॥ এম. আবদুল হাফিজ ॥
বিষয়টা কতকটা পায়রার ঝাঁকে বিড়াল ছেড়ে দেয়ার মতো। ঠিক যখন ইসরাইল বিষয়টা ঘটাচ্ছিল পৃথিবীময় এই চিৎকারে যে, ইরান তাবৎ বিশ্বে তাদের শান্তিপ্রিয় কূটনীতিকদের তাক করছে, ইরানের আয়াতুল্লাহরা উপস'াপন করেন তাদের শ্বাসরুদ্ধকর নাটিকা। এমন নয় যে, এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ পূর্বাহ্নেই সতর্ক করেননি। সব সময়ের মতো তিনি সবাইকে তার পারমাণবিক ফ্রন্টের আগাম সুসংবাদ অবহিত করে রেখেছেন। তা সত্ত্বেও এ ছিল কূটনীতির এক অতি নিপুণ নিদর্শন। ইসরাইলিরা তাদের চতুরতা ও কোনো কিছুকে অস্বচ্ছ করে দেয়ায় পারদর্শী ও দক্ষ। তবে মস্তিষ্কের খেলায় ইরানিদের ডিঙিয়ে যাওয়া কঠিন। যা-ই হোক, এরাই তো দাবা খেলার প্রবর্তন করেছিল।
পাশ্চাত্যের দীর্ঘ অবরোধ এবং ইসরাইলের যুদ্ধের হুমকি ও অস্ত্রের ঝনঝনানি উপেক্ষা করে ইরানিরা সম্ভবত তাদের লক্ষ্যের দিকে আরেকটি চূড়ান্ত পদক্ষেপ ফেলতে পেরেছে। ইত্যবসরে এরা দাবা খেলার বোড়েসহ চালের খেলাড়িগুলোকে নিজ নিজ স'ানেও বসিয়েছে। শত ধান্ধা দিয়ে এবং তর্জন গর্জন করেও ইসরাইল এখন আর কিছু করতে পারবে না। ইরানে নিযুক্ত ভারতের এক সাবেক রাষ্ট্রদূতের উক্তি মোতাবেক ইরানের এ খেলা ক্লাসিক ইরানি ধাঁধা। ইরান এক পা সামনে এগোয়, অপেক্ষা করে এবং আরেক সতর্ক পদক্ষেপ নেয়ার আগে প্রতিপক্ষের প্রতিক্রিয়া দেখে। বলতে পারেন এটা এক ধরনের ইরানি পরিবর্ধন (incrementalism) অথবা অন্য কিছু। কিন' এই নীতি ফল দিয়েছে।
সুচিন্তিত এবং পূর্বপরিকল্পিত ‘কূটনৈতিক ঘটনা’- দিল্লি, ব্যাংকক ও জর্জিয়ায় এক কথায় দীপ্যমান। এগুলোর উদ্দেশ্যই ছিল এক ঢিলে একাধিক পাখি মারতে পারা, ইরানকে দোষারোপ করা। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অবিকল তাই করেছেন। দিল্লি বিস্ফোরণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি তেহরানকে সন্ত্রাসের সর্ববৃহৎ রফতানিকারক বলেছেন। এই বলার পেছনের উদ্দেশ্য হলো, অচিরেই অনিবার্যভাবে ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে আঘাত হানার ক্ষেত্র প্রস'ত করা।
দ্বিতীয়ত নেতানিয়াহুর বক্তব্যের এটাও উদ্দেশ্য যে, ভারতের সাথে ইরানের চলমান সুসম্পর্কের অবসান ঘটুক। আমেরিকা ও ইসরাইল কেউ ইরানের কাছ থেকে ভারতের জ্বালানি ক্রয় সুনজরে দেখে না। উল্লেখ্য, ভারত পাশ্চাত্য আরোপিত অবরোধকে উপেক্ষা করেই ইরানি তেল ক্রয় করছে। এই অবরোধ উপেক্ষার দলে শুধু ভারতই নয়, চীন, জাপান ও কোরিয়াও এ ক্ষেত্রে পশ্চিমানীতি মানতে চাইছে না। তবে ইসরাইল নিজ অবস'ানেই রয়েছে। কিন' তার চাতুর্য এখন আর বিশ্বকে বোকা বানাতে পারে না। ইসরাইলের ব্যাপারে বৈরী অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও ইরানিরা নির্বোধ নয়।
এমন একটি সময়ে যখন ইরান কার্যত আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং পাশ্চাত্য তাকে শাস্তি দিতে ছলছুতোর অপেক্ষায়, তখন কেনই বা তারা (ইরানিরা) আত্মঘাতী সন্ত্রাসে নেমেছে? জন হেপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানি বিশেষজ্ঞ এবং Treacherous Alliance: The secret Dealings of Iran, Israel and United states গ্রন'টির লেখক ড. ত্রিতা পার্শির বক্তব্য অনুযায়ী, কেন ইরানিরা দিল্লিতে এমন নির্বোধ কাজ করবে! ভারত তো চীনের পরই ইরানের সর্ববৃহৎ ট্রেডিং পার্টনার এবং ইরান থেকে জ্বালানির আমদানিকারক। এ ছাড়া রুশরা আফগানিস্তান থেকে মুজাহিদিন প্রতিরোধের সৈন্য প্রত্যাহার করলে ভারত ও ইরান সেখানে একটি অঘোষিত অংশীদারিত্বে লিপ্ত হয়েছিল। যদিও ভারত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস'ার (আইএইএ) ফোরামে ইরানের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল তার তিক্ততাও ইতোমধ্যে কেটে গেছে। উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডও ইরানের আরেকটি ট্রেডিং পার্টনার। তাই প্রশ্ন ওঠে, ইরানিরা তবে কেন সুদূর ভারত ও থাইল্যান্ডে ইসরাইলিদের সাথে তাদের বিরোধের চেষ্টা করবে, যা অবাস্তব। কারণ এতে তাদের (ইরানিদের) নিজেদের স্বার্থই ক্ষুণ্ন্ন হবে।
তা ছাড়া ভারত ও থাইল্যান্ডে ইসরাইলিরাই সর্বপ্রথম নাশকতার ঘোষণা দেয় এবং এ-ও জানায় যে, দিল্লি, ব্যাংকক ও তিবলিসে (জর্জিয়ায়) যে বোমা ব্যবহৃত হয়েছে, ওই একই ধরনের বোমায় গত দুই বছরে চারজন ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে। এ কথা সত্য হোক বা মিথ্যা হোক, এসব ঘটনার সাথে তেহরানের কী সংযোগ থাকতে পারে? এ-ও তো হতে পারে, একই চাতুরীকে ইরানিদের বিরুদ্ধে সাফল্যের সাথে কাজে লাগিয়ে ওই একই কৌশলকে দিল্লি, ব্যাংকক বা তিবলিসে কাজে লাগাতে পারে খোদ ইসরাইলই। বিস্ফোরক ব্যবহারের সময় এক পা হারানো এক ইরানিকে প্রমাণস্বরূপ আটকে রাখারও কোনো অর্থ নেই। এতে কিছুই প্রমাণিত হয় না। এটি তো একটি ওপেনসিক্রেট যে ইসরাইল ও মার্কিনিরা ‘মুজাহিদিন-এ-খালক’ সংগঠনের সন্ত্রাসীদের ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে। উল্লেখ্য, বামপন'ী খালক সদস্যদের আয়াতুল্লাহ্রা প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।
ইসরাইলি দূতাবাস নয়াদিল্লির আওরঙ্গজেব রোডে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে ‘পাথর ছোড়ার দূরত্বে’। এটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তার এলাকা। কী করে সম্ভব যে, এমন স'ানে একটি লাল বাইক এত সন্নিকটে এসে দূতাবাসের গাড়িতে বিস্ফোরক লাগাতে পারল? আশ্চর্য নয় যে, ইসরাইলের পর্যবেক্ষকদের জন্য এ সবই কল্পনাপ্রসূত, যাতে শ্বাসরুদ্ধকরভাবে প্রতীক্ষিত ইরান যুদ্ধের যৌক্তিকতাকে আরো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানো যায়। মার্কিন এস্ট্যাব্লিশমেন্টে ইসরাইলি সমর্থকেরা যে পাশ্চাত্যের আরেকটি যুদ্ধ আরেকটি তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে শুরু করতে আগ্রহী, তারই কিছু সঙ্কেত পাওয়া যায়- দিল্লি, ব্যাংকক বা তিবলিসের রহস্যজনক বিস্ফোরণে। ইরাক যুদ্ধের সূচনাপর্বও এমনই ছিল।
তবে পাশ্চাত্য ক্রমেই অবরোধ আরোপ করে, ট্রেড ব্লকেড সৃষ্টি করে ও অবিরাম ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য ইরান যুদ্ধের উত্তাপকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। সমগ্র অঞ্চলই এখন যাকে বলে Razor's edge -এ অবস'ান করছে। এখন দরকার শুধু ছোট্ট একটি স্ফুলিঙ্গের। তা আসতে পারে তুচ্ছ কোনো উত্তেজক ঘটনায় বা কোনো ভুল বোঝাবুঝির মধ্য দিয়ে। ইরাকের ওসিরাকে ১৯৮১ সালে ইসরাইলের দুঃসাহসিক হামলা অবশ্য ইরানের শক্তিশালী পারমাণবিক চুল্লিতে সুরক্ষাধীন নিরাপদ ভূগর্ভস' স'াপনায়- তা-ও আবার দেশময় বিক্ষিপ্ত- সম্ভব নয়।
ইরান এখন পারমাণবিকীকরণের সামান্য দূরে। আক্রান্ত হলে তার স্ক্রু ঘুরিয়ে দিতে সময় লাগবে না। কিন' সেই স্ক্রুকে স্বস'ানে ফিরিয়ে আনার অবকাশ আর হয়তো হবে না।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এবং
নিরাপত্তা, রাজনীতি, বৈদেশিক নীতি
ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক
বিষয়টা কতকটা পায়রার ঝাঁকে বিড়াল ছেড়ে দেয়ার মতো। ঠিক যখন ইসরাইল বিষয়টা ঘটাচ্ছিল পৃথিবীময় এই চিৎকারে যে, ইরান তাবৎ বিশ্বে তাদের শান্তিপ্রিয় কূটনীতিকদের তাক করছে, ইরানের আয়াতুল্লাহরা উপস'াপন করেন তাদের শ্বাসরুদ্ধকর নাটিকা। এমন নয় যে, এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ পূর্বাহ্নেই সতর্ক করেননি। সব সময়ের মতো তিনি সবাইকে তার পারমাণবিক ফ্রন্টের আগাম সুসংবাদ অবহিত করে রেখেছেন। তা সত্ত্বেও এ ছিল কূটনীতির এক অতি নিপুণ নিদর্শন। ইসরাইলিরা তাদের চতুরতা ও কোনো কিছুকে অস্বচ্ছ করে দেয়ায় পারদর্শী ও দক্ষ। তবে মস্তিষ্কের খেলায় ইরানিদের ডিঙিয়ে যাওয়া কঠিন। যা-ই হোক, এরাই তো দাবা খেলার প্রবর্তন করেছিল।
পাশ্চাত্যের দীর্ঘ অবরোধ এবং ইসরাইলের যুদ্ধের হুমকি ও অস্ত্রের ঝনঝনানি উপেক্ষা করে ইরানিরা সম্ভবত তাদের লক্ষ্যের দিকে আরেকটি চূড়ান্ত পদক্ষেপ ফেলতে পেরেছে। ইত্যবসরে এরা দাবা খেলার বোড়েসহ চালের খেলাড়িগুলোকে নিজ নিজ স'ানেও বসিয়েছে। শত ধান্ধা দিয়ে এবং তর্জন গর্জন করেও ইসরাইল এখন আর কিছু করতে পারবে না। ইরানে নিযুক্ত ভারতের এক সাবেক রাষ্ট্রদূতের উক্তি মোতাবেক ইরানের এ খেলা ক্লাসিক ইরানি ধাঁধা। ইরান এক পা সামনে এগোয়, অপেক্ষা করে এবং আরেক সতর্ক পদক্ষেপ নেয়ার আগে প্রতিপক্ষের প্রতিক্রিয়া দেখে। বলতে পারেন এটা এক ধরনের ইরানি পরিবর্ধন (incrementalism) অথবা অন্য কিছু। কিন' এই নীতি ফল দিয়েছে।
সুচিন্তিত এবং পূর্বপরিকল্পিত ‘কূটনৈতিক ঘটনা’- দিল্লি, ব্যাংকক ও জর্জিয়ায় এক কথায় দীপ্যমান। এগুলোর উদ্দেশ্যই ছিল এক ঢিলে একাধিক পাখি মারতে পারা, ইরানকে দোষারোপ করা। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অবিকল তাই করেছেন। দিল্লি বিস্ফোরণের কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি তেহরানকে সন্ত্রাসের সর্ববৃহৎ রফতানিকারক বলেছেন। এই বলার পেছনের উদ্দেশ্য হলো, অচিরেই অনিবার্যভাবে ইরানের ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে আঘাত হানার ক্ষেত্র প্রস'ত করা।
দ্বিতীয়ত নেতানিয়াহুর বক্তব্যের এটাও উদ্দেশ্য যে, ভারতের সাথে ইরানের চলমান সুসম্পর্কের অবসান ঘটুক। আমেরিকা ও ইসরাইল কেউ ইরানের কাছ থেকে ভারতের জ্বালানি ক্রয় সুনজরে দেখে না। উল্লেখ্য, ভারত পাশ্চাত্য আরোপিত অবরোধকে উপেক্ষা করেই ইরানি তেল ক্রয় করছে। এই অবরোধ উপেক্ষার দলে শুধু ভারতই নয়, চীন, জাপান ও কোরিয়াও এ ক্ষেত্রে পশ্চিমানীতি মানতে চাইছে না। তবে ইসরাইল নিজ অবস'ানেই রয়েছে। কিন' তার চাতুর্য এখন আর বিশ্বকে বোকা বানাতে পারে না। ইসরাইলের ব্যাপারে বৈরী অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও ইরানিরা নির্বোধ নয়।
এমন একটি সময়ে যখন ইরান কার্যত আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং পাশ্চাত্য তাকে শাস্তি দিতে ছলছুতোর অপেক্ষায়, তখন কেনই বা তারা (ইরানিরা) আত্মঘাতী সন্ত্রাসে নেমেছে? জন হেপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইরানি বিশেষজ্ঞ এবং Treacherous Alliance: The secret Dealings of Iran, Israel and United states গ্রন'টির লেখক ড. ত্রিতা পার্শির বক্তব্য অনুযায়ী, কেন ইরানিরা দিল্লিতে এমন নির্বোধ কাজ করবে! ভারত তো চীনের পরই ইরানের সর্ববৃহৎ ট্রেডিং পার্টনার এবং ইরান থেকে জ্বালানির আমদানিকারক। এ ছাড়া রুশরা আফগানিস্তান থেকে মুজাহিদিন প্রতিরোধের সৈন্য প্রত্যাহার করলে ভারত ও ইরান সেখানে একটি অঘোষিত অংশীদারিত্বে লিপ্ত হয়েছিল। যদিও ভারত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস'ার (আইএইএ) ফোরামে ইরানের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল তার তিক্ততাও ইতোমধ্যে কেটে গেছে। উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডও ইরানের আরেকটি ট্রেডিং পার্টনার। তাই প্রশ্ন ওঠে, ইরানিরা তবে কেন সুদূর ভারত ও থাইল্যান্ডে ইসরাইলিদের সাথে তাদের বিরোধের চেষ্টা করবে, যা অবাস্তব। কারণ এতে তাদের (ইরানিদের) নিজেদের স্বার্থই ক্ষুণ্ন্ন হবে।
তা ছাড়া ভারত ও থাইল্যান্ডে ইসরাইলিরাই সর্বপ্রথম নাশকতার ঘোষণা দেয় এবং এ-ও জানায় যে, দিল্লি, ব্যাংকক ও তিবলিসে (জর্জিয়ায়) যে বোমা ব্যবহৃত হয়েছে, ওই একই ধরনের বোমায় গত দুই বছরে চারজন ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে। এ কথা সত্য হোক বা মিথ্যা হোক, এসব ঘটনার সাথে তেহরানের কী সংযোগ থাকতে পারে? এ-ও তো হতে পারে, একই চাতুরীকে ইরানিদের বিরুদ্ধে সাফল্যের সাথে কাজে লাগিয়ে ওই একই কৌশলকে দিল্লি, ব্যাংকক বা তিবলিসে কাজে লাগাতে পারে খোদ ইসরাইলই। বিস্ফোরক ব্যবহারের সময় এক পা হারানো এক ইরানিকে প্রমাণস্বরূপ আটকে রাখারও কোনো অর্থ নেই। এতে কিছুই প্রমাণিত হয় না। এটি তো একটি ওপেনসিক্রেট যে ইসরাইল ও মার্কিনিরা ‘মুজাহিদিন-এ-খালক’ সংগঠনের সন্ত্রাসীদের ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে। উল্লেখ্য, বামপন'ী খালক সদস্যদের আয়াতুল্লাহ্রা প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।
ইসরাইলি দূতাবাস নয়াদিল্লির আওরঙ্গজেব রোডে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে ‘পাথর ছোড়ার দূরত্বে’। এটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তার এলাকা। কী করে সম্ভব যে, এমন স'ানে একটি লাল বাইক এত সন্নিকটে এসে দূতাবাসের গাড়িতে বিস্ফোরক লাগাতে পারল? আশ্চর্য নয় যে, ইসরাইলের পর্যবেক্ষকদের জন্য এ সবই কল্পনাপ্রসূত, যাতে শ্বাসরুদ্ধকরভাবে প্রতীক্ষিত ইরান যুদ্ধের যৌক্তিকতাকে আরো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানো যায়। মার্কিন এস্ট্যাব্লিশমেন্টে ইসরাইলি সমর্থকেরা যে পাশ্চাত্যের আরেকটি যুদ্ধ আরেকটি তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে শুরু করতে আগ্রহী, তারই কিছু সঙ্কেত পাওয়া যায়- দিল্লি, ব্যাংকক বা তিবলিসের রহস্যজনক বিস্ফোরণে। ইরাক যুদ্ধের সূচনাপর্বও এমনই ছিল।
তবে পাশ্চাত্য ক্রমেই অবরোধ আরোপ করে, ট্রেড ব্লকেড সৃষ্টি করে ও অবিরাম ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য ইরান যুদ্ধের উত্তাপকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। সমগ্র অঞ্চলই এখন যাকে বলে Razor's edge -এ অবস'ান করছে। এখন দরকার শুধু ছোট্ট একটি স্ফুলিঙ্গের। তা আসতে পারে তুচ্ছ কোনো উত্তেজক ঘটনায় বা কোনো ভুল বোঝাবুঝির মধ্য দিয়ে। ইরাকের ওসিরাকে ১৯৮১ সালে ইসরাইলের দুঃসাহসিক হামলা অবশ্য ইরানের শক্তিশালী পারমাণবিক চুল্লিতে সুরক্ষাধীন নিরাপদ ভূগর্ভস' স'াপনায়- তা-ও আবার দেশময় বিক্ষিপ্ত- সম্ভব নয়।
ইরান এখন পারমাণবিকীকরণের সামান্য দূরে। আক্রান্ত হলে তার স্ক্রু ঘুরিয়ে দিতে সময় লাগবে না। কিন' সেই স্ক্রুকে স্বস'ানে ফিরিয়ে আনার অবকাশ আর হয়তো হবে না।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার এবং
নিরাপত্তা, রাজনীতি, বৈদেশিক নীতি
ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন