ড.মো: আনোয়ার হোসেন
কুমিল্লার বুড়িচং থেকে কাদেরের ফোন পেলাম। জানালো সেদিনের একটি পত্রিকায় তার ছবিসহ খবর বেরিয়েছে। চুপচাপ কাদেরের কণ্ঠে উচ্ছ্বাস। পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি জানিয়েছে কাদের সম্পূর্ণ নির্দোষ। খিলগাঁও থানার ওছি’র রিপোর্ট যাতে কাদেরকে ডাকাত গ্রুপের সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়েছিল তার সত্যতা পায়নি পুলিশ তদন্ত কমিটি। বরং কাদেরের বক্তব্যের যথার্থতা মিলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। কাদের তাই গেছে বুড়িচঙে গ্রামের বাড়িতে। মা-বাবা-বোন-আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ঈদ করতে। ঈদের আগে এই সংবাদ কাদের ও তার পরিবারের জন্য কি অপার আনন্দ ও স্বস্তি বয়ে এনেছে তা ভেবে আমিও আনন্দিত হয়ে উঠি।
আরেকটি টেলিফোনের কথা স্মরণ করি। গত ১৯ জুলাই তারিখে সে ফোনটি এসেছিল। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরিদর্শন টিমের সদস্য হিসেবে মাইক্রোবাসে উত্তরার পথে রয়েছি। সেখানে দু’টো মেডিকেল কলেজের বাৎসরিক পরিদর্শনে আমরা যাচ্ছি । টেলিফোনে আর্তকণ্ঠে যে মহিলা কথা বলছিলেন, তিনি আমার পূর্ব পরিচিত। তার নাম খুকুমনি। জানালেন, বেশ কয়েক বছর ধরে কাদের নামের যে ছাত্রটি তার ছেলে-মেয়েদের গৃহ-শিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত আস্থা ও সুনামের সাথে পড়িয়ে এসেছে, তাকেই পুলিশ ডাকাত দলের সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে। খিলগাঁও থানায় তার উপর এমন অত্যাচার করেছে যে, গুরুতর আহত কাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে আনতে হয়েছে চিকিৎসার জন্য। সবচেয়ে ভয়াবহ খবরটি জানালেন খুকুমণি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজ হাতে কাদেরের পায়ে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়েছে। আরও জানলাম, ১৬ জুলাই গভীর রাতে সেগুনবাগিচার দুদক অফিসের কাছে পুলিশ কাদেরকে গ্রেপ্তার করে। সে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারে তার মা ও বোনের সাথে দেখা করে ফজলুল হক হলে ফিরছিল। কাদের সে হলের আবাসিক ছাত্র। সম্পূর্ণ আপতিকভাবেই কাদের পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পলায়নরত কথিত সন্ত্রাসীদের গাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে মুহূর্তে গাড়িটি আটকাতে পুলিশ সমর্থ হয়। গাড়ি থেকে পলায়মান একজন সন্ত্রাসীর সাথে কাদেরকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দেয়ার পরও পুলিশ তাকে নির্বিচারে পেটাতে থাকে ও খিলগাঁও থানায় নিয়ে যায়। সেখানে সারারাত ধরে তার উপর চলে নিষ্ঠুর নির্যাতন। আরও জানলাম ১৬ জুলাই তারিখেই কাদেরের বিরুদ্ধে দুটো মামলা দিয়ে খিলগাঁও থানার পুলিশ তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ১৯ জুলাই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয় জরুরী চিকিৎসার জন্য। ভেবে অবাক হলাম ১৬ তারিখে ঘটনা ঘটেছে আর আমি জানলাম ১৯ তারিখে। তাও বিভাগের চেয়ারম্যান বা কোন শিক্ষকের কাছ থেকে নয়। বাইরের একজন বিবেকবান গৃহবধূর কাছ থেকে। মাইক্রোবাসে উত্তরার পথে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি। আমার সাথে পরিদর্শন টিমে মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডীন অধ্যাপক মোঃ ইসমাইল খানও আছেন। তাঁকে অনুরোধ জানালাম তিনি যেন ফোনে সুচিকিসার কথা বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসককে। আরও ফোন করলাম আমাদের প্রোক্টর ডঃ সাইফুল ইসলাম খান ও উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে। প্রোক্টরকে পাওয়া গেলনা। উপাচার্যকে পেলাম। জানালেন, বিষয়টি তিনি জানেন। প্রোক্টর পুলিশের বরাত দিয়ে তাকে জানিয়াছেন কাদের সন্ত্রাসী দলের সদস্য এবং পলায়নরত গাড়িতে সে ছিল। আমি তাঁকে পুলিশের ভাষ্যকেই একমাত্র সত্য হিসেবে গ্রহণ না করতে অনুরোধ করলাম। গ্রেপ্তারের পরে কাদেরের উপর অমানবিক, নিষ্ঠুর পুলিশি নির্যাতন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে তার জরুরী চিকিৎসা বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তাঁকে স্বনির্বন্ধ অনুরোধ করলাম। বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক মামুন রশিদ চৌধুরী এবং কয়েকজন তরুণ শিক্ষককে দ্রুত মেডিকেল কলেজে গিয়ে কাদেরের চিকিৎসা কাজে সহায়তা করতে বললাম। বিভাগীয় শিক্ষকেরা সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা পৌঁছুবার আগেই কাদেরকে কারাগারে নিয়ে গেছে।
২২ জুলাই শুক্রবার সকালে কাদেরের সহপাঠী ছাত্ররা বাসায় এল। তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত আরও খবর জানা গেল। সি এম এম কোর্টে কাদেরের একটি মামলার জামিন আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। কারাগারে তার অবস্থা ভাল নয়। দ্রুত কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেই। আমার পরিচিত মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটার এডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনেট সদস্য, তাঁকে ফোন করি। তিনি জানালেন মামলার কাগজ-পত্র যেন একজন ছাত্রকে দিয়ে ভূতের গলিতে তার বাসায় পৌঁছে দেই। শুক্রবার বলে তিনি বাসায়ই আছেন। আনিস ও মমিন দ্রুত বেরিয়ে যায় সে কাজে। জাহাঙ্গীর ও রকিকে নিয়ে রওয়ানা হই ঢাকা কারাগার অভিমুখে। ২০০৭ সালে ২০ আগস্ট ছাত্র গন-বিস্ফোরণের ঘটনায় আমাকে পাঁচ মাস ঢাকা কারাগারে বন্দী থাকতে হয়েছিল। কারা-কর্মকর্তাদের সাথে পরিচয়ও হয়েছিলো। মোবাইলে তাদের একজনকে পেলাম। কাদেরের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিলেন তিনি। আমি কারাগারে যাওয়াতে সেখানে একটা সাড়া পড়ে গেল। হুইল চেয়ারে করে কাদেরকে আনা হল আমাদের সামনে। চাপাতির কোপে আহত পা ব্যান্ডেজে ঢাকা। শরীরের নানা অংশ তখনও ফুলে আছে। হাতের নখগুলো নির্মম আঘাতে কালো। স্বল্পবাক কাদের আরও নিথর হয়ে গেছে। তার চোখে পানি। তবে সহপাঠী ও শিক্ষককে দেখে তার মনে সাহস। কারা হাসপাতালে কাদেরের শুশ্রূষার যথাসম্ভব ব্যবস্থার আশ্বাস দিলেন কারা-কর্তৃপক্ষ । একদিন পর চতুর্থ বর্ষের সংগে সকালে ক্লাস। কোন পড়া হোল না। পুরো ঘটনা বলে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে জানতে চাইলাম তাদের করনীয় সম্পর্কে। ইতোমধ্যে তারাও জেনেছে অনেক কথা। তারপরদিন বিভাগের সামনে থেকে অপরাজেয় বাংলা অভিমুখে ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষকদের মৌন মিছিল। প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীই শুধু নয়, প্রাক্তণ ছাত্র-ছাত্রীরাও এসেছে প্রতিবাদে অংশ নিতে। ইন্টারনেট কাজ করেছে দারুন। ২০০৭ সালে কারাগারে আমাদের বন্দিত্বকালে এমন মৌন মিছিল বেরিয়েছিল। এবারেও অপরাজেয় বাংলার সামনে সুদীর্ঘ মানব-বন্ধন। কাদেরের মা-বোনও আছে সে বন্ধনে। যে পত্র-পত্রিকা-টিভি চ্যানেল এতদিন ছিল নিশ্চুপ, তারা সরব হোল। কাদের সম্পর্কে সত্য ঘটনা জানতে পারল দেশবাসি। গণতান্ত্রিক দেশে স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের শক্তির পরিচয় পাওয়া গেল আরেকবার। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সহকর্মী। তাঁকেও এর আগে সব জানিয়েছি। কাদেরের পক্ষ থেকে সুবিচার চেয়ে ছাত্ররা আবেদন পত্র পৌঁছে দিয়েছে তাঁকে। তিনিও সোচ্চার হলেন। ইন্টারনেট ব্লগ সচল হয়েছে এর আগে। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা প্রাণরসায়ন বিভাগের গ্র্যাজুয়েটরা সক্রিয় হয়েছে। ‘সচলায়তন’ নামের একটি ব্লগে কাদেরের উপর প্রকাশিত একটি খবর নাড়া দিয়েছে সবাইকে। প্রাণরসায়নবিদদের নিজস্ব ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সে লিংকটি পৌঁছে গেছে প্রাণরসায়ন পরিবারের সদস্যদের কাছে। ‘গ্র্যাজুয়েট বায়োকেমিস্ট এসোসিয়েশন’ কাজে নেমে পড়েছে। যে শিক্ষকগন শুরুতে সাড়া দিতে পারেননি, ছিলেন নানা দ্বিধায়, তারাও দ্রুত সক্রিয় হলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণরসায়ন পরিবারের ছাত্র-শিক্ষকের মেল-বন্ধন আবারও দৃঢ় হল অতীতের মত।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটলো মানব-বন্ধন রচনার পরদিন পত্রিকায় কাদেরের উপর বিস্তারিত নিবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার পর। সে সংবাদ দেখে বাংলাদেশের সর্বচ্চো আদালত সুপ্রিম কোর্টের একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে মাননীয় বিচারপতিদ্বয় শামশুদ্দিন চৌধুরী এবং গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর এক সুয়োমুটো আদেশে ২৮ জুলাই হাইকোর্টে তলব করলেন খিলগাঁও ও মোহাম্মদপুর থানার ওসিদ্বয়কে। একই সাথে কারাগার থেকে কাদেরকে তাদের বেঞ্চের সামনে হাজির করতে নির্দেশ দিলেন। অনুরোধ এল আমাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক মামুন রশিদ চৌধুরী যেন হাইকোর্টে হাজির হয়ে কাদের সম্পর্কে তার অভিমত জানান।অনেক বাঁধা-বিপত্তি ও নাটকীয়তা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত কাদের ঐদিন পড়ন্ত বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ঐ বেঞ্চের সামনে হাজির হতে পেরেছিল। পিন-পতন নীরবতায় জানিয়েছিল সত্য ঘটনা। মহামান্য বিচারকগণ তার শরীরের আঘাতের চিহ্নগুলো দেখলেন। পুলিশের ভাষ্য – গণপিটুনিতে সন্ত্রাসী কাদের আহত হয়েছে – তা সম্পূর্ণ অসার ও মিথ্যা প্রমাণিত হল। মাননীয় বিচারক শামশুদ্দিন চৌধুরীর তীব্র ভৎসনায় নিশ্চুপই থাকতে হল খিলগাঁও থানার ওসি হেলালুদ্দিনকে যে নিজ হাতে চাপাতির ধার পরীক্ষা করেছে কাদেরের পায়ে কোপ দিয়ে।
কাদের ও তার পরিবার এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়নবিদদের বৃহৎ পরিবার শুধু নয়, ন্যায় বিচার প্রত্যাশি গোটা দেশবাসীর জন্য আনন্দ ও স্বস্তির এক রুল জারি করলেন মহামান্য আদালত। রুলে ঐ রাতেই সরকারি খরচে কাদেরের সুচিকিৎসার জন্য তাকে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তর; সত্য উদ্ঘাটনে দুটো তদন্ত কমিটি গঠন এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দু’জন ওসিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা এবং পরদিন ছুটি থাকা সত্ত্বেও বিশেষ ব্যবস্থায় কোর্ট বসিয়ে কাদেরের জামিনে মুক্তির ব্যবস্থা করতে বলা হল। হাইকোর্টে উপস্থিত গত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রাক্তন আইন মন্ত্রী এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সম্পূর্ণ বিনা খরচে কাদেরের জামিন আবেদন পেশ করতে এগিয়ে এলেন।
শেষ পর্যন্ত কাদের মুক্ত হল। ফিরে এল পিতা-মাতা-বোনের কাছে। সহপাঠী বন্ধুদের কাছে। কত অবিচার ঘটে গেছে এই দেশে। বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কেঁদেছে। এই দুর্ভাগা দেশে জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের বিচার আইন করে বন্ধ রাখা হয়েছে দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে। বিচারের নামে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেনানী কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে। সে হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়া যায়নি ৩৫ বছর পর্যন্ত কুখ্যাত পঞ্চম সংশোধনীর কারণে। জেল হত্যার বিচার এখনও হয়নি। ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে খোদ রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অংশগ্রহণের কথা জানা গেছে। তার বিচারও এখনও হয়নি। কিবরিয়া হত্যার বিচারও পায়নি তাঁর পরিবার। বর্তমান সময়ে সম্পূর্ণ নির্দোষ কাদেরের উপর রাষ্ট্রের অন্যতম অঙ্গ আইন রক্ষাকারী পুলিশের পক্ষ থেকে যে নিষ্ঠুর অবিচার নেমে এসেছিল তার যে এত দ্রুত প্রতিবিধান হল সে ব্যাপারেও গভীর ভাবনা প্রয়োজন।
অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, সামরিক স্বৈরশক্তি নানা অজুহাতে ক্ষমতা দখল করেছে। বহু সীমাবদ্ধতায় বাঁধা দুর্বল গণতন্ত্র দেশের অগ্রগতিতে বড় অন্তরায় – এমন সব আপ্তবাক্য তারা শুনিয়েছে জনগণকে। কায়েম করেছে দীর্ঘ স্বৈরতন্ত্র। তাদের সেইসব প্রতারণা দেশের জনগণকে ধোঁকা দিতে পারেনি। বহু রক্তদান ও আত্মত্যাগে হঠাতে হয়েছে সামরিক স্বৈরশাসকদের। এসেছে গণতান্ত্রিক শাসন। অতীতে গণতান্ত্রিক শাসনের দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারেনি। প্রতিক্রিয়ার নানা শক্তি রাষ্ট্রযন্ত্রের নানা অঙ্গে এখনও বহাল আছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা তাই হোঁচট খেয়ে এগুচ্ছে। কাদেরের উপর অত্যাচারটি তারই উদাহরণ। তারপরও গণতান্ত্রিক শাসনের যত দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাই থাকুক, এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকলে তার সুফল জনগণ পায়। যেমনটা পেয়েছে কাদের ও তার পরিবার।
পুলিশ বিভাগের তদন্ত কমিটির অনুসন্ধান রিপোর্টের কথা দিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম। কি বিশাল তাৎপর্য নিহিত আছে এই রিপোর্টে। যেখানে পুলিশ বিভাগের দু’জন কর্মকর্তা অভিযুক্ত, সাময়িকভাবে বরখাস্ত, সেখানে সেই পুলিশ বিভাগেরই তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সত্য প্রকাশিত হল। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হল আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ অতীতের বর্বরতার শাসন থেকে বেরিয়ে আসছে। সত্য উদ্ঘাটন ও কাদেরের মুক্তিতে স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের শক্তি ও সামর্থ্যের পরিচয় আমরা নতুন করে আবারো পেলাম। তাকে রক্ষা করতেই হবে। এ প্রসঙ্গে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার কথাটিও আসে। তার সুফল জনগণ পাচ্ছে। নাগরিকদের প্রয়োজনেই তাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।
এদেশের সম্ভাবনা আছে। শুধু প্রয়োজন গণতান্ত্রিক শাসনকে অব্যাহত রাখা; দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতার জটাজাল থেকে মুক্ত করে তাকে শক্তিশালী করা। একাজে সরকার ও বিরোধী দলকে এগিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করতে হবে ষড়যন্ত্রকারী যেকোনো অসাংবিধানিক শক্তিকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন