্য বা ভুল তথ্য দিলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ বাতিল করে দিতে পারে। এ বিষয়ে বার কাউন্সিল ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার রয়েছে সনদ বাতিল করে দেয়ার। তিনি বলেন, আদালতে ভুল বা মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে কোনো কিছু হতে পারে না। সত্য উদ্ঘাটন করে বিচার করাই হচ্ছে আদালতের দায়িত্ব। সুতরাং মিথ্যা বা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো আদেশ হতে পারে না।
এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিতাদেশ চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে দায়ের করা আবেদনে বলা হয়, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ছয় বছর সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এতে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে তার কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আবেদনে আরও বলা হয়, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে সৌদি আরব যেতে দেয়া হলে তিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাবেন। জবাবে মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, আদালতকে জানানো হয়েছে চারদলীয় জোট সরকারের সময় তিনি কখনও কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন না। তখন তিনি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ছিলেন বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে দেয়া তথ্য সম্পূর্ণ অসত্য বলে উল্লেখ করেন তিনি। মীর নাসির বলেন, চেম্বার জজ আদালতকে জানানো হয়েছে, তিনি ১৯৯৫ সালের ২৩ ফেবু্রয়ারি থেকে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তখন জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে তত্কালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। তিনি বলেন, মাত্র সোয়া বছর তিনি সৌদি আরবে রাষ্ট্রদূত ছিলেন ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সালের উল্লেখিত তারিখ পর্যন্ত। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আরোহণের দিনই তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়। সুতরাং এসব বিষয় সরকারের ভালো জানা থাকার কথা। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে কখনও তিনি রাষ্ট্রদূত ছিলেন না এবং কখনও তিনি ৬ বছর সৌদি আরবে ছিলেন না। তার বক্তব্য আমলে না নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল দফতরের অসত্য তথ্যকে আমলে নিয়ে চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করে দেয় বলে জানান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের আবেদনে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার কিছু বিষয়কেও গোপন করা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া বিদেশে যেতে বাধা না দেয়ার জন্য। অথচ অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে চেম্বার জজের কাছে দায়ের করা আবেদনে আইনগত প্রক্রিয়ার বিষয়টি উল্লেখ না করে গোপন করা হয়েছে। এসব ভুল বা মিথ্যা তথ্য চেম্বার জজের দৃষ্টিতে আনার পরও কোনো কাজ হয়নি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল তিনি সৌদি আরব যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে যান। সেখানে তাকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তাকে জানানো হয় ওপরের ক্লিয়ারেন্স না থাকায় তাকে যেতে দেয়া যাচ্ছে না। সৌদি আরবে তার স্ত্রী, কন্যা ও বোনের কবর রয়েছে। ওমরা হজ পালন, রাসুল (সা.)-এর রওজা জিয়ারত ও তার স্ত্রী, কন্যা ও বোনের কবর জিয়ারত করার কথা ছিল। এজন্য তাকে এক মাসের ভিসা দিয়েছিল সৌদি দূতাবাস। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে তিনি রিট অবেদন করেন।
বিদেশে যেতে বাধা দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়া মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে সৌদি আরব যেতে বাধা না দেয়ার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের স্থগিতাদেশ চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে আবেদন করা হয় চেম্বার জজ আদালতে। গতকাল চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের আদালতে শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য দুই ছাত্রকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি জামিন দিয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। জামিনের আদেশে বলা হয়েছিল, পরীক্ষা শেষ হলে তারা সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবার আত্মসমর্পণ করবেন। জামিন আদেশের সার্টিফাইড কপি পৌঁছার পরও অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর থেকে ফোন করা হয়েছে মর্মে জানিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের মুক্তি দেয়নি। ৬ দিন পর ১৫ ফেবু্রয়ারি চেম্বার জজ দুই পরীক্ষার্থীর জামিন স্থগিত করে দেয়। এতে চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ আদর্শ মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী মাসুম ও আলজাবের ইনস্টিটিউটের ছাত্র লুত্ফুল কবির মুক্ত অবস্থায় এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে রিমান্ডে পুলিশের হেফাজতে না নিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দেয় হইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ। পরের দিনই হাইকোর্ট বিভাগের এই নির্দেশনা স্থগিত করে রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের আদেশ বহাল করেন চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার জজ আদালতে শুনানিকালে আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন বাবর অসুস্থ। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার জজ বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের সামনেই বলেন, বাবর মারা গেলে হত্যা মামলা কইরেন। তারপরও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশটি স্থগিত করে পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে দিয়েছেন চেম্বার জজ। অনুরূপভাবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে নারায়ণগঞ্জের একটি বোমা হামলা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করে। পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডের বৈধতা নিয়ে একটি রিভিশন আবেদন করেছিলেন তিনি। হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ শুনানি শেষে তাকেও রিমান্ডে পুলিশ কাস্টডিতে না নিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়। এটিও চেম্বার জজ আদালতের কাছে গেলে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করে দেয়া হয়।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার আরিফকে রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে না নিয়ে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট বিভাগ। তাকে পুলিশ কাস্টডি থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে নিয়ে আসার জন্য হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করায় আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের আইনজীবীকে তিরস্কারও করেছিল। সেই আদেশটিও স্থগিত করে পুলিশ কাস্টডিতেই জিজ্ঞাসাবাদে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বহাল করেন চেম্বার জজ।
গত সপ্তাহে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে চিকিত্সার জন্য বিদেশ যেতে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার জজ আদালত।
এছাড়া সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় জামিন পাওয়া আসামিদের না ছাড়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল চেম্বার জজ আদালতে স্থগিতাদেশ চায়। এতে ৩ শতাধিক মামলার আসামির জামিন চেম্বার জজ আদালত স্থগিত করে দেয়।
জরুরি অবস্থার সরকারের সময়ও হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ স্থগিত করে দিত আপিল বিভাগ। এ নিয়ে আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আদালতের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে।
উল্লেখ্য, সুপ্রিমকোর্ট রুলস অনুযায়ী কোনো মামলা আপিল বিভাগে যাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে উপস্থাপন করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ বা নির্দেশনার বিরুদ্ধে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করা হয়। চেম্বার জজ সেই আবেদনের বিষয়ে যে কোনো রকমের আদেশ দেয়ার এখতিয়ার রাখেন। এছাড়া আপিল বিভাগের কোনো মামলা শুনানির তালিকাভুক্ত করতে বা শুনানির জন্য দিন ধার্য করতে প্রথমে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করতে হয়। প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে চেম্বার জজ হিসেবে দায়িত্ব দেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন