এম আবদুল হাফিজ
ক্ষমতার মেয়াদ যখন ফুরিয়ে আসতে থাকে এ অঞ্চলে যে কোনো দেশের সরকার অস্বাভাবিক আচরণে প্রবৃত্ত হয়। উল্টাপাল্টা কাজ করতে থাকে, বাস্তবতা থেকে ছিটকে পড়ে। শক্তি মদমত্ততার মৌতাতে আবিষ্ট এরা যখন বোঝে যে, তাদের অঙ্গুলি সঞ্চালনে রাষ্ট্রযন্ত্রটি আর চলবে না, সেটি অন্য কারও কর্তৃত্বে চলে যাবে, এমন বাস্তবতার যন্ত্রণা অসহ্য। সেই যন্ত্রণায় এখন মহাজোট সরকার ভুগছে এবং বুঝে না বুঝে একের পর এক তার পদস্খলন হয়েই চলেছে।
কোথা থেকে এ বয়ান শুরু করা যায়? ক'দিন আগেকার টাকার বস্তার মাজেজা দিয়ে? প্রধানমন্ত্রী অবেলায় নিয়োগপ্রাপ্ত রেলমন্ত্রীকে তুরস্ক থেকে এসেই শাসালেন। অনেক নাটকীয়তার পর যে সুরঞ্জিতের পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না, অথচ বেশকিছু নাটকীয়তার পর পদত্যাগ করলেন, কোনো এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় তাকে আবার মন্ত্রিত্বে বরণ করলেন। ইতিমধ্যেই কিন্তু সুরঞ্জিত সেনের সততার কৌমার্য শেষ হয়েছে। তাকে এখন পুরো দেশ, জনগণ এবং সহকর্মীরা সেভাবেই অর্থাৎ ঘুষবাণিজ্যের হোতা হিসেবেই দেখবে। আমাদের এ স্বপ্নের দেশকে রাজনীতিকরা একটি 'পোড়া' দেশে পর্যবসিত করতে সক্ষম হয়েছেন, যেখানে আমাদের জীবনমান জন্তু-জানোয়ারের পর্যায়ে নেমে গেছে। দেখেছেন না, শ্রমিক মজদুরকে কীভাবে ট্রাকের মেঝেতে বা ট্রেনের ছাদে করে স্থান থেকে স্থানান্তরে নিয়ে যাওয়ায়, সড়ক বা রেলপথ দুর্ঘটনায় এদের কিছু মরে, কিছু গন্তব্যে পেঁৗছে_ এভাবেই এরা এ দেশে শুধু বেঁচে থাকতে, টিকে থাকতে জীবন-সংগ্রাম করে। তবু এদের পেটপুরে খাবার সংস্থান হয় না।
প্রাণভরে পান করার বিশুদ্ধ পানি মেলে না, বিদ্যুৎবিহীন আস্তানায় ঠাসাঠাসি করে ঘর্মাক্ত কলেবরে এদের নিদ্রার প্রয়াস। এদের কোনো বিনোদন নেই, প্রত্যাশা পূরণের সম্ভাবনা নেই। আদিম যুগে জন্তুরাও নাকি এর চেয়ে ভালো থাকত। অন্তত তাদের জন্য নিরাপত্তার কোনো হুমকি ছিল না। এখন তো এ দেশের মানুষ নিজ গৃহে, শহরে বা গঞ্জেও নিরাপদ নয়। জীবনের এত সমস্যা, অপূর্ণতা এবং অপ্রাপ্তির মধ্যে আবার 'গুম' নামের আরেক উপসর্গের প্রাদুর্ভাব। হঠাৎ করেই এ রাজধানীর এক প্রাণকেন্দ্র থেকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ। স্বাভাবিকভাবে সারাদেশই এমন নিরাপত্তাহীনতায় হতবাক এবং আতঙ্কগ্রস্ত। প্রত্যাশিত এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি শিবির তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এবং কর্মসূচিতে তীব্রভাবে এই সৎ এবং লড়াকু নেতার প্রত্যাবর্তনের জন্য উন্মুক্ত; কিন্তু কোথায় ইলিয়াস, কেউ তার সন্ধান জানে না। যাদের হাতে রাষ্ট্র এবং জনগণের নিরাপত্তা সমর্পিত তারাও সাগর-রুনি হত্যা তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মতো আবোল-তাবোল বলায় লিপ্ত। এমনকি ইলিয়াস আলীর নিখোঁজে আওয়ামী-শিবির পর্যন্ত বিব্রত এবং শঙ্কিত। কেননা রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি একটি মারাত্মক উপসর্গ। যে হারে এ দেশে সরকারের মেয়াদে গুম-অপহরণের ঘটনা ঘটেছে এবং অপহৃতদের সন্ধান ব্যর্থ হয়েছে তা ভয়াবহ। একদিন তা যে রাজনৈতিক শূন্যতায় রূপান্তরিত হতে পারে, সে আশঙ্কায় সারাদেশ এই গুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
এমন ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে সরকারের যে প্রত্যাশিত ভূমিকা তা এড়িয়ে কর্তৃপক্ষ শুধু ফাপা আশ্বাসদানেই লিপ্ত। এ পরিপ্রেক্ষিতে কখনও কখনও মনে হবে যেন, দেশে কোনো সরকার নেই বা থাকলেও যে কারণেই হোক তাদের কর্তৃত্ব প্রতিফলিত হয় না। মাত্র এক সপ্তাহ আগে তুরস্ক থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী তার দলবল নিয়ে আবার কাতারে আঙ্কটাড সম্মেলনে। জানি না এমন রুটিন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিত্বে স্বয়ং দেশের প্রধান নির্বাহীর উপস্থিতি অপরিহার্য কি-না, তবে এ সংকটকালে জনগণ দেশের নেতৃত্বকে তাদের পথনির্দেশের জন্য দেশেই প্রত্যাশা করে। দেশে এমনিতেই রাজনৈতিক অস্থিরতা। তাতে যে এই গুমের প্রবণতা নতুন মাত্রা যোগ করবে তা নিদ্বর্িধায় বলা যায়। বিএনপি ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে যে, সরকার যতক্ষণ ইলিয়াসকে ফিরিয়ে না দেবে, লাগাতার ঘর্মঘট চলতে থাকবে। কী জানি দুর্বলতম এ সরকারে এতে কোনো দুর্বলতা নতুন করে ধরা পড়ে নাকি। এ জন্য সরকারও যে মারমুখী প্রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হবে তা তাদের শাসানিতেই বোঝা যাচ্ছে। বাংলাদেশ কি এর ফলে উদ্ভূত সহিংসতা ও অস্থিরতা সহ্য করতে পারবে? স্পষ্টই এর ফলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নতুন করে হুমকির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ : সাবেক মহাপরিচালক বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
কোথা থেকে এ বয়ান শুরু করা যায়? ক'দিন আগেকার টাকার বস্তার মাজেজা দিয়ে? প্রধানমন্ত্রী অবেলায় নিয়োগপ্রাপ্ত রেলমন্ত্রীকে তুরস্ক থেকে এসেই শাসালেন। অনেক নাটকীয়তার পর যে সুরঞ্জিতের পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না, অথচ বেশকিছু নাটকীয়তার পর পদত্যাগ করলেন, কোনো এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় তাকে আবার মন্ত্রিত্বে বরণ করলেন। ইতিমধ্যেই কিন্তু সুরঞ্জিত সেনের সততার কৌমার্য শেষ হয়েছে। তাকে এখন পুরো দেশ, জনগণ এবং সহকর্মীরা সেভাবেই অর্থাৎ ঘুষবাণিজ্যের হোতা হিসেবেই দেখবে। আমাদের এ স্বপ্নের দেশকে রাজনীতিকরা একটি 'পোড়া' দেশে পর্যবসিত করতে সক্ষম হয়েছেন, যেখানে আমাদের জীবনমান জন্তু-জানোয়ারের পর্যায়ে নেমে গেছে। দেখেছেন না, শ্রমিক মজদুরকে কীভাবে ট্রাকের মেঝেতে বা ট্রেনের ছাদে করে স্থান থেকে স্থানান্তরে নিয়ে যাওয়ায়, সড়ক বা রেলপথ দুর্ঘটনায় এদের কিছু মরে, কিছু গন্তব্যে পেঁৗছে_ এভাবেই এরা এ দেশে শুধু বেঁচে থাকতে, টিকে থাকতে জীবন-সংগ্রাম করে। তবু এদের পেটপুরে খাবার সংস্থান হয় না।
প্রাণভরে পান করার বিশুদ্ধ পানি মেলে না, বিদ্যুৎবিহীন আস্তানায় ঠাসাঠাসি করে ঘর্মাক্ত কলেবরে এদের নিদ্রার প্রয়াস। এদের কোনো বিনোদন নেই, প্রত্যাশা পূরণের সম্ভাবনা নেই। আদিম যুগে জন্তুরাও নাকি এর চেয়ে ভালো থাকত। অন্তত তাদের জন্য নিরাপত্তার কোনো হুমকি ছিল না। এখন তো এ দেশের মানুষ নিজ গৃহে, শহরে বা গঞ্জেও নিরাপদ নয়। জীবনের এত সমস্যা, অপূর্ণতা এবং অপ্রাপ্তির মধ্যে আবার 'গুম' নামের আরেক উপসর্গের প্রাদুর্ভাব। হঠাৎ করেই এ রাজধানীর এক প্রাণকেন্দ্র থেকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ। স্বাভাবিকভাবে সারাদেশই এমন নিরাপত্তাহীনতায় হতবাক এবং আতঙ্কগ্রস্ত। প্রত্যাশিত এক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি শিবির তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এবং কর্মসূচিতে তীব্রভাবে এই সৎ এবং লড়াকু নেতার প্রত্যাবর্তনের জন্য উন্মুক্ত; কিন্তু কোথায় ইলিয়াস, কেউ তার সন্ধান জানে না। যাদের হাতে রাষ্ট্র এবং জনগণের নিরাপত্তা সমর্পিত তারাও সাগর-রুনি হত্যা তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মতো আবোল-তাবোল বলায় লিপ্ত। এমনকি ইলিয়াস আলীর নিখোঁজে আওয়ামী-শিবির পর্যন্ত বিব্রত এবং শঙ্কিত। কেননা রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি একটি মারাত্মক উপসর্গ। যে হারে এ দেশে সরকারের মেয়াদে গুম-অপহরণের ঘটনা ঘটেছে এবং অপহৃতদের সন্ধান ব্যর্থ হয়েছে তা ভয়াবহ। একদিন তা যে রাজনৈতিক শূন্যতায় রূপান্তরিত হতে পারে, সে আশঙ্কায় সারাদেশ এই গুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।
এমন ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে সরকারের যে প্রত্যাশিত ভূমিকা তা এড়িয়ে কর্তৃপক্ষ শুধু ফাপা আশ্বাসদানেই লিপ্ত। এ পরিপ্রেক্ষিতে কখনও কখনও মনে হবে যেন, দেশে কোনো সরকার নেই বা থাকলেও যে কারণেই হোক তাদের কর্তৃত্ব প্রতিফলিত হয় না। মাত্র এক সপ্তাহ আগে তুরস্ক থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী তার দলবল নিয়ে আবার কাতারে আঙ্কটাড সম্মেলনে। জানি না এমন রুটিন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিত্বে স্বয়ং দেশের প্রধান নির্বাহীর উপস্থিতি অপরিহার্য কি-না, তবে এ সংকটকালে জনগণ দেশের নেতৃত্বকে তাদের পথনির্দেশের জন্য দেশেই প্রত্যাশা করে। দেশে এমনিতেই রাজনৈতিক অস্থিরতা। তাতে যে এই গুমের প্রবণতা নতুন মাত্রা যোগ করবে তা নিদ্বর্িধায় বলা যায়। বিএনপি ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে যে, সরকার যতক্ষণ ইলিয়াসকে ফিরিয়ে না দেবে, লাগাতার ঘর্মঘট চলতে থাকবে। কী জানি দুর্বলতম এ সরকারে এতে কোনো দুর্বলতা নতুন করে ধরা পড়ে নাকি। এ জন্য সরকারও যে মারমুখী প্রতিক্রিয়ায় লিপ্ত হবে তা তাদের শাসানিতেই বোঝা যাচ্ছে। বাংলাদেশ কি এর ফলে উদ্ভূত সহিংসতা ও অস্থিরতা সহ্য করতে পারবে? স্পষ্টই এর ফলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নতুন করে হুমকির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ : সাবেক মহাপরিচালক বিআইআইএসএস ও কলাম লেখক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন