বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম
তারছেঁড়া বীণার মতো সব যেন কেন বেসুরা ঠেকছে। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস ভালোভাবে পালন করা হলো না, কোনো জাতীয় পত্রিকায় তেমন স্থান পেল না। এরপর মুক্তিযুদ্ধ স্থান পাবে না, তারপর স্বাধীনতা। আর একটু পর হয়তো কারও সঙ্গে গাঁটছড়া, তাহলেই সব শেষ। গাড়ির চালকসহ ইলিয়াস আলী গুম। রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের পর আবার দায়িত্বহীন অবৈধ মন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের গুলে টোকা মেরে নিজের এবং দেশের এমন সর্বনাশ করলেন, যা দেখে লিখতে তেমন অন্তরের তাগিদ পাই না।
গত ১৬ এপ্রিল সোমবার লিখেছিলাম ‘মাননীয় রেলমন্ত্রী, সময় থাকতে পদত্যাগ করুন’। বর্ষীয়ান জননেতা পদত্যাগ করে কিছুটা হালকাও হয়েছিলেন। কারণ এ উপমহাদেশে আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে রাজনৈতিক নেতাদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের খুব একটা নজির নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় এমন অনেকে আছেন, যাদের বেত মেরেও সরানো যাবে না। যা বললে বাড়ির কাজের বুয়ারা কাজ ছেড়ে চলে যাবে, তার চেয়ে শত গুণ বেশি বলার পরও মন্ত্রিসভা আঁকড়ে আছেন অনেকে। এখন সম্মানের চেয়ে পদের মোহ বেশি। আর এজন্য পদলোভীদের দোষ দেয়াও যায় না। গাছ আর পরগাছার মধ্যে এখানেই পার্থক্য। গাছ সব সময় নিজের কাণ্ডের ওপর সোজা হয়ে দাঁড়ায়। পরগাছা তা পারে না। সব সময় তাকে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। দু-একটা পরগাছা মাটি থেকে একটু-আকটু উপরে উঠলেও কাউকে জড়িয়েই উঠতে হয়। নিজের মুরোদে দু-চার-দশ ইঞ্চিও উঠতে পারে না। রাজনীতিতেও নেতা আর পাতিনেতা, রাজনৈতিক কর্মী আর কর্মচারী এক নয়। এখন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বড় অভাব। রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা যারপরনাই অবহেলিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিন্দিতও। পতিতার মতো ভ্রষ্টাদেরই এখন জয়জয়কার। পতিতাদের ভ্রষ্টা বললেও তাদের প্রতি অমর্যাদা করা হয়। তাদেরও নীতি আছে, আদর্শ আছে। তারা কেউ চুরি, ডাকাতি, খুন-খারাবি করেনি। সমাজের বঞ্চনা, অবিচার ও বৈষম্যের শিকার হয়ে যারা পতিতা হয়, তাদের চেয়ে ভ্রষ্ট রাজনৈতিক পতিতারা হাজার গুণ নিকৃষ্ট। আমি সাবেক রেলমন্ত্রী শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ এবং ঠিকানাহীন মন্ত্রী থাকার বিষয় নিয়ে আলোকপাত করছি।
বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, এটা প্রায় সবারই জানা। দুর্নীতির কথা শুনলে আগে মনটা বড় বিষিয়ে উঠত। এখন শুনতে শুনতে গা-সওয়া হয়ে গেছে। আগে নীতিবান মানুষরা অন্যকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা অপবাদ দিত না। এখন স্বার্থের কারণে অনেকেই যা ইচ্ছা তাই বলতে পারে। ক’দিন আগে তার উজ্জ্বল প্রমাণ পেয়েছি ধনকুবের আশিকুর রহমানের কাছ থেকে। পাকিস্তান হানাদারদের তস্য দালাল মুক্তিযুদ্ধের সময় টাঙ্গাইল ন্যাশনাল ব্যাংকের পাঁচ-ছয় কোটি টাকা চুরি করেছিল। সেই মানুষ এই সেদিন ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে ব্যাংকের মালিক হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা হলাম বঞ্চিত। হানাদার পাকিস্তানের সেবাদাস হয়ে আশিকুর রহমানের মতোরা হলো পুরষ্কৃত। শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মাথা থেকে পা পর্যন্ত একজন রাজনৈতিক মানুষ। একজন রাজনৈতিক মানুষের দোষ-গুণ যা থাকে, কমবেশি তারও তা আছে। তিনি একেবারে রাস্তার ফেলনা মানুষ নন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দু-চার-দশজনের পরই তালিকায় তার নাম আসবে। প্রায় পঞ্চাশ বছর রাজনীতি করে তিনি মাত্র সাড়ে চার-পাঁচ মাস মন্ত্রিত্ব করে ঘুষ কেলেঙ্কারির দায় মাথায় নিয়ে ১৬ এপ্রিল দুপুরে পদত্যাগ করেছিলেন। তার এপিএস ওমর ফারুক মাত্র ৭০ লাখ টাকা নিয়ে রাতে ঘোরাফেরা করছিল। সঙ্গে ছিল একজন জেনারেল ম্যানেজার এবং পাহারাদার হিসেবে রেল কমান্ড্যান্ট। গভীর রাতে বিজিবি গেটের ঘটনা। হুড়মুড় করে গাড়ি গিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে ঢুকল। ড্রাইভার চিত্কার করল, গাড়িতে অনেক অবৈধ টাকা আছে। সেখানে তাদের আটকে রাখা হলো, সকালে ছেড়ে দিল। কেন আটকাল, কেন ছাড়ল—সবই রহস্যাবৃত। প্রথমে বলা হলো টাকা নিয়ে মন্ত্রীর বাড়ি যাচ্ছিল। মন্ত্রী ওই সময় দশ বার ফোন করেছেন। এমনকি কোনো এক সময় তিনি বিজিবি হেডকোয়ার্টার্সেও গিয়েছিলেন, জিনিসগুলো কেমন যেন ঘোলাটে ঠেকছে।
দেশবাসীর নিশ্চয়ই মনে আছে, বিক্রমপুরের আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে যখন আন্দোলন চলছিল তখন বিএনপির কোনো নেতা সেখানকার কোনো লোকের সঙ্গে মোবাইলে কী কথা বলেছেন, মাঝেমধ্যেই দেশবাসীকে তা শোনানো হচ্ছিল। এখন তো প্রযুক্তির আরও উন্নতি হয়েছে। প্রায় দশ দিন যায়, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেই রাতে ঘুষের টাকার জন্যে দশ বার কথা বললে তার কণ্ঠ বা মোবাইল আলাপ এ ক’দিনে হাজার বার শোনানো হতো। কিন্তু এত দিনে একবারও শুনলাম না। তবে কি তিনি নির্দোষ? এসব লুটপাটের সঙ্গে বা কালো বিড়ালের সঙ্গে তার কোনো সংশ্রব নেই? বা যদি সত্যই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, এর সঙ্গে লেশমাত্র তার সংশ্রব নেই, তাহলে তিনি যে পূত-পবিত্র হয়ে রাজনীতিতে ফিরে আসতেন, তার সব পথ পদত্যাগের পরপরই আবার খামাখা, মানে দায়িত্বহীন মন্ত্রী বানিয়ে বন্ধ করে দেয়া হলো। পদত্যাগ করে জনমনে যে বিশ্বাসের সঞ্চার করেছিলেন, দফতরবিহীন ঠিকানাহীন খামাখা মন্ত্রী হয়ে ষোলো আনার স্থলে আঠারো আনা দোষের ভাগী হলেন। সেনগুপ্ত যেমন পদত্যাগ করতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী একজন জেদি মানুষ হিসেবে তাকে আবার মন্ত্রী বানাতে পারেন। কারণ মন্ত্রী বানানোর কারখানার মালিক তিনি। কিন্তু তবু কিছু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা না মেনে উপায় নেই। আপনি যখন পতাকাহীন গাড়িতে বাড়ি ফিরেছেন, তখনই আপনার আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীর শপথ এবং মন্ত্রগুপ্তি ভঙ্গ হয়ে গেছে। তাই দায়িত্বহীন ঠিকানাহীন মন্ত্রী হলেও আপনাকে আবার শপথ নিতে হবে, না হলে কোনো মতেই মন্ত্রী নন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা খুশি তা-ই করতে পারেন। কিন্তু আপনি তো সংবিধানের সব পাতা উল্টেছেন, কোথায় কী লেখা আছে তা তো আপনার না জানার কথা নয়। তাহলে এক শপথে দু’বার মন্ত্রী থাকেন কী করে? আপনি পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আবার নিশ্চয় মন্ত্রী বানাতে পারেন। কিন্তু পদত্যাগ করার পর একই শপথে মন্ত্রী রাখতে পারেন না। আপনি পদত্যাগপত্র কি প্রত্যাহার করেছেন? তা না করে ওই পদত্যাগপত্র ব্যাগে রেখে যা খুশি তাই করা যাবে না। কোনো মন্ত্রী পদত্যাগপত্র লেখার সঙ্গে সঙ্গেই তার পদ শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হুট করে বলে দিলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে যেহেতু পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়নি, তাই তিনি মন্ত্রী আছেন। এটা কোনো কথা হয় নাকি? কেউ কাজ করবেন না, তার মন্ত্রী থাকার ইচ্ছে নেই—তারপরও জোর করেই তাকে রাখবেন, এটা কেমন করে হয়?
সোহেল তাজের বাপ-চাচা দু’জনকেই মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হয়েছিল—একজন বঙ্গবন্ধুর সময়, আর একজন গতবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সময়। তবে কি জোর করে রেখে অতীতের ভুল বা খামখেয়ালির কাফ্ফারা দিতে চান? তা করারও তো একটা রীতিনীতি বিধিবিধান আছে। গায়ের জোরে তো তা করা যায় না। তদন্তে বা বিচারে এখন শতভাগ নির্দোষ প্রমাণিত হলেও মানুষ মনে করবে মন্ত্রিত্বের প্রভাব খাটিয়েছেন বা প্রভাব খেটেছে। রেলওয়ের বর্তমান মহাপরিচালক খুব একটা করিত্কর্মা বলে কখনও সুনাম অর্জন করতে পারেননি। ভদ্রলোক বলেছেন, যদি দরকার পড়ে বা প্রয়োজন হয় মন্ত্রী মহোদয়কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার মানেটা কী দাঁড়ায়? মানে হলো কেউ কিছু নয়, সবাই নাকের পশম। প্রধানমন্ত্রী নিরাপদে থাকলেই হলো। মন্ত্রীদের কেরানিরাও জিজ্ঞেস করতে পারে। আর জবানি তো একটা আছেই—আইনের চোখে সবাই সমান। চরম দুর্ভাগ্য রাজনীতিবিদদের। রাজনীতিকরা কেউ বিপদে পড়লে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়ায় না, বরং আরও বিপদে ফেলতে চেষ্টা করে। কিন্তু আমলারা বিপদে পড়লে সত্য-মিথ্যা যেভাবেই হোদের তাকে বাঁচানোর জন্যে সবাই কোমরে গামছা বেঁধে নামে। এক্ষেত্রেও তেমন হবে। এর মধ্যেই কেউ কেউ বলছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ষড়যন্ত্রের শিকার। যদি তাই হয় তাহলে অবৈধ দফতরবিহীন মন্ত্রী থেকে মারাত্মক ভুল করেছেন। পদত্যাগ তাকে যে রাজনৈতিক উচ্চতায় নিয়ে যেত প্রধানমন্ত্রী তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করে রাজনৈতিক নৈতিকতার একেবারে নিচু পর্যায়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে কীইবা বলতে পারি!
এ পৃথিবীতে যত গুণবতী রূপবতী নারীই হোন, সন্তান না হলে তাকে বন্ধ্যা বলে। মহারানী ভিক্টোরিয়া অথবা এলিজাবেথের ক্ষেত্রেও এ উদাহরণ খাটে। পৃথিবীতে স্বাভাবিকভাবে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সন্তান ধারণের কোনো উপায় নেই। শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার এপিএসের ঘুষের কেলেঙ্কারির খবর শোনামাত্র যদি এইসব কালো বিড়ালের সঙ্গে কাজ করা যায় না বলে ধিক্কার দিয়ে পদত্যাগ করতেন তাহলে এমন হতো যে—একজন বিবাহিত নারী প্রথম সন্তানসম্ভবা হলে তার শ্বশুর-শাশুড়ি, আত্মীয়-স্বজনের যে রকম গর্ব হয়, পাড়া-প্রতিবেশীদের মিষ্টি খাওয়ায়, রাজনীতির জন্য তেমন আনন্দের হতো। দেরিতে পদত্যাগ করা এবং এক দিন পর নাম-গোত্রহীন অবৈধ মন্ত্রী পদ গ্রহণ করায় এমন হয়েছে যে, কোনো সামাজিক স্বীকৃতিহীন নারী সন্তানসম্ভবা হলে যেমন মুখ লুকোবার কোনো জায়গা পায় না, সারা পৃথিবীর আলো তার কাছে অন্ধকার হয়ে যায়, ঠিক তেমনই হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ে সাত হাজার চাকরির জন্যে দু-একশ কোটির ঘুষ আদান-প্রদান যে হয়েছে, সে কথা তো মোটেই মিথ্যা নয়। সেখানে ৭০ লাখ তো কিছুই নয়। অনেকে তো এও বলাবলি করছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চাপে তাকে মন্ত্রী রাখা হয়েছে। হতেও পারে। আবার এও হতে পারে, প্রধানমন্ত্রী তাকে থলিতে ভরে রাখতেই এমনটা করেছেন। কোনটা সত্য, তা ভবিতব্যই জানে।
সেদিন সেনগুপ্তের এক প্রতিদ্বন্দ্বী বলেছেন, ছেলেবেলায় লেখাপড়ার খরচ জোটাতেও নাকি তার মা-বাবার কষ্ট হয়েছে। তাতে দোষের কী হয়েছে? দু-চার-পাঁচ বছর আগেও যারা ভাঙা কাপে চা খেতেন, ছেঁড়া স্যান্ডেল পায়ে ঘুরতেন, মালোয়েশিয়ার হোটেলে অন্যের রুমে মেঝেতে পড়ে থাকতেন, তারা যদি শত শত হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারেন, তাহলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এতদিন রাজনীতি করলেন, তার ছেলে লেখাপড়া করে চাকরি-বাকরি করে মাত্র পাঁচ কোটি টাকার একটি টেলিকম লাইসেন্স নিয়েছে তাতে কী হয়েছে? নগদ টাকা দিয়েছে, নাকি ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছে, কিছুই পরিষ্কার নয়। রাজনীতি করে বলে কি ভিক্ষে করে খেতে হবে? আগেও রাজনীতিবিদরা ফকির ছিলেন না। সেদিন দুপুরে একজনের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলাম, ’৬৮ সালে বাবা এবং বড় ভাই জেলে থাকায় টাঙ্গাইলে এক সভা করতে গিয়ে জননেতা আবদুল মান্নান বাসার খরচ চালাতে মাকে দেয়ার জন্যে আমার হাতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবিওয়ালা একশ’ টাকার কড়কড়ে পাঁচটা নোট দিয়েছিলেন। যখন এক-দেড়শ’ টাকায় গ্রামেগঞ্জে এক পাখি জমি কেনা যেত। টাঙ্গাইল শহরেও একশ’ টাকায় পাঁচ-সাত ডেসিমল জায়গা পাওয়া যেত। দিঘুলিয়া, কাগমারী, দেওলা, কোদালিয়া, ধুলেরচরে তখনও দুইশ’ টাকায় এক পাখি জমি পাওয়া যেত। যে জমির দাম এখন দেড়-দুই কোটি টাকা। তাই রাজনীতি করলেই তাকে ফকিন্নি ভাবা উচিত না। রাজনীতিবিদদেরও মান-মর্যাদা থাকতে পারে। শুধু রাজনীতিবিদরা দুর্নীতি করে, আমলারা করে না, ব্যবসায়ীরা করে না? উকিল, মোক্তার, ডাক্তার, জজ, ব্যারিস্টার, দারোগা, পুলিশ সবাই সত্। অসত্ শুধু রাজনীতিবিদ। এ ধারণার অবসান হওয়া উচিত। অযোগ্য অসত্ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে রাজনীতি পড়ে প্রকৃত রাজনীতির বারোটা বেজেছে। তাই এসব কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। এখন সময় এসেছে এসবের একটা ফয়সালা হওয়ার।
স্বাধীনতার মূল মন্ত্রই হলো নাগরিকের জানমালের হেফাজত, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নামে দেশে এসব কী হচ্ছে? প্রতিপক্ষকে গুম করার কৌশল ছিল পাকিস্তানের। আমরা তাদের উপনিবেশ ছিলাম। তারা আওয়ামী লীগের জন্মদাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে গুম করেছিল। তাই বলে এই একবিংশ শতাব্দীতে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান থাকা অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক নেতাকর্মী গুম হবে, এটা আশা করা যায় না। আর গুম হয়ে কেউ যদি জীবন হারায় তাহলে তার যা ক্ষতি হবে, তার পরিবারের যে ক্ষতি হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হবে আওয়ামী লীগের, আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার এবং তার সরকারের। গুমের রাজনীতি করে পাকিস্তান রক্ষা পায়নি। ইরানের বাদশাহ রেজা শাহ পাহলভী পাননি। ইলিয়াস আলী বিরোধীদলীয় রাজনীতি করেন বলে হারিয়ে যাবেন কেন? গণতান্ত্রিক সরকারে, গণতান্ত্রিক দেশে, গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে দেশের একটা কাকপক্ষী মারা গেলেও তার দায়ভার সরকারের ওপর বর্তায়। আর প্রধানমন্ত্রী ঘাতকের হাতে বাপ, চাচা, মা, ভাই, ভাবী হারিয়েছেন। স্বজনহারা কলিজাছেঁড়া যন্ত্রণা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে অন্যের বেশি বোঝার কথা নয়। তাহলে তার শাসনামলে অমন হবে কেন? কোথায় দুর্বলতা? তাহলে কি রাষ্ট্রযন্ত্র তার নিয়ন্ত্রণে নেই? মানবিক গুণাবলি সব কোথায় গেল?
একটা রাষ্ট্র কারও কোনো খামখেয়ালির ওপর চলে না, চলতে পারে না। এটা তো জনগণের রাষ্ট্র। জনগণের শাসন ব্যবস্থা। রাজা-বাদশাহদের আমলেও কারও সম্পূর্ণ খেয়াল-খুশিমত রাষ্ট্রযন্ত্র চলেনি। নেশায় আসক্ত মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন নুরজাহানের প্রেমে বিভোর, তার রূপগুণে বন্দি। জাহাঙ্গীরের আমলে মূলত মোগল সাম্রাজ্যের প্রায় সব কলকাঠিই নাড়াতেন সম্রাজ্ঞী নুরজাহান। তারপরও সেখানে রাষ্ট্র পরিচালনার কিছু নিয়মকানুন, নীতি-আদর্শ ছিল। আসফ খাঁর মেয়ে ইরানি সুন্দরী নুরজাহানের জন্য পাগল সম্রাটও তার বিচার করার সময় কোনোরকম দ্বিধান্বিত হননি। এ ঘটনা আমরা নিম্নশ্রেণীতে প্রায় সবাই পড়েছি—শিকারের সময় নুরজাহানের ছোড়া তীরে দূরে কোথাও এক দুখিনীর সন্তান মারা গিয়েছিল। মোগল সাম্রাজ্যে যদি অমন হতে পারে, তাহলে এখন গণতন্ত্রের যুগে কেন হবে না? বিরোধী রাজনীতি করে বলে কেউ গুম হবে, হারিয়ে যাবে আর পাওয়া যাবে না—এ তো গণতন্ত্রের জন্যে অশনি সঙ্কেত। ইলিয়াসের মতো অমন একজন রাজনৈতিক নেতা গুম হলে সাধারণ আটপৌরে মানুষের অবস্থা কী? সবাই শঙ্কিত। মানুষকে শঙ্কামুক্ত রাখা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রথম এবং প্রধান উপাদান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অনেক সময় অনেক কথাই আপনি বলেন। কোনো কোনো কথায় মানুষ ভীষণ কষ্টও পায়। তবু তাদের কিছু করার থাকে না। হাজার হলেও আপনি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। ইলিয়াস আলীর ব্যাপারে কি এই সময় ওইভাবে কথাটি না বললেই হতো না? আপনার বাবা শত্রুর জন্যও কাঁদতেন। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানে বন্দি বাঙালিদের জন্যে তার সে কী নিদারুণ উত্কণ্ঠা দেখেছি। স্বাধীন দেশে আর মারামারি-কাটাকাটি নয়, সবাই ভালোভাবে বেঁচে থাকুক—তাই যাদের সম্ভব সাধারণ ক্ষমা বা মাফ করে দিয়েছিলেন। আর আপনি তো নারী, মায়ের জাতি, সব সময় অন্যকে আঘাত দিয়ে কথা না বললে কী হয়? একটু মানবতা, একটু দরদি মনোভাব নিলে কত কী আর ক্ষতি হবে? সরকার বা দলের স্টান্ট হিসেবে নেহাতই যদি বলতে হতো নিজে নীরব থেকে অন্যকে দিয়ে বলাতেন। এত শক্ত কথা এখন না বললেই কি হতো না? আপনি তো এখন আর কোনো ব্যক্তি নন। আপনি তো দেশের প্রধান সেবক। শুধু আপনার দলের নন, গোটা দেশের। ইলিয়াসের স্ত্রীকে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম। দুই ছেলেকে বাড়ি পাইনি। কিন্তু আল্লাহর দান আমার কুশির মতো ছোট্ট মেয়ের বেদনার্ত মুখ দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। আমাদের স্বামী-স্ত্রী দু’জনের চোখে অঝোরে পানি ঝরেছে। তাই বলছি, আমি কোনো হরতাল সমর্থন করি না, কিন্তু ইলিয়াসের জন্য এ হরতাল সমর্থন না করে কোনো উপায় নেই। এ হরতাল শুধু ইলিয়াসের জন্য নয়, এটা আমার জন্য আর সন্তান-সন্ততির নিরাপত্তার জন্য, সর্বোপরি বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের জীবনের জন্য। তাই এ হরতালকে অবশ্য অবশ্যই সমর্থন করি। তাই নেত্রীর নির্দেশে ইলিয়াস পালিয়ে থাকতে পারে, আপনার কথাই যেন সত্য হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনার কথা যেন কবুল ও মঞ্জুর করেন। তবুও বেঁচে থেকে সে যেন তার সন্তান-সন্ততি আপনজনের কাছে ফিরে আসে। আপনিই জয়ী হোন। ইলিয়াস আলী এবং তার গাড়ির চালক আনসার সহি-সালামতে ঘরে ফিরুক—এটা দেশবাসীর কামনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবিনয় নিবেদন, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তো নয়ই, ইলিয়াস আলী এবং তার গাড়িচালকের ব্যাপারটি একেবারেই মানবিক দিক থেকে বিচার করুন। তা না হলে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যেহেতু আপনি প্রধানমন্ত্রী, সেহেতু নিশ্চয়ই আপনি সবার চেয়ে বেশি জানেন এবং বোঝেন। এটা তো সব সময় আপনার কথাবার্তায় বোঝাও যায়। রেলওয়ের দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করেছিলেন। আপনি কেন তাকে আবার দায়িত্বহীন মন্ত্রী বানালেন, তা আপনারই ভালো জানা। তাহলে কি শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নয়, সব দুর্নীতির সঙ্গে সরকার জড়িত? বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ ৩৩ মাস আগে পদত্যাগ করেছেন। ৩৩ মাসে সেই পদত্যাগপত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আপনার দফতর পাঠাতে পারেনি। তাই তিনি এখনও মন্ত্রী। আপনি কি ইচ্ছা করলেই কেউ কাজ না করলেও সাধারণ মানুষের রক্ত-ঘামের পয়সা এভাবে দিতে পারেন? এটা কি অযোগ্যতা নয়, ব্যর্থতা নয় বা সাদা কথায় দুর্নীতি নয়? কেউ মন্ত্রী হলে তাকে কাজ করতে হবে। এটা তো কারো পৈতৃক তালুক নয়, জনগণের দেশ। কেন আপনি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলেন না? আর যদি পদত্যাগ গ্রহণ না করে থাকেন তাহলে তিনি কেন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেন না, তার জবাব কে দেবে? আপনি যত ক্ষমতাবানই হোন ঘোড়া-গরু-গাধা-বাঘ-ভাল্লুককে পানির আধারের কাছে নিতে পারেন। সে নিজে পানি পান না করলে হিটলার হলেও তাকে জোর করে পান করাতে পারবেন না। তিনি কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব, গুরুত্বহীন মন্ত্রিত্ব করতে চান না। নিজে নিজের মতো থাকতে চান। তাহলে কেন তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে এভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করছেন? তবে কি তার বাপ-চাচাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার অপবাদ ঘোচাতে চান? সে সুযোগ এখানে কোথায়? তাই জোর মিনতি করি—দেশ এবং দেশের সংবিধান একেবারে ধ্বংস করে দেবেন না।
গত ১৬ এপ্রিল সোমবার লিখেছিলাম ‘মাননীয় রেলমন্ত্রী, সময় থাকতে পদত্যাগ করুন’। বর্ষীয়ান জননেতা পদত্যাগ করে কিছুটা হালকাও হয়েছিলেন। কারণ এ উপমহাদেশে আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে রাজনৈতিক নেতাদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের খুব একটা নজির নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় এমন অনেকে আছেন, যাদের বেত মেরেও সরানো যাবে না। যা বললে বাড়ির কাজের বুয়ারা কাজ ছেড়ে চলে যাবে, তার চেয়ে শত গুণ বেশি বলার পরও মন্ত্রিসভা আঁকড়ে আছেন অনেকে। এখন সম্মানের চেয়ে পদের মোহ বেশি। আর এজন্য পদলোভীদের দোষ দেয়াও যায় না। গাছ আর পরগাছার মধ্যে এখানেই পার্থক্য। গাছ সব সময় নিজের কাণ্ডের ওপর সোজা হয়ে দাঁড়ায়। পরগাছা তা পারে না। সব সময় তাকে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। দু-একটা পরগাছা মাটি থেকে একটু-আকটু উপরে উঠলেও কাউকে জড়িয়েই উঠতে হয়। নিজের মুরোদে দু-চার-দশ ইঞ্চিও উঠতে পারে না। রাজনীতিতেও নেতা আর পাতিনেতা, রাজনৈতিক কর্মী আর কর্মচারী এক নয়। এখন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বড় অভাব। রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা যারপরনাই অবহেলিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিন্দিতও। পতিতার মতো ভ্রষ্টাদেরই এখন জয়জয়কার। পতিতাদের ভ্রষ্টা বললেও তাদের প্রতি অমর্যাদা করা হয়। তাদেরও নীতি আছে, আদর্শ আছে। তারা কেউ চুরি, ডাকাতি, খুন-খারাবি করেনি। সমাজের বঞ্চনা, অবিচার ও বৈষম্যের শিকার হয়ে যারা পতিতা হয়, তাদের চেয়ে ভ্রষ্ট রাজনৈতিক পতিতারা হাজার গুণ নিকৃষ্ট। আমি সাবেক রেলমন্ত্রী শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ এবং ঠিকানাহীন মন্ত্রী থাকার বিষয় নিয়ে আলোকপাত করছি।
বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, এটা প্রায় সবারই জানা। দুর্নীতির কথা শুনলে আগে মনটা বড় বিষিয়ে উঠত। এখন শুনতে শুনতে গা-সওয়া হয়ে গেছে। আগে নীতিবান মানুষরা অন্যকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা অপবাদ দিত না। এখন স্বার্থের কারণে অনেকেই যা ইচ্ছা তাই বলতে পারে। ক’দিন আগে তার উজ্জ্বল প্রমাণ পেয়েছি ধনকুবের আশিকুর রহমানের কাছ থেকে। পাকিস্তান হানাদারদের তস্য দালাল মুক্তিযুদ্ধের সময় টাঙ্গাইল ন্যাশনাল ব্যাংকের পাঁচ-ছয় কোটি টাকা চুরি করেছিল। সেই মানুষ এই সেদিন ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে ব্যাংকের মালিক হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা হলাম বঞ্চিত। হানাদার পাকিস্তানের সেবাদাস হয়ে আশিকুর রহমানের মতোরা হলো পুরষ্কৃত। শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মাথা থেকে পা পর্যন্ত একজন রাজনৈতিক মানুষ। একজন রাজনৈতিক মানুষের দোষ-গুণ যা থাকে, কমবেশি তারও তা আছে। তিনি একেবারে রাস্তার ফেলনা মানুষ নন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দু-চার-দশজনের পরই তালিকায় তার নাম আসবে। প্রায় পঞ্চাশ বছর রাজনীতি করে তিনি মাত্র সাড়ে চার-পাঁচ মাস মন্ত্রিত্ব করে ঘুষ কেলেঙ্কারির দায় মাথায় নিয়ে ১৬ এপ্রিল দুপুরে পদত্যাগ করেছিলেন। তার এপিএস ওমর ফারুক মাত্র ৭০ লাখ টাকা নিয়ে রাতে ঘোরাফেরা করছিল। সঙ্গে ছিল একজন জেনারেল ম্যানেজার এবং পাহারাদার হিসেবে রেল কমান্ড্যান্ট। গভীর রাতে বিজিবি গেটের ঘটনা। হুড়মুড় করে গাড়ি গিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে ঢুকল। ড্রাইভার চিত্কার করল, গাড়িতে অনেক অবৈধ টাকা আছে। সেখানে তাদের আটকে রাখা হলো, সকালে ছেড়ে দিল। কেন আটকাল, কেন ছাড়ল—সবই রহস্যাবৃত। প্রথমে বলা হলো টাকা নিয়ে মন্ত্রীর বাড়ি যাচ্ছিল। মন্ত্রী ওই সময় দশ বার ফোন করেছেন। এমনকি কোনো এক সময় তিনি বিজিবি হেডকোয়ার্টার্সেও গিয়েছিলেন, জিনিসগুলো কেমন যেন ঘোলাটে ঠেকছে।
দেশবাসীর নিশ্চয়ই মনে আছে, বিক্রমপুরের আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে যখন আন্দোলন চলছিল তখন বিএনপির কোনো নেতা সেখানকার কোনো লোকের সঙ্গে মোবাইলে কী কথা বলেছেন, মাঝেমধ্যেই দেশবাসীকে তা শোনানো হচ্ছিল। এখন তো প্রযুক্তির আরও উন্নতি হয়েছে। প্রায় দশ দিন যায়, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেই রাতে ঘুষের টাকার জন্যে দশ বার কথা বললে তার কণ্ঠ বা মোবাইল আলাপ এ ক’দিনে হাজার বার শোনানো হতো। কিন্তু এত দিনে একবারও শুনলাম না। তবে কি তিনি নির্দোষ? এসব লুটপাটের সঙ্গে বা কালো বিড়ালের সঙ্গে তার কোনো সংশ্রব নেই? বা যদি সত্যই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, এর সঙ্গে লেশমাত্র তার সংশ্রব নেই, তাহলে তিনি যে পূত-পবিত্র হয়ে রাজনীতিতে ফিরে আসতেন, তার সব পথ পদত্যাগের পরপরই আবার খামাখা, মানে দায়িত্বহীন মন্ত্রী বানিয়ে বন্ধ করে দেয়া হলো। পদত্যাগ করে জনমনে যে বিশ্বাসের সঞ্চার করেছিলেন, দফতরবিহীন ঠিকানাহীন খামাখা মন্ত্রী হয়ে ষোলো আনার স্থলে আঠারো আনা দোষের ভাগী হলেন। সেনগুপ্ত যেমন পদত্যাগ করতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী একজন জেদি মানুষ হিসেবে তাকে আবার মন্ত্রী বানাতে পারেন। কারণ মন্ত্রী বানানোর কারখানার মালিক তিনি। কিন্তু তবু কিছু সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা না মেনে উপায় নেই। আপনি যখন পতাকাহীন গাড়িতে বাড়ি ফিরেছেন, তখনই আপনার আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীর শপথ এবং মন্ত্রগুপ্তি ভঙ্গ হয়ে গেছে। তাই দায়িত্বহীন ঠিকানাহীন মন্ত্রী হলেও আপনাকে আবার শপথ নিতে হবে, না হলে কোনো মতেই মন্ত্রী নন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা খুশি তা-ই করতে পারেন। কিন্তু আপনি তো সংবিধানের সব পাতা উল্টেছেন, কোথায় কী লেখা আছে তা তো আপনার না জানার কথা নয়। তাহলে এক শপথে দু’বার মন্ত্রী থাকেন কী করে? আপনি পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আবার নিশ্চয় মন্ত্রী বানাতে পারেন। কিন্তু পদত্যাগ করার পর একই শপথে মন্ত্রী রাখতে পারেন না। আপনি পদত্যাগপত্র কি প্রত্যাহার করেছেন? তা না করে ওই পদত্যাগপত্র ব্যাগে রেখে যা খুশি তাই করা যাবে না। কোনো মন্ত্রী পদত্যাগপত্র লেখার সঙ্গে সঙ্গেই তার পদ শূন্য হয়ে যায়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হুট করে বলে দিলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে যেহেতু পদত্যাগপত্র পাঠানো হয়নি, তাই তিনি মন্ত্রী আছেন। এটা কোনো কথা হয় নাকি? কেউ কাজ করবেন না, তার মন্ত্রী থাকার ইচ্ছে নেই—তারপরও জোর করেই তাকে রাখবেন, এটা কেমন করে হয়?
সোহেল তাজের বাপ-চাচা দু’জনকেই মন্ত্রিসভা থেকে সরানো হয়েছিল—একজন বঙ্গবন্ধুর সময়, আর একজন গতবার বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সময়। তবে কি জোর করে রেখে অতীতের ভুল বা খামখেয়ালির কাফ্ফারা দিতে চান? তা করারও তো একটা রীতিনীতি বিধিবিধান আছে। গায়ের জোরে তো তা করা যায় না। তদন্তে বা বিচারে এখন শতভাগ নির্দোষ প্রমাণিত হলেও মানুষ মনে করবে মন্ত্রিত্বের প্রভাব খাটিয়েছেন বা প্রভাব খেটেছে। রেলওয়ের বর্তমান মহাপরিচালক খুব একটা করিত্কর্মা বলে কখনও সুনাম অর্জন করতে পারেননি। ভদ্রলোক বলেছেন, যদি দরকার পড়ে বা প্রয়োজন হয় মন্ত্রী মহোদয়কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার মানেটা কী দাঁড়ায়? মানে হলো কেউ কিছু নয়, সবাই নাকের পশম। প্রধানমন্ত্রী নিরাপদে থাকলেই হলো। মন্ত্রীদের কেরানিরাও জিজ্ঞেস করতে পারে। আর জবানি তো একটা আছেই—আইনের চোখে সবাই সমান। চরম দুর্ভাগ্য রাজনীতিবিদদের। রাজনীতিকরা কেউ বিপদে পড়লে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়ায় না, বরং আরও বিপদে ফেলতে চেষ্টা করে। কিন্তু আমলারা বিপদে পড়লে সত্য-মিথ্যা যেভাবেই হোদের তাকে বাঁচানোর জন্যে সবাই কোমরে গামছা বেঁধে নামে। এক্ষেত্রেও তেমন হবে। এর মধ্যেই কেউ কেউ বলছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ষড়যন্ত্রের শিকার। যদি তাই হয় তাহলে অবৈধ দফতরবিহীন মন্ত্রী থেকে মারাত্মক ভুল করেছেন। পদত্যাগ তাকে যে রাজনৈতিক উচ্চতায় নিয়ে যেত প্রধানমন্ত্রী তাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করে রাজনৈতিক নৈতিকতার একেবারে নিচু পর্যায়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে কীইবা বলতে পারি!
এ পৃথিবীতে যত গুণবতী রূপবতী নারীই হোন, সন্তান না হলে তাকে বন্ধ্যা বলে। মহারানী ভিক্টোরিয়া অথবা এলিজাবেথের ক্ষেত্রেও এ উদাহরণ খাটে। পৃথিবীতে স্বাভাবিকভাবে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সন্তান ধারণের কোনো উপায় নেই। শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার এপিএসের ঘুষের কেলেঙ্কারির খবর শোনামাত্র যদি এইসব কালো বিড়ালের সঙ্গে কাজ করা যায় না বলে ধিক্কার দিয়ে পদত্যাগ করতেন তাহলে এমন হতো যে—একজন বিবাহিত নারী প্রথম সন্তানসম্ভবা হলে তার শ্বশুর-শাশুড়ি, আত্মীয়-স্বজনের যে রকম গর্ব হয়, পাড়া-প্রতিবেশীদের মিষ্টি খাওয়ায়, রাজনীতির জন্য তেমন আনন্দের হতো। দেরিতে পদত্যাগ করা এবং এক দিন পর নাম-গোত্রহীন অবৈধ মন্ত্রী পদ গ্রহণ করায় এমন হয়েছে যে, কোনো সামাজিক স্বীকৃতিহীন নারী সন্তানসম্ভবা হলে যেমন মুখ লুকোবার কোনো জায়গা পায় না, সারা পৃথিবীর আলো তার কাছে অন্ধকার হয়ে যায়, ঠিক তেমনই হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ে সাত হাজার চাকরির জন্যে দু-একশ কোটির ঘুষ আদান-প্রদান যে হয়েছে, সে কথা তো মোটেই মিথ্যা নয়। সেখানে ৭০ লাখ তো কিছুই নয়। অনেকে তো এও বলাবলি করছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চাপে তাকে মন্ত্রী রাখা হয়েছে। হতেও পারে। আবার এও হতে পারে, প্রধানমন্ত্রী তাকে থলিতে ভরে রাখতেই এমনটা করেছেন। কোনটা সত্য, তা ভবিতব্যই জানে।
সেদিন সেনগুপ্তের এক প্রতিদ্বন্দ্বী বলেছেন, ছেলেবেলায় লেখাপড়ার খরচ জোটাতেও নাকি তার মা-বাবার কষ্ট হয়েছে। তাতে দোষের কী হয়েছে? দু-চার-পাঁচ বছর আগেও যারা ভাঙা কাপে চা খেতেন, ছেঁড়া স্যান্ডেল পায়ে ঘুরতেন, মালোয়েশিয়ার হোটেলে অন্যের রুমে মেঝেতে পড়ে থাকতেন, তারা যদি শত শত হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারেন, তাহলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এতদিন রাজনীতি করলেন, তার ছেলে লেখাপড়া করে চাকরি-বাকরি করে মাত্র পাঁচ কোটি টাকার একটি টেলিকম লাইসেন্স নিয়েছে তাতে কী হয়েছে? নগদ টাকা দিয়েছে, নাকি ব্যাংক গ্যারান্টি দিয়েছে, কিছুই পরিষ্কার নয়। রাজনীতি করে বলে কি ভিক্ষে করে খেতে হবে? আগেও রাজনীতিবিদরা ফকির ছিলেন না। সেদিন দুপুরে একজনের সঙ্গে আলাপকালে বলেছিলাম, ’৬৮ সালে বাবা এবং বড় ভাই জেলে থাকায় টাঙ্গাইলে এক সভা করতে গিয়ে জননেতা আবদুল মান্নান বাসার খরচ চালাতে মাকে দেয়ার জন্যে আমার হাতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছবিওয়ালা একশ’ টাকার কড়কড়ে পাঁচটা নোট দিয়েছিলেন। যখন এক-দেড়শ’ টাকায় গ্রামেগঞ্জে এক পাখি জমি কেনা যেত। টাঙ্গাইল শহরেও একশ’ টাকায় পাঁচ-সাত ডেসিমল জায়গা পাওয়া যেত। দিঘুলিয়া, কাগমারী, দেওলা, কোদালিয়া, ধুলেরচরে তখনও দুইশ’ টাকায় এক পাখি জমি পাওয়া যেত। যে জমির দাম এখন দেড়-দুই কোটি টাকা। তাই রাজনীতি করলেই তাকে ফকিন্নি ভাবা উচিত না। রাজনীতিবিদদেরও মান-মর্যাদা থাকতে পারে। শুধু রাজনীতিবিদরা দুর্নীতি করে, আমলারা করে না, ব্যবসায়ীরা করে না? উকিল, মোক্তার, ডাক্তার, জজ, ব্যারিস্টার, দারোগা, পুলিশ সবাই সত্। অসত্ শুধু রাজনীতিবিদ। এ ধারণার অবসান হওয়া উচিত। অযোগ্য অসত্ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে রাজনীতি পড়ে প্রকৃত রাজনীতির বারোটা বেজেছে। তাই এসব কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। এখন সময় এসেছে এসবের একটা ফয়সালা হওয়ার।
স্বাধীনতার মূল মন্ত্রই হলো নাগরিকের জানমালের হেফাজত, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নামে দেশে এসব কী হচ্ছে? প্রতিপক্ষকে গুম করার কৌশল ছিল পাকিস্তানের। আমরা তাদের উপনিবেশ ছিলাম। তারা আওয়ামী লীগের জন্মদাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে গুম করেছিল। তাই বলে এই একবিংশ শতাব্দীতে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান থাকা অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক নেতাকর্মী গুম হবে, এটা আশা করা যায় না। আর গুম হয়ে কেউ যদি জীবন হারায় তাহলে তার যা ক্ষতি হবে, তার পরিবারের যে ক্ষতি হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হবে আওয়ামী লীগের, আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার এবং তার সরকারের। গুমের রাজনীতি করে পাকিস্তান রক্ষা পায়নি। ইরানের বাদশাহ রেজা শাহ পাহলভী পাননি। ইলিয়াস আলী বিরোধীদলীয় রাজনীতি করেন বলে হারিয়ে যাবেন কেন? গণতান্ত্রিক সরকারে, গণতান্ত্রিক দেশে, গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে দেশের একটা কাকপক্ষী মারা গেলেও তার দায়ভার সরকারের ওপর বর্তায়। আর প্রধানমন্ত্রী ঘাতকের হাতে বাপ, চাচা, মা, ভাই, ভাবী হারিয়েছেন। স্বজনহারা কলিজাছেঁড়া যন্ত্রণা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে অন্যের বেশি বোঝার কথা নয়। তাহলে তার শাসনামলে অমন হবে কেন? কোথায় দুর্বলতা? তাহলে কি রাষ্ট্রযন্ত্র তার নিয়ন্ত্রণে নেই? মানবিক গুণাবলি সব কোথায় গেল?
একটা রাষ্ট্র কারও কোনো খামখেয়ালির ওপর চলে না, চলতে পারে না। এটা তো জনগণের রাষ্ট্র। জনগণের শাসন ব্যবস্থা। রাজা-বাদশাহদের আমলেও কারও সম্পূর্ণ খেয়াল-খুশিমত রাষ্ট্রযন্ত্র চলেনি। নেশায় আসক্ত মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন নুরজাহানের প্রেমে বিভোর, তার রূপগুণে বন্দি। জাহাঙ্গীরের আমলে মূলত মোগল সাম্রাজ্যের প্রায় সব কলকাঠিই নাড়াতেন সম্রাজ্ঞী নুরজাহান। তারপরও সেখানে রাষ্ট্র পরিচালনার কিছু নিয়মকানুন, নীতি-আদর্শ ছিল। আসফ খাঁর মেয়ে ইরানি সুন্দরী নুরজাহানের জন্য পাগল সম্রাটও তার বিচার করার সময় কোনোরকম দ্বিধান্বিত হননি। এ ঘটনা আমরা নিম্নশ্রেণীতে প্রায় সবাই পড়েছি—শিকারের সময় নুরজাহানের ছোড়া তীরে দূরে কোথাও এক দুখিনীর সন্তান মারা গিয়েছিল। মোগল সাম্রাজ্যে যদি অমন হতে পারে, তাহলে এখন গণতন্ত্রের যুগে কেন হবে না? বিরোধী রাজনীতি করে বলে কেউ গুম হবে, হারিয়ে যাবে আর পাওয়া যাবে না—এ তো গণতন্ত্রের জন্যে অশনি সঙ্কেত। ইলিয়াসের মতো অমন একজন রাজনৈতিক নেতা গুম হলে সাধারণ আটপৌরে মানুষের অবস্থা কী? সবাই শঙ্কিত। মানুষকে শঙ্কামুক্ত রাখা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রথম এবং প্রধান উপাদান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অনেক সময় অনেক কথাই আপনি বলেন। কোনো কোনো কথায় মানুষ ভীষণ কষ্টও পায়। তবু তাদের কিছু করার থাকে না। হাজার হলেও আপনি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। ইলিয়াস আলীর ব্যাপারে কি এই সময় ওইভাবে কথাটি না বললেই হতো না? আপনার বাবা শত্রুর জন্যও কাঁদতেন। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানে বন্দি বাঙালিদের জন্যে তার সে কী নিদারুণ উত্কণ্ঠা দেখেছি। স্বাধীন দেশে আর মারামারি-কাটাকাটি নয়, সবাই ভালোভাবে বেঁচে থাকুক—তাই যাদের সম্ভব সাধারণ ক্ষমা বা মাফ করে দিয়েছিলেন। আর আপনি তো নারী, মায়ের জাতি, সব সময় অন্যকে আঘাত দিয়ে কথা না বললে কী হয়? একটু মানবতা, একটু দরদি মনোভাব নিলে কত কী আর ক্ষতি হবে? সরকার বা দলের স্টান্ট হিসেবে নেহাতই যদি বলতে হতো নিজে নীরব থেকে অন্যকে দিয়ে বলাতেন। এত শক্ত কথা এখন না বললেই কি হতো না? আপনি তো এখন আর কোনো ব্যক্তি নন। আপনি তো দেশের প্রধান সেবক। শুধু আপনার দলের নন, গোটা দেশের। ইলিয়াসের স্ত্রীকে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম। দুই ছেলেকে বাড়ি পাইনি। কিন্তু আল্লাহর দান আমার কুশির মতো ছোট্ট মেয়ের বেদনার্ত মুখ দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। আমাদের স্বামী-স্ত্রী দু’জনের চোখে অঝোরে পানি ঝরেছে। তাই বলছি, আমি কোনো হরতাল সমর্থন করি না, কিন্তু ইলিয়াসের জন্য এ হরতাল সমর্থন না করে কোনো উপায় নেই। এ হরতাল শুধু ইলিয়াসের জন্য নয়, এটা আমার জন্য আর সন্তান-সন্ততির নিরাপত্তার জন্য, সর্বোপরি বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের জীবনের জন্য। তাই এ হরতালকে অবশ্য অবশ্যই সমর্থন করি। তাই নেত্রীর নির্দেশে ইলিয়াস পালিয়ে থাকতে পারে, আপনার কথাই যেন সত্য হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনার কথা যেন কবুল ও মঞ্জুর করেন। তবুও বেঁচে থেকে সে যেন তার সন্তান-সন্ততি আপনজনের কাছে ফিরে আসে। আপনিই জয়ী হোন। ইলিয়াস আলী এবং তার গাড়ির চালক আনসার সহি-সালামতে ঘরে ফিরুক—এটা দেশবাসীর কামনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবিনয় নিবেদন, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তো নয়ই, ইলিয়াস আলী এবং তার গাড়িচালকের ব্যাপারটি একেবারেই মানবিক দিক থেকে বিচার করুন। তা না হলে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যেহেতু আপনি প্রধানমন্ত্রী, সেহেতু নিশ্চয়ই আপনি সবার চেয়ে বেশি জানেন এবং বোঝেন। এটা তো সব সময় আপনার কথাবার্তায় বোঝাও যায়। রেলওয়ের দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পদত্যাগ করেছিলেন। আপনি কেন তাকে আবার দায়িত্বহীন মন্ত্রী বানালেন, তা আপনারই ভালো জানা। তাহলে কি শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নয়, সব দুর্নীতির সঙ্গে সরকার জড়িত? বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে সোহেল তাজ ৩৩ মাস আগে পদত্যাগ করেছেন। ৩৩ মাসে সেই পদত্যাগপত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আপনার দফতর পাঠাতে পারেনি। তাই তিনি এখনও মন্ত্রী। আপনি কি ইচ্ছা করলেই কেউ কাজ না করলেও সাধারণ মানুষের রক্ত-ঘামের পয়সা এভাবে দিতে পারেন? এটা কি অযোগ্যতা নয়, ব্যর্থতা নয় বা সাদা কথায় দুর্নীতি নয়? কেউ মন্ত্রী হলে তাকে কাজ করতে হবে। এটা তো কারো পৈতৃক তালুক নয়, জনগণের দেশ। কেন আপনি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলেন না? আর যদি পদত্যাগ গ্রহণ না করে থাকেন তাহলে তিনি কেন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেন না, তার জবাব কে দেবে? আপনি যত ক্ষমতাবানই হোন ঘোড়া-গরু-গাধা-বাঘ-ভাল্লুককে পানির আধারের কাছে নিতে পারেন। সে নিজে পানি পান না করলে হিটলার হলেও তাকে জোর করে পান করাতে পারবেন না। তিনি কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব, গুরুত্বহীন মন্ত্রিত্ব করতে চান না। নিজে নিজের মতো থাকতে চান। তাহলে কেন তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে এভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করছেন? তবে কি তার বাপ-চাচাকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার অপবাদ ঘোচাতে চান? সে সুযোগ এখানে কোথায়? তাই জোর মিনতি করি—দেশ এবং দেশের সংবিধান একেবারে ধ্বংস করে দেবেন না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন