সৈয়দ আবুল মকসুদ | তারিখ: ০১-০৫-২০১২
রাজনীতি একটি পেশা। তবে রাজনীতিকের পেশাটি একজন তাঁতির পেশার মতো নয়, কর্মকারের পেশার মতো নয়, সুতার-মিস্ত্রি বা ডাক্তার-কবিরাজের পেশার মতো নয়। শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতার পেশার মতোও নয় রাজনীতি। একজন তাঁতিকে উপার্জনের জন্য বসে বসে কাপড় বুনতে হয়। কর্মকারকে হাপরে লোহা গলিয়ে দা-বঁটি-খোন্তা-কুড়াল তৈরি করতে হয়। মিস্ত্রি দরজা-জানালা-আসবাবপত্র বানান। ডাক্তার-কবিরাজ রোগীর রোগ নির্ণয় করে ওষুধ দিয়ে তাকে আরোগ্য করেন। এসব কাজের জন্য তাঁরা মজুরি বা ফি পান।
রাজনীতি একটি অন্য রকম পেশা। পেশা বটে, কিন্তু জীবিকা নয়। রাজনীতি সেবামূলক পেশা। কামার-কুমার-জেলে-তাঁতি যেমন প্রতিদিন জীবিকার জন্য কামাই করেন, রাজনীতির সঙ্গে জীবিকা অর্জনের সম্পর্ক নেই। একসময় তাই ছিল। এখন অবশ্য রাজনীতি শুধু জীবিকা নয়, জীবিকার বাবা। উপার্জনের দিক থেকে আজ একজন মধ্যমশ্রেণীর রাজনীতিকের কাছে একজন মাঝারি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী কিছুই না। শিল্পপতির লোকসানের ভয় আছে, রাজনীতিকের সে শঙ্কা লেশমাত্র নেই।
প্রত্যক্ষ সাম্রাজ্যবাদী শাসন ও সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরিত্র স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক যুগের নেতৃত্ব থেকে ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় নেতারা বিদেশি শাসকদের কাছে চাইতেন কিছুটা ক্ষমতার ভাগ; আর জনগণের কাছে চাইতেন আনুগত্য। ওই ব্যবস্থায় জনগণ নেতাদের আনুগত্য প্রদর্শন করে নিজেদের ধন্য মনে করত, অন্যদিকে আনুগত্য প্রদর্শন না করেও উপায় ছিল না। নেতাদের অনেকের লক্ষ্য ছিল বড় লাটের কাউন্সিলে মেম্বার বা মন্ত্রিত্ব-জাতীয় কিছু পাওয়া—অর্থ উপার্জন নয়। বরং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সম্মান-মর্যাদা অর্জন করতে ‘তাঁরা’ অকাতরে নিজের অর্থ ব্যয় করতেন।
কংগ্রেসের প্রথম দিকের নেতারা সামন্ততান্ত্রিক নেতা ছিলেন। দাদাভাই নওরোজি, গোপালকৃষ্ণ গোখেল, বদরুদ্দিন তাইয়েবজি, ফিরোজশাহ্ মেহ্তা, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, রহিমতুল্লাহ সয়ানি, আনন্দমোহন বসু, মদনমোহন মালব্য, নবাব বাহাদুর সৈয়দ মোহাম্মদ, হাসান ইমাম, মতিলাল নেহরু প্রমুখ ছিলেন সামন্ত-পরিবারের মানুষ। কেউ বিরাট ধনী, কেউ বিখ্যাত ব্যারিস্টার, কেউ জমিদার-জায়গিরদার, কেউ পত্রিকার মালিক, বড় ব্যবসায়ী অথবা অভিজাত পরিবারের মানুষ। তাঁদের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সামান্য, শাসকদের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠতর। মহাত্মা হওয়ার আগে গান্ধীজির মতো মানবাধিকার আইনজীবীকে ফিরোজশাহ মেহ্তার সঙ্গেও দেখা করতে বেগ পেতে হয়েছে। তারপরও কংগ্রেসের ভেতরে ভিন্নমত প্রকাশের একটা পরিবেশ ছিল।
মুসলিম লিগের নেতৃত্বও ছিল একই রকম সামন্ততান্ত্রিক। কেউ নবাব বাহাদুর, কেউ সামন্তভূস্বামী, কেউ বা বড় আইনজীবী-শিল্পপতি। তবে লিগে ভিন্নমত নিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আলোচনার সুযোগ ছিল না। নেতার মতই শিরোধার্য।
সেকালের রাজনৈতিক নেতারা জেলা বোর্ড বা মিউনিসিপ্যালিটিতে নির্বাচন করা দিয়ে তাঁদের রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করতেন। তারপর কেউ যেতেন কাউন্সিলে, কেউ হতেন মন্ত্রী।
পরাধীন দেশের নেতাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশকে ধীরে ধীরে স্বশাসনের দিকে নিয়ে যাওয়া। বড় জোর মন্ত্রী পর্যন্ত হওয়া যাবে, কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। সেকালে মন্ত্রিত্ব ছিল জনসেবামূলক চাকরির মতো। তবে নেতারা জনগণের কিছু দাবিদাওয়া সরকারকে দিয়ে পূরণ করাতে চেষ্টা করতেন।
সব রাজনৈতিক নেতা জননেতা নন, কিন্তু সব জননেতাই রাজনৈতিক নেতাও। জননেতারা মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধী ভারতীয়দের অধিকার আদায়ের জন্য অহিংস সত্যাগ্রহ বা সংগ্রাম করেছেন। মওলানা ভাসানী আসামে লাইন প্রথার বিরুদ্ধে এবং বাঙাল-খেদা আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে জননেতায় পরিণত হন। বিদেশি শাসকদের বিতাড়িত করার আন্দোলন করে সুভাষচন্দ্র বসু নেতাজি হয়ে ওঠেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলা কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কিংবদন্তিতে পরিণত হন। ক্ষমতায় বসা তাঁর লক্ষ্য ছিল না। মার্টিন লুথার কিং কালোদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জননায়কে পরিণত হন এবং জীবন উৎসর্গ করেন। নিজে ক্ষমতায় যেতে চাননি, কিন্তু তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় বারাক হোসেইন ওবামার মাধ্যমে। মিয়ানমারে সু চি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। সে কারণে তিনি জননেতা। আপস করলে অনেক আগে মন্ত্রী হতেন।
সামরিক শাসন সাংবিধানিক শাসন নয়—কয়েকজন সেনাপতির খেয়ালখুশির শাসন। কিন্তু রাষ্ট্রে যদি গণতন্ত্র থাকে, তা হলে যেকোনো পেশার মানুষ জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারে। অবসর নিয়ে কোনো সেনাকর্মকর্তাও নির্বাচিত হতে পারেন। পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো দুটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সে দৃষ্টান্ত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার ছিলেন জনপ্রিয় মার্কিন রাষ্ট্রপতিদের একজন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গল ছিলেন অতি জনপ্রিয় ও সম্মানিত। আইয়ুব খানসহ কোনো সামরিক একনায়কই যত দক্ষ শাসনকর্তাই হোন, জননেতা হতে পারেননি।
গণতন্ত্রের সুবিধা ব্যবহার করে লিগ নেতারা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সামন্ত নেতৃত্ব মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেন। অ-সামন্তবাদী গণতন্ত্রপন্থী নেতারা লিগ থেকে বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে ১৯৫০-এ জমিদারি প্রথাও বাতিল হয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বে সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটলেও, কৃষক জমির মালিকানা পেলেও, তাঁর ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হলেও, সমাজব্যবস্থা থেকে যায় আধা সামন্ততান্ত্রিক। যাঁর ক্ষমতা বেশি ও যাঁর বিত্ত বেশি, তাঁর কাছে নতজানু হওয়া সামন্ততান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য।
জনগণের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলো। জনগণের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা দেখা দিল। কিন্তু সম্ভাবনাটি ফলপ্রসূ হলো না। গণতন্ত্রের বিরতিহীন চর্চা ছাড়া, নানা মতাদর্শের সমন্বয় ও সহ-অবস্থান ছাড়া জনগণের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় না। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) প্রতিষ্ঠার ভেতর দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, কিন্তু উগ্র পন্থা গ্রহণ করায় তাঁরা সে সুযোগ নস্যাৎ করে দেন। বেসামরিক সামন্ততান্ত্রিক নেতৃত্ব থেকে দেশ সামরিক একনায়কী নেতৃত্বে চলে যায়।
চতুর্থ সংশোধনীর পর গণতন্ত্র চর্চার পথ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তারও আগে ১৯৭৩- দেশের ছোট-মাঝারি দলের নেতারা উপলব্ধি করেন, নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো দন তাঁরা ক্ষমতায় যেতে পারবেন না। তখন তাঁদের সামনে খোলা ছিল তিনটি পথের যেকোনো একটি: বাকশালে যোগ দেওয়া, রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া এবং কোনো অনাগত অসাংবিধানিক সরকারকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া। সবচেয়ে সুবিধাজনক বলে তাঁরা শেষটি বেছে নেন।
তাঁরা মোশতাক-জিয়া সরকারকে সঙ্গে সঙ্গেই সমর্থন দিয়েছিলেন। ১৯৭৯-তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিল তাঁদের গণতান্ত্রিক উপায়ে আকাঙ্ক্ষা পূরণের শেষ ধাপ। ওই নির্বাচনে সদ্যজাত বিএনপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। দ্বিতীয় স্থানে আওয়ামী লীগ পায় ৩৯, মুসলিম লীগ—যা বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল—পায় ১২টি, জাসদ আটটি, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (যা ছদ্মবেশী জামায়াত) পায় আটটি, সাম্যবাদী দল, ন্যাপ (মোজাফ্ফর), একতা পার্টি প্রভৃতি দলের নেতারাও নির্বাচিত হন। সামরিক শাসক জিয়া তাঁদের এই সুযোগটা দেন, আওয়ামী লীগ থেকে তাঁরা যা কোনো দিন পেতেন না। জিয়ার কাছ থেকে ওই করুণাটুকু পাওয়ার ফলে অনেকেই সরকারে গেলেন কিন্তু জনগণের নেতা হওয়ার সুযোগটা হারালেন।
শুধু ছোট দলের নেতাদের দোষ দেওয়া যাবে না। বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী প্রথিতযশারা সামরিক একনায়ককে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী এক লেখায় ঠিকই বলেছেন, রাষ্ট্রপতি জিয়ার সামরিক পরিচয় ঘুচে গিয়েছিল, জনগণের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তার প্রমাণ মিলছিল এবং সে কারণে তিনি তাঁকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ করে নিয়ে যান। সেখানে তিনি ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে খাল খনন করেন বা মাটি-টাটি কাটেন।
সামরিক একনায়কেরা নানাভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। আইয়ুবের মতো জিয়াও শিল্পী-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠী প্রযোজিত সৈয়দ শামসুল হকের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় কোরিয়ায় পাঠাতে প্রেসিডেন্ট জিয়া শুধু অর্থ অনুদান নয়, শিল্পী ও কলাকুশলীদের বিমানে ফ্রি টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকটি তিনি নিজে বেইলি রোডে গিয়ে উপভোগ করেন। তাতে তিনি সংস্কৃতিসেবীদের কৃতজ্ঞতাভাজন হন। প্রেসিডেন্ট এরশাদও শিল্পী-সাহিত্যিকদের ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
এসবের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠার পথ কণ্টকাকীর্ণ হয়। সামন্ততান্ত্রিক ধরনের নেতৃত্ব গ্রহণযোগ্যতা পায়। ফলে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনের ভার এখন দুই পরিবারের হাতে চলে গেছে। গত ১৬-১৭ মার্চ দিল্লিতে ইন্ডিয়া টুডে আয়োজিত একান্ত বৈঠকে আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা সজীব ওয়াজেদ জয় যথার্থই বলেছেন: ‘উই হ্যাভ টু পলিটিক্যাল ডায়নেস্টিজ ইন আওয়ার কান্ট্রি। ওয়ান ইজ মাই ফ্যামিলি। দ্য আদার ওয়াজ ফাউন্ডেড বাই আওয়ার ফার্স্ট মিলিটারি ডিকটেটর।’ জনাব তারেকও সম্ভবত একই কথা বলবেন।
পারিবারিক বংশপরম্পরার শাসন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। পারিবারিক সামন্ততান্ত্রিক নেতৃত্ব যত যোগ্যই হোক, মানবকল্যাণে মাদার তেরেসার মতো ব্রতী হোক, তাঁকে জনগণের নেতা বলা যাবে না। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে দলের নেতারা শীর্ষনেতার সহকর্মী। কিন্তু সামন্ততান্ত্রিক নেতৃত্বে তাঁরা সহকর্মী নন, অধীনস্ত কর্মচারী বা হুকুমবর্দার।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ধারায় দল নয়, ডায়নেস্টি প্রধান। প্রবীণ নেতা আবদুল জলিলসহ অনেকেই এখন প্রকাশ্যে বলছেন, দলের ভেতরে কথা বললে বিপদ। তবে অসাবধানতাবশত একটি কথা তিনি স্বীকার করেছেন, একক সর্বময় নেতৃত্ব সৃষ্টিতে তাঁরা কয়েকজন সংস্কারপন্থীই প্রধান ভূমিকা পালন করেন। শুধু তাঁরা নন, কিছু প্রথিতযশা বিভিন্নজীবী ও নীতিবিদদের ভূমিকা আরও বেশি।
গণতন্ত্র একটি ডিসকোর্স বা বিতর্ক ও চিন্তাশীল বিচার-বিশ্লেষণের বিষয়—ওপর থেকে কারও চাপিয়ে দেওয়ার জিনিস নয়। কোনো প্রশ্নে ভিন্নমত পোষণ করে বিরোধিতা করা আর শ্রদ্ধাহীনতা এক কথা নয়। নেতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও আনুগত্য রেখেও ভিন্নমত দেওয়া যায়।
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অভাবে জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশে যে রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, তা-ই বর্তমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারেন জননেতারা—প্রচলিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভার শুধু নির্বাচন কমিশনের নয়। তার কাজ এক দিনেই শেষ। গণতন্ত্র শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের শাসন নয়, শুধু নেতার শাসন নয়, সবার শাসন। ছোট-বড় সব দলের অনির্বাচিত নেতাদের মতামতের মূল্য দিতে হয়। দক্ষ ও মেধাবী আমলা ও কূটনীতিকদের ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সুযোগ্য ও সৎ সামরিক কর্মকর্তাদের কাজে লাগাতে হয়। সব পেশাজীবী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, শিল্পপতির পরামর্শ ছাড়া গণতন্ত্র হয় না। অতি অল্পসংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতার দাবিও গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হয়। সেসব সমন্বয় করতে পারেন শুধু একজন জননেতা—সামন্ততান্ত্রিক নেতৃত্বের পক্ষে তা সম্ভব নয়।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
রাজনীতি একটি অন্য রকম পেশা। পেশা বটে, কিন্তু জীবিকা নয়। রাজনীতি সেবামূলক পেশা। কামার-কুমার-জেলে-তাঁতি যেমন প্রতিদিন জীবিকার জন্য কামাই করেন, রাজনীতির সঙ্গে জীবিকা অর্জনের সম্পর্ক নেই। একসময় তাই ছিল। এখন অবশ্য রাজনীতি শুধু জীবিকা নয়, জীবিকার বাবা। উপার্জনের দিক থেকে আজ একজন মধ্যমশ্রেণীর রাজনীতিকের কাছে একজন মাঝারি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী কিছুই না। শিল্পপতির লোকসানের ভয় আছে, রাজনীতিকের সে শঙ্কা লেশমাত্র নেই।
প্রত্যক্ষ সাম্রাজ্যবাদী শাসন ও সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরিত্র স্বাধীন দেশের গণতান্ত্রিক যুগের নেতৃত্ব থেকে ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় নেতারা বিদেশি শাসকদের কাছে চাইতেন কিছুটা ক্ষমতার ভাগ; আর জনগণের কাছে চাইতেন আনুগত্য। ওই ব্যবস্থায় জনগণ নেতাদের আনুগত্য প্রদর্শন করে নিজেদের ধন্য মনে করত, অন্যদিকে আনুগত্য প্রদর্শন না করেও উপায় ছিল না। নেতাদের অনেকের লক্ষ্য ছিল বড় লাটের কাউন্সিলে মেম্বার বা মন্ত্রিত্ব-জাতীয় কিছু পাওয়া—অর্থ উপার্জন নয়। বরং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সম্মান-মর্যাদা অর্জন করতে ‘তাঁরা’ অকাতরে নিজের অর্থ ব্যয় করতেন।
কংগ্রেসের প্রথম দিকের নেতারা সামন্ততান্ত্রিক নেতা ছিলেন। দাদাভাই নওরোজি, গোপালকৃষ্ণ গোখেল, বদরুদ্দিন তাইয়েবজি, ফিরোজশাহ্ মেহ্তা, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, রহিমতুল্লাহ সয়ানি, আনন্দমোহন বসু, মদনমোহন মালব্য, নবাব বাহাদুর সৈয়দ মোহাম্মদ, হাসান ইমাম, মতিলাল নেহরু প্রমুখ ছিলেন সামন্ত-পরিবারের মানুষ। কেউ বিরাট ধনী, কেউ বিখ্যাত ব্যারিস্টার, কেউ জমিদার-জায়গিরদার, কেউ পত্রিকার মালিক, বড় ব্যবসায়ী অথবা অভিজাত পরিবারের মানুষ। তাঁদের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সামান্য, শাসকদের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠতর। মহাত্মা হওয়ার আগে গান্ধীজির মতো মানবাধিকার আইনজীবীকে ফিরোজশাহ মেহ্তার সঙ্গেও দেখা করতে বেগ পেতে হয়েছে। তারপরও কংগ্রেসের ভেতরে ভিন্নমত প্রকাশের একটা পরিবেশ ছিল।
মুসলিম লিগের নেতৃত্বও ছিল একই রকম সামন্ততান্ত্রিক। কেউ নবাব বাহাদুর, কেউ সামন্তভূস্বামী, কেউ বা বড় আইনজীবী-শিল্পপতি। তবে লিগে ভিন্নমত নিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আলোচনার সুযোগ ছিল না। নেতার মতই শিরোধার্য।
সেকালের রাজনৈতিক নেতারা জেলা বোর্ড বা মিউনিসিপ্যালিটিতে নির্বাচন করা দিয়ে তাঁদের রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করতেন। তারপর কেউ যেতেন কাউন্সিলে, কেউ হতেন মন্ত্রী।
পরাধীন দেশের নেতাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশকে ধীরে ধীরে স্বশাসনের দিকে নিয়ে যাওয়া। বড় জোর মন্ত্রী পর্যন্ত হওয়া যাবে, কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। সেকালে মন্ত্রিত্ব ছিল জনসেবামূলক চাকরির মতো। তবে নেতারা জনগণের কিছু দাবিদাওয়া সরকারকে দিয়ে পূরণ করাতে চেষ্টা করতেন।
সব রাজনৈতিক নেতা জননেতা নন, কিন্তু সব জননেতাই রাজনৈতিক নেতাও। জননেতারা মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধী ভারতীয়দের অধিকার আদায়ের জন্য অহিংস সত্যাগ্রহ বা সংগ্রাম করেছেন। মওলানা ভাসানী আসামে লাইন প্রথার বিরুদ্ধে এবং বাঙাল-খেদা আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে জননেতায় পরিণত হন। বিদেশি শাসকদের বিতাড়িত করার আন্দোলন করে সুভাষচন্দ্র বসু নেতাজি হয়ে ওঠেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলা কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে কিংবদন্তিতে পরিণত হন। ক্ষমতায় বসা তাঁর লক্ষ্য ছিল না। মার্টিন লুথার কিং কালোদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জননায়কে পরিণত হন এবং জীবন উৎসর্গ করেন। নিজে ক্ষমতায় যেতে চাননি, কিন্তু তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় বারাক হোসেইন ওবামার মাধ্যমে। মিয়ানমারে সু চি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। সে কারণে তিনি জননেতা। আপস করলে অনেক আগে মন্ত্রী হতেন।
সামরিক শাসন সাংবিধানিক শাসন নয়—কয়েকজন সেনাপতির খেয়ালখুশির শাসন। কিন্তু রাষ্ট্রে যদি গণতন্ত্র থাকে, তা হলে যেকোনো পেশার মানুষ জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারে। অবসর নিয়ে কোনো সেনাকর্মকর্তাও নির্বাচিত হতে পারেন। পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো দুটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সে দৃষ্টান্ত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার ছিলেন জনপ্রিয় মার্কিন রাষ্ট্রপতিদের একজন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গল ছিলেন অতি জনপ্রিয় ও সম্মানিত। আইয়ুব খানসহ কোনো সামরিক একনায়কই যত দক্ষ শাসনকর্তাই হোন, জননেতা হতে পারেননি।
গণতন্ত্রের সুবিধা ব্যবহার করে লিগ নেতারা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সামন্ত নেতৃত্ব মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেন। অ-সামন্তবাদী গণতন্ত্রপন্থী নেতারা লিগ থেকে বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্যে ১৯৫০-এ জমিদারি প্রথাও বাতিল হয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বে সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটলেও, কৃষক জমির মালিকানা পেলেও, তাঁর ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হলেও, সমাজব্যবস্থা থেকে যায় আধা সামন্ততান্ত্রিক। যাঁর ক্ষমতা বেশি ও যাঁর বিত্ত বেশি, তাঁর কাছে নতজানু হওয়া সামন্ততান্ত্রিক সমাজের বৈশিষ্ট্য।
জনগণের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলো। জনগণের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা দেখা দিল। কিন্তু সম্ভাবনাটি ফলপ্রসূ হলো না। গণতন্ত্রের বিরতিহীন চর্চা ছাড়া, নানা মতাদর্শের সমন্বয় ও সহ-অবস্থান ছাড়া জনগণের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় না। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) প্রতিষ্ঠার ভেতর দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, কিন্তু উগ্র পন্থা গ্রহণ করায় তাঁরা সে সুযোগ নস্যাৎ করে দেন। বেসামরিক সামন্ততান্ত্রিক নেতৃত্ব থেকে দেশ সামরিক একনায়কী নেতৃত্বে চলে যায়।
চতুর্থ সংশোধনীর পর গণতন্ত্র চর্চার পথ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তারও আগে ১৯৭৩- দেশের ছোট-মাঝারি দলের নেতারা উপলব্ধি করেন, নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো দন তাঁরা ক্ষমতায় যেতে পারবেন না। তখন তাঁদের সামনে খোলা ছিল তিনটি পথের যেকোনো একটি: বাকশালে যোগ দেওয়া, রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া এবং কোনো অনাগত অসাংবিধানিক সরকারকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া। সবচেয়ে সুবিধাজনক বলে তাঁরা শেষটি বেছে নেন।
তাঁরা মোশতাক-জিয়া সরকারকে সঙ্গে সঙ্গেই সমর্থন দিয়েছিলেন। ১৯৭৯-তে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিল তাঁদের গণতান্ত্রিক উপায়ে আকাঙ্ক্ষা পূরণের শেষ ধাপ। ওই নির্বাচনে সদ্যজাত বিএনপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। দ্বিতীয় স্থানে আওয়ামী লীগ পায় ৩৯, মুসলিম লীগ—যা বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল—পায় ১২টি, জাসদ আটটি, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (যা ছদ্মবেশী জামায়াত) পায় আটটি, সাম্যবাদী দল, ন্যাপ (মোজাফ্ফর), একতা পার্টি প্রভৃতি দলের নেতারাও নির্বাচিত হন। সামরিক শাসক জিয়া তাঁদের এই সুযোগটা দেন, আওয়ামী লীগ থেকে তাঁরা যা কোনো দিন পেতেন না। জিয়ার কাছ থেকে ওই করুণাটুকু পাওয়ার ফলে অনেকেই সরকারে গেলেন কিন্তু জনগণের নেতা হওয়ার সুযোগটা হারালেন।
শুধু ছোট দলের নেতাদের দোষ দেওয়া যাবে না। বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী প্রথিতযশারা সামরিক একনায়ককে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী এক লেখায় ঠিকই বলেছেন, রাষ্ট্রপতি জিয়ার সামরিক পরিচয় ঘুচে গিয়েছিল, জনগণের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তার প্রমাণ মিলছিল এবং সে কারণে তিনি তাঁকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ করে নিয়ে যান। সেখানে তিনি ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে খাল খনন করেন বা মাটি-টাটি কাটেন।
সামরিক একনায়কেরা নানাভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। আইয়ুবের মতো জিয়াও শিল্পী-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠী প্রযোজিত সৈয়দ শামসুল হকের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় কোরিয়ায় পাঠাতে প্রেসিডেন্ট জিয়া শুধু অর্থ অনুদান নয়, শিল্পী ও কলাকুশলীদের বিমানে ফ্রি টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটকটি তিনি নিজে বেইলি রোডে গিয়ে উপভোগ করেন। তাতে তিনি সংস্কৃতিসেবীদের কৃতজ্ঞতাভাজন হন। প্রেসিডেন্ট এরশাদও শিল্পী-সাহিত্যিকদের ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
এসবের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠার পথ কণ্টকাকীর্ণ হয়। সামন্ততান্ত্রিক ধরনের নেতৃত্ব গ্রহণযোগ্যতা পায়। ফলে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনের ভার এখন দুই পরিবারের হাতে চলে গেছে। গত ১৬-১৭ মার্চ দিল্লিতে ইন্ডিয়া টুডে আয়োজিত একান্ত বৈঠকে আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা সজীব ওয়াজেদ জয় যথার্থই বলেছেন: ‘উই হ্যাভ টু পলিটিক্যাল ডায়নেস্টিজ ইন আওয়ার কান্ট্রি। ওয়ান ইজ মাই ফ্যামিলি। দ্য আদার ওয়াজ ফাউন্ডেড বাই আওয়ার ফার্স্ট মিলিটারি ডিকটেটর।’ জনাব তারেকও সম্ভবত একই কথা বলবেন।
পারিবারিক বংশপরম্পরার শাসন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। পারিবারিক সামন্ততান্ত্রিক নেতৃত্ব যত যোগ্যই হোক, মানবকল্যাণে মাদার তেরেসার মতো ব্রতী হোক, তাঁকে জনগণের নেতা বলা যাবে না। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে দলের নেতারা শীর্ষনেতার সহকর্মী। কিন্তু সামন্ততান্ত্রিক নেতৃত্বে তাঁরা সহকর্মী নন, অধীনস্ত কর্মচারী বা হুকুমবর্দার।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ধারায় দল নয়, ডায়নেস্টি প্রধান। প্রবীণ নেতা আবদুল জলিলসহ অনেকেই এখন প্রকাশ্যে বলছেন, দলের ভেতরে কথা বললে বিপদ। তবে অসাবধানতাবশত একটি কথা তিনি স্বীকার করেছেন, একক সর্বময় নেতৃত্ব সৃষ্টিতে তাঁরা কয়েকজন সংস্কারপন্থীই প্রধান ভূমিকা পালন করেন। শুধু তাঁরা নন, কিছু প্রথিতযশা বিভিন্নজীবী ও নীতিবিদদের ভূমিকা আরও বেশি।
গণতন্ত্র একটি ডিসকোর্স বা বিতর্ক ও চিন্তাশীল বিচার-বিশ্লেষণের বিষয়—ওপর থেকে কারও চাপিয়ে দেওয়ার জিনিস নয়। কোনো প্রশ্নে ভিন্নমত পোষণ করে বিরোধিতা করা আর শ্রদ্ধাহীনতা এক কথা নয়। নেতার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও আনুগত্য রেখেও ভিন্নমত দেওয়া যায়।
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অভাবে জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশে যে রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, তা-ই বর্তমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারেন জননেতারা—প্রচলিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভার শুধু নির্বাচন কমিশনের নয়। তার কাজ এক দিনেই শেষ। গণতন্ত্র শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের শাসন নয়, শুধু নেতার শাসন নয়, সবার শাসন। ছোট-বড় সব দলের অনির্বাচিত নেতাদের মতামতের মূল্য দিতে হয়। দক্ষ ও মেধাবী আমলা ও কূটনীতিকদের ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সুযোগ্য ও সৎ সামরিক কর্মকর্তাদের কাজে লাগাতে হয়। সব পেশাজীবী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী, শিল্পপতির পরামর্শ ছাড়া গণতন্ত্র হয় না। অতি অল্পসংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতার দাবিও গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হয়। সেসব সমন্বয় করতে পারেন শুধু একজন জননেতা—সামন্ততান্ত্রিক নেতৃত্বের পক্ষে তা সম্ভব নয়।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন